পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৭৫. (সহীহ) আবদুল্লাহ ইবনু ওমার তাঁর পিতা ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ ইসলাম সম্পর্কে জিবরীল (আঃ)এর প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
’’ইসলাম হল- তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করবে, জানাবাত (নাপাকী) থেকে গোসল করবে, পরিপূর্ণরূপে ওযু করবে এবং রামাযান মাসে সিয়াম পালন করবে।’’
তিনি (জিবরীল আঃ) বললেন, তা যদি বাস্তবায়ন করি তবে আমি মুসলিম? তিনি বললেনঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ আপনি সত্য বলেছেন।
(ইবনূ খুযায়মা স্বীয় [সহীহ্] গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ১/৪। সহীহায়ন তথা বুখারী ও মুসলিম ১/৩০ ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদীছটির বর্ণনারুপ অন্যভাবে এসেছে।)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) عن ابن عمر (عن أبيه) رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ في سؤال جبرائيل إياه عن الإسلام فقال الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَأَنْ تُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَحُجَّ وَتَعْتَمِرَ وَتَغْتَسِلَ مِنَ الْجَنَابَةِ وَتُتِمَّ الْوُضُوءَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ » قَالَ فَإِذاَ فَعَلْتُ ذلك فَأَنَا مُسْلِمٌ؟ قَالَ « نَعَمْ ». قَالَ صَدَقْتَ. رواه ابن خزيمة في صحيحه
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৭৬. (সহীহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একথা বলতে শুনেছিঃ ’’নিশ্চয় কিয়ামত দিবসে ওযুর প্রভাবের কারণে মুখমণ্ডল ও হস্ত-পদদ্বয় উজ্জল ও সুন্দর অবস্থায় আমার উম্মতকে আহবান করা হবে।’’ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি স্বীয় উজ্জলতা বাড়াতে পারে সে যেন তা করে।
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ১৩৬ ও মুসলিম ২৪৬)
শায়খ আলবানী (রহ.) বলেন, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়েম, হাফেয ইবনু হাজার ও তাঁর ছাত্র নাজী বলেনঃ ’’সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি.....’’ বাক্যটি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিজস্ব কথা তথা মাওকূফ।
আবু হাযেমের রেওয়ায়াতে সহীহ মুসলিমে রয়েছে, তিনি বলেনঃ
كُنْتُ خَلْفَ أبِيْ هُرَيْرَةَ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ فكان يمد يده حَتَّى يَبْلُغَ إِبْطَهُ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ مَا هَذَا الْوُضُوءُ فَقَالَ لِي يَا بَنِي فَرُّوخَ أَنْتُمْ هَاهُنَا لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكُمْ هَاهُنَا مَا تَوَضَّأْتُ هَذَا الْوُضُوءَ سَمِعْتُ خَلِيلِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ تَبْلُغُ حِلْيَةُ الْمُؤْمِنِ حَيْثُ يَبْلُغُ الْوُضُوءُ
আমি একদা আবু হুরায়রার পিছনে ছিলাম। তিনি সে সময় নামাযের জন্য ওযু করছিলেন। তিনি হাত ধোয়ার সময় (নির্দিষ্ট স্থান থেকে) বাড়িয়ে বগল পর্যন্ত ধৌত করলেন। আমি তাঁকে লক্ষ্য করে বললামঃ কেমন এ ওযু হে আবু হুরায়রা? তিনি বললেনঃ হে বানূ ফাররুখ তোমরা এখানে? তোমরা এখানে আছ জানলে আমি এরুপ ওযু করতাম না। আমি শুনেছি আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
’’মুমিন ব্যাক্তির ওযু যে পর্যন্ত পৌঁছুবে সে পর্যন্ত তার উজ্জলতা ও সৌন্দর্য পৌঁছাবে।’’
ইবনু খুযায়মা স্বীয় (সহীহ) গ্রন্থে এরুপই হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (আবু হুরায়রা) বলেনঃ আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إن الحلية تبلغ مواضع الطهور
’’পবিত্রতা অর্জনের স্থান সমূহ পর্যন্ত উজ্জলতা ও সৌন্দর্য পৌঁছুবে। (ইবনু খুযায়মাহ ৭)’’
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ فَمَنْ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ. رواه البخاري ومسلم
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৭৭. (সহীহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে আরো বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা কবরস্থানে এলেন, অতঃপর বললেনঃ السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ (আস-সালামু আলাইকুম দারা কওমিন নু’মিনীনা অইনা- ইনশা- আল্লাহ বিকুম লা-হিকুন) হে কবরবাসী মুমিন কওম! তোমাদের উপর সালাম-শান্তি নাযিল হোক। আল্লাহ চাহে তো অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব।’’ আমার হৃদয়ের একান্ত ইচ্ছে, আমরা যদি আমাদের ভাইদেরকে দেখতে পেতাম!
তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেনঃ আমরা কি আপনার ভাই নই হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেনঃ ’’তোমরা আমার সাহাবী তথা সাথী। আমাদের ভাই যারা তারা এখনও আসেনি।’’
তাঁরা বললেনঃ আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনও আসেনি, তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর এক ব্যাক্তির কালো মিশমিশে একপাল ঘোড়ার মধ্যে যদি সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট একটি ঘোড়া থাকে, তবে উক্ত ঘোড়াটি চিনতে পারবে না?’’
তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল।
তিনি বললেনঃ ’’তারা (কিয়ামত দিবসে) ওযুর কারণে মুখমণ্ডল
ও হাত-পা উজ্জল ও চমকিত অবস্থায় আসবে। আর হাওসে কাওছারে আমি হব তাদের অগ্রগামী।’’
(হাদীছটি ইমাম মুসলিম ২৪৯ ও অন্যরা বর্ণনা করেন)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) و عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى الْمَقْبُرَةَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا قَالُوا أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ قَالُوا كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ أَرَأَيْتَ لَوْ أنَّ رَجُلاً لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ الْوُضُوءِ وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ. رواه مسلم وغيره
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৭৮. (হাসান সহীহ্) যিরর্ থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখেননি তাদেরকে কিভাবে চিনবেন?
তিনি বললেনঃ ’’ওযুর প্রভাবে তাদের মুখমণ্ডল ও হস্ত-পদদ্বয় উজ্জল হবে, তাদেরকে সাদা-কালো অবস্থায় দেখা যাবে।’’
(ইবনু মাজাহ্ ২৮৪ ও ইবনু হিব্বান ১০৪৪ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(حسن صحيح) وَعَنْ زر عن عبد الله رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنهم قالوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ تَرَ مِنْ أُمَّتِكَ قَالَ غُرٌّ مُحَجَّلُونَ بُلْقٌ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ. رواه ابن ماجه وابن حبان
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৭৯. (হাসান সহীহ্) উল্লেখিত হাদীছটি প্রায় একই ভাবে আহমাদ ও ত্বাবরানী উত্তম সনদে আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
الترغيب في الوضوء وإسباغه
-
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮০. (সহীহ্ লি গাইরিহী) আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ’’কিয়ামত দিবসে আমিই হব প্রথম ব্যাক্তি, যাকে সেজদার জন্য অনুমতি দেয়া হবে। আমিই প্রথম ব্যাক্তি যে সেজদা থেকে মাথা উঠাবে। অতঃপর আমি আমার সম্মুখে দৃষ্টিপাত করব, তখন সমস্ত জাতির মধ্যে আমার উম্মতকে চিনে নিতে পারবে। এমনিভাবে আমার পিছন দিকে ঐরুপ হবে, ডান দিকে ঐরুপ হবে, বাম দিকেও ঐরুপ হবে।
তখন এক ব্যাক্তি বললঃ নূহ (আঃ) থেকে আপনার উম্মত পর্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে কিভাবে আপনি আপনার উম্মতকে চিনবেন হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ ’’তারা হবে ওযুর প্রভাবে মুখমণ্ডল ও হস্ত-পদদ্বয় সাদা উজ্জলতা বিশিষ্ট। অন্য কোন জাতির এ বৈশিষ্ট হবে না। তাদেরকে আরো আমি চিনতে পারব এইভাবে যে, আমল নামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে এবং তাদের সন্তানগণ তাদের সম্মুখে দৌড়াদৌড়ি করবে।’’
শায়খ আলবানী বলেন, সঠিক রেওয়ায়াত হল, ’’আলো তাদের সামনে ও ডানে-বামে খেলা করতে দেখে আমি তাদেরকে চিনতে পারব।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ ৫/১৯৯)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح لغيره) وَعَنْ أبِيْ الدَّرْداَءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : "أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ بِالسُّجُودِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ يُؤْذَنُ لَهُ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ، فَأَنْظُرَ إِلَى بَيْنِ يَدَيَّ، فَأَعْرِفَ أُمَّتِي مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ، وَمِنْ خَلْفِي مِثْلُ ذَلِكَ، وَعَنْ يَمِينِي مِثْلُ ذَلِكَ، وَعَنْ شِمَالِي مِثْلُ ذَلِكَ " فَقَالَ رَجُلٌ: كَيْفَ تَعْرِفُ أُمَّتَكَ يَا رَسُولَ اللهِ، مِنْ بَيْنِ الْأُمَمِ فِيمَا بَيْنَ نُوحٍ إِلَى أُمَّتِكَ ؟ قَالَ: " هُمْ غُرٌّ مُحَجَّلُونَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ، لَيْسَ أَحَدٌ كَذَلِكَ غَيْرَهُمْ، وَأَعْرِفُهُمْ أَنَّهُمْ يُؤْتَوْنَ كُتُبَهُمْ بِأَيْمَانِهِمْ، وَأَعْرِفُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ ذُرِّيَّتُهُمْ . رواه أحمد
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮১. (সহীহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযু করার সময় যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে তার মুখমণ্ডল থেকে সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, যা সে চোখের দৃষ্টির মাধ্যমে করেছিল। যখন সে হস্তদ্বয় ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে হস্তদ্বয় থেকে সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, যা সে হস্তদ্বয় দ্বারা ধরার মাধ্যমে করেছিল। যখন সে পদদ্বয় ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার পদদ্বয় থেকে সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, যা তার পদদ্বয় চলার মাধ্যমে করেছিল। শেষ পর্যন্ত সে পাপ থেকে স্বচ্ছ ও পরিস্কার হয়ে বের হয়ে যায়।
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুয়াত্বা মালেক ১/৩২, মুসলিম ২৪৪ ও তিরমিযী। তবে মালেক ও তিরমিযীর রেওয়ায়াতে পা ধোয়ার কথা উল্লেখ নেই)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوْ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَتْ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَتْ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنْ الذُّنُوبِ. رواه مالك ومسلم والترمذي وليس عند مالك والترمذي غسل الرجلين
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮২. (সহীহ) উছমান বিন আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ ’’যে ব্যাক্তি ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করে, তার পাপ সমূহ তার শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি তার নখের নীচে থেকেও বের হয়।’’ (মুসলিম ৬০১, আহমাদ ৪৭৬)
অন্য এক বর্ণনায় আছে- উছমান (রাঃ) একদা ওযু করলেন, অতঃপর বললেনঃ
আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার এই ওযুর মতই ওযু করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ ’’যে ব্যাক্তি এইভাবে ওযু সম্পাদন করবে, তার পূর্বকৃত পাপরাশি ক্ষমা করা হবে এবং তার সালাত ও মসজিদে গমণ নফল বা অতিরিক্ত হবে।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম ২৪৫ এবং সংক্ষিপ্তভাবে নাসাঈ ১/৯১, ইবনে খুযায়মাহ ১/৪, ইবনে মাজাহ ২৮৫)
তবে নাসাঈর শব্দরুপ এইভাবে- তিনি (উছমান (রাঃ) বলেনঃ আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَا مِنْ امْرِئٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ الْأُخْرَى حَتَّى يُصَلِّيَهَا
’’যে ব্যাক্তি ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করে, তবে উক্ত সালাত এবং পরবর্তী সালাত আদায় করা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের পাপ তাকে ক্ষমা করা হয়।’’
(হাদীছটির সনদ শাইখাইন তথা বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী। আর নাসাঈর বর্ণনার ন্যায় সংক্ষিপ্তভাবে ইবনু খুযায়মা স্বীয় (সহীহ) গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাজাহও সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করে শেষে উল্লেখ করেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ’’এবং এতে যেন কেউ ধোকা না খায়।’’
নাসাঈর আর এক বর্ণনায় আছে- তিনি বলেনঃ
مَنْ أَتَمَّ الْوُضُوءَ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَالصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ كَفَّارَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ
’’আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে যে ব্যাক্তি ওযু সম্পাদন করবে, তার পাঁচ ওয়াত্তু সালাত তার মধ্যবর্তী সমষ্টয়র জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ হবে। (নাসাঈ ১৪৫)’’[1]
(শায়খ আলবানী বলেনঃ হাদীছটি এ শব্দে ইমাম মুসলিমও রেওয়ায়েত করেন।)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ
وفي رواية أن عثمان توضأ ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ مِثْلَ وُضُوئِي هَذَا ثُمَّ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ هَكَذَا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَكَانَتْ صَلَاتُهُ وَمَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ نَافِلَةً
رواه مسلم والنسائي مختصرا
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৩. (সহীহ) তিনি তথা উছমান (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত। তিনি মসজিদে নববীর পার্শ্বে এক স্থানে বসেছিলেন, তাঁর কাছে পানি নিয়ে আসা হল। তিনি ওযু করলেন, এবং সুন্দরভাবে তা সম্পাদন করলেন। অতঃপর বললেনঃ
আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই স্থানে বসে ওযু করেছেন, এবং সুন্দরভাবে ওযু সম্পন্ন করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ ’’যে ব্যাক্তি আমার এই ওযুর মত করে ওযু সম্পাদন করে, অতঃপর মসজিদে এসে দু’রাকাআত সালাত আদায় করে, তারপর বসে, তবে পূর্বের পাপরাশি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।’’
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ ’’তোমরা ধোকায় পড় না।’’[1]
(বুখারী ৬৪৩৩ ও অন্যরা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْه رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ (أتي بِطَهُورٍ وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى الْمَقَاعِدِ فَتَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ وَهُوَ فِي هَذَا الْمَجْلِسِ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ مِثْلَ هَذَا الْوُضُوءِ ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ قَالَ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَغْتَرُّوا. رواه البخاري وغيره
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৪. (সহীহ্ লি গাইরিহী) তিনি তথা উছমান (রাঃ) থেকেই বর্ণিত। তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর ওযু করলেন আবার হাঁসলেন। অতঃপর তার সাথীদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে না কেন আমি হাঁসলাম? তাঁরা বললেনঃ কোন বিষয় আপনাকে হাসালো হে আমীরুল মুমেনীন? তিনি বললেনঃ
আমি যেভাবে ওযু করলাম সেভাবে ওযু করতে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি। অতঃপর তিনি হেঁসেছেন। বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে না কেন আমি হাঁসলাম। তাঁরা বললেনঃ কোন বিষয় আপনাকে হাঁসালো হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনী
’’নিশ্চয় বান্দা যখন ওযুর পানি আনতে বলে, অতঃপর স্বীয় মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন আল্লাহ তা’আলা মুখমণ্ডল ের মাধ্যমে কৃত প্রতিটি পাপ মোচন করে দেন। যখন কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করে, তখন ঐরুপ হয়। যখন তার পদদ্বয় ধৌত করে, তখনও ঐরুপ হয়।’’
(আহমাদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেন। আরো বর্ণনা করেন আবু ইয়ালা। সহীহ সনদে বাযযার ৪২০ বর্ণনা করার পর তিনি আরো বেশী উল্লেখ করেনঃ ’’যখন মাথা মাসেহ করে তখন ঐরুপ হয়।’’
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح لغيره) وَعَنْه رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أيضا أَنَّهُ دَعَا بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ ضَحِكَ، فَقَالَ لِأَصْحَابِهِ: أَلا تَسْأَلُونِي عَمَّا أَضْحَكَنِي؟ فَقَالُوا : مَا أَضْحَكَكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ ؟ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ كَمَا تَوَضَّأْتُ، ثُمَّ ضَحِكَ ، فَقَالَ :"أَلا تَسْأَلُونِي مَا أَضْحَكَنِي؟ " فَقَالُوا: مَا أَضْحَكَكَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ: "إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا دَعَا بِوَضُوءٍ فَغَسَلَ وَجْهَهُ ، حَطَّ اللهُ عَنْهُ كُلَّ خَطِيئَةٍ أَصَابَهَا بِوَجْهِهِ، فَإِذَا غَسَلَ ذِرَاعَيْهِ كَانَ كَذَلِكَ ، وَإِنْ مَسَحَ بِرَأْسِهِ كَانَ كَذَلِكَ ، وَإِذَا طَهَّرَ قَدَمَيْهِ كَانَ كَذَلِكَ. رواه أحمد بإسناد جيد وأبو يعلى ورواه البزار
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৫. (সহীহ্ লি গাইরিহী) আবদুল্লাহ সুনাবেহী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
’’বান্দা ওযু করতে গিয়ে যখন কুলি করে, তখন তার মুখের মধ্যে থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। যখন নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়ে, তখন তার নাক থেকে পাপরাশি ঝরে পড়ে। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমণ্ডল থেকে পাপসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি চোখের পাতার প্রান্তদেশ থেকেও। যখন হস্তদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় হাতের পাপরাশি ঝরে পড়ে, এমনকি তার উভয় হাতের নখের নীচ থেকেও। যখন মাথা মাসেহ করে, তখন তার মাথা থেকে পাপসমূহ বেরিয়ে যায়, এমনকি তার উভয় কান থেকেও। যখন পদদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় পা থেকে পাপসমূহ ঝরে পড়ে, এমনকি তার উভয় পায়ের নখের নীচ থেকেও। অতঃপর মসজিদে গমন ও সালাত আদায় তার জন্য নফল বা অতিরিক্ত হয়।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুয়াত্বা মালেক ১/৩১, নাসাঈ ১/৭৪, ইবনু মাজাহ্ ২৮২ ও হাকেম ১/১২৯। হাকেম বলেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح لغيره) و عَنْ عَبْدِ اللَّهِ الصُّنَابِحِيِّ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ فَمَضْمَضَ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ فِيهِ فَإِذَا اسْتَنْثَرَ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ أَنْفِهِ فَإِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجْتِ الْخَطَايَا مِنْ وَجْهِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَشْفَارِ عَيْنَيْهِ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ يَدَيْهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ يَدَيْهِ فَإِذَا مَسَحَ بِرَأْسِهِ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ رَأْسِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ أُذُنَيْهِ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ الْخَطَايَا مِنْ رِجْلَيْهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِ رِجْلَيْهِ ثُمَّ كَانَ مَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ وَصَلَاتُهُ نَافِلَةً. رواه مالك والنسائي وابن ماجه والحاكم
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৬. (সহীহ) আমর ইবনু আনবাসা আসসুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জাহেলী যুগে যখন ছিলাম, ধারণা করতাম- সব মানুষই প্রথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। তারা কোন হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। সে সময় মানুষ মুর্তি পুজা করত। অতঃপর মক্কার এক ব্যাক্তি সম্পর্কে শুনতে পেলাম, তিনি বিভিন্ন ধরণের সংবাদ দিচ্ছেন। (তাঁর সাক্ষাতের উদ্দেশ্য) আমি বাহনে আরোহন করলাম এবং তাঁর কাছে আগমণ করলাম। দেখলাম তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। (এ ভাবে তিনি হাদীছ উল্লেখ করে বললেন) অতঃপর আমি বললামঃ হে আল্লাহর নবী! ওযু সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন? তিনি বললেনঃ
’’তোমাদের কোন ব্যাক্তি ওযুর পানি নিকটে নিয়ে আসে, অতঃপর যখন কুলি করে, নাকে পানি দেয় ও নাক ঝাড়ে, তখন তার মুখের ভিতর থেকে ও নাকের ছিদ্র থেকে সকল পাপ ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার মুখমণ্ডল ের দাড়ির শেষ প্রান্ত থেকে পাপ সমূহ ঝরে পড়ে যায়। অতঃপর যখন হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহের শেষ প্রান্ত থেকে পাপ সমূহ পড়ে যায়। অতঃপর মাথা মাসেহ করে, তখন পানির সাথে তার মাথার চুলের শেষ ভাগ থেকে পাপ সমূহ খসে পড়ে। অতঃপর পদদ্বয় টাখনুসহ ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার উভয় পায়ের আঙ্গুল সমূহের শেষ প্রান্ত থেকে পাপরাশি ঝরে পড়ে। অতঃপর সে ব্যাক্তি যদি দন্ডায়মান হয়ে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করে ও গুণকীর্তন করে, তিনি যে সকল গুণের অধিকারী তা দ্বারা তাঁর গুণগান বর্ণনা করে এবং একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য তার অন্তরকে অন্য চিন্তা মুক্ত করে। তবে সে তার গুণাহ থেকে এমন দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে, যে দিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় জন্ম দিয়েছিল।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম ৮৩২)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ عمرو بن عبسة السلمي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قال: كُنْتُ وَأَنَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَظُنُّ أَنَّ النَّاسَ عَلَى ضَلَالَةٍ وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَعْبُدُونَ الْأَوْثَانَ فَسَمِعْتُ بِرَجُلٍ بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أَخْبَارًا فَقَعَدْتُ عَلَى رَاحِلَتِي فَقَدِمْتُ عَلَيْهِ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فذكر الحديث إلى أن قال فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ فَالْوُضُوءَ حَدِّثْنِي عَنْهُ قَالَ مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ وَيَسْتَنْشِقُ فَيَنْتَثِرُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ وَفِيهِ وَخَيَاشِيمِهِ ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ بِالَّذِي هُوَ لَهُ أَهْلٌ وَفَرَّغَ قَلْبَهُ لِلَّهِ إِلَّا انْصَرَفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ. رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৭. (সহীহ্ লি গাইরিহী) আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
’’যে কোন ব্যাক্তি সালাতের ইচ্ছায় ওযুর পানি নেয়, অতঃপর উভয় হাতের কব্জি ধৌত করে, তখন পানির প্রথম বিন্দুর সাথে তার উভয় কব্জির প্রতিটি পাপ নেমে যায়। অতঃপর যখন কুলি করে, নাকে পানি দেয় ও নাক ঝাড়ে তখন পানির প্রথম ফোঁটার সাথে তার জিহবা ও উভয় ঠোঁটের পাপ ঝরে পড়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির প্রথম ফোঁটার সাথে তার কান ও চোখের প্রতিটি পাপ ঝরে পড়ে যায়। যখন উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করে, তখন সে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে এমন দিনের ন্যায় পবিত্র হয়, যে দিন তার মাতা তাকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভুমিষ্ট করেছিল। তিনি বলেনঃ যখন সে সালাতে দন্ডায়মান হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। যখন সে নামায শেষ করে বসে তখন পাপ মুক্ত অবস্থায় বসে।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ৫/২৬৩)
(সহীহ্ লি গাইরিহী) ইমাম আহমাদ অন্য একটি সহীহ সনদে হাদীছটি এরুপই বর্ণনা করেন। তবে সেখানে আরো বেশী উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ الوضوء يُكفر ما قبله ثم تصير الصلاة نافلة
’’ওযু পূর্বের পাপরাশি মোচন করে দেয়। অতঃপর নামায হয়ে যায় নফল বা অতিরিক্ত।’’
(সহীহ্ লি গাইরিহী) ইমাম আহমাদ অন্য সনদে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
إِذَا تَوَضَّأَ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ خَرَجَتْ ذُنُوبُهُ مِنْ سَمْعِهِ وَبَصَرِهِ وَيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ، فَإِنْ قَعَدَ قَعَدَ مَغْفُورًا لَهُ
’’যখন মুসলিম ব্যাক্তি ওযু করে, তখন তার চোখ, কান, উভয় হাত ও উভয় পায়ের পাপসমূহ বের হয়ে যায়। যখন সে (সালাত শেষ করে) বসে, তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।’’
(হাদীছটির সনদ হাসান আহমাদ ২২২৬০)
(সহীহ্ লি গাইরিহী) আহমাদের অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إذا توضأ المسلم فغسل يديه كفر عنه ما عملت يداه فإذا غسل وجهه كفر عنه ما نظرت إليه عيناه وإذا مسح برأسه كفر به ما سمعت أذناه فإذا غسل رجليه كفر عنه ما مشت إليه قدماه ثم يقوم إلى الصلاة فهي فضيلة
’’যখন মুসলিম ব্যাক্তি ওযু করে, অতঃপর তার হস্তদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় হাত দ্বারা কৃত কর্মের কাফ্ফারা হয়ে যায়। যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন উভয় চোখ দিয়ে সে যে দিকে দৃষ্টিপাত করেছে তার কাফ্ফারা হয়ে যায়। যখন সে মাথা মাসেহ করে, তখন তার উভয় কান যা শুনেছে তার কাফ্ফারা হয়ে যায়। যখন সে পদদ্বয় ধৌত করে, তখন তার উভয় পা যে দিকে চলেছে তার কাফ্ফারা হয়ে যায়। অতঃপর সে ছালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন তার ছালাত হয় অতিরিক্ত।’’
(তবারানী ১০৯৯, এ হাদীছটির সনদও হাসান)
ত্বাবরানীর [কাবীর] গ্রন্থে একটি রেওয়ায়াতে রয়েছে। আবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীছটি সাতবার না শুনতাম, তবে তা বর্ণনা করতাম না। তিনি বলেনঃ إذا توضأ الرجل كما أمر ذهب الإثم من سمعه وبصره ويديه ورجليه
’’যেভাবে আদেশ করা হয়েছে সেভাবে যদি কোন ব্যাক্তি ওযু করে, তবে তার কান, চোখ, উভয় হাত ও উভয় পায়ের পাপসমূহ দূর হয়ে যাবে।’’
(তবারানী ৮/১২৩ এ হাদীছটির সনদও হাসান)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح لغيره) و عَن أَبِيْ أُماَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " أَيُّمَا رَجُلٍ قَامَ إِلَى وَضُوئِهِ يُرِيدُ الصَّلَاةَ، ثُمَّ غَسَلَ كَفَّيْهِ نَزَلَتْ. كل خَطِيئَتُهُ مِنْ كَفَّيْهِ مَعَ أَوَّلِ قَطْرَةٍ، فَإِذَا مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ نَزَلَتْ خَطِيئَتُهُ مِنْ لِسَانِهِ وَشَفَتَيْهِ مَعَ أَوَّلِ قَطْرَةٍ، فَإِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ نَزَلَتْ كل خَطِيئَتُهُ مِنْ سَمْعِهِ وَبَصَرِهِ مَعَ أَوَّلِ قَطْرَةٍ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ، وَرِجْلَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ سَلِمَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ هُوَ لَهُ، وَمِنْ كُلِّ خَطِيئَةٍ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ " . قَالَ: " فَإِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ رَفَعَ اللهُ بِهَا دَرَجَتَهُ، وَإِنْ قَعَدَ قَعَدَ سَالِمًا. رواه أحمد
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৮. (সহীহ্ লি গাইরিহী) ছালাবা বিন আব্বাদ তাঁর পিতা আব্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি জানি না কয়বার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এককভাবে বা অন্যের উপস্থিতিতে হাদীছটি আমার সামনে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেনঃ ’’যখনই কোন বান্দা ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তা সম্পাদন করে (ওযু অবস্থায়) চিবুকে পানি বইয়ে মুখমণ্ডল ধৌত করে, অতঃপর কনুইর উপর পানি বইয়ে উভয় হাত ধৌত করে, টাখনুর উপর পানি বইয়ে উভয় পা ধৌত করে। অতঃপর দন্ডায়মান হয়ে সালাত আদায় করে, তবে তার পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’
(ত্বাবরানী [কাবীর] গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৮/১২৩)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح لغيره) و عَنْ ثَعْلَبَةَ بْنِ عَبَّادٍ.عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : مَا أَدْرِي كَمْ حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَزْوَاجًا أو أَفْرَادًا قال: مَا مِنْ عَبْدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ فَيَغْسِلُ وَجْهَهُ حَتَّى يَسِيلَ الْمَاءُ عَلَى ذَقَنِهِ. ثُمَّ يَغْسِلُ ذِرَاعَيْهِ حَتَّى يَسِيلَ الْمَاءُ عَلَى مِرْفَقَيْهِ , ثم غَسَلَ رِجْلَيْهِ حَتَّى يَسِيلَ الْمَاءُ مِنْ كَعْبَيْهِ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي؛ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا سَلَفَ مِنْ ذَنْبِهِ. رواه الطبراني في الكبير
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৯. (সহীহ) আবু মালিক আল্ আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
’’পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।[1] ’আলহামদু লিল্লাহ’ মীযান বা (হিসাবের) পাল্লাকে ভারী করে দিবে। সুবহানাল্লা ও আলহামদু লিল্লাহ আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণ করে দেয়।[2] সালাত নূর বা আলোকবর্তিকা।[3] দান-সাদকা দলীল।[4] ধৈর্য উজ্জলতা।[5] কুরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে দলীল।[6] প্রতিটি মানুষ সকাল করে, অতঃপর সে নিজেকে বিত্রুয় করে, তাতে সে মুক্তিপ্রাপ্ত হয় অথবা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।[7]’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম ২২৩, তিরমিযী ৩৫১৮ ও ইবনু মাজাহ ২৮০, নাসাঈ ৫/৫) তবে ইবনু মাজার রেওয়ায়াতে বলা হয়েছেঃ ’’পরিপূর্ণরূপে ওযু করা ঈমানের অর্ধেক।’’
ইমাম নাসাঈও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায়, প্রতিটি মানুষ সকাল করে,... কথাটি নেই।
[2] . অর্থাৎ- এ দু’টির ছোয়াবের পরিমাণকে যদি একটি অবয়বে রূপান্তরিত করা হয়, তবে তা এত বিশাল হবে যে, তা দ্বারা ভূপৃষ্ঠ থেকে উর্ধাকাশ পর্যন্ত স্থানকে ঢেকে ফেলবে। কালেমা দু’টির ছোয়াবের বিশালত্বের কারণ হচ্ছে, প্রথমটিতে (সুবহানাল্লহর মাধ্যমে) আল্লাহকে যাবতীয় শির্ক ও দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে আর দ্বিতীয় কালেমা (আল হামদুলিল্লাহ) দ্বারা আল্লাহর কাছে বান্দার যাবতীয় বিষয় সোপর্দ ও তাঁর মুখাপেক্ষী হওয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[3] . অর্থাৎ নামায মানুষকে গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে বাধা দেয়, অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে বান্দাকে দূরে রাখে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিশা দেয়। অথবা এর অর্থ হচ্ছে- কিয়ামত দিবসে নামায বান্দার জন্য নূর বা আলো হবে। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[4] . অর্থাৎ- দান-সাদকা বান্দার ঈমানের দাবীর বাহ্যিক দলীল। কেননা একনিষ্ট হৃদয়ে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় ঈমানের সত্যতার কারণেই হয়ে থাকে। কিন্তু কপট ঈমানের অধিকারী মুনাফেক অর্থ ব্যয় করলে মানুষকে দেখানো ও তাদের বাহাবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যেই করে থাকে। ফলে তার দান তার ঈমানের বাহ্যিক দলীল হতে পারে না। [দ্রঃ হাশিয়া সিন্দী আলা সুনানে ইবনে মাজাহ্ হা/২৭৬]
[5] . অর্থাৎ- প্রশংসিত ধৈর্য বান্দার জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ, তাকে হেদায়াত ও সৎ পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহযোগিতা করে। ইবরাহীম খাওয়াস বলেন, প্রকৃত সবর হচ্ছে, কুরআন ও সুন্নাতের উপর দৃঢ় ও অটল থাকা। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[6] . অর্থাৎ তুমি যদি কুরআন তেলাওয়াত কর এবং তদানুযায়ী আমল কর, তবে উহা তোমার পক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে এবং তোমার জন্যে সুপারিশ করবে। অন্যথা তোমার বিপক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে।
[7] . অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ কর্মে লিপ্ত থাকে। তাদের মধ্যে কেউ আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেকে তাঁর কাছে বিক্রি করে দেয়, ফলে নিজেকে শাস্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে নেয়। আবার কেউ শয়তান ও প্রবৃত্তির কাছে নিজেকে বিক্রি করে, তার তাবেদারী করে। ফলে নিজের ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসে। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآَنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاء وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُورٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا .. رواه مسلم والترمذي وابن ماجه
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৯০. (সহীহ) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ’’যে কোন মুসলিম ব্যাক্তি ওযু করে এবং পরিপূর্ণরূপে তা সম্পাদন করে, অতঃপর সালাতে দন্ডায়মান হয়। সে জানে কি সে বলছে স্বীয় সালাতে, তবে সালাত থেকে সে ফিরে আসে এমন নিষ্পাপ অবস্থায় যে দিন তার মাতা তাকে ভূমিষ্ট করেছিল।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম ২৩৪, আবু দাউদ ১৬৯, নাসাঈ ১/১৪, ইবনু মাজাহ্ ৪৭০, ইবনু খুযায়মা ও হাকেম ২/৩৯৯, হাদীছের বাক্য হাকেমের। তিনি বলেন, সনদ সহীহ্)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ عقبة بن عامر رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال: ماَ مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الوُضُوْءَ ثُمَّ يَقُوْمُ فِيْ صَلاَتِهِ فَيَعْلَمُ ماَ يَقُوْلُ إلاَّ انْفَتَلَ وَهُوَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أمُّهَ... الحديث. رواه مسلم وأبو داود والنسائي وابن ماجه وابن خزيمة والحاكم واللفظ له وقال صحيح الإسناد
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৯১. (সহীহ) আলী বিন আবী তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ’’প্রচন্ড ঠান্ডার কষ্ট স্বীকার করে পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, পদযুগলকে মসজিদের দিকে ব্যবহার করা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা- (এসব কাজ) পাপ সমূহকে ধুয়ে পরিস্কার করে দেয়।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আবু ইয়ালা ৪৮৮, বাযযার ৪৪৭ ও হাকেম ১/১৩২। হাকেম বলেন, মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) و عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : (إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ فِي الْمَكَارِهِ ، وَإِعْمَالُ الأَقْدَامِ إِلَى الْمَسَاجِدِ ، وَانْتِظَارُ الصَّلاةِ بَعْدَ الصَّلاةِ ، تَغْسِلُ الْخَطَايَا غَسْلا
.رواه أبو يعلى والبزار بإسناد صحيح والحاكم صحيح على شرط مسلم
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৯২. (সহীহ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ’’আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না, কোন কাজ পাপসমূহ মিটিয়ে দেয় ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়?’’ তারা বললেন, হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ
’’প্রচন্ড ঠান্ডার কষ্ট স্বীকার করে পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা[1]- এগুলোই হলো তোমাদের জন্য সীমান্ত পাহারা দেয়ার সমতুল্য, এটিই হলো তোমাদের জন্য সীমান্ত পাহারা দেয়ার সমতুল্য, এগুলোই হলো তোমাদের জন্য সীমান্ত পাহারা দেয়ার সমতুল্য।’’[2] (মুয়াত্তা মালিক ১/১৬১, মুসলিম ২৫১, তিরমিযী ৫১, নাসাঈ ১/৮৯ ও একই অর্থে ইবনু মাজাহ ৪২৮)
[2] . الرباط এর অর্থঃ নিজেকে কোন সৎ আমলের উপর সর্বদা নিয়োজিত রাখা। আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। সীমান্ত পাহারা দেয়া।
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذَلِكُمْ الرِّبَاطُ
فذلكم الرباط فذلكم الرباط. رواه مالك ومسلم والترمذي والنسائي وابن ماجه بمعناه
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৯৩. (হাসান সহীহ) উক্ত হাদীছটি ইবনু মাজাহ্ ও ইবনু হিব্বানও বর্ণনা করেছেন আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে। তবে তাদের বর্ণনাভঙ্গি এইভাবেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
’’আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না, কোন কাজ দ্বারা আল্লাহ্ পাপসমূহকে মোচন করেন, নেকীর পাল্লা ভারী করেন ও গুণাহ সমূহের কাফ্ফারা করেন?’’ তাঁরা বললেন, হ্যাঁ বলুন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ ’’কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের জন্য অপেক্ষা করা- এগুলোই হলো তোমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সীমান্তে জিহাদে লিপ্ত থাকার সমতুল্য।’’
(ইবনু মাজাহ ৪২৮ ইবনু হিব্বান স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীছটি শুরাহ্বীল বিন সাদ এর বরাতে আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন ১০৩৬)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(حسن ) ورواه ابن ماجه أيضا وابن حبان في صحيحه من حديث أبي سعيد الخدري إلا أنهما قالا فيه قال رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ألا أدلكم على ما يكفر الله به الخطايا ويزيد به في الحسنات ويكفر به الذنوب، قالوا بلى يا رسول الله قال: إسباغ الوضوء على المكروهات وكثرة الخطا إلى المساجد وانتظار الصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط. رواه ابن حبان
পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৯৪. (সহীহ লি গাইরিহী) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
’’আজ রাতে স্বপ্নযোগে আমার পালনকর্তা সর্বোত্তম আকৃতিতে আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ কি বিষয় নিয়ে পরস্পর বির্তক করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তা হচ্ছে মর্যাদা উন্নীতকরণ, পাপ মোচন, জামাআতে নামায আদায় করার জন্য পা উঠিয়ে মসজিদে যাওয়া, কঠিন ঠান্ডার সময় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, এক নামায আদায় করার পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। যে ব্যক্তি এগুলোর প্রতি যত্নবান হবে সে কল্যাণের সাথে জীবন-যাপন করবে এবং কল্যাণের মাঝে তার মৃত্যু হবে। আর সে তার পাপ থেকে এমনভাবে মুক্ত হবে যেমন তার মাতা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ট করেছিল।’’
(ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ৩২৩৪)[1]
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح لغيره) وَعَنْ ابن عباس رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أتاني الليلة ربي (في أحسن صورة فـ) قال يا محمد أتدري فيم يختصم الملأ الأعلى قلت نعم في الكفارات والدرجات ونقل الأقدام للجماعات وإسباغ الوضوء في السبرات وانتظار الصلاة بعد الصلاة ومن حافظ عليهن عاش بخير ومات بخير وكان من ذنوبه كيوم ولدته أمه. رواه الترمذي