পরিচ্ছেদঃ ৭) ওযু করা এবং তা পরিপূর্ণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করণ
১৮৯. (সহীহ) আবু মালিক আল্ আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
’’পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।[1] ’আলহামদু লিল্লাহ’ মীযান বা (হিসাবের) পাল্লাকে ভারী করে দিবে। সুবহানাল্লা ও আলহামদু লিল্লাহ আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণ করে দেয়।[2] সালাত নূর বা আলোকবর্তিকা।[3] দান-সাদকা দলীল।[4] ধৈর্য উজ্জলতা।[5] কুরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে দলীল।[6] প্রতিটি মানুষ সকাল করে, অতঃপর সে নিজেকে বিত্রুয় করে, তাতে সে মুক্তিপ্রাপ্ত হয় অথবা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।[7]’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম ২২৩, তিরমিযী ৩৫১৮ ও ইবনু মাজাহ ২৮০, নাসাঈ ৫/৫) তবে ইবনু মাজার রেওয়ায়াতে বলা হয়েছেঃ ’’পরিপূর্ণরূপে ওযু করা ঈমানের অর্ধেক।’’
ইমাম নাসাঈও হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায়, প্রতিটি মানুষ সকাল করে,... কথাটি নেই।
[1] . ইমাম নববী বলেন, কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, এখানে ঈমান বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে সালাত। যেমনটি আল্লাহ বলেন, وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ ‘‘আর আল্লাহ তোমাদের ঈমান তথা সালাত নষ্ট করে দিবেন না।’’ (সূরা বাকারাঃ১৪৩) পবিত্রতা সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্ব শর্ত। অতএব উহা নামাযের অর্ধেক। অথবা এ অর্থও হতে পারে যে, ঈমান হচ্ছে অন্তরের সত্যায়ন এবং বাহ্যিকভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা বাস্তবায়নের নাম। এ দু’টি বিষয় ঈমানের দু’টি অংশ। পবিত্রতা নামাযকেও শামিল করে। অতএব উহা ঈমানের বাহ্যিক বিষয় হওয়ার কারণে ঈমানের অর্ধেক। অথবা এ অর্থও হতে পারে, এখানে ওযুকে পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং উহা বিরাট ছোয়াব অর্জন করার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি উহা ঈমানের অর্ধেক ছোয়াবের বরাবর পৌঁছে গেছে। (আল্লাহই অধিক জানেন) [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[2] . অর্থাৎ- এ দু’টির ছোয়াবের পরিমাণকে যদি একটি অবয়বে রূপান্তরিত করা হয়, তবে তা এত বিশাল হবে যে, তা দ্বারা ভূপৃষ্ঠ থেকে উর্ধাকাশ পর্যন্ত স্থানকে ঢেকে ফেলবে। কালেমা দু’টির ছোয়াবের বিশালত্বের কারণ হচ্ছে, প্রথমটিতে (সুবহানাল্লহর মাধ্যমে) আল্লাহকে যাবতীয় শির্ক ও দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে আর দ্বিতীয় কালেমা (আল হামদুলিল্লাহ) দ্বারা আল্লাহর কাছে বান্দার যাবতীয় বিষয় সোপর্দ ও তাঁর মুখাপেক্ষী হওয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[3] . অর্থাৎ নামায মানুষকে গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে বাধা দেয়, অশ্লীলতা ও গর্হিত কাজ থেকে বান্দাকে দূরে রাখে এবং সত্য ও সঠিক পথের দিশা দেয়। অথবা এর অর্থ হচ্ছে- কিয়ামত দিবসে নামায বান্দার জন্য নূর বা আলো হবে। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[4] . অর্থাৎ- দান-সাদকা বান্দার ঈমানের দাবীর বাহ্যিক দলীল। কেননা একনিষ্ট হৃদয়ে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় ঈমানের সত্যতার কারণেই হয়ে থাকে। কিন্তু কপট ঈমানের অধিকারী মুনাফেক অর্থ ব্যয় করলে মানুষকে দেখানো ও তাদের বাহাবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যেই করে থাকে। ফলে তার দান তার ঈমানের বাহ্যিক দলীল হতে পারে না। [দ্রঃ হাশিয়া সিন্দী আলা সুনানে ইবনে মাজাহ্ হা/২৭৬]
[5] . অর্থাৎ- প্রশংসিত ধৈর্য বান্দার জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ, তাকে হেদায়াত ও সৎ পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে সহযোগিতা করে। ইবরাহীম খাওয়াস বলেন, প্রকৃত সবর হচ্ছে, কুরআন ও সুন্নাতের উপর দৃঢ় ও অটল থাকা। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
[6] . অর্থাৎ তুমি যদি কুরআন তেলাওয়াত কর এবং তদানুযায়ী আমল কর, তবে উহা তোমার পক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে এবং তোমার জন্যে সুপারিশ করবে। অন্যথা তোমার বিপক্ষে স্বাক্ষ্য দিবে।
[7] . অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ কর্মে লিপ্ত থাকে। তাদের মধ্যে কেউ আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেকে তাঁর কাছে বিক্রি করে দেয়, ফলে নিজেকে শাস্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে নেয়। আবার কেউ শয়তান ও প্রবৃত্তির কাছে নিজেকে বিক্রি করে, তার তাবেদারী করে। ফলে নিজের ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসে। [দ্রঃ তোহফাতুল আহওয়াযী হা/৩৪৩৯)
الترغيب في الوضوء وإسباغه
(صحيح) وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآَنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاء وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُورٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَايِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا .. رواه مسلم والترمذي وابن ماجه