পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
اللباس (আল লিবা-স) শব্দটি باب سمع (বা-বি সামি’আ)-এর মাসদার। এটি পেশের সাথেও ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ পোশাক। আর باب ضرب (বা-বি যরাবা) থেকে لبسا (লাবসান) লামের উপর যবর যোগে আসে। যার অর্থ সংমিশ্রণ করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ
’’আর তোমরা হককে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে হককে গোপন করো না’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ০২ : ৪২)।
বিভিন্ন কারণে ইসলামে কতিপয় পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হল- ১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণমিশ্রিত পোশাক। ২. পুরুষের জন্য মহিলাদের পোশাক। ৩. মহিলাদের জন্য পুরুষের পোশাক। ৪. খ্যাতি ও বড়াই প্রকাশক পোশাক। ৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক। ৬. আঁটসাঁট পোশাক ইত্যাদি। [সম্পাদক]
৪৩০৪-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিবারাহ্ কাপড় পরিধান করতে অধিক পছন্দ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
عَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَحَبُّ الثِّيَابِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَلْبَسَهَا الْحِبَرَةُ
ব্যাখ্যাঃ (حِبَرَ) বলা হয় সবুজ অথবা লাল ডোরাযুক্ত ইয়ামান দেশে বুনানো অতীব উন্নত সূতী কাপড়কে। ‘আরব জাতির জন্য এটা অত্যন্ত সম্মানী এবং আনন্দদায়ক পোশাক। কেউ কেউ বলেছেন, জান্নাতীদের এই সবুজ রঙের সম্মানিত ‘হিবারাহ্’ পোশাক পরানো হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ فَهُمْ فِي رَوْضَةٍ يُحْبَرُونَ ‘‘তাদেরকে মনোরম উদ্যানে হিবারাহ্ পোশাক পরিয়ে সম্মানিত ও আনন্দিত করা হবে।’’ (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০ : ১৫)
ত্ববারানী, ইবনুস্ সুন্নী, আবূ নু‘আয়ম (রহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখ মুহাদ্দিসের বর্ণনা মতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্যই সবুজ রং পছন্দ করতেন।
‘আল্লামা জাযরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হিবারাহ্ পরিধান করা মুস্তাহাব, এ হাদীস তার দলীল। এতে এও প্রমাণিত যে নকশা বা ডোরাযুক্ত কাপড় পরা বৈধ। হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তবে সালাতে নকশাদার কাপড় পরা মাকরূহ।
এই নকশাদার হিবারাহ্ পোশাকটি কামীস না চাদর ছিল তা নিয়ে অনেকের অনেক কথা, তবে এটা চাদর ছিল বলেই বেশি মতামত রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮১২; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৭৯; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৮৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩০৫-[২] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম দেশীয় আঁটসাট আস্তিনবিশিষ্ট জুব্বা পরিধান করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ
ব্যাখ্যাঃ আগের যুগে জুব্বা দ্বৈত কাপড়ে তৈরি করা হতো। দুই কাপড়ের মাঝে কটন বা তুলা দেয়া হতো। তবে যদি পশমী কাপড়ের জুব্বা হতো একক কাপড়েই তৈরি হতো।
অত্র হাদীসে রোমীয় জুব্বার কথা উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু সহীহায়নের বর্ণনাসহ অধিকাংশ বর্ণনায় শামী জুব্বার কথা উল্লেখ আছে। এ দু’প্রকারের বর্ণনার মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই, কেননা শাম রাজ্যটি ঐ সময় মহারাষ্ট্র রোমের অধীনেই ছিল। অতএব নাম দু’টি হলেও মূলত একই রাজা বা বাদশাহর একই রাজ্য ছিল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই জুব্বার আস্তিন ছিল আঁটসাঁট বা টাইট, এটা এক সফরের ঘটনা। এর বিস্তারিত ব্বিরণ সহীহুল বুখারীতে মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এক সফরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে পানি আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তখন তিনি তার বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং (স্বীয় প্রাকৃতিক প্রয়োজনের জন্য) চলতে চলতে রাতের আঁধারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। (প্রয়োজন সেরে) যখন ফিরে এলেন আমি তার নিকট পানির পাত্র থেকে পানি ঢালতে লাগলাম, তিনি তার মুখমন্ডলে-লী ধৌত করলেন এবং দু’হাত ধৌত করলেন, এ সময় তার শরীরে শামী পশমী জুব্বা ছিল। তিনি (ধৌত করার জন্য) হাত দু’টি বের করতে চেষ্টা করলেন কিন্তু (আস্তিন আঁটসাট হওয়ার কারণে) হাত দু’টি বের করতে পারলেন না, ফলে জুব্বার নিচ দিয়ে তা বের করলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, শরীরের নীচ দিয়ে বের করলেন। সহীহ মুসলিমে একটু বর্ধিত এসেছে যে, তিনি জুব্বাটা খুলে দু’কাঁধের উপর রাখলেন এবং দু’হাত ধৌত করলেন......।
মুওয়াত্ত্বা মালিক, আহমাদ, আবূ দাঊদ প্রভৃতি গ্রন্থের বর্ণনায় এসেছে এটা তাবূকের যুদ্ধের (সময়ের) ঘটনা, আর তা ফজরের সালাতের সময় ঘটেছিল। (সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড, ২৩০ পৃঃ)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, সুস্পষ্ট কোন নাপাকী দৃশ্যপটে না থাকলে কাফিরদের তৈরি পোশাকে সালাত আদায় বৈধ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমী জুব্বা পরিধান করেছেন, আর ঐ সময় রোম ছিল সম্পূর্ণ কাফির রাজ্য। ইমাম কুরতুবী এটাও বলেন যে, পশুর মৃত্যুর কারণে তার পশম নাপাক হয় না, কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জুব্বাটি শামীয় ছিল, আর শামী জুব্বা পশমের তৈরি হয়।
পশমের তৈরি জুব্বা বা পোশাক পরিধান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) অন্য পোশাক থাকতে পশমের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ বলেছেন। কেননা এতে দরবেশী ভাব প্রকাশ পায়, অথচ ‘আমল বা দরবেশী গোপন রাখাই উত্তম। ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পশমের কাপড়ইে যে শুধু দরবেশী ভাব প্রকাশ হয় এমনটিই নয়, বরং সূতী বা অন্যান্য কাপড়েও প্রকাশ পেতে পারে। হাসান বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি সত্তরজন বদরী সাহাবীকে পশমের কাপড় পরিধানরত দেখেছি।
এ হাদীসের ভিত্তিতে অনেকে নিজ আবাসনে নয় বরং সফরে আঁটসাট আস্তিন রাখা মুস্তাহাব মনে করেন। সাহাবীগণের সাধারণ জামার আস্তিনগুলো স্বাভাবিক এক বিঘত পরিমাণ ছিল। অবশ্য অতি প্রশস্ত আস্তিন ঠিক নয়, কেউ কেউ এটাকে বিদ্‘আতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (মিরক্বাতুল; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৬৮)
উপরে উল্লেখিত হয়েছে, এটি যুদ্ধের সফরের ঘটনা, মূলত যুদ্ধের সময় টাইট পোশাক পরাই অধিক সহায়ক। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩০৬-[৩] আবূ বুরদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) একখানা তালিযুক্ত চাদর ও একখানা মোটা কাপড়ের ইযার (লুঙ্গি বা তহবন্দ) আমাদেরকে দেখিয়ে বললেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ أَبِي بُرْدَةَ قَالَ: أَخْرَجَتْ إِلَيْنَا عَائِشَةُ كِسَاءً مُلَبَّدًا وَإِزَارًا غَلِيظًا فَقَالَتْ: قُبِضَ رُوحُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هذَيْن
ব্যাখ্যাঃ (مُلَبَّدًا) শব্দের অর্থ জোড়াযুক্ত, একত্রিকৃত, তালিযুক্ত ইত্যাদি। অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাদরটি ছিল তালিযুক্ত। এখানে إِزَارً বা লুঙ্গির কথা এসেছে কিন্তু কোন কোন সংকলনে رِدَاءٌ বা চাদর শব্দ এসেছে, কিন্তু তা সঠিক নয়। কেননা رِدَاءٌ বা চাদর তো ওটাই যা দিয়ে শরীরে উপরের অংশ আবৃত করা হয়।
উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনা ‘‘এই দু’টি বস্ত্রের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ কবয করা হয়েছে’’, এর দ্বারা তিনি মূলত বুঝাতে চেয়েছেন তার ঐ দু‘আ কবূলের কথা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু‘আ করতেন,
اَللّٰهُمَّ اَحْيِيْنِىْ مِسْكِيْنًا وَاَمِتْنِىْ مِسْكِيْنًا
‘‘হে আল্লাহ! আমাকে মিসকীন হালাতে বাঁচিয়ে রাখ এবং মিসকীন অবস্থায়ই মৃত্যু দিও।’’ (হাকিম ফিল মুস্তাদরিক ৪/৩২২)
শায়খায়নের বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি তালিযুক্ত চাদর ছিল। তিনি তা পরিধান করতেন আর বলতেন, আমি একজন দাস মাত্র, তাই দাসের পোশাকই পরিধান করি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুনিয়াবিমুখ এবং তার সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার একটি দৃষ্টান্ত, যাতে উম্মাত তাঁর এই আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং তারই অনুসরণ করতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১০৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩০৭-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিছানায় শয়ন করতেন, তা ছিল চামড়ার তৈরি। আর ভিতরে ভর্তি ছিল খেজুর গাছের আঁশ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: كَانَ فِرَاشُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي يَنَامُ عَلَيْهِ أَدَمًا حَشْوُهُ لِيف
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পোশাক যেমন ছিল সাদাসিধে ঠিক তার বিছানাপত্রও ছিল অতীব সাধারণ ও সাদাসিধে। তিনি এমন বিছানায় বা তোষকে শয়ন করতেন যার কভার ছিল দাবাগতকৃত শক্ত চামড়া দ্বারা তৈরি, আর এর ভিতরে ভরতি ছিল খেজুর গাছের আঁশ। মূলত এটা কোন মতে আরামদায়ক ও বিলাসবহুল ছিল না। এমনকি তিনি কখনো কখনো খেজুর পাতার তৈরি খালি পাটি বা চাটাইর উপর শুতেন, এতে তার দেহের মধ্যে চাটাই বা মাদুরের দাগ পরে যেত।
ইমাম বায়হাক্বী উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণনা করেন, একদিন এক মহিলা আমার নিকট এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিছানা দেখলেন যা ছিল মোটা ও শক্ত আবরণযুক্ত। এটা দেখে তিনি আমার নিকট রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নরম পশমের বিছানা পাঠিয়ে দিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে বললেন, এটা তাকে ফেরত দাও, আল্লাহর কসম! যদি আমি চাইতাম তাহলে স্বর্ণ-রৌপ্যের পাহাড় আল্লাহ আমাকে দিতেন- (বায়হাক্বী)। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৪৫৬; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩০৮-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গিদ্দা বা বালিশে হেলান দিতেন তা ছিল চামড়ার এবং ভিতরে ছিল আঁশ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْهَا قَالَتْ: كَانَ وِسَادُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي يَتَّكِئُ عَلَيْهِ مَنْ أَدَمٍ حشْوُهُ ليفٌ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যানুরূপ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বালিশের খোল ছিল দাবাগতকৃত শক্ত চামড়ার তৈরি এবং ভিতরে ছিল খেজুর গাছের আঁশ ভরা। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৮২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩০৯-[৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ একদিন আমরা গ্রীষ্মের দুপুরে আমাদের ঘরে বসা ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি আবূ বকর (রাঃ)-কে বলে উঠল, ঐ যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (চাদর দ্বারা) মাথা ঢেকে এদিকে আগমন করছেন। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وعنها قَالَت: بَينا نَحْنُ جُلُوسٌ فِي بَيْتِنَا فِي حَرِّ الظَّهِيرَةِ قَالَ قَائِلٌ لِأَبِي بَكْرٍ: هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُقْبِلًا مُتَقَنِّعًا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ এটি মূলত হিজরতের আলোচনা সম্বলিত বড় একটি হাদীসের অংশ বিশেষ।
এ ঘটনা হিজরতের পূর্বে মক্কায় ঘটেছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিপ্রহরে রৌদ্রত্তাপের মধ্যে চাদর কিংবা রুমাল দিয়ে মাথা ঢেকে আবূ বকর (রাঃ)-এর বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন। এ সুসংবাদ আবূ বকরকে দেয়ার জন্য লোকটি আবূ বকর-এর বাড়ীতে গিয়ে জোরে বলতে লাগলেন এই দেখ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ঢেকে তোমার বাড়ীর দিকে আগমন করছেন! ক্ষরত্তাপের দেশ আরবের লোকেরা রোদের কারণে মাথা ঢেকে চলাচল করত, ছাতা ব্যবহারে তারা তেমন অভ্যস্ত নয়। আজও তাদের মধ্যে এ অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়, তারা মাথায় ছাতার পরিবর্তে রুমাল ব্যবহার করে থাকেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথা ঢেকে চলা কি রোদের কারণে ছিল না অন্য কোন কারণে? তা নিয়ে ব্যাখ্যাকারগণ বিভিন্ন কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি ‘আরবের প্রথানুযায়ী রোদের উত্তাপ থেকে রক্ষার জন্যই চাদর বা রূমাল দ্বারা মাথা ঢেকে নিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি মূলত হিজরতের গোপন কথা আবূ বকরের নিকট বলার জন্য যাচ্ছিলেন, তাই লোকচক্ষু থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য চাদর দ্বারা মাথা ঢেকে নিয়েছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮০৭; ‘আওনুল মা‘বূদ ৪১৩৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১০-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেনঃ এক বিছানা পুরুষের জন্য, অপরটি তার স্ত্রীর জন্য এবং তৃতীয় বিছানা মেহমানের জন্য। আর চতুর্থখানা শয়তানের জন্য। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «فِرَاشٌ لِلرَّجُلِ وَفِرَاشٌ لِامْرَأَتِهِ وَالثَّالِثُ للضيف وَالرَّابِع للشَّيْطَان» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ একটি পরিবারের একজন পুরুষের জন্য একটি বিছানাই যথেষ্ট। দু’টি বিছানা হলে দ্বিতীয়টি তার স্ত্রীর জন্য ধরা হবে, আর তৃতীয়টি হলে তা হবে মেহমান-অতিথিদের জন্য। কিন্তু চতুর্থটি নিষ্প্রয়োজন। নিষ্প্রয়োজন কাজ অপচয়, অপচয়কারী শয়তানের ভাই; সুতরাং চতুর্থ বিছানাটি মূলত শয়তানেরই বিছানা হয়ে যায়। অত্র হাদীসে সেই দিকেই ইশারা করা হয়েছে। অবশ্য জনসংখ্যা বা পরিবারের সদস্য যদি বেশি থাকে যাদের শয়নের জন্য তিনের অধিক বিছানার প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা যে শয়তানের বিছানা হবে এমনটি নয়। স্ত্রীর জন্য আলাদা বিছানা তৈরি করা কোনই দোষের নয়, কেননা স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকেই অসুস্থতা বা অন্য কোন অনিবার্য কারণে পৃথক বিছানার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন।
উপরে বর্ণিত হাদীসের ভিত্তিতে কেউ কেউ স্ত্রীর সাথে এক বিছানায় শয়ন করা স্বামীর জন্য আবশ্যক নয় বলে মনে করেন, কিন্তু এটি অত্যন্ত দুর্বল কথা। কেননা স্ত্রীর সাথে শয়ন করা যদিও ওয়াজিব নয় কিন্তু আরো অন্যান্য হাদীসের দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, ওযর ছাড়া স্ত্রীর সাথে একই বিছানায় শয়ন করা উত্তম। কেননা এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট ‘আমল রয়েছে। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) উত্তম হওয়ার প্রমাণ দিতে গিয়ে বলেন, স্ত্রীর প্রতি প্রবৃত্তির আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও রাত্রিতে তাহাজ্জুদের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া কষ্টকরই বটে। বান্দা যখন স্ত্রীর পার্শ ছেড়ে তাহাজ্জুদে দণ্ডায়মান হয় আল্লাহ তখন ভীষণ খুশী হন। তিনি মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের) ডেকে বলেন, আমার বান্দার দিকে লক্ষ্য কর, সে তার পরিবার ছেড়ে আমার কাছে যা রয়েছে তার প্রতি উৎসাহিত হয়ে সালাতে দাঁড়িয়েছে.......। (মুসনাদে আহমাদ ১/৪১২)
অতএব এ প্রশংসা পেতে নিশ্চয় তাকে স্ত্রীর পার্শ্ব থেকে উঠে তাহাজ্জুদে দাঁড়াতে হবে, তাহলে স্ত্রীর পাশে এক বিছানায় শয়ন কি উত্তম নয়?
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৮৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৩৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১১-[৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ টাখনুর নিচে ইযার (লুঙ্গি) ঝুলায়, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَنْظُرُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى مَنْ جَرَّ إزَاره بطرا»
ব্যাখ্যাঃ ‘‘আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দিকে তাকাবেন না’’ এর অর্থ হলো রহমাতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করবেন না, তাকে ক্ষমা করবেন না, পাক করবেন না। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে গিরার নীচে কাপড় পরিধান করা হালাল বা বৈধ মনে করে এবং তাতে সে সীমালঙ্ঘন করে। অহংকার ও আত্মপ্রসাদে শারী‘আতের বিধানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকে। তবে ভুলক্রমে অথবা অসাবধানতার কারণে কাপড় টাখনুর নিচে গেলে এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের বর্ণনায় বুঝা যায় গিরার নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা অহংকার বা গর্ব ভরে না হলে তা হারাম নয়, তবে মাকরূহ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭৮৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১২-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলাবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যানুরূপ। তবে পূর্বের হাদীসে লুঙ্গির উল্লেখ হয়েছে আর অত্র হাদীসে কাপড়ের কথা উল্লেখ হয়েছে। সুতরাং লুঙ্গি, চাদর, জুব্বা যাই হোক না কেন যদি তা পরিধান করে অহংকার-গর্ব ভরে মাটিতে হেঁচড়িয়ে চলে তাহলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমাতের দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন না। অর্থাৎ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ المخيلة- البطر- الكبر- الزهؤ- التبخير শব্দগুলো হাদীসে ব্যবহার হয়েছে এর প্রত্যেকটির অর্থ কাছা-কাছি, প্রত্যেকটি শব্দ অহংকার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭৮৪; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৮৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৮১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৩-[১০] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি অহংকারবশতঃ তার ইযার (লুঙ্গি) হেঁচড়িয়ে যাচ্ছিল, এমতাবস্থায় তাকে জমিনে ধসিয়ে দেয়া হলো। সে কিয়ামত পর্যন্ত যমীনের ভেতর তলিয়ে যেতে থাকবে। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَجُرُّ إِزَارَهُ مِنَ الْخُيَلَاءِ خُسِفَ بِهِ فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ فِي الْأَرْضِ إِلى يومِ الْقِيَامَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ এটি অহংকার গর্ব ভরে চলার পরিণতির একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত।
মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি গর্ব ভরে লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলার কারণে জমিনে গিয়েছিল এবং কিয়ামত পর্যন্ত মাটির ভিতরে দাবতে থাকবে সম্ববত সে এই উম্মাতেরই এক লোক হবে, কিংবা হতে পারে পূর্ব জামানার কোন উম্মাতের কোন এক ব্যক্তি। ইমাম বুখারী এজন্যই হয়তো এটি বানী ইসরাঈলের আলোচনায় এনেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৪৮৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৪-[১১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ টাখনুর নিচে ইযারের যে অংশ থাকবে তা জাহান্নামে। (অর্থাৎ- কিয়দংশের জন্য সারা শরীরই আগুনে প্রজ্জ্বলিত হবে।) (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزَارِ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যাঃ হাদীসের মর্মকথা হলো গর্ব অহংকারবশত কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিধান করলেই শুধুমাত্র এ ধমকি প্রযোজ্য হবে। ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ ধরনের পোশাক পরিধানকারীর দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমতঃ যদি পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করে তাহলে এ কাজের পরিণতি হিসেবে পরিধানকারী নিজেই জাহান্নামে যাবে। দ্বিতীয়তঃ তার এ কাজটি জাহান্নামীদের কাজে পরিগণিত হবে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ লুঙ্গি, জামা, পায়জামা ও পাগড়ী- এ জাতীয় পোশাক ঝুলিয়ে টাখনুর নীচে অহংকারবশতঃ পরিধান করা বৈধ নয়।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অহংকারবশতঃ টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করা হারাম। অপরদিকে নারীদের কাপড় ঝুলিয়ে রাখা সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, নারীদের কাপড়ের আচল ঝুলিয়ে পরিধান করা বিধেয়। পুরুষের জামা, কাপড় ও লুঙ্গিসহ যাবতীয় পোশাক ‘নিসফে সাক’’ পর্যন্ত পরিধান করা সুন্নাতসম্মত। তবে টাখনু পর্যন্ত কাপড় পরিধান করা জায়িয। মোটকথা বিনা প্রয়োজনে পোশাক টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। আর অহঙ্কারবশতঃ পরা হারাম।
সুনান ইবনু মাজাহতে হাসান সনদে ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাটো হাতা বিশিষ্ট এবং নাতিদীর্ঘ জামা পরিধান করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭৮৭)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৫-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে তার বাম হাতে খেতে, একখানা জুতা পরে চলাফেরা করতে, ইশতিমালে সম্মা অবস্থায় চাদর পরিধান করতে এবং লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে একই কাপড়ে ইজত্বিবা করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ بِشِمَالِهِ أَو يمشي فِي نعل وَاحِد وَأَن يشْتَمل الصماء أَو يجتني فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ كَاشِفًا عَنْ فَرْجِهِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ বাম হাতে খানাপিনা করা নিষেধ। কেউ এটা হারাম পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা বলে মন্তব্য করেছেন। সহীহ হাদীসে এসেছে, শয়তান বাম হাতে খায় এবং পান করে, সুতরাং বাম হাতে খানাপিনা যে শয়তানী কাজ এতে কোন সন্দেহ নেই। মু’মিনকে অবশ্যই শয়তানী কর্মকাণ্ড পরিহার করে চলতে হবে।
একপায়ে জুতা পরিধান করে চলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ভদ্রতা এবং শিষ্টাচার পরিপন্থী তো বটেই।
‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এতে মানুষের স্বাভাবিক আকৃতির বিকৃতি ঘটে। এটা ভদ্রতা এবং গাম্ভীর্যতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পা উচু নীচুর ফলে শরীরের ভারসাম্যতা বিনষ্ট হয়, এতে চলাচল হয় কষ্টকর, এমনকি চলতে কখনো কখনো হোঁচট খেতে হয়।
(اشتمال الصماء) হলো উপর থেকে একটি কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে শরীর এভাবে ঢেকে দেয়া বা পেঁচিয়ে রাখা যে, কোন জায়গা দিয়ে হাত বের করার সুযোগ না থাকা। যেন সে এই কাপড়ের মধ্যে আবদ্ধ। ‘সম্মা’ নিষেধের কারণ হলো যে, এতে পাথরের ন্যায় এর সকল ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এ পোশাক সালাত আদায় ও অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
ইমাম ইবনুল হুমাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘সম্মা’ সালাতে সম্পূর্ণভাবে মাকরূহ। যেহেতু এটা এক কাপড়ে মাথাসহ সমস্ত শরীর আবৃত্ত করে রাখা, হাত বের করার কোন সুযোগ না থাকা। সুতরাং সালাতের প্রতিবদ্ধক হিসাবে তা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়।
‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ফুকাহাদের মতে ‘সম্মা’ হলো মাত্র একটি কাপড় পরিধান করা যা ছাড়া অন্য কোন কাপড় না থাকা এবং দু’ কাঁধের এক কাঁধের উপর তা তুলে রাখা। এতে লজ্জাস্থানের কিছু অংশ প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। বিধায় এটি হারাম।
মোটকথা নিশ্চিত যদি লজ্জাস্থান প্রকাশ হয় তবে তা হারাম, আর যদি প্রকাশের সম্ভাবনা থাকে হয় তবে মাকরূহ।
‘ইহ্তিবা’ বলা হয় এক কাপড় পরে নিতম্বের উপর বসা এবং দুই পায়ের নলা খাড়া রেখে পায়ের নলায় হাত অথবা কোন কাপড় দিয়ে একত্রিত করে রাখা। এতে লজ্জাস্থান প্রকাশ পেয়ে যায়, সুতরাং তা নিষেধ। আর যদি লজ্জাস্থান প্রকাশ না পায় তবে নিষেধ নয়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৯৯/৭০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৬-[১৩], ৪৩১৭-[১৪], ৪৩১৮-[১৫], ৪৩১৯-[১৬] ’উমার, আনাস, ইবনুয্ যুবায়র ও আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমী পোশাক পরিধান করবে, সে পরকালে তা পরতে পারবে না (তথা বঞ্চিত হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ عُمَرَ وَأَنَسٍ وَابْنِ الزُّبَيْرِ وَأَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الْآخِرَة»
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের আংশিক ব্যাখ্যা পূর্বের ৪৩১৬ নং হাদীসে অতিবাহিত হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনায় একাধিক সাহাবীর নাম এসেছে। এর কারণ সম্ভবত এই যে, এদের সকলেরই পৃথক পৃথক সনদে একই মতনে হাদীসটির বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু গ্রন্থকার সকলের একই বর্ণনা আলাদা আলাদা নামে উল্লেখ না করে সনদের শেষ নামটি উল্লেখ পূর্বক বর্ণনাটি সংকলন করেছেন।
রেশমী বস্ত্র শুধু পরিধানই যে নিষেধ তা নয়, বরং তার ব্যবহার অন্যান্য কাজেও নিষেধ অত্র হাদীস দ্বারা তাও স্পষ্ট। স্বণ-রৌপ্যের পাত্রে খানা পনা হারাম হওয়ার কারণ হলো এটা আল্লাহদ্রোহী অহংকারী রাজা বাদশাহদের কাজ যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। এ সব পাত্রে কিয়ামতের দিন জান্নাতীদের খাওয়ানো হবে।
পুরুষের জন্য রেশমী পোশাক পরিধান করা বৈধ নয়। এটা জান্নাতীদের পোশাক। ‘দুনিয়াতে যে রেশমী পোশাক পরিধান করবে সে পরকালে তা পরতে পারবে না’, এর অর্থ হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এ বিধান অবশ্য তার জন্য যিনি এটাকে হালাল জেনে পরিধান করবেন। পক্ষান্তরে কেউ যদি ঘটনাক্রমে পরিধান করেন অথবা হারাম জেনেই পরিধান করেছেন কিংবা রেশমী কাপড় পরিধান যে হারাম তা তিনি না জেনে পরিধান করেন তার জন্য এই ধমকি প্রযোজ্য নয়।
‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অধিকাংশ মুহাদ্দিসের ব্যাখ্যা হলো, যারা রেশমী পোশাক পরিধান করবে তারা السابقين الفائزين অর্থাৎ প্রথম সফলকামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। বরং জাহান্নামে দ হওয়ার পর সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে পরবর্তীতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৩২৪)
মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি গ্রন্থে এর পোষকতায় জুওয়াইরিয়াহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করবে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক পরিধান করাবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৩২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৭-[১৪]. দেখুন পূর্বের (৪৩১৬) নং হাদীস।
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ عُمَرَ وَأَنَسٍ وَابْنِ الزُّبَيْرِ وَأَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الْآخِرَة»
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৮-[১৫]. দেখুন ৪৩১৬ নং হাদীস।
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ عُمَرَ وَأَنَسٍ وَابْنِ الزُّبَيْرِ وَأَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الْآخِرَة»
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩১৯-[১৬]. দেখুন হাদীস নং ৪৩১৬।
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ عُمَرَ وَأَنَسٍ وَابْنِ الزُّبَيْرِ وَأَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَجْمَعِينَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الْآخِرَة»
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩২০-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই ব্যক্তিই দুনিয়াতে রেশমী পোশাক পরিধান করে থাকে, আখিরাতে যার ভাগে তা থাকবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا يَلْبَسُ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا مَنْ لَا خَلَاقَ لَهُ فِي الْآخِرَة»
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এতে দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রথমতঃ ‘আখিরাতে তার জন্য কোন অংশ নেই’ এর অর্থ হলো পরকালে জান্নাতে। আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমাতরাজিতে তার কোন প্রাপ্যতা নেই। দ্বিতীয়তঃ আখিরাতের বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসে তার কোন অংশ নেই। তিনি আরো বলেন, এ কথাটি তার জান্নাতে প্রবেশের অযোগ্যতা প্রমাণ করে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কখনো এ কথার মর্মার্থে বলা হয়ে থাকে যে, যার আখিরাতে কোন প্রাপ্যতা নেই সেই দুনিয়াতে রেশমী কাপড় পরিধান করে থাকে। আবার এমনটিও বলা হয় যে, যার কোন দীন ধর্ম নেই সেই দুনিয়াতে রেশমী কাপড় পরিধান করে।
প্রথমটি কাফিরদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়। আর দ্বিতীয়টি কাফির মুসলিম সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। অর্থাৎ- কাফিরের ক্ষেত্রে কথাটি প্রায়োগিক। কিন্তু ঈমানদারদের ব্যাপারে এটি হলো কঠোরতা প্রদর্শনই শুধু।
অথবা মু’মিনরা শুরুতেই জান্নাতে যাবে না বরং রেশমী কাপড় পরিধানের শাস্তি ভোগ করে, তারপর জান্নাতে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৬৮; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৩৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩২১-[১৮] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সোনা-রূপার পাত্রে পান এবং আহার করতে, মিহি ও মোটা রেশমী কাপড় পরিধান করতে এবং তার উপরে বসতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: نَهَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَشْرَبَ فِي آنِيَةِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ وَأَنْ نَأْكُلَ فِيهَا وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ وَالدِّيبَاجِ وَأَنْ نَجْلِسَ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ স্বর্ণ-রূপার পাত্রে খানাপিনা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিস্তারিত ব্বিরণ খানাপিনার অধ্যায়ে রয়েছে।
এখানে রেশমী বস্ত্র পরিধানের বিষয় আলোচিত হলো :
ফাতাওয়ায়ে কাযীখানে উল্লেখ রয়েছে যুদ্ধের সময় হোক বা অন্য সময়, নিরেট রেশমী তথা সম্পূর্ণ রেশমী কাপড় পরিধান হারাম। যে রেশমী পরিধান করবে সেই পাপী। ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহিমাহুমাল্লাহ) বলেনঃ যুদ্ধের সময় রেশমী কাপড় পরিধানে কোন অসুবিধা নেই। যদি কাপড়ের লম্বা দিকের সূতা রেশমী না হয় প্রস্থ্যের সুতা রেশমী হয় তাহলে এ ধরনের পোশাক যুদ্ধের বাহিরে পরিধান করা মাকরূহ, যুদ্ধের সময় বৈধ। আর যে কাপড়ে লম্বা দিকের সূতা রেশমী এবং প্রস্থ্যের দিকে রেশমীহীন তা সর্বাবস্থায় পরিধান বৈধ। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রেশমী কাপড় বিছানো এবং এতে ঘুমাতে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে রেশমী কাপড়ের বালিশ, পর্দা, গিলাফ ইত্যাদি ব্যবহার বৈধ, যদি এতে কোন ধরনের মূর্তির নকশা না থাকে।
অপরদিকে ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ এগুলোকেও মাকরূহ বলেছেন।
মোটকথা তাদের উভয়ের নিকট হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধটা হারাম পর্যায়ের। আর আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট মাকরূহে তানযীহি পর্যায়ের।
এই রেশমী বস্ত্র শিশুদেরও পরিধান করানো যাবে না। আর এ নিষেধাজ্ঞা নারীদের জন্য নয়, কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৩৭, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৭৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩২২-[১৯] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একখানা লালবর্ণের রেশমী চাদর হাদিয়া দেয়া হলো। তিনি তা আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আমি তা পরিধান করলাম, তখন আমি তাঁর চেহারায় ক্রোধের চিহ্ন দেখতে পেলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি তা তোমার নিকটে তোমার পরিধানের জন্য পাঠাইনি; বরং আমি তা তোমার কাছে এ উদ্দেশে পাঠিয়েছি যে, তুমি তা খন্ড করে মহিলাদের জন্য উড়না বানিয়ে তাদের দিয়ে দিবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم حُلّة سِيَرَاءَ فَبَعَثَ بِهَا إِلَيَّ فَلَبِسْتُهَا فَعَرَفْتُ الْغَضَبَ فِي وَجْهِهِ فَقَالَ: «إِنِّي لَمْ أَبْعَثْ بِهَا إِلَيْكَ لِتَلْبَسَهَا إِنَّمَا بَعَثْتُ بِهَا إِلَيْكَ لِتُشَقِّقَهَا خُمُراً بَين النساءِ»
ব্যাখ্যাঃ ‘হুল্লাহ’ বলা হয় চাদর ও লুঙ্গিকে, এটা গায়ের ও পরনের উভয় কাপড়কেই বুঝায়।
রেশমী সূতা যেহেতু পুরুষের জন্য পরিধান বৈধ নয়, তাই তিনি নারীদের ওড়নার কাজে ব্যবহারের জন্য ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে প্রদান করেন। তিনি তা বুঝতে না পেরে নিজেই পরিধান করা শুরু করে দেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দর্শনে ভীষণভাবে রাগান্বিত হন, এমন কি রাগের চিহ্ন তার চেহারার মধ্যে ফুটে উঠে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাগ আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। কেননা রেশমী পোশাক পরিধানে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন যার ফলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একসেট পোশাক হাদিয়া দেয়া হলে তিনি তা ‘আলী (রাঃ)-কে দিয়ে দেন। যা ছিল রেশমী কাপড় মিশ্রিত লুঙ্গি ও চাদর। কেউ কেউ বলেন, ঐ পোশাক নিরেট রেশমী কাপড়ের ছিল। অথচ নিরেট রেশমী কাপড় পরিধান করা হারাম। তবে রেশমী মিশ্রিত কাপড় পরিধান সংক্রান্ত আলোচনা ইতিপূর্বে হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পোশাক পরিহিত অবস্থায় তাকে দেখে রাগান্বিত হন। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত এ পোশাক পরিধান করার জন্য ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট পাঠাননি। আর ঐ পোশাকের অধিকাংশই রেশমী বা সিল্কের। যা পরিধান করা হারাম। অথবা ‘আলী (রাঃ) এটাকে মুত্তাক্বীদের পোশাক বহির্ভূত মনে করেননি। তাই তিনি তা পরিধান করেছেন। এটা টুকরো টুকরো করে মহিলাদের মাঝে বণ্টন করতেই পাঠানো হয়েছিল। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ফাতিমাদের মাঝে (بيت الفواطم অর্থাৎ ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ফাতিমা বিনতু আসাদ ইবনু হাশিম যিনি হলেন ‘আলী, জা‘ফার, ‘আক্বীল ও ত্বালিব -এর মা এবং ফাতিমা যিনি আসমা বিনতু হামযাহ্-এর মা, এটা মূলত সকল ফাতিমাদের বাড়ীতে তাদের মাঝে) বণ্টনের জন্যই প্রেরণ করেছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৮৪০; শারহুন নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৫৩১৩)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৩২৩-[২০] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমী কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। তবে এ পরিমাণ অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমা ও শাহাদাত অঙ্গুলিদ্বয়কে একত্রে মিলিয়ে উপর দিকে উঠিয়ে ইশারা করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوْلُ
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ إِلَّا هَكَذَا وَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إصبعيه: الْوُسْطَى والسبابة وضمهما
ব্যাখ্যাঃ পূর্বে উল্লেখ হয়েছে রেশমী বস্ত্র পরিধান করা নিষেধ।
অত্র হাদীসে তা থেকে ইসতিসনা করে দুই এক আঙ্গুল পরিমাণকে ছাড় দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কোন কাপড়ের মধ্যে যদি দুই এক আঙ্গুল পরিমাণ রেশমীর অংশ থাকে তবে তা অনুমোদিত। একজন পুরুষ এতটুকু রেশমী কাপড় পরিধান করতে পারবেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ দু’টি আঙ্গুলের পরিমাণ বৈধ করেছেন সেটাও স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮২৯, শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২০৬৯/১২)