মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৭৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৭৯-[১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) - আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন এবং তখন থেকে কিয়ামত অবধি যা কিছু ঘটবে তার সকল কিছুই বর্ণনা করেন। তাঁর সেই ভাষণটি যারা স্মরণে রাখতে পারে তারা স্মরণে রেখেছে, আর যারা ভুলে যাওয়ার তার ভুলে গিয়েছে। নিশ্চয় আমার বন্ধুগণ (সাহাবায়ি কিরামগণ)ও সে বিষয়ে অবগত আছেন। অবশ্য যখন কোন ঘটনা সামনে আসে, যার কথা আমি ভুলে গিয়েছি, তখন তাঁর [রাসূল (সা.) -এর] সেই দিনের ভাষণটি আমার স্মরণে পড়ে। যেমন- উপস্থিত হলে তাকে দেখামাত্রই চেনা যায়- এই তো সেই অমুক লোক। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

عَن حُذَيْفَة قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مقَامه إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا حَدَّثَ بِهِ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ قَدْ عَلِمَهُ أَصْحَابِي هَؤُلَاءِ وَإِنَّهُ لَيَكُونُ مِنْهُ الشَّيْءُ قَدْ نَسِيتُهُ فَأَرَاهُ فَأَذْكُرُهُ كَمَا يَذْكُرُ الرَّجُلُ وَجْهَ الرَّجُلِ إِذَا غَابَ عَنْهُ ثُمَّ إِذَا رَآهُ عرفه. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6604) ومسلم (23 / 2891)، (7263) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن حذيفة قال: قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم مقاما ما ترك شيىا يكون في مقامه الى قيام الساعة الا حدث به حفظه من حفظه ونسيه من نسيه قد علمه اصحابي هولاء وانه ليكون منه الشيء قد نسيته فاراه فاذكره كما يذكر الرجل وجه الرجل اذا غاب عنه ثم اذا راه عرفه. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (6604) ومسلم (23 / 2891)، (7263) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) আবূ ইদরীস আল খাওলানী-এর সূত্রে হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর শপথ! আমার ও কিয়ামতের মধ্যবর্তী সময়ে যা কিছু সংঘটিত হবে, তা নিশ্চয় আমি অবগত আছি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর পরবর্তী উম্মাতকে সতর্ক করার জন্যই এসব বিষয় বর্ণনা করেছেন। (ফাতহুল বারী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮০-[২] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, মানুষের হৃদয়ে ফিতনাসমূহ এমনভাবে প্রবেশ করে, যেমন- আঁশ একটির পর আরেকটি বিছানো হয়ে থাকে এবং যেই হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা প্রবেশ করে তাতে একটি কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তাকে জায়গা দেয় না। তাতে একটি সাদা দাগ পড়ে। ফলে মানুষের অন্তরসমূহ পৃথক পৃথক দু’ভাগে আলাদা হয়ে যায়। একপ্রকার অন্তর হয় মর্মর পাথরের মতো শ্বেত, যাকে আসমান ও জমিন বহাল থাকা পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) কোন ফিতনাই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।
অপরদিকে দ্বিতীয় প্রকার অন্তর হয় কয়লার মতো কালো। যেমন- উপুড় হওয়া পাত্রের মতো, যাতে কিছুই ধারণ করার ক্ষমতা থাকে না। তা ভালোকে ভালো জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখে না, ফলে শুধুমাত্র তাই গ্রহণ করে যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা হয়। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَيُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نَكَتَتْ فِيهِ نُكْتَةً سَوْدَاءَ وَأَيُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَتْ فيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى يَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ: أَبْيَضُ بِمثل الصَّفَا فَلَا تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَالْآخَرُ أَسْوَدُ مِرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجْخِيًّا لَا يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلَّا مَا أشْرب من هَوَاهُ رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (231 / 144)، (369) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: تعرض الفتن على القلوب كالحصير عودا عودا فاي قلب اشربها نكتت فيه نكتة سوداء واي قلب انكرها نكتت فيه نكتة بيضاء حتى يصير على قلبين: ابيض بمثل الصفا فلا تضره فتنة ما دامت السماوات والارض والاخر اسود مربادا كالكوز مجخيا لا يعرف معروفا ولا ينكر منكرا الا ما اشرب من هواه رواه مسلم رواہ مسلم (231 / 144)، (369) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেছেন : কিয়ামাতের পূর্বে এর আলামাতসমূহ পরপর ধারাবাহিকভাবে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ পাবে। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যেমনভাবে মাদুরের পাতাগুলো সুন্দরভাবে পরস্পর সাজিয়ে বসানো হয়। তেমনিভাবেই মানুষের হৃদয়ে কিয়ামতপূর্ব ফিতনাগুলো উদয় হবে এবং এসবের দ্বারা তারা প্রভাবিত হবে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন : কিয়ামতের পূর্বে ফিতনার আবির্ভাবের কারণে মানুষ দুই দলে বিভক্ত হবে। একদল হবে সাদা মনের, আরেক দল হবে কালো মনের অধিকারী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮১-[৩] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে দু’টি হাদীস বর্ণনা করেন। যার একটি আমি সংঘটিত হতে দেখেছি। আর অপরটির প্রতীক্ষায় আছি।
১. তিনি (সা.) আমাদেরকে বলেছেন যে, আমানত মানুষের অন্তরসমূহের অন্তস্থলে (আল্লাহর নিকট হতে) অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তারা কুরআন হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন, তারপর সুন্নাহ হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
২. আমানত কিরূপে উঠে যাবে- এ কথাটিও তিনি (সা.) আমাদেরকে বলেছেন। এমন সময় মানুষ নিদ্রা যাবে, এমতাবস্থায় তার অন্তর হতে আমানত তুলে নেয়া হবে। তখন শুধুমাত্র কালো দাগের মতো একটি সাধারণ চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর মানুষ আবার নিদ্রা যাবে, তখন আমানত উঠিয়ে নেয়া হবে। এতে এমন ফোসকা সদৃশ চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে, যেমন জ্বলন্ত অগ্নিশিখা, তাকে তুমি নিজের পায়ের উপর রেখে রোমন্থন করলে তথায় ফুলে উঠে। তুমি অবশ্য স্ফীতি দেখতে পাবে, কিন্তু তার ভিতরে কিছুই নেই। আর লোকজন ভোরে উঠে স্বভাবত ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত হবে, কিন্তু কাউকেও আমানত রক্ষাকারী পাবে না। তখন বলা হবে, অমুক সম্প্রদায়ে একজন বিশ্বস্ত ও আমানতদার লোক রয়েছে। আবার কোন ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হবে যে, সে কতই জ্ঞানী! সে কতই চালাক ও চতুর! এবং সে কতই সচেতন ও দৃঢ় প্রত্যয়ী! অথচ তার অন্তরে রাই পরিমাণও ঈমান নেই। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الْآخَرَ: حَدَّثَنَا: «إِنَّ الْأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ» . وَحَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِهَا قَالَ: يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الْأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ أَثَرُهَا مِثْلُ أَثَرِ الْوَكْتِ ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ قتقبض فَيَبْقَى أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الْمَجْلِ كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَيْءٌ وَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ وَلَا يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الْأَمَانَةَ فَيُقَالُ: إِنَّ فِي بَنِي فُلَانٍ رَجُلًا أَمِينًا وَيُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدُهُ وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6497) و مسلم (230 / 143)، (367) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعنه قال: حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حديثين رايت احدهما وانا انتظر الاخر: حدثنا: «ان الامانة نزلت في جذر قلوب الرجال ثم علموا من القران ثم علموا من السنة» . وحدثنا عن رفعها قال: ينام الرجل النومة فتقبض الامانة من قلبه اثرها مثل اثر الوكت ثم ينام النومة قتقبض فيبقى اثرها مثل اثر المجل كجمر دحرجته على رجلك فنفط فتراه منتبرا وليس فيه شيء ويصبح الناس يتبايعون ولا يكاد احد يودي الامانة فيقال: ان في بني فلان رجلا امينا ويقال للرجل: ما اعقله وما اظرفه وما اجلده وما في قلبه مثقال حبة من خردل من ايمان . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (6497) و مسلم (230 / 143)، (367) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, “যার আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই। তাহরীর গ্রন্থকার সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, কিয়ামতের পূর্বে ধীরে ধীরে মানুষের অন্তর হতে আমানতদারিতার অনুভূতি হ্রাস পাবে। আমানতদারিতার প্রথমাংশ বিদূরিত হলে হৃদয়ে খিয়ানতের কালো দাগ পড়ে যায়। এমনিভাবে আস্তে আস্তে আমানতদারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, আমানত রক্ষা করা পরিপূর্ণ ঈমানের নিদর্শন। আমানতদারিতা হ্রাস পেলে ঈমানের ঘাটতি হয়। কিয়ামতের পূর্বে আমানতদারিতা প্রচণ্ডভাবে কমে যাবে যে, আমানতদার লোক বিরল হবে। তখন বলা হবে অমুক গোত্রে একজন আমানতদার লোক আছেন। ইমাম আবূল হাসান আল ওয়াহিদী (রহিমাহুল্লাহ) (إنَّاعَرَضْنَا الْأَمَانَةَ....) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: আমানত হচ্ছে সেসব ফরয কাজসমূহ যা আল্লাহর বান্দাদের জন্য প্রতিপালন আবশ্যক করেছেন। হাদীসের শেষাংশের সারকথা হচ্ছে, শেষ যামানায় মানুষেরা অন্যান্য ব্যক্তির চতুরতা, বুদ্ধি ও শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসায় অধিক ব্যাপৃত হবে। অপরদিকে জ্ঞানী ও ‘আমলদার কারো প্রশংসা করবে না।

হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : দীন পুরোটাই হচ্ছে আমানত। আবূল আলিয়া (রহিমাহুল্লাহ)এর মতে আল্লাহ তা'আলার আদেশকৃত ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়সমূহ আমানত।

মুকাতিল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: আনুগত্যই হচ্ছে আমানত। ইমাম ওয়াহিদী (রহিমাহুল্লাহ)-র মতে, অধিকাংশ তাফসীরকারকের মত এটাই। আনুগত্য ও আল্লাহর ফরযকৃত বিষয়সমূহ যা আদায় করলে সাওয়াব অর্জন হয় এবং নষ্ট করলে শাস্তি পেতে হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

তাহরীর গ্রন্থকারের মতে, আলোচ্য হাদীসের সারমর্ম হচ্ছে- কিয়ামতের পূর্বে মানুষের হৃদয় হতে ধীরে ধীরে আমানতের অনুভূতি দূর হয়ে যাবে এবং আমানতদার লোকের সংখ্যা হবে বিরল। অতঃপর তা একেবারে বিলীন হয়ে যাবে। এমনিভাবে আমানতদার ব্যক্তির সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। আমানতের বিষয়টি হৃদয়ের গহীনে অবস্থিত, তা গোপন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

মুহাদ্দিসীন কিরামের মতে, আমানত কোন ব্যক্তির হৃদয়ের জ্যোতিস্বরূপ। বিপর্যয়ের যুগে ধীরে ধীরে এই আলো মানুষের হৃদয় হতে মুছে গিয়ে পরিশেষে সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে। তবে কতিপয় মুষ্টিমেয় ঈমানদার মুমিন ব্যক্তি আমানতদার থাকবেন এবং তারা হবেন সংখ্যায় খুবই কম। দিন দিন আমানতদার ব্যক্তি কমে গিয়ে আমানতদার ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হবে।

মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ ইবনু হিব্বানে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত সংকলিত হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : “যার আমানতদারিতা নেই তার দীন নেই।” ইমাম আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় সহীহ আল জামি' গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। উক্ত হাদীসে এসেছে- “যার আমানতদারিতা নেই তার ঈমান নেই এবং যার প্রতিশ্রুতি নেই তার দীন নেই।” (তুহফাতুল আহওয়াযী)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮২-[8] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম এই ভয়ে যেন আমি তাতে লিপ্ত না হই। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এক সময় মূর্খতা ও অকল্যাণের মাঝে নিমজ্জিত ছিলাম অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই কল্যাণ (দীন-ইসলাম) দান করেন। তবে কি এ কল্যাণের পর পুনরায় অকল্যাণ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম সেই অকল্যাণের পরে কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা আসবে, তবে তা হবে ধোঁয়াযুক্ত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেই ধোঁয়া কি ধরনের? তিনি (সা.) বললেন, লোকেরা আমার সুন্নত বর্জন করে অন্য তরীকাহ্ গ্রহণ করবে এবং আমার পথ ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তখন তুমি তাদের মধ্যে ভালো কাজও দেখতে পাবে এবং মন্দ কাজও। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যাণের পরও কি অকল্যাণ আগমন করবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, জাহান্নামের পাশে দাঁড়িয়ে কতক আহ্বানকারী লোকেদেরকে সেই দিকে ডাকবে। যারা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে তাদেরকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে তাদের পরিচয় অবহিত করুন। তিনি (সা.) বললেন, তারা আমাদের মতোই মানুষ হবে এবং আমাদের ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম, আমি সে অবস্থায় উপনীত হলে তখন আমাকে কি কি অদেশ দেন? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি মুসলিমদের দল ও মুসলিমদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, সে সময় যদি কোন মুসলিম জামা’আত ও মুসলিম ইমাম না থাকে (তখন আমাকে কি করেতে হবে)? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি সেই সমস্ত বিচ্ছিন্ন দলকে বর্জন করবে, যদিও তোমাকে গাছের শিকড়ের আশ্রয় নিতে হয় এবং তুমি এই নির্জন অবস্থায় থাকবে যতক্ষণ না তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয় (অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত বাতিল থেকে দূরে অবস্থান করতে হবে, এতে যে কোন দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারে তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ মুসলিম-এর এক রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার (ওফাতের) পরে এমন কতিপয় ইমাম ও বাদশাহর আগমন ঘটবে যারা আমার নির্দেশিত পথে চলবে না এবং আমার সুন্নাত ও তরীকানুযায়ী আমল করবে না। আবার তাদের মধ্যেও এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে যারা শরীরে গঠনে এবং চেহারা আকৃতিতে মানুষই হবে, কিন্তু তাদের অন্তরসমূহ হবে শয়তানের মতো। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি আমি সেই অবস্থায় পতিত হই তখন আমার কর্তব্য কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, তোমার আমির (শাসক) যা বলে তা মানবে এবং তার অনুসরণ করবে, যদিও তোমার পিঠে আঘাত করা হয় এবং তোমার ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, তবুও তার নির্দেশ মেনে চলবে এবং তার আনুগত্য করবে।

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَن الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: «نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ» . قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: «قَوْمٌ يَسْتَنُّونَ بِغَيْرِ سُنَّتِي وَيَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ» . قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: «نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا. قَالَ: «هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا» . قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: «تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ» . قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ؟ قَالَ: «فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: قَالَ: «يَكُونُ بَعْدِي أَئِمَّةٌ لَا يَهْتَدُونَ بِهُدَايَ وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَتِي وَسَيَقُومُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الشَّيَاطِينِ فِي جُثْمَانِ إِنْسٍ» . قَالَ حُذَيْفَةُ: قُلْتُ: كَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ؟ قَالَ: تَسْمَعُ وَتُطِيعُ الْأَمِيرَ وَإِنْ ضَرَبَ ظهرك وَأخذ مَالك فاسمع وأطع

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3606) و مسلم (52 ، 51 / 1847)، (4784 و 4785) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعنه قال: كان الناس يسالون رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الخير وكنت اساله عن الشر مخافة ان يدركني قال: قلت: يا رسول الله انا كنا في جاهلية وشر فجاءنا الله بهذا الخير فهل بعد هذا الخير من شر؟ قال: «نعم» قلت: وهل بعد ذلك الشر من خير؟ قال: «نعم وفيه دخن» . قلت: وما دخنه؟ قال: «قوم يستنون بغير سنتي ويهدون بغير هديي تعرف منهم وتنكر» . قلت: فهل بعد ذلك الخير من شر؟ قال: «نعم دعاة على ابواب جهنم من اجابهم اليها قذفوه فيها» . قلت: يا رسول الله صفهم لنا. قال: «هم من جلدتنا ويتكلمون بالسنتنا» . قلت: فما تامرني ان ادركني ذلك؟ قال: «تلزم جماعة المسلمين وامامهم» . قلت: فان لم يكن لهم جماعة ولا امام؟ قال: «فاعتزل تلك الفرق كلها ولو ان تعض باصل شجرة حتى يدركك الموت وانت على ذلك» . متفق عليه. وفي رواية لمسلم: قال: «يكون بعدي اىمة لا يهتدون بهداي ولا يستنون بسنتي وسيقوم فيهم رجال قلوبهم قلوب الشياطين في جثمان انس» . قال حذيفة: قلت: كيف اصنع يا رسول الله ان ادركت ذلك؟ قال: تسمع وتطيع الامير وان ضرب ظهرك واخذ مالك فاسمع واطع متفق علیہ ، رواہ البخاری (3606) و مسلم (52 ، 51 / 1847)، (4784 و 4785) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, আলোচ্য হাদীসে অকল্যাণ/অনিষ্ট দ্বারা ফিতনাহ্ উদ্দেশ্য। তাছাড়া এ দ্বারা গোমরাহী ও বিদ'আতের প্রসার বুঝানো হয়েছে।
উক্ত হাদীসে আইয়্যামে জাহিলিয়্যাত দ্বারা তাওহীদ ও নুবুওয়্যাত সম্পর্কে অজ্ঞতাকে উদ্দিষ্ট করা হয়েছে। আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের পর নবী (সা.) -এর আগমনের বরকতে আল্লাহ তা'আলা অশেষ কল্যাণ প্রদান করেছেন এবং কুফর ও ভ্রষ্টতার ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছেন। অতঃপর আবার অকল্যাণ সংঘটিত হবে এবং তারপর আবারো কল্যাণ আসবে, তবে তার সাথে আঁধারও থাকবে। এ সময় লোকজন দীনের সাথে সুন্নতের পরিপন্থী বিষয়সমূহ দীন হিসেবে পালন করবে এবং নবী  (সা.)-এর তরীকা ছেড়ে ভিন্ন তরীকা গ্রহণ করবে।
কারো মতে, আলোচ্য হাদীসে প্রথম ফিতনাহ্ দ্বারা উসমান (রাঃ)-এর হত্যা ও তৎপরবর্তী ফিতনাকে বুঝানো হয়েছে। এরপরের কল্যাণ দ্বারা খলীফাহ্ ‘উমার ইবনু আবদুল আযীয-এর খিলাফতকাল উদ্দেশ্য। অতঃপর এমন কিছু রাজা বাদশা আসবে যারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভালো-মন্দ উভয় প্রকার কাজ করবে। কারো মতে, উসমান (রাঃ) হত্যার পরবর্তী ফিতনার পর হাসান (রাঃ) ও মু'আবিয়াহ্ (রাঃ) -এর মধ্যকার সন্ধি চুক্তিকে কল্যাণ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

শেষ যামানায় এমন কিছু দা'ঈ বা ‘আলিমের আবির্ভাব হবে যারা মানুষকে ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, সন্দেহ সংশয় দ্বারা মানুষকে হিদায়াত থেকে বিরত রাখবে। সুন্নত ব্যতিরেকে বিদআতের দিকে এবং সংযম ব্যতীত পার্থিব আকাক্ষার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে।
এ কারণেই নবী (সা.) এ সকল দা'ঈ বা আহ্বায়কের ডাকে সাড়া দেয়াকে গোমরাহীতে প্রবেশ ও জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কোন কোন বিদ্বান, এ সকল ভ্রষ্ট দা'ঈ দ্বারা খারিজী ও রাফিজী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতৃপর্যায়ের লোকেদেরকে বুঝিয়েছেন, যারা আখিরী যামানায় মানুষের নিকট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, নেতৃত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষা করবে যদিও তাদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলি বিদ্যমান থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা ভালো ’আমলের দিকে দ্রুত অগবর্তী হও ঘুটঘুটে তিমির রাত্রির অংশ সদৃশ ফিতনার পতিত হওয়ার পূর্বেই যখন কোন লোক ভোরে উঠবে ঈমানদার হয়ে আর সন্ধ্যা করবে কুফরী অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে মু’মিন অবস্থায় আর প্রভাতে উঠবে কাফির হয়ে। সে ইহকালীন সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দীন ও ঈমানকে বিক্রয় করে দেবে। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «بَادرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتناً كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا وَيُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعرْض من الدُّنْيَا» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (186 / 118)، (313) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «بادروا بالاعمال فتنا كقطع الليل المظلم يصبح الرجل مومنا ويمسي كافرا ويمسي مومنا ويصبح كافرا يبيع دينه بعرض من الدنيا» . رواه مسلم رواہ مسلم (186 / 118)، (313) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে ফিতনার ব্যাপকতা প্রকাশের পূর্বে সৎ কাজের প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফিতনাহ্ বলতে মুসলিমদের মাঝে দীন ও দুনিয়াবী বিষয়কে কেন্দ্র করে হত্যা, লুটতরাজ সংঘর্ষ ও পারস্পরিক মতবিরোধ চরম পর্যায়ে পৌছবে। এতে সাধারণ মুসলিমগণ সঠিকভাবে নিরাপদে ‘ইবাদত-বন্দেগী পালন করতে সক্ষম হবে না। ফিতনার ভয়াবহতা এতটাই ব্যাপক হবে যে, একদিনের মাঝেই মানুষ সকাল-সন্ধ্যায় ঈমানহারা হয়ে যাবে। সেই সময়ের ফিতনাকে আঁধার রাতের সাথে তুলনা করে এর রহস্যময় অস্পষ্টতাকে বুঝানো হয়েছে। এর কারণ উদঘাটন ও পরিত্রাণের উপায় বের করাও কঠিন হয়ে যাবে।
ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, শেষ যামানার ফিতনাগুলো হবে কঠিন, বিভৎস, জটিল ও অস্পষ্ট। অল্প সময়ের ব্যবধানে মানুষের ব্যাপক পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ মানুষের কথা, কাজ ও অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। যেমন অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, আমানতের খিয়ানত করা, সৎ-অসৎ কাজ, সুন্নাত-বিদ্আত এবং ঈমান ও কুফর। অতএব, এসব ফিতনাহ্ হতে দূরে অবস্থান করা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংশ্রব বর্জন করাই সর্বোত্তম। এসব ফিতনাহ্ হতে দূরে থাকার জন্য নবী (সা.) কিছু পদ্ধতি জানিয়ে দিয়েছেন। তন্মধ্যে প্রধান হলো, ধারালো অস্ত্র ভোঁতা করে দেয়া। এসব ফিতনায় কেউ যদি কোনভাবে আক্রান্ত হয়, তবে সেক্ষেত্রে আদম (আঃ)-এর পুত্রদ্বয়ের মাঝে শ্রেষ্ঠ হাবিলের ভূমিকা পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণেই “ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদনে প্রতিযোগিতার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।

ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইমাম তবারানী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ উমামাহ হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, শীঘ্রই এমন ফিতনাহ্ আপতিত হবে যে, সকালে মানুষ মু'মিন থাকবে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে জ্ঞানের মাধ্যমে পরিত্রাণ দিবেন সে ব্যতীত। (শারহু ইবনে মাজাহ ২/১৩০৫)
ইমাম তিরমিযী ও ইমাম হাকিম (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় গ্রন্থদ্বয়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তোমরা সাতটি বিষয়ের অপেক্ষার পূর্বে সৎকাজে প্রতিযোগিতা কর, সেগুলো হলো : বিস্মৃতকারী দারিদ্রতা, সীমালঘনকারী সচ্ছলতা, ধ্বংসাত্মক ব্যাধি, হঠাৎ মৃত্যু অথবা দাজ্জালের আগমন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৪-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শীঘ্রই এমন ফিতনাহ দেখা দেবে, যখন বসা লোক দাঁড়িয়ে থাকা লোক অপেক্ষা উত্তম হবে। আর চলমান ব্যক্তি দ্রুতগামী অপেক্ষা উত্তম হবে। এমনকি যে ব্যক্তি উক্ত ফিতনার দিকে চক্ষু তুলে দেখবে, ফিতনাহ তাকে নিজের দিকে টেনে নিবে। অতএব যে ব্যক্তি তা হতে মুক্ত স্থান অথবা আশ্রয়স্থল পাবে, তা দ্বারা তারা নিজেকে রক্ষা করা উচিত। (বুখারী ও মুসলিম)

আর সহীহ মুসলিম-এর এক রিওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন এক ফিতনাহ্ আগমন করবে তখন নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত ব্যক্তি হতে শ্রেয় হবে। আর জাগ্রত ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তি হতে শ্রেয় হবে এবং দাঁড়ানো ব্যক্তি দ্রুতগামী অপেক্ষা শ্রেয় হবে। অতএব যে ব্যক্তি তা হতে নিরাপদ স্থান অথবা আশ্রয়স্থল পায়, সে যেন অবশ্যই ঐ আশ্রয়স্থলে অবস্থান নেয়।

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَكُونُ فِتَنٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ من الْمَاشِي والماشي فِيهِ خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ فَمن وجد ملْجأ أَو معَاذًا فليَعُذْ بِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: قَالَ: «تَكُونُ فِتْنَةٌ النَّائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْيَقْظَانِ واليقظانُ خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي فَمن وجد ملْجأ أومعاذا فليستعذ بِهِ»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3601) و مسلم (12 ۔ 10 / 2886)، (7247) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ستكون فتن القاعد فيها خير من القاىم والقاىم فيها خير من الماشي والماشي فيه خير من الساعي من تشرف لها تستشرفه فمن وجد ملجا او معاذا فليعذ به» . متفق عليه. وفي رواية لمسلم: قال: «تكون فتنة الناىم فيها خير من اليقظان واليقظان خير من القاىم والقاىم فيها خير من الساعي فمن وجد ملجا اومعاذا فليستعذ به» متفق علیہ ، رواہ البخاری (3601) و مسلم (12 ۔ 10 / 2886)، (7247) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কিরাম উল্লেখ করেছেন যে, শেষ যুগে ফিতনাগুলো হবে অসংখ্য ও ধারাবাহিকভাবে আগত। ইমাম ইবনুত্ তীন (রহিমাহুল্লাহ) দাউদী হতে বর্ণনা করেন, উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ফিতনাগুলোয় যারা সরাসরি আক্রান্ত হবে তাদের পরস্পরের অবস্থা হবে অপেক্ষাকৃত গুরুতর। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যারা এসব ফিতনায় সরাসরি অংশ নিবে। কেননা, তাদের মাধ্যমে ফিতনার প্রসার ঘটবে ও অন্যরা এতে আক্রান্ত হবে। এদের মধ্যে যারা এসব ফিতনায় সবচেয়ে কম আক্রান্ত হবে তারাই হবে ভালো মানুষ। অতএব শেষ যামানার ফিতনাহ্ ও বিশৃঙ্খলা থেকে যত বেশি দূরে থাকা সম্ভব ততই ঈমানদারদের জন্য লাভজনক ও কল্যাণকর। (তুহফাতুল আহওয়াযী)

ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, হাদীসের মূল ভাষ্য হচ্ছে, ফিতনার যুগে কোনভাবেই হানাহানিতে যোগ দেয়া যাবে না। উলামায়ে কিরাম ফিতনার যুগে হানাহানিতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। কতিপয় সাহাবায়ি কিরামের মতে, ফিতনাহ বা বিশৃঙ্খলার সময় পারস্পরিক যুদ্ধে জড়ানো যাবে না। এমনকি কেউ যদি ঘরে প্রবেশ করেও কাউকে হত্যা করতে চায়। এমতাবস্থায় নিজেকে রক্ষার জন্য হলেও হানাহানিতে যুক্ত হওয়া যাবে না। আবূ বাকরাহ্ (রাঃ) এই অভিমত দিয়েছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার, ইমরান ইবনু হুসায়ন ও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরামের মতে, নিজেকে রক্ষা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশে হানাহানিতে যুক্ত হওয়া যাবে না।
অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরাম ও তাবিঈ এবং মুসলিম উলামায়ি কিরামের মতে, সূরাহ্ আল হুজুরাতের ৯ নং আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমালঙ্নকারী ও বিদ্রোহীদের দমনে ফিতনার যুগে হকপন্থীদের সাহায্য করা ও তাদের পক্ষাবলম্বন করা ওয়াজিব। যেমন, আল্লাহ বলেন : “যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো।” এ মতটিই সহীহ। (তুহফাতুল আহওয়াযী)

ইমাম হাকিম (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় জামি আস্ সগীরে খালিদ ইবনু ‘আরাফাহ্ হতে বর্ণনা করেন যে, শীঘ্রই অনেক ফিতনাহ্, দলাদলি ও মতবিরোধ দেখা দিবে, তুমি যদি পার, তবে নিহত হবে হত্যাকারী নয়। (জামি আস্ সগীর ২/২৮৮, হা. ৪৬৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৫-[৭] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - বলেছেন : অচিরেই বিভিন্ন ধরনের ফিতনাহ্ দেখা দেবে। জেনে রাখ, এটার পর নানান ধরনের ফিতনাহ্ এসে পড়বে, সে সময় বসা অবস্থায় থাকা ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির তুলনায় হবে উত্তম এবং চলমান ব্যক্তি উক্ত ফিতনার দিকে দ্রুতগামী ব্যক্তির তুলনায় হবে উত্তম। জেনে রেখ! যখন সেই ফিতনাহ সংঘটিত হবে তখন যার কাছে উট বকরি আছে সে যেন তা নিয়ে থাকে। আর যার ভূসম্পত্তি আছে, সে যেন উক্ত জমি-ভূমি নিয়েই থাকে। এ সময় জনৈক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! যদি কারো উট, বকরি ও ভূসম্পত্তি না থাকে (তখন কি করবে)? তিনি (সা.) বললেন, তখন সে যেন নিজের তলোয়ারের প্রতি দৃষ্টি দেয় এবং তার ধার-পার্শ্ব দিয়ে পাথরে আঘাত করে তা ভেঙ্গে ফেলে, অতঃপর সম্ভব হলে উক্ত ফিতনার স্থান থেকে পালিয়ে বাঁচবে। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি তোমার আদেশসমূহ পৌছিয়ে দিয়েছি? এ কথাটি তিনি (সা.) তিনবার বললেন। এ সময় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! যদি কোন লোক বলপূর্বক আমাকে নিয়ে দুই দলের কোন এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়, অতঃপর কোন লোক তলোয়ারের আঘাতে আমাকে হত্যা করে অথবা তীর এসে আমায় বিধে এবং তাতে আমার মৃত্যু ঘটে, তখন (আমার পরিণাম সম্পর্কে আপনার কি মতামত? উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, সে তার নিজের এবং তোমার গুনাহ বহন করবে এবং জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتَنٌ أَلَا ثُمَّ تَكُونُ فِتنٌ أَلا ثمَّ تكونُ فتنةٌ القاعدُ خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِي فِيهَا وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي إِلَيْهَا أَلَا فَإِذَا وَقَعَتْ فَمَنْ كَانَ لَهُ إِبل فَلْيَلْحَقْ بِإِبِلِهِ وَمَنْ كَانَ لَهُ غَنَمٌ فَلْيَلْحَقْ بغنمه وَمن كَانَت لَهُ أرضٌ فَلْيَلْحَقْ بِأَرْضِهِ» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ مَنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ إِبِلٌ وَلَا غَنَمٌ وَلَا أَرْضٌ؟ قَالَ: «يَعْمِدُ إِلَى سَيْفِهِ فَيَدُقُّ عَلَى حَدِّهِ بِحَجَرٍ ثُمَّ لِيَنْجُ إِنِ اسْتَطَاعَ النَّجَاءَ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ؟» ثَلَاثًا فَقَالَ: رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ أُكْرِهْتُ حَتَّى ينْطَلق بِي إِلَى أحدالصفين فَضَرَبَنِي رَجُلٌ بِسَيْفِهِ أَوْ يَجِيءُ سَهْمٌ فَيَقْتُلُنِي؟ قَالَ: «يَبُوءُ بِإِثْمِهِ وَإِثْمِكَ وَيَكُونُ مِنْ أَصْحَابِ النَّار» رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (13 / 2887)، (7250) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي بكرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انها ستكون فتن الا ثم تكون فتن الا ثم تكون فتنة القاعد خير من الماشي فيها والماشي فيها خير من الساعي اليها الا فاذا وقعت فمن كان له ابل فليلحق بابله ومن كان له غنم فليلحق بغنمه ومن كانت له ارض فليلحق بارضه» فقال رجل: يا رسول الله ارايت من لم يكن له ابل ولا غنم ولا ارض؟ قال: «يعمد الى سيفه فيدق على حده بحجر ثم لينج ان استطاع النجاء اللهم هل بلغت؟» ثلاثا فقال: رجل: يا رسول الله ارايت ان اكرهت حتى ينطلق بي الى احدالصفين فضربني رجل بسيفه او يجيء سهم فيقتلني؟ قال: «يبوء باثمه واثمك ويكون من اصحاب النار» رواه مسلم رواہ مسلم (13 / 2887)، (7250) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে ফিতনার যুগে করণীয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রিয় নবী (সা.) -এর নির্দেশনা হলো সম্ভব হলে উট/ছাগলের পালসহ পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নিজেকে রক্ষায় সেখানেই তা প্রতিপালনে আত্মনিয়োগ করবে। এমনিভাবে যার কৃষি জমি আছে, সে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করবে। যার পক্ষে এসব উপায় অবলম্বন সম্ভব নয়, সে নিজের ধারালো ও সক্রিয় অস্ত্রগুলো ভোতা ও নিষ্ক্রিয় করে নিশ্চুপ থাকবে। কোন পক্ষাবলম্বন না করে সাধ্যমত নিজের ঈমান ও আমল রক্ষায় ব্যস্ত থাকবে এবং ফিতনার সংস্পর্শ হতে নিজেকে গুটিয়ে রাখবে। অর্থাৎ তৃতীয় স্বতন্ত্র পক্ষ হিসেবে নিজেকে যাবতীয় সমস্যা মুক্ত রাখবে। আর এটিই হচ্ছে বাস্তব প্রেক্ষাপটের আলোকে সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন। কেননা এমতাবস্থায় মুসলিমদের কোন একটি গ্রুপে যোগ দিয়ে পারস্পরিক যুদ্ধ ও দ্বন্দ্বকে উসকে দেয়া এবং ফিতনার প্রসার ঘটাতে সহযোগিতা করা কোনভাবেই জায়িয নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীস এবং পূর্বোক্ত হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, কোনভাবেই ফিতনার যুগে কোন ধরনের হানাহানিতে অংশ নেয়া যাবে না। (শারহুন নববী)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৬-[৮] আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন একটি সময় অতি নিকটবর্তী, যখন মুসলিমদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ হবে বকরি, যা নিয়ে পর্বতশৃঙ্গে ও বারিপাতের স্থানসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করবে। অর্থাৎ ফিতনাহ্ হতে বাঁচার উদ্দেশে সে স্বীয় দীন নিয়ে পলায়ন করবে। (বুখারী)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُوشِكُ أَنْ يَكُونَ خيرَ مالِ المسلمِ غنمٌ يتبع بهَا شغف الْجِبَالِ وَمَوَاقِعَ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنَ الْفِتَنِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (19) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يوشك ان يكون خير مال المسلم غنم يتبع بها شغف الجبال ومواقع القطر يفر بدينه من الفتن» . رواه البخاري رواہ البخاری (19) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে ফিতনার যুগে একজন মু'মিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আখ্যা দেয়া হয়েছে ছাগল। যা নিয়ে সে পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে নির্জন জীবনযাপন করবে এবং এটিই তাঁর জন্য নিজের ঈমান রক্ষার সর্বোত্তম অবলম্বন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৭-[৯] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) - মদীনার একটি গৃহের উপর আরোহণ করে (লোকেদেরকে) বললেন, আমি যা অবলোকন করছি তোমরাও কি তা অবলোকন করছ? তারা বললেন, জ্বী, না। তিনি বললেন, আমি অবলোকন করছি যে, তোমাদের গৃহের ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টির মতো ফিতনাহ্ পতিত হচ্ছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: أَشْرَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ: هَلْ تَرَوْنَ مَا أَرَى؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: «فَإِنِّي لأرى الْفِتَن خلال بُيُوتكُمْ كوقع الْمَطَر» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (1878) و مسلم (9 / 2885)، (7245) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن اسامة بن زيد قال: اشرف النبي صلى الله عليه وسلم على اطم من اطام المدينة فقال: هل ترون ما ارى؟ قالوا: لا. قال: «فاني لارى الفتن خلال بيوتكم كوقع المطر» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (1878) و مسلم (9 / 2885)، (7245) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : উপর্যুক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন: উম্মতকে সম্ভাব্য ফিতনাহ্ সম্পর্কে অবহিত ও সতর্ক করার জন্য নবী (সা.) -কে ফিতনার আলামতসমূহ দেখানো হয়েছে। নবী (সা.) - ফিতনার বর্ণনা যেভাবে দিয়েছেন তার আলোকে বলা যায় যে, শেষ যামানার ফিতনাসমূহ ব্যাপকভাবে সকলকেই গ্রাস করবে। নির্দিষ্টভাবে কোন একক সম্প্রদায় বা গোত্র এতে আক্রান্ত হবে না। মুহাদ্দিসগণের মতে, সাহাবায়ি কিরামের যুগে সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহ যেমন- উষ্ট্রের যুদ্ধ, সিফফীন ও ‘উসমান (রাঃ)-এর হত্যা এবং হুসায়ন (রাঃ) -কে হত্যার বিষয়ও এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (শারহুন নাবাবী হা, ২৮৮৫, সহীহুল বুখারী ১৮৭৮, ২৪৬৭, ৩৫৯৭, ৭০৬০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৮-[১০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কুরায়েশের কতক যুবকের হাতেই আমার উম্মতের ধ্বংস নিহীত। (বুখারী)

الفصل الاول

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلَكَةُ أُمَّتِي عَلَى يَدَي غِلْمةٍ مِنْ قُرْيشٍ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3605) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هلكة امتي على يدي غلمة من قريش» . رواه البخاري رواہ البخاری (3605) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে উম্মতের ধ্বংস দ্বারা সাহাবায়ি কিরামের জামা'আতকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে (غِلْمةٍ) দ্বারা কিছু সংখ্যক যুবক উদ্দেশ্য- প্রথমত উসমান (রাঃ)-এর বিরোধী পক্ষ, দ্বিতীয়ত ‘আলী ও হুসায়ন (রাঃ) -এর বিরোধী পক্ষ উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, আল জামি' আস্ সগীর ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৬৯, হা. ৯৫৯৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৮৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮৯-[১১] উক্ত রাবী (আবূ হুরায়রাহ্ [রাঃ]) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে, বিদ্যা উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনা-ফাসাদ বৃদ্ধি পাবে, কার্পণ্যতা দেখা দেবে এবং ’হারজ’-এর আধিক্য হবে। লোকেরা প্রশ্ন করল, “হারজ’ কী? তিনি বললেন, হত্যা। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ وَيُقْبَضُ الْعِلَمُ وَتَظْهَرُ الْفِتَنُ وَيُلْقَى الشُّحُّ وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ» قَالُوا: وَمَا الْهَرْجُ؟ قَالَ: «الْقَتْلُ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (85) و مسلم (11 / 2672)، (6788 ، 6792) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يتقارب الزمان ويقبض العلم وتظهر الفتن ويلقى الشح ويكثر الهرج» قالوا: وما الهرج؟ قال: «القتل» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (85) و مسلم (11 / 2672)، (6788 ، 6792) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসের বিষয়সমূহ সম্পর্কে ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সময় নিকটবর্তী হওয়ার অর্থ : দুনিয়ার শেষ সময় নিকটবর্তী হবে এবং আখিরাতও নিকটবর্তী হবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য কিয়ামত নিকটবর্তী হবে। কারো কারো মতে, সময়ের ব্যবধান কমে যাবে, সে যুগের মানুষের আয়ু হ্রাস পাবে ও সীমালঙ্ঘনের আধিক্যের কারণে সময়ের বারাকাত হ্রাস পাবে। উলামায়ে কিরামকে উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনার আধিক্য হবে, কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে। ('আওনুল মা'বুদ হা, ৪২৪৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৯০-[১২] উক্ত রাবী (আবূ হুরায়রাহ্ [রাঃ]) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! সেই পর্যন্ত দুনিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটবে না, যে পর্যন্ত না মানুষের ওপর এমন একদিন আসবে, যেদিন হত্যকারী বলতে পারবে না কেন সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানতে পারবে না কেন সে নিহত হয়েছে। প্রশ্ন করা হলো, এটা কিরূপে হবে? তিনি (সা.) বললেন, ফিতনার কারণে। যাতে হত্যাকারী ও নিহত উভয়ই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَأْتِي يَوْمٌ لَا يَدْرِي الْقَاتِلُ فِيمَ قَتَلَ؟ وَلَا الْمَقْتُولُ فِيمَ قُتِلَ؟ فَقِيلَ: كَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ؟ قَالَ: «الْهَرْجُ الْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (56 / 2908)، (7304) ۔
(صَحِيح)

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: والذي نفسي بيده لا تذهب الدنيا حتى ياتي يوم لا يدري القاتل فيم قتل؟ ولا المقتول فيم قتل؟ فقيل: كيف يكون ذلك؟ قال: «الهرج القاتل والمقتول في النار» . رواه مسلم رواہ مسلم (56 / 2908)، (7304) ۔ (صحيح)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৯১-[১৩] মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ফিতনার সময় ইবাদতে ব্যস্ত থাকার প্রতিদান আমার দিকে হিজরত করে আসার সমপরিমাণ। (মুসলিম)

الفصل الاول

وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «الْعِبَادَةُ فِي الْهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِلَيَّ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (130 / 2948)، (7400) ۔
(صَحِيح)

وعن معقل بن يسار قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم «العبادة في الهرج كهجرة الي» . رواه مسلم رواہ مسلم (130 / 2948)، (7400) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে ফিতনার যুগে দীনের উপর অটল থেকে ‘ইবাদত-বন্দেগী করাকে মক্কা বিজয়ের পূর্বে হিজরতের তুল্য গণ্য করা হয়েছে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে ফিতনার যুগে ইবাদতের অধিক ফযীলতের কারণ, এ সময় অধিকাংশ মানুষ ‘ইবাদত হতে গাফেল ও বিমুখ থাকে। কতিপয় লোকই কেবল এ সময় ইবাদতে মশগুল থাকবে। (শারহুন নববী ২৯৪৮, তিরমিযী ২২০১, ইবনু মাজাহ ৩৯৮৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৯২-[১৪] যুবায়র ইবনু ’আদী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ-এর নির্যাতনের অভিযোগ করলাম। তখন তিনি বললেন, ধৈর্যধারণ কর যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ কর। কেননা আগামীতে তোমাদের ওপর যে সময় আসবে, তা অতীতের তুলনায় আরো খারাপ হবে। আমি এ কথাগুলো তোমাদের নবী (সা.) থেকে শুনেছি। (বুখারী)

الفصل الاول

وَعَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ قَالَ: أَتَيْنَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ مَا نَلْقَى مِنَ الْحَجَّاجِ. فَقَالَ: «اصْبِرُوا فَإِنَّهُ لَا يَأْتِي عَلَيْكُمْ زمَان إِلَّا الَّذِي بعده أشرمنه حَتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ» . سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (7068) ۔
(صَحِيح)

وعن الزبير بن عدي قال: اتينا انس بن مالك فشكونا اليه ما نلقى من الحجاج. فقال: «اصبروا فانه لا ياتي عليكم زمان الا الذي بعده اشرمنه حتى تلقوا ربكم» . سمعته من نبيكم صلى الله عليه وسلم. رواه البخاري رواہ البخاری (7068) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে নবী (সা.) -এর ওফাতের পর হতে দাজ্জালের আবির্ভাব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক যুগেই তার পূর্ববর্তী যুগ হতে খারাপ হবে। তবে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর যুগে ব্যতিক্রম।
ইমাম ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় সুনানে উত্তম সনদে মাওকুফ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন, যে বছরই অতিক্রান্ত হবে তার পরবর্তী বছর হবে মন্দ।
বিশুদ্ধ আরেকটি সনদে রয়েছে, গতকাল ছিল আজকের চেয়ে উত্তম, আজ আগামীকালের চেয়ে উত্তম, এমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সংগঠিত হতে থাকবে। (সহীহ সহীহুল বুখারী হা, ৭০৬৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যুবাইর ইবনে আদী (রহ.)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫৩৯৩-[১৫] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বলতে পারি না যে, আমার বন্ধুগণ (সাহাবায়ি কিরামগণ) কি আসলেই ভুলে গিয়েছেন? নাকি না ভুলেও ভুলার ভান করে আছেন? আল্লাহর শপথ করে বলছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন কোন ফিতনাকারীর আলোচনা অবশিষ্ট রাখেননি, যা কিয়ামত পর্যন্ত আবির্ভূত হবে এবং তার সাথে উক্ত ফিতনাহ সৃষ্টিকারীদের সংখ্যা তিনশত বা তারও অধিক পর্যন্ত পৌছবে। বরং তিনি ঐ ব্যক্তির নাম, তার পিতার নাম এবং তার বংশ পরিচয়ও আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। (আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: وَاللَّهِ مَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَصْحَابِي أَمْ تَنَاسَوْا؟ وَاللَّهِ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَائِدِ فِتْنَةٍ إِلَى أَنْ تَنْقَضِيَ الدُّنْيَا يَبْلُغُ مَنْ مَعَهُ ثَلَاثَمِائَةٍ فَصَاعِدًا إِلَّا قَدْ سَمَّاهُ لَنَا بِاسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيهِ واسمِ قبيلتِه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4243) ۔
(ضَعِيف)

عن حذيفة قال: والله ما ادري انسي اصحابي ام تناسوا؟ والله ما ترك رسول الله صلى الله عليه وسلم من قاىد فتنة الى ان تنقضي الدنيا يبلغ من معه ثلاثماىة فصاعدا الا قد سماه لنا باسمه واسم ابيه واسم قبيلته. رواه ابو داود اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4243) ۔ (ضعيف)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে রাসূল (সা.) তাঁর ওফাত পরবর্তী সময় হতে দুনিয়ার ধ্বংস হওয়া অবধি তিন শতাধিক মন্দ নেতা ও বিদআতী দা'ঈদের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা সাহাবীদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। যারা মানুষকে বিদ'আতের দিকে আহ্বান করবে ও যুদ্ধ-বিগ্রহের ইন্ধন যোগাবে এবং এতে নেতৃত্ব দিবে। তাদের নাম, পিতা ও গোত্রের নাম এবং অনুসারী সংখ্যাসহ উল্লেখ করেছেন। এটি নবী (সা.) -এর একটি মু'জিযাহূস্বরূপ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫৩৯৪-[১৬] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদের খুব বেশি আশঙ্কা করছি। আর আমার উম্মতের ওপর যখন একবার তলোয়ার চালু হবে, তখন আর কিয়ামত অবধি তাদের হতে উঠবে না। (আবূ দাউদ ও তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ وَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِي أُمَّتِي لَمْ يُرْفَعْ عَنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والترمذيُّ

صحیح ، رواہ ابوداؤد (4252) و الترمذی (2229 وقال : صحیح) ۔
(صَحِيح)

وعن ثوبان قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «انما اخاف على امتي الاىمة المضلين واذا وضع السيف في امتي لم يرفع عنهم الى يوم القيامة» . رواه ابو داود والترمذي صحیح ، رواہ ابوداؤد (4252) و الترمذی (2229 وقال : صحیح) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : উপর্যুক্ত হাদীস পথভ্রষ্টকারী নেতা দ্বারা পাপাচার ও সীমালঙ্নকারী উদ্দেশ্য। হাদীসের শেষাংশ আহলে হক দ্বারা জ্ঞানে ও ‘আমলে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত জামা'আতকে বুঝানো হয়েছে। যারা সর্বদাই বাতিলের উপর বিজয়ী থাকবে।
(সহীহ মুসলিম ১৯২০, আবূ দাউদ ৪২৫২, ইবনু মাজাহ (ভূমিকা) ৩৯৫২, তিরমিযী ২১৭৬, ২২২০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫৩৯৫-[১৭] সাফীনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি। [রাসূল (সা.) এ বলেছেন] খিলাফত ত্রিশ বছর অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর তা রাজতন্ত্রে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী সাফীনাহ (রাঃ) বলেন, তা এরূপে বর্ণনা করে নাও- আবূ বা সিদ্দীক (রাঃ)-এর খিলাফতকাল দু বছর, ’উমার (রাঃ)-এর খিলাফতকাল দশ বছর, উসমান (রাঃ)-এর বারো বছর এবং ’আলী (রাঃ)-এর ছয় বছর। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَن سفينة قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْخِلَافَةُ ثَلَاثُونَ سَنَةً ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا» . ثُمَّ يَقُولُ سَفِينَةُ: أَمْسِكْ: خِلَافَةَ أَبِي بَكْرٍ سَنَتَيْنِ وَخِلَافَةَ عُمَرَ عَشْرَةً وَعُثْمَانَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ وَعَلِيٍّ سِتَّةً. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ

اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 220 ۔ 221 ح 22264) و الترمذی (2226 وقال : حسن) و ابوداؤد (4646) ۔
(حسن)

وعن سفينة قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «الخلافة ثلاثون سنة ثم تكون ملكا» . ثم يقول سفينة: امسك: خلافة ابي بكر سنتين وخلافة عمر عشرة وعثمان اثنتي عشرة وعلي ستة. رواه احمد والترمذي وابو داود اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 220 ۔ 221 ح 22264) و الترمذی (2226 وقال : حسن) و ابوداؤد (4646) ۔ (حسن)

ব্যাখ্যা : উপর্যুক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নুবুওয়্যাতের পর খিলাফত কতদিন স্থায়ী হবে তার একটি মেয়াদ উল্লেখ করেছেন। তৎপরবর্তী সময়ে মুসলিম বিশ্বে রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধরণ কিরূপ হবে তা প্রিয়নবী (সা.) উপস্থাপন করেছেন।
খিলাফাতে রাশিদার মেয়াদকাল ছিল ৩০ বছর। আবূ বাকর (রাঃ) ২ বছর ৩ মাস ১০ দিন, ‘উমার (রাঃ)- ১০ বছর ৬ মাস ৮ দিন, ‘উসমান (রাঃ) ১১ বছর ১১ মাস ৯ দিন, ‘আলী (রাঃ) ৪ বছর ৯ মাস ৭ দিন, হাসান (রাঃ) ৭ মাস।
মুসনাদে আহমাদে সাফীনাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, আমার উম্মতের খিলাফতকাল হবে ৩০ বছর। অতঃপর রাজা-বাদশাহদের রাজত্ব কায়িম হবে। ইমাম বায়হাক্বী তদীয় ‘আল মাদখাল’ গ্রন্থে সাফীনাহ্ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত আছে- প্রথম রাজত্ব ছিল মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর অধীন। শারহুস্ সুন্নাহ গ্রন্থে রয়েছে, যারা খিলাফাতে রাশিদার আদলে সুন্নাতে রাসূল (সা.) -কে আঁকড়ে ধরে শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন তারাই খলীফাহ্। পক্ষান্তরে যারা খিলাফাতে রাশিদার পরিপন্থী কাজ করেছেন তারা নিজেদেরকে খলীফাহ্ দাবী করলেও সেই দাবী যথার্থ নয়। বরং তারা রাজা হিসেবে গণ্য হবেন।
ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় ‘তারীখ’ গ্রন্থে এবং ইমাম হাকিম তার মুসতাদরাক গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, খিলাফত হবে মদীনায় এবং রাজতন্ত্র হবে শাম দেশে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ সাফীনাহ্ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫৩৯৬-[১৮] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! এখন আমরা যে ভালো যুগে (ইসলামে) অবস্থান করছি, এর পরে কি কোন খারাপ যুগ আসবে যেমন। এটার (ইসলামের) পূর্বে (জাহিলিয়্যাত) ছিল? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, আসবে। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হতে বেঁচে থাকার উপায় কি? তিনি (সা.) বললেন, তলোয়ার (বাতিলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করতে হবে)।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা সেই তলোয়ারী যুগের পরে কি মুসলিমের অস্তিত্ব থাকবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, থাকবে। তবে তখন প্রতিষ্ঠিত হবে রাজতন্ত্র। তার উৎপত্তি হবে মানুষের ঘৃণার উপর এবং সন্ধি-চুক্তি হবে ধোঁকার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, অতঃপর গোমরাহীর দিকে আহ্বানকারী লোকের আগমন ঘটবে। তখন যদি আল্লাহর এই জমিনে কোন শাসক থাকে এবং সে তোমার পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে চাবুক মারে এবং (জোরপূর্বক) তোমার মাল-সম্পদ ছিনিয়েও নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য কর।
যদি কোন শাসক না থাকে তবে তোমার মৃত্যু যেন এই অবস্থায় হয় যে, তুমি (সকল সম্পর্ক ত্যাগ করে) কোন গাছের গোড়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী হবে। (নির্জনে থাকবে) আমি প্রশ্ন করলাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, অতঃপর দাজ্জালের আগমন ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে নদী ও আগুন। যে ব্যক্তি উক্ত অগ্নিকুণ্ডে পড়বে, (আল্লাহর নিকট) তার প্রতিদান সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তার নহরে প্রবেশ করবে তার পাপ অবধারিত হয়ে যাবে এবং তার (নেক ’আমলের) প্রতিদান বাতিল হয়ে যাবে। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, ঘোড়ার বাচ্চা লাভ করা হবে, কিন্তু তা আরোহণের উপযুক্ত হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সেই ফিতনার সন্ধি চুক্তি হবে ধোঁকার উপর এবং জামা’আতবন্দি হবে ঘৃণার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! প্রতারণার চুক্তির অর্থ কী? তিনি (সা.) বলেলেন, লোকজনের অন্তর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। আমি প্রশ্ন করলাম, সেই ভালোর পরেও কি কোন খারাপ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, এরপরে এসে পড়বে অন্ধ ও বধির ফিতনাহ্ (তখন আর তা হতে বের হওয়ার কোন পথও থাকবে না)। সে সময় এক দল লোক জাহান্নামের দাঁড়িয়ে ফিতনার দিকে আহ্বানকারী হবে। হে হুযায়ফাহ! সেই সময় এ সকল আহ্বানকারীর কারো অনুসরণ করা। অপেক্ষা যদি তুমি গাছের শিকড় অবলম্বন করে মৃত্যুবরণ কর, তা হবে তোমার পক্ষে উত্তম। (আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَكُونُ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ كَمَا كَانَ قَبْلَهُ شَرٌّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: فَمَا الْعِصْمَةُ؟ قَالَ: «السَّيْفُ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ السَّيْفِ بَقِيَّةٌ؟ قَالَ: «نعمْ تكونُ إِمارةٌ على أَقْذَاءٍ وَهُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَنْشَأُ دُعَاةُ الضَّلَالِ فَإِنْ كَانَ لِلَّهِ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةٌ جَلَدَ ظَهْرَكَ وَأَخَذَ مَالَكَ فَأَطِعْهُ وَإِلَّا فَمُتْ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلِ شَجَرَةٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَخْرُجُ الدَّجَّالُ بَعْدَ ذَلِكَ مَعَهُ نَهْرٌ وَنَارٌ فَمَنْ وَقَعَ فِي نَارِهِ وَجَبَ أَجْرُهُ وَحُطَّ وِزْرُهُ وَمَنْ وَقَعَ فِي نَهْرِهِ وَجَبَ وِزْرُهُ وحظ أَجْرُهُ» . قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يُنْتَجُ الْمُهْرُ فَلَا يُرْكَبُ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ» وَفِي رِوَايَة: «هُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ وَجَمَاعَةٌ عَلَى أَقْذَاءٍ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الْهُدْنَةُ عَلَى الدَّخَنِ مَا هِيَ؟ قَالَ: «لَا ترجع قُلُوب أَقوام كَمَا كَانَتْ عَلَيْهِ» . قُلْتُ: بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ؟ قَالَ: «فِتْنَةٌ عَمْيَاءُ صَمَّاءُ عَلَيْهَا دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ النَّارِ فَإِنْ مُتَّ يَا حُذَيْفَةُ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلٍ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تتبع أحدا مِنْهُم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

صحیح ، رواہ ابوداؤد (4244 ، صحیح ، 4247 ، حسن) ۔
(صَحِيح)

وعن حذيفة قال: قلت: يا رسول الله ايكون بعد هذا الخير شر كما كان قبله شر؟ قال: «نعم» قلت: فما العصمة؟ قال: «السيف» قلت: وهل بعد السيف بقية؟ قال: «نعم تكون امارة على اقذاء وهدنة على دخن» . قلت: ثم ماذا؟ قال: «ثم ينشا دعاة الضلال فان كان لله في الارض خليفة جلد ظهرك واخذ مالك فاطعه والا فمت وانت عاض على جذل شجرة» . قلت: ثم ماذا؟ قال: «ثم يخرج الدجال بعد ذلك معه نهر ونار فمن وقع في ناره وجب اجره وحط وزره ومن وقع في نهره وجب وزره وحظ اجره» . قال: قلت: ثم ماذا؟ قال: «ثم ينتج المهر فلا يركب حتى تقوم الساعة» وفي رواية: «هدنة على دخن وجماعة على اقذاء» . قلت: يا رسول الله الهدنة على الدخن ما هي؟ قال: «لا ترجع قلوب اقوام كما كانت عليه» . قلت: بعد هذا الخير شر؟ قال: «فتنة عمياء صماء عليها دعاة على ابواب النار فان مت يا حذيفة وانت عاض على جذل خير لك من ان تتبع احدا منهم» . رواه ابو داود صحیح ، رواہ ابوداؤد (4244 ، صحیح ، 4247 ، حسن) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে এই উম্মাতের শেষ যামানায় যেসব ফিতনার আবির্ভাব হবে তার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে, ফিতনাহ হবে অন্ধ ও বধির। ফিতনাকে অন্ধ বলা হয়েছে এজন্য যে, এ সময়ে বিরাজমান মানুষজন সত্যপথ দেখতে ব্যর্থ হবে বা হক খুঁজে পেতে সক্ষম হবে না এবং সত্য কথা ও উপদেশ শুনবে না বা তা শুনতে অক্ষম হবে। তবে হাদীসের প্রথমাংশে যে তলোয়ারের কথা বলা হয়েছে, সেটিকে কতিপয় সাহাবায়ি কিরাম রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর যুগে মুরতাদদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের ইঙ্গিত রয়েছে। যা সূরা আল হুজুরাতের ৯ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

ইমাম কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে এ সময় মানুষেরা ফিতনাহ থেকে বাঁচার কোন পথ পাবে না।  সত্য কথা ও উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষেরা উপলব্ধি ও অনুধাবন শক্তি হারিয়ে ফেলবে। সে সময় কতক আহ্বানকারী/একদল দা'ঈর উদ্ভব হবে যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান করবে। অবস্থা এমন হবে যে, তারা যেন জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে মানুষকে তাতে প্রবেশের আহ্বান জানাবে। সে সময়ে রাসূল (সা.) -এর নির্দেশনা হলো, এ সময় প্রয়োজনে গাছের গুড়ি আঁকড়ে থাকতে হবে। তবুও সেসব দা'ঈ/আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়া যাবে না এবং ফিতনায় জড়ানো যাবে না।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫৩৯৭-[১৯] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পিছনে একটি গাধার উপরে আরোহী ছিলাম। যখন আমরা মদীনার গ্রামাঞ্চল অতিক্রম করে বাহিরে গেলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আবূ যার! তখন তোমার কি অবস্থা হবে যখন মদীনায় এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে যে, ক্ষুধার তাড়নায় তুমি নিজ বিছানা হতে উঠে মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, এমনকি ক্ষুধা তোমাকে পেরেশানী করে ফেলবে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশি জানেন। তিনি (সা.) বললেন, হে আবূ যার! তখন তুমি আত্মসংযম করবে (হারাম কিংবা সন্দেহযুক্ত মাল ভক্ষণ করো না)। তিনি (সা.) পুনরায় বললেন, হে আবূ যর! তখন তোমার অবস্থা কিরূপ হবে যখন মদীনায় এমন মহামারি দেখা দেবে যে, একটি ঘর একটি গোলামের মূল্যের সমপরিমাণে পৌছবে, এমনকি একটি কবরের স্থান একটি গোলামের বিনিময়ে বিক্রয় হবে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, হে আবূ যার! তখন তোমার অবস্থা কি হবে যখন মদীনায় এমন এক হত্যাযজ্ঞের সূচনা হবে যার রক্ত ’আজারু যায়ত নামক স্থানকে ডুবিয়ে ফেলবে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক ভালো জানেন। তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি তার কাছেই চলে যাবে যার সাথে তুমি সম্পর্কিত (নিজের পরিবার অথবা নিজ ইমামের নিকট)। আমি বললাম, তবে কি আমি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হব? তিনি (সা.) বললেন, যদি তুমি এরূপ কর তাহলে তুমিও সে দলের সাথে শামিল হয়ে যাবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি করব? হে আল্লাহর রসল। তখন তিনি (সা.) বললেন, যদি তুমি তলোয়ারের চাকচিক্যকে ভয় কর (তলোয়ারের সম্মুখে ভয় পাও), তাহলে পরিহিত কাপড়ের একাংশ স্বীয় মুখের উপরে স্থাপন করবে, যাতে সে তোমার ও নিজের পাপ বহন করে। (আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَن أبي ذَر قَالَ: كُنْتُ رَدِيفًا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا علىحمار فَلَمَّا جَاوَزْنَا بُيُوتَ الْمَدِينَةِ قَالَ: «كَيْفَ بِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ جُوعٌ تَقُومُ عَنْ فِرَاشِكَ وَلَا تَبْلُغُ مَسْجِدَكَ حَتَّى يُجْهِدَكَ الْجُوعُ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «تَعَفَّفْ يَا أَبَا ذَرٍّ» . قَالَ: «كَيْفَ بِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ مَوْتٌ يَبْلُغُ الْبَيْتَ الْعَبْدُ حَتَّى إِنَّهُ يُبَاعُ الْقَبْرُ بِالْعَبْدِ؟» . قَالَ: قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «تَصْبِرُ يَا أَبَا ذَرٍّ» . قَالَ: «كَيْفَ بِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ قَتْلٌ تَغْمُرُ الدِّمَاءُ أَحْجَارَ الزَّيْتِ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «تَأْتِي مَنْ أَنْتَ مِنْهُ» . قَالَ: قُلْتُ: وَأَلْبَسُ السِّلَاحَ؟ قَالَ: «شَارَكْتَ الْقَوْمَ إِذًا» . قُلْتُ: فَكَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنْ خَشِيتَ أَنْ يَبْهَرَكَ شُعَاعُ السَّيْفِ فَأَلْقِ نَاحِيَةَ ثَوْبِكَ عَلَى وَجْهِكَ لِيَبُوءَ بإِثمك وإِثمه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

حسن ، رواہ ابوداؤد (4261) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي ذر قال: كنت رديفا خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما علىحمار فلما جاوزنا بيوت المدينة قال: «كيف بك يا ابا ذر اذا كان بالمدينة جوع تقوم عن فراشك ولا تبلغ مسجدك حتى يجهدك الجوع؟» قال: قلت: الله ورسوله اعلم. قال: «تعفف يا ابا ذر» . قال: «كيف بك يا ابا ذر اذا كان بالمدينة موت يبلغ البيت العبد حتى انه يباع القبر بالعبد؟» . قال: قلت الله ورسوله اعلم. قال: «تصبر يا ابا ذر» . قال: «كيف بك يا ابا ذر اذا كان بالمدينة قتل تغمر الدماء احجار الزيت؟» قال: قلت: الله ورسوله اعلم. قال: «تاتي من انت منه» . قال: قلت: والبس السلاح؟ قال: «شاركت القوم اذا» . قلت: فكيف اصنع يا رسول الله؟ قال: «ان خشيت ان يبهرك شعاع السيف فالق ناحية ثوبك على وجهك ليبوء باثمك واثمه» . رواه ابو داود حسن ، رواہ ابوداؤد (4261) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে প্রিয় নবী (সা.) আবূ যার (রাঃ)-কে চরম ফিতনার সময় নিজেকে শংকামুক্ত রাখার জন্য হানাহানিতে লিপ্ত হতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। এমনকি কেউ যদি কাউকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করতে উদ্যত হয় তাকে প্রতিরোধ করতেও নিষেধ করেছেন। এমতাবস্থায় নিহত হলেও যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া যাবে না। এ সময় কেউ যদি কোন মু'মিনকে হত্যা করতে উদ্যত হয় প্রতিরোধ করা যাবে না। নিহত হলে আদম আলাইহিস সালাম-এর পুত্র হাবিলের মতো নিজেকে মৃত্যুর জন্য সমর্পণ করতে হবে।

ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তলোয়ার বা ধারালো অস্ত্র ভোঁতা করার মর্ম হচ্ছে বিশৃঙ্খলা ও হানাহানিতে শরীক হওয়ার পথরুদ্ধ করতে হবে। সে সময় মৃত্যুকে বরণ করার মাধ্যমে ধৈর্যধারণ করতে হবে। কেননা, বিশৃঙ্খলার মুহূর্তে আন্দোলনে শরীক হওয়ার চাইতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করাই উত্তম। আন্দোলনে শরীক হলে ফিতনাহ্ আরো বৃদ্ধি পাবে। (ইবনু মাজাহ হা. ৩৯৫৭, আবূ দাউদ হা. ৪৩৩৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
৫৩৯৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৫৩৯৮-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, (হে ’আবদুল্লাহ!) তখন তোমার কিরূপ হবে? যখন তুমি নিকৃষ্ট ও ইতর লোকদের মধ্যে যাবে, তাদের অস্বীকার ও আমানতের মাঝে ভেজাল এসে যাবে এবং পরস্পরে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে পড়বে। তাদের অবস্থা হবে এরূপ এবং (এ কথা বলে) উভয় হাতের অঙ্গুলিসমূহকে পরস্পরের মধ্যে ঢুকালেন। ’আবদুল্লাহ আল বললেন, তখন আমার কর্তব্য কি হবে, আপনিই আমাকে নির্দেশ করুন। তখন তিনি (সা.) বললেন, যে কাজটি তুমি সত্য ও ভালো বলে জানো, কেবলমাত্র তাই করবে এবং যা অসত্য ও খারাপ বলে জানো তা দূরে সরিয়ে রাখবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, নিজ ঘরে বসে থাকো, নিজের মুখ ও জবানকে নিজ আয়ত্তে রাখো আর যা ভালো মনে কর, শুধু তাই কর এবং খারাপকে বর্জন কর। শুধুমাত্র নিজের ব্যাপারে সচেতন থাকো এবং সর্বসাধারণ মানুষ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা পরিহার কর। (ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেন, হাদীসটি সহীহ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَيْفَ بِكَ إِذَا أُبْقِيتَ فِي حُثَالَةٍ مِنَ النَّاسِ مَرَجَتْ عُهُودُهُمْ وَأَمَانَاتُهُمْ؟ وَاخْتَلَفُوا فَكَانُوا هَكَذَا؟» وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ. قَالَ: فَبِمَ تَأْمُرُنِي؟ قَالَ: «عَلَيْكَ بِمَا تَعْرِفُ وَدَعْ مَا تُنْكِرُ وَعَلَيْكَ بِخَاصَّةِ نَفْسِكَ وَإِيَّاكَ وَعَوَامِّهِمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «الْزَمْ بَيْتَكَ وَأَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَخُذْ مَا تَعْرِفُ وَدَعْ مَا تُنْكِرُ وَعَلَيْكَ بِأَمْرِ خَاصَّةِ نَفْسِكَ ودع أَمر الْعَامَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ

اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) و ابوداؤد (4342 ۔ 4343) ۔
(صَحِيح)

وعن عبد الله بن عمرو بن العاص ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «كيف بك اذا ابقيت في حثالة من الناس مرجت عهودهم واماناتهم؟ واختلفوا فكانوا هكذا؟» وشبك بين اصابعه. قال: فبم تامرني؟ قال: «عليك بما تعرف ودع ما تنكر وعليك بخاصة نفسك واياك وعوامهم» . وفي رواية: «الزم بيتك واملك عليك لسانك وخذ ما تعرف ودع ما تنكر وعليك بامر خاصة نفسك ودع امر العامة» . رواه الترمذي وصححه اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) و ابوداؤد (4342 ۔ 4343) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিতনার যুগে মানুষকে চেনা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা, প্রতিনিয়ত মানুষের চিন্তা-চেতনা, ‘আমাল-আখলাক, কাজকর্ম ও চলাফেরা পরিবর্তিত হবে। সে কারণেই মু'মিনদেরকে সতর্কতার সাথে জীবনযাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ইবনু মাজাহ হা. ৩৯৫৭, আবূ দাউদ হা. ৪৩৪২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনুল আস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৪২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 7 8 পরের পাতা »