৫৩৮২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৫৩৮২-[8] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম এই ভয়ে যেন আমি তাতে লিপ্ত না হই। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এক সময় মূর্খতা ও অকল্যাণের মাঝে নিমজ্জিত ছিলাম অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই কল্যাণ (দীন-ইসলাম) দান করেন। তবে কি এ কল্যাণের পর পুনরায় অকল্যাণ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম সেই অকল্যাণের পরে কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা আসবে, তবে তা হবে ধোঁয়াযুক্ত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেই ধোঁয়া কি ধরনের? তিনি (সা.) বললেন, লোকেরা আমার সুন্নত বর্জন করে অন্য তরীকাহ্ গ্রহণ করবে এবং আমার পথ ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তখন তুমি তাদের মধ্যে ভালো কাজও দেখতে পাবে এবং মন্দ কাজও। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যাণের পরও কি অকল্যাণ আগমন করবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, জাহান্নামের পাশে দাঁড়িয়ে কতক আহ্বানকারী লোকেদেরকে সেই দিকে ডাকবে। যারা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে তাদেরকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে তাদের পরিচয় অবহিত করুন। তিনি (সা.) বললেন, তারা আমাদের মতোই মানুষ হবে এবং আমাদের ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম, আমি সে অবস্থায় উপনীত হলে তখন আমাকে কি কি অদেশ দেন? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি মুসলিমদের দল ও মুসলিমদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, সে সময় যদি কোন মুসলিম জামা’আত ও মুসলিম ইমাম না থাকে (তখন আমাকে কি করেতে হবে)? তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি সেই সমস্ত বিচ্ছিন্ন দলকে বর্জন করবে, যদিও তোমাকে গাছের শিকড়ের আশ্রয় নিতে হয় এবং তুমি এই নির্জন অবস্থায় থাকবে যতক্ষণ না তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয় (অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত বাতিল থেকে দূরে অবস্থান করতে হবে, এতে যে কোন দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারে তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ মুসলিম-এর এক রিওয়ায়াতে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার (ওফাতের) পরে এমন কতিপয় ইমাম ও বাদশাহর আগমন ঘটবে যারা আমার নির্দেশিত পথে চলবে না এবং আমার সুন্নাত ও তরীকানুযায়ী আমল করবে না। আবার তাদের মধ্যেও এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে যারা শরীরে গঠনে এবং চেহারা আকৃতিতে মানুষই হবে, কিন্তু তাদের অন্তরসমূহ হবে শয়তানের মতো। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি আমি সেই অবস্থায় পতিত হই তখন আমার কর্তব্য কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, তোমার আমির (শাসক) যা বলে তা মানবে এবং তার অনুসরণ করবে, যদিও তোমার পিঠে আঘাত করা হয় এবং তোমার ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, তবুও তার নির্দেশ মেনে চলবে এবং তার আনুগত্য করবে।

الفصل الاول

وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَن الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: «نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ» . قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: «قَوْمٌ يَسْتَنُّونَ بِغَيْرِ سُنَّتِي وَيَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ» . قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: «نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا. قَالَ: «هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا» . قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: «تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ» . قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَامٌ؟ قَالَ: «فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: قَالَ: «يَكُونُ بَعْدِي أَئِمَّةٌ لَا يَهْتَدُونَ بِهُدَايَ وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَتِي وَسَيَقُومُ فِيهِمْ رِجَالٌ قُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الشَّيَاطِينِ فِي جُثْمَانِ إِنْسٍ» . قَالَ حُذَيْفَةُ: قُلْتُ: كَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُ ذَلِكَ؟ قَالَ: تَسْمَعُ وَتُطِيعُ الْأَمِيرَ وَإِنْ ضَرَبَ ظهرك وَأخذ مَالك فاسمع وأطع

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3606) و مسلم (52 ، 51 / 1847)، (4784 و 4785) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعنه قال: كان الناس يسالون رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الخير وكنت اساله عن الشر مخافة ان يدركني قال: قلت: يا رسول الله انا كنا في جاهلية وشر فجاءنا الله بهذا الخير فهل بعد هذا الخير من شر؟ قال: «نعم» قلت: وهل بعد ذلك الشر من خير؟ قال: «نعم وفيه دخن» . قلت: وما دخنه؟ قال: «قوم يستنون بغير سنتي ويهدون بغير هديي تعرف منهم وتنكر» . قلت: فهل بعد ذلك الخير من شر؟ قال: «نعم دعاة على ابواب جهنم من اجابهم اليها قذفوه فيها» . قلت: يا رسول الله صفهم لنا. قال: «هم من جلدتنا ويتكلمون بالسنتنا» . قلت: فما تامرني ان ادركني ذلك؟ قال: «تلزم جماعة المسلمين وامامهم» . قلت: فان لم يكن لهم جماعة ولا امام؟ قال: «فاعتزل تلك الفرق كلها ولو ان تعض باصل شجرة حتى يدركك الموت وانت على ذلك» . متفق عليه. وفي رواية لمسلم: قال: «يكون بعدي اىمة لا يهتدون بهداي ولا يستنون بسنتي وسيقوم فيهم رجال قلوبهم قلوب الشياطين في جثمان انس» . قال حذيفة: قلت: كيف اصنع يا رسول الله ان ادركت ذلك؟ قال: تسمع وتطيع الامير وان ضرب ظهرك واخذ مالك فاسمع واطع متفق علیہ ، رواہ البخاری (3606) و مسلم (52 ، 51 / 1847)، (4784 و 4785) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা : ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, আলোচ্য হাদীসে অকল্যাণ/অনিষ্ট দ্বারা ফিতনাহ্ উদ্দেশ্য। তাছাড়া এ দ্বারা গোমরাহী ও বিদ'আতের প্রসার বুঝানো হয়েছে।
উক্ত হাদীসে আইয়্যামে জাহিলিয়্যাত দ্বারা তাওহীদ ও নুবুওয়্যাত সম্পর্কে অজ্ঞতাকে উদ্দিষ্ট করা হয়েছে। আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের পর নবী (সা.) -এর আগমনের বরকতে আল্লাহ তা'আলা অশেষ কল্যাণ প্রদান করেছেন এবং কুফর ও ভ্রষ্টতার ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছেন। অতঃপর আবার অকল্যাণ সংঘটিত হবে এবং তারপর আবারো কল্যাণ আসবে, তবে তার সাথে আঁধারও থাকবে। এ সময় লোকজন দীনের সাথে সুন্নতের পরিপন্থী বিষয়সমূহ দীন হিসেবে পালন করবে এবং নবী  (সা.)-এর তরীকা ছেড়ে ভিন্ন তরীকা গ্রহণ করবে।
কারো মতে, আলোচ্য হাদীসে প্রথম ফিতনাহ্ দ্বারা উসমান (রাঃ)-এর হত্যা ও তৎপরবর্তী ফিতনাকে বুঝানো হয়েছে। এরপরের কল্যাণ দ্বারা খলীফাহ্ ‘উমার ইবনু আবদুল আযীয-এর খিলাফতকাল উদ্দেশ্য। অতঃপর এমন কিছু রাজা বাদশা আসবে যারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভালো-মন্দ উভয় প্রকার কাজ করবে। কারো মতে, উসমান (রাঃ) হত্যার পরবর্তী ফিতনার পর হাসান (রাঃ) ও মু'আবিয়াহ্ (রাঃ) -এর মধ্যকার সন্ধি চুক্তিকে কল্যাণ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

শেষ যামানায় এমন কিছু দা'ঈ বা ‘আলিমের আবির্ভাব হবে যারা মানুষকে ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, সন্দেহ সংশয় দ্বারা মানুষকে হিদায়াত থেকে বিরত রাখবে। সুন্নত ব্যতিরেকে বিদআতের দিকে এবং সংযম ব্যতীত পার্থিব আকাক্ষার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে।
এ কারণেই নবী (সা.) এ সকল দা'ঈ বা আহ্বায়কের ডাকে সাড়া দেয়াকে গোমরাহীতে প্রবেশ ও জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কোন কোন বিদ্বান, এ সকল ভ্রষ্ট দা'ঈ দ্বারা খারিজী ও রাফিজী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতৃপর্যায়ের লোকেদেরকে বুঝিয়েছেন, যারা আখিরী যামানায় মানুষের নিকট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, নেতৃত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষা করবে যদিও তাদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলি বিদ্যমান থাকবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)