শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ঈমানের রুকনসমূহ ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী] ৭ টি

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ

وَهُوَ الْإِيمَانُ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ وَالْإِيمَانُ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহর বিষয়গুলো হলো আল্লাহর প্রতি, আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি, নবী-রাসূলদের প্রতি, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।


ব্যাখ্যাঃ এখানে هو ‘উহা’ দ্বারা ফির্কা নাজিয়ার আকীদাহ-বিশ্বাসকে বুঝানো হয়েছে। الإيمان বিশ্বাসঃ ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সত্যায়ন করা। ইয়াকুব (আঃ)এর পুত্ররা যখন তাদের ভাই ইউসুফকে কূপে ফেলে দিয়ে তাদের পিতার কাছে এসে বললঃ ﴾ ﴿وَمَا أَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِينَ‘‘আমরা সত্যবাদী হলেও আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস অর্থাৎ সত্যায়ন করবেন না’’। আল্লাহ তাআলা সূরা ইউসুফের ১৭ নং আয়াতে ইউসুফ (আঃ)এর ভাইদের এই কথা উদ্ধৃত করেছেন।

আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় অন্তরের বিশ্বাস, জবানের স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে আমল করাকে ঈমান বলা হয়।

আল্লাহর প্রতি, আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, -এই ছয়টি হচ্ছে ঈমানের রুকন। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতে যেই সঠিক পদ্ধতিতে এই ছয়টি রুকনের বর্ণনা এসেছে, একসাথে সেই রুকনগুলোর প্রতি বিশ্বাস না করলে কারো ঈমান বিশুদ্ধ হবেনা। এই রুকনগুলো হচ্ছে,

الإيمان بالله আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হলো অন্তর দিয়ে আল্লাহর উপর এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, তিনিই প্রত্যেক জিনিষের একমাত্র রব ও মালিক। তিনি সিফাতে কামালিয়া বা সর্বোত্তম ও পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত এবং প্রত্যেক দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র ও মুক্ত। সেই সাথে আরো বিশ্বাস করা যে, তিনিই একমাত্র বান্দার এবাদতের হকদার, এতে তাঁর কোন শরীক নেই এবং ইলম ও আমলের মাধ্যমে এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকা।

الإيمان بالملائكة ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস

الإيمان بالملائكة ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস: ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়নের তাৎপর্য হলো, অন্তর দিয়ে তাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস করা। আরো বিশ্বাস করা যে, তারা ঠিক সে রকমই, যেভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা সুরা আন্বিয়ার ২৭ নং আয়াতে বলেনঃ

﴿ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ﴾

‘‘তারা তো মর্যাদাশীল বান্দা৷ তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলেনা এবং শুধু তাঁর হুকুমেই কাজ করে’’। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতা ও তাদের বিভিন্ন গুণাবলীর বিবরণ দিয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, তাদের উপর অনেক কাজের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তারা সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো পালন করে। এই সবের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক।[1]

[1] - কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে ফেরেশতাদের কিছু গুণাগুণ, কাজ-কর্ম ও দায়িত্ব-কর্তব্যের বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হলোঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا﴾ ‘‘এরপর আল্লাহর হুকুমে সকল বিষয়ের কাজ পরিচালনা করে’’। (সূরা নাযিআত: ৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ ﴿فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا﴾ ‘‘অতঃপর একটি বড় জিনিষ বন্টনকারী’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৪) ঈমানদার ও রাসূলদের অনুসারীদের নিকট এরা হচ্ছেন ফেরেশতা। যারা সৃষ্টিকর্তা ও নবী-রাসূলদেরকে অস্বীকার করে, তারা বলে থাকে যে, উক্ত আয়াত দু’টিতে তারকার কথা বলা হয়েছে।

কুরআন ও সুন্নাহয় বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার মাখলুকের দায়িত্বও অর্পন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের দায়িত্বে ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মেঘমালা ও বৃষ্টি পরিচালনার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মাতৃগর্ভে শিশুর দায়িত্বে ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। সে শুত্রুবিন্দু থেকে শুরু করে শিশুর গঠন পর্যন্ত যাবতীয় কাজ পরিচালনা করে। বান্দা যেই আমল করে, তা সংরক্ষণ করার জন্য এবং লিখে রাখার জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। মৃত্যুর জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। কবরে প্রশ্ন করার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মহা শুণ্যের গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। তারা তা ঘুরান ও পরিচালনা করেন। চন্দ্র-সূর্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। জাহান্নাম, জাহান্নামের আগুন জ্বালানো, জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়া এবং জাহান্নামের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। জান্নাত, জান্নাতের পরিচালনা, তাতে বৃক্ষাদি লাগানো এবং তাতে বিভিন্ন প্রকার নেয়ামত স্থাপন করার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। সুতরাং ফেরেশতারা আল্লাহর সর্বাধিক বড় সৈনিক। তাদের মধ্যে রয়েছে এমন সব ফেরেশতা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَالْمُرْسَلَاتِ عُرْفًا﴾ ‘‘শপথ সেসব (ফেরেশতার ), যারা একের পর এক প্রেরিত হয়৷ (সূরা মুরসালাত: ১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَالنَّاشِرَاتِ نَشْرًا (৩) فَالْفَارِقَاتِ فَرْقًا (৪) فَالْمُلْقِيَاتِ ذِكْرًا﴾ ‘‘শপথ ঐ সমস্ত ফেরেশতাগণের, যারা মেঘমালাকে বহন করে নিয়ে ছড়িয়ে দেয়৷ তারপর তাকে ফেঁড়ে বিচ্ছিন্ন করে৷ অতঃপর মানুষের মনে আল্লাহর স্মরণ জাগিয়ে দেয়’’। (সূরা মুরসালাত: ৩-৫) ফেরেশতাদের কাজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا (১) وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا (২) وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا (৩) فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا﴾ ‘‘সেই ফেরেশতাদের কসম! যারা ডুব দিয়ে টানে এবং ঐ সমস্ত ফেরেশতার কসম, খুব আস্তে আস্তে বের করে নিয়ে যায়৷ আর সেই ফেরেশতাদেরও শপথ! যারা বিশ্বলোকে দ্রুত গতিতে সাঁতরে চলে অতঃপর বারবার (হুকুম পালনের ব্যাপারে) সবেগে এগিয়ে যায়’’। (সূরা নাযিআত: ১-৪) আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের কাজ সম্পর্কে আরো বলেন,﴿وَالصَّافَّاتِ صَفًّا (১) فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا (২) فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا﴾ ‘‘সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মানদের কসম, তারপর যারা ধমক ও অভিশাপ দেয়। তাদের কসম, তারপর তাদের কসম যারা উপদেশবাণী শুনায়’’। (সূরা সাফফাত: ১-৩)

ফেরেশতাদের মধ্যে আরো রয়েছে একদল রহমতের ফেরেশতা। রয়েছে আযাবের ফেরেশতা। আরো এমন ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে আরশ বহন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আরো এমন ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে সালাত কায়েম, তাসবীহ পাঠ এবং আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে আসমানসমূহ আবাদ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে আরো এমন অনেক ফেরেশতা, যাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। الملَك শব্দটির লাম বর্ণে যবর দিয়ে পড়লে এমন অর্থ প্রদান করে যাতে বুঝা যায় যে, তারা সেই বার্তাবাহক অর্থে ব্যবহৃত, যারা বার্তা প্রেরকের বার্তা পৌঁছিয়ে দেয়। তাদের হাতে কিছু নেই। বরং সকল কিছুর চাবিকাঠি পরাক্রমশালী একক সত্তার হাতে। তারা শুধু তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ﴾‘‘তারা তো মর্যাদাশালী বান্দা৷ তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলেন না এবং শুধু তাঁর হুকুমে কাজ করেন’’। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ ﴿يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ﴾ ‘‘যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত’’। (সূরা বাকারা: ২৫৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,﴿وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ﴾ ‘‘যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত’’। (সূরা আন্বীয়া: ২৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ﴿يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ﴾ ‘‘তারা (ফেরেশতারা) ভয় করে নিজেদের রবকে যিনি তাদের উপরে আছেন এবং যা কিছু হুকুম দেয়া হয় সেই অনুযায়ী কাজ করে’’। (সূরা নাহাল: ৫০)

সুতরাং ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তাদের মধ্যে কতক ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান। কেউবা তাসবীহ পাঠে মশগুল। তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট দাড়াবার স্থান। তিনি তা অতিক্রম করতে পারেন না। সে আদিষ্ট কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই কাজ করতে কোন প্রকার ত্রুটি করেন না এবং তাঁকে যেই কাজের আদেশ করা হয়েছে, তার সীমাও লংঘন করেন না। যারা আল্লাহর নিকটবর্তী, তাদের মর্যাদা সর্বোচ্চে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ﴾ ‘‘তারা নিজেদেরকে বড় মনে করে তাঁর এবাদত থেকে বিমুখ হয়না এবং না ক্লান্ত হয়। দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকেন, বিরাম বা বিশ্রাম নেন না’’। (সূরা আম্বীয়া: ১৯-২০)

ফেরেশতাদের প্রধান ও নেতা হলেন তিনজন। জিবরীল, মীকাঈল এবং ইসরাফীল। তারা সকল মানুষ, প্রাণী, জীব ও উদ্ভিদের হায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। জিবরীল (আঃ) অহীর দায়িত্বপ্রাপ্ত। অহীর মাধ্যমেই রূহ এবং অন্তর জীবন্ত হয়। মিকাঈল বৃষ্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত। বৃষ্টির মাধ্যমে যমীন, উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ জীবিত হয়। ইসরাফীল শিঙ্গায় ফুৎকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এর মাধ্যমে সৃষ্টি মৃত্যুর পর পুনঃজীবন ফেরত পাবে। সুতরাং ফেরেশতারা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি ও আদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহর দূত। তারা তাঁর মাঝে এবং তাঁর বান্দাদের মাঝে দূত স্বরূপ। তারা আল্লাহর নিকট থেকে সৃষ্টি জগতের সকল প্রান্তে তাঁর আদেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অবতরণ করে এবং তাঁর নিকট উন্নীত হয়। ফেরেশতাদের ভারে আসমানসমূহ কড়কড় আওয়াজ করে। আওয়াজ করাই এগুলোর জন্য সমীচিন। আসমানে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালী নেই, যাতে কোন না কোন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে, কিংবা রুকু অবস্থায় অথবা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর এবাদতে মশগুল নয়। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা বাইতুল মা’মুরে প্রবেশ করে। তাদের কেউ উহাতে দ্বিতীয়বার প্রবেশের সুযোগ পাবেনা। কুরআন মজীদ বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতা এবং তাদের বিভিন্ন পদ মর্যাদার আলোচনায় ভরপূর। কোথাও কোথাও আল্লাহ তাআলা তাঁর নামের সাথে ফেরেশতার নাম যুক্ত করে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর সালাতকে ফেরেশতাদের সালাতের সাথে মিলিয়ে উল্লেখ করেছেন। আবার কখনো কখনো সম্মান জনক স্থানের দিকে তাদেরকে সম্বোধিত করেছেন। আবার কখনো উল্লেখ করেছেন যে, ফেরেশতারা আরশকে ঘিরে আছে এবং তারা আরশ বহন করে আছে। আবার কখনো উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা পাপ কাজ করা হতে মুক্ত। কখনো বলা হয়েছে যে, তারা সম্মানিত, নৈকট্যশীল, তারা উপরে উঠে, তারা পবিত্র, শক্তিধর এবং একনিষ্ঠ।
الإيمان بالكتب আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান

الإيمان بالكتب আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান: অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলদের উপর যেসব কিতাব নাযিল করেছেন, সেগুলোকে সত্যায়ন করা। আরো বিশ্বাস করা যে, কিতাবগুলোতে যা আছে, তা আল্লাহর কালাম। তা সত্য, আলোর দিশারী এবং তাতে রয়েছে মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট হেদায়াত।[1]

[1] - আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী ও রাসূলদের উপর যেসমস্ত কিতাব নাযিল করেছেন সেগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করা আহলে সুন্নাতের অন্যতম আকীদাহ। কুরআন মাজীদে যেসব কিতাবের নাম এসেছে যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল, যবুর এবং যেসব কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়নি, সেসব কিতাবের উপর ঈমান রাখা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির হেদায়াত ও কল্যাণের জন্য যেসমস্ত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের সকলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। তারা যে সমস্ত বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন তাতে তারা সত্যবাদী। তারা তাদের প্রভুর রেসালাত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আমরা তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করিনা; বরং তাদের সকলের উপর ঈমান রাখি। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের প্রতি ঈমান রাখি এবং তাদের মধ্য হতে যাদের নাম উল্লেখ করেন নি তাদের সকলের প্রতি আমরা ঈমান রাখি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ﴾

‘‘আর নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট ইতিপূর্বে বহু রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করেছি এবং এমন আরো অনেক রাসূল রয়েছেন, যাদের কথা তোমাকে বলিনি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪)

রাসূলদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন أولو العزم অর্থাৎ আল্লাহর দিকে দাওয়াত প্রচারে সুদৃঢ় ইচ্ছার অধিকারী রাসূলগণ।[1] তারা হলেন নূহ, ইবরাহীম, মুসা, ঈসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সম্মান ও মর্যাদার দিক দিয়ে তাদের পরে ছিলেন অন্যান্য রাসূলগণ। অতঃপর নবীগণ। নবী-রাসূলদের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশেষ হচ্ছেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নবী ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তার মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হচ্ছে নবী ঐ পুরুষ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কাছে শরীয়তের অহী পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তাঁকে তাবলীগ করার আদেশ দেয়া হয়নি। আর রাসূল ঐ পুরুষ লোককে বলা হয়, যার কাছে আল্লাহর শরীয়ত পাঠানো হয়েছে এবং সেই শরীয়তের তাবলীগ করার আদেশও দেয়া হয়েছে।[2]

[1] - তারা ছিলেন ঐ সমস্ত রাসূল, যারা রেসালাতের দায়িত্ব পালনে ছিলেন পর্বত সদৃশ সুদৃঢ় ইচ্ছা শক্তি সম্পন্ন এবং আল্লাহর তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করতে গিয়ে নিজ নিজ গোত্রের পক্ষ হতে যেসব যুলুম-নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তাতে সীমাহীন ধৈর্যধারনকারী।

[2] - শাইখ এখানে নবী ও রাসূলের মধ্যকার যেই পার্থক্য বর্ণনা করেছেন, তাতে কোন কোন আলেম আপত্তি করেছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে নতুন শরীয়ত দিয়ে কাউকে নবী করে পাঠানো হবে, অথচ তাকে সেই শরীয়ত প্রচার করার আদেশ দেয়া হবেনা, এটি কিভাবে হতে পারে? তাই তারা অন্যভাবে নবী ও রাসূলের মধ্যকার পার্থক্য নিরুপন করেছেন। তাদের মতে রাসূল হচ্ছেন সেই পুরুষ ব্যক্তি, যাকে আলাদা শরীয়তসহ প্রেরণ করা হয়েছে এবং তাকে সেই শরীয়ত মানুষের মধ্যে প্রচার করার আদেশ করা হয়েছে। আর নবী হচ্ছেন সেই পুরুষ ব্যক্তি, যাকে তার পূর্বের রাসূলের শরীয়ত অনুযায়ী স্বীয় উম্মতকে সংশোধন ও পরিচালনা করার জন্য পাঠানো হয়েছে।
الإيمان بالبعث পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান

الإيمان بالبعث পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান: এর অর্থ হচ্ছে কিয়ামত দিবসে মৃতদেরকে তাদের কবর হতে জীবিত অবস্থায় বের করার প্রতি ঈমান আনয়ন করা। কবর হতে জীবিত অবস্থায় বের করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবেন এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পবিত্র সুন্নাতে আমল অনুযায়ী তাদেরকে যে পদ্ধতিতে বিনিময় দেয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই তাদেরকে বিনিময় প্রদান করবেন।

الإيمان بالقدر خيره وشره তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করা

الإيمان بالقدر خيره وشره তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনয়ন করা: তাকদীরের ভাল ও মন্দের[1] উপর ঈমান আনয়ন করার অর্থ হচ্ছে, অন্তর দিয়ে এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা মাখলুক সৃষ্টি করার আগেই সমস্ত বস্ত্তর তাকদীরসমূহ এবং উহার সময়কাল সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক সৃষ্টির ভাগ্যে কী রয়েছে এবং তা সে কখন পাবে? আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৃষ্টি করার পূর্ব হতেই অবগত আছেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় ইলম মোতাবেক উহাকে লাওহে মাহফুযে লিখে দিয়েছেন। অতঃপর স্বীয় ক্ষমতা ও ইচ্ছা দ্বারা প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার নির্ধারিত সময়ে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ভাল-মন্দ প্রত্যেক সৃষ্টিই তাঁর ইলম, তাঁর নির্ধারণ, তাঁর ইচ্ছা অনুপাতেই হয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলা যা চান, তা হয়। আর তিনি যা চান না, তা হয়না।

এই ছিল ঈমানের মূলনীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ। ইনশা-আল্লাহ এই মূলনীতিগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সামনে আসছে।


[1] - তাকদীরকে ভাল ও মন্দ এই দু’টি বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে। তাকদীরের ভাল বিষয়গুলো তো সুস্পষ্ট। মানুষ ইহপরকালে যেসব কল্যাণ অর্জন করবে, তা আল্লাহ তাআলা পূর্ব থেকেই অবগত আছেন এবং তিনি তা নির্ধারণ করেছেন। এমনি তাকদীরের মন্দ বিষয়গুলোও আল্লাহ তাআলা তাঁর ইলমে আযালীর (চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর জ্ঞানের) মাধ্যমে অবগত আছেন। তাকদীরের মধ্যে যেহেতু অকল্যাণও রয়েছে, তাই স্বভাবত একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, তাহলে কি আল্লাহ তাআলা মন্দ জিনিষও সৃষ্টি করেন এবং বান্দার জন্য নির্ধারণ করেন? আল্লাহর কাজের মধ্যেও কি অকল্যাণকর কিছু আছে?

এই প্রশ্নের জবাবে শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন অত্যন্ত সুন্দর কথা বলেছেন এবং তিনি বেশ কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করেছেন। পাঠক সমীপে এখানে তা উল্লেখ করা হলো।

তিনি বলেনঃ এখানে তাকদীরের অকল্যাণ বলতে ঐসব অকল্যাণ উদ্দেশ্য, যা রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি ও নির্ধারিত বস্ত্ত ও বিষয়ের মধ্যে। তাকদীরের অকল্যাণ তথা ঐ নির্ধারণের অকল্যাণ উদ্দেশ্য নয়, যা আল্লাহর ক্রিয়া ও কাজ। কেননা আল্লাহর কাজের মধ্যে কোন অকল্যাণ নেই। তাঁর সকল কাজই ভাল এবং তাঁর প্রত্যেকটি কাজই হিকমত ও প্রজ্ঞা পূর্ণ। তবে আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন এবং যা তিনি নির্ধারণ করেছেন, তার কোন কোনটিতে অকল্যাণ রয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ভাগ্যে যা নির্ধারিত রয়েছে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যা সৃষ্টি করেছেন, তাতে অকল্যাণ রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কোন فعل বা কাজের মধ্যে অকল্যাণ নেই। এই জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ والشر ليس إليك তোমার দিকে অকল্যাণের সম্বন্ধ শোভনীয় নয়।

বিষয়টি খোলাসা করার জন্য উদাহরণ পেশ করা দরকার। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা যা সৃষ্টি করেছেন এবং যা নির্ধারণ করেছেন, তার মধে ক্ষতির সৃষ্টিও রয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে সাপ, বিচ্ছু, হিংস্র জীব-জন্তু, বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যধি, অভাব-অনটন, দুর্ভিক্ষ, অনাবৃষ্টি এবং এ ধরণের আরো কিছু। এগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কেননা এগুলো মানুষের চাহিদার পরিপন্থী। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে পাপাচার, অশ্লীলতা, কুফুরী, অবাধ্যতা, হত্যা এবং আরো বহু অন্যায় কাজ-কর্ম। এসব মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে এগুলো কল্যাণকর। কেননা আল্লাহ তাআলা এগুলোকে এক বিরাট ও সুমহান উদ্দেশ্যে সৃষ্টি ও নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি তা জানতে পেরেছে, সে তো উহার হিকমত জানলই। পক্ষান্তরে যে উহা জানতে পারেনি, সে তো উহা সম্পর্কে অজ্ঞই রয়ে গেল।

সুতরাং আমাদের জানা আবশ্যক যে, তাকদীরে যেই অকল্যাণ থাকার কথা বলা হয়েছে, তা আল্লাহর সৃষ্টিসমূহ এবং তাঁর নির্ধারিত বস্ত্ত ও বিষয়গুলোর দিক থেকেই। আল্লাহর ঐ তাকদীরের দিক বিবেচনায় নয়, যার দ্বারা আল্লাহর নির্ধারণ এবং আল্লাহর কাজ বুঝায়। কেননা আল্লাহ বান্দার জন্য অকল্যাণ কিছুতেই করেন না।

অতঃপর হে পাঠক! আপনি জেনে রাখুন যে, আল্লাহর যেই সৃষ্টি অকল্যাণকর, তার মধ্যে মূলতই অকল্যাণ থাকতে পারে; কিন্তু অন্যদিক বিবেচনায় তাও কল্যাণকর। আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾

মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা ফিরে আসবে’’। (সূরা রুম: ৪১) সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিপর্যয়ের ফলাফলও ভাল। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় বিষয়টিতে তথা বিপর্যয় ও বিশৃংখলার যেই অকল্যাণ রয়েছে, তা তুলনামূলক ও আপেক্ষিক। অর্থাৎ একদিক থেকে অকল্যাণকর এবং অন্যদিক থেকে কল্যাণকর। সম্পূর্ণরূপে এবং প্রকৃতপক্ষে তা ক্ষতিকর নয়। কেননা অচিরেই এর ফলাফল ভাল হবে।

ব্যভিচারী ও মদখোরকে শাস্তি দেয়ার বিষয়টিও উদাহরণ স্বরূপ আসতে পারে। ব্যভিচারী অবিবাহিত হলে একশটি বেত্রাঘাত করাসহ একবছর পর্যন্ত দেশান্তর করতে হবে। কোন সন্দেহ নেই যে, এটি তার জন্য কষ্টকর। কেননা তার চাহিদার জন্য এটি উপযোগী নয়। কিন্তু অন্যদিকে এটি তার জন্য কল্যাণকর। শাস্তি প্রয়োগ করার কারণে তার গুনাহএর কাফফারা হবে। এটি ভাল। কেননা দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের শাস্তির চেয়ে সহজতর। সুতরাং দুনিয়াতে শাস্তি ভোগ করা তার জন্য ভাল। এই শাস্তি প্রয়োগের আরেকটি কল্যাণকর দিক হলো, তা দেখে অন্যরা সাবধান হবে। ফলে তা অন্যের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ হবে। কেননা অন্যরা যখন ব্যভিচারের দিকে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করবে এবং যখন সে জানতে পারবে যে, অমুক যেনাকারীকে যেই শাস্তি দেয়া হয়েছে, তার উপরও তা প্রয়োগ করা হবে, তখন সে এই জঘণ্য অপরাধ থেকে বিরত থাকবে। যাকে ব্যভিচারের শাস্তি দেয়া হলো, তার জন্য এই শাস্তি অন্য একদিক থেকেও ভাল হতে পারে। তা এই যে সে ভবিষ্যতে আর ব্যভিচারের দিকে অগ্রসর হবেনা।

আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যেও কিছু সৃষ্টি ক্ষতিকর। এটি শুধু মানুষকে কষ্ট দিবে- এই জন্য আল্লাহ উহা সৃষ্টি করেন নি। বরং নির্ধারিত বস্ত্ত হিসাবে গণ্য করার দিক থেকে তা ক্ষতিকর। উদাহরণ স্বরূপ রোগ-ব্যধির কথা বলা যেতে পারে। মানুষ যখন অসুস্থ হয়, তখন তার সেই অসুস্থতা অব্যশই কষ্টদায়ক। কিন্তু বাস্তবে সেই অসুখের মধ্যে তার জন্য বিরাট এক কল্যাণ রয়েছে। এর মাধ্যমে তার গুনাহ মাফ হয়। কখনো মানুষের এমন গুনাহ থাকে, যা তাওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মাফ হয়না। গুনাহ মাফ হওয়ার পথে কোন না কোন প্রতিবন্ধক থাকার কারণেই এ রকম হয়। নিয়ত ও ইখলাসের মধ্যে ত্রুটি থাকার কারণে এবং আল্লাহর সাথে সত্যবাদী না হওয়ার কারণে এমনটি হতে পারে, তাই এসব অসুস্থতা এবং শাস্তির মাধ্যমে এই গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়।

রোগ-ব্যধির অন্যতম কল্যাণ হচ্ছে যে, সুস্বাস্থ্যের মূল্য বুঝা। সুস্বাস্থ্য যে একটি আল্লাহ তাআলার কত বড় নিয়ামত, মানুষ তা মূল্যায়ন করতে জানেনা। তবে সে যখন অসুস্থ হয়, কেবল তখনই এর মূল্য বুঝতে সক্ষম হয়। আমরা যখন সুস্থ থাকি, তখন সুস্থ থাকার মূল্য বুঝিনা। কিন্তু যখন অসুস্থ হয়ে যাই, তখন স্বাস্থ্যের মূল্য বুঝি। কথায় বলেঃ الصحة تاج على رؤوس الأصحاء لايعرفها إلا المرضى সুস্থতা সুস্থ লোকের মাথার মূকুট স্বরূপ। অসুস্থ ব্যতীত অন্য কেউ তা দেখতে পায়না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে অসুস্থ হওয়াও ভাল। যাতে করে আপনি সুস্থতার মূল্য অনুভব করতে পারেন।

অসুস্থ হওয়ার আরেকটি ভাল দিক হচ্ছে কোন কোন রোগের মধ্যে এমন জিনিষ থাকে, যা শরীরের অন্যান্য রোগ জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। রোগ ছাড়া অন্য কিছু এই জীবাণুকে হত্যা করতে পারেনা। ডাক্তারগণ বলে থাকেনঃ কতক রোগ শরীরের অন্যান্য বড় বড় রোগজীবাণু হত্যা করে। অথচ আমরা টের পাইনা।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, প্রথমতঃ যেই অকল্যাণ দ্বারা তাকদীরকে বিশেষিত করা হয়েছে, আল্লাহর সৃষ্ট বস্ত্ত ও নির্ধারিত বস্ত্তর দিক থেকে হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যা করেন, তার সবকিছু কল্যাণের জন্যই করেন। এই কথার দলীল হচ্ছে, وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ অকল্যাণকে তোমার দিকে সম্বোধিত করা শোভনীয় নয়।

দ্বিতীয়ত: কিছু কিছু মাখলুকের মধ্যে যেই অকল্যাণ রয়েছে, তা শুধুই ক্ষতিকর নয়। কেননা এই অকল্যাণ থেকে কখনো এমন অনেক কল্যাণ চলে আসে, যা মানুষের জন্য খুবই উপকারী। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন মসীবতে নিপতিত হলো, তার জন্য ঐ মসীবত একদিক থেকে কষ্টদায়ক এবং অন্যদিক মূল্যায়নে উহা তার জন্য কল্যাণকর। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নিকট তাকদীরের স্তর সম্পর্কে আলোচনা করার সময় এ বিষয়ে আরো আলোচনা সামনে আসবে ইনশা-আল্লাহ।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে