শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ঈমানের রুকনসমূহ ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
الإيمان بالملائكة ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস
الإيمان بالملائكة ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস: ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়নের তাৎপর্য হলো, অন্তর দিয়ে তাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস করা। আরো বিশ্বাস করা যে, তারা ঠিক সে রকমই, যেভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা সুরা আন্বিয়ার ২৭ নং আয়াতে বলেনঃ
﴿ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ﴾
‘‘তারা তো মর্যাদাশীল বান্দা৷ তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলেনা এবং শুধু তাঁর হুকুমেই কাজ করে’’। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতা ও তাদের বিভিন্ন গুণাবলীর বিবরণ দিয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, তাদের উপর অনেক কাজের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তারা সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো পালন করে। এই সবের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক।[1]
[1] - কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে ফেরেশতাদের কিছু গুণাগুণ, কাজ-কর্ম ও দায়িত্ব-কর্তব্যের বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হলোঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا﴾ ‘‘এরপর আল্লাহর হুকুমে সকল বিষয়ের কাজ পরিচালনা করে’’। (সূরা নাযিআত: ৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ ﴿فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا﴾ ‘‘অতঃপর একটি বড় জিনিষ বন্টনকারী’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৪) ঈমানদার ও রাসূলদের অনুসারীদের নিকট এরা হচ্ছেন ফেরেশতা। যারা সৃষ্টিকর্তা ও নবী-রাসূলদেরকে অস্বীকার করে, তারা বলে থাকে যে, উক্ত আয়াত দু’টিতে তারকার কথা বলা হয়েছে।
কুরআন ও সুন্নাহয় বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার মাখলুকের দায়িত্বও অর্পন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের দায়িত্বে ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মেঘমালা ও বৃষ্টি পরিচালনার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মাতৃগর্ভে শিশুর দায়িত্বে ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। সে শুত্রুবিন্দু থেকে শুরু করে শিশুর গঠন পর্যন্ত যাবতীয় কাজ পরিচালনা করে। বান্দা যেই আমল করে, তা সংরক্ষণ করার জন্য এবং লিখে রাখার জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। মৃত্যুর জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। কবরে প্রশ্ন করার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মহা শুণ্যের গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। তারা তা ঘুরান ও পরিচালনা করেন। চন্দ্র-সূর্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। জাহান্নাম, জাহান্নামের আগুন জ্বালানো, জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়া এবং জাহান্নামের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। জান্নাত, জান্নাতের পরিচালনা, তাতে বৃক্ষাদি লাগানো এবং তাতে বিভিন্ন প্রকার নেয়ামত স্থাপন করার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। সুতরাং ফেরেশতারা আল্লাহর সর্বাধিক বড় সৈনিক। তাদের মধ্যে রয়েছে এমন সব ফেরেশতা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَالْمُرْسَلَاتِ عُرْفًا﴾ ‘‘শপথ সেসব (ফেরেশতার ), যারা একের পর এক প্রেরিত হয়৷ (সূরা মুরসালাত: ১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَالنَّاشِرَاتِ نَشْرًا (৩) فَالْفَارِقَاتِ فَرْقًا (৪) فَالْمُلْقِيَاتِ ذِكْرًا﴾ ‘‘শপথ ঐ সমস্ত ফেরেশতাগণের, যারা মেঘমালাকে বহন করে নিয়ে ছড়িয়ে দেয়৷ তারপর তাকে ফেঁড়ে বিচ্ছিন্ন করে৷ অতঃপর মানুষের মনে আল্লাহর স্মরণ জাগিয়ে দেয়’’। (সূরা মুরসালাত: ৩-৫) ফেরেশতাদের কাজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا (১) وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا (২) وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا (৩) فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا﴾ ‘‘সেই ফেরেশতাদের কসম! যারা ডুব দিয়ে টানে এবং ঐ সমস্ত ফেরেশতার কসম, খুব আস্তে আস্তে বের করে নিয়ে যায়৷ আর সেই ফেরেশতাদেরও শপথ! যারা বিশ্বলোকে দ্রুত গতিতে সাঁতরে চলে অতঃপর বারবার (হুকুম পালনের ব্যাপারে) সবেগে এগিয়ে যায়’’। (সূরা নাযিআত: ১-৪) আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের কাজ সম্পর্কে আরো বলেন,﴿وَالصَّافَّاتِ صَفًّا (১) فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا (২) فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا﴾ ‘‘সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মানদের কসম, তারপর যারা ধমক ও অভিশাপ দেয়। তাদের কসম, তারপর তাদের কসম যারা উপদেশবাণী শুনায়’’। (সূরা সাফফাত: ১-৩)
ফেরেশতাদের মধ্যে আরো রয়েছে একদল রহমতের ফেরেশতা। রয়েছে আযাবের ফেরেশতা। আরো এমন ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে আরশ বহন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আরো এমন ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে সালাত কায়েম, তাসবীহ পাঠ এবং আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে আসমানসমূহ আবাদ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে আরো এমন অনেক ফেরেশতা, যাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। الملَك শব্দটির লাম বর্ণে যবর দিয়ে পড়লে এমন অর্থ প্রদান করে যাতে বুঝা যায় যে, তারা সেই বার্তাবাহক অর্থে ব্যবহৃত, যারা বার্তা প্রেরকের বার্তা পৌঁছিয়ে দেয়। তাদের হাতে কিছু নেই। বরং সকল কিছুর চাবিকাঠি পরাক্রমশালী একক সত্তার হাতে। তারা শুধু তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ﴾‘‘তারা তো মর্যাদাশালী বান্দা৷ তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলেন না এবং শুধু তাঁর হুকুমে কাজ করেন’’। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ ﴿يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ﴾ ‘‘যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত’’। (সূরা বাকারা: ২৫৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,﴿وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ﴾ ‘‘যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত’’। (সূরা আন্বীয়া: ২৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ﴿يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ﴾ ‘‘তারা (ফেরেশতারা) ভয় করে নিজেদের রবকে যিনি তাদের উপরে আছেন এবং যা কিছু হুকুম দেয়া হয় সেই অনুযায়ী কাজ করে’’। (সূরা নাহাল: ৫০)
সুতরাং ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তাদের মধ্যে কতক ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান। কেউবা তাসবীহ পাঠে মশগুল। তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট দাড়াবার স্থান। তিনি তা অতিক্রম করতে পারেন না। সে আদিষ্ট কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই কাজ করতে কোন প্রকার ত্রুটি করেন না এবং তাঁকে যেই কাজের আদেশ করা হয়েছে, তার সীমাও লংঘন করেন না। যারা আল্লাহর নিকটবর্তী, তাদের মর্যাদা সর্বোচ্চে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ﴾ ‘‘তারা নিজেদেরকে বড় মনে করে তাঁর এবাদত থেকে বিমুখ হয়না এবং না ক্লান্ত হয়। দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকেন, বিরাম বা বিশ্রাম নেন না’’। (সূরা আম্বীয়া: ১৯-২০)
ফেরেশতাদের প্রধান ও নেতা হলেন তিনজন। জিবরীল, মীকাঈল এবং ইসরাফীল। তারা সকল মানুষ, প্রাণী, জীব ও উদ্ভিদের হায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। জিবরীল (আঃ) অহীর দায়িত্বপ্রাপ্ত। অহীর মাধ্যমেই রূহ এবং অন্তর জীবন্ত হয়। মিকাঈল বৃষ্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত। বৃষ্টির মাধ্যমে যমীন, উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ জীবিত হয়। ইসরাফীল শিঙ্গায় ফুৎকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এর মাধ্যমে সৃষ্টি মৃত্যুর পর পুনঃজীবন ফেরত পাবে। সুতরাং ফেরেশতারা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি ও আদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহর দূত। তারা তাঁর মাঝে এবং তাঁর বান্দাদের মাঝে দূত স্বরূপ। তারা আল্লাহর নিকট থেকে সৃষ্টি জগতের সকল প্রান্তে তাঁর আদেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অবতরণ করে এবং তাঁর নিকট উন্নীত হয়। ফেরেশতাদের ভারে আসমানসমূহ কড়কড় আওয়াজ করে। আওয়াজ করাই এগুলোর জন্য সমীচিন। আসমানে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালী নেই, যাতে কোন না কোন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে, কিংবা রুকু অবস্থায় অথবা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর এবাদতে মশগুল নয়। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা বাইতুল মা’মুরে প্রবেশ করে। তাদের কেউ উহাতে দ্বিতীয়বার প্রবেশের সুযোগ পাবেনা। কুরআন মজীদ বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতা এবং তাদের বিভিন্ন পদ মর্যাদার আলোচনায় ভরপূর। কোথাও কোথাও আল্লাহ তাআলা তাঁর নামের সাথে ফেরেশতার নাম যুক্ত করে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর সালাতকে ফেরেশতাদের সালাতের সাথে মিলিয়ে উল্লেখ করেছেন। আবার কখনো কখনো সম্মান জনক স্থানের দিকে তাদেরকে সম্বোধিত করেছেন। আবার কখনো উল্লেখ করেছেন যে, ফেরেশতারা আরশকে ঘিরে আছে এবং তারা আরশ বহন করে আছে। আবার কখনো উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা পাপ কাজ করা হতে মুক্ত। কখনো বলা হয়েছে যে, তারা সম্মানিত, নৈকট্যশীল, তারা উপরে উঠে, তারা পবিত্র, শক্তিধর এবং একনিষ্ঠ।
কুরআন ও সুন্নাহয় বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদের উপর বিভিন্ন প্রকার মাখলুকের দায়িত্বও অর্পন করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের দায়িত্বে ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মেঘমালা ও বৃষ্টি পরিচালনার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মাতৃগর্ভে শিশুর দায়িত্বে ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। সে শুত্রুবিন্দু থেকে শুরু করে শিশুর গঠন পর্যন্ত যাবতীয় কাজ পরিচালনা করে। বান্দা যেই আমল করে, তা সংরক্ষণ করার জন্য এবং লিখে রাখার জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। মৃত্যুর জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। কবরে প্রশ্ন করার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। মহা শুণ্যের গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। তারা তা ঘুরান ও পরিচালনা করেন। চন্দ্র-সূর্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। জাহান্নাম, জাহান্নামের আগুন জ্বালানো, জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়া এবং জাহান্নামের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন। জান্নাত, জান্নাতের পরিচালনা, তাতে বৃক্ষাদি লাগানো এবং তাতে বিভিন্ন প্রকার নেয়ামত স্থাপন করার জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। সুতরাং ফেরেশতারা আল্লাহর সর্বাধিক বড় সৈনিক। তাদের মধ্যে রয়েছে এমন সব ফেরেশতা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَالْمُرْسَلَاتِ عُرْفًا﴾ ‘‘শপথ সেসব (ফেরেশতার ), যারা একের পর এক প্রেরিত হয়৷ (সূরা মুরসালাত: ১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَالنَّاشِرَاتِ نَشْرًا (৩) فَالْفَارِقَاتِ فَرْقًا (৪) فَالْمُلْقِيَاتِ ذِكْرًا﴾ ‘‘শপথ ঐ সমস্ত ফেরেশতাগণের, যারা মেঘমালাকে বহন করে নিয়ে ছড়িয়ে দেয়৷ তারপর তাকে ফেঁড়ে বিচ্ছিন্ন করে৷ অতঃপর মানুষের মনে আল্লাহর স্মরণ জাগিয়ে দেয়’’। (সূরা মুরসালাত: ৩-৫) ফেরেশতাদের কাজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا (১) وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا (২) وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا (৩) فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا﴾ ‘‘সেই ফেরেশতাদের কসম! যারা ডুব দিয়ে টানে এবং ঐ সমস্ত ফেরেশতার কসম, খুব আস্তে আস্তে বের করে নিয়ে যায়৷ আর সেই ফেরেশতাদেরও শপথ! যারা বিশ্বলোকে দ্রুত গতিতে সাঁতরে চলে অতঃপর বারবার (হুকুম পালনের ব্যাপারে) সবেগে এগিয়ে যায়’’। (সূরা নাযিআত: ১-৪) আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের কাজ সম্পর্কে আরো বলেন,﴿وَالصَّافَّاتِ صَفًّا (১) فَالزَّاجِرَاتِ زَجْرًا (২) فَالتَّالِيَاتِ ذِكْرًا﴾ ‘‘সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মানদের কসম, তারপর যারা ধমক ও অভিশাপ দেয়। তাদের কসম, তারপর তাদের কসম যারা উপদেশবাণী শুনায়’’। (সূরা সাফফাত: ১-৩)
ফেরেশতাদের মধ্যে আরো রয়েছে একদল রহমতের ফেরেশতা। রয়েছে আযাবের ফেরেশতা। আরো এমন ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে আরশ বহন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আরো এমন ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে সালাত কায়েম, তাসবীহ পাঠ এবং আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে আসমানসমূহ আবাদ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে আরো এমন অনেক ফেরেশতা, যাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। الملَك শব্দটির লাম বর্ণে যবর দিয়ে পড়লে এমন অর্থ প্রদান করে যাতে বুঝা যায় যে, তারা সেই বার্তাবাহক অর্থে ব্যবহৃত, যারা বার্তা প্রেরকের বার্তা পৌঁছিয়ে দেয়। তাদের হাতে কিছু নেই। বরং সকল কিছুর চাবিকাঠি পরাক্রমশালী একক সত্তার হাতে। তারা শুধু তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ﴾‘‘তারা তো মর্যাদাশালী বান্দা৷ তারা তাঁর সামনে অগ্রবর্তী হয়ে কথা বলেন না এবং শুধু তাঁর হুকুমে কাজ করেন’’। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ ﴿يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ﴾ ‘‘যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত’’। (সূরা বাকারা: ২৫৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,﴿وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ﴾ ‘‘যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত’’। (সূরা আন্বীয়া: ২৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ﴿يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ﴾ ‘‘তারা (ফেরেশতারা) ভয় করে নিজেদের রবকে যিনি তাদের উপরে আছেন এবং যা কিছু হুকুম দেয়া হয় সেই অনুযায়ী কাজ করে’’। (সূরা নাহাল: ৫০)
সুতরাং ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তাদের মধ্যে কতক ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান। কেউবা তাসবীহ পাঠে মশগুল। তাদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট দাড়াবার স্থান। তিনি তা অতিক্রম করতে পারেন না। সে আদিষ্ট কর্মে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই কাজ করতে কোন প্রকার ত্রুটি করেন না এবং তাঁকে যেই কাজের আদেশ করা হয়েছে, তার সীমাও লংঘন করেন না। যারা আল্লাহর নিকটবর্তী, তাদের মর্যাদা সর্বোচ্চে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ﴾ ‘‘তারা নিজেদেরকে বড় মনে করে তাঁর এবাদত থেকে বিমুখ হয়না এবং না ক্লান্ত হয়। দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকেন, বিরাম বা বিশ্রাম নেন না’’। (সূরা আম্বীয়া: ১৯-২০)
ফেরেশতাদের প্রধান ও নেতা হলেন তিনজন। জিবরীল, মীকাঈল এবং ইসরাফীল। তারা সকল মানুষ, প্রাণী, জীব ও উদ্ভিদের হায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। জিবরীল (আঃ) অহীর দায়িত্বপ্রাপ্ত। অহীর মাধ্যমেই রূহ এবং অন্তর জীবন্ত হয়। মিকাঈল বৃষ্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত। বৃষ্টির মাধ্যমে যমীন, উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগৎ জীবিত হয়। ইসরাফীল শিঙ্গায় ফুৎকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এর মাধ্যমে সৃষ্টি মৃত্যুর পর পুনঃজীবন ফেরত পাবে। সুতরাং ফেরেশতারা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি ও আদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহর দূত। তারা তাঁর মাঝে এবং তাঁর বান্দাদের মাঝে দূত স্বরূপ। তারা আল্লাহর নিকট থেকে সৃষ্টি জগতের সকল প্রান্তে তাঁর আদেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অবতরণ করে এবং তাঁর নিকট উন্নীত হয়। ফেরেশতাদের ভারে আসমানসমূহ কড়কড় আওয়াজ করে। আওয়াজ করাই এগুলোর জন্য সমীচিন। আসমানে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালী নেই, যাতে কোন না কোন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে, কিংবা রুকু অবস্থায় অথবা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর এবাদতে মশগুল নয়। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা বাইতুল মা’মুরে প্রবেশ করে। তাদের কেউ উহাতে দ্বিতীয়বার প্রবেশের সুযোগ পাবেনা। কুরআন মজীদ বিভিন্ন প্রকার ফেরেশতা এবং তাদের বিভিন্ন পদ মর্যাদার আলোচনায় ভরপূর। কোথাও কোথাও আল্লাহ তাআলা তাঁর নামের সাথে ফেরেশতার নাম যুক্ত করে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর সালাতকে ফেরেশতাদের সালাতের সাথে মিলিয়ে উল্লেখ করেছেন। আবার কখনো কখনো সম্মান জনক স্থানের দিকে তাদেরকে সম্বোধিত করেছেন। আবার কখনো উল্লেখ করেছেন যে, ফেরেশতারা আরশকে ঘিরে আছে এবং তারা আরশ বহন করে আছে। আবার কখনো উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা পাপ কাজ করা হতে মুক্ত। কখনো বলা হয়েছে যে, তারা সম্মানিত, নৈকট্যশীল, তারা উপরে উঠে, তারা পবিত্র, শক্তিধর এবং একনিষ্ঠ।