উত্তর : (গ্রীষ্মকালীন কেন্দ্রসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো) ছাত্রদেরকে জ্ঞান ও সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়া। সুতরাং আমার মতে কেন্দ্রসমূহের পরিচালকগণ সময়কে এমনভাবে ভাগ করে নিবেন যাতে কেন্দ্রের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদেরকে দারস ও বক্তৃতা প্রদানের জন্যে মাসজিদে নিয়ে যাওয়া যায়। কেননা দারস ও আলোচনায় অংশগ্রহণ কেন্দ্রের অন্যতম একটি কাজ। আর এর জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার চেয়ে মাসজিদে উপস্থিত হওয়া উত্তম। কেননা ইলমি (জ্ঞানসংক্রান্ত) আলোচনা শ্রবণ করার জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার চেয়ে আল্লাহর ঘরে উপস্থিত হওয়াই শ্রেয়।[1]
মোটকথা : কেন্দ্রসমূহের পরিচালকদের জন্য করণীয় হলো, তারা এমনভাবে কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন, যাতে মাসজিদে আলোচনার/বক্তৃতার জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখবেন এবং লক্ষ্য রাখবেন যেন বক্তৃতা ও প্রোগ্রাম পরস্পর বিরোধী না হয়। কেন্দ্রসমূহের উদ্দেশ্য এমনটাই হতে হবে। যেমনটা আমরা উল্লেখ করেছি।
[1]. ইসলামের প্রাথমিক যুগে মাসজিদই ছিল জ্ঞানের উৎস এবং আলিমগণের জ্ঞান পিপাসা মিটানোর ঝরণা স্বরূপ। মাসজিদ থেকেই অনেক সুবিজ্ঞ বিদ্বান পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। অনেক হাদীছ বিশারদ হাদীছ ও উলুমুল হাদীছে, ফিক্বাহবিদগণ ফিক্বাহ ও উসূলুল ফিকহে, তাফসিরবিদগণ তাফসীর ও উসূলুল তাফসির, ভাষাবিদগণ ইলমুন নাহু ও কলা শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন। আবার কেউ কেউ মাসজিদের আলোচনা সভা থেকেই উল্লেখিত সকল বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জ্ঞানের জন্য গমন করতে হয়, জ্ঞান কারো নিকট আসে না। সুতরাং কেউ যেন উত্তমকে অনুত্তমের বিনিময়ে পরিবর্তন না করে।
উত্তর : ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলিকে কেন্দ্রসমূহের পরিচালকদের কর্মসূচি থেকে বাদ দেয়া আবশ্যক। তাদেরকে কুরআন, সুন্নাহ/হাদীছ, ফিক্বহ এবং আরবী ভাষা শিক্ষা দিবেন। তাদের সময় ও মনোযোগ এগুলোর প্রতি নিবিষ্ট রাখবেন। এমনিভাবে দুনিয়াবী প্রয়োজনীয় বিদ্যাসমূহ যেমন গণিত, বিভিন্ন ব্যবহারিক যোগ্যতা শিক্ষা দিবেন। আর তারা যে সকল কাজকে বিনোদনমূলক কাজ বলে অভিহিত করে বস্ত্ততঃ সেগুলোকে তালিকায় রাখার কোন প্রয়োজন নেই।[1] কেননা এর দ্বারা কিছু সময় বিনা উপকারে কেটে যায়। বরং কখনো কখনো তাদেরকে এমন মত্ত রাখে যে তারা মূল উদ্দেশ্যই ভুলে যায়। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে সকল অভিনয় ও সংগীত শেখানো ও প্রচার করা হয় তা খেল তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।
[1]. শায়খ সলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান (রহ.) তার ‘আল-খুতাবুল মিমবারিয়্যাহ’ (১৪১১ হিজরিতে প্রকাশিত) নামক গ্রন্থের ৩নং খণ্ড-র ১৮৪ ও ১৮৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ‘‘জ্ঞাতব্য : বর্তমানে অনেক দীনদার যুবকদের মাঝেও যৌথসংগীত বাজানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এ সংগীতগুলোকে ইসলামী সংগীত বলে থাকে। বস্ততঃ এ সংগীতগুলোও গানের অন্তর্ভুক্ত। কখনো কখনো এগুলো ফিতনা সৃষ্টি করে। আওয়াজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ক্যাসেটের দোকানে কুরআনুল কারীম ও দ্বীনী বক্তৃতার ক্যাসেটের সাথে বিক্রি করা হয়। এসকল সংগীতকে ইসলামী সংগীত বলা মারাত্মক ভুল। কেননা ইসলামী শরী‘আ হতে কোন সংগীতকে দীন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়নি। বরং আল্লাহর যিকর, কুরআন তিলাওয়াত এবং কল্যাণকর ইলম অর্জন করা ইত্যাদিকে দীন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে
সংগীত : সংগীত হলো বিদাতী সুফীদের ধর্ম; যারা দীনকে খেল-তামাশা মনে করে।
সংগীতকে দীনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা খ্রিষ্টানদের সাথে সাদৃশ্য অর্জন করার নামান্তর। তারা সুরেলা কণ্ঠে যৌথ গান গাওয়াকে ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে। সুতরাং এসকল সংগীত থেকে সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক। সংগীতের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে যে সকল ফিতনা-ফাসাদ, হট্টগোল-বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য এর কেনাবেচা, বিনিময় ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে হবে।
সংগীত প্রচলনকারীরা দলিল হিসাবে বলে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটও তো কবিতা পাঠ করা হতো। তিনি নিজে শ্রবণ করতেন এবং সম্মতি প্রদান করতেন।
উত্তর: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আবৃতিকৃত সংগীতগুলো গানের মত যৌথ স্বরে আবৃতি করা হতো না এবং সেগুলোকে ইসলামে সংগীতও বলা হতো না। বরং সেগুলো ছিল বিজ্ঞবচন, প্রবাদ, বীরত্ব ও মর্যাদার গুণাবলী বর্ণনা সম্পন্ন। ছাহাবীগণ এর অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে একাকি আবৃতি করতেন।
কিছু কিছু কবিতা ক্লান্তিকর কাজ যেমন নির্মাণ কাজ, রাতে সফর সম্পাদনের সময় আবৃতি করতেন। সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যে, বিশেষ কিছু সময়ে এধরণের কবিতা আবৃতি করা বৈধ; তবে তা শিক্ষা ও দাওয়ার বিষয় হতে পারে না। অথচ এটাই বর্তমানের নির্মম বাস্তবতা। এমনকি ইসলামি/দ্বীনী গান/সংগীত নাম দিয়ে ছাত্রদেরকে শিখানো হয়।
এটা দীনের মধ্যে বিদআত বা নতুন আবিষ্কারের অন্তর্ভুক্ত। এটা বিদাতী সুফীদের কাজ; যারা সংগীতকে ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে।
সুতরাং এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এসকল ক্যাসেট বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি অংকুরেই একে দূর না করা হয় তাহলে এর ক্ষতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে। ক্ষতি অল্প অল্প করেই শুরু হয় পরবর্তীতে সর্বগ্রাসী রূপ নেয়।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উসায়মিন (রহ.) কে সংগীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে,
‘‘প্রশ্ন : পুরুষের জন্য কী ইসলামী সংগীত আবৃতি করা বৈধ? আবৃতির সাথে সাথে কি দাফ বাজানো যাবে? ঈদ এবং আনন্দ অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য সময় কি আবৃতি করা বৈধ?
উত্তর : ইসলামী সংগীত আবৃতি করা একটি বিদআত; যা সুফীরা আবিষ্কার করেছে। এজন্য এর থেকে বিরত থেকে কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা উচিত। জিহাদের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য সংগীত ব্যবহার করা বৈধ। তবে এর সাথে দফ যোগ করলে বৈধতা অবশিষ্ট থাকবে না। মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উসাইমিন (রহ.) ফাতওয়া, সংকলক, আশরাফ আব্দুল মাকছুদ ১/১৩৪-১৩৫, ২য় প্রকাশ, ১৪১২ হিজরী, মাকতাবা দারু আলামিল কুতুব।
উত্তর : তারা বলে, সুস্পষ্ট বিষয়কে বিশ্লেষণ করা কঠিন। উদ্দিষ্ট ও প্রত্যাশিত ফিক্বহ হলো: যা কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত। আর ভাষাগত ফিক্বহ একটি বৈধ বিষয়; যা মানুষের নিকট থেকে প্রাপ্ত। ভাষাশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করা হলো: শব্দের অর্থ, রূপান্তর, শব্দমূল ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা, এটাই ভাষাগত ফিক্বহ নামে পরিচিত। যেমন সাআ‘লাবীর গ্রন্থ ‘ফিক্বহুল লুগাহ’ ইত্যাদি। এটি একটি ভাষা শিক্ষার পরিপূরক বিষয়। আর যদি সাধারণভাবে বলা হয় যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ }
তারা যেন দীনের সুক্ষ জ্ঞান অর্জন করে। সূরা আত তাওবা ৯: ১২২
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
( من يرد الله به خيرًا يفقهه في الدين )
আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দীনের সুক্ষজ্ঞান দান করেন।[2]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
{ فَمَالِ هَؤُلاءِ الْقَوْمِ لا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثا }
এই কওমের কী হলো, তারা কোন কথা বুঝতে চায় না! সূরা আন নিসা ৪:৭৮
{وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لا يَفْقَهُونَ}
কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। সূরা মুনাফিকুন ৬৩:০৭
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: শারঈ হুকুম আহকাম জানার মাধ্যমে দীনের পাণ্ডিত্য অর্জন করা। আর এটা অর্জন করাই কাম্য। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এই ফিক্বহ অর্জনের জন্য মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
কিন্তু তাদের নিকট فقه الواقع দ্বারা فقه اللغة উদ্দেশ্য নয়। বরং তাদের নিকট এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া, রাজনীতিকে জটিল করে তোলা, সময় এবং মনোযোগ রাজনীতির দিকেই নিবন্ধ রাখা, রাজনীতির জন্যই ব্যয় করা।
তারা হুকুম-আহকামগত ফিক্বাহকে ঘৃণাভরে অবজ্ঞা করে বলে যে তা হলো শাখা-প্রশাখাগত ফিক্বহ, হায়েজ-নিফাসের ফিক্বহ।[3]
[1]. এ পরিভাষাটির দু’টি প্রয়োগ আছে: (১) ফতওয়া জিজ্ঞেসকারীর বাস্তব অবস্থা, তার এলাকার অবস্থা সম্পর্কে জানা। ফতওয়া দেওয়ার আগে এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার। এ প্রয়োগিক অর্থে শব্দটির ব্যবহার ঠিক আছে। (২) দুনিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা এবং তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করা। শত্রুদের বইপুস্তক-পত্রিকা পড়া এবং বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা খতিয়ে দেখা। এ অর্থে শব্দটি নিয়ে শিথিলতা প্রদর্শন ও সীমালঙ্ঘন দু’টোই ঘটে।
[2]. সহীহ বুখারী হা/৭১, মুসলিম হা/১০৩৭
[3]. একথা স্পষ্ট যে ফিক্বাহর অনেকগুলো প্রকার রয়েছে।
ক. ফিকহ অর্থ হলো: কুরআন, সুন্নাহ বুঝা ও শারী‘আতের মাসআলা ইসতিমবাত (উদ্ভাবন করা)।
খ. পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহর ভাষা, আরবীর ‘ফিকহুল লুগাহ আল-আরাবিয়্যাহ’ (আরবী ভাষার বিধি বিধান); যেমন নাহু, ছরফ, বালাগাত, ইশতিক্বাক (রূপান্তর) ও দালালাত (প্রমাণাদি) সম্পর্কে জানা।
গ. বিচার ও নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কিত ফিকহ:
তারা যাকে ফিকহুল ওয়াকি‘ বা বাস্তব ফিকবাহ বলে এর দ্বারা তারা বুঝায় লোকজনকে রাজনৈতিক কাজে লিপ্ত করা, শাসকদের সমালোচনা করা, ফিতনা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা, বিশৃংখলা সৃষ্টি করা। তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার নিমিত্তেই মূলতঃ এ নাম বলে থাকে।
এ ফিকহুল ওয়াকি‘এর অনুসারীদের থেকে নতুন কোন মতবাদ নয় বরং এদের পূর্বসূরী ও ইমাম সাইয়্যিদ কুতুব ফিকহুল ওয়াকি‘ এর ব্যাপারে যিলালিল কুরআনের ০৪ নং খণ্ড-র ২০০৬ নং পৃষ্ঠায় সূরা ইউসূফের আয়াত, اجْعَلْنِي عَلَى خَزَائِنِ الأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌব্যাখ্যায় বলেছেন। এ আয়াত সম্পর্কে আলোচনা করার পর তিনি বলেছেন ‘‘ফিকহে ইসলামী গড়ে উঠেছে মুসলিম সমাজে। সমাজের আন্দোলন ও ইসলামী জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে। আল ফিকহুল ওয়াকি‘ বা বাস্তব ফিক্বাহ ফিকহুল আওরাক বা কাগুজে ফিক্বাহ এর মাঝে মূলনীতিগতভাবে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আন্দোলনের ফিক্বাহই প্রকৃত ফিকবাহ যার ব্যাপারে আয়াত ও আহকাম অবতীর্ণ হয়েছে।
উত্তর : আমরা কীভাবে কাজ করব তার দিক-নির্দেশনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলে দিয়েছেন। যে সকল কাজকর্ম দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায় তার সবই তিনি বর্ণনা করেছেন, কিছুই বাকি রাখেননি। এমনিভাবে যে সকল কাজকর্ম আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে তাও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।[1] এ মাসআলাটিও কিন্তু সেরকমই একটি বিষয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فإنه من يعش منكم فسيرى اختلافاً كثيرًا
(আমার পরে) তোমাদের যে কেউ বেঁচে থাকবে সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে।[2]
এরূপ দলাদলি শুরু হলে সমাধান কী হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي، تمسَّكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور؛ فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة
‘‘সুতরাং তোমাদের কর্তব্য হবে আমার এবং আমার পরবর্তী হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, তোমরা তাকে মাড়ির দাঁত দ্বারা কামড়িয়ে ধরবে। আর তোমরা সকল প্রকার নব্য কাজ থেকে নিরাপদ দূরতেব অবস্থান করবে; কেননা প্রত্যেক নতুন কাজই বিদআ’ত; প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী’’।[3]
সুতরাং এসকল জামাতের[4] মধ্যে যে জামাতই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবায়ে কিরাম বিশেষত খুলাফায়ে রাশিদীনের ও ফযীলাত প্রাপ্ত যুগের মানহাজের (পথ ও পদ্ধতির) উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে আমরা তাদের সাথেই সম্পৃক্ত থাকব, তাদের সাথে কাজ করব।
আর যে দলই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ-নির্দেশনার বিরোধিতা করবে আমরা তাদের থেকে দূরে থাকব, যদিও তাদের নাম ইসলামী জামাত বা দল হয়। নাম কোনো ধর্তব্য ব্যাপার নয়। বাস্তবতাই মূল ধর্তব্যের বিষয়। অনেক সময় বড় বড় নাম থাকলেও দেখা যায় তা অন্তঃসারশূন্য, বাতিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة، وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة، وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة، كلها في النار إلا واحدة )) قلنا : من هي يا رسول ؟، قال : (( من كان على مثل ما أنا عليه اليوم وأصحابي ))
ইয়াহূদীরা ৭১ দলে এবং খ্রিষ্টানেরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল অচিরেই এই উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তাদের প্রত্যেক দলই জাহান্নামে যাবে; মাত্র একটি দল ছাড়া। আমরা (ছাহাবীগণ) বললাম হে আল্লাহর রসূল, সে দল কোনটি? তিনি বললেন: বর্তমানে আমি এবং আমার ছাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত আছি এ মতের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে।[5]
চলার পথ সুস্পষ্ট; যে জামাতের মাঝে এই বৈশিষ্ট্য থাকবে আমরা তাদের সাথে থাকব। যারাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে কিরামের মানহাজের উপর থাকবে তারাই প্রকৃত ইসলামী জামাত।
আর যারা এই মানহাজের (কর্মপদ্ধতির) বিরোধিতা করে অন্য পথে চলবে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমরাও তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমরা সে পথের সাথে সম্পৃক্ত হব না। সে পথও আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হবে না। তাদেরকে জামাত বলা হবে না। বরং তাদেরকে অন্যতম একটি ভ্রষ্ট ফিরক্বা বলা হবে। কেননা জামাত একমাত্র হকের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে। যার উপর মানুষ একত্রিত হয়। আর ভ্রষ্টতা তো শুধু বিচ্ছিন্নই গড়ে, ঐক্য গড়ে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ
আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায় (সূরা আল বাক্বারা ২/১৩৭)।
[1]. এখানে শায়খ হাফিযাহুল্লাহ একটি সহীহ হাদীছের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে সকল কাজ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয় তার প্রত্যেকটিরই নির্দেশনা প্রদান করেছি’’। আব্দুর রাযযাক, মুছান্নাফ খ.১১ পৃ১২৫, বায়হাকী, মা‘রিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার খ.০১ পৃ ২০
[2]. আল মু‘জামুল কাবীর লিত ত্ববরানী খ.১৮, পৃ.২৪৮, হা/৬২৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম খ.০১, পৃ. ১৭৪, হা/৩২৯।
[3]. সকল সূত্রে সহীহ, আবু দাউদ হা/৪৬০৭ তিরমিযী হা/২৬৭৬, ইবনু মাজাহ (মুকাদ্দামা-৩৪), আলবানী, ইরওয়া হা/২৪৫৫।
[4]. কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফে সালেহীনের মানহাজের বিরোধী এসকল দলকে ফিরকা বলাই উত্তম। এটাই ওদের শারঈ নাম। যেমনটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরাক সম্পর্কিত হাদীছে এ নামই বলেছেন। আর হাদীছে ইঙ্গিতকৃত জামাত হলো একমাত্র মুসলিমদের জামাত। আল্লাহই মহাজ্ঞানী।
[5]. হাসান: তিরমিযী হা/২৬৪১, হাকিম ১/১২৯, ইবনে মাজাহ হা/৩৯৯২, সুনানে আবূ দাউদ হা/৪৫৯৭।
উত্তর : বিদাতীরা বেশি কষ্টদায়ক আযাবের শিকার হবে। কেননা বিদআত অবাধ্যতা থেকেও মারাত্মক। শয়তানের নিকট অন্যান্য পাপের চেয়ে বিদআত বেশি প্রিয়। কেননা অবাধ্যচারী ব্যক্তি তাওবাহ করে পক্ষান্তরে বিদাতীরা খুবই কম তাওবাহ করে।[1]
তার কারণ হলো বিদাতী মনে করে, সে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। পক্ষান্তরে পাপাচারী জানে যে, সে একজন পাপাচারী, গুনাহগার। আর বিদাতী মনে করে সে একজন আনুগত্যকারী বান্দা, ইবাদতেই রত। আর এভাবেই বিদআত পাপাচার/অবাধ্যতা থেকে অধিকতর ক্ষতিকর হয়ে যায়। বিদআত অন্যান্য পাপাচার থেকে মারাত্মক হওয়ার কারণে সালাফগণ বিদাতীদের সাথে উঠাবসা করা থেকে বারণ করেন।[2]
তাদের অনিষ্ট বড়ই মারাত্মক, যারাই তাদের সাথে চলাফেরা করে তারা তাদের প্রত্যেককেই প্রভাবিত করে। নিঃসন্দেহে অন্যান্য পাপাচার থেকে বিদআত বেশি খারাপ। বিদাতীর অনিষ্ট পাপাচারীর অনিষ্ট থেকে বেশি মারাত্মক।[3]
এ জন্য সালাফগণ বলেন, সুন্নাহর ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা বিদআতের আলোকে ইজতিহাদ (গবেষণা) করা থেকে উত্তম।[4]
[1]. ইমাম সুফইয়ান আছ্ ছাওরী (রহ.) বলেন, শয়তানের নিকট অবাধ্যতা বা পাপাচার থেকে বিদআত বেশি প্রিয়। কেননা পাপকাজ থেকে তাওবাহ করা হয়ে থাকে পক্ষান্তরে বিদআত থেকে তাওবাহ করা হয় না। মুসনাদে ইব্ন আল-জা‘দ ১৮৮৫, মাজমু‘ ফাতওয়া ১১/৪৭২ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, إن الله احتجز التوبة عن صاحب كل بدعة ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তাওবাহকে বিদাতীদের থেকে দূরে রাখেন।’’ আছ সহীহাহ হা/১৬২০
[2]. আবুল হাসান আল বাসরী (রহ.) বলেন, তুমি কোন বিদাতীর সাথে বসো না। তার সাথে বসলে সে তোমার অন্তরকে অসুস্থ বানিয়ে দেবে। (আল-ই‘তিসাম ০১ /১৭২, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া পৃ. ৫৪।
আল্লামা শাতিবী (রহ.) বলেন, ‘‘একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিদাতীদের সাথে বৈরি আচরণ করতে, তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে এবং কেউ তাদের চলে গেলে তাকে হত্যা করা বা অন্য কোনো শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আদিষ্ট। আলিমগণ তাদের সাথে চলাফেরা ও ওঠাবসা করতে নিষেধ করেছেন।’’
আল্লাহ তা‘আলা সালাফদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন তারা প্রত্যেক বিদাতীকেই প্রতিহত করেছেন এবং তার থেকে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন।
[3]. শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বিদাতীদের অনিষ্ট বিষয়ে বলেন, যদি কেউ তাদের মুক্বাবিলা না করত তাহলে দীন ধ্বংস হয়ে যেত। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদলের আক্রমণ থেকে তাদের আক্রমণ মারাত্মক। কেননা তারা বিজয়ী হলে শুধু আনুগত্যই করে নিতে পারে; মন-মানসিকতা এবং দীন ধ্বংস করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিদাতীরা প্রথমেই মন-মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। মাজমূ‘ ফাতওয়া ২৮/২৩২।
তিনি আরো বলেন, সুন্নাহ ও ইজমা‘ দ্বারা প্রমাণিত যে প্রবৃত্তিপূজারী পাপী থেকে বিদাতী বেশি মারাত্মক। মাজমু‘ ফাতওয়া ২০/১০৩।
[4]. ইবনে মাসউদ রযিআল্লাহু আনহুর কওল, দেখুন আল-লালকাঈ পৃ.১১৪, আল-ইবানাহ পৃ. ১৬১ আস-সুন্নাহ লি ইবনি নাছর পৃ. ৩০।
উত্তর : এটা জামাতের উপর নির্ভরশীল। যদি জামাতগুলিতে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী বিষয় থাকে তাহলে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা সদস্যও বিদাতী বলে গণ্য হবে।[1]
[1]. শায়খ বাকর ইবনে আবু যায়দ হুকমুল ইনতিমা ইলাল ফিরাকি ওয়াল আহযাবি ওয়াল জামা‘আতিল ইসলামিয়্যাহ পৃ. ৯৬-৯৭ বলেছেন, ‘উম্মাহর কারো জন্য একমাত্র আমাদের নাবী ও রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে তার দিকে আহবান করা, তার ভিত্তিতে ভালোবাসা ও শত্রুতা পোষণ করা বৈধ নয়। যদি কেউ রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে একাজে দাঁড় করাবে সে বিদাতী ও বিভ্রান্ত বলে পরিগণিত হবে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বলেন, ‘উম্মাহর কারো জন্য একমাত্র আমাদের নাবী ও রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে মানদন্ড দাঁড় করানো, তার পথে আহবান করা, তার ভিত্তিতে ভালোবাসা ও শত্রুতা পোষণ করা বৈধ নয়। কুরআন সুন্নাহ ও ইজমা’ ছেড়ে তাদের কোন কথাকে মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে ভালোবাসা ও শত্রুতা পোষণ করা বৈধ নয়। বরং এমনটি করা বিদাতীদের কাজ, যারা নিজেদের জন্য কোন ব্যক্তি বা কথাকে দাঁড় করিয়ে তার ভিত্তিতে উম্মতের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে। এর ভিত্তিতে বন্ধুত্ব স্থাপন করে বা শত্রুতা পোষণ করে।
শায়খ বাকর হাফিযাহুল্লাহ শায়খুল ইসলাম (রহ.) র মত উল্লেখের পর বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ ইসলামী দল ও সংগঠনের অবস্থা এমনই; তারা তাদের কিছু ব্যক্তিকে নেতা হিসাবে দাঁড় করায়, এরপর তাদের বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং তাদের শত্রুদের সাথে শত্রুতা করে এবং কুরআন সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা ব্যতিরেকে তাদের প্রত্যেক ফাতওয়া-নির্দেশনার আনুগত্য করে। এমনকি তাদের ফাতওয়া-নির্দেশনার ব্যাপারে দলীল প্রমাণ ও জিজ্ঞাসা করে না।
উত্তর : যে দলই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধাচরণ করে তার প্রত্যেকটিই বিপথগামী দল। আমাদের জামাত শুধু একটিই। তা হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত।[1]
যে ব্যক্তিই এই জামাতের বিরোধিতা করবে সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানহাজের বিরোধিতাকারী বলে বিবেচিত হবে। আমরা আরো বলবো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী প্রত্যেক ব্যক্তিই প্রবৃত্তিপূজারী ও বিপথগামী। তাদের ভ্রষ্টতা ও কুফরী এবং ইসলাম থেকে দূরবর্তিতা ও নিকটবর্তিতার ভিত্তিতে (التضليل) পথভ্রষ্ট বলা বা (التكفير) কাফির বলার বিধানে তারতম্য ঘটে।
[1]. তারাই হলো আত-ত্বায়িফাহ আল মানছুরাহ; আল ফিরকা আন নাজিয়া, আহলুল হাদীছ, তারাই আহলুল আছার, তারাই সালাফী। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অসংখ্য আলিম এমত ব্যক্ত করেছেন। বিশেষত চার ইমাম এবং তাদেরও সমপর্যায়ের আলিমগণ। মুসলিমদের এক অভিন্ন জামাতের বিরোধী এ সকল দলকে জামাত বলা উচিত নয়; যা আমি ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি, আমাদের শায়খ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। বরং এ দলগুলোকে ফিরাক/দল বা আহযাব/সংঘ বলা হবে।
উত্তর : মেশার লক্ষ্য যদি হয় তাদেরকে সুন্নাহ ধারণ ও ভুল বর্জনের দিকে আহবান করা, তাহলে তা ভাল কাজ। বিশেষ করে যাদের নিকট জ্ঞান আছে, তারা যদি একাজ করেন।[1] এটা আল্লাহর পথে আহবান করার অংশ। আর যদি তাদের সাথে উঠাবসা দ্বারা উদ্দেশ্য হয় শুধু বন্ধুত্ব স্থাপন করা; আল্লাহর পথে আহ্বান করা উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে তা বৈধ নয়।
সুতরাং শারঈ কোনো উপকারের উদ্দেশ্য ছাড়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী লোকদের সাথে মেশা বৈধ নয়। শারঈ উপকার যেমন তাদেরকে বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে আহবান করা, তাদের সামনে হক-স্পষ্ট করে দেওয়া, যাতে তারা ইসলামে প্রত্যাবর্তন করে।[2]
যেমন: আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহ আনহু মাসজিদে অবস্থানকারী বিদাতীদের নিকট গিয়ে তাদের সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, এরপর তাদের বিদআতের বিরোধিতা করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা খারিজীদের নিকট গিয়েছেন, তাদের সাথে বিতর্ক করে তাদের সন্দেহ নিরসন ও দাবি খণ্ডন করেছেন। তাদের যারা ফিরে আসতে ইচ্ছুক, তাদেরকে ফিরিয়ে এনেছেন।
অতএব, এ উদ্দেশ্যে যদি তাদের সাথে মেশা হয় তাহলে ভালো। আর যদি তারা তাদের বাতিল মতবাদের উপর অনড় থাকে তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, বিরোধিতা করা এবং জিহাদ করা অত্যাবশ্যক।
[1]. যদি নিজের মানহাজ ঠিক রেখে তাদের সাথে চলাফেরার দ্বারা তাদেরকে আহ্বান করা এবং প্রভাবিত করা সম্ভব হয় তাহলে উত্তম। পক্ষান্তরে নিজের মানহাজ পরিবর্তন করে তাদের আহ্বান করতে গেলে তা কখনই সম্ভব হবে না, আহ্বানকারীই তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়।
এই দলগুলো দাওয়াতের ক্ষেত্রে সাধারণত তাদের নেতার শিক্ষা থেকে বের হয় না। যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও তাবলিগ জামাত ফিরকা। কত একনিষ্ট উপদেশ দাতাই না তাদেরকে উপদেশ দিয়েছে এবং দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে কত বই না লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে। ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রতিষ্ঠাতা, হাসানুল বান্না (পুস্তিকা সমগ্র) তে ২৪নং পৃষ্টায় ‘‘দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান’’ শিরোনামে বলেন, বিভিন্ন দাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান হলো আমরা সকল দাওয়াতকে আমাদের দাওয়াতের সাথে পরিমাপ করে দেখব। সকল দাওয়াত আমাদের দাওয়াতের সাথে মিললে আমরা তা গ্রহণ করব, আর যা মিলবে না তা থেকে আমরা মুক্ত/ সম্পর্কহীন থাকব!!।
আমি বলছি: আয় আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাকো। আমি ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও তার প্রতিষ্ঠাতার কুরআন সুন্নাহ ও এ উম্মাহের সালাফে সালেহীনের মানহাজ বিরোধী আহ্বান/দাওয়াত থেকে মুক্ত বা সম্পর্কহীন। তাদের নীতি হলো তারা কারো দাওয়াতই কখনও গ্রহণ করবে না কেননা তারা অন্যকে তাদের অনুসারী, অনুগামী বানানোর জন্য দাওয়াত দিতে চায়। আল্লাহই ভালো জানেন।
[2]. যদি তাদের দাওয়াত দেয়ার/ আহবান করা ও পূর্ববতীদের কর্মপদ্ধতি স্পষ্ট দেয়ার জন্য তাদের সাথে মিশতেই হয় তাহলে তা বিশুদ্ধ আকীদা ও সালাফে সালেহীনের মানহাজ সম্পর্কে ইলম দান আলিম ও ত্বলিবে ইলম/ইলম শিক্ষার্থীদের জন্যই শুধু বৈধ, অন্যদের জন্য নয়।
উত্তর : আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী সকল দল থেকে সাধারণভাবে সতর্ক করি।[1] আমরা বলি যে, ‘‘আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পথ অবলম্বন করি এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধীকে বর্জন করি। তাই তার বিরোধিতা ছোট হোক বা বড় হোক না কেন। আমরা যদি বিরোধিতার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করি তাহলে সমস্যা বেড়ে যাবে, প্রকট আকার ধারণ করবে। বিরোধিতা ইসলামে বৈধ নয়।
বড় ছোট সকল বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা অত্যাবশ্যক।
[1]. বরং যারা চুপ থাকে তাদেরকে অপছন্দ করি। মুহম্মাদ ইবনে বুনদার আল জুরআনী ইমাম আহমাদ (রহ.) কে বলেন অমুক এটা বলেছে এভাবে বলা আমার নিকট খুব কঠিন মনে হয়। ইমাম আহমাদ (রহ.) বললেন ‘‘তুমিও যদি চুপ থাকো আমিও যদি চুপ থাকি তাহলে মুর্খরা /অজ্ঞরা সহীহ এবং দ্বঈফ (বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ও দুর্বল সূত্রে বর্ণিত) সম্পর্কে জানতে পারবে কীভাবে? মাজমূ‘ ফাতওয়া ২৮/২৩১, শারহু ইলালিত তিরমিযী ০১/৩৫০। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) কে হুসাইন আল কারাবিসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি উত্তরে বলেন ‘‘তিনি বিদাতী’’। তিনি অন্যত্র বলেন ‘‘তুমি হুসাইন আল কারাবিসী থেকে খুব সতর্ক থাকো তার সাথে কথা বলবে না। তার সাথে যে কথা বলে ঔ ব্যক্তির সাথেও কথা বলবে না। তিনি ৪বার বা ৫বার একথা বললেন। সালাফে সালেহীনের মতে বিদাতীদের মুখোশ উম্মোচন করা নফল সিয়াম, নফল সালাত এবং সকল ইতিকাফে মশগুল হওয়া থেকে উত্তম।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘‘যে ব্যক্তি নফল সিয়াম পালন করে, নফল সালাত আদায় করে, ইতিকাফ করে সে আপনার নিকট বেশি প্রিয় নাকি যে ব্যক্তি বিদ‘আতিদের মুখোশ উম্মোচন করে সে বেশি প্রিয়? তিনি প্রতুত্তরে বললেন ‘‘ব্যক্তি যখন সিয়াম, সালাত পালন করে তা শুধু তার নিজের কল্যাণেই করে থাকে, পক্ষান্তরে যখন বিদ‘আতিদের মুখোশ উম্মোচনের কথা বলে তা সকল মুসলিমের কল্যাণ হয়ে থাকে- এটাই উত্তম। মাজমূ‘ ফাতওয়া ২৮/২৩১।
উত্তর : আপনি যদি তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন তাহলে জনগণ বুঝবে যে, আপনি তাদের অনুসরণ করার প্রতি আহবান করছেন। বরং আপনি তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করবেন না।[1] আপনি শুধু দোষ-ত্রুটিই উল্লেখ করবেন।[2]
আপনি তাদের কৃতকর্মের অপরাধ থেকে মুক্ত করার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। বরং আপনি তাদের দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত- যাতে তারা সে সকল দোষ-ত্রুটি থেকে তাওবা করে, আর আপনি অন্যদেরকে সতর্ক করেন। কখনো কখনো তাদের সে ভুল কুফর বা শিরক হওয়ার কারণে তাদের সকল ভাল কাজগুলো ধ্বংস ও বরবাদ হয়ে যায়। কখনো কখনো ভালো কাজের উপর ভুল-ত্রুটিই প্রাধান্য পায়। আবার কখনো কখনো এমন হয় যে আপনার চোখে ভালো কাজ মনে হলেও আল্লাহর নিকট তা ভলো কাজ নয়।
[1]. যদিও আপনি তাদের দোষ বর্ণনা করেন না কেন বিদাতীর অবদান উল্লেখ করলে মানুষ ধোঁকায় পড়ে যাবে। আপনি তাদের দোষ বর্ণনার সাথে গুণের উল্লেখ করলে মানুষ দোষের প্রতি লক্ষ্য না করে গুণের প্রতিই লক্ষ্য করবে। আর বিদাতীদের সমালোচনার ক্ষেত্রে তাদের গুণকীর্তন করা সালাফে সালেহীনের মানহাজ-কর্মপদ্ধতি নয়।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) হুসাইন আল কারাবিসীর অবস্থা বর্ণনার সময় তার গুণ উল্লেখ করেননি। বরং বলেছেন ‘‘বিদাতী তার এবং সঙ্গীদের থেকে সতর্ক করেছেন। এমনিভাবে মুহাসিবী এবং তার সঙ্গী সাথীদের থেকে সতর্ক করেছেন।
আবু যুরআহ (রহ.) কে আল হারিছ আল মুহাসিবী এবং তার বই পুস্তক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জবাবে লিখেন এ সকল বই বিদআত ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ এগুলো থেকে নিরাপদ থাকো/সতর্ক থেকে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরো।
সম্মানিত পাঠক একথা আপনার অজ্ঞাত নয় যে, কারাবিসী ও মুহাসিবী অনেক বড় পন্ডিত ছিলেন। তারা বিদাতীদের অনেক মতামতও খণ্ডন করেছেন। কিমত্মু প্রথমোক্ত জন (কারাবিসী) শুধু শব্দের নাম কুরআন বলে মানহাজচ্যুত হয়েছেন। আর অন্য জন (মুহাসিবী) কিছু যুক্তির ক্ষেত্রে পদস্খলিত হয়েছেন। তিনি যুক্তিবাদীদের যুক্তিকে সুন্নাহ ছাড়া শুধু যুক্তি দ্বারাই খণ্ডন করেছেন। আত তাহযিব ০২/১১৭, তারিখু বাগদাদ ০৮/২১৫-২১৬ ইমাম যাহাবী, আস সিয়ার ১৩/১১০, ১২/৭৯।
[2]. বিদাতীদের ভুলত্রুটি সমালোচনার সময় তাদের অবদানের কথা উল্লেখ না করার ক্ষেত্রে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) এর বইগুলো/ কিতাবাদী স্পষ্ট প্রমাণ। তার কিতাবগুলো বিদাতীদের সমালোচনা ও দাবি খণ্ডনে ভরপুর। তিনি যুক্তিবাদী, আহলে কালাম, জাহমিয়াহ, মু’তাযিলা এবং আশ‘আরীদের সমালোচনা পর্যালোচনা ও মতামত খণ্ডন করেছেন। কিন্তু আমরা কোথাও পাইনি যে তিনি তাদের কোন অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি নির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যক্তির মতামত খণ্ডন করেছেন। কিন্তু তাদের প্রশংসা করেননি। নিঃসন্দেহে তাদের ও অনেক অবদান রয়েছে কিন্তু সমালোচনার ক্ষেত্রে অবদানের কথা উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন। আপনি ভাবুন।
রাফি ইবনে আশরাস (রহ.) বলেন, পাপাচারী বিদাতীদের একটি শাস্তি হলো তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করা হবে না। শারহু ইলালিত তিরমিযী ০১/৩৫৩