উত্তর : তারা বলে, সুস্পষ্ট বিষয়কে বিশ্লেষণ করা কঠিন। উদ্দিষ্ট ও প্রত্যাশিত ফিক্বহ হলো: যা কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে রচিত। আর ভাষাগত ফিক্বহ একটি বৈধ বিষয়; যা মানুষের নিকট থেকে প্রাপ্ত। ভাষাশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করা হলো: শব্দের অর্থ, রূপান্তর, শব্দমূল ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা, এটাই ভাষাগত ফিক্বহ নামে পরিচিত। যেমন সাআ‘লাবীর গ্রন্থ ‘ফিক্বহুল লুগাহ’ ইত্যাদি। এটি একটি ভাষা শিক্ষার পরিপূরক বিষয়। আর যদি সাধারণভাবে বলা হয় যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ }
তারা যেন দীনের সুক্ষ জ্ঞান অর্জন করে। সূরা আত তাওবা ৯: ১২২
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
( من يرد الله به خيرًا يفقهه في الدين )
আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দীনের সুক্ষজ্ঞান দান করেন।[2]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
{ فَمَالِ هَؤُلاءِ الْقَوْمِ لا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثا }
এই কওমের কী হলো, তারা কোন কথা বুঝতে চায় না! সূরা আন নিসা ৪:৭৮
{وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لا يَفْقَهُونَ}
কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। সূরা মুনাফিকুন ৬৩:০৭
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: শারঈ হুকুম আহকাম জানার মাধ্যমে দীনের পাণ্ডিত্য অর্জন করা। আর এটা অর্জন করাই কাম্য। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এই ফিক্বহ অর্জনের জন্য মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
কিন্তু তাদের নিকট فقه الواقع দ্বারা فقه اللغة উদ্দেশ্য নয়। বরং তাদের নিকট এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া, রাজনীতিকে জটিল করে তোলা, সময় এবং মনোযোগ রাজনীতির দিকেই নিবন্ধ রাখা, রাজনীতির জন্যই ব্যয় করা।
তারা হুকুম-আহকামগত ফিক্বাহকে ঘৃণাভরে অবজ্ঞা করে বলে যে তা হলো শাখা-প্রশাখাগত ফিক্বহ, হায়েজ-নিফাসের ফিক্বহ।[3]
[1]. এ পরিভাষাটির দু’টি প্রয়োগ আছে: (১) ফতওয়া জিজ্ঞেসকারীর বাস্তব অবস্থা, তার এলাকার অবস্থা সম্পর্কে জানা। ফতওয়া দেওয়ার আগে এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার। এ প্রয়োগিক অর্থে শব্দটির ব্যবহার ঠিক আছে। (২) দুনিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা এবং তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করা। শত্রুদের বইপুস্তক-পত্রিকা পড়া এবং বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা খতিয়ে দেখা। এ অর্থে শব্দটি নিয়ে শিথিলতা প্রদর্শন ও সীমালঙ্ঘন দু’টোই ঘটে।
[2]. সহীহ বুখারী হা/৭১, মুসলিম হা/১০৩৭
[3]. একথা স্পষ্ট যে ফিক্বাহর অনেকগুলো প্রকার রয়েছে।
ক. ফিকহ অর্থ হলো: কুরআন, সুন্নাহ বুঝা ও শারী‘আতের মাসআলা ইসতিমবাত (উদ্ভাবন করা)।
খ. পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহর ভাষা, আরবীর ‘ফিকহুল লুগাহ আল-আরাবিয়্যাহ’ (আরবী ভাষার বিধি বিধান); যেমন নাহু, ছরফ, বালাগাত, ইশতিক্বাক (রূপান্তর) ও দালালাত (প্রমাণাদি) সম্পর্কে জানা।
গ. বিচার ও নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কিত ফিকহ:
তারা যাকে ফিকহুল ওয়াকি‘ বা বাস্তব ফিকবাহ বলে এর দ্বারা তারা বুঝায় লোকজনকে রাজনৈতিক কাজে লিপ্ত করা, শাসকদের সমালোচনা করা, ফিতনা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা, বিশৃংখলা সৃষ্টি করা। তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার নিমিত্তেই মূলতঃ এ নাম বলে থাকে।
এ ফিকহুল ওয়াকি‘এর অনুসারীদের থেকে নতুন কোন মতবাদ নয় বরং এদের পূর্বসূরী ও ইমাম সাইয়্যিদ কুতুব ফিকহুল ওয়াকি‘ এর ব্যাপারে যিলালিল কুরআনের ০৪ নং খণ্ড-র ২০০৬ নং পৃষ্ঠায় সূরা ইউসূফের আয়াত, اجْعَلْنِي عَلَى خَزَائِنِ الأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌব্যাখ্যায় বলেছেন। এ আয়াত সম্পর্কে আলোচনা করার পর তিনি বলেছেন ‘‘ফিকহে ইসলামী গড়ে উঠেছে মুসলিম সমাজে। সমাজের আন্দোলন ও ইসলামী জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে। আল ফিকহুল ওয়াকি‘ বা বাস্তব ফিক্বাহ ফিকহুল আওরাক বা কাগুজে ফিক্বাহ এর মাঝে মূলনীতিগতভাবে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আন্দোলনের ফিক্বাহই প্রকৃত ফিকবাহ যার ব্যাপারে আয়াত ও আহকাম অবতীর্ণ হয়েছে।