‘সাদাকাতুল ফিতর’কে ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ‘সাদাকাহ’ শব্দটি শরয়ী পরিভাষায় ফরয যাকাতের অর্থে ব্যবহূত। আর এ ব্যবহার কুরআন ও হাদীসে বহু জায়গায় পরিলক্ষিত হয়। পক্ষান্তরে ‘ফিতর’ মানে হল, রোযা ছাড়া। সুতরাং ‘যাকাতুল ফিতর’-এর মানে হল, সেই যাকাত; যা রমাযানের রোযা ছাড়ার কারণে ফরয হয়। একে ‘যাকাতুল ফিতরাহ’ও বলা হয়। ‘ফিতরাহ’ মানে প্রকৃতি। যেহেতু এ যাকাত আত্মশুদ্ধি ও আত্মার আমলকে নির্মল করার জন্য দেওয়া ওয়াজেব, তাই এর নাম যাকাতুল ফিতরাহ।[1]
সাদাকাতুল ফিতরার মানঃ
ফিতরার যাকাত আদায় করা ফরয। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এ যাকাতকে মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরয করেছেন। ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মুসলিমদের স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সকলের জন্য এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি) খেজুর বা যব খাদ্য (আদায়) ফরয করেছেন।’[2]
[2] (বুখারী ১৫০৩, মুসলিম ৯৮৪নং)
সাদাকাতুল ফিতর সন দুই হিজরীর শা’বান মাসে বিধিবদ্ধ হয়। এ সদকাহ ফরয করা হয় রোযাদারকে সেই অবাঞ্ছনীয় অসারতা ও যৌনাচারের মলিনতা থেকে পবিত্র করার জন্য, যা সে রোযা অবস্থায় করে ফেলেছে। এই সদকাহ হবে তার রোযার মধ্যে ঘটিত ত্রুটির সংশোধনী। যেহেতু নেকীর কাজ পাপকে ধ্বংস করে দেয়।
এ সদকাহ ফরয করা হয়েছে, যাতে সেই ঈদের খুশী ও আনন্দের দিনে গরীব-মিসকীনদের সহজলব্ধ আহার হয়। যাতে তারাও ধনীদের সাথে ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে। যারা আজ আনে কাল খায়, যাদের ভিক্ষা করে দিনপাত হয়, এক মুঠো খাবারের জন্য যাদেরকে লোকের দ্বারস্থ হতে হয়, তাদেরকে অন্ততঃপক্ষে ঈদের দিনটাতেও যেন লাঞ্ছিত হতে না হয় এবং ঘরে খাবার দেখে যাতে মনের ভিতর খুশীর ঢেউ আসে, তার জন্যই সমাজ-বিজ্ঞানী দ্বীন-দরদী দ্বীনের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এই সুব্যবস্থা করে গেছেন।
এই শেষোক্ত হিকমতের জন্য নিফাসবতী ও ছোট শিশু অরোযাদারের উপরেও উক্ত সদকাহ ফরয করা হয়েছে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রোযাদারের অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা এবং মিসকীনদের আহার স্বরূপ ফরয করেছেন ---।’[1]
যেমন এই সদকাহ আদায় করতে হয় মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ; যেহেতু তিনি রোযাদারকে পূর্ণ এক মাস রোযা রাখার তওফীক দান করেছেন।[2]
ফিতরার সদকাহ হল দেহের যাকাত। যেহেতু মহান আল্লাহ এই দেহকে একটি বছর অবশিষ্ট রেখেছেন এবং নিরাপত্তা ও সুসবাস্থ্য হেন নেয়ামত বান্দাকে দিয়ে রেখেছেন।[3]
ফিতরার যাকাত ফরয করা হয়েছে আনুগত্যের মাসের শেষে; যাতে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ হয়। যেহেতু আল্লাহর আনুগত্যের কাজ করে এবং নিষিদ্ধ জিনিস বর্জন করে আত্মা বিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়। তদনুরূপ মাল খরচ করলেও পবিত্রতা লাভ হয়। আর এ জন্যই মাল দানকে ‘যাকাত’ (পবিত্রতা) বলা হয়।[4]
[2] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৫১)
[3] (ইতহাফঃ ৮২পৃঃ)
[4] (সুআলান ফিস্-সিয়াম, ইবনে উষাইমীন ১৩)
ফিতরার যাকাত প্রত্যেক সেই মুসলিমের উপর ফরয, ঈদের রাত ও দিনে যার একান্ত প্রয়োজনীয় এবং নিজের তথা তার পরিবারের আহারের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এ ফরযের ব্যাপারে সকল ব্যক্তিত্ব সমান। এতে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড়, ধনী ও গরীব, শহরবাসী ও মরুবাসী (বেদুইন) এবং রোযাদার ও অরোযাদারের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এক কথায় এ যাকাত সকলের তরফ থেকে আদায়যোগ্য।
এ সদকাহ ফরয হওয়ার জন্য যাকাতের নিসাব হওয়া শর্ত নয়। যেহেতু তা ব্যক্তির উপর ফরয, মালের উপর নয়। মালের সাথে তার কোন সম্পর্কও নেই এবং মাল বেশী হলে তার পরিমাণ বেশীও হয় না। বলা বাহুল্য, এ সদকাহ কাফ্ফারার মত; যা ধনী-গরীব সকলেই আদায় করতে বাধ্য। যেমন ‘‘প্রত্যেক স্বাধীন ও ক্রীতদাস বান্দার জন্য---’’[1] হাদীসের এই শব্দও ধনী-গরীব সকলের জন্য ব্যাপক; চাহে সে নিসাবের মালিক হোক অথবা না হোক।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলতেন, ‘---(ফিতরার যাকাত ফরয) প্রত্যেক স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড়, গরীব ও ধনীর উপর।’[2]
পক্ষান্তরে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস, ‘‘ধনী অবস্থা ছাড়া কোন সদকাহ নেই।’’[3] এর অর্থ হল, মালের সদকাহ। আর ফিতরার যাকাত খাস দেহাত্মার সদকাহ।[4]
ফিতরার সদকাহ আদায় করার জন্য মূল সম্পদ; যেমন জমি-জায়গা, আসবাব-পত্র এবং মহিলার ব্যবহারের অলঙ্কার বিক্রয় করা জরুরী নয়। অবশ্য যে জিনিস তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং যা বিক্রয় করা সম্ভব, তা বিক্রয় করে ফিতরার সদকাহ আদায় করা ওয়াজেব। যেহেতু মৌলিক কোন ক্ষতি ছাড়া তা আদায় করা সম্ভব। সুতরাং যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত খাদ্য-সামগ্রী থাকলে আদায় করতে হত, তেমনি অতিরিক্ত বিক্রয়যোগ্য জিনিস থাকলে তা বিক্রয় করে ফিতরার সদকাহ আদায় করতে হবে।[5]
যে ব্যক্তির সদকাহ আদায় করার মত কিছু আছে; কিন্তু তার ঐ পরিমাণ দেনা আছে, তবুও তাকে তা আদায় করতে হবে। তবে যদি ঋণদাতা তার ঋণ পরিশোধ নেওয়ার জন্য তাগাদা করে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আগে ঋণ পরিশোধ করাই আবশ্যিক; আর তার জন্য যাকাত ফরয নয়।[6] পরন্তু যাকাত ওয়াজেব হওয়ার আগে যদি দেনা শোধ করার সময় উপস্থিত হয়ে থাকে, তাহলে ঋণদাতার পক্ষ থেকে তাগাদা না থাকলেও আগে দেনা শোধ করতে হবে এবং ফিতরার যাকাত মাফ হয়ে যাবে।[7]
যার কাছে বর্তমানে কিছু নেই, কিন্তু পরে আসবে; যেমন চাকুরীর বেতন, তাকে ঋণ করে সদকাহ আদায় করতে হবে।
যদি কারো ঘরে আড়াই কেজি পরিমাণ চাইতে কম খাদ্য থাকে, তাহলে সে তাই আদায় করবে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
(فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ)
‘‘তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।’’ (কুরআনুল কারীম ৬৪/১৬) আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আমি যখন তোমাদেরকে কিছু আদেশ করি, তখন তোমরা তা যথাসাধ্য (যতটা পার) পালন কর।’’[8]
যার ভরণ-পোষণ করা ওয়াজেব, তার তরফ থেকেও ফিতরার যাকাত আদায় করা ওয়াজেব; যেমন স্ত্রী-সন্তান প্রভৃতি - যদি তারা নিজেদের যাকাত নিজেরা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে। অন্যথা তারা নিজেরা নিজেদের ফিতরাহ আদায় করলে সেটাই উত্তম। যেহেতু শরীয়তের আদেশে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সরাসরি সম্বোধন করা হয়।[9] তাছাড়া ইবনে উমার (রাঃ)-এর হাদীসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ছোট-বড় এবং স্বাধীন-ক্রীতদাস; যাদের ভরণ-পোষণ তোমাদেরকে করতে হয় তাদের সকলের পক্ষ থেকে ফিতরার সদকাহ আদায় করতে আদেশ করেছেন।[10]
মাতৃজঠরে ভ্রূণের বয়স যদি ১২০ দিন হয়ে থাকে, তাহলে তার পক্ষ থেকেও ফিতরার যাকাত আদায় করা মুস্তাহাব বলে কিছু উলামা মনে করেন। বলা বাহুল্য, ভ্রূণের তরফ থেকে ফিতরাহ আদায় ওয়াজেব নয়।[11]
[2] (আহমাদ, মুসনাদ ২/২৭৭, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/১৬৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/৮০)
[3] (বুখারী ৫৫৭পৃঃ তা’লীক, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৩০, ৪৩৫)
[4] (আল-মুগনী ৩/৭৪, ফিকহুয যাকাত২/৯২৭-৯২৯)
[5] (আল-মুগনী ৩/৭৬, ফিকহুয যাকাত২/৯৩০-৯৩১)
[6] (ফিকহুয যাকাত২/৯৩১)
[7] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৫৫)
[8] (বুখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) (মাজালিসু শাহরি রামাযান, ইবনে উষাইমীন মজলিস নং ২৮)
[9] (মাজালিসু শাহরি রামাযান মজলিস নং ২৮)
[10] (দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/১৬১, ইরঃ ৮৩৫নং)
[11] (ফিকহুয যাকাত২/৯২৭, আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৬২)
ফিতরার সদকাহ ওয়াজেব হল এক সা’ পরিমাণ। এখানে সা’ বলতে মদ্বীনায় প্রচলিত নববী সা’ উদ্দিষ্ট। পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলে সা’ প্রচলিত থাকলেও তা যদি মাদানী সা’ থেকে মাপে ভিন্ন হয়, তাহলে ফিতরাহ আদায়ের ক্ষেত্রে সে সা’-এর মাপ গ্রহণযোগ্য নয়।
নববী সা’-এর মাপ অনুযায়ী বর্তমান যুগে ভাল ধরনের গমের ওজন হয় ২ কেজি ৪০ গ্রাম।[1] অবশ্য চাল ইত্যাদি সলিট খাদ্য-দ্রব্যের ওজন তার থেকে বেশী হবে। অতএব এক সা’ পরিমাণ খাদ্যের মাঝামাঝি ওজন হবে মোটামুটি আড়াই কেজি মত।[2]
পক্ষান্তরে অর্ধ সা’ গম ফিতরা দেওয়ার ব্যাপারটা মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিজস্ব মত; যে মতের বিরোধিতা করেছেন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ফিতরার সদকাহ প্রত্যেক ছোট ও বড়, স্বাধীন ও ক্রীতদাসের তরফ থেকে এক সা’ খাদ্য; এক সা’ পনির, এক সা’ যব, এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিসমিস আদায় দিতাম। এই ভাবেই আমরা সদকাহ আদায় দিতাম; অতঃপর একদা মুআবিয়া বিন আবূ সুফিয়ান হজ্জ অথবা উমরাহ করতে এসে (মদ্বীনায়) এলেন। সেই সময় তিনি মিম্বরে খুতবাহ দেওয়ার সময় লোকেদের উদ্দেশ্যে যে সব কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে একটি কথা ছিল এই যে, ‘আমি মনে করি শামের অর্ধ সা’ (উৎকৃষ্ট) গম এক সা’ খেজুরের সমতুল্য।’ ফলে লোকেরা তাঁর এ মত গ্রহণ করে নিল। আবূ সাঈদ বলেন, ‘কিন্ত আমি ততটা পরিমাণ খাদ্যই আজীবন আদায় দিতে থাকব, যতটা পরিমাণ আমি পূর্বে (আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে) আদায় দিতাম।’[3]
ত্বাহাবী প্রমুখ হাদীসগ্রন্থের এক বর্ণনায় আছে, আবূ সাঈদ বলেন, ‘ আমি ততটা পরিমাণ খাদ্যই আদায় দিতে থাকব, যতটা পরিমাণ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে আদায় দিতাম; এক সা’ খেজুর, এক সা’ যব, এক সা’ কিসমিস অথবা এক সা’ পনীর।’ এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ‘অথবা অর্ধ সা’ গম?’ তিনি বললেন, ‘না। এটা হল মুআবিয়ার মূল্য নির্ধারণ; আমি তা গ্রহণ করি না এবং তার (এ মতের) উপর আমলও করি না।’[4]
এক সা’ গম ফিতরাহ দেওয়ার কথা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নয়। যেমন অর্ধ সা’ গম ফিতরাহ দেওয়ার হাদীস সহীহর দর্জায় পৌঁছে না।
বলা বাহুল্য, ফিতরার মূল্য নির্ধারণ সঠিক হবে না। বরং মূল্য প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন হবে। কোন সময় এমনও হতে পারে যে, (খেজুরের পরিমাণে) ফিতরায় কয়েক সা’ গম আদায় দিতে হবে।
মোটকথা, সা’-এর পরিমাপকেই ফিতরার মাপকাঠি গণ্য করা হল মৌলিক ব্যাপার এবং তাতেই রয়েছে সর্বপ্রকার খাদ্য এবং সর্বযুগের জন্য পূর্বসতর্কতামূলক আমল। আর এই মত অনুসরণ করার মাধ্যমেই এ ব্যাপারে মতভেদকে এড়ানো সম্ভব হবে এবং মান্য করা হবে সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হাদীসকে।[5]
[2] (তাযকীরু ইবাদির রাহমান, ফীমা অরাদা বিসিয়ামি শাহরি রামাযান ৩১পৃঃ, যাদুস সায়েম অফাযলুল ক্বায়েম ২৯পৃঃ)
[3] (বুখারী ১৫০৮, মুসলিম ৯৮৫, আবূ দাঊদ ১৬১৬নং)
[4] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/৩৩৯)
[5] (ফিকহুয যাকাত২/৯৪০-৯৪১, আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৭৯-১৮০)
সাদাকাতুল ফিতর দেশের প্রধান খাদ্য থেকে হওয়াই বাঞ্ছনীয়; যদিও হাদীসে সে খাদ্যের উল্লেখ নেই, যেমন চাল। পক্ষান্তরে যে সব খাদ্যের কথা হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ এসেছে; যেমন খেজুর, যব, কিসমিস ও পনীর - এ সব খাদ্য আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগের মত দেশের প্রধান খাদ্য না হলে তা থেকে ফিতরা আদায় যথেষ্ট হবে না। হাদীসে ঐ চারটি খাদ্যের উল্লেখ আসার কারণ হল, সে যুগে মদ্বীনায় সেগুলি প্রধান খাদ্যসামগ্রীরূপে ব্যবহার হত। সুতরাং তার উল্লেখ উদাহরণস্বরূপ করা হয়েছে; নির্ধারণস্বরূপ নয়। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় ঈদের দিন এক সা’ খাদ্য আদায় দিতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল, যব, কিসমিস, পনীর ও খেজুর।’[1]
এখানে ‘খাদ্য’ বলে মৌলিক উপাদানের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। অর্থাৎ, ফিতরা ছিল মানুষের খাদ্য ও আহার; যা খেয়ে লোকেরা জীবন ধারণ করত। এ কথার সমর্থন করে ইবনে আববাস (রাঃ)-এর হাদীস; তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রোযাদারের অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা এবং মিসকীনদের আহার স্বরূপ (সাদাকাতুল ফিতর) ফরয করেছেন ---।’[2]
সুতরাং যে দেশের প্রধান খাদ্য কোন শস্য অথবা ফল না হয়; বরং মাংস হয়, যেমন যারা পৃথিবীর উত্তর মেরুতে বসবাস করে তাদের প্রধান খাদ্য হল মাংস, তারা যদি ফিতরায় মাংস দান করে, তাহলে সঠিক মত এই যে, নিঃসন্দেহে তা যথেষ্ট হবে।
সারকথা, দেশের প্রধান খাদ্য শস্য, ফল বা মাংস যাই হোক না কেন, ফিতরায় তা দান করলে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। তাতে সে খাদ্যের কথা হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ থাক অথবা না থাক।[3]
উক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, ফিতরায় টাকা-পয়সা, কাঁথা-বালিশ-চাটাই, লেবাস-পোশাক, পশুখাদ্য অথবা কোন আসবাব-পত্র দান করলে তা যথেষ্ট নয়। কারণ, তা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ-বিরোধী। আর তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।’’[4] ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ ব্যাপারে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’’[5]
টাকা-পয়সা হিসাবে (রুপার) দিরহাম এবং (সোনার) দ্বীনার মুদ্রা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় মজুদ ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ফিতরার যাকাতে এক সা’ খাদ্য দান করতেই আদেশ করলেন এবং তার মূল্য দান করার এখতিয়ার ঘোষণা করলেন না। সুতরাং ফিতরায় খাদ্যের দাম আদায় দেওয়া সাহাবা (রাযি.)-গণের বিরুদ্ধাচরণ। যেহেতু তাঁরা ফিতরার সদকায় এক সা’ খাদ্যই দান করতেন। পরন্তু আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা আমার সুন্নাহ (তরীকা) ও আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহ অবলম্বন কর। তা খুব সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর। আর অভিনব কর্মাবলী থেকে সাবধান থেকো।---’’[6]
তাছাড়া ফিতরার যাকাত নির্দিষ্ট দ্রব্য থেকে আদায়যোগ্য একটি ফরয ইবাদত। অতএব নির্দিষ্ট ঐ দ্রব্য ছাড়া অন্য দ্রব্য আদায়ের মাধ্যমে ঐ ফরয পালন হবে না; যেমন তার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময়ে তার আদায় যথেষ্ট হবে না। পক্ষান্তরে ফিতরায় খাদ্য দান করা ইসলামের একটি স্পষ্ট প্রতীক। কিন্তু মূল্য আদায় দিলে তা গোপন দানে পরিণত হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, সুন্নাহর অনুসরণ করাই আমাদের জন্য উত্তম এবং তাতেই আছে সার্বিক মঙ্গল।[7]
বুঝা গেল যে, গ্রাম-শহর সকল স্থানে প্রধান খাদ্য চাল ফিতরা দেওয়ার পরিবর্তে তার নির্দিষ্ট মূল্য আদায় করা যথেষ্ট নয়। চাকুরী-জীবী হলেও তাকে চাল ক্রয় করেই ফিতরা দিতে হবে। অবশ্য তার কোন এমন প্রতিনিধি অথবা কোন এমন সংস্থাকে টাকা দেওয়া চলবে, যে খাদ্য ক্রয় করে ঈদের আগে গরীবদের হাতে পৌঁছে দেবে।
আর দানের ক্ষেত্রে মধ্যম ধরনের চাল এখতিয়ার করা বাঞ্ছনীয়। নচেৎ ইচ্ছাকৃত নিম্নমানের চাল দান করলে মহান আল্লাহর দরবারে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلاَّ أَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِ)
অর্থাৎ, (হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপার্জিত এবং ভূমি হতে উৎপাদনকৃত বস্ত্তর মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর।) আর তা হতে মন্দ জিনিস দান করো না; অথচ চোখ বন্ধ করে ছাড়া তোমরা নিজে তা গ্রহণ করবে না । (কুরআনুল কারীম ২/২৬৭)
[2] (সহীহ আবূ দাঊদ ১৪২০, ইবনে মাজাহ ১৮২৭, দারাকুত্বনী, সুনান, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪০৯, বাইহাকী ৪/১৬৩)
[3] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৮০-১৮৩)
[4] (আহমাদ, মুসনাদ ২/১৪৬, বুখারী তা’লীক ১৫৩৯পৃঃ, মুসলিম ১৭১৮নং, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ)
[5] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/২৭০, বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, ইবনে মাজাহ)
[6] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/১২৬, ১২৭, আবূ দাঊদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪৩, ৪৪, ইবনে হিববান, সহীহ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৯৫ প্রমুখ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২৪৫৫নং)
[7] (মাজালিসু শাহরি রামাযান মজলিস নং ২৮, ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ ৩০পৃঃ)
রমাযানের শেষ দিনের সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে ফিতরার যাকাত ওয়াজেব হয়। এ সময় হল রমাযানের শেষ রোযা ইফতার করার সময়। আর এ সময়ের দিকে সম্বদ্ধ করেই তার নাম হয়েছে ‘সাদাকাতুল ফিতর’। বলা বাহুল্য, ইফতার করার সময় বাস্তবায়িত হয় ঈদের রাতের সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার সাথে সাথে। অতএব এ সময়ে যে শরীয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত থাকবে কেবল তারই উপর ঐ যাকাত ওয়াজেব এবং তার পরে কেউ আজ্ঞাপ্রাপ্ত হলে তা ওয়াজেব নয়।
যেমন ঈদের রাতের সূর্য ডোবার সামান্যক্ষণ পর যদি কেউ ইসলামে দীক্ষিত হয় অথবা কোন শিশু জন্মগ্রহণ করে, অথবা শেষ রমাযানের সূর্য ডোবার সামান্যক্ষণ পূর্বে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে উক্ত প্রকার লোকেদের উপর ফিতরা ওয়াজেব নয়। অবশ্য মায়ের গর্ভে ভ্রূণের তরফ থেকে যাকাত দেওয়া অনেক উলামা মুস্তাহাব বলেছেন; যেমন সে কথা পূর্বেই উল্লেখ হয়েছে।
পক্ষান্তরে ঐ দিনের সূর্য ডোবার সামান্যক্ষণ আগে যদি কেউ ইসলামে দীক্ষিত হয় অথবা কোন শিশু জন্মগ্রহণ করে, অথবা সূর্য ডোবার সামান্যক্ষণ পরে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে উক্ত প্রকার লোকেদের উপর ফিতরা ওয়াজেব।[1]
ফিতরা আদায় করার দুটি সময় আছে; তার মধ্যে একটি সময়ে আদায় দিলে ফযীলত পাওয়া যাবে এবং অন্য একটির সময়ে দান করলে যথেষ্ট হয়ে যাবে। প্রথম সময়ে দিতে হয় এবং দ্বিতীয় সময়ে দেওয়া চলে। প্রথম সময়ে দেওয়াই বিধেয় এবং দ্বিতীয় সময়ে দেওয়া বৈধ।
এই যাকাত আদায়ের ফযীলতের সময় হল, ঈদের সকালে নামাযের পূর্বে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ‘আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে ঈদুল ফিতরের দিন এক সা’ খাদ্য দান করতাম।’[1]
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) লোকেদের ঈদের নামাযের জন্য বের হওয়ার পূর্বে ফিতরার যাকাত আদায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।’[2]
ইবনে উয়াইনাহ তাঁর তফসীর-গ্রন্থে আম্র বিন দ্বীনার থেকে বর্ণনা করেছেন, ইকরামা বলেন, ‘লোকে তার ফিতরার যাকাত ঈদের নামাযের পূর্বে (মিসকীনদেরকে) পেশ করে দেবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন,
(قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى)
অর্থাৎ, সেই ব্যক্তি সাফল্য লাভ করবে, যে (যাকাত দিয়ে) পবিত্র হবে এবং তার প্রভুর নাম স্মরণ করে নামায পড়বে। (কুরআনুল কারীম ৮৭/১৪-১৫)
এই জন্যই ঈদুল ফিতরের নামায দেরী করে পড়া উত্তম। যাতে ফিতরা আদায় দেওয়ার জন্য সময় সংকীর্ণ না হয়।
এই যাকাত আদায়ের বৈধ সময় হল ঈদের আগে দু-এক দিন। নাফে’ বলেন, ‘ইবনে উমার (রাঃ) ছোট-বড় সকলের তরফ থেকে ফিতরা দিতেন; এমন কি আমার ছেলেদের তরফ থেকেও তিনি ফিতরা বের করতেন। আর তাদেরকে দান করতেন, যারা তা গ্রহণ করত। তাদেরকে ঈদের এক অথবা দুই দিন আগে দিয়ে দেওয়া হত।’[3]
এ যাকাত দিতে ঈদের নামাযের পর পর্যন্ত দেরী করা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পর তা আদায় দেয়, তার যাকাত কবুল হয় না। কারণ, তার কাজ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ-বিরোধী। ইবনে আব্বাসের হাদীসে বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তা নামাযের পূর্বে আদায় দেয় তার যাকাত কবুল হয়। আর যে তা নামাযের পরে আদায় দেয়, তার সে যাকাত সাধারণ দান বলে গণ্য হয়।’’[4]
অবশ্য কোন অসুবিধার জন্য নামাযের পর দিলে তার যাকাত কবুল হয়ে যাবে। যেমন, যদি কেউ ঈদের সকালে এমন জায়গায় থাকে, যেখানে যাকাত নেওয়ার মত লোক নেই, অথবা সকালে হঠাৎ করে ঈদের খবর এলে ফিতরা আদায় দেওয়ার সুযোগ না পেলে, অথবা অপর কাউকে তা আদায় দেওয়ার ভার দেওয়ার পর সে তা ভুলে গেলে ঈদের নামাযের পর তা আদায় দিলে দোষাবহ নয়। যেহেতু এ ব্যাপারে তার ওজর গ্রহণযোগ্য।
ওয়াজেব হল, যথা সময়ে ঈদের নামাযের পূর্বেই গরীব-মিসকীনদের হাতে অথবা তাদের কোন প্রতিনিধির হাতে পৌঁছে যাওয়া। যাকে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাকে বা তার প্রতিনিধিকে সে সময় না পাওয়া গেলে অন্য হকদারকে দান করে দিতে হবে। তবুও যথা সময় অতিবাহিত করা যাবে না।[5]
পক্ষান্তরে ইবনে উমার কর্তৃক যে হাদীস বর্ণিত আছে, ‘ঈদের নামাযের জন্য বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে আমাদেরকে ফিতরার যাকাত বের করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হত। অতঃপর নামায থেকে ফিরার পর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তা মিসকীনদের মাঝে বন্টন করে দিতেন---।’ তা সহীহ নয়; বরং তা অপ্রামাণ্য ও যয়ীফ।[6]
[2] (বুখারী ১৫০৯, মুসলিম ৯৮৬নং)
[3] (বুখারী ১৫১১, আবূ দাঊদ ১৬১০নং)
[4] (সহীহ আবূ দাঊদ ১৪২০, ইবনে মাজাহ ১৮২৭, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪০৯, বাইহাকী ৪/১৬৩)
[5] (মাজালিসু শাহরি রামাযান মজলিস নং ২৮)
[6] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৮৪৪নং দ্রঃ)
যাকাত আদায় করার সময় মুসলিম যে জায়গায় থাকে, সে জায়গার দরিদ্র মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। তাতে সে জায়গা তার স্থায়ী আবাসভূমি হোক অথবা অস্থায়ী প্রবাসভূমি। বিশেষ করে সে জায়গা যদি মাহাত্ম্যপূর্ণ হয়; যেমন মক্কা ও মদ্বীনা, অথবা সে জায়গার গরীব মানুষরা বেশী অভাবী হয়, তাহলে সে জায়গাতেই যাকাত বণ্টন করা কর্তব্য।
কিন্তু অবস্থান ক্ষেত্রে যদি সদকাহ গ্রহণকারী কোন গরীব মানুষ না থাকে, অথবা হকদার লোক জানা না থাকে, তাহলে যেখানে আছে সেখানে কোন প্রতিনিধিকে যাকাত বিতরণ করার ভার অর্পণ করতে হবে। তবে অবশ্যই তাদের হাতে সেই যাকাত ঈদের নামাযের আগে পৌঁছতে হবে।[1]
ফিতরার যাকাতের হকদার হল গরীব মানুষরা এবং সেই ঋণগ্রস্ত মানুষরা, যারা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এই শ্রেণীর মানুষদেরকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যাকাত দেওয়া যাবে।
একটি ফিতরা কয়েকটি মিসকীনকে দেওয়া চলবে। যেমন কয়েকটি ফিতরা দেওয়া চলবে একটি মাত্র মিসকীনকে। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কত দিতে হবে তা নির্ধারণ করেছেন; কিন্তু কয়জন মিসকীনকে দিতে হবে, তা নির্ধারণ করেন নি।
সুতরাং যদি কয়েক জন মিলে নিজ নিজ ফিতরা মেপে এক জায়গায় জমা করে এবং তারপর না মেপেই মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। তবে এ কথা মিসকীনদেরকে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, তারা ঐ দানের পরিমাণ জানে না। নচেৎ, মাপা আছে মনে করে কেউ ঐ ফিতরা নিজের তরফ থেকে আদায় দিলে ধোকায় পড়তে পারে।
বলা বাহুল্য, মিসকীন কারো কাছ থেকে ফিতরা নিয়ে সেই ফিতরাই নিজের অথবা পরিবারের কারো তরফ থেকে অন্য মিসকীনকে ফিতরা হিসাবে দিতে পারে। অবশ্য সে তা মেপে নেবে অথবা যে দিয়েছে তার কাছ থেকে বিশ্বাস্যরূপে জেনে নেবে যে, তা পরিপূর্ণ একটি ফিতরা।[1]