ফিতরার যাকাত প্রত্যেক সেই মুসলিমের উপর ফরয, ঈদের রাত ও দিনে যার একান্ত প্রয়োজনীয় এবং নিজের তথা তার পরিবারের আহারের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। আর এ ফরযের ব্যাপারে সকল ব্যক্তিত্ব সমান। এতে স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড়, ধনী ও গরীব, শহরবাসী ও মরুবাসী (বেদুইন) এবং রোযাদার ও অরোযাদারের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এক কথায় এ যাকাত সকলের তরফ থেকে আদায়যোগ্য।
এ সদকাহ ফরয হওয়ার জন্য যাকাতের নিসাব হওয়া শর্ত নয়। যেহেতু তা ব্যক্তির উপর ফরয, মালের উপর নয়। মালের সাথে তার কোন সম্পর্কও নেই এবং মাল বেশী হলে তার পরিমাণ বেশীও হয় না। বলা বাহুল্য, এ সদকাহ কাফ্ফারার মত; যা ধনী-গরীব সকলেই আদায় করতে বাধ্য। যেমন ‘‘প্রত্যেক স্বাধীন ও ক্রীতদাস বান্দার জন্য---’’[1] হাদীসের এই শব্দও ধনী-গরীব সকলের জন্য ব্যাপক; চাহে সে নিসাবের মালিক হোক অথবা না হোক।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলতেন, ‘---(ফিতরার যাকাত ফরয) প্রত্যেক স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড়, গরীব ও ধনীর উপর।’[2]
পক্ষান্তরে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস, ‘‘ধনী অবস্থা ছাড়া কোন সদকাহ নেই।’’[3] এর অর্থ হল, মালের সদকাহ। আর ফিতরার যাকাত খাস দেহাত্মার সদকাহ।[4]
ফিতরার সদকাহ আদায় করার জন্য মূল সম্পদ; যেমন জমি-জায়গা, আসবাব-পত্র এবং মহিলার ব্যবহারের অলঙ্কার বিক্রয় করা জরুরী নয়। অবশ্য যে জিনিস তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং যা বিক্রয় করা সম্ভব, তা বিক্রয় করে ফিতরার সদকাহ আদায় করা ওয়াজেব। যেহেতু মৌলিক কোন ক্ষতি ছাড়া তা আদায় করা সম্ভব। সুতরাং যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত খাদ্য-সামগ্রী থাকলে আদায় করতে হত, তেমনি অতিরিক্ত বিক্রয়যোগ্য জিনিস থাকলে তা বিক্রয় করে ফিতরার সদকাহ আদায় করতে হবে।[5]
যে ব্যক্তির সদকাহ আদায় করার মত কিছু আছে; কিন্তু তার ঐ পরিমাণ দেনা আছে, তবুও তাকে তা আদায় করতে হবে। তবে যদি ঋণদাতা তার ঋণ পরিশোধ নেওয়ার জন্য তাগাদা করে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আগে ঋণ পরিশোধ করাই আবশ্যিক; আর তার জন্য যাকাত ফরয নয়।[6] পরন্তু যাকাত ওয়াজেব হওয়ার আগে যদি দেনা শোধ করার সময় উপস্থিত হয়ে থাকে, তাহলে ঋণদাতার পক্ষ থেকে তাগাদা না থাকলেও আগে দেনা শোধ করতে হবে এবং ফিতরার যাকাত মাফ হয়ে যাবে।[7]
যার কাছে বর্তমানে কিছু নেই, কিন্তু পরে আসবে; যেমন চাকুরীর বেতন, তাকে ঋণ করে সদকাহ আদায় করতে হবে।
যদি কারো ঘরে আড়াই কেজি পরিমাণ চাইতে কম খাদ্য থাকে, তাহলে সে তাই আদায় করবে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
(فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ)
‘‘তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।’’ (কুরআনুল কারীম ৬৪/১৬) আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আমি যখন তোমাদেরকে কিছু আদেশ করি, তখন তোমরা তা যথাসাধ্য (যতটা পার) পালন কর।’’[8]
যার ভরণ-পোষণ করা ওয়াজেব, তার তরফ থেকেও ফিতরার যাকাত আদায় করা ওয়াজেব; যেমন স্ত্রী-সন্তান প্রভৃতি - যদি তারা নিজেদের যাকাত নিজেরা আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে। অন্যথা তারা নিজেরা নিজেদের ফিতরাহ আদায় করলে সেটাই উত্তম। যেহেতু শরীয়তের আদেশে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সরাসরি সম্বোধন করা হয়।[9] তাছাড়া ইবনে উমার (রাঃ)-এর হাদীসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ছোট-বড় এবং স্বাধীন-ক্রীতদাস; যাদের ভরণ-পোষণ তোমাদেরকে করতে হয় তাদের সকলের পক্ষ থেকে ফিতরার সদকাহ আদায় করতে আদেশ করেছেন।[10]
মাতৃজঠরে ভ্রূণের বয়স যদি ১২০ দিন হয়ে থাকে, তাহলে তার পক্ষ থেকেও ফিতরার যাকাত আদায় করা মুস্তাহাব বলে কিছু উলামা মনে করেন। বলা বাহুল্য, ভ্রূণের তরফ থেকে ফিতরাহ আদায় ওয়াজেব নয়।[11]
[2] (আহমাদ, মুসনাদ ২/২৭৭, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/১৬৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/৮০)
[3] (বুখারী ৫৫৭পৃঃ তা’লীক, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৩০, ৪৩৫)
[4] (আল-মুগনী ৩/৭৪, ফিকহুয যাকাত২/৯২৭-৯২৯)
[5] (আল-মুগনী ৩/৭৬, ফিকহুয যাকাত২/৯৩০-৯৩১)
[6] (ফিকহুয যাকাত২/৯৩১)
[7] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৫৫)
[8] (বুখারী ৭২৮৮, মুসলিম ১৩৩৭, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) (মাজালিসু শাহরি রামাযান, ইবনে উষাইমীন মজলিস নং ২৮)
[9] (মাজালিসু শাহরি রামাযান মজলিস নং ২৮)
[10] (দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী ৪/১৬১, ইরঃ ৮৩৫নং)
[11] (ফিকহুয যাকাত২/৯২৭, আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৬২)