লগইন করুন
সাদাকাতুল ফিতর দেশের প্রধান খাদ্য থেকে হওয়াই বাঞ্ছনীয়; যদিও হাদীসে সে খাদ্যের উল্লেখ নেই, যেমন চাল। পক্ষান্তরে যে সব খাদ্যের কথা হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ এসেছে; যেমন খেজুর, যব, কিসমিস ও পনীর - এ সব খাদ্য আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগের মত দেশের প্রধান খাদ্য না হলে তা থেকে ফিতরা আদায় যথেষ্ট হবে না। হাদীসে ঐ চারটি খাদ্যের উল্লেখ আসার কারণ হল, সে যুগে মদ্বীনায় সেগুলি প্রধান খাদ্যসামগ্রীরূপে ব্যবহার হত। সুতরাং তার উল্লেখ উদাহরণস্বরূপ করা হয়েছে; নির্ধারণস্বরূপ নয়। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় ঈদের দিন এক সা’ খাদ্য আদায় দিতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল, যব, কিসমিস, পনীর ও খেজুর।’[1]
এখানে ‘খাদ্য’ বলে মৌলিক উপাদানের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। অর্থাৎ, ফিতরা ছিল মানুষের খাদ্য ও আহার; যা খেয়ে লোকেরা জীবন ধারণ করত। এ কথার সমর্থন করে ইবনে আববাস (রাঃ)-এর হাদীস; তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রোযাদারের অসারতা ও যৌনাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা এবং মিসকীনদের আহার স্বরূপ (সাদাকাতুল ফিতর) ফরয করেছেন ---।’[2]
সুতরাং যে দেশের প্রধান খাদ্য কোন শস্য অথবা ফল না হয়; বরং মাংস হয়, যেমন যারা পৃথিবীর উত্তর মেরুতে বসবাস করে তাদের প্রধান খাদ্য হল মাংস, তারা যদি ফিতরায় মাংস দান করে, তাহলে সঠিক মত এই যে, নিঃসন্দেহে তা যথেষ্ট হবে।
সারকথা, দেশের প্রধান খাদ্য শস্য, ফল বা মাংস যাই হোক না কেন, ফিতরায় তা দান করলে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। তাতে সে খাদ্যের কথা হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ থাক অথবা না থাক।[3]
উক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, ফিতরায় টাকা-পয়সা, কাঁথা-বালিশ-চাটাই, লেবাস-পোশাক, পশুখাদ্য অথবা কোন আসবাব-পত্র দান করলে তা যথেষ্ট নয়। কারণ, তা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ-বিরোধী। আর তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।’’[4] ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ ব্যাপারে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’’[5]
টাকা-পয়সা হিসাবে (রুপার) দিরহাম এবং (সোনার) দ্বীনার মুদ্রা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় মজুদ ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ফিতরার যাকাতে এক সা’ খাদ্য দান করতেই আদেশ করলেন এবং তার মূল্য দান করার এখতিয়ার ঘোষণা করলেন না। সুতরাং ফিতরায় খাদ্যের দাম আদায় দেওয়া সাহাবা (রাযি.)-গণের বিরুদ্ধাচরণ। যেহেতু তাঁরা ফিতরার সদকায় এক সা’ খাদ্যই দান করতেন। পরন্তু আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা আমার সুন্নাহ (তরীকা) ও আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খলীফাদের সুন্নাহ অবলম্বন কর। তা খুব সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর। আর অভিনব কর্মাবলী থেকে সাবধান থেকো।---’’[6]
তাছাড়া ফিতরার যাকাত নির্দিষ্ট দ্রব্য থেকে আদায়যোগ্য একটি ফরয ইবাদত। অতএব নির্দিষ্ট ঐ দ্রব্য ছাড়া অন্য দ্রব্য আদায়ের মাধ্যমে ঐ ফরয পালন হবে না; যেমন তার নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময়ে তার আদায় যথেষ্ট হবে না। পক্ষান্তরে ফিতরায় খাদ্য দান করা ইসলামের একটি স্পষ্ট প্রতীক। কিন্তু মূল্য আদায় দিলে তা গোপন দানে পরিণত হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, সুন্নাহর অনুসরণ করাই আমাদের জন্য উত্তম এবং তাতেই আছে সার্বিক মঙ্গল।[7]
বুঝা গেল যে, গ্রাম-শহর সকল স্থানে প্রধান খাদ্য চাল ফিতরা দেওয়ার পরিবর্তে তার নির্দিষ্ট মূল্য আদায় করা যথেষ্ট নয়। চাকুরী-জীবী হলেও তাকে চাল ক্রয় করেই ফিতরা দিতে হবে। অবশ্য তার কোন এমন প্রতিনিধি অথবা কোন এমন সংস্থাকে টাকা দেওয়া চলবে, যে খাদ্য ক্রয় করে ঈদের আগে গরীবদের হাতে পৌঁছে দেবে।
আর দানের ক্ষেত্রে মধ্যম ধরনের চাল এখতিয়ার করা বাঞ্ছনীয়। নচেৎ ইচ্ছাকৃত নিম্নমানের চাল দান করলে মহান আল্লাহর দরবারে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيْهِ إِلاَّ أَنْ تُغْمِضُوْا فِيْهِ)
অর্থাৎ, (হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপার্জিত এবং ভূমি হতে উৎপাদনকৃত বস্ত্তর মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর।) আর তা হতে মন্দ জিনিস দান করো না; অথচ চোখ বন্ধ করে ছাড়া তোমরা নিজে তা গ্রহণ করবে না । (কুরআনুল কারীম ২/২৬৭)
[2] (সহীহ আবূ দাঊদ ১৪২০, ইবনে মাজাহ ১৮২৭, দারাকুত্বনী, সুনান, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪০৯, বাইহাকী ৪/১৬৩)
[3] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৮০-১৮৩)
[4] (আহমাদ, মুসনাদ ২/১৪৬, বুখারী তা’লীক ১৫৩৯পৃঃ, মুসলিম ১৭১৮নং, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ)
[5] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/২৭০, বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, ইবনে মাজাহ)
[6] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/১২৬, ১২৭, আবূ দাঊদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪৩, ৪৪, ইবনে হিববান, সহীহ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৯৫ প্রমুখ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২৪৫৫নং)
[7] (মাজালিসু শাহরি রামাযান মজলিস নং ২৮, ফুসূলুন ফিস্-সিয়ামি অত্-তারাবীহি অয্-যাকাহ ৩০পৃঃ)