লগইন করুন
ফিতরার সদকাহ ওয়াজেব হল এক সা’ পরিমাণ। এখানে সা’ বলতে মদ্বীনায় প্রচলিত নববী সা’ উদ্দিষ্ট। পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলে সা’ প্রচলিত থাকলেও তা যদি মাদানী সা’ থেকে মাপে ভিন্ন হয়, তাহলে ফিতরাহ আদায়ের ক্ষেত্রে সে সা’-এর মাপ গ্রহণযোগ্য নয়।
নববী সা’-এর মাপ অনুযায়ী বর্তমান যুগে ভাল ধরনের গমের ওজন হয় ২ কেজি ৪০ গ্রাম।[1] অবশ্য চাল ইত্যাদি সলিট খাদ্য-দ্রব্যের ওজন তার থেকে বেশী হবে। অতএব এক সা’ পরিমাণ খাদ্যের মাঝামাঝি ওজন হবে মোটামুটি আড়াই কেজি মত।[2]
পক্ষান্তরে অর্ধ সা’ গম ফিতরা দেওয়ার ব্যাপারটা মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিজস্ব মত; যে মতের বিরোধিতা করেছেন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ফিতরার সদকাহ প্রত্যেক ছোট ও বড়, স্বাধীন ও ক্রীতদাসের তরফ থেকে এক সা’ খাদ্য; এক সা’ পনির, এক সা’ যব, এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিসমিস আদায় দিতাম। এই ভাবেই আমরা সদকাহ আদায় দিতাম; অতঃপর একদা মুআবিয়া বিন আবূ সুফিয়ান হজ্জ অথবা উমরাহ করতে এসে (মদ্বীনায়) এলেন। সেই সময় তিনি মিম্বরে খুতবাহ দেওয়ার সময় লোকেদের উদ্দেশ্যে যে সব কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে একটি কথা ছিল এই যে, ‘আমি মনে করি শামের অর্ধ সা’ (উৎকৃষ্ট) গম এক সা’ খেজুরের সমতুল্য।’ ফলে লোকেরা তাঁর এ মত গ্রহণ করে নিল। আবূ সাঈদ বলেন, ‘কিন্ত আমি ততটা পরিমাণ খাদ্যই আজীবন আদায় দিতে থাকব, যতটা পরিমাণ আমি পূর্বে (আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে) আদায় দিতাম।’[3]
ত্বাহাবী প্রমুখ হাদীসগ্রন্থের এক বর্ণনায় আছে, আবূ সাঈদ বলেন, ‘ আমি ততটা পরিমাণ খাদ্যই আদায় দিতে থাকব, যতটা পরিমাণ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে আদায় দিতাম; এক সা’ খেজুর, এক সা’ যব, এক সা’ কিসমিস অথবা এক সা’ পনীর।’ এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ‘অথবা অর্ধ সা’ গম?’ তিনি বললেন, ‘না। এটা হল মুআবিয়ার মূল্য নির্ধারণ; আমি তা গ্রহণ করি না এবং তার (এ মতের) উপর আমলও করি না।’[4]
এক সা’ গম ফিতরাহ দেওয়ার কথা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নয়। যেমন অর্ধ সা’ গম ফিতরাহ দেওয়ার হাদীস সহীহর দর্জায় পৌঁছে না।
বলা বাহুল্য, ফিতরার মূল্য নির্ধারণ সঠিক হবে না। বরং মূল্য প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন হবে। কোন সময় এমনও হতে পারে যে, (খেজুরের পরিমাণে) ফিতরায় কয়েক সা’ গম আদায় দিতে হবে।
মোটকথা, সা’-এর পরিমাপকেই ফিতরার মাপকাঠি গণ্য করা হল মৌলিক ব্যাপার এবং তাতেই রয়েছে সর্বপ্রকার খাদ্য এবং সর্বযুগের জন্য পূর্বসতর্কতামূলক আমল। আর এই মত অনুসরণ করার মাধ্যমেই এ ব্যাপারে মতভেদকে এড়ানো সম্ভব হবে এবং মান্য করা হবে সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হাদীসকে।[5]
[2] (তাযকীরু ইবাদির রাহমান, ফীমা অরাদা বিসিয়ামি শাহরি রামাযান ৩১পৃঃ, যাদুস সায়েম অফাযলুল ক্বায়েম ২৯পৃঃ)
[3] (বুখারী ১৫০৮, মুসলিম ৯৮৫, আবূ দাঊদ ১৬১৬নং)
[4] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/৩৩৯)
[5] (ফিকহুয যাকাত২/৯৪০-৯৪১, আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/১৭৯-১৮০)