বিকাশ ​বিষয়ক একগুচ্ছ ​ইসলামি প্রশ্নোত্তর​

ক. বিকাশ বয়কট ও ব্যবহার প্রসঙ্গ:

প্রশ্ন-১: হয়ত অবগত আছেন যে, ট্র্যান্স জেন্ডার নিয়ে প্রতিবাদ করায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব স্যারকে চাকরি চ্যুত করা হয়েছে। আমাদের মোটামুটি পরিসরের একটা সদকা ফান্ড আছে। খাবার বিতরণ, এতিমদের নিয়ে কাজ করা এবং অন্যান্য দরিদ্র-অসহায়দের নিয়ে কাজ করি এই ফান্ড থেকে।
ফান্ডে অনেক প্র্যাক্টিসিং নন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম দান করেন। সবাই হয়ত বিকাশ বয়কটের বিষয়টা আমলে নিবে না। ফলে ফান্ডে টাকা আসার পরিমাণ কমে যেতে পারে। এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কী বুঝতে পারছি না। পার্সনালি বয়কট করেছি। কিন্তু ফান্ডের ক্ষেত্রেও বয়কট করব কিনা সে বিষয়ে আপনার থেকে উত্তর আশা করছি।

উত্তর:
বিকল্প পন্থা থাকলে তাই ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় প্রয়োজনে বিকাশ ব্যবহার করা যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্মিলিতভাবে ব্র্যাক এবং বিকাশ সহ ব্র্যাকের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বয়কট করা উচিত। কারণ ট্রান্সজেন্ডারের মত বিকৃত এবং শরিয়ত বিরোধী মতবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর উক্ত শিক্ষক এক সেমিনারে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক থেকে দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। বিষয়টি ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক। (যদিও কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করার ভিন্ন কারণ দেখিয়েছে)।


প্রশ্ন-২: বিকাশ তো সবাই বয়কট করতে বলছে। তো বিকাশ কি বন্ধ করে দিতে হবে? বন্ধ না করলে কি গুনাহ হবে?


উত্তর:
প্রয়োজনে বিকাশ ব্যবহার করলে গুনাহ হবে না। তবে বিকল্প থাকলে বিকাশ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ তা ব্র্যাক সুদি ব্যাংক-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ব্র্যাক ট্র্যান্সজেন্ডার নামক নিকৃষ্ট মতবাদের সমর্থক-যা প্রমাণিত হয়েছে, সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর এক শিক্ষক এ বিষয়ে বই ছিঁড়ে প্রতিবাদ করায় তাকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে।


খ. বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর পর উক্ত টাকা পুনরায় একাউন্টে জমা হয়েছে

প্রশ্ন-৩: একদিন বোন তার বিকাশ থেকে টাকা উঠানোর পর আবার দেখে যে পুনরায় সেই টাকাগুলোই যত টাকা উঠানো হয়েছে সেই টাকাগুলো তার বিকাশে পুনরায় ফিরে এসেছে। তখন তিনি দোকানদারকে বললে দোকানদার বলে এই টাকাগুলো তার না। এ অবস্থায় দ্বীনী বোনের প্রশ্ন, তিনি এই টাকাগুলা উঠিয়ে কী করবেন? তাছাড়া তিনিও অনেকদিন যাবত কিছু ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। এখন তিনি কি টাকাগুলো ঋণ পরিশোধ করবেন না কাউকে দান করে দিবেন?

উত্তর:
বিকাশ একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের পরেও পুনরায় উক্ত টাকা ফিরে আসা এটা হয়তো বিকাশের কোন টেকনিক্যাল ভুলের কারণে হতে পারে। এইজন্যে প্রথমত করণীয় হল, বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে এই সমস্যার কথা জানানো এবং তাদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা।
কিন্তু তারা কোন সমাধান দিতে না পারলে আপনি উক্ত টাকা ক্যাশ আউট করে নিজে ব্যবহার করতে পারেন। কেননা আপনার পক্ষ থেকে কোন ধরনের দুর্নীতি ও অসৎ  কলাকৌশল ব্যতিরেকে এই টাকা আপনার একাউন্টে জমা হয়েছে এবং আপনি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছেনও। কিন্তু তারা তার কোন সমাধান দিতে পারেনি। অতএব আপনার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ, অথবা চাইলে কোন মাদরাসা, মসজিদ, জনকল্যাণ খাত বা গরিব মানুষকে দান করে দিতে পারেন। তবে বিকাশ কর্তৃপক্ষ থেকে যদি পরবর্তীতে এর কোন সমাধান আসে তাহলে উক্ত টাকা ফেরত দিতে হবে বা তারা কেটে নেবে তখন আপনার আপত্তি করার সুযোগ থাকবে না।


গ. বিকাশের ক্যাশব্যাক কি সুদের অন্তর্ভূক্ত?


প্রশ্ন-৪: ক্যাশ ব্যাক-এ যে টাকা টা সেটা কি সুদের অন্তর্ভুক্ত? এটা খরচ করা জায়েজ হবে?

উত্তর:
বিকাশ এবং তাদের পার্টনার (যারা বিকাশের সাথে পার্টনারশিপে চুক্তিবদ্ধ) বিভিন্ন ব্র্যান্ড, দোকান বা প্রতিষ্ঠানে বিকাশের মাধ্যমে পে করা হলে তারা তৎক্ষণাৎ নির্ধারিত মূল্য থেকে কিছু টাকা ফেরত দেয়। এটাই ক্যাশ ব্যাক।
যেমন: আপনি যদি বিকাশের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০০ টাকার পণ্য ক্রয় করেন এবং সেই টাকাটা বিকাশের মাধ্যমে পে করেন তাহলে আপনি ২০ টাকা ফেরত পাবেন। অর্থাৎ আপনি বিকাশে মাধ্যমে পে করার কারণে উক্ত পণ্যটা পেলেন ৯৮০ টাকায়। এটা মূলত বিকাশ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক আকৃষ্ট করার পদ্ধতি। এতে একদিকে বিকাশের প্রচার-প্রচারণা এবং গ্রাহক বৃদ্ধি হয়, অপরদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানেরও প্রচার-প্রচারণা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি পায়।

সুতরাং আপনি যদি ন্যায্য মূল্যে কোন পণ্য ক্রয় করেন বা সেবা গ্রহণ করেন কিন্তু এতে যদি কিছু টাকা ছাড় পাওয়া যায় তাহলে তা গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। কারণ পণ্যের মালিক আপনাকে ছাড় দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিকাশ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের মাঝে চুক্তি থাকে এবং পরবর্তীতে তারা গ্রাহককে দেওয়া এই ছাড়টা নিজেদের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভাগাভাগি করে নেয়-যা তাদের উভয়ের প্রচার প্রসারের খরচ হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে আমরা জানি, বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গীভূত একটি সুদ ভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা। তাই একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিকাশ ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এতে প্রকারান্তরে তাদেরকে সহায়তা করা হয়।
সুতরাং ক্যাশ ব্যাক পাওয়ার আশায় কোন দোকান থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিকাশ ব্যবহার না করাই ভালো। বরং সরাসরি দোকানদারকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করেই পণ্য ক্রয় করবেন। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ। আল্লাহু আলম।


ঘ. বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে জাকাতের টাকা পাঠালে খরচের টাকা কি আলাদা দিতে হবে?


প্রশ্ন-৫: বিকাশ, নগদ বা রকেট-এ জাকাতের টাকা পাঠালে টাকা উঠাতে গেলে খরচ কেটে নিবে। সেই খরচও কি জাকাতের মধ্যেই পড়বে? নাকি আলাদা করে উক্ত জাকাতের টাকার খরচ পাঠিয়ে দিতে হবে?

উত্তর:
খরচের টাকা আলাদা দিতে হবে।


ঙ. বিকাশের বার্ড গেম খেলা থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের টাকা কি হালাল?

প্রশ্ন-৬: বিকাশে বার্ড (পাখি) গেম খেলে পুরস্কারের টাকা কি হালাল হবে? গেমের মধ্যে তেমন কোন হারাম আমি দেখি না!

উত্তর:
ব্র্যাক ব্যাংক হল, একটি সুপরিচিত সুদি ব্যাংক। এরই একটি শাখা হল বিকাশ। সুতরাং বিকাশ সরাসরি সুদি ব্যাংকের সাথে রিলেটেড।
অতএব এতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বা তার কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করা সুদি ব্যাংকে চাকরি করার নামান্তর। এটা যেমন হারাম তেমনি তার প্রচার-প্রসার বা এ্যাড দেওয়া, এর জন্য ঘর ভাড়া দেওয়া, অ্যাপ রেফার করে অর্থ উপার্জন করা, বিকাশ ওয়াপ-এ বার্ড নামক গেম খেলে অর্থ উপার্জন ইত্যাদি জায়েজ নাই। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সুদি কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ ও ব্যাপ্তিতে সহায়তা করা হয়। আর এ কথা অজানা নয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ভয়ানক হারাম, ধ্বংসাত্মক কবিরা গুনাহ এবং অভিশাপ যোগ্য কাজ হিসেবে পরিগণিত।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,


أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

"আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।" [বাকারা: ২৭৫]

আল্লাহু আলাম।

তাবলিগ জামাতকে 'না' বলার (বা প্রত্যাখ্যান করার) ১২টি কারণ

الحمد لله و الصلاة و السلام على رسول الله -أما بعد:

নিম্নে তাবলিগ জামাতকে ‘না’ বলার বা প্রত্যাখ্যান করার অসংখ্য কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও গুরুতর ১২টি কারণ উল্লেখ করা হলো:

১. তাবলিগ জামাতের অবস্থা হল, ঘরের ফাউন্ডেশন মজবুত ভাবে তৈরি না করে ডেকোরেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকার মত বা ভঙ্গুর ঘরকে মজবুত ভিত্তির উপরে নির্মাণ করার পরিবর্তে কোনমতে ঠেকা দিয়ে রাখার মত কিংবা যে গাছের শেকড়ে ঘুণ ধরেছে তার মূল সমস্যা বাদ দিয়ে গাছের আগায় পানি ঢালার মত। কেননা মানুষের আকিদা সংশোধন, শিরক, বিদআত, ইসলামবিরোধী নানা মতবাদ, ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার থেকে এদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লম্বা দাড়ি রাখা, মাথায় পাগড়ি পরা, লম্বা জুব্বা পরা, বোরকা পরা, মিসওয়াক করা, চিল্লায় বের হওয়া ইত্যাদি।

২. চতুর্দিকে শিরকের জমজমাট আসর, মানুষ কবর পূজায় লিপ্ত ও বিভিন্ন বাতিল দল ও ফিরকায় দিশেহারা। কিন্তু এসব ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নেই। কেননা এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে!

৩. মানুষ বিদআত, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ এসব বিষয়ে কথা বললে নাকি ‘হাজার বছরের ঐক্য’ নষ্ট হবে এবং মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঝগড়া সৃষ্টি হবে।

৪. এই জামাতের ভিত্তি জাহালত বা মূর্খতার উপরে প্রতিষ্ঠিত। ফলে মানুষকে দীনী ইলম বা ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞানান্বেষণের দিকে উৎসাহিত করার চেয়ে তাদের কথিত 'চিল্লা'য় বের হওয়ার জন্য উৎসাহিত করাই তাদের অন্যতম প্রধান কাজ।
ফলশ্রুতিতে মূর্খরা মাথায় পাগড়ি বেঁধে ফাজায়েলের কিতাব নিয়ে জনগণের সামনে ওয়াজ করতে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর স্বভাবতই ইসলাম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা ও ভুলভাল ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। অনুরূপভাবে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ মহিলারাও পাড়ায়-মহল্লায় দ্বীন সম্পর্কে সাধারণ মহিলাদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ও বিদআতি কথাবার্তা প্রচারে নিয়োজিত রয়েছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে কথা বলা এবং আমল করার পূর্বে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা ফরজ।

৫. দীনী ইলম অর্জনে অনীহা ও গুরুত্ব হীনতা:
যার কারণে আপনি দেখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাবলিগের একজন মুরুব্বি যে, ১০-১৫ বা ২০ বছর ধরে তাবলিগের মেহনতের সাথে জড়িত তাকে যদি ইসলামের প্রাথমিক এবং মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে তার উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। যেমন:
- ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?
- ইসলাম এবং ঈমানের রোকন কয়টি ও কী কী?
- দীনের স্তর কয়টি ও কী কী?
- ইবাদত কাকে বলে?
- ইবাদতের রোকন কয়টি ও কী কী?
- ইবাদত কবুলের শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
- ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো কী কী?
- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সঠিক অর্থ এবং এর শর্তাবলী কয়টি ও কী কী?
- এছাড়াও শিরক, কুফর, নিফাক, উসিলা, শাফাআত ইত্যাদি। বিষয়টি আপনারা নিজেরাই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

৬. উদ্ভট কিচ্ছা-কাহিনী এবং জাল-জইফ হাদিস বর্ণনা:
এই মূর্খদের ওয়াজ বা বয়ানের মূল ভিত্তি হলো, বুজুর্গদের বুজুর্গির বর্ণনা, উদ্ভট স্বপ্ন, কিচ্ছা-কাহিনী, জাল-জইফ হাদিসের বয়ান এবং ভিত্তিহীন ফজিলতের ফুলঝুরি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনার পরিণতি জাহান্নাম।

৭. সংস্কার ও সংশোধনে অনীহা:
তাবলিগ জামাতের প্রধান সিলেবাস ফাজায়েল নামক কিতাবগুলো অসংখ্য ভ্রান্ত কথাবার্তা, জাল-জইফ হাদিস এবং ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে পরিপূর্ণ। এসব কিতাবের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন করে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় শত শত গ্রন্থ রচিত হলেও তারা মোটেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না‌। বরং তারা উল্টো সংস্কার প্রত্যাশীদেরকে গালাগালি, নানা অপবাদ ও তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করে ছলে-বলে-কৌশলে ভুলগুলোকেই সঠিক প্রমাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত!

৮. দলাদলি, কোন্দল ও রক্তপাত:
এই জামাতটি বর্তমানে দুই ভাগে (জুবায়ের পন্থী ও সাদ পন্থী) বিভক্ত হয়ে একে অপরের সাথে চরম কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে। মসজিদ ভাগাভাগি, মসজিদে মারামারি, এক মসজিদে দু গ্রুপের আলাদা আলাদা জামাত, একই ময়দানে আলাদা আলাদা ইজতিমা। এমনকি একদল আরেক দলকে কাফের বা ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল বলেও আখ্যায়িত করছে। সর্বোপরি টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে দুই গ্রুপের লোমহর্ষক রক্তাক্ত মারামারি জাতিকে স্তম্ভিত করেছে।

৯. এদের মাধ্যমে কিছু মানুষ দাড়ি ছেড়েছে, মাথায় টুপি পরেছে, মহিলারা বোরকা পরেছে, নামাজি হয়েছে, নানা পাপকর্ম থেকে ফিরে এসেছে তা ঠিক। কিন্তু শিরক যুক্ত ঈমান এবং বিদআত যুক্ত আমল আল্লাহর কাছে কোনই কাজে লাগবে না সে ব্যাপারে তারা নিতান্তই বেখবর। তাই তো আল্লাহ বলেছেন,


قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُم بِٱلۡأَخۡسَرِینَ أَعۡمَـٰلًا
ٱلَّذِینَ ضَلَّ سَعۡیُهُمۡ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَا وَهُمۡ یَحۡسَبُونَ أَنَّهُمۡ یُحۡسِنُونَ صُنۡعًا


"(হে নবী আপনি বলুন), আমি কি তোমাদেরকে সেসব মানুষের ব্যাপারে বলবো যারা আমলের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারা হল, সে সব লোক, যাদের কর্ম প্রচেষ্টা দুনিয়ার জীবনেই বাতিল যায় অথচ তারা মনে করে যে, তারা ভালো কাজ করেছে!" [সূরা কাহফ: ১০৩ ও ১০৪]

১০. এই জামাতটি নিজেদের টাকায় দাওয়াতি কাজ করে বলে গর্ব করে। কিন্তু তারা নিজেদের টাকায় মূলত: বিদআত প্রচারে লিপ্ত। নিজে বিদআত করার চেয়ে বিদআত প্রচারের ভয়াবহতা বেশি। কারণ এর দ্বারা যত মানুষ বিদআতি কাজ করবে তাদের প্রত্যেকের সমপরিমাণ গুনাহ প্রচারকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে।

১১. কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা:
তাবলিগ জামাত জি/হাদের আয়াতগুলোকে তাদের কথিত চিল্লা ও গাশতের পক্ষে ব্যবহার করে, ‘চিল্লা’র জন্য নির্ধারিত ৩ দিন, ৪০ দিন (এক চিল্লা), ১২০ দিন (তিন চিল্লা) বা ১ সাল ইত্যাদির পক্ষে কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে এগুলোকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা, টঙ্গীর মাঠে এক ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত ৪৯ কোটি গুণ সওয়াবের বর্ণনা, তিন বার টঙ্গীর ইজতিমায় শরিক হলে এক হজের সমপরিমাণ সওয়াব বা এটিকে ‘গরিবের হজ’ বলা। (সাধারণ কিছু মূর্খ এমন কথা বললেও তাবলিগ জামাতের কেন্দ্র থেকে এর প্রতিবাদ বা সংশোধনী মূলক বক্তব্য করা হয়েছে বলে জানা যায় না)।

টঙ্গী ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ হল, আখেরি মুনাজাত। মানুষ এখন ফরজ সালাত আদায়ের চাইতে আখেরি মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। আখেরি মুনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য নামাজি, বেনামাজি, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদআতি, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি মানুষ দলে দলে টঙ্গীর ময়দানের দিকে ছুটতে থাকে। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ বাসের হ্যান্ডেল ধরে, নৌকায় বসে, পিকআপ প্রভৃতির মাধ্যমে ইজতিমায় যোগদান করে। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আঁচল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি এই মুনাজাত সম্প্রচারিত হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমিন আমিন বলতে থাকে। সে দিন ঢাকা শহরে অফিস-আদালতে অঘোষিত ছুটি পালিত হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস, এই আখেরি মুনাজাতে অংশ গ্রহণ করতে পারলে জীবনের সব গুনাহ মোচন হয়ে যায়। অথচ এভাবে নিয়ম করে সম্মিলিত মুনাজাত করাই বিদআত (দীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত কাজ)। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

১২. উম্মতের শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক সালাফি আলেমগণ (যেমন: শাইখ বিন বায, শাইখ উমাইমিন, শাইখ আলবানি, শাইখ সালেহ আল ফাওযান প্রমুখ) তাবলিগ জামাতের সাথে বের হওয়া, তাদের বই পড়া এবং তাদের ইজতিমায় শরিক হওয়াকে হারাম বলেছেন এবং উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

তাবলিগ জামাতের কোথায় কী সমস্যা এবং সেগুলোর খণ্ডন বিষয়ে নিম্নোক্ত বইগুলো পড়া যেতে পারে:

১. শাইখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ আত তুওয়াইজিরি কর্তৃক রচিত এবং শায়খ মুখলেসুর রহমান বিন মনসুর অনুদিত নিম্নোক্ত গ্রন্থটি:
القول البليغ في التحذير عن جماعه التبليغ
“প্রচলিত তাবলীগ জামাত সংশয় সতর্কতা সমাধান”

২. তাবলীগ জামা’ য়াত ও দেওবন্দিগণ
সম্পাদনায়: শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম

সমকামিতা: ভয়াবহতা, শাস্তি ও পরিত্রাণের উপায়

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সমকামিতা নামক প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও নিকৃষ্ট কাজটির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এর প্রচার-প্রসারে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে হাবুডুবু খাওয়া কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ বিভিন্ন ভাবে কাজ করছে। এরা বিভিন্ন এনজিও এর ছাত্র ছায়ায় যুবকদেরকে এই অন্যায় কর্মে লিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইতোমধ্যে বহু যুবক-যুবতী তাদের খপ্পরে পড়ে শুধু তাদের দ্বীনদারী ও‌ চরিত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং পুরো জীবনটাকেই এক গন্তব্যহীন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। সে কারণে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে এ বিষয়ে সচেতনতা খুবই জরুরি।

যাহোক, নিম্নে সমকামিতার ভয়াবহতা, ইসলামি ও প্রচলিত আইনে এর শাস্তি এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হল:
ইসলামে সমকামিতা (homosexuality) তথা পুরুষের সাথে পুরুষ অথবা নারীর সাথে নারীর যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, কবিরা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি জিনার থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা তা প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচার এবং মানবতা বিধ্বংসী আচরণ।

মানবজাতির পরিবার গঠনের স্বাভাবিক নিয়ম হল, একজন পুরুষ একজন নারীকে বৈধভাবে বিয়ে করার পর তারা দাম্পত্য জীবন গঠন করবে। অত:পর স্বামী-স্ত্রী মধুর মিলনে স্ত্রী গর্ভধারণ করবে ও সন্তান জন্ম দিবে। অতঃপর বাবা-মা সন্তানের পরিপালনের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিবেন। এই তো একটি সুন্দর মানবজীবন। এভাবে মানব সন্তানের বংশ বিস্তার ঘটবে এবং ফুলে-ফলে সুশোভিত হবে এই সুন্দর বসুন্ধরা। কিন্তু সমকামিতা হল, প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক কাজ এবং মানবজাতির বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।

কেন মানুষ সমকামী হয়? বিজ্ঞানীরা সমকামিতার প্রকৃত কারণ জানেন না কিন্তু তারা তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করেন যে, জিনগত, হরমোন গত এবং পরিবেশগত কারণসমূহের এক জটিল আন্তক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে থাকে। (উইকিপিডিয়া) তবে কিছু মানুষ স্বাভাবিক যৌন চাহিদা তথা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ থাকার পরও বিকৃত মানসিকতার কারণে ইচ্ছাকৃত ভাবে সমকামিতায় লিপ্ত হয়।

ইসলাম সমকামিতার পথ বন্ধ করেছে যেভাবে:
ইসলাম সমকামিতার পথ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা হল,


عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ وَلاَ الْمَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ الْمَرْأَةِ وَلاَ يُفْضِي الرَّجُلُ إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ وَلاَ تُفْضِي الْمَرْأَةُ إِلَى الْمَرْأَةِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ.

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "এক পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের প্রতি তাকাবে না। তেমনি এক নারী অপর নারীর লজ্জাস্থানের প্রতি তাকাবে না। দু জন পুরুষ একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করবে না। তেমনি দুজন নারী একটি কাপড়ের নীচে শয্যা গ্রহণ করবে না।" (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০০; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/২৯৬৬ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَتَنْعَتْهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إِلَيْهاَ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "এক নারী অপর নারীর চামড়ার সাথে চামড়ার লাগাবে না। কারণ সে তার স্বামীকে ঐ নারীর অঙ্গের বিবরণ দিতে পারে তখন তার স্বামী ঐ নারীকে যেন অন্তরের চোখে দেখবে।" (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৯৯; বাংলা ৮ম খন্ড, হা/৩৯২১ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)।
এ দুটি হাদিসে ইসলাম সমকামিতার মত ভয়াবহ ও ঘৃণিত অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামিতার ভয়াবহতা:
নি:সন্দেহে সমকাম ধ্বংসাত্মক ও অভিশপ্ত পাপকর্ম, আল্লাহর শাস্তির কারণ ও মানবতা বিধ্বংসী অপরাধ।
নিম্নে কুরআন-সুন্নাহ ও প্রচলিত আইনের আলোকে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:

১. সমকাম আল্লাহর আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ:
লুত সম্প্রদায়ের লোকজন সমকামিতায় লিপ্ত হলে মহাশক্তিধর আল্লাহ তাদেকে কিভাবে ধ্বংস করেছেন তা ফুটে উঠেছে এই আয়াতে:


فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ

“অতঃপর যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল, এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হল, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ উপরে উঠালাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম।" (সুরা হুদ: ৮২)
ইতিহাসে এই ভয়াবহ ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে আজও বিদ্যমান রয়েছে জর্ডানে অবস্থিত ‘ডেড সি’ (The Dead Sea) বা মৃত সাগর।

২. সমকামিতা একটি অভিশপ্ত কর্ম:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন,


لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ ، لَعَنَ اللَّهُ مَنْ عَمِلَ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ ، ثَلاثًا -(حسنه شعيب الأرنؤوط في تحقيق المسند)

"যে ব্যক্তি লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত হবে তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।যে ব্যক্তি লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত হবে তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।" এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। (মুসনাদ আহমদ ২৯১৫/শাইখ শুআইব আরনাবুত হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)

৩. তাছাড়া সমকামিতাকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ প্রাণঘাতী এইডস সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

❑ ইসলামি আইনে সমকামিতার শাস্তি:

ইসলামের ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী সমকামিতার শাস্তি হল, মৃত্যুদণ্ড:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,


عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ ) وصححه الألباني في صحيح الترمذي .

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যাদেরকে তোমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করো। (তিরমিজি: ৪/৫৭; আবু দাউদ: ৪/২৬৯; ইবনে মাজা: ২/৮৫৬-’শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
আল্লামা বিন বায রহঃ বলেন,


أن حكمه القتل الذي عليه أصحاب الرسول ﷺ وقد أجمعوا جميعًا  على قتل اللوطي مطلقًا سواء كان بكرًا أو ثيبًا، بعض الفقهاء قالوا: إنه كالزاني يرجم المحصن ويجلد البكر مائة جلدة ويغرب عامًا، ولكنه قول ضعيف

"সমকামিতার শাস্তি হল, হত্যা। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবিদের সম্মিলিত অভিমত রয়েছে। তারা সকলেই একমত যে, সমকামীকে হত্যা করা হবে চাই যে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক।
কতিপয় ফকিহ বলেন যে, সমকামিতার ক্ষেত্রে জিনার মতই বিবাহিত হলে, তার শাস্তি পাথর মেরে হত্যা আর অবিবাহিত হলে এক একশ চাবুক ও একবছর দেশান্তর (জেল বা নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়া)। কিন্তু এটি দুর্বল কথা।" [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]
অবশ্য যদি কারও সাথে জোরপূর্বক সমকামিতা করা হয় বা যার সাথে এই অন্যায় করা হয়েছে সে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু বা পাগল হয় তাহলে তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না।

❑ প্রচলিত আইনে সমকামিতার শাস্তি:

অধিকাংশ সমাজে এবং সরকার ব্যবস্থায় সমকামী আচরণকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। উদাহরণ স্বরূপ: বাংলাদেশ (দশ বছরের থেকে শুরু করে আমরণ সশ্রম কারাদণ্ড) সহ দক্ষিণ এশিয়ার ৬ টি দেশের সংবিধানে ৩৭৭ ধারা এবং ১৯টি দেশে সমপর্যায়ের ধারা এবং সম্পূরক ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পশুকামিতা প্রকৃতি বিরোধী যৌনাচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক পায়ু মৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে। এ আইনে বলা হয়েছে:
৩৭৭. প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।
ব্যাখ্যা: ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণে যৌনসংগমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে লিঙ্গ প্রবেশের প্রমাণ যথেষ্ট হবে।
৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ু সঙ্গম জনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকাম ও পায়ু মৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। [মুক্ত বিশ্বকোষ, বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার]

❑ কেউ যদি জন্মগত ভাবে সম লিঙ্গের দিকে আকর্ষণ অনুভব করে তাহলে তার কী করণীয়?

সৃষ্টিগত ভাবে কারো মধ্যে সমলিঙ্গের দিকে আকর্ষণ থাকলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাকে এমনটি করেছেন তার প্রতি পরীক্ষা হিসেবে। যেমন অনেক প্রতিবন্ধী মানবিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কারও চোখ নাই, কারও কথা বলার ক্ষমতা নাই, কেউ বা কানে শুনে না ইত্যাদি। ঠিক তেমনি সেও নারীর প্রতি স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ বোধ থেকে বঞ্চিত।
যাহোক, কোন ব্যক্তি যদি ব্যক্তি সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে তাহলে এ থেকে বাঁচার জন্য তার জন্য নিম্নে ৮টি করণীয় তুলে ধরা হল:
১) সে আল্লাহর ভয় ও জাহান্নামের শাস্তির কথা চিন্তা করে ধৈর্য ধারণ করবে এবং এ জঘন্য গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। কোনভাবেই সম লিঙ্গের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে না। যদি সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে আখিরাতে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,


أُولَـٰئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا خَالِدِينَ فِيهَا ۚ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا

"তাদেরকে তাদের ধৈর্যের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে তথায় দেয়া হবে সম্ভাষণ ও সালাম। তথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কত উত্তম!" (আল ফুরকান: ৭৫ ও ৭৬)

২) সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখবে। মনে রাখা দরকার যে, আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিয়ামতের মাঠে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। তখন আমরা যত অন্যায় ও পাপকর্ম করেছি সব কিছুই প্রকাশিত হয়ে যাবে।
আল্লাহ বলেন,


يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

"যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত।" (সূরা নূর: ২৪)

৩) যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মোটেই আকর্ষণবোধ না থাকার কারণে বিয়ে করা সম্ভব না হয় অথচ প্রচণ্ড যৌন বাসনা অনুভব করে তাহলে করণীয় হল, রোজা রাখা। কেননা রোজার মাধ্যমে যৌন বাসনা নিয়ন্ত্রিত থাকে।

৪) কখনো একাকী নিভৃতে না থাকা। কেননা একাকীত্ব যৌন চিন্তা জাগ্রত করে। বরং যে কোন দীন বা দুনিয়ার উপকারী কাজে সময়কে কাজে লাগাতে চেষ্টা করতে হবে। যেমন: নেক আমল করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনে তাফসির পড়া, কুরআন মুখস্থ করা, জিকির করা, নামায পড়া, ইসলামি বই পড়া, ভালো আলেমদের লেকচার শোনা, শিক্ষণীয় ও উপকারী কোন কোর্স করা, জনকল্যাণ মূলক কাজ আঞ্জাম দেয়া, শখের কাজ করা (যদি তা হারাম না হয়) ইত্যাদি।

৫) পাপিষ্ঠ ও খারাপ লোকদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা। কারণ মানুষ সঙ্গ দোষে অন্যায় ও অশ্লীল পথে পা বাড়ায়।

৬) যৌন উদ্দীপক মুভি, মিউজিক ভিডিও, গান, টিভি শো ইত্যাদি না দেখা এবং অশ্লীল গল্প-উপন্যাস না পড়া।

৭) যৌন বাসনাকে উদ্দীপ্ত করে এমন খাওয়া-দাওয়াও সীমিত করা দরকার। কেননা এসব খাদ্যের প্রভাবে শরীরে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

৮) তারপরও মনে খারাপ চিন্তা জাগ্রত হলে তৎক্ষণাৎ শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করা কর্তব্য।

৯) সর্বোপরি মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্যা থেকে মুক্তি চেয়ে দুআ ও আরাধনা করা।

আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সকল প্রকার পাপাচার ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান এবং হিজড়াদের সাথে আচরণের পদ্ধতি ও মূলনীতি

❑ এক. ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান:

আমাদের জানা আবশ্যক যে, একজন হিজড়া এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মৌলিক কোন পার্থক্য নাই বিয়ে-যৌনতা ইত্যাদি কিছু বিধি-বিধান ছাড়া। তারাও আল্লাহর প্রতি ঈমান-কুফরি, আল্লাহর আনুগত্য-নাফরমানি, ইবাদত-বন্দেগি, ইসলামের বিধিবিধান পালন এবং সামাজিক সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই। তারাও ইসলাম, ঈমান, তাকওয়া-পরহেজগারিতা, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত।
তারা যদি নেকির কাজ করে তাহলে আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত হবে এবং যদি কোন অন্যায় করে আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হবে। কারণ তারাও মানুষ। আর প্রতিটি সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের উপর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ প্রযোজ্য।


আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সকল মানুষের উদ্দেশ্য বলেন,


يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‎

“হে মানব জাতি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারবে।” [সূরা বাকারা: ২১]

তিনি‌ আরও বলেন,


يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

“হে মানব জাতি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” [সূরা নিসা: ১]

আল্লাহ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন,


وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

“আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” [সূরা যারিয়াত: ৫৬]
এভাবে কুরআনে আল্লাহ মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য সুস্থ মস্তিষ্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি মানুষই এর অন্তর্ভুক্ত। চাই সে সুস্থ হোক, অসুস্থ হোক, স্বাভাবিক হোক বা প্রতিবন্ধী হোক, সাধারণ নারী-পুরুষ হোক বা হিজড়া হোক। কেউই এ নির্দেশনার বাইরে নয়। তবে তারা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী। এটি আল্লাহ তাআলার কর্ম কুশলতা এবং সৃষ্টি বৈচিত্রের নিদর্শন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে  হিজড়াদেরকে ভিন্ন চোখে দেখা হয় এবং সামাজিকভাবে তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে তারাও জীবন-জীবিকার তাগিদে এমন কিছু কাজ করে যা অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়-জুলুমের পর্যায়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে এবং তাদের প্রতি সব ধরণের বৈষম্য এবং বর্ণবাদী মনোভাব দূর করতে হবে।

অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধীদের মত লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিজড়ারা আমাদের সভ্য সমাজেরই অংশ। তারা আমাদেরই কারও সন্তান। অতএব তাদেরকে নপুংসক বলে তিরস্কার করা যাবে না, তাদেরকে হেয়, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করা যাবে না, অন্যায়ভাবে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন করা যাবে না, তাদেরকে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, হালাল পন্থায় চিত্তবিনোদন, সামাজিক নিরাপত্তা, বিচার পাওয়া ইত্যাদি কোনও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

মোটকথা, যারা সৃষ্টিগতভাবে প্রকৃতই হিজড়া ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের সাথে সাধারণভাবে মেলামেশা, উঠবস, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কোন আপত্তি নেই। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাও জরুরি যে, বর্তমানে হিজড়া হিসেবে পরিচিত কিছু মানুষ প্রকৃত হিজড়া নয় বরং তারা কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া বেশ ধারণ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে আবার কিছু মানুষকে দুষ্কৃতিকারীরা বাধ্য করে হিজড়া বানিয়ে রেখেছে বিশেষ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

❑ দুই. হিজড়াদের সাথে আচরণের পদ্ধতি ও মূলনীতি:

বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফিকাহবিদ এবং সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,


الخنثى فيه تفصيل؛ فالخنثى قبل البلوغ يشتبه هل هو ذكر أو أنثى؛ لأن له آلتين آلة امرأة وآلة رجل، لكن بعد البلوغ يتبين في الغالب ذكورته أو أنوثته. فإذا ظهر منه ما يدل على أنه امرأة مثل أن يتفلك ثدياه، أو ظهر عليه ما يميزه عن الرجال بحيض أو بول من آلة الأنثى، فهذا يحكم بأنه أنثى وتزال منه آلة الذكورة بالعلاج الطبي المأمون. وإذا ظهر منه ما يدل على أنه ذكر كنبات اللحية والبول من آلة الذكر وغيرها مما يعرفه الأطباء فإنه يحكم بأنه ذكر ويعامل معاملة الرجال، وقبل ذلك يكون موقوفًا حتى يتبين الأمر، فلا يزوج حتى يتبين الأمر هل هو ذكر أو أنثى، وهو بعد البلوغ كما قال العلماء بتبين أمره

“হিজড়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা রয়েছে। বয়ঃসন্ধির আগে একজন হিজড়া সে পুরুষ না মহিলা তা অনিশ্চিত। কারণ তার দুটি অঙ্গ রয়েছে-একটি নারীর, অপরটি পুরুষের। কিন্তু বয়ঃসন্ধির পর তার পুরুষত্ব বা নারীত্ব প্রায়শই স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি লক্ষণ দেখা যায় যে, সে একজন নারী, যেমন: তার স্তন শিথিল হয়ে যাওয়া, অথবা এমন কিছু যা তাকে পুরুষদের থেকে আলাদা করে। যেমন: ঋতুস্রাব বা স্ত্রীলিঙ্গ থেকে প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি তাহলে তাকে নারী বলে গণ্য করা হবে এবং নিরাপদ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গটি রিমুভ করে ফেলতে হবে।
আর যদি তার মধ্যে এমন কিছু পাওয়া যায় যা ইঙ্গিত করে যে, সে একজন পুরুষ, যেমন: দাড়ি বৃদ্ধি, পুরুষ লিঙ্গ থেকে প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি যে সব বিষয় ডাক্তারগণ জানেন, তাহলে তাকে পুরুষ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার সাথে পুরুষের মতই আচরণ করা হবে।

তবে যদি কোনো একটি দিক পরিষ্কার না হয় তাহলে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। তাই যতদিন না বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে তিনি একজন পুরুষ অথবা নারী (যা বিশেষজ্ঞদের মতে বয়ঃসন্ধির মাধ্যম প্রকাশিত হয়) তার বিয়ে দেওয়া যাবে না।” [binbaz org]

ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য, আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ

ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের, সাদৃশ্য, আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন হারাম ও কবিরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে নিম্নে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করা হলো:

১. ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,


لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী বেশধারী পুরুষদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লানত (অভিসম্পাত) করেছেন। তিনি বলেছেন, “ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও।” ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং উমর রা. অমুককে বের করে দিয়েছেন।” [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৮৮৬]

হাদিসের ব্যাখ্যা:
এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভুষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত (অভিসম্পাত) করেছেন।
কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লামা তিবী রাহ. বলেছেন,


المخنث ضربان احدهما من خلق كذلك و لم يتكلف التخلق باخلاق النساء و زيهن و كلامهن و حركاتهن هذا لا ذم عليه و لا اثم و لا عيب و لا عقوبة لانه معذور
الثاني من تكلف اخلاق النساء و حركاتهن و هياتهن و كلامهن و زيهن فهذا هو المذموم الذي جاء في الحديث لعنه

অর্থ: হিজড়া দুই ধরনের। যথা:
- এক প্রকার হল, যারা সেভাবেই জন্মেছে। তারা মহিলাদের মতো চরিত্র, সাজগোজ, কথা বলার ধরণ বা চালচলন নকল করার ক্ষেত্রে কোনরূপ চেষ্টা করে না (স্বাভাবিকভাবে আচরণ করে)। এসব হিজড়াদের কোনো ভৎর্সনা, পাপ, দোষ কিংবা শাস্তি নেই। কেননা তারা তো মাজুর।

- দ্বিতীয় প্রকার হল, যারা মহিলাদের আখলাক, তাদের চালচলন, তাদের হাবভাব, তাদের মতো কথা বলার ধরণ ও তাদের মতো সাজসজ্জা গ্রহণের চেষ্টা করে। হাদিসে বর্ণিত লানতপ্রাপ্ত ব্যক্তি এরা। [শারহ তিবী: ৮/২৬৭, সুবুলুস সালাম: ২/১৯]


২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,


ثَلاَثٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : الْعَاقُّ بِوَالِدَيْهِ ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ  الْمُتَشَبِّهَةُ بِالرِّجَالِ  وَالدَّيُّوثُ

“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না। তারা হল:
ক. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান,
খ. পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারী
গ. এবং দাইয়ুস। [মুসনাদ আহমদ: ৬১৮]

৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,


«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। [আবু দাউদ : ৪০৯৮]

৪. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,


 لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ

“যে নারী পুরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”  [আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ]

৫. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


لَعَنَ الْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ وَالْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন যেসব নারী পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যেসব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে।” [বুখারী, হাদিস নং ৫৮৮৫, আবু দাউদ, অধ্যায়:  পোশাক-পরিচ্ছেদ,অনুচ্ছেদ: নারীদের পোশাক। সহীহ]
পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় মূলনীতি আছে সেগুলো ঠিক রেখে একজন মুসলিম যে কোন পোশাক পরতে পারে। ইসলাম তার অনুমোদন দিয়েছে।

ইসলাম প্রদত্ত পোশাকের মূলনীতিগুলো নিম্নরূপ:
● পুরুষদের টাখনুর নিচে পরা যাবে না।
● বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
● খুব পাতলা বা আঁটোসাঁটো হওয়া যাবে না যাতে লজ্জা স্থানগুলো ফুটে উঠে বা দেখা যায়।
● বিধর্মীদের ধর্মীয় পোশাকের মত হবে না (যেমন: বৌদ্ধদের বিশেষ কালারের পোশাক),
● সমাজে প্রচলিত নয় এমন অদ্ভুত ডিজাইন ও কালারের পোশাক পরিধান করা যাবে না যাকে হাদিসে ‘লিবাসুস শুহরাহ’ বলা হয়েছে ইত্যাদি।

আল্লাহ আমাদেরকে এসকল ভয়াবহ গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

রাতজাগা কি গুনাহের কাজ? রাতজাগার ৮ মারাত্মক ক্ষতি এবং যারা রাত জেগে কাজ করে তাদের সুস্থতার জন্য ৫ খাবার

প্রশ্ন: ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য রাত জাগতে হয়। এতে কি গুনাহ হবে? আর রাতজাগার ক্ষতিকর দিক সমূহ এবং এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যরক্ষায় করণীয় কী?

আল্লাহ তাআলা রাতকে আমাদের জন্য বিশ্রাম গ্রহণ এবং দিনকে জীবিকা উপার্জনের সময় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,


‏ وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا ‎‏ وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا-‏ وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا

"তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে করেছি আবরণ এবং দিনকে করেছি জীবিকা উপার্জনের সময়।" [সূরা নাবা: ৯, ১০ ও ১১]
তিনি আরও বলেন,


وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَالنَّوْمَ سُبَاتًا وَجَعَلَ النَّهَارَ نُشُورًا

"আর তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে।" [সূরা ফুরকান: ৪৭]
তিনি আরও বলেন,


وهُوَ الذي جعلَ لَكمُ الليلَ لِتَسكنوا فيهِ والنهارَ مُبصرا إِنَّ في ذلكَ لآَياتٍ لقوم يَسمعون

“তিনি তোমাদের জন্য তৈরি করেছেন রাত, যাতে করে তোমরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পার, আর দিন দিয়েছেন দর্শন করার জন্য। নিঃসন্দেহে এতে নিদর্শন রয়েছে সে সব লোকের জন্য যারা শ্রবণ করে।” [সূরা ইউনুস: ৬৭]


তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একান্ত জরুরি কাজ ছাড়া ইশার সালাতের পূর্বে ঘুম এবং ইশার সালাতের পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন এবং তিনি আগেভাগে ঘুম এবং আগেভাগে ঘুম থেকে জাগার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাই আমাদের কতর্ব্য, যথাসম্ভব দিনের বেলায় কাজ করা এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া। কিন্তু বর্তমান যুগে অনেক মানুষকে নানা কারণে রাত জেগে কাজ করতে হয়। যদি চাকরি বা পেশাগত প্রয়োজনে রাতে জেগে কাজ করা আবশ্য হয় তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে তা নাজায়েজ নয়। তবে এ জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো লক্ষ্য রেখে রাত জেগে কাজ করা জায়েজ রয়েছে। যেমন:

১. কাজটা জীবিকা উপার্জন বা মানব কল্যাণের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি হওয়া আবশ্যক। অপ্রয়োজনীয় কাজে রাতজাগা বৈধ নয়।

২. কাজটা হালাল হওয়া। সুতরাং ফ্রিল্যান্সিং বা অন্য যে কাজ করবেন তা অবশ্যই হালাল হতে হবে। হারাম কাজের জন্য রাতজাগা হারাম।

৩. রাতজাগার কারণে মাগরিব, ইশা ও ফরজের সালাত আর দিনের বেলায় ঘুমের কারণে জোহর/জুমা, আসর সালাত ইত্যাদি কাজা না করা।

৪. রাতজাগার ফলে যথাসময়ে মসজিদে জামাতে সালাত মিস না করা। (পুরুষদের জন্য)।

৫. রাত জেগে কাজ করার প্রয়োজন থাকলে দিনে পর্যাপ্ত ঘুমের মধ্যমে শরীরের চাহিদা পূরণ করা জরুরি। কারণ পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম গ্রহণ মানুষের উপর তার নফসের হক। তাছাড়া শারীরিক ও মানসিক সুস্থ থাকার জন্যও পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।

৬. রাতজাগার কারণে শারীরিক ও মানসিক ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা থাকলে অনতিবিলম্বে রাতজাগা পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময় রাতজাগা মানুষের দেহে নানা রোগ-ব্যাধির সৃষ্টির কারণ হয়। সুতরাং এ বিষয়ে সচেতনতা কাম্য।


শাইখ আলবানি রাহ. কে রাতে কাজ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন,


إذا كنت لا تضيع أي صلاة عن وقتها المشروع أولا ثم لا تضيع حضور الصلاة في مساجد المسلمين ثانيًا ثم لا تستطيع أن تجد عملًا في النهار ثالثًا بهذه الشروط يجوز فإذا اختل شرط من هذه الشروط لا يجوز

“তুমি যদি প্রথমত: নির্ধারিত সময়ে কোন সালাত মিস না করো, দ্বিতীয়ত: তুমি যদি মসজিদে নামাজ পড়া মিস করো, তারপর তৃতীয়ত: তুমি দিনে করার মত কোনও কাজ খুঁজে পান না, তাহলে এসব শর্ত সাপেক্ষে রাত জেগে কাজ করা জায়েজ। কিন্তু যদি এই শর্তগুলোর কোনও একটি লঙ্ঘিত হয় তাহলে তা জায়েজ নয়।” [al-fatawa]

রাতে কাজ করা এবং দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে islamweb-এর উত্তরে বলা হয়েছে,


فإذا كان نومك لا يترتب عليه تضييع الصلوات المفروضة وإخراجها عن وقتها بحيث تستيقظ وتصلي الصلاة لوقتها، ثم تعود للنوم فإنه لا حرج عليك، وإن كنت تضيع الصلوات فتخلط الظهر مع العصر مثلا أو تصلي الفجر بعد وقتها فهذا لا يجوز، وتلزمك التوبة إلى الله تعالى

“আপনার ঘুমের কারণে যদি ফরজ সালাত ছুটে না যায় বা সময় অতিবাহিত করে না পড়া হয় অর্থাৎ আপনি ঘুম থেকে জাগবেন এবং যথাসময়ে সালাত পড়ে পুনরায় ঘুমাবেন তাহলে এতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সালাত ছুটে যায়-যেমন: জোহরকে আসরের সাথে যুক্ত করে দেন বা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ফজর সালাত পড়েন তাহলে তা জায়েজ নয়। আপনার জন্য তওবা করা আবশ্যক।” [ফতোয়া নং-১১২৭৮৫]

❑ রাতজাগার ৮ মারাত্মক ক্ষতি:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, টানা কয়েকদিন রাত জাগলে শরীর ভিতর থেকে ভাঙতে শুরু করে। ফলে এমন সব রোগ ঘাড়ে চেপে বসে যে আয়ু কমে চোখে পড়ার মতো। শুধু তাই নয়, মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া, সঙ্গে রাতজাগা লেজুড় হলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ভয়ও থাকে। তাই শরীরের এসব মারাত্মক ক্ষতি বাঁচতে রাত জাগবেন না।

❑ রাতজাগার ফলে শরীরের যে ৮টি মারাত্মক ক্ষতি হয়:

১.উচ্চ রক্তচাপ: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে টানা ২-৩ দিন ঠিক করে না ঘুমলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। আর এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত যদি ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা না যায়, তাহলে শরীরের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

২.ওজন বাড়ে: ২০১৪ সালে হওয়া একটি স্টাডিতে দেখা গেছে টানা কয়েকদিন ৬ ঘণ্টার থেকে কম সময় ঘুমালে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কারণ ঘুম কম হলে স্বাভাবিকভাবেই খিদে বাড়তে থাকে। আর বেশি মাত্রায় খেলে যে স্বাভাবিকভাবেই ভাবে ওজন বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! আর ওজন যখন মাত্রা ছাড়ায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই একে একে শরীরে এসে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, কোলেস্ট্ররল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ। তাই তো বলি বন্ধু, ওবেসিটির মতো মরণ পরিস্থিতির খপ্পরে পড়তে যদি না চান, তাহলে রাতজাগার প্ল্যান বাদ দিতে হবে।

৩. ব্রেনের পাওয়ার কমে: আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক নিজেকে রিজুভিনেট করতে থাকে। সেই সঙ্গে সারা দিন ধরে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এবং তথ্য ব্রেনে স্টোর করার কাজটাও এই সময় ঘটে থাকে। তাই তো ঠিক মতো ঘুম না হলে প্রথমেই স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব পরে। সেই সঙ্গে কগনিটিভ ফাংশন কমে যাওয়ার কারণে মনোযোগ এবং বুদ্ধি কমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলিও ঘটে থাকে।
প্রসঙ্গত: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের কোনও কিছু শেখার ক্ষমতার সঙ্গে ঘুমের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো ঠিক মতো ঘুম না হলে এই ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে। তাই সাবধান!

৪. আয়ু কমে: প্রায় দশ হাজার ব্রিটিশ ছাত্রের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ৫ ঘণ্টা বা তার কম সময় ঘুমায়, তাদের হঠাৎ করে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ঘুমের সঙ্গে হার্ট এবং ব্রেনের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো ঘুম ঠিক মতো না হলে শরীরেই সব থেকে দুটি ভাইটাল অঙ্গ দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু চোখে পরার মতো কমে যায়।

৫. মানসিক অবসাদ: ২০০৫ সালে হওয়ার বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তকের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই হাজারো চাপের মাঝেও মনকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না যেন!

৬. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে: একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে মাসের পর মাস ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরে যে ঠিক মতো কাজ করে উঠতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে কেরিয়ারে দ্রুত উন্নতি করার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

৭. ত্বকের সৌন্দর্য কমে: দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যা, সেই সঙ্গে ত্বকের অন্দরে কোলাজেনের মাত্রা কমতে শুরু করার কারণে সৌন্দর্যও হ্রাস পায়।

৮. হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়: একাধিক গবেষণার পর এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই যে ঘুমের সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা দৈনিক কম করে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসলে এমনটা না করলে ধীরে ধীরে হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হার্ট ফেলিওর, ইরেগুলার হার্ট বিট সহ আরও নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। [উৎস: ekushey-tv]

❑ রাত জেগে কাজ করছেন, সুস্থ থাকতে খান ৫ খাবার:

রাত জেগে কাজ করে থাকেন অনেকেই। কেউ অভ্যাসবশত আবার কেউ জীবনের তাগিদেই এমনটি করেন। দীর্ঘদিন রাত জেগে কাজ করলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শরীরে।
টানা রাত জাগলে শরীরে ঘুমের ঘাটতি তৈরি হয়। দিনের বেলায় পর্যাপ্ত ঘুমালেও এই ঘাটতি পূরণ হয় না। আর রাত জাগার সবচেয়ে বাজে প্রভাব হচ্ছে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, রক্তচাপে স্বাভাবিক না থাকা এবং কাজে মনোযোগ না থাকা। এ ছাড়া শরীর দুর্বল লাগে ও কর্মোদ্দীপনা নষ্ট হয়ে যায়। যারা রাত জাগেন, তাদের খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তেল-মসলা, কফিজাতীয় খাবার খাবেন না। এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত, যা শরীর ভালো রাখবে (ইনশাআল্লাহ)।

আসুন জেনে নিই কী খাবেন-

১. রাত জাগলে খেতে পারেন খেজুর ও খেজুরের গুড়। এ ছাড়া গুড় দিয়ে রুটি খেতে পারে। খেজুরে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ থাকে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি খেজুর বা খেজুরের গুড় খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

২. রাত জেগে খিদে পেলে কাজুবাদাম কিংবা পেস্তাবাদাম খেতে পারেন। এতে পেট ভরবে আর শরীরও ভালো থাকবে। সেই সঙ্গে ঘুমও ভালো হয়।

৩. ঘি শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। রাতে রুটি বা ভাতে এক চামচ ঘি খেতে পারেন। তবে কোলেস্টেরল থাকলে ঘি এড়িয়ে চলুন।

৪. রাতে কাজ করার সময় খেতে পারেন ফল বা ফলের রস। সফেদা, শাঁকআলু, আপেল, পেয়ারা, পেঁপে এসব ফল খেতে পারেন। খেতে পারেন দেশি ফলও।

৫. রাত জাগলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। রাতে কাজ করলে এক ঘণ্টা পর পর এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে ক্লান্তি দূর হবে। [jugantor]

আমি কাউকে মোবাইল ফোন উপহার দেয়ার পর সে যদি তা অন্যায় কাজে ব্যবহার করে তাহলে কি আমিও গুনাহগার হবো? - প্রশ্ন: আমার এক মামাতো ভাই আমার কাছে একটা ফোন চেয়েছে। বলেছি, আমি তোকে টাকা দিয়ে দিব। এখন আমি কী করব? আমি হুজুরের মুখে শুনেছি যে, কেউ যদি কাউকে ফোন গিফট করে তাহলে সে ওই ফোনে যত নোংরা ভিডিও দেখবে বা খারাপ কোন কিছু আপলোড করবে তাহলে সে দায়ী থাকবে। এতে আপনি কী বলেন আমাকে যদি একটু বলতেন।

উত্তর:
আপনি যদি কারো চরিত্র সম্পর্কে জানা থাকার কারণে আশঙ্কা করেন বা মনে প্রবল ধারণা সৃষ্টি হয় যে, আপনি তাকে মোবাইল দিলে সে এটি অন্যায় ও খারাপ কাজে ব্যবহার করবে তাহলে তাকে তা দেওয়া জায়েজ হবে না। কেননা এতে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ বলেন:


وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ

“সৎকর্ম ও তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির কাজে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা মায়িদা: ২)

কিন্তু যদি এ আশঙ্কা না থাকে বা মনে প্রবল ধারণা সৃষ্টি না হয় তাহলে তাকে দিতে আপত্তি নেই। শুধু সম্ভাবনা যথেষ্ট নয়। কারণ মোবাইল অনেক ভালো কাজেও ব্যবহৃত হয়। আর আমাদের কতর্ব্য, মানুষের প্রতি সু-ধারণা পোষণ করা এবং খারাপ ধারণা থেকে বেঁচে থাকা।
কিন্তু কারো প্রতি সু-ধারণা রেখে যদি মোবাইল দিয়ে থাকেন এরপর এসে যদি তা অন্যায় কাজে ব্যবহার করে তাহলে এর জন্য সে দায়ী থাকবে। এতে আপনার কোনো গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।
একই বিধান, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আল্লাহু আলাম।

দাওয়াতি ক্ষেত্রে উগ্রতা ও কঠোরতা নয়; প্রয়োজন নরম ভাষা ও সুন্দর ব্যবহার

ভূমিকা:

যে আল্লাহর পথে আহ্বান করে তার চেয়ে উত্তম কথা আর কারও নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,


وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ‎

"তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার আছে যে, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত?” [সূরা ফুসসিলাত/হা-মী-ম সাজদাহ: ৩৩]

আল্লাহর পথে আহ্বান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রসুলদের কাজ। সুতরাং যারা এ পথে কাজ করবে তাদের কথা-বার্তা ও আচরণে নবী রসুলদের আদর্শ প্রতিবিম্ব হতে হবে। কারণ তাঁরাই দুনিয়ার মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ অনুকরণীয় আদর্শ। আর তাদের আদর্শ হল, নম্রতা পূর্ণ কথা ও সুন্দর আচরণ। দাওয়াতি ময়দানে রুক্ষ ও কর্কশ ভাষা এবং উগ্র আচরণ কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
নিম্নে কুরআন-সুন্নাহ ও মনিষীদের উক্তির আলোকে বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

১. আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দাওয়াতের পদ্ধতি শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,


ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

“তোমার পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান কর হিকমত (প্রজ্ঞা) ও উপদেশপূর্ণ কথার মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন সুন্দরতম পন্থায়।” [সূরা নহল: ১২৫]
ইমাম বাগাভি বলেন, কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, ‘উপদেশপূর্ণ কথা’ হল,


هو القول اللين الرقيق من غير غلظة ولا تعنيف ا هـ
[تفسير البغوي : 5/52]

 

“নরম ও কোমল কথা-যাতে কঠোরতা ও উগ্রতা নেই।” [তাফসীরে বাগাবী ৫/৫২]

২. আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সবচেয়ে ঔদ্ধত্য ও অহংকারী কাফের বাদশাহ ফেরাউনের নিকট মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামকে দাওয়াত দেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে বলেন,


فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا

“অতঃপর তোমরা তাকে নরম ভাষায় কথা বলো।” [সূরা ত্ব-হা: ৪৪]

৩. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ ও শ্রেষ্ঠ মানুষ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথাবার্তা ও আচরণ কেমন ছিল আল্লাহ তাআলা তার বিবরণ দিচ্ছেন:

بِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّـهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّـهِ ۚ

“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রুক্ষ ও কঠিন হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

৪. প্রখ্যাত সাহাবী জারির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি:


من يحرم الرفق يحرم الخير كُله

“যে ব্যক্তি নম্র আচরণ হতে বঞ্চিত সে সকল প্রকার কল্যাণ হতে বঞ্চিত।” [সহীহ মুসলিম]

৫. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,


" ِنَّ الرِّفْقَ لا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلا زَانَهُ ، وَلا نُزِعَ مِنْ شَيْءٍ إِلا شَانَهُ

"নম্রতা ও কোমলতা যে জিনিসেই থাকবে তা সুন্দর ও সুষমা মণ্ডিত হবে আর কঠোরতা যে জিনিসে থাকবে তা কুৎসিত ও অকল্যাণকর হবে।" [সহীহ মুসলিম, আয়েশা রা. হতে বর্ণিত]

❍ একটি প্রসিদ্ধ আরবি প্রবাদ বাক্য হল:


من لانت كلمته وجبت محبته


“যার ভাষা নম্র হয় তার প্রতি অপরিহার্য ভাবে ভালবাসা সৃষ্টি হয়।”

❍ আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন, মানুষের অন্তরে প্রভাব ফেলার জন্য সবচেয়ে উপকারী পদ্ধতি দুটি:

১) নম্র আচরণ
২) কল্যাণ কামনা
- এর মাধ্যমে অপরিচিত লোকের হৃদয় জয় করা যায়
- সাথী-বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় ও ভালবাসা স্থায়ী হয়।
- আর শত্রুর ক্রোধের আগুন নির্বাপিত হয় এবং তার ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়।
[মাদারিজুস সালেকীন, ইমাম ইবনুল কাইয়েম, ২/৫৫১]


❍ আপনি দাওয়াতি কাজ করতে চান কিন্তু প্রতিপক্ষকে এমন ভাষায় কথা বলেন, যার কারণে সে ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে সে আপনার কথা শুনবে না।

মা’মার বিন সোলাইমান বলেন, আমি আমার পিতা সোলাইমান [মৃত্যু: ১৪৩হি.] কে বলতে শুনেছি: “যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে রাগিয়ে দাও সে কখনো তোমার কথা শুনবে না।” [আল আদাব আশ শারঈয়াহ, মাকদেসী ১/১৯৪]
বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, রাহবার এবং একজন দরদি ও সফল দাঈ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,


" هذا العصر عصر الرفق والصبر والحكمة , وليس عصر الشدة . الناس أكثرهم في جهل , في غفلة إيثار للدنيا ,
فلا بد من الصبر , ولا بد من الرفق حتى تصل الدعوة , وحتى يبلغ الناس وحتى يعلموا . ونسأل الله للجميع الهداية
  "

“বর্তমান যুগ হল, নম্রতা, ধৈর্য এবং প্রজ্ঞার যুগ; কঠোরতার যুগ নয়। অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞতা, অবহেলা ও পার্থিব স্বার্থপরতায় ডুবে রয়েছে।
অতএব অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে, অবশ্যই নম্র ব্যবহার করতে হবে যেন দাওয়াত পৌঁছে যায়..যেন মানুষের কাছে (আল্লাহর দীন) পৌঁছানো যায়..যেন মানুষ (সঠিক দীন) জানতে পারে।
আল্লাহর নিকট সকলের জন্য হেদায়েত প্রার্থনা করছি।” [মাজমু ফতোয়া/ফতোয়া সমগ্র, ৮/৩৭৬]


সুতরাং আসুন, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহর পথে দাওয়াতের স্বার্থে আমাদের ব্যক্তিগত সকল রাগ-অভিমান, আক্রোশ ইত্যাদিকে দমন করে আমাদের আচরণ-ব্যবহারকে আরও সুন্দর, আকর্ষণীয় আর ভাষাকে আরও কোমল ও নম্র করি। তাহলে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের দাওয়াতি কর্মে বরকত দান করবেন। ঘুণে ধরা সমাজকে আমরা পরিবর্তন করতে সক্ষম হব। সেই সাথে অর্জন করব, আখিরাতে দয়াময় আল্লাহর অবারিত পুরস্কার। নিশ্চয় আল্লাহ তাওফিক দানকারী।

গর্ভবতী মহিলাদেরকে সরকারি যে অনুদান বা ভাতা দেওয়া হয় তা নেওয়া কি জায়েজ?​

বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্ব কালীন ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতা গ্রহণের কয়েকটি শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে, পরিবারের আয় মাসিক সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা হওয়া। (যা দারিদ্র্যতার সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে)।
[সূত্র: বাংলাদেশ সরকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মাতৃত্বকাল ভাতা কর্মসূচী-mowca-portal-gov bd]

অতএব যে ব্যক্তি উক্ত ভাতা গ্রহণের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলীর যথাযথভাবে পূরণ করতে সক্ষম হবে সে স্বাচ্ছন্দ্যে তা গ্রহণ করতে পারে। কেননা এটি সরকারি অনুদান।
বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, শীর্ণকায় ও খর্বাকার শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরিতে অবদানের উদ্দেশ্যে এই অনুদান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সুতরাং নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে একজন দরিদ্র মার জন্য তা গ্রহণ করতে কোন বাধা নেই। তবে কোনোভাবেই শর্ত লঙ্ঘন করে বা দুর্নীতির মাধ্যমে এই অনুদান গ্রহণ করা বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিকারী এবং দুর্নীতিতে সহযোগিতাকারী দুজন্যই আল্লাহর নিকট গুনাহগার বলে বিবেচিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইনেও অপরাধী বলে গণ্য হবে।
অনুরূপভাবে সরকার যদি এই ভাতা গ্রহণের জন্য ইসলামি শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক কোনও শর্তারোপ করে তাহলে ভাতা পাওয়ার জন্য উক্ত শর্ত পূরণ করা জায়েজ নেই।

এই বিধান সরকার কর্তৃত্ব প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সর্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ফতোয়া: সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি বিশ্ববরেণ্য আলেম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. [মৃত্যু: ১৯৯ খৃষ্টাব্দ]-এর ফতোয়া:
যাদের অভাব নেই তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার জন্য নিবন্ধনের বিধান

প্রশ্ন: যার অভাব নেই তার জন্য কি ‘সামাজিক নিরাপত্তা’ গ্রহণ করা জায়েজ?
উত্তর:


الذي نعلم أن الحكومة وفقها الله جعلت الضمان الاجتماعي للفقير، فالذي لا تتوفر فيه الشروط ليس له أخذ الضمان وليس له أن يكذب، أما الذي يكذب ويزعم أنه فقير أو تزعم أنها ليست ذات زوج وهي ذات زوج أو ما أشبه ذلك فليس له أخذ ذلك.
فالحاصل: أنه لا يجوز أخذ الضمان إلا للذي توافرت فيه الشروط التي وضعتها الدولة، هذا هو الواجب عليه، الواجب أن يتقي الله المؤمن وأن يحذر أخذ شيء لا يحل له، الله المستعان

“যেটা আমরা জানি, সরকার (আল্লাহ তাদেরকে তাওফিক দান করুন) গরিবদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং যার মধ্যে শর্তাবলী যথাযথভাবে পাওয়া যাবে না তার জন্য এই ‘নিরাপত্তা’ নেওয়ার অধিকার নেই। মিথ্যা বলাও তার জন্য বৈধ নয়।
সুতরাং সে ব্যক্তি এই নিরাপত্তা গ্রহণ করবে যার মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী বিদ্যমান রয়েছে। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে বা মিথ্যা দাবি করে যে, সে দরিদ্র অথবা দাবী করে যে, তার স্বামী নেই অথচ তার স্বামী আছে ইত্যাদি তার জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ নয়।
মোটকথা, যার মধ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যাবে সে ছাড়া অন্য কারও জন্য নিরাপত্তা অনুদান গ্রহণ করা জায়েজ নয়। এটাই তার উপর অত্যাবশ্যক। একজন ইমানদার ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব হলো, সে আল্লাহকে ভয় করবে এবং এমন কিছু গ্রহনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে যা তার জন্য হালাল নয়। আল্লাহ সাহায্য করুন।” [binbaz. org]

আল্লাহু আলাম।

প্রশ্ন: সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ গুলো কী কী? সংসার ভাঙ্গার একমাত্র করণ কি স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়া? কারণ আমার স্বামী বলেন যে, "নারীদের সংসার ভাঙতো না যদি তারা পুরুষদেরকে বাইরে পরকীয়া করতে না দিয়ে একাধিক বিয়ে করতে দিত।" আমি ইসলাম পালনে নতুন, তাই স্পষ্টভাবে এসব জানি না। আমার স্বামীর এ কথা কি ইসলামের আলোকে সঠিক? আরেকটি প্রশ্ন হল, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে একজন স্ত্রীর কী করা উচিত?

নিম্নে আপনার দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

১. আপনার স্বামীর উক্ত কথাটি পরিপূর্ণ সঠিক নয়। অর্থাৎ স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে না দেওয়াই সংসার ভাঙ্গার একমাত্র কারণ নয়। তবে অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ।
নিম্নে সংসার ভঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করা হলো:
মূলত সংসার ভঙ্গের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। কখনো স্বামীর কারণে, কখনো স্ত্রীর কারণে আবার কখনো উভয়ের কারণে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
ক. স্বামীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
অনেক সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্ত্রীকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তার প্রতি শারীরিক বা মানসিক জুলুম-নির্যাতন করা, তার প্রাপ্য হক আদায় না করা, তার সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করা, পরকীয়ায় লিপ্ত থাকা, শারীরিক অক্ষমতা, মাদকাসক্তি ও নেশা গ্রহণ, এমন কোনও বদ অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যা থাকা যা স্ত্রী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। ইত্যাদি নানা কারণে সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে।

খ. স্ত্রীর পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
অনেক সময় স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী বা তার পরিবারের প্রতি খারাপ ব্যবহার, স্বামীর আনুগত্যহীনতা, বিলাসিতা ও উচ্চমাত্রায় ভোগের মনোভাব, অসহিষ্ণু আচরণ, ঝগড়া-ঝাটি করা, পরকীয়ার সম্পর্ক থাকা ইত্যাদি কারণে সংসার ভাঙ্গে।
আবার অনেক মেয়ে বিয়ের আগে মনের মধ্যে স্বামী সম্পর্কে আকাশ-কুসুম কল্পনা করে কিন্তু বাস্তবে তেমন না পেলে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। এতেও অনেক সময় সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে। তার মধ্যে জটিল কোন রোগ-ব্যাধিও সংসার ভাঙ্গার কারণ হয়। আবার স্বামীর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধা দেওয়াও সংসার ভাঙ্গার অন্যতম কারণ হতে পারে।

গ. উভয়ের পক্ষ থেকে যে সব কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে:
স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকেও কিছু কারণে সংসার ভাঙ্গতে পারে। যেমন: বিয়ের পর সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া বা একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ না থাকা, (অবশ্য এর পেছনেও উপরোক্ত কিছু কারণ দায়ী) কোনোভাবেই মন-মানসিকতার দিক থেকে তাদের মাঝে মিলমিশ না হওয়া, ধৈর্যহীনতা, অতিরিক্ত রাগ, দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেওয়া, রূপ-সৌন্দর্য, স্মার্টনেস, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি কারণে অহংকার করা ইত্যাদি।
এ ছাড়াও স্বামী কিংবা স্ত্রী যদি এমন সব পাপাচারে লিপ্ত হয় যাতে তাদের উপর থেকে আল্লাহর রহমত ও বরকত উঠে যায়, তাদের মাঝে শয়তান অনুপ্রবেশ করে এবং আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হন। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা। যা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙ্গা পর্যন্ত গড়ায়। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।

২. স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে শরিয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রীর করণীয় কী?

কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ের ইচ্ছে করে বা তার একাধিক বিয়ে করা তার জন্য প্রয়োজনীয় হয় তাহলে কোন স্ত্রীর জন্য তাতে বাধা দেওয়া বা এ ক্ষেত্রে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া বা শারীরিক-মানসিক ইত্যাদি কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ এই অধিকার স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাকে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,


وَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تُقۡسِطُواْ فِي ٱلۡيَتَٰمَىٰ فَٱنكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُواْ فَوَٰحِدَةً أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُواْ

"তাহলে তোমরা নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার বিয়ে করো। আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার সম্ভাবনা বেশি।" [সূরা নিসা: ৩]

সুতরাং এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া আল্লাহ প্রদত্ত অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল-যা মারাত্মক অন্যায়।
তবে হ্যাঁ, একাধিক বিয়ের জন্য পুরুষের শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকা এবং স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করার শর্তারোপ করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তি যদি এই শর্ত পালন করতে সক্ষম হবে না বলে মনে করে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা হারাম।

স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে স্ত্রী এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য ধারণ করবে। কোনভাবেই ধৈর্যধারণ সম্ভব না হলে সে খোলা তালাকের মাধ্যমে সংসার ত্যাগ করবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই কারণে স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা বা তাকে কোনভাবেই কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। কারণ ইসলামে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া গালাগালি করা হারাম ও কাবিরা গুনাহ। আর তা যদি হয় স্বামীর সাথে তাহলে তা আরও বেশি গর্হিত কাজ। কারণ মহান আল্লাহ স্বামীকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,


ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا

"পুরুষরা নারীদের কর্তা। কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাজতে তারা হেফাজত করে।
আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর । যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না । নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।" [সূরা নিসা: ৩৪]
হাদিস সে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদার অনুমতি দেওয়া হত তাহলে স্ত্রীদেরকে আদেশ করা হতো তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে। এ বিষয়ে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।

মোটকথা, একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ করার পাশাপাশি তার প্রতি কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অনুরূপভাবে একজন স্ত্রীর জন্য (বৈধ বিষয়ে এবং সামর্থ্যের মধ্যে) তার স্বামীর আনুগত্যের পাশাপাশি তার প্রতিও কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রী যদি তার সঙ্গীর সাথে সদাচারণের পাশাপাশি একে অপরের প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নির্দেশিত দায়িত্ব-কর্তব্য ও হকগুলো সঠিক আদায় করে তাহলে সংসার ভাঙ্গার পরিমাণ খুবই কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। এতে কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহ আমাদের দাম্পত্যগুলোকে মধুময় করে দিন এবং স্বামী-স্ত্রীকে সব ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »