আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١﴾ [الروم: ٢١]
“আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা চিন্তা করে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢﴾ [النور: ٣٢]
“আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
ইবন কাসির রহ. বলেন: এ আয়াত বিবাহ করার নির্দেশ প্রদান করছে। কতক আলেম বলেন: যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য রয়েছে তাদের বিয়ে করা ওয়াজিব। দলীল হিসেবে তারা নিম্নোক্ত হাদীসের বাহ্যিক অর্থকে পেশ করেন:
»يا معشر الشباب، من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء«
“হে যুবকের দল, তোমাদের থেকে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ, তা চোখকে অবনত ও লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখার উপকরণ। যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়ামকে আবশ্যক করে নেয়। কারণ, সিয়াম যৌবনকে কর্তনকারী”।[1]
অতঃপর তিনি বলেন: বিয়ে ধনী হওয়ার একটি উপকরণ। দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِ﴾ [النور: ٣٢]
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উল্লেখ করা হয়, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তোমাদেরকে বিয়ে করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা তোমরা বাস্তবায়ন কর, তিনি তোমাদেরকে সচ্ছলতার যে ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করবেন। আল্লাহ বলেন:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ﴾ [النور: ٣٢]
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা বিবাহ দ্বারা প্রাচুর্য অন্বেষণ কর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ﴾ [النور: ٣٢]
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
বাণীটি ইবন জারির উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ কথা বগভী উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। ইবন কাসির: (৫/৯৪,৯৫) এর আলোচনা সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়ায়’: (৩২/৯০) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য বিবাহ করা, তালাক দেওয়া এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীকেও বিবাহ করা হালাল করেছেন অপর স্বামীর বিয়ে থেকে তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর। খ্রিস্টানরা তাদের বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ওপর বিয়ে হারাম করেছে, আবার যার জন্য বিয়ে হালাল করেছে তাকে তারা তালাক দেওয়ার অনুমতি দেয় নি। ইয়াহূদীরা তালাককে বৈধ বলে, তবে তালাকপ্রাপ্তা নারী অপর স্বামীকে বিয়ে করলে প্রথম স্বামীর জন্য স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায়। মুদ্দাকথা খ্রিস্টানদের নিকট তালাক নেই; ইয়াহূদীদের নিকট অপর স্বামীর নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ফিরে আসার সুযোগ নেই। আর আল্লাহ মুমিনদের জন্য তালাক ও ফিরিয়ে আনা উভয় হালাল করেছেন। সমাপ্ত।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৩/১৪৯) গ্রন্থে দাম্পত্য জীবনের এক বিশেষ উদ্দেশ্য সহবাসের উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “মূলত তিনটি কারণে স্ত্রীগমন বৈধ, যা সহবাসের মূল উদ্দেশ্য:
এক. বংশ সংরক্ষণ করা ও মানব জাতির পরম্পরা অব্যাহত রাখা, যতক্ষণ না এ জগতে তাদের সংখ্যা পূর্ণ হয় যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করতে চান।
দুই. বীর্য বের করে দেওয়া, যা জমিয়ে রাখা পুরো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তিন. যৌন চাহিদা পূর্ণ করা, আনন্দ উপভোগ ও নি‘আমত আস্বাদন করা।” সমাপ্ত।
বিয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে, সবচেয়ে বড় উপকার যিনা থেকে সুরক্ষা ও হারাম থেকে দৃষ্টিকে অবনত রাখা।
আরেকটি হচ্ছে: সন্তান লাভ করা ও মানব প্রজন্ম সংরক্ষণ করা।
আরেকটি হচ্ছে: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রশান্তি ও মানসিক প্রশস্তি লাভ করা।
আরেকটি হচ্ছে: একটি ভালো পরিবার গড়ার নিমিত্তে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর একযোগে কাজ করা, যা মুসলিম সমাজের এক মজবুত বুনিয়াদ।
আরেকটি হচ্ছে: স্বামীর নিজ স্কন্ধে স্ত্রীর দায়ভার ও নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করা; স্ত্রীর স্বামীর ঘরের কাজ আঞ্জাম দেওয়া এবং তার শরীর ও প্রকৃতির সাথে মানানসই কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। সমাজ ও নারী জাতির শত্রুরা যেরূপ দাবি করে কাজের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সঙ্গী সেটি নয়। তারা নারীকে ঘর থেকে বের করে তার সঠিক দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। নারীর স্কন্ধে পুরুষের কাজ আর নারীর কাজ তারা পুরুষের স্কন্ধে চাপিয়েছে। যার পরিণতিতে পরিবার বিনষ্ট হচ্ছে ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়ন দেখা দিচ্ছে, যে কারণে তারা কখনো বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয় কিংবা কষ্টের মাঝে দুর্বিসহ জীবন বয়ে বেড়ায় আমৃত্যু।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন আশ-শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৩/৪২২) এ বলেন: “জেনে রাখ, আল্লাহ আমাকে ও তোমাকে তার সন্তুষ্টি ও পছন্দের বিষয় গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন।, সকল নিয়ম-কানুন ও কর্মক্ষেত্রের সকল ময়দানে নারী-পুরুষকে সমান করার ভ্রান্ত অশুভ ও কুফুরী চিন্তাধারা সুস্থবোধ, বিবেক, আসমানি অহি ও আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত পরিপন্থী, মনুষ্য সমাজে যার কুফল, বিশৃঙ্খলা ও ফ্যাসাদ কারো নিকট অস্পষ্ট নেই, তবে আল্লাহ যার দৃষ্টি হরণ করেছেন সে ব্যতীত। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সমাজ বিনির্মাণের অংশ গ্রহণ হিসেবে নারীকে তার বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যের কারণে এমন কিছু কাজের উপযুক্ত করেছেন, যা সে ব্যতীত কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন গর্ভধারণ, বাচ্চা প্রসব, দুগ্ধপান, বাচ্চাদের লালন-পালন, ঘরের দেখভাল ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ-কর্ম আঞ্জাম দেওয়া। যেমন রান্না করা, রুটি তৈরি করা ও ঘর ঝাড়ুসহ ইত্যাদি। নারীরা ঘরের ভেতর পর্দা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতার মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে বাস করে ও মনুষ্য মূল্যবোধের অধীন থেকে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে যে খেদমত আঞ্জাম দেয়, তা কোনো অংশে পুরুষের অর্থ উপার্জন অপেক্ষা কম নয়। কাফের মূর্খ অথর্ব জনগোষ্ঠী ও তার অনুসারীরা দাবি করে নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করবে যেমন পুরুষরা করে। এটি তাদের অধিকার! যদিও মাসিক ঋতু ও বাচ্চা প্রসব পরবর্তী সময় নারী কষ্টকর কোনো কাজ করতে সক্ষম নয়, বাহ্যত আমরা তাই দেখি। যখন স্বামী ও স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়, ঘর সম্পূর্ণ অরক্ষিত থেকে যায়, যেমন ছোট বাচ্চাদের লালন-পালন, দুগ্ধপান ও স্বামী ঘরে ফিরে আসার পর তার পানাহার প্রস্তুত করা ইত্যাদি। যদি স্ত্রীর কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য কাউকে ভাড়া করা হয়, ভাড়াটে (সেবক-সেবিকা) তার ঘরে বড় সমস্যার সৃষ্টি করে, যা দূর করার জন্য সে ঘর থেকে বের হয়েছে, পরিণতি হিতে বিপরীত হয়। অধিকন্তু নারীদের ঘর ত্যাগ করা ও শ্রম বিক্রির মাঝে দীন নষ্ট ও সম্মানকে ছুড়ে মারা ব্যতীত কিছুই নেই”। সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন, আল্লাহকে ভয় কর, প্রতারণামূলক এসব কথায় ধোঁকা খেয়ো না, যারা তাদের কথায় প্রতারিত হয়েছে তাদের বিফলতা ও বিষণ্ণতার বাস্তবতাই যথেষ্ট। অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বড় দলীল।
হে মুসলিম বোন, যতক্ষণ তোমার মাঝে যৌবন বিদ্যমান, তুমি পুরুষদের চাহিদার পাত্র দ্রুত বিয়ের প্রতি অগ্রসর হও। পড়া-শুনা চালিয়ে যাওয়া কিংবা চাকরির পাওয়ার আশায় কখনো বিয়ে বিলম্ব কর না। কারণ, উপযুক্ত বিয়েতে তোমার কল্যাণ ও প্রশান্তি। এটিই তোমার যে কোনো শিক্ষা ও চাকরির উত্তম বিনিময়, তোমার চাকরি ও পড়া-শোনা যতই হোক কখনো বিয়ের সমান নয়।
তুমি তোমার ঘরের কাজ ও সন্তান লালন-পালন করার দায়িত্ব আঞ্জাম দাও। এটিই তোমার মূল কাজ। যার দ্বারা তোমার জীবন সাফল্যমণ্ডিত হবে সেটিই গ্রহণ কর, তার বিকল্প অনুসন্ধান করো না। কারণ, তার বিকল্প নেই। দীনদার পুরুষের বিয়ের প্রস্তাবকে কখনো হাত ছাড়া কর না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا جاءكم من ترضون دينه وخلقه فأنكحوه، إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد«
“যখন তোমাদের কাছে এমন কেউ আসে, যার দীন ও চরিত্র তোমরা পছন্দ কর, তাকে বিয়ে করিয়ে দাও, যদি না কর জমিনে ফিতনা ও ফাসাদ হবে”।[2]
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৮৫
বিয়ের উপযুক্ত নারী তিন প্রকার:
ক. নাবালিকা অবিবাহিত কিশোরী।
খ. সাবালিকা অবিবাহিত নারী।
গ. বিবাহিতা নারী।
প্রত্যেক প্রকার নারীর জন্য রয়েছে পৃথক বিধান।
১. নাবালিকা ছোট বাচ্চাকে বাবা তার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে দিবে, এতে কারো দ্বিমত নেই। কারণ, সে এখনো অনুমতির মালিক হয় নি। দ্বিতীয়ত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ছোট মেয়ে আয়েশাকে রালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিয়ে দিয়েছেন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর, নয় বছর পূর্ণ হলে তাকে বাসর ঘরে প্রেরণ করেন।[1]
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২৮, ১২৯) গ্রন্থে বলেন: “এ হাদীস প্রমাণ করে যে, বাবার জন্য নিজের মেয়েকে সাবালক হওয়ার পূর্বেই বিয়ে দেওয়া জায়েয। তিনি আরো বলেন: এ হাদীস প্রমাণ করে ছোট মেয়েকে বড়দের সাথে বিয়ে দেওয়া বৈধ। ইমাম বুখারী এ মাস‘আলার জন্য একটি অধ্যায় রচনা করে তাতে তিনি আয়েশার হাদীস উল্লেখ করেছেন। ইবন হাজার আসকালানী রহ. ‘ফাতহুল বারী’তে এ মাস‘আলায় উম্মতের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন।” সমাপ্ত।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৬/৪৮৭) গ্রন্থে বলেন: ইবনুল মুনযির বলেছেন: যাদের ইলম আমরা অর্জন করেছি, তারা সবাই একমত যে, বাবার জন্য নিজের ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়া বৈধ, যদি সমমর্যাদা সম্পন্ন পুরুষের নিকট বিয়ে দেওয়া হয়”। সমাপ্ত।
আমি (গ্রন্থকার) বলছি: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ছোট মেয়ে আয়েশাকে মাত্র ছয় বছর বয়সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিয়ে দেন, এ ঘটনা তাদেরকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে, যারা বড় ছেলের নিকট ছোট মেয়ের বিয়েকে অস্বীকার করে, বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অপরাধ গণ্য করে। এটি হয়তো তাদের মূর্খতা কিংবা তারা স্বার্থান্বেষী ও বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের একটা অংশ।
২. সাবালিকা অবিবাহিত নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তবে চুপ থাকাই তার অনুমতি। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ولا تنكح البكر حتى تستأذن، قالوا: يا رسول الله فكيف إذنها ؟ قال: أن تسكت«
“বাকেরা (অর্থাৎ সাবালিকা অবিবাহিতা) মেয়েকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তার অনুমতির পদ্ধতি কী? তিনি বলেন: তার চুপ থাকা”।[2]
অতএব, বিয়েতে তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন, যদিও তাকে বিয়ে দেয় তার বাবা, আলেমদের দু’টি মত থেকে এটিই অধিক বিশুদ্ধ।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৯৬) গ্রন্থে বলেন: “জমহুর সালাফের অভিমত এটিই। ইমাম আবু হানিফার মাযহাব ও ইমাম আহমদের একটি মত এরূপ। এ অভিমত মোতাবেক আমরা আল্লাহর ইবাদত আঞ্জাম দেই, তার বিপরীত বিশ্বাস করি না। এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক ফয়সালা”। সমাপ্ত।
৩. বিবাহিতা নারী স্বামীশূণ্যা হলে তাকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তার অনুমতির প্রকাশ হবে কথার দ্বারা, যা অবিবাহিতা নারীর বিপরীত, কারণ অবিবাহিতা নারীর অনুমতির প্রমাণ হচ্ছে চুপ থাকা।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৬/৪৯৩) গ্রন্থে বলেন: তবে বিবাহিতা নারীর অনুমতির প্রকাশ হবে কথার মাধ্যমে, এতে আলেমদের দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। দ্বিতীয়ত মুখ দ্বারা মানুষ তার অন্তরের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। অতএব, যেখানে অনুমতির প্রয়োজন সেখানে মুখের কথার সমতুল্য কিছু নেই। সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (৩২/৩৯ ও ৪০) বলেন: “নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত কারো পক্ষেই বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, যদি সে নারাজ থাকে বিয়ের জন্য তাকে বাধ্য করবে না, তবে ছোট অবিবাহিত মেয়ে ব্যতীত। কারণ, তার বাবা তাকে বিয়ে দিবে, তার কোনো অনুমতি নেই। আর বিবাহিতা সাবালিকা নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বাবা কিংবা কারো জন্য বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, এটিই মুসলিমদের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত মাস‘আলা। অনুরূপ সাবালিকা অবিবাহিতা নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বাবা ও দাদা ছাড়া কারো জন্য বিয়ে দেওয়া বৈধ নয় মুসলিমদের ঐকমত্যে, তবে বাবা কিংবা দাদার উচিৎ তাদের থেকে অনুমতি গ্রহণ করা।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৪৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০৭; নাসাঈ, হাদীস নং ২২৬৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৯২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৭১; আহমদ (২/৪২৪); দারেমী, হাদীস নং ১১৮৬
বিশুদ্ধ মতে তার অনুমতি নেওয়া ওয়াজিব। মেয়ের অভিভাবকের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা। মেয়েকে কেমন ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে, ছেলে তার সমকক্ষ কি না বিবেচনা করা, কারণ বাবা মেয়েকে বিয়ে দিবে মেয়ের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে নয়।” সমাপ্ত।
নারীকে তার উপযুক্ত স্বামী গ্রহণ করার অর্থ তাকে মুক্ত স্বাধীন ছেড়ে দেওয়া নয় যে, যাকে ইচ্ছা সে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে, যার বিয়ের খারাপ প্রভাব পড়ে তার আত্মীয় ও পরিবারের ওপর। নারী অভিভাবকের সাথে সম্পৃক্ত, অভিভাবক তার ইচ্ছাকে দেখবে এবং তাকে সঠিক পথ বাতলাবে, তার বিবাহের দায়িত্ব নিবে, সে নিজে নিজের আকদ সম্পন্ন করবে না, যদি সে নিজের আকদ নিজে সম্পন্ন করে বাতিল বলে গণ্য হবে। কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে:
»أيما امرأة نكحت نفسها بغير إذن وليها فنكاحها باطل، فنكاحها باطل، فنكاحها باطل«
“যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল”।[1]
ইমাম তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান। অন্যান্য সুনান গ্রন্থে রয়েছে:
»لا نكاح إلا بولي«
“অভিভাবক ব্যতীত কোনো বিয়ে নেই”।[2]
এ দু’টি হাদীস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদীস প্রমাণ করে যে, অভিভাবক ব্যতীত নারীর বিয়ে বৈধ নয়। বিয়ে নেই অর্থ বিয়ে শুদ্ধ নয়। ইমাম তিরমিযী বলেন: আহলে ইলমগণ এ হাদীসের ওপর আমল করেন। যেমন উমার, আলী, ইবন আব্বাস ও আবু হুরায়রা প্রমুখগণ। ফহীহ তাবে‘ঈদের থেকেও অনুরূপ বর্ণিত। তারা বলেছেন: অভিভাবক ব্যতীত কোনো বিয়ে নেই। এটিই ইমাম শাফেঈ, আহমদ ও ইসহাকদের কথা”।[3]
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ১১০১; আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৮৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৮১; আহমদ (৪/৪১৮); দারেমী, হাদীস নং ২১৮২
[3] আল-মুগনি: (৬/৪৪৯)
নারীদের জন্য দফ বা এক পার্শ্বস্থ ঢোল বাজানো মুস্তাহাব, যেন বিয়ে প্রচার হয় ও মানুষ জেনে যায়। নারীরা নিজেদের মাঝে দফ বাজাবে বাদ্য-যন্ত্র ও সুরেলা সঙ্গীত ব্যতীত। বিয়ে উপলক্ষে নারীদের কবিতা ও গজল আবৃতি করা দোষণীয় নয়, যদি পুরুষরা না শুনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»فصل ما بين الحلال والحرام الدف والصوت في النكاح«
“হালাল ও হারাম বিয়ের পার্থক্য হচ্ছে দফ বাজানো ও আওয়াজ করা”।[1]
শাওকানী ‘নাইলুল আওতার’: (৬/২০০) গ্রন্থে বলেন: “হাদীস প্রমাণ করে যে, বিয়ের অনুষ্ঠানে দফ বাজানো ও কবিতা ইত্যাদি আবৃতি করা বৈধ, যেমন أتيناكم أتيناكم জাতীয় কবিতা, তবে প্রবৃত্তকে উসকে দেয় এমন গান নিষিদ্ধ, যেখানে সৌন্দর্যের বর্ণনা, অশ্লীলতার প্রকাশ ও মদের প্রতি আসক্তি রয়েছে। যা বিবাহ এবং বিবাহের বাইরে সর্বদাই হারাম, অনুরূপ অন্যান্য হারাম গান-বাদ্যও হারাম।” সমাপ্ত।
হে মুসলিম নারী, বিয়ে উপলক্ষে অলঙ্কার ও পোশাক-পরিচ্ছদ ক্রয় করে অপচয় করো না। অতিরিক্ত পোশাক ও অলঙ্কার অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত, যার থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কুরআনুল কারীমে এসেছে, তিনি অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। যেমন,
﴿ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ٣١ ﴾ [الاعراف: ٣١]
“আর তোমরা অপচয় কর না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
সুতরাং তুমি মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং কেনা-কাটার প্রতিযোগিতা ত্যাগ কর।
হে মুসলিম নারী, রেওয়াজ মোতাবেক স্বামীর আনুগত্য করা তোমার ওপর ওয়াজিব। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا صلت المرأة خمسها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلها دخلت من أي أبواب الجنة شاءت«
“নারী যদি তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমযান মাসের সিয়াম রাখে, স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং নিজ স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে”।[1]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»لا يحل لامرأة أن تصوم وزوجها شاهد إلا بإذنه، ولا تأذن في بيته إلا بإذنه«
“কোনো নারীর পক্ষে বৈধ নয় স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ব্যতীত সিয়াম রাখা এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে প্রবেশাধিকার দেওয়া।”[2]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه، فلم تأته، فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح«
“স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে ডাকে সাড়া না দেয়, ফলে সে তার ওপর গোস্বা নিয়ে রাত যাপন করে, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফিরিশতারা নারীর ওপর লা‘নত করে”।[3]
বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»والذي نفسي بيده ما من رجل يدعو امرأته إلى فراشه، فتأبى عليه إلا كان الذي في السماء ساخطا عليها حتى يرضى عنها«
“যার হাতে আমার নফস সে সত্ত্বার কসম, যে কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আসমানে বিদ্যমান সত্ত্বা (অর্থাৎ আল্লাহ) অবশ্যই তার ওপর রাগান্বিত থাকেন, যতক্ষণ না স্বামী তার স্ত্রীর ওপর সন্তুষ্ট হয়”।[4]
স্ত্রীর ওপর স্বামীর একটি হক হচ্ছে, তার ঘর দেখাশুনা করা এবং তার অনুমতি ব্যতীত তার ঘর থেকে বের না হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها«
“নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীলা এবং তাকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করা হবে”।[5]
স্ত্রীর ওপর স্বামীর আরো একটি হক হচ্ছে, ঘরের কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া এবং তাকে সেবিকা আনতে বাধ্য না করা, যা তার জন্য কষ্টকর এবং যার ফলে সে নিজে বা তার সন্তান-সন্ততিরা ফেতনার সম্মুখীন হতে হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (৩২/২৬০ ও ২৬১) বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ﴾ [النساء: ٣٤]
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারিনী ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ হিফাযত করেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪] এ আয়াতের দাবি অনুযায়ী স্ত্রীর ওপর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, সেটি তার সাথে সফর হোক, তার সাথে আনন্দ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয় হোক বা অন্য যে কোনো চাহিদা হোক। এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতও প্রমাণ করে।” সমাপ্ত।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘হাদইউন নববী’: (৫/১৮৮ ও ১৮৯) গ্রন্থে বলেন: “যেসব ইমামদের নিকট স্ত্রীর ওপর স্বামীর খিদমত করা ওয়াজিব, তারা বলেন, যাদের (অর্থাৎ যে আরবদের) ভাষায় আল্লাহ তা‘আলা সম্বোধন করেছেন তাদের নিকট খিদমত একটি মা‘রূফ (অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক) হক। পক্ষান্তরে স্ত্রীকে বিনোদন প্রদান করা, তার খিদমত স্বামীর আঞ্জাম দেওয়া, স্বামীর ঝাড়ু দেওয়া, রুটি তৈরি করা, আটার খামির বানানো, ধোয়া, বিছানা করা ও বাড়ির খিদমত আঞ্জাম দেওয়া ইত্যাদি মুনকার (অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম বহির্ভূত) কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]
“আর নারীদের জন্য রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার, যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ﴾ [النساء: ٣٤]
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]
যদি নারী পুরুষের সেবা না করে, বরং পুরুষ নারীর সেবা করে, তাহলে নারী তত্ত্বাবধায়ক হবে পুরুষের উপর... অতঃপর বলেন: সন্দেহ নেই আল্লাহ স্বামীর ওপর স্ত্রীর খরচ, পোশাক ও বাসস্থানের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তাকে ভোগ করা, তার খিদমত গ্রহণ করা ও বিধি মোতাবেক তার সেবার বিনিময়ে।
অধিকন্তু মানুষের সাধারণ লেনদেন ও চুক্তিগুলো সমাজে প্রচলিত বিধি ও নীতির ওপর ভিত্তি করেই হয়, (অতএব, বিয়ে পরবর্তী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও সে নীতি মোতাবেক হবে এটিই স্বাভাবিক)। প্রচলিত নীতি হচ্ছে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর খিদমত করা ও তার ঘরের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া। তিনি আরো বলেন: এ ক্ষেত্রে সম্ভ্রান্ত ও সাধারণ, ধনী ও গরীবের মাঝে বিভাজন করা দুরস্ত নয়। এই দেখ দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম নারী ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা স্বামীর খিদমত করতেন, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সাংসারিক কাজের অভিযোগ করেন, তিনি তার অভিযোগ আমলে নেন নি।” সমাপ্ত।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৬; আহমদ (২/৩১৬)
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪১; আহমদ: (২/৪৩৯); দারেমী, হাদীস নং ২২২৮
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩৬
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭০৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯২৮; আহমদ (২/১২১)
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ وَأُحۡضِرَتِ ٱلۡأَنفُسُ ٱلشُّحَّۚ وَإِن تُحۡسِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا ١٢٨﴾ [النساء: ١٢٨]
“আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর এবং মানুষের মধ্যে কৃপণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা সৎকর্ম কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮]
হাফেয ইবন কাসির রহ. বলেন: যদি নারী আশঙ্কা করে স্বামী তাকে পছন্দ করছে না, বা তাকে উপেক্ষা করছে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর ওপর থেকে সকল হক বা কিছু হক হ্রাস করতে পারে, যেমন তার ব্যয়ভার অথবা পোশাক, রাতের অংশ অথবা অন্য কোনো হক। স্বামীর পক্ষেও স্ত্রীর ছাড় গ্রহণ করা বৈধ, স্বামীর জন্য স্ত্রীর ত্যাগ করা কোনো সমস্যা নয় এবং স্ত্রী থেকে স্বামীর গ্রহণ করাও সমস্যা নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ ١٢٨ ﴾ [النساء : ١٢٨]
“তাহলে তারা উভয়ে কোনো মীমাংসা করলে তাদের কোনো অপরাধ নেই। আর মীমাংসা কল্যাণকর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮]
অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে উত্তম... অতঃপর তিনি সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঘটনা উল্লেখ করেন। যখন তিনি বৃদ্ধা হয়ে যান এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, তখন তিনি থাকার জন্য মীমাংসা করেন এবং তার দিনগুলো তিনি আয়েশার জন্য ছেড়ে দেন, তিনিও তার ছাড় গ্রহণ করেন এবং এভাবে তাকে রেখে দেন”।[1] সমাপ্ত।
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ ٱللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَا فِيمَا ٱفۡتَدَتۡ بِهِۦۗ﴾ [البقرة: ٢٢٩]
“সুতরাং যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না, তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজকে মুক্ত করে নেবে -তাতে কোনো সমস্যা নেই”। [সূরা আল-বাকারা, আায়াত: ২২৯]
হাফেয ইবন কাসির রহ. তার ‘তাফসীর’: (১/৪৮৩) গ্রন্থে বলেন: “স্বামী ও স্ত্রী যদি ঝগড়ায় জড়ায়, স্ত্রী স্বামীর হক আদায় না করে অথবা স্বামীকে অসন্তুষ্ট রাখে ও তার সাথে থাকতে অসম্মতি জানায়, তাহলে স্ত্রীর সুযোগ আছে স্বামী তাকে যা (মাহর) দিয়েছে তা ফেরত দিয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়া। স্বামীকে তা ফেরত দেওয়া স্ত্রীর জন্য দোষণীয় নয়, আবার স্ত্রী থেকে তা গ্রহণ করা স্বামীর জন্য দোষণীয় নয়।” সমাপ্ত। এভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে খোলা (তালাক) বলা হয়।
উত্তর: সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»أيما امرأة سألت زوجها طلاقها من غير ما بأس فحرام عليها رائحة الجنة«
“যে কোনো নারী কোনো কারণ ছাড়াই স্বামীর নিকট তালাক তলব করল, তার ওপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম”।[1]
কারণ, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অপছন্দীয় হালাল হচ্ছে তালাক, প্রয়োজন হলেই তার স্মরণাপন্ন হবে, অন্যথায় তলব করা মাকরূহ। কারণ, তার পশ্চাতে সৃষ্ট ক্ষতি কারো নিকট অস্পষ্ট নেই। প্রয়োজনের তালাক, যেমন স্বামীর হক আদায়ে স্ত্রীর অস্বীকৃতি জানানো, যার ফলে স্বামী স্ত্রী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَإِمۡسَاكُۢ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ تَسۡرِيحُۢ بِإِحۡسَٰنٖۗ﴾ [البقرة: ٢٢٩]
“অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৯]
অপর আয়াতে বলেন:
﴿لِّلَّذِينَ يُؤۡلُونَ مِن نِّسَآئِهِمۡ تَرَبُّصُ أَرۡبَعَةِ أَشۡهُرٖۖ فَإِن فَآءُو فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٢٢٦ وَإِنۡ عَزَمُواْ ٱلطَّلَٰقَ فَإِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٢٢٧﴾ [البقرة: ٢٢٦، ٢٢٧]
“যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত না হওয়ার শপথ করবে তারা চার মাস অপেক্ষা করবে। অতঃপর তারা যদি ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যদি তারা তালাকের দৃঢ় ইচ্ছা করে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৬-২২৭]
স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ দু’প্রকার:
ক. জীবিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হওয়া।
খ. মৃত্যু দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়া।
উভয় অবস্থাতেই নারীর ওপর ইদ্দত ওয়াজিব, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
ইদ্দতের হিকমত: একটি পরিপূর্ণ বিয়ে ভাঙ্গার পর তার শেষ সীমা নির্ধারণ করাই ইদ্দতের হিকমত। দ্বিতীয়ত গর্ভ থেকে রেহেম মুক্ত করা, যেন বিবাহ বিচ্ছিন্নকারী ব্যতীত অন্য কারও সহবাসের বিষয়টি তার সাথে সম্পৃক্ত না থাকে, যদি এটা না করা হয় তবে গর্ভের সন্তানে মিশ্রণ ঘটবে ও বংশ বিনষ্ট হবে। ইদ্দত দ্বারা স্ত্রী সাবেক বিয়ে-বন্ধনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনসহ, তালাকদাতা স্বামীর হকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বিচ্ছেদের কারণে শোক প্রকাশ করে।
ইদ্দত চার প্রকার:
প্রথম প্রকার: গর্ভবতীর ইদ্দত। গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করলে ইদ্দত শেষ হবে, তালাকে বায়েন প্রাপ্তা হোক বা তালাকে রাজ‘ঈ প্রাপ্তা হোক। জীবিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হোক বা মৃত্যুর কারণে বিচ্ছিন্ন হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]
“আর গর্ভধারিণীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪]
দ্বিতীয় প্রকার: ঋতু হয় তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত। এ জাতীয় নারীর ইদ্দত তিন কুরু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَٱلۡمُطَلَّقَٰتُ يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَٰثَةَ قُرُوٓءٖۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]
“আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮] অর্থাৎ তিন ঋতু বা হায়েয পর্যন্ত।
তৃতীয় প্রকার: ঋতু তথা হায়েয হয় না এমন তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত। এরা দু’প্রকার: ছোট যার ঋতু আরম্ভ হয় নি এবং বড় যার ঋতু আশার সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ তা‘আলা উভয়ের ইদ্দত সম্পর্কে বলেন:
﴿وَٱلَّٰٓـِٔي يَئِسۡنَ مِنَ ٱلۡمَحِيضِ مِن نِّسَآئِكُمۡ إِنِ ٱرۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَٰثَةُ أَشۡهُرٖ وَٱلَّٰٓـِٔي لَمۡ يَحِضۡنَۚ﴾ [الطلاق: ٤]
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি তাদের ইদ্দকালও হবে তিন মাস”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪] অর্থাৎ এটিই তাদের ইদ্দত।
চতুর্থ প্রকার: স্বামী-মৃত বা বিধবা নারীর ইদ্দত। আল্লাহ তা‘আলা তার ইদ্দত সম্পর্কে বলেন:
﴿وَٱلَّذِينَ يُتَوَفَّوۡنَ مِنكُمۡ وَيَذَرُونَ أَزۡوَٰجٗا يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرۡبَعَةَ أَشۡهُرٖ وَعَشۡرٗاۖ﴾ [البقرة: ٢٣٤]
“আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৪]
বিয়ের পর স্ত্রীগমন করুক বা না করুক, স্ত্রী ছোট হোক বা বড় হোক সকল প্রকার বিধবা নারী (যাদের স্বামী মারা গেছে), এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত, তবে গর্ভবতী বিধবা নারী এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ, তার বিধান নিম্নোক্ত আয়াতে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]
“আর গর্ভধারিণীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪]
ইবনুল কাইয়্যিম রচিত ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৫৯৪ ও ৫৯৫) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত হলো।