আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١﴾ [الروم: ٢١]
“আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা চিন্তা করে”। [সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿وَأَنكِحُواْ ٱلۡأَيَٰمَىٰ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَإِمَآئِكُمۡۚ إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ ٣٢﴾ [النور: ٣٢]
“আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
ইবন কাসির রহ. বলেন: এ আয়াত বিবাহ করার নির্দেশ প্রদান করছে। কতক আলেম বলেন: যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য রয়েছে তাদের বিয়ে করা ওয়াজিব। দলীল হিসেবে তারা নিম্নোক্ত হাদীসের বাহ্যিক অর্থকে পেশ করেন:
»يا معشر الشباب، من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء«
“হে যুবকের দল, তোমাদের থেকে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ, তা চোখকে অবনত ও লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখার উপকরণ। যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়ামকে আবশ্যক করে নেয়। কারণ, সিয়াম যৌবনকে কর্তনকারী”।[1]
অতঃপর তিনি বলেন: বিয়ে ধনী হওয়ার একটি উপকরণ। দলীল আল্লাহর বাণী:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِ﴾ [النور: ٣٢]
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে উল্লেখ করা হয়, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তোমাদেরকে বিয়ে করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা তোমরা বাস্তবায়ন কর, তিনি তোমাদেরকে সচ্ছলতার যে ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করবেন। আল্লাহ বলেন:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ﴾ [النور: ٣٢]
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা বিবাহ দ্বারা প্রাচুর্য অন্বেষণ কর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِن يَكُونُواْ فُقَرَآءَ يُغۡنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ﴾ [النور: ٣٢]
“যদি তারা অভাবী হয় আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]
বাণীটি ইবন জারির উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ কথা বগভী উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। ইবন কাসির: (৫/৯৪,৯৫) এর আলোচনা সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়ায়’: (৩২/৯০) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য বিবাহ করা, তালাক দেওয়া এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীকেও বিবাহ করা হালাল করেছেন অপর স্বামীর বিয়ে থেকে তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর। খ্রিস্টানরা তাদের বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ওপর বিয়ে হারাম করেছে, আবার যার জন্য বিয়ে হালাল করেছে তাকে তারা তালাক দেওয়ার অনুমতি দেয় নি। ইয়াহূদীরা তালাককে বৈধ বলে, তবে তালাকপ্রাপ্তা নারী অপর স্বামীকে বিয়ে করলে প্রথম স্বামীর জন্য স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায়। মুদ্দাকথা খ্রিস্টানদের নিকট তালাক নেই; ইয়াহূদীদের নিকট অপর স্বামীর নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ফিরে আসার সুযোগ নেই। আর আল্লাহ মুমিনদের জন্য তালাক ও ফিরিয়ে আনা উভয় হালাল করেছেন। সমাপ্ত।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৩/১৪৯) গ্রন্থে দাম্পত্য জীবনের এক বিশেষ উদ্দেশ্য সহবাসের উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “মূলত তিনটি কারণে স্ত্রীগমন বৈধ, যা সহবাসের মূল উদ্দেশ্য:
এক. বংশ সংরক্ষণ করা ও মানব জাতির পরম্পরা অব্যাহত রাখা, যতক্ষণ না এ জগতে তাদের সংখ্যা পূর্ণ হয় যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করতে চান।
দুই. বীর্য বের করে দেওয়া, যা জমিয়ে রাখা পুরো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তিন. যৌন চাহিদা পূর্ণ করা, আনন্দ উপভোগ ও নি‘আমত আস্বাদন করা।” সমাপ্ত।
বিয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে, সবচেয়ে বড় উপকার যিনা থেকে সুরক্ষা ও হারাম থেকে দৃষ্টিকে অবনত রাখা।
আরেকটি হচ্ছে: সন্তান লাভ করা ও মানব প্রজন্ম সংরক্ষণ করা।
আরেকটি হচ্ছে: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রশান্তি ও মানসিক প্রশস্তি লাভ করা।
আরেকটি হচ্ছে: একটি ভালো পরিবার গড়ার নিমিত্তে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর একযোগে কাজ করা, যা মুসলিম সমাজের এক মজবুত বুনিয়াদ।
আরেকটি হচ্ছে: স্বামীর নিজ স্কন্ধে স্ত্রীর দায়ভার ও নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করা; স্ত্রীর স্বামীর ঘরের কাজ আঞ্জাম দেওয়া এবং তার শরীর ও প্রকৃতির সাথে মানানসই কাজগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। সমাজ ও নারী জাতির শত্রুরা যেরূপ দাবি করে কাজের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সঙ্গী সেটি নয়। তারা নারীকে ঘর থেকে বের করে তার সঠিক দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। নারীর স্কন্ধে পুরুষের কাজ আর নারীর কাজ তারা পুরুষের স্কন্ধে চাপিয়েছে। যার পরিণতিতে পরিবার বিনষ্ট হচ্ছে ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে টানাপোড়ন দেখা দিচ্ছে, যে কারণে তারা কখনো বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয় কিংবা কষ্টের মাঝে দুর্বিসহ জীবন বয়ে বেড়ায় আমৃত্যু।
আমাদের শাইখ মুহাম্মাদ আমীন আশ-শানকিতী রহ. স্বীয় তাফসীর ‘আদওয়াউল বায়ান’: (৩/৪২২) এ বলেন: “জেনে রাখ, আল্লাহ আমাকে ও তোমাকে তার সন্তুষ্টি ও পছন্দের বিষয় গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন।, সকল নিয়ম-কানুন ও কর্মক্ষেত্রের সকল ময়দানে নারী-পুরুষকে সমান করার ভ্রান্ত অশুভ ও কুফুরী চিন্তাধারা সুস্থবোধ, বিবেক, আসমানি অহি ও আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত পরিপন্থী, মনুষ্য সমাজে যার কুফল, বিশৃঙ্খলা ও ফ্যাসাদ কারো নিকট অস্পষ্ট নেই, তবে আল্লাহ যার দৃষ্টি হরণ করেছেন সে ব্যতীত। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সমাজ বিনির্মাণের অংশ গ্রহণ হিসেবে নারীকে তার বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যের কারণে এমন কিছু কাজের উপযুক্ত করেছেন, যা সে ব্যতীত কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন গর্ভধারণ, বাচ্চা প্রসব, দুগ্ধপান, বাচ্চাদের লালন-পালন, ঘরের দেখভাল ও সাংসারিক যাবতীয় কাজ-কর্ম আঞ্জাম দেওয়া। যেমন রান্না করা, রুটি তৈরি করা ও ঘর ঝাড়ুসহ ইত্যাদি। নারীরা ঘরের ভেতর পর্দা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতার মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে বাস করে ও মনুষ্য মূল্যবোধের অধীন থেকে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে যে খেদমত আঞ্জাম দেয়, তা কোনো অংশে পুরুষের অর্থ উপার্জন অপেক্ষা কম নয়। কাফের মূর্খ অথর্ব জনগোষ্ঠী ও তার অনুসারীরা দাবি করে নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করবে যেমন পুরুষরা করে। এটি তাদের অধিকার! যদিও মাসিক ঋতু ও বাচ্চা প্রসব পরবর্তী সময় নারী কষ্টকর কোনো কাজ করতে সক্ষম নয়, বাহ্যত আমরা তাই দেখি। যখন স্বামী ও স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়, ঘর সম্পূর্ণ অরক্ষিত থেকে যায়, যেমন ছোট বাচ্চাদের লালন-পালন, দুগ্ধপান ও স্বামী ঘরে ফিরে আসার পর তার পানাহার প্রস্তুত করা ইত্যাদি। যদি স্ত্রীর কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য কাউকে ভাড়া করা হয়, ভাড়াটে (সেবক-সেবিকা) তার ঘরে বড় সমস্যার সৃষ্টি করে, যা দূর করার জন্য সে ঘর থেকে বের হয়েছে, পরিণতি হিতে বিপরীত হয়। অধিকন্তু নারীদের ঘর ত্যাগ করা ও শ্রম বিক্রির মাঝে দীন নষ্ট ও সম্মানকে ছুড়ে মারা ব্যতীত কিছুই নেই”। সমাপ্ত।
হে মুসলিম বোন, আল্লাহকে ভয় কর, প্রতারণামূলক এসব কথায় ধোঁকা খেয়ো না, যারা তাদের কথায় প্রতারিত হয়েছে তাদের বিফলতা ও বিষণ্ণতার বাস্তবতাই যথেষ্ট। অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বড় দলীল।
হে মুসলিম বোন, যতক্ষণ তোমার মাঝে যৌবন বিদ্যমান, তুমি পুরুষদের চাহিদার পাত্র দ্রুত বিয়ের প্রতি অগ্রসর হও। পড়া-শুনা চালিয়ে যাওয়া কিংবা চাকরির পাওয়ার আশায় কখনো বিয়ে বিলম্ব কর না। কারণ, উপযুক্ত বিয়েতে তোমার কল্যাণ ও প্রশান্তি। এটিই তোমার যে কোনো শিক্ষা ও চাকরির উত্তম বিনিময়, তোমার চাকরি ও পড়া-শোনা যতই হোক কখনো বিয়ের সমান নয়।
তুমি তোমার ঘরের কাজ ও সন্তান লালন-পালন করার দায়িত্ব আঞ্জাম দাও। এটিই তোমার মূল কাজ। যার দ্বারা তোমার জীবন সাফল্যমণ্ডিত হবে সেটিই গ্রহণ কর, তার বিকল্প অনুসন্ধান করো না। কারণ, তার বিকল্প নেই। দীনদার পুরুষের বিয়ের প্রস্তাবকে কখনো হাত ছাড়া কর না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»إذا جاءكم من ترضون دينه وخلقه فأنكحوه، إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد«
“যখন তোমাদের কাছে এমন কেউ আসে, যার দীন ও চরিত্র তোমরা পছন্দ কর, তাকে বিয়ে করিয়ে দাও, যদি না কর জমিনে ফিতনা ও ফাসাদ হবে”।[2]
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৮৫