লগইন করুন
বিয়ের উপযুক্ত নারী তিন প্রকার:
ক. নাবালিকা অবিবাহিত কিশোরী।
খ. সাবালিকা অবিবাহিত নারী।
গ. বিবাহিতা নারী।
প্রত্যেক প্রকার নারীর জন্য রয়েছে পৃথক বিধান।
১. নাবালিকা ছোট বাচ্চাকে বাবা তার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে দিবে, এতে কারো দ্বিমত নেই। কারণ, সে এখনো অনুমতির মালিক হয় নি। দ্বিতীয়ত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ছোট মেয়ে আয়েশাকে রালূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিয়ে দিয়েছেন, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর, নয় বছর পূর্ণ হলে তাকে বাসর ঘরে প্রেরণ করেন।[1]
ইমাম শাওকানী রহ. ‘নাইলুল আওতার’: (৬/১২৮, ১২৯) গ্রন্থে বলেন: “এ হাদীস প্রমাণ করে যে, বাবার জন্য নিজের মেয়েকে সাবালক হওয়ার পূর্বেই বিয়ে দেওয়া জায়েয। তিনি আরো বলেন: এ হাদীস প্রমাণ করে ছোট মেয়েকে বড়দের সাথে বিয়ে দেওয়া বৈধ। ইমাম বুখারী এ মাস‘আলার জন্য একটি অধ্যায় রচনা করে তাতে তিনি আয়েশার হাদীস উল্লেখ করেছেন। ইবন হাজার আসকালানী রহ. ‘ফাতহুল বারী’তে এ মাস‘আলায় উম্মতের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন।” সমাপ্ত।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৬/৪৮৭) গ্রন্থে বলেন: ইবনুল মুনযির বলেছেন: যাদের ইলম আমরা অর্জন করেছি, তারা সবাই একমত যে, বাবার জন্য নিজের ছোট মেয়েকে বিয়ে দেওয়া বৈধ, যদি সমমর্যাদা সম্পন্ন পুরুষের নিকট বিয়ে দেওয়া হয়”। সমাপ্ত।
আমি (গ্রন্থকার) বলছি: আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ছোট মেয়ে আয়েশাকে মাত্র ছয় বছর বয়সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিয়ে দেন, এ ঘটনা তাদেরকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে, যারা বড় ছেলের নিকট ছোট মেয়ের বিয়েকে অস্বীকার করে, বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অপরাধ গণ্য করে। এটি হয়তো তাদের মূর্খতা কিংবা তারা স্বার্থান্বেষী ও বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের একটা অংশ।
২. সাবালিকা অবিবাহিত নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তবে চুপ থাকাই তার অনুমতি। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»ولا تنكح البكر حتى تستأذن، قالوا: يا رسول الله فكيف إذنها ؟ قال: أن تسكت«
“বাকেরা (অর্থাৎ সাবালিকা অবিবাহিতা) মেয়েকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল, তার অনুমতির পদ্ধতি কী? তিনি বলেন: তার চুপ থাকা”।[2]
অতএব, বিয়েতে তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন, যদিও তাকে বিয়ে দেয় তার বাবা, আলেমদের দু’টি মত থেকে এটিই অধিক বিশুদ্ধ।
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৯৬) গ্রন্থে বলেন: “জমহুর সালাফের অভিমত এটিই। ইমাম আবু হানিফার মাযহাব ও ইমাম আহমদের একটি মত এরূপ। এ অভিমত মোতাবেক আমরা আল্লাহর ইবাদত আঞ্জাম দেই, তার বিপরীত বিশ্বাস করি না। এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক ফয়সালা”। সমাপ্ত।
৩. বিবাহিতা নারী স্বামীশূণ্যা হলে তাকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেওয়া যাবে না, তার অনুমতির প্রকাশ হবে কথার দ্বারা, যা অবিবাহিতা নারীর বিপরীত, কারণ অবিবাহিতা নারীর অনুমতির প্রমাণ হচ্ছে চুপ থাকা।
ইবন কুদামাহ ‘আল-মুগনি’: (৬/৪৯৩) গ্রন্থে বলেন: তবে বিবাহিতা নারীর অনুমতির প্রকাশ হবে কথার মাধ্যমে, এতে আলেমদের দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নেই। দ্বিতীয়ত মুখ দ্বারা মানুষ তার অন্তরের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। অতএব, যেখানে অনুমতির প্রয়োজন সেখানে মুখের কথার সমতুল্য কিছু নেই। সমাপ্ত।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (৩২/৩৯ ও ৪০) বলেন: “নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত কারো পক্ষেই বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, যদি সে নারাজ থাকে বিয়ের জন্য তাকে বাধ্য করবে না, তবে ছোট অবিবাহিত মেয়ে ব্যতীত। কারণ, তার বাবা তাকে বিয়ে দিবে, তার কোনো অনুমতি নেই। আর বিবাহিতা সাবালিকা নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বাবা কিংবা কারো জন্য বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, এটিই মুসলিমদের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত মাস‘আলা। অনুরূপ সাবালিকা অবিবাহিতা নারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বাবা ও দাদা ছাড়া কারো জন্য বিয়ে দেওয়া বৈধ নয় মুসলিমদের ঐকমত্যে, তবে বাবা কিংবা দাদার উচিৎ তাদের থেকে অনুমতি গ্রহণ করা।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৪৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১১০৭; নাসাঈ, হাদীস নং ২২৬৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২০৯২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৭১; আহমদ (২/৪২৪); দারেমী, হাদীস নং ১১৮৬