দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতে উল্লেখ করেছি যে, কুরআন ও হাদীসে বারংবার ৬টি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলিকে যথাযথভাবে বিশ্বাস করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। আমরা দেখেছি যে, তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য এ ৬টি বিষয়ের মূল। এ জন্য আমরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে পৃথকভাবে এ দুটি বিষয়ের আলোচনা করেছি। এ অধ্যায়ে আমরা ঈমানের আরকান বা স্তম্ভগুলির বিষয়ে সাধারণভাবে আলোচনা করব।
পূর্বের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, তাওহীদ ও রিসালাতে বিশ্বাসের অর্থ হলো, যে সকল বিষয় আল্লাহর নির্দেশ বা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর শিক্ষা বলে প্রমাণিত তা সবই সবই বিশ্বাস করতে হবে। কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা দেখি যে, তাওহীদ ও রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপনকারী প্রতিটি মুসলিমকে অবশ্যই এ ৬টি বিষয়ের উপর যথাযথ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় তার তাওহীদ ও রিসালাতের বিশ্বাসের দাবী মূল্যহীন বলে প্রমাণিত হবে।
৪. ১. আল্লাহর প্রতি ঈমান
আমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাওহীদের আলোচনায় ‘আল-ঈমান বিল্লাহ’ বা আল্লাহর প্রতি ঈমানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থই ‘তাওহীদ’ বা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস। তাওহীদের পর্যায় ও প্রকারগুলি আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কাজেই সেগুলির পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন।
আরবী ভাষায় ‘‘মালাক’’ শব্দকে ফার্সী ভাষায় ফিরিশতা বলা হয়। বাংলায় এই ফার্সী শব্দই প্রচলিত। পারস্যের মুসলিমগণ অনেক ইসলামী পরিভাষাকেও নিজেদের পূর্ববর্তী ধর্মীয় পরিভাষার ভিত্তিতে ফার্সী ভাষায় রূপান্তরিত করেন। যেমন খোদা, নামায, রোযা, দরুদ ইত্যাদি। এগুলি কোনোটিই আরবী শব্দের অর্থ বহন করে না। কিন্তু পারস্যবাসীরা তাদের পূর্ববর্তী ধর্মে ব্যবহৃত ধর্মীয় পরিভাষাগুলির ইসলামীকরণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসী ভাষার প্রভাবে আমাদের বাংলা ভাষায়ও এ সকল পরিভাষা প্রতিষ্ঠা লাভ। গত কয়েক দশক ধরে লেখকগণ ফার্সী পরিভাষা বাদ দিয়ে কুরআন-হাদীসে ব্যবহৃত মূল আরবী পরিভাষার প্রচলনের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যেই খোদার পরিবর্তে আল্লাহ, নামাযের পরিবর্তে সালাত, রোযার পরিবর্তে সিয়াম ব্যবহার বেশ প্রচলন লাভ করেছে। কিন্তু মালাক শব্দটির অবস্থা ভিন্ন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ‘ফিরিশতা’ শব্দটিই সবত্র ব্যবহৃত। ‘মালাক’ শব্দটির প্রচলন নেই, যদিও তা কুরআন-হাদীসের মূল পরিভাষা। আর ধর্মীয় পরিভাষার অনুবাদ না করে বা অন্য ধর্মের কাছাকাছি অর্থের পরিভাষা ব্যবহার না করে মূল পরিভাষা ব্যবহার করাই উত্তম।
আরবী ‘মালাক’ (مَلَك) শব্দটির অর্থ পত্র, চিঠি বা দূত। বহুল প্রচলনের ফলে শব্দটির মধ্যে কিছু ধ্বনিগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শব্দটি মূলত ‘আলাক’ (أَلَك) ধাতুমূল থেকে গৃহীত, মীম অক্ষরটি ‘হারফ যাইদ’ বা অতিরিক্ত অক্ষর। মূল শব্দটি ছিল ‘মাঅ্লাক’ (مألك)। পরবর্তী কালে ‘হামযা’ অক্ষরটিকে স্থানান্তরিত করে লামের পরে নিয়ে একে ‘মাল্আক’ (ملأك) বলা হয়। বহুল ব্যবহারে ‘হামযা’ অক্ষরটি লোপ পেয়ে সাধারণভাবে ‘মালাক’ (مَلَك) বলা হয়। বহুবচনে ‘হামযা’ অক্ষরটি বিদ্যমান থাকে এবং বলা হয় ‘মালাইকা’ (ملائكة)। সর্বাবস্থায় এ সকল ধ্বনিগত পরিবর্তনের ফলে মূল অর্থের পরিবর্তন হয় নি। মালাক, মালআক, মাঅ্লাক সবগুলি শব্দেরই মূল আভিধানিক অর্থ পত্র, বাণী, দূত ইত্যাদি, আর ব্যবহারিক অর্থ আল্লাহর দূত (angel)।[1]
আমরা দেখেছি যে, কুরআন ও হাদীসে বারংবার মালাকগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং মালাকগণে অবিশ্বাসকারীর বিভ্রান্তির কথা জানান হয়েছে। এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, মালাকগণে বা ফিরিশতায় বিশ্বাস করা ইসলামী ঈমানের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ।
মালাকগণ বা ফিরিশতাগণ আল্লাহর সৃষ্ট গাইব বা অদুশ্য জগতের অংশ। আল্লাহ অদৃশ্য জগতের শুধুমাত্র সে সকল বিষয় আমাদেরকে জানিয়েছেন এবং বিশ্বাস করতে নির্দেশ দিয়েছেন যে সকল বিষয়ে বিশ্বাস আমাদেরকে পার্থিব বা আধ্যাত্মিক ক্ষতি বা অকল্যাণ থেকে রক্ষা করে বা এক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনে। মালাকগণ সস্পর্কে আমরা ততটুকুই বিশ্বাস করি যতটুকু কুরআনুল করীমে বা হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। এর অতিরিক্ত তথ্য জানা আমাদের প্রয়োজন নেই বলেই আল্লাহ আমাদের ওহীর মাধ্যমে জানান নি। কাজেই ওহীর অতিরিক্ত কিছু জানার চেষ্টা করলে, অতিরিক্ত কিছু কথা যুক্তি, তর্ক দিয়ে বললে বা কুরআন হাদীসের বিভিন্ন বক্তব্যের আলোকে নিজেদের বিচারবুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করলে তাতে ভুল হওয়ার ও গাইবী বিষয়ে ওহীর বাইরে কথা বলার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে অনেক জাতি ওহীর কথা বিকৃত হওয়ার কারণে, ওহীর নামে বানোয়াট কথা প্রচলন হওয়ার কারণে এবং ওহীর অতিরিক্ত মনগড়া ব্যাখ্যা ও মতামত প্রচলনের কারণে মালাকগণ সম্পর্কে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসের মধ্যে নিপতিত হয়েছিলেন। কুরআন কারীমে তাদের কিছু বিভ্রান্তির বর্ণনা রয়েছে। আমরা প্রথমে মালাকগণ বা ফিরিশতাগণ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের আলোকে ইসলামী বিশ্বাসের বর্ণনা করব এবং এরপর এ বিষয়ে কিছু বিভ্রান্তির কথা উল্লেখ করব।
আল্লাহর মালাইকা বা ফিরিশতাগণে বিশ্বাসের সাধারণ ও সংক্ষিপ্ত অর্থ: ‘‘সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা অনেক মালাইকা বা ফিরিশতা সৃষ্টি করেছেন, যাঁরা আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি। তাঁরা মানবীয় দুর্বলতা ও কামনা বাসনা থেকে মুক্ত। তারা সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করেন এবং আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কোনো অনুভূতি তাদের মধ্যে নেই। সর্বদা আ্ল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর প্রশংসা ও মহত্ব বর্ণনা করা, তার নির্দেশ সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা তাদের কর্ম।’’
ঈমান বিল-মালাঈকা বা মালাকগণের প্রতি ঈমানের বিস্তারিত চারটি দিক রয়েছে: (১) মালাকগণের অস্তিত্বে বিশ্বাস, (২) তাঁদের নামে বিশ্বাস, (৩) তাঁদের আকৃতি-প্রকৃতিতে বিশ্বাস এবং (৪) তাঁদের কর্মে বিশ্বাস।
ফিরিশতাদের সম্পর্কে কাফিরদের বিভিন্ন কুসংস্কার ও বিভ্রান্তির প্রতিবাদ করার সাথে সাথে কুরআন ও হাদীসে তাঁদের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে এবং তাঁদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কাজেই প্রতিটি মুসলিম সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করেন যে, মালাকগণ আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। তাঁরা অদৃশ্য জগতের অংশ। তাঁদের সৃষ্টি, আকৃতি, প্রকৃতি, গুণাবালি, কর্ম ও দায়িত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে যা কিছু প্রমাণিত তা সবই মুমিন আক্ষরিক ও সরলভাবে বিশ্বাস করেন।
আল্লাহর সৃষ্ট মালাকগণের সংখ্যা অগণিত ও অবর্ণনীয়। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। মালাকগণের সংখ্যাধিক্য সম্পর্কে ধারণা পাই আমরা বিভিন্ন হাদীস থেকে। মালিক ইবনু সা’সা‘আ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মি’রাজের ঘটনা বর্ণনায় বলেন:
رُفِعَ لِي الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَا هَذَا قَالَ هَذَا الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ إِذَا خَرَجُوا مِنْهُ لَمْ يَعُودُوا فِيهِ آخِرُ مَا عَلَيْهِمْ
‘‘আমার সামনে বাইতুল মা’মূর উত্থিত হলো। আমি বললাম, হে জিবরীল, এটি কী? তিনি বললেন: ‘এটি বাইতুল মা’মূর। প্রতিদিন এর মধ্যে ৭০ হাজার মালাক প্রবেশ করেন। যারা একবার বেরিয়ে যায় তারা আর কখনোই এখানে ফিরে আসে না।’’[1]
অন্য হাদীসে আবূ যার গিফারী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
أَطَّتْ السَّمَاءُ وَحُقَّ لَهَا أَنْ تَئِطَّ مَا فِيهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أَصَابِعَ إِلا وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا لِلَّهِ
‘‘আকাশ (ভারাক্রান্ত হয়ে) শব্দ করছে এবং তার শব্দ করার অধিকার আছে, সেখানে এমন ৪ আঙ্গুল স্থানও খালি নেই যেখানে একজন মালাক (ফিরিশতা) তাঁর কপাল রেখে আল্লাহর জন্য সাজদাবনত নেই।’’[2]
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلا هُوَ
‘‘তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।’’[3]
এদের মধ্য থেকে সামান্য কয়েকজনের নাম আমরা ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি। জিবরাঈল (জিবরীল), মীকাঈল (মীকাল), ও মালিক নামগুলি কুরআন কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন:
مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِلَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِلْكَافِرِينَ
‘‘যে কেউ আল্লাহর, তাঁর মালাকগণের, তাঁর রাসূলগণের এবং জিবরীল ও মীকালের (মীকাঈলের) শত্রু, (সে জেনে রাখুক যে,) আল্লাহ নিশ্চয় কাফিরদের শত্রু।’’[4]
জিবরীল (আঃ)-কে কুরআন কারীমে বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁকে আর-রূহুল আমীন (الروح الأمين) বা বিশ্বস্ত আত্মা (পবিত্র আত্মা) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাঁর শক্তি-মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরীল কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ওহী শিক্ষা দানের বিষয়ে আল্লাহ বলেন:
عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى ذُو مِرَّةٍ
‘‘তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী প্রজ্ঞাসম্পন্ন-সুন্দর।’’[5]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الأمِينُ عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ
‘‘আল-কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত আত্মা (আর-রূহুল আমীন: জিবরীল) তা নিয়ে অবতরণ করেছেন। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার।’’[6]
জাহান্নামের প্রহরী বা অধিকর্তার নাম উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন:
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ
‘‘তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার প্রতিপালক আমাদের নিঃশেষ করে দিন। সে বলবে: তোমরা এভাবেই থাকবে।’’[7]
কোনো কোনো হাদীসে ‘ইসরাফীল’ নামটি এসেছে। আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাত্রিতে তাহাজ্জুদের সালাত শুরু করে শুরুর দু‘আ বা ‘সানা’ পাঠে বলতেন:
اللَّهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنْ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘হে আল্লাহ, জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রতিপালক, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল জ্ঞানের অধিকারী, আপনি ফয়সালা করবেন আপনার বান্দাদের মধ্যে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত, যে বিষয়ে মতভেদ হয়েছে সে বিষয়ে আপনি আপনার অনুমোদন দিয়ে আমাকে সত্যের প্রতি পথপ্রদর্শন করুন।’’[8]
এছাড়া কোনো কোনো হাদীসে জান্নাতের প্রহরী বা অধিকর্তা মালাকের নাম ‘রিদওয়ান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিহাহ সিত্তা বা প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থগুলিতে সংকলিত হাদীসে নামটি বর্ণিত হয়েছে বলে জানতে পারি নি। তবে ৪র্থ-৫ম শতকের কোনো মুহাদ্দিসের সংকলিত দু-একটি হাদীসে এ নামটি উল্লেখ করা হয়েছে।[9]
‘মালাকুল মাওত’ বা মৃত্যুর মালাকের নাম ‘আযরাঈল’ বলে কোনো কোনো মুফাস্সির উল্লেখ করেছেন। প্রথম ৪ জন মালাকের নামই শুধু মুতাওয়াতিররূপে বর্ণিত হয়েছে। কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এবং অগণিত হাদীসে এদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু কিছু মালাককে আল্লাহ কর্মভিত্তিক নামে উল্লেখ করেছেন। যেমন ‘মালাকুল মাওত’, ‘মুনকার-নাকির’, ‘কিরামান কাতিবীন’ ইত্যাদি।
[2] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৫৫৬। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।
[3] সূরা (৭৪) মুদ্দাস্সির: ৩১ আয়াত।
[4] সূরা (২) বাকারা: ৯৮ আয়াত।
[5] সূলা (৫৩) নাজম: ৫-৬ আয়াত।
[6] সূরা (২৬) শু‘আরা: ১৯২-১৯৪ আয়াত।
[7] সূরা (৪৩) যুখরুফ: ৭৭ আয়াত।
[8] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫৩৪।
[9] বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান ৩/৩৩৫; মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৬০-৬১।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, অদৃশ্য জগতের কোনো কিছুর বিষয়ে আল্লাহ আমাদেরকে ততটুকুই জানিয়েছেন, যতটুকু জানলে এবং বিশ্বাস করলে আমরা জাগতিক আধ্যাত্মিক কল্যাণ লাভ করতে পারব। এজন্য কুরআন ও হাদীসে মালাকগণ সস্পর্কে যে সকল বর্ণনা এসেছে তা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, এ সকল আয়াত ও হাদীস মূলত আল্লাহর সাথে মালাকগণের সম্পর্ক, সৃষ্টি পরিচালনায় ও আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁদের দায়িত্ব এবং মানুষের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ইত্যাদি বিষয়েই আলোচনা করা হযেছে। তাঁদের সৃষ্টি ও আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সাধারণত বিশেষ কিছু বলা হয়নি। তবে কুরআন-হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা যা বুঝতে পারি তা নিম্নরূপ:
৪. ২. ৭. ১. মালাকগণ মানুষের পূর্বে সৃষ্ট
কুরআনের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, মহান আল্লাহর মানব সৃষ্টির পূর্বে মালাকগণকে সৃষ্টি করেন, মানব সৃষ্টির প্রাক্কালে তাঁর ইচ্ছার কথা তাঁদেরকে জানিয়েছিলেন এবং আদমের সৃষ্টির পরে আল্লাহর নির্দেশে তাঁরা আদমকে সাজদা করেন। যেমন একস্থানে আল্লাহ বলেন:
إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ فَسَجَدَ الْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ
‘‘তোমার প্রতিপালক যখন মালাকগণকে বলেছিলেন: ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করছি মাটি থেকে, যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাবনত হয়ো।’ তখন মালাকগণ সকলেই সাজদাবনত হলেন।’’[1]
৪. ২. ৭. ২. মালাকগণ আল্লাহর সম্মানিত ও অনুগত বান্দা
মক্কার কাফিরগণ মালাকগণকে আল্লাহর সন্তান ও কন্যা-সন্তান বলে কল্পনা করত, তাঁদের ইবাদত করত এবং দাবি করত যে, তাঁদের ইবাদত করলে তাঁরা খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করে তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন। তাদের এ বিশ্বাসের প্রতিবাদ করে আল্লাহ বলেন:
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يَشْفَعُونَ إِلا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ.
‘‘তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের ছাড়া আর কারো জন্য তারা সুপারিশ করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।’’[2]
৪. ২. ৭. ৩. মালাকগণ নূরের তৈরি
মানুষ ও জিন্ন জাতির সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে কুরআন কারীমে বারংবার বলা হয়েছে যে মানুষকে মাটি থেকে এবং জিন্ন-কে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মালাকগণের সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে কুরআন কারীমে কিছুই বলা হয় নি। তবে একটি হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, তাঁদেরকে নূর বা আলো থেকে তৈরি করা হয়েছে।
خُلِقَتْ الْمَلائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ
‘‘মালাকগণকে নূর (আলো) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, জিনণদেরকে প্রজ্জলিত অগ্নি শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর মানুষকে কোন্ বস্ত্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা তো তোমাদেরকে জানানো হয়েছে।’’[3]
[2] সূরা (২১) আম্বিয়া: ২৬-২৮ আয়াত।
[3] মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২২৯৪।
মালাকগণের প্রকৃত আকৃতি সম্পর্কে আমাদেরকে বিশেষ কিছু জানানো হয়নি, তবে আমরা জানি যে, তাঁদের কম-বেশি বিভিন্ন সংখ্যার পাখা আছে। মহান আল্লাহ বলেন:
الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلائِكَةِ رُسُلا أُولِي أَجْنِحَةٍ مَثْنَى وَثُلاثَ وَرُبَاعَ يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘প্রশংসা আল্লাহর নিমিত্ত, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন এবং দুই-দুই, তিন-তিন, চার-চার পাখা-বিশিষ্ট মালাকগণকে বার্তাবাহক বানিয়েছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল।’’[1]
তাঁদের পাখার প্রকৃতি বা সংখ্যা আল্লাহই জানেন। তবে জিবরাঈল (আঃ)-এর বিষয়ে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর ৬০০ পাখা আছে। মহান আল্লাহ সূরা নাজমে বলেছেন:
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
‘‘অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মধ্যে দু ধনুকের ব্যবধান থাকল, অথবা তারও কম।’’[2]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন:
إنَّ النَّبِيَّ (ﷺ) رَأَى جِبْرِيلَ لَهُ سِتُّ مِائَةِ جَنَاحٍ
‘‘নবী (ﷺ) জিবরীলকে দেখেন তার ছিল ৬০০ টি পাখা।’’[3]
আয়েশা (রা) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জিবরীল (আঃ)-এর আকৃতির বিশালতা সম্পর্কে জানা যায়। তাবিয়ী মাসরূক বলেন:
كُنْتُ مُتَّكِئًا عِنْدَ عَائِشَةَ فَقَالَتْ يَا أَبَا عَائِشَةَ ثَلاثٌ مَنْ تَكَلَّمَ بِوَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ قُلْتُ مَا هُنَّ قَالَتْ مَنْ زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا (ﷺ) رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ قَالَ: وَكُنْتُ مُتَّكِئًا فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْظِرِينِي وَلا تَعْجَلِينِي أَلَمْ يَقُلْ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: (وَلَقَدْ رَآهُ بِالأفُقِ الْمُبِينِ)، (وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى) فَقَالَتْ أَنَا أَوَّلُ هَذِهِ الأُمَّةِ سَأَلَ عَنْ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) فَقَالَ إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ لَمْ أَرَهُ عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي خُلِقَ عَلَيْهَا غَيْرَ هَاتَيْنِ الْمَرَّتَيْنِ رَأَيْتُهُ مُنْهَبِطًا مِنْ السَّمَاءِ سَادًّا عِظَمُ خَلْقِهِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ فَقَالَتْ أَوَ لَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ: (لا تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ) أَوَ لَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ: (وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ). قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) كَتَمَ شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ: (يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَه). قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ يُخْبِرُ بِمَا يَكُونُ فِي غَدٍ (وفي رواية: أَنَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ) فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ: (قُلْ لا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلا اللَّهُ(
‘‘আমি আয়েশা (রা)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলেন, হে আবূ আয়েশা (মাসরূক), তিনটি কথার যে কোনো একটি কথা যদি কেউ বলে তবে সে আল্লাহ নামে জঘন্য মিথা বলার অপরাধে অপরাধী হবে। আমি বললাম: সে কথাগুলি কী কী? তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর প্রতিপালককে (আল্লাহকে) দেখেছিলেন তবে সে আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যচারী বলে গণ্য হবে। মাসরূক বলেন, আমি তখন হেলান দিয়ে ছিলাম। তাঁর কথায় আমি উঠে বসলাম এবং বললাম: হে মুমিনগণের মাতা, আপনি আমাকে একটু কথা বলতে দিন, আমার আগেই আপনার বক্তব্য শেষ করবেন না। আল্লাহ কি বলেন নি: ‘‘সে তো তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছিল’’[4], ‘‘নিশ্চয় তাকে সে আরেকবার দেখেছিল’’[5]?
আয়েশা (রা) বলেন: এ উম্মাতের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তরে বলেন: ‘‘এ হলো জিবরীলের কথা। আল্লাহ তাঁকে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন আমি এই দুবার ছাড়া আর কখনো তাঁকে তাঁর সেই প্রকৃত আকৃতিতে দেখি নি। আমি দেখলাম তিনি আকাশ থেকে নেমে আসছেন। তাঁর আকৃতির বিশালত্ব আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী সবকিছু অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে।’’ আয়েশা বলেন: তুমি কি আল্লাহকে বলতে শোন নি: ‘‘তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত’’[6]? তুমি কি আল্লাহকে বলতে শোন নি: ‘‘কোনো মানুষের জন্যই সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে, অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে, যে দূত তার অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়’’[7]?
আয়েশা (রা) বলেন, আর যে ব্যক্তি মনে করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর কিতাবের কিছু বিষয় গোপন রেখে গিয়েছেন সেও আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত, অথচ আল্লাহ বলেন: ‘‘হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না।’’[8] তিনি আরো বলেন: আর যে ব্যক্তি মনে করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগামীকাল (ভবিষ্যতে) কি হবে তা বলতেন (অন্য বর্ণনায়: আর যে ব্যক্তি মনে করে যে, তিনি আগামীকালে (ভবিষ্যতে) কী আছে তা জানতেন) তবে সেও আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত, অথচ আল্লাহ বলেন[9]: ‘‘আপনি বলুন: আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য (গাইব) বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।’’[10]
[2] সূরা (৫৩) নাজম: ৮-৯ আয়াত।
[3] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১১৮১, ৪/১৮৪০, ১৮৪১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৫৮।
[4] সূরা (৮১) তাকবীর: ২৩ আয়াত।
[5] সূরা (৫৩) নাজম: ১৩ আয়াত।
[6] সূরা (৬) আন‘আম: ১০৩ আয়াত।
[7] সূরা (৪২) শূরা: ৫১ আয়াত।
[8] সূরা (৫) মায়িদা: ৬৭ আয়াত।
[9] সূরা (২৭) নামল: ৬৫ আয়াত।
[10] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১১৮১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৫৯-১৬১; তিরমিযী, আস-সুনান ৫/২৬২, ৩৯৪; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৩১৩, ৮/৬০৬।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা বিশ্বাস করি যে, মালাকগণ আল্লাহর নির্দেশে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন। ঈসা (আঃ)-এর আম্মা মারইয়াম (আঃ)-এর মাতৃত্বের ঘটনা বর্ণনায় আল্লাহ বলেন:
فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
‘‘তখন আমি তার (মারইয়ামের) কাছে আমার রুহকে (পবিত্র আত্মা: জিব্রাঈল) প্রেরণ করলাম, সে তাঁর নিকট পূর্ণ মানব আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।’’[1]
হাদীসেও এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। এ সকল বর্ণনা থেকে আমরা দেখি যে, কোনো কোনো সময় জিব্রাঈল (আঃ) মানুষের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হতেন। কখনো মানুষের বেশে ওহী নিয়ে আসতেন। কখনো মানুষের বেশে এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট বসে সাহাবীদের সামনে ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন, যাতে উপস্থিত সাহাবীগণ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ইসলামের প্রয়োজনীয় বিধানাবলী জানতে পারেন।[2]
[2] বুখারী, আস-সহীহ ১/২৭, ৪/১৭৯৩; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৫-৩৯।