লগইন করুন
মালাকগণের প্রকৃত আকৃতি সম্পর্কে আমাদেরকে বিশেষ কিছু জানানো হয়নি, তবে আমরা জানি যে, তাঁদের কম-বেশি বিভিন্ন সংখ্যার পাখা আছে। মহান আল্লাহ বলেন:
الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلائِكَةِ رُسُلا أُولِي أَجْنِحَةٍ مَثْنَى وَثُلاثَ وَرُبَاعَ يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘প্রশংসা আল্লাহর নিমিত্ত, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন এবং দুই-দুই, তিন-তিন, চার-চার পাখা-বিশিষ্ট মালাকগণকে বার্তাবাহক বানিয়েছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল।’’[1]
তাঁদের পাখার প্রকৃতি বা সংখ্যা আল্লাহই জানেন। তবে জিবরাঈল (আঃ)-এর বিষয়ে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর ৬০০ পাখা আছে। মহান আল্লাহ সূরা নাজমে বলেছেন:
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
‘‘অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মধ্যে দু ধনুকের ব্যবধান থাকল, অথবা তারও কম।’’[2]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা) বলেন:
إنَّ النَّبِيَّ (ﷺ) رَأَى جِبْرِيلَ لَهُ سِتُّ مِائَةِ جَنَاحٍ
‘‘নবী (ﷺ) জিবরীলকে দেখেন তার ছিল ৬০০ টি পাখা।’’[3]
আয়েশা (রা) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জিবরীল (আঃ)-এর আকৃতির বিশালতা সম্পর্কে জানা যায়। তাবিয়ী মাসরূক বলেন:
كُنْتُ مُتَّكِئًا عِنْدَ عَائِشَةَ فَقَالَتْ يَا أَبَا عَائِشَةَ ثَلاثٌ مَنْ تَكَلَّمَ بِوَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ قُلْتُ مَا هُنَّ قَالَتْ مَنْ زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا (ﷺ) رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ قَالَ: وَكُنْتُ مُتَّكِئًا فَجَلَسْتُ فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْظِرِينِي وَلا تَعْجَلِينِي أَلَمْ يَقُلْ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: (وَلَقَدْ رَآهُ بِالأفُقِ الْمُبِينِ)، (وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى) فَقَالَتْ أَنَا أَوَّلُ هَذِهِ الأُمَّةِ سَأَلَ عَنْ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) فَقَالَ إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ لَمْ أَرَهُ عَلَى صُورَتِهِ الَّتِي خُلِقَ عَلَيْهَا غَيْرَ هَاتَيْنِ الْمَرَّتَيْنِ رَأَيْتُهُ مُنْهَبِطًا مِنْ السَّمَاءِ سَادًّا عِظَمُ خَلْقِهِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ فَقَالَتْ أَوَ لَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ: (لا تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ) أَوَ لَمْ تَسْمَعْ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ: (وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ). قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) كَتَمَ شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ: (يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَه). قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ يُخْبِرُ بِمَا يَكُونُ فِي غَدٍ (وفي رواية: أَنَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ) فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللَّهِ الْفِرْيَةَ وَاللَّهُ يَقُولُ: (قُلْ لا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلا اللَّهُ(
‘‘আমি আয়েশা (রা)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলেন, হে আবূ আয়েশা (মাসরূক), তিনটি কথার যে কোনো একটি কথা যদি কেউ বলে তবে সে আল্লাহ নামে জঘন্য মিথা বলার অপরাধে অপরাধী হবে। আমি বললাম: সে কথাগুলি কী কী? তিনি বলেন, যদি কেউ মনে করে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর প্রতিপালককে (আল্লাহকে) দেখেছিলেন তবে সে আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যচারী বলে গণ্য হবে। মাসরূক বলেন, আমি তখন হেলান দিয়ে ছিলাম। তাঁর কথায় আমি উঠে বসলাম এবং বললাম: হে মুমিনগণের মাতা, আপনি আমাকে একটু কথা বলতে দিন, আমার আগেই আপনার বক্তব্য শেষ করবেন না। আল্লাহ কি বলেন নি: ‘‘সে তো তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছিল’’[4], ‘‘নিশ্চয় তাকে সে আরেকবার দেখেছিল’’[5]?
আয়েশা (রা) বলেন: এ উম্মাতের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তরে বলেন: ‘‘এ হলো জিবরীলের কথা। আল্লাহ তাঁকে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন আমি এই দুবার ছাড়া আর কখনো তাঁকে তাঁর সেই প্রকৃত আকৃতিতে দেখি নি। আমি দেখলাম তিনি আকাশ থেকে নেমে আসছেন। তাঁর আকৃতির বিশালত্ব আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী সবকিছু অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে।’’ আয়েশা বলেন: তুমি কি আল্লাহকে বলতে শোন নি: ‘‘তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত’’[6]? তুমি কি আল্লাহকে বলতে শোন নি: ‘‘কোনো মানুষের জন্যই সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে, অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে, যে দূত তার অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়’’[7]?
আয়েশা (রা) বলেন, আর যে ব্যক্তি মনে করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর কিতাবের কিছু বিষয় গোপন রেখে গিয়েছেন সেও আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত, অথচ আল্লাহ বলেন: ‘‘হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না।’’[8] তিনি আরো বলেন: আর যে ব্যক্তি মনে করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগামীকাল (ভবিষ্যতে) কি হবে তা বলতেন (অন্য বর্ণনায়: আর যে ব্যক্তি মনে করে যে, তিনি আগামীকালে (ভবিষ্যতে) কী আছে তা জানতেন) তবে সেও আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত, অথচ আল্লাহ বলেন[9]: ‘‘আপনি বলুন: আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য (গাইব) বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।’’[10]
[2] সূরা (৫৩) নাজম: ৮-৯ আয়াত।
[3] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১১৮১, ৪/১৮৪০, ১৮৪১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৫৮।
[4] সূরা (৮১) তাকবীর: ২৩ আয়াত।
[5] সূরা (৫৩) নাজম: ১৩ আয়াত।
[6] সূরা (৬) আন‘আম: ১০৩ আয়াত।
[7] সূরা (৪২) শূরা: ৫১ আয়াত।
[8] সূরা (৫) মায়িদা: ৬৭ আয়াত।
[9] সূরা (২৭) নামল: ৬৫ আয়াত।
[10] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১১৮১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৫৯-১৬১; তিরমিযী, আস-সুনান ৫/২৬২, ৩৯৪; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৩১৩, ৮/৬০৬।