আরবী ভাষায় ‘‘মালাক’’ শব্দকে ফার্সী ভাষায় ফিরিশতা বলা হয়। বাংলায় এই ফার্সী শব্দই প্রচলিত। পারস্যের মুসলিমগণ অনেক ইসলামী পরিভাষাকেও নিজেদের পূর্ববর্তী ধর্মীয় পরিভাষার ভিত্তিতে ফার্সী ভাষায় রূপান্তরিত করেন। যেমন খোদা, নামায, রোযা, দরুদ ইত্যাদি। এগুলি কোনোটিই আরবী শব্দের অর্থ বহন করে না। কিন্তু পারস্যবাসীরা তাদের পূর্ববর্তী ধর্মে ব্যবহৃত ধর্মীয় পরিভাষাগুলির ইসলামীকরণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসী ভাষার প্রভাবে আমাদের বাংলা ভাষায়ও এ সকল পরিভাষা প্রতিষ্ঠা লাভ। গত কয়েক দশক ধরে লেখকগণ ফার্সী পরিভাষা বাদ দিয়ে কুরআন-হাদীসে ব্যবহৃত মূল আরবী পরিভাষার প্রচলনের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যেই খোদার পরিবর্তে আল্লাহ, নামাযের পরিবর্তে সালাত, রোযার পরিবর্তে সিয়াম ব্যবহার বেশ প্রচলন লাভ করেছে। কিন্তু মালাক শব্দটির অবস্থা ভিন্ন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ‘ফিরিশতা’ শব্দটিই সবত্র ব্যবহৃত। ‘মালাক’ শব্দটির প্রচলন নেই, যদিও তা কুরআন-হাদীসের মূল পরিভাষা। আর ধর্মীয় পরিভাষার অনুবাদ না করে বা অন্য ধর্মের কাছাকাছি অর্থের পরিভাষা ব্যবহার না করে মূল পরিভাষা ব্যবহার করাই উত্তম।
আরবী ‘মালাক’ (مَلَك) শব্দটির অর্থ পত্র, চিঠি বা দূত। বহুল প্রচলনের ফলে শব্দটির মধ্যে কিছু ধ্বনিগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শব্দটি মূলত ‘আলাক’ (أَلَك) ধাতুমূল থেকে গৃহীত, মীম অক্ষরটি ‘হারফ যাইদ’ বা অতিরিক্ত অক্ষর। মূল শব্দটি ছিল ‘মাঅ্লাক’ (مألك)। পরবর্তী কালে ‘হামযা’ অক্ষরটিকে স্থানান্তরিত করে লামের পরে নিয়ে একে ‘মাল্আক’ (ملأك) বলা হয়। বহুল ব্যবহারে ‘হামযা’ অক্ষরটি লোপ পেয়ে সাধারণভাবে ‘মালাক’ (مَلَك) বলা হয়। বহুবচনে ‘হামযা’ অক্ষরটি বিদ্যমান থাকে এবং বলা হয় ‘মালাইকা’ (ملائكة)। সর্বাবস্থায় এ সকল ধ্বনিগত পরিবর্তনের ফলে মূল অর্থের পরিবর্তন হয় নি। মালাক, মালআক, মাঅ্লাক সবগুলি শব্দেরই মূল আভিধানিক অর্থ পত্র, বাণী, দূত ইত্যাদি, আর ব্যবহারিক অর্থ আল্লাহর দূত (angel)।[1]