আল্লাহর সৃষ্ট মালাকগণের সংখ্যা অগণিত ও অবর্ণনীয়। তাঁদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। মালাকগণের সংখ্যাধিক্য সম্পর্কে ধারণা পাই আমরা বিভিন্ন হাদীস থেকে। মালিক ইবনু সা’সা‘আ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মি’রাজের ঘটনা বর্ণনায় বলেন:
رُفِعَ لِي الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَا هَذَا قَالَ هَذَا الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ إِذَا خَرَجُوا مِنْهُ لَمْ يَعُودُوا فِيهِ آخِرُ مَا عَلَيْهِمْ
‘‘আমার সামনে বাইতুল মা’মূর উত্থিত হলো। আমি বললাম, হে জিবরীল, এটি কী? তিনি বললেন: ‘এটি বাইতুল মা’মূর। প্রতিদিন এর মধ্যে ৭০ হাজার মালাক প্রবেশ করেন। যারা একবার বেরিয়ে যায় তারা আর কখনোই এখানে ফিরে আসে না।’’[1]
অন্য হাদীসে আবূ যার গিফারী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
أَطَّتْ السَّمَاءُ وَحُقَّ لَهَا أَنْ تَئِطَّ مَا فِيهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أَصَابِعَ إِلا وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا لِلَّهِ
‘‘আকাশ (ভারাক্রান্ত হয়ে) শব্দ করছে এবং তার শব্দ করার অধিকার আছে, সেখানে এমন ৪ আঙ্গুল স্থানও খালি নেই যেখানে একজন মালাক (ফিরিশতা) তাঁর কপাল রেখে আল্লাহর জন্য সাজদাবনত নেই।’’[2]
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلا هُوَ
‘‘তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।’’[3]
এদের মধ্য থেকে সামান্য কয়েকজনের নাম আমরা ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি। জিবরাঈল (জিবরীল), মীকাঈল (মীকাল), ও মালিক নামগুলি কুরআন কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন:
مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِلَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِلْكَافِرِينَ
‘‘যে কেউ আল্লাহর, তাঁর মালাকগণের, তাঁর রাসূলগণের এবং জিবরীল ও মীকালের (মীকাঈলের) শত্রু, (সে জেনে রাখুক যে,) আল্লাহ নিশ্চয় কাফিরদের শত্রু।’’[4]
জিবরীল (আঃ)-কে কুরআন কারীমে বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁকে আর-রূহুল আমীন (الروح الأمين) বা বিশ্বস্ত আত্মা (পবিত্র আত্মা) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাঁর শক্তি-মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরীল কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ওহী শিক্ষা দানের বিষয়ে আল্লাহ বলেন:
عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى ذُو مِرَّةٍ
‘‘তাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী প্রজ্ঞাসম্পন্ন-সুন্দর।’’[5]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الأمِينُ عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ
‘‘আল-কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত আত্মা (আর-রূহুল আমীন: জিবরীল) তা নিয়ে অবতরণ করেছেন। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার।’’[6]
জাহান্নামের প্রহরী বা অধিকর্তার নাম উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন:
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ
‘‘তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক, তোমার প্রতিপালক আমাদের নিঃশেষ করে দিন। সে বলবে: তোমরা এভাবেই থাকবে।’’[7]
কোনো কোনো হাদীসে ‘ইসরাফীল’ নামটি এসেছে। আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাত্রিতে তাহাজ্জুদের সালাত শুরু করে শুরুর দু‘আ বা ‘সানা’ পাঠে বলতেন:
اللَّهُمَّ رَبَّ جَبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنْ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘হে আল্লাহ, জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রতিপালক, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল জ্ঞানের অধিকারী, আপনি ফয়সালা করবেন আপনার বান্দাদের মধ্যে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত, যে বিষয়ে মতভেদ হয়েছে সে বিষয়ে আপনি আপনার অনুমোদন দিয়ে আমাকে সত্যের প্রতি পথপ্রদর্শন করুন।’’[8]
এছাড়া কোনো কোনো হাদীসে জান্নাতের প্রহরী বা অধিকর্তা মালাকের নাম ‘রিদওয়ান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিহাহ সিত্তা বা প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থগুলিতে সংকলিত হাদীসে নামটি বর্ণিত হয়েছে বলে জানতে পারি নি। তবে ৪র্থ-৫ম শতকের কোনো মুহাদ্দিসের সংকলিত দু-একটি হাদীসে এ নামটি উল্লেখ করা হয়েছে।[9]
‘মালাকুল মাওত’ বা মৃত্যুর মালাকের নাম ‘আযরাঈল’ বলে কোনো কোনো মুফাস্সির উল্লেখ করেছেন। প্রথম ৪ জন মালাকের নামই শুধু মুতাওয়াতিররূপে বর্ণিত হয়েছে। কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এবং অগণিত হাদীসে এদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু কিছু মালাককে আল্লাহ কর্মভিত্তিক নামে উল্লেখ করেছেন। যেমন ‘মালাকুল মাওত’, ‘মুনকার-নাকির’, ‘কিরামান কাতিবীন’ ইত্যাদি।
[2] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৫৫৬। তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।
[3] সূরা (৭৪) মুদ্দাস্সির: ৩১ আয়াত।
[4] সূরা (২) বাকারা: ৯৮ আয়াত।
[5] সূলা (৫৩) নাজম: ৫-৬ আয়াত।
[6] সূরা (২৬) শু‘আরা: ১৯২-১৯৪ আয়াত।
[7] সূরা (৪৩) যুখরুফ: ৭৭ আয়াত।
[8] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫৩৪।
[9] বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান ৩/৩৩৫; মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৬০-৬১।