ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র বন্ধুত্ব ও মুক্ততা শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১১ টি
প্রশ্ন: কাফেরদের ধর্মীয় উৎসব ও আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা নাজায়েয হওয়া সংক্রান্ত ফতোয়াগুলো আমি পড়েছি। কিন্তু আমি জানতে চাই, তাদের ব্যক্তিগত যেসব অনুষ্ঠানাদি রয়েছে যেমন- বিয়ে-সাদী, নিখোঁজ ব্যক্তির ফিরে আসা ইত্যাদি উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি?

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

কাফেরদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো নিঃসন্দেহে হারাম। এ সংক্রান্ত একাধিক ফতোয়াতে আমরা সে বিষয়টি বর্ণনা করেছি এবং এ ব্যাপারে সাবধান করেছি। ফতোয়া নং 947, 11427, 45281130 দ্রষ্টব্য।

দুই:

পক্ষান্তরে তাদের ব্যক্তিগত যেসব উপলক্ষ যেমন- বিয়ে-সাদী, স্কুলে ভাল ফলাফল করা, নতুন চাকুরী পাওয়া, রোগ মুক্ত হওয়া, সন্তান লাভ করা কিংবা ভ্রমণ শেষে ফিরে আসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে। এ তিনটি অভিমতের প্রত্যেকটি ইমাম আহমাদের মত হিসেবেও বর্ণিত আছে। কারো কারো মতে, এ ধরণের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন জায়েয। কারো কারো মতে, নাজায়েয। কেউ কেউ দ্বীনি কল্যাণ থাকার শর্ত সাপেক্ষে জায়েয বলেছেন; যেমন- তাদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা কিংবা তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। তিনটি অভিমতের মধ্যে শেষোক্ত অভিমতটি অধিক অগ্রগণ্য। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

ইবনে মুফলিহ আল-হাম্বলি (রহঃ) বলেন:

তাদের (কাফেরদের) রোগী দেখতে যাওয়া, তাদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা কিংবা সমবেদনা জানানো হারাম। তাঁর থেকে – অর্থাৎ ইমাম আহমাদ থেকে- জায়েয হওয়া মর্মেও বর্ণনা আছে। আরেকটি বর্ণনায় আছে, কল্যাণের সম্ভাবনা প্রবল হলে জায়েয। আমাদের শাইখ –অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়া- এ অভিমতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবং এ অর্থবোধক মতকে ইমাম আজুর্রিও প্রাধান্য দিয়েছেন।

আলেমদের বক্তব্যে এসেছে যে, রোগী দেখতে গিয়ে তার কাছে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পেশ করা হবে। আবু দাউদ উল্লেখ করেছেন যে, যদি ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে (তাকে দেখতে যায়) তবে: হ্যাঁ।

[আল-ফুরু ওয়া তাসহীহুল ফুরু (১০/৩৩৪)]

এ ধরণের শুভেচ্ছা জায়েয হওয়ার জন্য আরও যেসব শর্ত পূর্ণ হতে হবে এখানে আমরা সে শর্তগুলো উল্লেখ করব:

১। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা, কিংবা দেখতে যাওয়ার পরিবেশ যাবতীয় গর্হিত বিষয় থেকে মুক্ত হওয়া চাই; যেমন- নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান-বাজনা, হারাম খাবার-দাবার। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনুষ্ঠানাদিও নানারকম গর্হিত বিষয় থেকে মুক্ত থাকে না; অমুসলিমদের অনুষ্ঠানাদির অবস্থা তো আরও গুরুতর। আরও জানতে দেখুন: 3325 নং প্রশ্নোত্তর।

২। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ভাষা শরিয়ত-গর্হিত বিষয়াদি যেমন- শুরুতে সালাম, সম্মান ও স্থায়িত্বের দোয়া ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন:

পরিচ্ছেদ: তাদেরকে (কাফেরদেরকে) বিবাহ, সন্তান লাভ, নিখোঁজ ব্যক্তির ফেরত আসা, রোগমুক্তি কিংবা কোন বিপদ মুক্তি ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন জানানো: ইমাম আহমাদ থেকে এ মাসয়ালায় একাধিক বর্ণনা রয়েছে। তিনি একবার জায়েয বলেছেন। একবার নাজায়েয বলেছেন। এ মাসয়ালার বিধান মৃত্যুকেন্দ্রিক সমবেদনা জানানো ও অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া সংক্রান্ত মাসয়ালার বিধানের অনুরূপ। এ দুই মাসয়ালার মধ্যে কোন তফাৎ নেই। তবে, সাবধান থাকতে হবে যাতে করে তাদের ধর্মের প্রতি সন্তুষ্টি নির্দেশক কোন কথাবার্তা প্রকাশ না পায়; সাধারণতঃ অজ্ঞ লোকদের থেকে যেগুলো ঘটে থাকে। যেমন এমন কথা বলা যে, “আল্লাহ আপনাকে আপনার ধর্মে সুখী করুন”, আল্লাহ আপনাকে আপনার ধর্মে মজবুত করুন, কিংবা বলা যে, “আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন”; তবে, যদি বলে যে, “আল্লাহ আপনাকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন” কিংবা এ জাতীয় কোন কথা তাহলে সেটা জায়েয। উল্লেখিত উপলক্ষগুলো কাফেরদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়যোগ্য।

[আহকামু আহলিয যিম্মাহ (১/৪৪১)]

৩। যদি কোন কাফের কোন গুনাহের সফর থেকে ফিরে আসে কিংবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসে, কিংবা কোন হারাম চাকুরী লাভ করে (যেমন- ব্যাংকে চাকুরী বা শরিয়ত বিরোধী আইনে বিচারকের চাকুরী) তাহলে তাকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা যাবে না; এমন কি এসব ক্ষেত্রে কোন মুসলমানকেও অভিনন্দন জানানো যাবে না।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন:

যে ব্যক্তি কোন মানুষকে পাপকর্ম, বিদআত কিংবা কুফরির জন্য অভিনন্দন জানাবে সে নিজেকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির মুখোমুখি করল। জালেমেরা ক্ষমতা লাভ করলে তাকওয়াবান আলেমগণ তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকতেন। মূর্খ লোকেরা বিচারকের দায়িত্ব, শিক্ষকতার দায়িত্ব কিংবা ফতোয়া দেয়ার দায়িত্ব পেলে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে কিংবা আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা কমে যাওয়ার ভয়ে তারা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি কোন আলেম পরীক্ষার মুখোমুখি হন এবং জালেমের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন; তিনি তাদের কাছে গিয়ে যা কিছু বলেন ভাল কথা বলেন, তাদের জন্য তাওফিকের দোয়া করেন; তাতে কোন অসুবিধা নেই।”[আহকামু আহলিয যিম্মাহ (১/৪৪১ ৪৪২)]

৪। কাফের নেতৃবৃন্দ যেমন- ধর্মযাজক, বিশপ ও অন্যান্য কাফের নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানানো থেকে বিরত থাকা। যেহেতু তাদের ইসলাম গ্রহণের আশা নেই। এবং যেহেতু তাদেরকে অভিনন্দন জানানো ও তাদের অনুষ্ঠানে যোগদান করার মাধ্যমে তাদের প্রভাব জোরদার হয় ও মুসলমানদের প্রভাব দুর্বল হয়। তবে, সুনির্দিষ্ট কোন নেতার ইসলাম গ্রহণের আশা থাকলে সেক্ষেত্রে জায়েয হবে। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালেবকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গিয়েছেন।

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ) কে খ্রিস্টান যাজকের আগমন উপলক্ষে তাকে অভিবাদন জানানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অসুস্থ ইহুদী ছেলেকে দেখতে গিয়েছেন সে ছেলেটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেবা করত। যখন সে অসুস্থ হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন; যাতে করে তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করতে পারেন। গিয়ে তিনি তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করল। এই ইহুদী ছেলের ঘটনা আর খ্রিস্টান যাজকের নিরাপদ আগমন ও তার সাথে সৌহার্দ্য বাড়ানোর জন্য তাকে অভিবাদন জানানো দুটোর মাঝে কি তুলনা চলে!? কোন অজ্ঞা লোক কিংবা কুপ্রবৃত্তির অনুসারী ছাড়া অন্য কেউ এ দুটোর একটির ওপর অন্যটির কিয়াস করতে পারে না।[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন (৩/৪৭)]

সার কথা হলো: এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে- এ ধরণের অভিনন্দন ইতিপূর্বে উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে জায়েয। যদিও এ মাসয়ালার সতর্কতামূলক উত্তর হচ্ছে- বিধর্মীদের অভিবাদন জানানো থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা এবং তাদের সাথে উঠাবসা না করা।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/127500
প্রশ্ন: অমুসলিমরা যখন আমাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলে, ‘শুভ নববর্ষ’, কিংবা বলে ‘শুভ কামনা’ তখন প্রত্যুত্তরে তাদেরকে ‘আপনাদের জন্যেও অনুরূপ’ বলা কি জায়েয হবে?

 আলহামদুলিল্লাহ।

খ্রিস্টমাস (ইংরেজী নববর্ষ) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদেরকে শুভেচ্ছা জানানো জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তারা যদি এসব উৎসব উপলক্ষে আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানায় সেসব শুভেচ্ছার জবাব দেয়াও আমাদের জন্য জায়েয নয়। কেননা আমাদের ধর্মে এসব দিবসের বিধান নেই। তাদের শুভেচ্ছার প্রত্যুত্তর দেয়ার মধ্যে এসব উৎসবের প্রতি অনুমোদন ও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে নিজ ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করা, ধর্মীয় বিধান নিয়ে গৌরব করা, অন্যদেরকে দাওয়াত দেয়া ও আল্লাহর ধর্ম প্রচার করার ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকা।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়: খ্রিস্টমাস উপলক্ষে কাফেরদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কী? তারা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করলে আমরা কিভাবে এর জবাব দিব? এ উৎসব উপলক্ষে তারা যে অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে সেসব অনুষ্ঠানে যাওয়া কি জায়েয? কেউ যদি উল্লেখিত বিষয়গুলোর কোন একটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নয়; বরং ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে কিংবা লজ্জাবোধ থেকে কিংবা জড়তা থেকে কিংবা এ ধরণের অন্য যে কোন কারণে করে ফেলে সে কি গুনাহগার হবে? এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তাদের মত রূপ ধারণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তরে তিনি বলেন: খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্যকোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদেরকে শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) তাঁর ‘আহকামু আহলিয যিম্মাহ’ নামক গ্রন্থে এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”[উদ্ধৃতি সমাপ্ত] কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরী কর্মের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩] অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; চাই তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কোন লোক হোক।

আর বিধর্মীরা যদি আমাদেরকে তাদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায় আমরা এর উত্তর দিব না। কারণ সেটা আমাদের ঈদ-উৎসব নয়। আর যেহেতু এসব উৎসবের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। আর যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানবজাতির কাছে ইসলাম ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যে ধর্মের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্মকে রহিত করে দেয়া হয়েছে; হোক এসব উৎসব সংশ্লিষ্ট ধর্মে অনুমোদনহীন নব-সংযোজন কিংবা অনুমোদিত (সবই রহিত)। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৫]

কোন মুসলমানের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য। কারণ এতে করে দাওয়াতকৃত কুফরী অনুষ্ঠানে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হয়।

অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবার-দাবার আদান-প্রদান করা, ছুটি ভোগ করা ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের-ই দলভুক্ত”। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।”[উদ্ধৃতি সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি এমন কোন কাজে লিপ্ত হয়েছে সে গুনাহ করেছে; সেটা যে কারণেই করুক না কেন: ভদ্রতার খাতিরে, কিংবা সম্প্রীতি থেকে কিংবা লজ্জা থেকে কিংবা অন্য যে কারণেই করুক না কেন। কারণ এটি আল্লাহর দ্বীনের ক্ষেত্রে আপোষকামিতা। এবং এটি বিধর্মীদের মনোবল শক্ত করা ও স্ব-ধর্ম নিয়ে তাদের গর্ববোধ তৈরী করার কারণের অন্তর্ভুক্ত।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী করেন, ধর্মের ওপর অবিচল রাখেন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাদেরকে বিজয়ী করেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন ৩/৪৪]

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/69811
প্রশ্ন: ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে মুসলমানরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো ও দোয়া করা কি জায়েয? উল্লেখ্য, তারা উদযাপন করার নিয়তে তা করে না।

 আলহামদুলিল্লাহ।

মুসলমানদের জন্য ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা নাজায়েয; যেমনিভাবে এটি উদযাপন করাও জায়েয নয়। যেহেতু এ দুইটি কাজের মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অথচ আমাদেরকে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত”[সুনানে আবু দাউদ (৪০৩১), আলবানী ‘সহিহু সুনানে আবি দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

তাছাড়া প্রতি বছর নির্দিষ্ট কোন একটি দিনে শুভেচ্ছা জানানো সে দিনটি উদযাপন করা ও সে দিনটিকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করার নামান্তর; ইসলামে এটি নিষিদ্ধ।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/177460
প্রশ্ন: বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি?

 আলহামদুলিল্লাহ।

খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদের শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”[উদ্ধৃতি সমাপ্ত]

কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩] অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক।

আর বিধর্মীরা যদি আমাদেরকে তাদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায় আমরা এর উত্তর দিব না। কারণ সেটা আমাদের ঈদ-উৎসব নয়। আর যেহেতু এসব উৎসবের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। আর যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানবজাতির কাছে ইসলাম ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যে ধর্মের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্মকে রহিত করে দেয়া হয়েছে; হোক এসব উৎসব সংশ্লিষ্ট ধর্মে অনুমোদনহীন নব-সংযোজন কিংবা অনুমোদিত (সবই রহিত)। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৫]

কোন মুসলমানের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য। কারণ এতে করে দাওয়াতকৃত কুফরী অনুষ্ঠানে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হয়।

অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবার-দাবার আদান-প্রদান করা, ছুটি ভোগ করা ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের-ই দলভুক্ত”। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।”[উদ্ধৃতি সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি বিধর্মীদের এমন কোন কিছুতে অংশগ্রহণ করবে সে গুনাহগার হবে। এ অংশগ্রহণের কারণ সৌজন্য, হৃদ্যতা বা লজ্জাবোধ ইত্যাদি যেটাই হোক না কেন। কেননা এটি আল্লাহর ধর্মের ক্ষেত্রে আপোষকামিতার শামিল। এবং এটি বিধর্মীদের মনোবল শক্ত করা ও স্ব-ধর্ম নিয়ে তাদের গর্ববোধ তৈরী করার কারণের অন্তর্ভুক্ত।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী করেন, ধর্মের ওপর অবিচল রাখেন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাদেরকে বিজয়ী করেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।[মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন ৩/৩৬৯]

https://islamqa.info/bn/947

 উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালন একটি রোমান জাহেলি উৎসব। রোমানরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পরেও এ দিবস পালনের প্রথা অব্যাহত রাখে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন নামক একজন পাদ্রির মৃত্যুদণ্ডের সাথে এ উৎসবটি সম্পৃক্ত। বিধর্মীরা এখনো এ দিবসটি পালন করে, ব্যভিচার ও অনাচারের মধ্যে তারা এ দিবসটি কাটিয়ে থাকে।

দুই:

কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোন উৎসব পালন করা জায়েয নয়। কেননা উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে শরয়ি নির্দেশনার এক চুল বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় অনুশাসন, ইসলামী আদর্শ ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তোমাদের প্রত্যেককে আমি আলাদা শরিয়ত ও মানহাজ (আদর্শ) দিয়েছি”। তিনি আরও বলেন: “প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে আলাদা শরিয়ত দিয়েছি; যা তারা পালন করে থাকে” যেমন- কিবলা, নামায, রোজা। অতএব, তাদের উৎসব পালন ও তাদের অন্যসব আদর্শ গ্রহণ করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ তাদের সকল উৎসবকে গ্রহণ করা কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। তাদের কিছু কিছু জিনিস গ্রহণ করা কিছু কিছু কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। বরং উৎসবগুলো প্রত্যেক ধর্মের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং ধর্মীয় আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম। অতএব, এটি গ্রহণ করা মানে কুফরের সবিশেষ অনুশাসন ও সবচেয়ে প্রকাশ্য আলামতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা। কোন সন্দেহ নেই যে, এ ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করা মানে কুফরের অনুকরণ করা।

এর সর্বনিম্ন অবস্থা হচ্ছে- গুনাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন: “নিশ্চয় প্রত্যেক কওমের উৎসব রয়েছে। এটা হচ্ছে আমাদের ঈদ বা উৎসব”। এটি যুনার (জিম্মিদের বিশেষ পোশাক) বা এ বিজাতিদের বিশেষ কোন আলামত গ্রহণ করার চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট। কেননা এ ধরনের আলামত কোন ধর্মীয় বিষয় নয়; বরং এ পোশাকের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুমিন ও কাফেরের আলাদা পরিচয় ফুটিয়ে তোলা। পক্ষান্তরে তাদের উৎসব ও উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো একান্ত ধর্মীয়; যে ধর্মকে ও ধর্মাবলম্বীকে লানত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা আল্লাহর আযাব ও গজব নাযিলের কারণ হতে পারে।[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২০৭]

তিনি আরও বলেন: “কোন মুসলমানের জন্য তাদের উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর ক্ষেত্রে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন, খাবার দাবার, পোশাকাদি, গোসল, আগুন জ্বালানো অথবা এ উৎসবের কারণে কোন অভ্যাস বা ইবাদত বর্জন করা ইত্যাদি। এবং কোন ভোজানুষ্ঠান করা, উপহার দেওয়া, অথবা এ উৎসব বাস্তবায়নে সহায়ক এমন কিছু বেচাবিক্রি করা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবে শিশুদেরকে খেলতে যেতে দেওয়া এবং সাজসজ্জা প্রকাশ করা জায়েয নয়।

মোদ্দাকথা, বিধর্মীদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়। বরং তাদের উৎসবের দিন মুসলমানদের নিকট অন্য সাধারণ দিনের মতই। মুসলমানেরা এ দিনটিকে কোনভাবে বিশেষত্ব দিবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/১৯৩)]

হাফেয যাহাবী বলেন: খ্রিস্টানদের উৎসব বা ইহুদিদের উৎসব যেটা তাদের সাথে খাস এমন কোন উৎসবে কোন মুসলমান অংশ গ্রহণ করবে না। যেমনিভাবে কোন মুসলমান তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলো ও কিবলাকে গ্রহণ করে না।[তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস, মাজাল্লাতুল হিকমা (৪/১৯৩)]

শাইখুল ইসলাম যে হাদিসটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন সে হাদিসটি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: একবার আবু বকর (রাঃ) আমার ঘরে এলেন। তখন আমার কাছে আনসারদের দুইটি বালিকা ছিল। বুআসের দিন আনসারগণ যে পংক্তিমালা বলেছিল তারা সেগুলো দিয়ে গান গাইছিল। আয়েশা (রাঃ) বলেন: মেয়ে দুইটি গায়িকা ছিল না। তা দেখে আবু বকর (রাঃ) বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে শয়তানের বীনা! সেদিন ছিল ঈদের দিন। তাঁর কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আবু বকর, প্রত্যেক জাতির উৎসব থাকে। এটা আমাদের উৎসবের দিন।

সুনানে আবু দাউদ এ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসী বিশেষ দুইটি দিনে খেলাধুলা করত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এ দুইটি দিনের হাকিকত কি? তারা বলল: জাহেলী যুগে আমরা এ দুইটি দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুইটি দিনের চেয়ে উত্তম দুইটি দিন দিয়েছেন। ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।” আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। এটি প্রমাণ করে ঈদ বা উৎসব প্রত্যেক জাতির একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সুতরাং কোন জাহেলি উৎসব বা মুশরিকদের উৎসব পালন করা জায়েয নয়।

ভালবাসা দিবস পালন করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন:

১। এ বিষয়ে শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রশ্নটি নিম্নরূপ:

- সম্প্রতি ভালবাসা দিবস উদযাপন করার প্রবণতা বিস্তার লাভ করেছে; বিশেষতঃ ছাত্রীদের মাঝে। এটি একটি খ্রিস্টান উৎসব। এ দিনে লাল বেশ ধারণ করা হয়। লাল পোশাক ও লাল জুতা পরিধান করা হয়। লাল ফুল বিনিময় করা হয়। আমরা এ ধরণের উৎসব পালন করার শরয়ি বিধান জানতে চাই এবং এ ধরণের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য দিক নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি? আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করুন।

তিনি উত্তরে বলেন: ভালবাসা দিবস পালন নিম্নোক্ত কারণে জায়েয নয়

এক. এটি একটি বিদআতি উৎসব; শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।

দুই. এটি মানুষকে অবৈধ প্রেম ও ভালবাসার দিকে আহ্বান করে।

তিন. এ ধরনের উৎসব মানুষের মনকে সলফে সালেহিনদের আদর্শের পরিপন্থী অনর্থক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখে।

সুতরাং এ দিনের কোন একটি নিদর্শন ফুটিয়ে তোলা জায়েয হবে না। সে নিদর্শন খাবার-পানীয়, পোশাকাদি, উপহার-উপঢৌকন ইত্যাদি যে কোন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট হোক না কেন।

মুসলমানের উচিত তার ধর্মকে নিয়ে গর্ববোধ করা। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দেয়া। আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে প্রকাশ্য ও গোপন সকল ফিতনা থেকে হেফাযত করেন এবং তিনি যেন আমাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন, আমাদের তাওফিক দান করেন।[শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (১৬/১৯৯)]

২। ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কিছু কিছু মানুষ প্রতি বছর ঈসায়ী সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে) পালন করে থাকে। এ দিনে তারা লাল গোলাপ বিনিময় করে, লাল পোশাক পরিধান করে, একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। কিছু কিছু মিষ্টির দোকান লাল রঙের মিষ্টি তৈরী করে, এর উপরে ‘লাভ চিহ্ন’ অংকন করে। কিছু কিছু দোকান এ দিনের জন্য তৈরী বিশেষ বিশেষ সামগ্রীগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। সুতরাং নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনাদের অভিমত কি:

এক: এ দিনটি পালন করার বিধান কি?

দুই: এ দিন উদযাপনকারী দোকান থেকে কেনাকাটা করার বিধান কি?

তিন: এ দিনে যারা উপহার বিনিময় করে থাকে তাদের কাছে এসব উপকরণ বিক্রি করার বিধান কি?

উত্তরে তারা বলেন: কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল ও সলফে সালেহিনের ইজমার ভিত্তিতে জানা যায় যে, ইসলামে ঈদ শুধু দুইটি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ ছাড়া যত উৎসব আছে সে উৎসব কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হোক, দলকেন্দ্রিক হোক, কোন ঘটনাকেন্দ্রিক হোক অথবা বিশেষ কোন ভাবাবেগকেন্দ্রিক হোক সেগুলো বিদআত। মুসলমানদের জন্য সেসব উৎসব পালন করা, তাতে সম্মতি দেয়া, এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা অথবা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করা নাজায়েয। কারণ এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘনের শামিল। যে ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া সীমা লঙ্ঘন করে সে নিজ আত্মার উপরই জুলুম করে। এর সাথে এ উৎসব যদি কাফেরদের উৎসব হয়ে থাকে তাহলে এটি এক গুনাহর সাথে আরও একটি গুনাহর সম্মিলন। কারণ এ উৎসব পালনের মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য ও তাদের সাথে মিত্রতা গ্রহণের বাস্তবতা পাওয়া যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ ও তাদের মিত্রতা গ্রহণ থেকে নিষেধ করেছেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত”। ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ সম্পর্কে বলা হয়- এটি পৌত্তলিক ও খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের জন্য এ দিবস পালন করা, এটাকে সমর্থন করা অথবা এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা জায়েয হবে না। বরং মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং আল্লাহর গজব ও শাস্তির কারণসমূহ থেকে দূরে থাকার নিমিত্তে এটি বর্জন করা এবং এর থেকে দূরে থাকা। অনুরূপভাবে এ গর্হিত দিবস উদযাপনে কোন ধরনের সহযোগিতা করা থেকে বেঁচে থাকা। যেমন-পানাহার, বেচাবিক্রি, কেনাকাটা, পণ্যপ্রস্তুত, উপহার বিনিময়, পত্র বিনিময়, বিজ্ঞাপন প্রদান ইত্যাদি যে কোন প্রকারের সহযোগিতা হোক না কেন সেসব থেকে বেঁচে থাকা। কারণ এ ধরনের সহযোগিতা গুনাহর কাজ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন: “সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ২] একজন মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- সর্বাবস্থায় কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে থাকা; বিশেষতঃ ফিতনা-ফাসাদের সময়। মুসলমানের উচিত যাদের উপর আল্লাহ লানত পড়েছে, যারা পথভ্রষ্ট, যারা পাপাচারী- আল্লাহকে সম্মান করে না, ইসলামের সম্মান চায় না এ সকল মানুষের বিভ্রান্তির ব্যাপারে সচেতন থাকা। মুসলমানের দায়িত্ব আল্লাহর কাছে ধর্না দিয়ে তাঁর নিকট হেদায়েতের জন্য ও এর উপর অটল থাকার জন্য প্রার্থনা করা। কারণ আল্লাহ ছাড়া কোন হেদায়েতদাতা নেই, তিনি ছাড়া অটল রাখার কেউ নেই। তিনি পবিত্রময়, তিনিই তাওফিকদাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। সমাপ্ত।

৩। শাইখ জিবরীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল

আমাদের যুবক-যুবতীর মাঝে ভালবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে) পালনের রেওয়াজ বিস্তার লাভ করেছে। ভ্যালেন্টাইন হচ্ছে- একজন পাদ্রির নাম। খ্রিস্টানেরা এ পাদ্রিকে সম্মান করে থাকে এবং প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা এ দিবসটি উদযাপন করে, উপহার-উপঢৌকন ও লাল গোলাপ বিনিময় করে থাকে, লাল রঙের পোশাক পরিধান করে থাকে। এ দিবসটি পালন করার শরয়ি বিধান কী? অথবা এ দিনে উপহার বিনিময় ও আনন্দ প্রকাশ করার বিধান কী?

জবাবে তিনি বলেন:

এক. এ ধরণের বিদআতি উৎসব পালন করা নাজায়েয। এটি নবউদ্ভাবিত বিদআত। শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বিধানের আওতায় পড়বে যে হাদিসে এসেছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীন বা শরিয়তের মধ্যে এমন কিছু চালু করবে যা এতে নেই সেটি প্রত্যাখ্যাত।”

দুই. এ দিবস পালনের মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ, তারা যে বিষয়কে মর্যাদা দেয় সেটাকে মর্যাদা প্রদান, তাদের উৎসবের প্রতি সম্মান দেখানো এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করার অর্থ পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তি বিজাতিদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত।”

তিন. এ দিবস পালনের মধ্যে অনেক ক্ষতিকর ও গর্হিত বিষয় রয়েছে। যেমন- খেলতামশা করা, গান করা, বাঁশী বাজানো, গিটার বাজানো, বেপর্দা হওয়া, বেহায়াপনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গায়রে মোহরেম পুরুষের সামনে নারীদের প্রদর্শনী ইত্যাদি হারাম কাজ এবং ব্যভিচারের উপকরণ ও সূচনাগুলো এ উৎসবে ঘটে থাকে। এটাকে জায়েয করার যুক্তি হিসেবে চিত্ত বিনোদনের যে কারণ দর্শানো হয় বা রক্ষণশীল থাকার দাবী করা হয় সেটা অমূলক। যে ব্যক্তি নিজের কল্যাণ চায় তার উচিত গুনাহর কাজ ও উপকরণ থেকে দূরে থাকা।

তিনি আরও বলেন:

অতএব, যদি বিক্রেতা জানতে পারে যে, ক্রেতা এ উপঢৌকন ও গোলাপ ফুল কিনে এ দিবস উদযাপন করবে, কাউকে উপহার দিবে অথবা এ দিবসগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে তাহলে ক্রেতার কাছে এগুলো বিক্রি করা নাজায়েয; যাতে করে বিক্রেতা এই বিদআত সম্পাদনকারী ব্যক্তির সাহায্যকারী হিসেবে সাব্যস্ত না হয়। আল্লাহই ভাল জানেন। সমাপ্ত।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/73007
প্রশ্ন: আমি একটি ইসলামিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। আমাদের সাথে ডেনমার্কের কিছু অমুসলিম শিক্ষক আছেন। প্রতিবছর খ্রিস্টমাসের উৎসব উপলক্ষে আমরা সকলে একটি হলরুমে একত্রিত হই, নিজেরা হালাল খাবার তৈরী করি, কোন ড্রিংক্‌স করি না। উল্লেখ্য, আমরা এ অনুষ্ঠানটি করি খ্রিস্টমাসের উৎসব শেষ হওয়ার প্রায় একমাস বা তারও বেশিদিন পর; যাতে করে তাদের উৎসবে অংশ গ্রহণ করার সংশয় থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি। মুসলমান হিসেবে আমাদের এ ভোজ অনুষ্ঠানে যোগদান করা কি জায়েয হবে? আমরা তো নিজেরা খাবার প্রস্তুতে অংশ গ্রহণ করে থাকি? আল্লাহ আপনাদেরকে মোবারকময় করুন।

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) খাবার খাওয়া জায়েয করেছেন। সে খাবার কোন নিমন্ত্রণ হোক, মেহমানদারি হোক, হাদিয়া হোক অথবা অন্য যে কোন প্রয়োজন বা সামাজিকতা কেন্দ্রিক হোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদিদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন, তাদের খাবার খেয়েছেন।

তবে সে খাবার গ্রহণ তাদের সাথে মিত্রতা, বন্ধুত্ব, অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে হতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫১] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন (ভাবানুবাদ): “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক; তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরিয়ে এসেছে। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে আছে তা আরো বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৮]

শাইখ বিন বাযকে প্রশ্ন করা হলো- “যদি মুসলমান ব্যক্তি কোন খ্রিস্টান বা কাফের এর সাথে পানাহার করে সেটা কি হারাম হিসেবে পরিগণিত হবে? যদি সেটা হারাম হয় তাহলে আমরা আল্লাহ তাআলার বাণী (ভাবানুবাদ): “আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ০৫] এর ব্যাপারে কি বলব?

এর জবাবে শাইখ বলেন: যদি প্রয়োজন হয় অথবা কোন শরয়ি কল্যাণ থাকে সে ক্ষেত্রে কাফেরের সাথে খাবার গ্রহণ করা হারাম নয়। তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না; যার ফলে কোন আইনানুগ কারণ বা শরয়ি কল্যাণ ছাড়া এমনিতেই একত্রে তাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, সঙ্গ দেয়া হয়, হাসি-তামাশা করা হয়। তবে যদি প্রয়োজন হয় যেমন তারা মেহমান হিসেবে আসলে অথবা তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকার উদ্দেশ্য নিয়ে, সত্যের দিকনির্দেশনা দেয়ার উদ্দেশ্যে অথবা অন্য কোন শরয়ি কারণে এগুলো করা যেতে পারে। এতে কোন অসুবিধা নেই।

আহলে কিতাবদের খাবার খাওয়া আমাদের জন্য জায়েয হওয়ার অর্থ এ নয় যে, কোন প্রয়োজন বা শরয়ি কল্যাণ ব্যতিরেকে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে, সঙ্গি হিসেবে গ্রহণ করা যাবে বা তাদের সাথে খেতে হবে। আল্লাহই তাওফিকদাতা। সমাপ্ত।[ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (শাইখ বিন বায ফতোয়াসমগ্র ৯/৩২৯)]

দুই:

খ্রিস্টমাস বা কাফেরদের অন্য কোন উৎসবে উদযাপন করা বা তাতে অংশ গ্রহণ করা বা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো জায়েয নয়। দেখুন প্রশ্ন নং 947145950

ঈদ উদযাপন বা উৎসব পালনের ধরণ হলো: এ উৎসবগুলোর ভোজানুষ্ঠানে যোগদান করা অথবা তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করা। মুসলিম-অমুসলিম সবাই জানে এ কাজগুলো উৎসব পালন করার নামান্তর।

এ ভোজানুষ্ঠানকে একমাস আগানো বা পিছানোর দ্বারা শরয়ি হুকুমের কোন পরিবর্তন হবে না। যেহেতু এ ভোজানুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে মুশরিকদের উৎসবকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে অথবা খ্রিস্টমাসের নির্ধারিত দিনের অনুষ্ঠানের বদলে তাদের জন্য এ অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে।

ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:

ঈদ বা উৎসব হচ্ছে- এমন একটি জাতিবাচক বিশেষ্য যা প্রতিটি দিন বা স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করে যে দিন বা স্থানকে কেন্দ্র করে তারা (বিধর্মীরা) সম্মিলিত হয়ে থাকে এবং প্রতিটি কর্মকে অন্তর্ভুক্ত করে; যে কর্মগুলো তারা এ স্থান ও কালে প্রচলন করে থাকে। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা শুধু তাদের উৎসবের বিশেষ কিছু অংশের উপর নয়। বরং তারা যে যে সময় বা স্থানকে মর্যাদা দিয়ে থাকে ইসলামে যার কোন ভিত্তি নেই সেগুলো যেমন নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত; তেমনি তারা সে স্থান ও কাল কেন্দ্রিক অভিনব যে কর্মগুলোর প্রচলন করে থাকে সেগুলোও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের আগে বা পরের দিনগুলোতে উৎসব উপলক্ষে তারা যে বিষয়গুলো চালু করে থাকে অথবা উৎসবস্থলের আশপাশে যা কিছু ঘটে থাকে অথবা উৎসবের কারণে যে কর্মগুলো করা হয়ে থাকে সবগুলোর হুকুম এক। এগুলোর কোনটি করা যাবে না। কিছু কিছু মানুষ উৎসবের দিন যেমন-পবিত্র বৃহষ্পতিবার বা খ্রিস্টমাসের সময় এগুলো করে না; কিন্তু তারা পরিবার-পরিজনকে প্রতিশ্রুতি দেয় অন্য কোন সপ্তাহে বা মাসে আমি তোমাদের জন্য এর ব্যবস্থা করব। এটি করার পিছনে কারণ থাকে সেই উৎসব। যদি সেই উৎসব না থাকত তাহলে তারা এগুলো করত না। এটি বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যের মধ্যে পড়ে। বরং পরিবারকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত ঈদের প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত এবং ঈদের সময় তাদের জন্য এমন কিছুর ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তারা অন্যদের উৎসবের দিকে ধাবিত না হয়। যদি এতে তারা সন্তুষ্ট না হয়; তাহলে বলতে হবে: “লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (কোন নেকির কাজ করা বা বদকাজ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই আল্লাহ ছাড়া)। যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশি করতে গিয়ে তার পরিবারকে অসন্তুষ্ট করবে আল্লাহ তাকে ও তার পরিবারকে সন্তুষ্ট করে দিবেন।” সমাপ্ত।[ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুসতাকিম ২/৫-৬]

সারকথা হচ্ছে- প্রশ্নে উল্লেখিত অনুষ্ঠান পালন করা জায়েয নেই। এটি মুশরিকদের বাতিল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার নামান্তর। মুসলমানগণ নিজেরা খাবার তৈরি করে বা তৈরিতে অংশ গ্রহণ করে বিধায় হুকুম ভিন্ন হবে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/146678
প্রশ্ন: মুসলমানেরা যেহেতু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবার্ষিকী পালন করে তাহলে নবী ঈসা (আঃ) এর জন্মবার্ষিকী পালন করতে তাদের অসুবিধা কোথায়? তিনি কি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী নন? আমি একজন লোকের কাছ থেকে এমন কথা শুনেছি। যদিও আমি জানি খ্রিস্টমাস পালন করা হারাম। কিন্তু আমি এ প্রশ্নের জবাব চাই। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ তাআলা বনি ঈসরাইলের কাছে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন মর্মে ঈমান আনা- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার অংশ। সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আনা ব্যতিরেকে কারো ঈমান শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “রাসূল তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। তারা সবাই আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর এবং রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছে। (তারা বলে): আমরা রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য করি না।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫]

ইবনে কাছির (রহঃ)

“মুমিনগণ বিশ্বাস করে আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, তিনি সবার আশ্রয়স্থল, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই; আর কোন রব্ব নেই। মুমিনগণ সকল নবী-রাসূল ও নবী-রাসূলের উপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। মুমিনগণ ঈমান আনার ক্ষেত্রে নবী-রাসূলদের কারো মাঝে পার্থক্য করে না। অর্থাৎ কারো প্রতি ঈমান আনে; কারো প্রতি ঈমান আনে না- এমনটি করে না। বরং তাঁরা সকলে তাদের নিকট সত্যবাদী, নেককার, সুপথপ্রদর্শক, হেদায়েতের উপর অটল, কল্যাণের দিশারী।”[তাফসির ইবনে কাছির থেকে সমাপ্ত (১/৭৩৬)]

সাদী (রহঃ) বলেন:

“তাঁদের একজনকে অস্বীকার করা মানে তাঁদের সকলকে অস্বীকার করা। বরং আল্লাহকে অস্বীকার করার পর্যায়ভুক্ত।”[তাফসিরে সাদী (পৃষ্ঠা-১২০)]

দুই:

মিলাদুন্নবী বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবার্ষিকী পালন করা বিদআত। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেননি এবং তাঁর পরবর্তীতে কোন সাহাবী সেটা পালন করেননি। এমনটি জানা যায়নি- মুসলিম ইমামগণের কেউ এটি পালন করাকে জায়েয বলেছেন; থাকতো তাঁরা এগুলোতে অংশগ্রহণ করবেন। এটি পালন করা হারাম ও গর্হিত বিদআত।

স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:

“মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা বিদআত, হারাম। যেহেতু এর সপক্ষে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিসে কোন দলিল নেই। সুপথপ্রাপ্ত খলিফাগণের কেউ অথবা উত্তম প্রজন্মের কেউ এটি পালন করেননি।”[সমাপ্ত, স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (২/২৪৪)]

আরও জানতে দেখুন 7031713810 নং প্রশ্নোত্তর।

সাধারণ মুসলমানগণ অথবা অজ্ঞ মুসলমানগণ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে যা করে থাকেন সেগুলো অভিনব বিষয়; এগুলোকে প্রতিহত করা ও এতে বাধা দেয়া কর্তব্য। তাই মিলাদুন্নবী উদযাপনকে খ্রিস্টমাস উদযাপনের পক্ষে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা মূলতই বাতিল। যেহেতু মিলাদুন্নবী পালন-ই জায়েয নয়। কারণ এটি নবপ্রচলিত বিদআত। বিদআতের উপর যে বিষয়কে কিয়াস করা হয় সেটাও বিদআত।

তিন:

খ্রিস্টানেরা ‘খ্রিস্টমাস’ নামে যা পালন করে থাকে সেটিও শিরকি বিদআত। মুসলমানদের এমন কোন অনুষ্ঠানের সদৃশ কিছু করা নাজায়েয। ঈসা (আঃ) এ ধরণের কর্ম থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মুসলমানদের জন্য –এটি বিদআত হওয়ার চেয়ে মারাত্মক হল- এটি কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করার নামান্তর; যেহেতু এটি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” [সুনানে আবু দাউদ (৩৫১২), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া হাদিসটির সনদকে “জায়্যিদ’ হুকুম দিয়ে বলেন: “এ হাদিসটির ন্যুনতম দাবী হচ্ছে- তাদের সাথে (বিধর্মীদের সাথে) সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম। যদিও হাদিসের বাহ্যিক ভাষা সাদৃশ্যগ্রহণকারীর কাফের হয়ে যাওয়ার দাবী রাখে। যেমনটি আল্লাহর বাণীর মধ্যে এসেছে “তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, পৃষ্ঠা ৮২-৮৩ সমাপ্ত]

শাইখুল ইসলাম আরও বলেন:

আপনার কাছে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর শরিয়ত বিলীন হয়ে যাওয়া এবং কুফর ও পাপাচার বিস্তার লাভ করার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে- কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ। অপরদিকে সকল কল্যাণের মূল হচ্ছে- নবীদের সুন্নত (আদর্শ) ও তাঁদের দেয়া অনুশাসনগুলো মেনে চলা। তাই ইসলামে বিদআতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর; যদি এর মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য না থাকে তবুও। আর যদি এ দুটি বিষয় একত্রিত হয় তাহলে সেটা কত বেশি ভয়াবহ?!

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

কাফেরদের খ্রিস্টমাস বা অন্য কোন উৎসব পালন করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেহেতু এর মধ্য দিয়ে তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলোর প্রতি সম্মতি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়; যদিও ব্যক্তি নিজের জন্য এ ধরণের কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট না থাকুক। কিন্তু কোন মুসলমানের জন্য কুফরি অনুশাসনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা বা এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হারাম। অনুরূপভাবে এ উপলক্ষে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টি বিতরণ করা, খাবার বিতরণ করা বা কাজ থেকে ছুটি কাটানো ইত্যাদি মুসলমানের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।”[সহিহ আবু দাউদ, শাইখ উছাইমীনের ফতোয়া ও পুস্তিকা সংকলন থেকে সংক্ষেপিত (৩/৪৫-৪৬)]

কাফেরদের উৎসবে যোগদান করার হুকুম জানার জন্য 1130 নং ও 145950 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

সারকথা হচ্ছে- খ্রিস্টবছরের শুরুতে উৎসব পালনের মধ্যে মুসলমানদের জন্য একাধিক ক্ষতির দিক রয়েছে:

১- যেসব কাফের-মুশরিক শিরক ও কুফরের অনুপ্রেরণা নিয়ে এ উৎসবগুলো উদযাপন করে এতে তাদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এর শরিয়ত হিসেবে এগুলো পালন করে না। কারণ আমাদের ও তাদের সর্বসম্মতিক্রমে ঈসা (আঃ) এসব পালনের বিধান জারী করেননি। বরং এগুলো শিরক ও বিদআত মিশ্রিত। এ অনুষ্ঠানগুলোতে নানা রকম পাপাচার তো থাকে-ই যেটা সবার জানা। সুতরাং আমরা কিভাবে এসব ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য নিতে পারি।

২- মিলাদুন্নবী উদযাপন-ই নাজায়েয। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এটি নবপ্রচলিত বিদআত। সুতরাং এর উপরে অন্য কিছুকে কিয়াস করা চলবে না। কারণ কিয়াসের মূল দলিল যদি ঠিক না হয়; কিয়াসও ঠিক হবে না।

৩- খ্রিস্টমাস পালন যে কোন অবস্থায় মুনকার, গর্হিত কাজ। এটিকে জায়েয বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ এটি মূলতঃ বাতিল। যেহেতু এতে রয়েছে- কুফর, ফিসক ও অবাধ্যতা। এ ধরণের কর্মকে অন্য কিছুর সাথে কিয়াস করার কোন সুযোগ নেই। কোন অবস্থাতে এটিকে জায়েয বলার কোনপ্রকার সুযোগ নেই।

৪- যদি আমরা এ বাতিল কিয়াসকে শুদ্ধ বলি তখন আমাদের উপর অনিবার্যতা আসবে: আমরা প্রত্যেক নবীর মিলাদ (জন্মদিবস) পালন করি না কেন? তাঁরা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নন?! অথচ এমন কথা কেউ বলবে না।

৫- কোন নবীর জন্মদিন সুনির্দিষ্টভাবে জানা অসম্ভব। এমনকি আমাদের নবীর ক্ষেত্রেও। কারণ তাঁর জন্মদিন অকাট্যভাবে জানা যায় না। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণের প্রায় ৯টি বা তারও বেশি অভিমত রয়েছে। তাই তাঁর জন্মদিন পালন ঐতিহাসিকভাবে ও শরয়িভাবে বাতিল। এবং মিলাদ পালনের বিষয়টি সেটি আমাদের নবীর জন্মদিন হোক অথবা ঈসা (আঃ) এর জন্মদিন হোক মূল থেকেই বাতিল। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মরাত পালন ঐতিহাসিকভাবে অথবা শরয়িভাবে সঠিক নয়। সমাপ্ত।[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব (১৯/৪৫)]

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/178136
প্রশ্ন: যুক্তরাজ্যের যেসব মুসলমান খ্রিস্টমাস (বড়দিন) এর মৌসুমে খ্রিস্টমাসের দিন অথবা এরপরে নিজেদের বাড়ীতে তাদের মুসলিম পরিবারের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করে তাদেরকে আপনারা কি উপদেশ দিবেন। যেমন- তুর্কি মোরগের রোস্ট তৈরি করা, খ্রিস্টমাস কেন্দ্রিক অন্যান্য নৈশ খাবারের আয়োজন করা। বেলুন ও কাগুজে ফুল দিয়ে নিজেদের বাড়ীঘর সজ্জিত করা। গোপন সান্তা প্রথা পালন করা। সেটা এ রকম- প্রত্যেক আত্মীয় গোপনে উপস্থিত কারো জন্য বিশেষ একটা উপহার নির্বাচন করবে। যার জন্য উপহারটি কেনা হয়েছে তাকে দেয়ার জন্য উপহারটি অনুষ্ঠানে নিয়ে আসবে; কিন্তু তাকে জানাবে না যে, সে কে? (সান্তাক্লজের ব্যাপারে আজগুবি বিশ্বাস অপনোদন করতে গিয়ে গোপন সান্তা প্রথাটি অমুসলিমদের মধ্যে যারা খ্রিস্টমাস পালন করে তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।) এই কাজটি কি হালাল; নাকি হারাম? যদি এ ধরণের অনুষ্ঠানে মুসলমান ছাড়া (আত্মীয়স্বজন ছাড়া) অন্য কেউ হাজির না হয়?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

যে উৎসবের কথা আপনি উল্লেখ করেছেন এটা হারাম তাতে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু এর মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। এটা সবার জানা আছে যে, মুসলমানদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া আর কোন উৎসব নেই। সপ্তাহের ঈদের দিন হচ্ছে শুক্রবার। এর বাইরে অন্য কোন ঈদ-উৎসব নিষিদ্ধ। এর বাইরে যে কোন উৎসব হয় বিদআতের মধ্যে পড়বে; যদি আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তির আশায় সেটা পালন করা হয়; যেমন-ঈদে মিলাদুন্নবী। অথবা কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যের পর্যায়ে পড়বে; যদি প্রথা হিসেবে সেটা পালন করা হয়; আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নয়। কারণ এ ধরণের বিদআতি উৎসব চালু করা আহলে কিতাবদের কর্ম; যাদের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য আমরা আদিষ্ট হয়েছি। যদি এই উৎসব-ই তাদের উৎসব হয় তখন হুকুম কেমন হবে!

এ মৌসুমে বেলুন দিয়ে ঘর সাজানো কাফেরদের উৎসব পালনে প্রকাশ্য অংশগ্রহণ করার নামান্তর।

মুসলমানদের উচিত নয়- এ দিবসগুলো উদযাপন করা, এ উপলক্ষে ঘরবাড়ী সাজ-সজ্জা করা বা খাবার-দাবার প্রস্তুত করা। মুসলমানদের এগুলো করা মানে কাফেরদের উৎসবে অংশ গ্রহণ করা। কাফেরদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা হারাম- এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: মুসলমানদের জন্য হারাম কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে সমবেত হওয়া, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টি বিতরণ করা, খাবার বিতরণ করা অথবা কর্মস্থল থেকে ছুটি কাটানো ইত্যাদি। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে উক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।” শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর “ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকিম মুখালিফাতু আসহাবিল জাহিম” গ্রন্থে বলেন: তাদের উৎসবের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণের অনিবার্য ফলাফল হলো- অসত্যের অনুসরণ সত্ত্বেও তাদের অন্তরাত্মাকে খুশি করা। এটাকে তারা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং দুর্বল ঈমানদারকে ভাগিয়ে নেয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে।”[সমাপ্ত]

যে ব্যক্তি এগুলোতে অংশ নিল সেটা সৌজন্যের খাতিরে হোক, সম্পর্কের কারণে হোক, লজ্জায় পড়ে হোক অথবা অন্য যে কোন কারণে হোক না কেন সে গুনার কাজ করল। কারণ এটি আল্লাহর দ্বীনের ক্ষেত্রে আপোষ; এতে কাফেরদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ধর্মীয় গৌরব উজ্জীবিত হয়” [শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র, ৩/৪৪]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি জবাব আছে। সেটা হচ্ছে- তাঁকে এমন মুসলমানদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যারা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নওরোজ উৎসবে খাবার তৈরী করে; ইপিপফানি, যীশুর জন্মদিন, পবিত্র বৃহষ্পতিবার (Maundy Thursday), পবিত্র শনিবার (Holy Saturday) ইত্যাদি দিবস পালন করে; যারা খ্রিস্টানদের কাছে এমন জিনিসপত্র বিক্রি করে যেগুলো তারা উৎসব পালনে ব্যবহার করে। মুসলমানদের জন্য এসব করা কি জায়েয? নাকি নাজায়েয?

তিনি জবাবে বলেন: আলহামদু লিল্লাহ। মুসলমানদের জন্য তাদের উৎসবের কোনকিছুতে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। না, তাদের খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে, না পোশাকে, না গোসলে, না অগ্নি প্রজ্বলনে, না প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা ইবাদত থেকে অবকাশ নেয়ার ক্ষেত্রে, কোন ক্ষেত্রেই নয়। তেমনি ভোজ-অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, তাদের উৎসবের সৌজন্যে বেচাবিক্রি করা, শিশুদেরকে তাদের উৎসবের খেলায় যেতে দেওয়া, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা ইত্যাদি কোনটি জায়েয নয়। মোদ্দাকথা, অর্থাৎ তাদের উৎসবের দিনকে কোন প্রকারে বিশেষত্ব দেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়। বরং মুসলমানদের নিকট সে দিনটিও অন্য দিনগুলোর ন্যায়। মুসলমানগণ তাদের উৎসবের কোন বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে না। আর প্রশ্নে যে বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে- এ বিষয়ে আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। বরং কোন কোন আলেমের মতে, এগুলো যারা করে তারা কাফের; যেহেতু এগুলো করার মধ্যে কুফরি নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। অপর একদল আলেম বলেন: “যে ব্যক্তি তাদের উৎসবের দিন কোন পশু জবাই করল সে যেন শুকর জবাই করল।” আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস বলেন: “যে ব্যক্তি বিধর্মী দেশের অনুসরণ করে, তাদের নওরোজ বা মেহেরজান পালন করে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং মৃত্যু অবধি এর উপর থাকে তার হাশর তাদের সাথে হবে”। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে সাবেত আদ-দাহহাক থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় এক ব্যক্তি ‘বুআনা’ নামক স্থানে (মক্কার নিকটবর্তী) একটি উট জবাই করার মানত করেছিল। এরপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল: আমি ‘বুআনা’ নামক স্থানে একটি উট জবাই করার মানত করেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: সেখানে কি জাহেলী যামানায় কোন মূর্তি ছিল; যে মূর্তির পূজা করা হত? সে লোক বলল: না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: সেখানে কি কোন জাহেলী উৎসব পালন হত? সে বলল: না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তাহলে তোমার মানত পূর্ণ কর। পাপঘনিষ্ট মানত পূর্ণ করতে হয় না; বনি আদমের সামর্থ্যে যা নেই সে মানত পূর্ণ করতে হয় না।” এখানে দেখা যাচ্ছে মানত পূর্ণ করা ফরজ হওয়া সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ততক্ষণ পর্যন্ত সে লোককে মানত পূর্ণ করার অনুমতি দেননি যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁকে অবহিত করা হয়েছে যে, সেখানে কাফেরদের কোন উৎসব পালিত হত না। তিনি আরও বলেছেন: “পাপঘনিষ্ট মানত পূর্ণ করতে হয় না”। যদি যে স্থানে কাফেরদের উৎসব হত সে স্থানে পশু জবাই করাটাই পাপ হয় তাহলে সরাসরি তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা কোন পর্যায়ের পাপ? বরং খলিফা উমর (রাঃ), সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ তাদের (কাফেরদের) উপর শর্তারোপ করেছিলেন যে, মুসলমান দেশে তারা প্রকাশ্যে তাদের উৎসব পালন করতে পারবে না। তারা গোপনে তাদের ঘরবাড়ীতে সেটা পালন করবে। অতএব, মুসলমানেরা নিজেরা প্রকাশ্যে এসব পালন করাটা কেমন হতে পারে? এমনকি উমর (রাঃ) বলেছিলেন: বিধর্মীদের ভাষা শিখবে না। মুশরিকদের উৎসবের দিন তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করবে না। কারণ তখন তাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি অবতীর্ণ হতে থাকে।” আর প্রবেশকারীর উদ্দেশ্য যদি হয় প্রদর্শনী বা এ জাতীয় কিছু সেটাও নিষিদ্ধ। কারণ তাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়। অতএব, যে ব্যক্তি এমন কিছু করে যা তাদের ধর্মের নিদর্শন, যা করার কারণে তাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয় তার ব্যাপারটি কেমন হতে পারে?

সলফে সালেহীন একাধিক আলেম আল্লাহর বাণী: “এবং যারা الزور এ উপস্থিত থাকে না।”[সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ৭২]সম্পর্কে বলেছেন: এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে- “বিধর্মীদের উৎসব”। কিছু না-করে শুধু উপস্থিত থাকার ব্যাপারে এটি বলা হয়েছে, তাহলে বিধর্মীদের নিজস্ব খাস কাজগুলো যদি করা হয় তাহলে এর বিধান কী হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মুসনাদ ও সুনানসমূহে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”। হাদিসটির সনদ জায়্যিদ (ভাল)। যদি সাধারণ অভ্যাসের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণের বিধান এটা হয় তাহলে তাদের বিশেষ বিশেষ বিষয়ে সাদৃশ্য গ্রহণের বিধান কেমন হবে?... [সমাপ্ত] [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা (২/৪৮৭), মাজমুউল ফাতাওয়া (২৫/৩২৯)।

আরও জানতে দেখুন প্রশ্ন নং- 13642।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/145950
প্রশ্ন: আমার প্রতিবেশিনী একজন আমেরিকান খ্রিস্টান। খ্রিস্টমাস উপলক্ষে তিনি আমাকে কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছেন। আমি তাকে এ হাদিয়াগুলো ফেরত দিতে পারছি না; যাতে তিনি রেগে না যান!! আমি কি এ হাদিয়াগুলো গ্রহণ করতে পারি যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের পাঠানো হাদিয়া গ্রহণ করেছেন।

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

এক:

মূলতঃ কাফেরের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয; এতে করে তার সাথে সখ্যতা তৈরি হয়, তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা যায়। ঠিক যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুকাওকাস ও অন্যান্য কিছু কিছু কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন।

ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: “মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ শীর্ষক পরিচ্ছেদ”। বুখারি (রহঃ) বলেন: আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: ইব্রাহিম (আঃ) সারাকে নিয়ে সফরে বের হলেন। তিনি এমন একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন যেখানে ছিল একজন বাদশাহ বা প্রতাপশালী। তিনি বললেন: সারাকে উপঢৌকন হিসেবে ‘হাজেরা’ কে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে (রোস্টকরা) বিষযুক্ত বকরী হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল। আবু হুমাইদ বলেন: আইলার বাদশাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটি সাদা রঙের খচ্চর ও একটি চাদর উপহার পাঠিয়েছিল এবং তাঁর নিকট তাদের কবিতার ছন্দ ব্যবহার করে চিঠি লিখেছিল। এক ইহুদি নারী কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষমাখা ছাগল হাদিয়া দেওয়ার ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেছেন।

দুই:

হৃদ্যতা তৈরির জন্য ও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে কাফেরকে বা মুশরিককে উপহার দেয়া জায়েয। বিশেষতঃ যদি প্রতিবেশী হয় অথবা আত্মীয় হয়। উমর (রাঃ) মক্কায় বসবাসকারী তাঁর মুশরিক ভাইকে একটি হুল্লাহ (এক ধরনের পোশাক) উপহার দিয়েছিলেন।”[সহিহ বুখারি, ২৬১৯]

তবে কাফেরদের কোন উৎসবের দিন তাদেরকে উপহার দেয়া যাবে না। কেননা এটা এই বাতিল দিবসকে স্বীকৃতি দেয়া ও সেটা উদযাপনের পর্যায়ে পড়ে। আর তা যদি এমন হাদিয়া হয় যা দিবস উদযাপনের কাজে লাগে যেমন- খাবার বা মোমবাতি ইত্যাদি তাহলে সেটা আরও বেশি জঘন্য হারাম। কোন কোন আলেমের মতে- সেটা কুফরি।

যাইলায়ী তাঁর ‘তাবইনুল হাকায়েক’ গ্রন্থ (৬/২২৮) এ বলেন: “নওরোজ ও মেলার নামে কিছু দেয়া নাজায়েয। অর্থাৎ এ দুই দিনের নামে প্রদত্ত হাদিয়া হারাম; বরঞ্চ কুফর”। আবুল আহওয়াছ আল-কাবির (রহঃ) বলেন: “যদি কোন ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করার পর নওরোজের দিন এসে কতিপয় মুশরিককে কিছু উপহার দেয় এবং এ উপহারের মাধ্যমে এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে এবং তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে”। ‘আল-জামে আল-আসগার’ গ্রন্থকার বলেন: “নওরোজের দিন যদি অপর কোন মুসলিমকে কোন একটা হাদিয়া দেয়; কিন্তু হাদিয়ার উদ্দেশ্য এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না হয় (বর্তমানে অনেক মানুষ যা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে) তাহলে কাফের হবে না। তবে বিশেষভাবে সে দিনে এটা না করাটাই বাঞ্ছনীয়। সে দিনের আগে বা পরে করতে পারে। যাতে করে সে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য না আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” আল-জামে আল-আসগার গ্রন্থে বলেন: “যে ব্যক্তি নওরোজের দিন এমন কিছু খরিদ করল যা সে পূর্বে খরিদ করত না, এর মাধ্যমে সে যদি ঐ দিনকে সম্মান করতে চায় তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি সে পানাহার ও নেয়ামত ভোগ করতে চায় তাহলে কাফের হবে না”। সমাপ্ত

‘আল-তাজ ওয়াল ইকলিল’ গ্রন্থে বলেন: কোন খ্রিস্টানকে তার ঈদ বা উৎসবের দিন উপলক্ষে উপহার দেয়াকে ইবনুল কাসেম মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলেছেন। অনুরূপভাবে কোন ইহুদীকে তার উৎসব উদযাপন উপলক্ষে খেজুর পাতা দেয়াও মাকরূহ। সমাপ্ত।

হাম্বলি মাযহাবের ফিকাহর গ্রন্থ ‘আল-ইকনা’ তে বলা হয়েছে- “ইহুদি-খ্রিস্টানদের উৎসবে যোগদান করা, সেই দিন উপলক্ষে বেচাবিক্রি করা ও উপহার বিনিময় করা হারাম”। সমাপ্ত।

বরং এ দিন উপলক্ষে কোন মুসলমানকে হাদিয়া দেয়াও জায়েয নয়। পূর্বোল্লেখিত হানাফি মাযহাবের বক্তব্যে এ কথা এসেছে। শাইখুল ইসলাম (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে এ উৎসবগুলোর মৌসুমে এমন কোন উপহার দেয়, এ উৎসব ছাড়া স্বভাবতঃ যে উপহার দেয়া হয় না— সে উপহার গ্রহণ করা যাবে না। বিশেষতঃ সে উপঢৌকনের মাঝে যদি তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে এমন কিছু থাকে। যেমন- যীশুর জন্মদিবস উপলক্ষে মোমবাতি বা এ জাতীয় কিছু উপহার দেয়া অথবা তাদের রোজার শেষ বৃহস্পতিবারে ডিম, দুধ ও ছাগল উপহার দেয়া। একইভাবে এ উৎসবগুলোর মৌসুমে এ উৎসবগুলোকে উপলক্ষ করে কোন মুসলমানকে উপহার দেয়া যাবে না। বিশেষতঃ উপহারটি যদি তাদের সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে এমন কিছু হয়; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি।[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২৭৭]

তিন:

আর কাফেরদের উৎসবের দিন তাদের দেয়া উপহার গ্রহণ করতে দোষের কিছু নেই। উপহার গ্রহণ করা— তাদের উৎসবে যোগদান বা এতে স্বীকৃতি প্রদানের পর্যায়ে পড়ে না। বরং ভাল ব্যবহার, সখ্যতা তৈরী, ইসলামের দিকে দাওয়াতের উদ্দেশ্য নিয়ে সে উপহার গ্রহণ করা যাবে। যে কাফের মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না আল্লাহ তাআলা সে কাফেরের সাথে ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য আচরণ করা বৈধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।”[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত:০৮]

কিন্তু ভাল ব্যবহার ও ন্যায্য আচরণের অর্থ এ নয় যে, তাদের সাথে অন্তরঙ্গতা ও ভালবাসা তৈরী হবে। কারণ কাফেরের সাথে অন্তরঙ্গতা ও ভালবাসা করা জায়েয নয়। তাকে বন্ধু ও সাথী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য দিয়ে। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।”[সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ২২] তিনি আরও বলেন: “মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে।”[সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ১] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বের হয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১১৮] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না।”[সূরা হুদ, আয়াত: ১১৩] তিনি আরও বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” এগুলো ছাড়াও কাফেরের সাথে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আরও অনেক দলিল রয়েছে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “কাফেরের উৎসবের দিন তার দেয়া হাদিয়া গ্রহণের ব্যাপারে আমরা ইতিপূর্বে আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছি যে, একবার তাঁর কাছে নওরোজের হাদিয়া এল এবং তিনি সেটা গ্রহণ করলেন।

ইবনে আবু শাইবা বর্ণনা করেন যে, একবার এক মহিলা আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল, কিছু অগ্নিপূজক মহিলা আমাদের শিশুদেরকে দুধপান করায়। তাদের ঈদ-উৎসবের সময় তারা আমাদেরকে হাদিয়া দেয়। আয়েশা (রাঃ) বললেন: উৎসব উপলক্ষে যা কিছু জবাই করা হয়ে তা খাবে না; কিন্তু তাদের গাছের ফল খেতে পার। আবু বারাযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: কিছু অগ্নিপূজক তাঁর প্রতিবেশী ছিল। তারা নওরোজ ও মেহেরযান উপলক্ষে তাকে হাদিয়া দিত। তখন তিনি তাঁর পরিবারকে বলতেন: ফলজাতীয় জিনিসগুলো খাও; আর অন্যগুলো ফেলে দাও।

এ দলিলগুলো প্রমাণ করে যে, কাফেরদের উৎসবের সাথে তাদের হাদিয়া গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বরং সব সময়ের বিধান এক। যেহেতু হাদিয়া গ্রহণের মধ্যে তাদের ধর্মীয় নিদর্শনকে সহযোগিতা করার কিছু নেই।

এরপর তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, আহলে কিতাবের জবাইকৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ হলেও যা উৎসবের জন্য জবাই করা হয়েছে তা খাওয়া জায়েয নয়। তিনি বলেন: আহলে কিতাবদের উৎসবের সেসব খাবার খাওয়া যাবে যেগুলো কিনে আনা হয়েছে, অথবা হাদিয়া হিসেবে এসেছে। তবে উৎসব উপলক্ষে জবাইকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া যাবে না। আর অগ্নিপূজকদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়ার বিধান তো সবার জানা আছে— এটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) তাদের ঈদ উপলক্ষ্যে যে প্রাণী জবাই করে অথবা গায়রুল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে তারা যে প্রাণী জবাই করে যেমন- ঈসা (আঃ) বা শুক্রতারার নৈকট্য হাছিলের জন্য (ঠিক মুসলমানেরা যেভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য জবাই করে) সেগুলোর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ থেকে দুইটি অভিমত পাওয়া যায়। তাঁর থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে- এগুলো খাওয়া জায়েয হবে না; যদিও জবাই এর সময় গায়রুল্লাহর নাম না নেয়া হয়। এই মাংস খাওয়া হারাম হওয়ার হুকুমটি আয়েশা (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে...।[ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২৫১]

সারকথা হচ্ছে- আপনার খ্রিস্টান প্রতিবেশিনীর দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে; তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে। শর্তগুলো হচ্ছে-

এক. হাদিয়াটা জবাইকৃত প্রাণীর মাংস হতে পারবে না; যে প্রাণী তাদের ঈদ-উৎসব উপলক্ষে জবাই করা হয়েছে।

দুই. হাদিয়া এমন কিছু হতে পারবে না যা তাদের উৎসব উদযাপনের সাথে সদৃশতা তৈরী করে। যেমন- মোমবাতি, ডিম, খেজুরের ডাল ইত্যাদি।

তিন. নিজের সন্তানদেরকে ওয়ালা ওয়াল বারা (শত্রুতা ও মিত্রতা) এর আকিদা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাতে তারা এই উৎসবের প্রতি দুর্বল না হয় অথবা এই উপহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে না পড়ে।

চার. এই উপঢৌকন গ্রহণের উদ্দেশ্য হবে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরী করা, তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া; তাদের প্রতি ভালবাসা বা হৃদ্যতা থেকে নয়।

যদি এমন জিনিস দিয়ে হাদিয়া আসে যা গ্রহণ করা জায়েয নয় তাহলে হাদিয়া গ্রহণ না করার কারণ উল্লেখ করে সেটা প্রত্যাহার করতে হবে। যেমন- আপনি বলতে পারে; আমরা আপনার হাদিয়াটি নিতে পারছি না; কারণ এটি আপনাদের উৎসব উপলক্ষে জবাই করা হয়েছে। আমাদের জন্য এটি খাওয়া জায়েয নয়। অথবা এই হাদিয়াগুলো তারা গ্রহণ করতে পারেন যারা এ উৎসব পালনে অংশ গ্রহণ করেন; আমরা তো আপনাদের এ উৎসব পালন করি না; যেহেতু আমাদের ধর্মে এ উৎসব অনুমোদিত নয়; এ উৎসবের মধ্যে এমন কিছু বিশ্বাস আছে যা আমাদের ধর্মমতে সঠিক নয়— এ ধরনের কোন কথা। এ কথাগুলো তাদেরকে দাওয়াত দেয়ার একটা গ্রাউন্ড তৈরী করবে এবং তারা যে কুফরের মধ্যে রয়েছে এর ভয়াবহতা তুলে ধরবে।

মুসলমানের উচিত তার ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করা। ধর্মীয় বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা। লজ্জাবোধ করে অথবা সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য না দেখানো। বরং আল্লাহকে লজ্জাবোধ করা অধিক যুক্তিযুক্ত।

আরও জানতে 13642947 নং প্রশ্ন দেখুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/85108
প্রশ্ন: বিভিন্ন বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার শরয়ি বিধান কী? যেমন- বিশ্ব পরিবার দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ বছর। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন- মেরাজ দিবস পালন, মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মবার্ষিকী কিংবা হিজরত বার্ষিকী পালন করার হুকুম কি। অর্থাৎ এ উপলক্ষে মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করার উদ্দেশ্যে কিছু প্রচারপত্র প্রস্তুত করা, আলোচনাসভা বা ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা ইত্যাদি।

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

আমার কাছে যা অগ্রগণ্য তা হচ্ছে- যে দিবসগুলো বা সমাবেশগুলো প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে সেগুলো বিদআতী ঈদ বা নবপ্রচলিত উৎসব। এগুলো ইসলামি শরিয়তে নব-সংযোজন; যেগুলোর পক্ষে আল্লাহ তাআলা কোন দলিল-প্রমাণ নাযিল করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা নব-প্রচলিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ প্রতিটি অভিনব বিষয়— বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হচ্ছে— ভ্রান্তি।” [মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “প্রতিটি কওমের ঈদ (উৎসব) আছে। এটি আমাদের ঈদ।”[সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম]


ইবনে তাইমিয়া প্রণীত “ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম লি মুখালিফাতি আসহাবিল জাহিম” নামক গ্রন্থে ইসলামী শরিয়তে ভিত্তি নেই এমন নবপ্রচলিত ঈদ-উৎসব পালনের নিন্দাসূচক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এ ধরনের বিদআতের প্রচলনে দ্বীনের কি ক্ষতি হয় তা সকল মানুষ জানে না; বরং অধিকাংশ মানুষ-ই জানে না। বিশেষতঃ এ ধরনের বিদআত যদি শরিয়ত অনুমোদিত কোন ইবাদত শ্রেণীয় হয়। শুধু প্রজ্ঞাবান আলেমগণ এ ধরণের বিদআতের ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করতে পারেন।

যদিও মানুষ ভাল দিক বা ক্ষতিকর দিক বুঝতে না পারে তদুপরি তাদের কর্তব্য হচ্ছে— কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা।

যে ব্যক্তি বিশেষ কোনদিবসে বিশেষ রোজা, নামায, ভোজ, সাজ-সজ্জা, বিশেষ খরচ ইত্যাদি আমলের প্রচলন করে তার এ আমলের সাথে অবশ্যই অন্তরের বিশ্বাস জড়িত। অর্থাৎ এ দিন অন্য কোন দিনের চেয়ে উত্তম— এ বিশ্বাস। যদি সে ব্যক্তির অন্তরে অথবা তার অনুসারীর অন্তরে এ বিশ্বাস না থাকত তাহলে এ বিশেষ দিনে বা রাতে বিশেষ ইবাদত করার জন্য অন্তর উদ্যোগী হত না। অথচ যথাযোগ্য দলিল ছাড়া কোন বিধানকে প্রাধান্য দেয়া জায়েয নেই।

স্থান, কাল ও গণজমায়েত এ তিনটিকেই ঈদ বলা হয়। এ তিনটি থেকে আরো অনেক বিদআত উৎসারিত হয়। যেমন- তিন প্রকার সময়ের মধ্যে স্থানকেন্দ্রিক ও কর্মকেন্দ্রিক কিছু বিদআতী উৎসব অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্রকার: যেদিনকে মূলতই ইসলামী শরিয়ত শ্রেষ্ঠত্ব দেয়নি। এ দিনের ব্যাপারে সলফে সালেহীনগণের নিকট কোন আলোচনা নেই। এ দিনকে বিশেষত্ব দেয়ার মত অনিবার্য কিছু নেই।

দ্বিতীয় প্রকার: যে দিনে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেছে; যেরূপ ঘটনা অন্য দিনেও ঘটতে পারে। তবে তা এ দিনকে বিশেষ মৌসুম হিসেবে সাব্যস্ত করে না এবং সলফে সালেহীন এ দিনকে বিশেষত্ব দিতেন না। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশেষত্ব দিবে সে যেন খ্রিস্টানদের অনুকরণ করল; যারা ঈসা (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত যে কোন দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করত অথবা ইহুদীদের অনুকরণ করল। ঈদ পালন- ইসলামি শরিয়তের একটি বিধান। সুতরাং আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন সেটাই পালন করতে হবে; ইসলামের বাইরে কিছু প্রচলন করা যাবে না।

অনুরূপভাবে খ্রিস্টানগণ কর্তৃক ঈসা (আঃ) এর জন্মদিবস পালনের অনুকরণে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান দেখাতে গিয়ে কিছু কিছু লোক যা কিছুর প্রচলন করেছে সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি। অথচ যদি এটা নেক আমল হতো তাহলে তাঁরা সেটা না করার কোন কারণ নেই।

তৃতীয় প্রকার: ইসলামি শরিয়তে যে দিনগুলো সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত যেমন- আশুরার দিন, আরাফার দিন, দুই ঈদের দিন ইত্যাদি আত্মপ্রবৃত্তির অনুসারীগণ কর্তৃক এ দিনগুলোতে অভিনব কিছু আমল চালু করা হয় এবং এ বিশ্বাস করা হয় যে, এ আমলগুলো পালন করা মর্যাদাপূর্ণ; অথচ এগুলো মন্দ ও অননুমোদিত। যেমন- রাফেজি সম্প্রদায়ের আশুরার দিন পানি পান না করা ও শোক প্রকাশ করা ইত্যাদি। এগুলো নব-উদ্ভাবিত— আল্লাহ এসবের বিধান জারী করেননি, আল্লাহর রাসূল জারী করেননি, সলফে সালেহিনগণ এসব করেননি, এমনকি রাসূলের পরিবারের কেউও করেননি। অপরদিকে শরিয়তের অনুমোদনের বাইরে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে, প্রতি বছরে ধারাবাহিকভাবে সমবেত হওয়া— পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমার নামাজ, ঈদের নামায ও হজ্জের জন্য সমবেত হওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই এটি নবপ্রচলিত বিদআত।

এ বিষয়ে মৌলিক কথা হলো— সময় ঘুরলে শরিয়তের যে ইবাদতগুলো পুনঃপুনঃ আদায় করতে হয় আল্লাহ তাআলা নিজেই বান্দার জন্য সেগুলোর বিধান দিয়ে দিয়েছেন; সেগুলোই বান্দার জন্য যথেষ্ট। এরপর যদি নতুন কোন সমাবেশ চালু করা হয় এটা বিধান আরোপের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার তুল্য। এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কিছু অংশ ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষ যদি অনিয়মিতভাবে কোন আমল করে সেটা এ পর্যায়ে পড়বে না।[সংক্ষেপে সমাপ্ত]

এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়: কোন মুসলমানের জন্য এ দিবসগুলো উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করা জায়েয নয়, যে দিবসগুলো প্রতিবছর পালন করা হয়, প্রতিবছর ঘুরে আসে। যেহেতু এগুলো মুসলমানদের ঈদ-উৎসবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যেমনটি ইতিপূর্বেই আমরা তুলে ধরেছি। আর যদি পুনঃপুনঃ পালিত না হয় এবং মুসলমানগণ এ অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দিতে পারে তাহলে ইনশাল্লাহ এতে কোন অসুবিধা নেই।

আল্লাহই ভাল জানেন।

https://islamqa.info/bn/5219
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »