লগইন করুন
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
কাফেরদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো নিঃসন্দেহে হারাম। এ সংক্রান্ত একাধিক ফতোয়াতে আমরা সে বিষয়টি বর্ণনা করেছি এবং এ ব্যাপারে সাবধান করেছি। ফতোয়া নং 947, 11427, 4528 ও 1130 দ্রষ্টব্য।
দুই:
পক্ষান্তরে তাদের ব্যক্তিগত যেসব উপলক্ষ যেমন- বিয়ে-সাদী, স্কুলে ভাল ফলাফল করা, নতুন চাকুরী পাওয়া, রোগ মুক্ত হওয়া, সন্তান লাভ করা কিংবা ভ্রমণ শেষে ফিরে আসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে। এ তিনটি অভিমতের প্রত্যেকটি ইমাম আহমাদের মত হিসেবেও বর্ণিত আছে। কারো কারো মতে, এ ধরণের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন জায়েয। কারো কারো মতে, নাজায়েয। কেউ কেউ দ্বীনি কল্যাণ থাকার শর্ত সাপেক্ষে জায়েয বলেছেন; যেমন- তাদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা কিংবা তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। তিনটি অভিমতের মধ্যে শেষোক্ত অভিমতটি অধিক অগ্রগণ্য। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইবনে মুফলিহ আল-হাম্বলি (রহঃ) বলেন:
তাদের (কাফেরদের) রোগী দেখতে যাওয়া, তাদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা কিংবা সমবেদনা জানানো হারাম। তাঁর থেকে – অর্থাৎ ইমাম আহমাদ থেকে- জায়েয হওয়া মর্মেও বর্ণনা আছে। আরেকটি বর্ণনায় আছে, কল্যাণের সম্ভাবনা প্রবল হলে জায়েয। আমাদের শাইখ –অর্থাৎ ইবনে তাইমিয়া- এ অভিমতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবং এ অর্থবোধক মতকে ইমাম আজুর্রিও প্রাধান্য দিয়েছেন।
আলেমদের বক্তব্যে এসেছে যে, রোগী দেখতে গিয়ে তার কাছে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পেশ করা হবে। আবু দাউদ উল্লেখ করেছেন যে, যদি ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে (তাকে দেখতে যায়) তবে: হ্যাঁ।
[আল-ফুরু ওয়া তাসহীহুল ফুরু (১০/৩৩৪)]
এ ধরণের শুভেচ্ছা জায়েয হওয়ার জন্য আরও যেসব শর্ত পূর্ণ হতে হবে এখানে আমরা সে শর্তগুলো উল্লেখ করব:
১। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা, কিংবা দেখতে যাওয়ার পরিবেশ যাবতীয় গর্হিত বিষয় থেকে মুক্ত হওয়া চাই; যেমন- নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান-বাজনা, হারাম খাবার-দাবার। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনুষ্ঠানাদিও নানারকম গর্হিত বিষয় থেকে মুক্ত থাকে না; অমুসলিমদের অনুষ্ঠানাদির অবস্থা তো আরও গুরুতর। আরও জানতে দেখুন: 3325 নং প্রশ্নোত্তর।
২। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ভাষা শরিয়ত-গর্হিত বিষয়াদি যেমন- শুরুতে সালাম, সম্মান ও স্থায়িত্বের দোয়া ইত্যাদি থেকে মুক্ত হওয়া।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন:
পরিচ্ছেদ: তাদেরকে (কাফেরদেরকে) বিবাহ, সন্তান লাভ, নিখোঁজ ব্যক্তির ফেরত আসা, রোগমুক্তি কিংবা কোন বিপদ মুক্তি ইত্যাদি উপলক্ষে অভিনন্দন জানানো: ইমাম আহমাদ থেকে এ মাসয়ালায় একাধিক বর্ণনা রয়েছে। তিনি একবার জায়েয বলেছেন। একবার নাজায়েয বলেছেন। এ মাসয়ালার বিধান মৃত্যুকেন্দ্রিক সমবেদনা জানানো ও অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া সংক্রান্ত মাসয়ালার বিধানের অনুরূপ। এ দুই মাসয়ালার মধ্যে কোন তফাৎ নেই। তবে, সাবধান থাকতে হবে যাতে করে তাদের ধর্মের প্রতি সন্তুষ্টি নির্দেশক কোন কথাবার্তা প্রকাশ না পায়; সাধারণতঃ অজ্ঞ লোকদের থেকে যেগুলো ঘটে থাকে। যেমন এমন কথা বলা যে, “আল্লাহ আপনাকে আপনার ধর্মে সুখী করুন”, আল্লাহ আপনাকে আপনার ধর্মে মজবুত করুন, কিংবা বলা যে, “আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন”; তবে, যদি বলে যে, “আল্লাহ আপনাকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন” কিংবা এ জাতীয় কোন কথা তাহলে সেটা জায়েয। উল্লেখিত উপলক্ষগুলো কাফেরদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়যোগ্য।
[আহকামু আহলিয যিম্মাহ (১/৪৪১)]
৩। যদি কোন কাফের কোন গুনাহের সফর থেকে ফিরে আসে কিংবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসে, কিংবা কোন হারাম চাকুরী লাভ করে (যেমন- ব্যাংকে চাকুরী বা শরিয়ত বিরোধী আইনে বিচারকের চাকুরী) তাহলে তাকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা যাবে না; এমন কি এসব ক্ষেত্রে কোন মুসলমানকেও অভিনন্দন জানানো যাবে না।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন:
যে ব্যক্তি কোন মানুষকে পাপকর্ম, বিদআত কিংবা কুফরির জন্য অভিনন্দন জানাবে সে নিজেকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির মুখোমুখি করল। জালেমেরা ক্ষমতা লাভ করলে তাকওয়াবান আলেমগণ তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকতেন। মূর্খ লোকেরা বিচারকের দায়িত্ব, শিক্ষকতার দায়িত্ব কিংবা ফতোয়া দেয়ার দায়িত্ব পেলে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে কিংবা আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা কমে যাওয়ার ভয়ে তারা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি কোন আলেম পরীক্ষার মুখোমুখি হন এবং জালেমের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকার জন্য তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন; তিনি তাদের কাছে গিয়ে যা কিছু বলেন ভাল কথা বলেন, তাদের জন্য তাওফিকের দোয়া করেন; তাতে কোন অসুবিধা নেই।”[আহকামু আহলিয যিম্মাহ (১/৪৪১ ৪৪২)]
৪। কাফের নেতৃবৃন্দ যেমন- ধর্মযাজক, বিশপ ও অন্যান্য কাফের নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানানো থেকে বিরত থাকা। যেহেতু তাদের ইসলাম গ্রহণের আশা নেই। এবং যেহেতু তাদেরকে অভিনন্দন জানানো ও তাদের অনুষ্ঠানে যোগদান করার মাধ্যমে তাদের প্রভাব জোরদার হয় ও মুসলমানদের প্রভাব দুর্বল হয়। তবে, সুনির্দিষ্ট কোন নেতার ইসলাম গ্রহণের আশা থাকলে সেক্ষেত্রে জায়েয হবে। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালেবকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গিয়েছেন।
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ) কে খ্রিস্টান যাজকের আগমন উপলক্ষে তাকে অভিবাদন জানানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অসুস্থ ইহুদী ছেলেকে দেখতে গিয়েছেন সে ছেলেটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেবা করত। যখন সে অসুস্থ হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন; যাতে করে তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করতে পারেন। গিয়ে তিনি তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করল। এই ইহুদী ছেলের ঘটনা আর খ্রিস্টান যাজকের নিরাপদ আগমন ও তার সাথে সৌহার্দ্য বাড়ানোর জন্য তাকে অভিবাদন জানানো দুটোর মাঝে কি তুলনা চলে!? কোন অজ্ঞা লোক কিংবা কুপ্রবৃত্তির অনুসারী ছাড়া অন্য কেউ এ দুটোর একটির ওপর অন্যটির কিয়াস করতে পারে না।[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন (৩/৪৭)]
সার কথা হলো: এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে- এ ধরণের অভিনন্দন ইতিপূর্বে উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে জায়েয। যদিও এ মাসয়ালার সতর্কতামূলক উত্তর হচ্ছে- বিধর্মীদের অভিবাদন জানানো থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা এবং তাদের সাথে উঠাবসা না করা।
আল্লাহই ভাল জানেন।