উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) খাবার খাওয়া জায়েয করেছেন। সে খাবার কোন নিমন্ত্রণ হোক, মেহমানদারি হোক, হাদিয়া হোক অথবা অন্য যে কোন প্রয়োজন বা সামাজিকতা কেন্দ্রিক হোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদিদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন, তাদের খাবার খেয়েছেন।
তবে সে খাবার গ্রহণ তাদের সাথে মিত্রতা, বন্ধুত্ব, অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে হতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫১] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন (ভাবানুবাদ): “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক; তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরিয়ে এসেছে। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে আছে তা আরো বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৮]
শাইখ বিন বাযকে প্রশ্ন করা হলো- “যদি মুসলমান ব্যক্তি কোন খ্রিস্টান বা কাফের এর সাথে পানাহার করে সেটা কি হারাম হিসেবে পরিগণিত হবে? যদি সেটা হারাম হয় তাহলে আমরা আল্লাহ তাআলার বাণী (ভাবানুবাদ): “আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল।” [সূরা মায়েদা, আয়াত: ০৫] এর ব্যাপারে কি বলব?
এর জবাবে শাইখ বলেন: যদি প্রয়োজন হয় অথবা কোন শরয়ি কল্যাণ থাকে সে ক্ষেত্রে কাফেরের সাথে খাবার গ্রহণ করা হারাম নয়। তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না; যার ফলে কোন আইনানুগ কারণ বা শরয়ি কল্যাণ ছাড়া এমনিতেই একত্রে তাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, সঙ্গ দেয়া হয়, হাসি-তামাশা করা হয়। তবে যদি প্রয়োজন হয় যেমন তারা মেহমান হিসেবে আসলে অথবা তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকার উদ্দেশ্য নিয়ে, সত্যের দিকনির্দেশনা দেয়ার উদ্দেশ্যে অথবা অন্য কোন শরয়ি কারণে এগুলো করা যেতে পারে। এতে কোন অসুবিধা নেই।
আহলে কিতাবদের খাবার খাওয়া আমাদের জন্য জায়েয হওয়ার অর্থ এ নয় যে, কোন প্রয়োজন বা শরয়ি কল্যাণ ব্যতিরেকে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে, সঙ্গি হিসেবে গ্রহণ করা যাবে বা তাদের সাথে খেতে হবে। আল্লাহই তাওফিকদাতা। সমাপ্ত।[ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (শাইখ বিন বায ফতোয়াসমগ্র ৯/৩২৯)]
দুই:
খ্রিস্টমাস বা কাফেরদের অন্য কোন উৎসবে উদযাপন করা বা তাতে অংশ গ্রহণ করা বা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো জায়েয নয়। দেখুন প্রশ্ন নং 947 ও 145950।
ঈদ উদযাপন বা উৎসব পালনের ধরণ হলো: এ উৎসবগুলোর ভোজানুষ্ঠানে যোগদান করা অথবা তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করা। মুসলিম-অমুসলিম সবাই জানে এ কাজগুলো উৎসব পালন করার নামান্তর।
এ ভোজানুষ্ঠানকে একমাস আগানো বা পিছানোর দ্বারা শরয়ি হুকুমের কোন পরিবর্তন হবে না। যেহেতু এ ভোজানুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে মুশরিকদের উৎসবকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে অথবা খ্রিস্টমাসের নির্ধারিত দিনের অনুষ্ঠানের বদলে তাদের জন্য এ অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে।
ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:
ঈদ বা উৎসব হচ্ছে- এমন একটি জাতিবাচক বিশেষ্য যা প্রতিটি দিন বা স্থানকে অন্তর্ভুক্ত করে যে দিন বা স্থানকে কেন্দ্র করে তারা (বিধর্মীরা) সম্মিলিত হয়ে থাকে এবং প্রতিটি কর্মকে অন্তর্ভুক্ত করে; যে কর্মগুলো তারা এ স্থান ও কালে প্রচলন করে থাকে। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা শুধু তাদের উৎসবের বিশেষ কিছু অংশের উপর নয়। বরং তারা যে যে সময় বা স্থানকে মর্যাদা দিয়ে থাকে ইসলামে যার কোন ভিত্তি নেই সেগুলো যেমন নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত; তেমনি তারা সে স্থান ও কাল কেন্দ্রিক অভিনব যে কর্মগুলোর প্রচলন করে থাকে সেগুলোও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।
অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের আগে বা পরের দিনগুলোতে উৎসব উপলক্ষে তারা যে বিষয়গুলো চালু করে থাকে অথবা উৎসবস্থলের আশপাশে যা কিছু ঘটে থাকে অথবা উৎসবের কারণে যে কর্মগুলো করা হয়ে থাকে সবগুলোর হুকুম এক। এগুলোর কোনটি করা যাবে না। কিছু কিছু মানুষ উৎসবের দিন যেমন-পবিত্র বৃহষ্পতিবার বা খ্রিস্টমাসের সময় এগুলো করে না; কিন্তু তারা পরিবার-পরিজনকে প্রতিশ্রুতি দেয় অন্য কোন সপ্তাহে বা মাসে আমি তোমাদের জন্য এর ব্যবস্থা করব। এটি করার পিছনে কারণ থাকে সেই উৎসব। যদি সেই উৎসব না থাকত তাহলে তারা এগুলো করত না। এটি বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যের মধ্যে পড়ে। বরং পরিবারকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত ঈদের প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত এবং ঈদের সময় তাদের জন্য এমন কিছুর ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তারা অন্যদের উৎসবের দিকে ধাবিত না হয়। যদি এতে তারা সন্তুষ্ট না হয়; তাহলে বলতে হবে: “লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (কোন নেকির কাজ করা বা বদকাজ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই আল্লাহ ছাড়া)। যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশি করতে গিয়ে তার পরিবারকে অসন্তুষ্ট করবে আল্লাহ তাকে ও তার পরিবারকে সন্তুষ্ট করে দিবেন।” সমাপ্ত।[ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুসতাকিম ২/৫-৬]
সারকথা হচ্ছে- প্রশ্নে উল্লেখিত অনুষ্ঠান পালন করা জায়েয নেই। এটি মুশরিকদের বাতিল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার নামান্তর। মুসলমানগণ নিজেরা খাবার তৈরি করে বা তৈরিতে অংশ গ্রহণ করে বিধায় হুকুম ভিন্ন হবে না।
আল্লাহই ভাল জানেন।