রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِنَّ الْمُؤَذِّنَ يُغْفَرُ لَهُ مَدَى صَوْتِهِ، وَيُصَدِّقُهُ كُلُّ رَطْبٍ وَيَابِسٍ سَمِعَ صَوْته، وَالشَّاهِدُ عَلَيْهِ لَهُ خَمْسَ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً » .
“মুয়াযযিনকে তার কণ্ঠস্বর পৌঁছার প্রান্তদেশ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য ও সমর্থন দিবে তার আওয়াজ শুনা প্রত্যেকটি সজীব ও নির্জীব বস্তু; যারা তার ডাকে সাড়া দিয়ে সালাতে আসবে তার জন্য থাকবে তাদের উপরে পঁচিশটি মর্যাদা।”[1]
* আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসটির কয়েকটি সনদ রয়েছে:
প্রথমত: শু‘বা রহ. মূসা ইবন আবি ‘উসমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ইয়াহইয়াকে তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছি। — [ আহমাদ: (২/৪২৯ ও ৪৫৮); ইবনু হিব্বান: (১৬৬৪); আবূ দাউদ আত-তায়ালাসী: (১/৭৯ — ‘মিনহাতুল মা‘বুদ’); বায়হাকী: (১/৩৯৭) এবং আরও অনেকে]।
আমি বলি: এই সনদটি দুর্বল, মূসা ইবন আবি ‘উসমান আল-কুফী হলেন ‘মাকবুল’ (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনাকারী; আর আবূ ইয়াহইয়া হলেন সাম‘আন আল-সলামী আল-কুফী এবং তিনিও ‘মাকবুল’ (গ্রহণযোগ্য) বর্ণনাকারী।
দ্বিতীয়ত: শু‘বা রহ. মূসা ইবন আবি ‘উসমান রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ‘উসমানকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি এবং তিনি হাদিসের বাকি অংশ উল্লেখ করলেন। — [ আহমাদ: (১/৪১১) ]।
আমি বলি: এই সনদটি দুর্বল; কারণ, মূসা ইবন আবি ‘উসমান হলেন আত-তুব্বান, তিনি তার পিতা থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং তিনি প্রথম তথা মূসা ইবন আবি ‘উসমান আল-কুফী নন; কেননা, ইবনু আবি হাতেম তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী তা স্বীকার করেছেন, সুতরাং তাদের কথাটি গ্রহণযোগ্য কথা।
আর আবূ ‘উসমান হলেন ‘ইমরান আত-তুব্বান; আর মন বলে যে, তিনি সত্যবাদী-বিশ্বস্ত— আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
তৃতীয়ত: মা‘মার-এর সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, তিনি মানসুর থেকে বর্ণনা করেনে, তিনি ‘ইবাদ ইবন উনাইস থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।— [ আহমাদ: (২/২৬৬) ]।
আমি বলি: এই সনদটিন মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
চতুর্থত: মুজাহিদ রহ. এর সনদেও হাদিসটি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।— [ বায়হাকী: (২/৪৩১) ]।
পঞ্চমত: আবূ সালেহ রহ. এর সনদেও হাদিসটি তাঁর (আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ) থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে।— [ বায়হাকী: (২/৪৩১) ]।
সুতরাং এসব সনদের সামগ্রিক বিবেচনায় আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাল্লাহ।
* আর বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ইমাম আহমাদ রহ. (৪/২৮৪) মু‘আয ইবন হিশাম রহ. এর সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কাতাদা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ ইসহাক আল-কুফী রহ. থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি তাঁর (বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেন।
আমি বলি: এই সনদটিন মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
* আর আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি ইমাম বায়হাকী রহ. (১/৪২৩) আ‘মাশ রহ. এর সনদে মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন।
আমি বলি: এই সনদটি সহীহ এবং এই কারণে হাদিসটি সহীহ বলে গণ্য।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
« أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهَرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا ، مَا تَقُولُ ذلِكَ يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ ؟ » قالُوا: لاَ يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ شَيْئًا . قَالَ: « فَذلِكَ مِثْلُ الصَّلَواتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“তোমরা কি মনে কর— যাদি তোমাদের কারো দরজায় একটি প্রবাহিত নদী থাকে এবং সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে তোমার মতে কি এই গোসল তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট রাখবে? জবাবে সাহাবীগণ বললেন: না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না; তখন তিনি বললেন: ‘এটাই হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত— এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা (সালাত আদায়কারীর) গুনাহসমূহ মুছে ফেলেন।”[1]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« الصَّلوَاتُ الْخَمْسُ ، وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ » . ( رواه مسلم و الترمذي ) .
“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমু‘আর সালাত থেকে অপর জুমু‘আর সালাত সেসব গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে, যে পর্যন্ত না কবীরা গুনাহ্ করা হয়।”[2]
>[2] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭২; তিরমিযী, হাদিস নং- ২১৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাস্তব বিষয়টিকে জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন বিভিন্ন প্রকার শব্দ চয়নে; তন্মধ্যে সাজদার ফযীলতের বর্ণনাটি অন্যতম; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« يَا أَبَا فَاطِمَةَ ! أَكْثِرْ مِنْ السُّجُودِ ، فَإِنَّهُ لَيْسَ مِنْ مُسْلِمٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَجْدَةً إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى بِهَا دَرَجَةً [ فِي الجَنةِ و حط عنه بها خطيئةٌ ] » . (رواه أحمد و ابن ماجه) .
“হে আবূ ফাতিমা! বেশি বেশি সাজদা কর; কারণ, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার উদ্দেশ্যে সাজদা করলে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার তার বিনিময়ে জান্নাতে তার মর্যাদা উন্নত করেন এবং তার বিনিময়ে তার গুনাহ্ মাফ করেন।”[1]
ইবনু লাহি‘য়াহ’র সনদে হাদিসটি বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের নিকট হারেস ইবন ইয়াযিদ তার উস্তাদ কাছীর আল-আ‘রাজ আস-সাদাফী থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি আবূ ফাতিমাকে (তিনি যুল ফাওয়ারী বলে পরিচিত) বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এবং তিনি হাদিসটি উল্লেখ করনে।
আমি বলি: এই সনদের বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য; কেননা, ইবনু লাহি‘য়াহ হাদিস বর্ণনার বিষয়টি ‘হাদ্দাসানা’ স্পষ্ট করে বলেছেন; আর তার নিকট থেকে বর্ণনাকারী ইবনু সা‘য়াদ হলেন আবূ আবদির রহমান আল-মুকরী’, যিনি আবদুল্লাহ গ্রুপের অন্যতম একজন, তার থেকে যাদের বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃত।
তবে কাছীর ইবন কুলাইব মিসরী অপরিচিত, যেমনটি ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন। আর হাদিসটি কাছীর ইবন মুর্রাহ-এর বর্ণনার কারণে ‘মাহফুয’, যেমনটি হাফেয ইবনু হাজার ‘আসকালানী রহ. ‘আত-তাহযীব’ গ্রন্থের মধ্যে বলেছেন।
হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ রহ. বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ১৪২২ এবং ইমাম নাসায়ী রহ. ‘আল-কুবরা’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: (৯/২৪০ — “তুহফাতুল আশরাফ”); তাঁরা তাঁর থেকে দু’টি সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
আমি বলি: কাছীর ইবন মুর্রাহ আল-হাদরামী বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী; সুতরাং হাদিসটি সহীহ (আল-হামদুলিল্লাহ)। তাছাড়া হাদিসটির সমর্থনে সাওবান, আবূ দারদা ও ‘উবাদাতা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« صَلاةُ الرَّجُلِ فِي جَمَاعَةٍ تُضَعَّفُ عَلَى صَلاتِهِ فِي بَيْتِهِ وَفِي سُوقِهِ خَمْساً وَعِشْرِينَ ضِعْفاً , وَذَلِكَ : أَنَّهُ إذَا تَوَضَّأَ , فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ . ثُمَّ خَرَجَ إلَى الْمَسْجِدِ لا يُخْرِجُهُ إلا الصَّلاةُ لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إلا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ , وَحُطَّ عَنْهُ خَطِيئَةٌ . فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلْ الْمَلائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ , مَا دَامَ فِي مُصَلاهُ : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ , اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ , اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ , وَلا يَزَالُ فِي صَلاةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلاةَ » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“পুরুষ ব্যক্তির জামা‘য়াতে সালাত আদায় করার সাওয়াব তার ঘরে ও বাজারে আদায় করা সালাত অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি; কারণ, যখন সে ভালভাবে অযু করে এবং শুধু সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যেই মাসজিদের দিকে বের হয়, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি করে গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়। আর যখন সে সালাত আদায় করে, তখন ফিরিশ্তাগণ তার জন্য ততক্ষণ দো‘আ করতে থাকে যতক্ষণ সে তার সালাত আদায়ের স্থানে অবস্থান করে— তাঁরা বলে: “হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত করুন; হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন; হে আল্লাহ! তার প্রতি দয়া করুন। আর যতক্ষণ সে সালাতের অপেক্ষায় থাকবে, ততক্ষণ সে সালাতের মাঝেই থাকে।”[1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মহান ফযীলতের বিষয়টি ভিন্নভাবে জোর দিয়েছেন; যেমন তিনি ইমামের কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলেয়ে ‘আমীন’ বলার ফযীলত নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন; কারণ, তা জামা‘য়াতে সালাত আদায়ের সময় এক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী দৃশ্য ও ভাবধারার আবহ তৈরি করে; যা দীনের বলিষ্ঠ ঘোষণা ও বিশেষ শ্লোগান প্রকাশের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إِذَا قَالَ الْإِمَامُ ﴿ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ﴾ , فَقُولُوا آمِينَ , فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ , غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“ইমাম যখন (غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ) বলবে, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে; কারণ, যার কথা (আমীন বলা) ফিরিশ্তাদের কথার (আমীন বলার) সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে, তার বিগত দিনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[1]
অতএব, হে আমার ঈমানী ভাই! এসব সালাতের জন্য আগ্রহী হউন, যখনই তার জন্য আহ্বান করা হবে; কেননা, তা হলো হেদায়েতের পথ ও তাকওয়ার নিদর্শন।
শরী‘য়ত সম্মত ওযর ব্যতীত বিনা কারণে এই সালাত আদায়ে অলসতা করার ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক হউন; কেননা, জামা‘য়াতে সালাত আদায় করা মুসলিম জনগোষ্ঠী’র উপর ফরয।
আর সুসংবাদ গ্রহণ করুন কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ নূরের এবং দুনিয়াতে গুনাহসমূহের ক্ষমা ও পাপরাশি মোচনের।
কিন্তু হে মুসল্লী সম্প্রদায়! জেনে রাখবেন যে, উল্লেখিত এই ফযীলতের অধিকারী শুধু সে ব্যক্তিই হবে, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে এমনভাবে যে— সে তার জন্য সুন্দরভাবে অযু করল, পরিপূর্ণভাবে তা (সালাত) আদায় করল এবং জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে এমনভাবে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করল, যেভাবে করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; আর এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« مَنْ تَوَضَّأَ كَمَا أُمِرَ , وَصَلَّى كَمَا أُمِرَ , غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ) » . ( رواه النسائي و ابن ماجه) .
“যে ব্যক্তি অযু করল যেমনভাবে অযু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সালাত আদায় করল যেমনভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”[2]আর এই জন্য প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের ধরন ও পদ্ধতির দিকে মনোযোগ দেওয়া; আর যিনি এই ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তিনি যেন জ্ঞানী ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনা ও সর্বোত্তম কথাটি অনুসরণ করার আগ্রহ নিয়ে তাদেরকে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
>[2] নাসায়ী: (১/৯০ - ৯১); ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৯৬; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ১০৩৯
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا » . (رواه مسلم و ابو داود و الترمذي و ابن ماجه) .
“যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়; তারপর মনোযোগ দিয়ে (খুতবা) শুনে ও নীরব থাকে, তার দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সাত দিন ও অতিরিক্ত আরও তিন দিন মোট দশ দিনের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর বা কঙ্কর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কাজ করল।”[1]
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: « وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ » -এর অর্থ: সৎকাজের প্রতিদান হল তার দশ গুণ; সুতরাং এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত হল সাত দিন এবং তার সাথে অতিরিক্ত তিন দিন মিলে মোট দশ দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করেন।
আখেরাতের সন্ধানে ব্যস্ত সচেষ্ট মুমিনগণ রাতের বেলায় খুব কমই ঘুমান; কারণ, তারা রাতের বেলায় নফল ইবাদতে তৎপর থাকেন; ফলে তাদের চেহারা হয়ে যায় উজ্জ্বল এবং অন্তর হয়ে যায় পবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٨]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়, গ্রহণ করবে তা যা তাদের রব তাদেরকে দিবেন; নিশ্চয় ইতোপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মশীল, তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়, আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।”[1]
আর ‘কিয়ামুল লাইল’ তথা রাতের বেলায় নফল ইবাদতের ফযীলত এবং মুসলিম ব্যক্তির আচার-আচরণ ও তার ভবিষ্যৎ জীবনের উপর তার প্রভাব প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ ، فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ ، وَقُرْبَةٌ إِلَى اللَّهِ ، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الإِثْمِ ، وَتَكْفِيرٌ لِلسَّيِّئَاتِ ، وَمَطْرَدَةٌ لِلدَّاءِ مِنَ الْجَسَدِ » . (أخرجه الحاكم و البيهقي) .
“তোমাদের কর্তব্য হলো রাত জেগে নফল ইবাদত করা; কারণ, তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎব্যক্তিগণের স্বভাব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়; আর পাপকাজ থেকে বিরত রাখে, গুনাহসমূহ মোচন করে এবং শরীর থেকে রোগ-ব্যাধি দূর করে।”[2]
>[2] হাকেম (১/৩০৮), বায়হাকী (২/৫০২) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
আমি বলি: হাদিসটির সনদের মধ্যে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে, তবে হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের, যেমনটি ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের শাইখ আলবানী রহ., দেখুন: ইরওয়াউল গালীল ( إرواء الغليل ): ৪৫২
আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: « وَزِيَادَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ » -এর অর্থ: সৎকাজের প্রতিদান হল তার দশ গুণ; সুতরাং এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত হল সাত দিন এবং তার সাথে অতিরিক্ত তিন দিন মিলে মোট দশ দিন, আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাঁর অনুগ্রহ দান করেন।
রমযান মাস আল্লাহর মুবারক মাস, গোটা মাসটিই আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্র; কারণ, তার দিনের বেলায় হলো সাওম পালন এবং রাতের বেলায় হলো নফল ইবাদত; আর ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস, যে রমযান মাস পেল, অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় এ মাসে রাত জেগে নফল ইবাদত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন; কেননা, তিনি বলেছেন:
« مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হয়।”[1] তিনি আরও বলেন:
« مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় কদরের রজনীতে ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত্রি জাগরণ করবে, তার অতীতের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে।”[2]
[2] বুখারী, হাদিস নং- ৩৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮১৮ এবং তাঁরা উভয়ে হাদিসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
« يا عباسُ ، يا عمَّاهُ ، ألا أُعطيكَ ، ألا أمنَحُكَ ، ألا أُخْبِرُكَ ، أَلا أفعلُ بكَ عشرَ خِصال؟ إِذا أنتَ فعلتَ ذلك غَفَرَ اللهُ لكَ ذَنبَكَ : أَوَّلَهُ وآخِرَهُ ، قديمَه وحديثَه، خطأَه وعمْدَه ، صغيرَه وكبيرَه ، سِرَّه وعلانيتَه ؟ عشرُ خصال: أن تُصلِّي أربع ركعات ، تقرأُ في كلِّ ركعة فاتحةَ الكتاب ، وسورة ، فإذا فرغتَ من القراءةِ في أوَّلِ ركعة وأنتَ قائم ، قلتَ : سبحانَ الله ، والحمدُ لله ، ولا إِله إِلا الله ، واللهُ أكبر - خمسَ عَشْرَةَ مرة - ثم تركعُ فتقولُها وأنتَ راكع عشرا ، ثم تَرفَعُ رأْسك من الركوعِ فتقولها عشرا ، ثم تهوي ساجدا فتقولُها وأنتَ ساجد عشرا ، ثم ترفعُ رأسَكَ من السجود فتقولُها عشرا ، ثم تسجدُ فتقولها عشرا ، ثم ترفع رأْسك فتقولُها عشرا ، فذلك خمس وسبعون في كل ركعة ، تفعلُ ذلك في أربع ركعات . إن استطعتَ أن تُصَلِّيَها في كلِّ يوم مرة فافعلْ ، فإن لم تفعلْ ففي كلِّ جمعة ، فإن لم تَفْعَل ففي كلِّ شهر مَرَّة ، فإن لم تفعلْ ففي كلِّ سَنَة مَرَّة ، فإِن لم تفعلْ ففي كُلِّ عمرِكَ مَرَّة » . ( أخرجه أبو داود و ابن ماجه و البيهقي ) .
“হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সাথে দশটি কাজ করব না? (অর্থাৎ আমি কি আপনাকে দশটি তাসবীহ শিক্ষা দেব না?) যখন আপনি তা আমল করবেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, অনিচ্ছাকৃত, ইচ্ছাকৃত, ছোট (সগীরা), বড় (কবীরা), অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সকল প্রকারের গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। আর সেই দশটি কাজ হল: আপনি চার রাকা‘য়াত সালাত আদায় করবেন এবং প্রত্যেক রাকা‘য়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন এবং এর সাথে অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন; অতঃপর যখন প্রথম রাকা‘য়াতে কিরায়াত সম্পন্ন করে অবসর হবেন, তখন ঐ দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি পনের বার পড়বেন: « سبحانَ الله والحمدُ لله ، ولا إِله إِلا الله ، واللهُ أكبر » (আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং আল্লাহ মহান)। অতঃপর রুকূ করবেন এবং রুকূ অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর রুকূ থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদায় অবনত হবেন এবং সাজদা অবস্থায় উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (বসা অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর আবার সাজদায় অবনত হবেন এবং উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। অতঃপর সাজদা থেকে আপনার মাথা উঠাবেন এবং (দাঁড়ানো অবস্থায়) উক্ত তাসবীহটি দশবার পাঠ করবেন। সুতরাং এভাবে প্রত্যেক রাকা‘য়াতে তা পঁচাত্তর বার হবে; আপনি চার রাকা‘য়াতের প্রত্যেক রাকা‘য়াতের মধ্যেই এরূপ করবেন। যদি আপনি প্রত্যেক দিন একবার এরূপ সালাত আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে তা করবেন; আর যদি তা না পারেন, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক মাসে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে প্রত্যেক বছরে একবার আদায় করবেন; আর যদি তা-ও না পারেন, তাহলে আপনার জীবনে কমপক্ষে একবার আদায় করবেন।”[1]
হাফেয ইবনু নাসির উদ্দিন আদ-দামেস্কী ছন্দ আকারে বলেন:
إذا أرادت الثواب بالترجيح
صلِّ لله سبحة التسبيح
(যখন তুমি সাওয়াবের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে চাও
তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সালাতুত তাসবীহ আদায় কর)।
إن فيها رغائباً و أجوراً
و دواء لكل قلب جريح
(নিশ্চয় তাতে রয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাওয়াবের সমাহার,
আর প্রত্যেক ক্ষত-বিক্ষত অন্তরের জন্য ব্যবস্থা আছে চিকিৎসার)।
فتقرب بفعلها تعط نيلاً
و ثواباً يجلُّ عن التصريح
(সুতরাং তুমি তা আদায় করলে তোমাকে দেওয়া হবে পুরস্কার
আরও দেওয়া হবে সাওয়াব, যা স্পষ্ট করে বলা থেকে উপরে)।
لا تدعها فإن فيها حديثاً
من وجوه مقارباً للصحيح
(তুমি তা ছেড়ে দিও না; কেননা, তার ব্যাপারে হাদিস রয়েছে
বিভিন্নভাবে, যা বিশুদ্ধ হাদিসের কাছাকাছি পর্যায়ের)।
فتمسك بسنَّة كيف جاءت
عن ثقات عن الحبيب المليح
(সুতরাং তুমি সুন্নাহকে আকড়িয়ে ধর যেভাবে তা এসেছে
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণের মাধ্যমে প্রিয় হাবীব থেকে)—
أحمد المصطفى رسول أمين
و مطاع و سيد و رجيح
(আহমাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, যিনি বিশ্বস্ত রাসূল,
অনুসরণীয়-অনুকরণীয়, নেতা এবং প্রধান ব্যক্তিত্ব);
أفضل الخلق رتبة و محلاً
و مقالا معجزاً للفصيح
(সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মর্যাদা ও অবস্থানগত দিক থেকে,
আর যিনি কথাবার্তায় অসম্ভব রকম বিশুদ্ধভাষী)।
فصلاة الله تترى عليه
مع كل سلام مديح بمديح
(অতএব, অনবরত আল্লাহর সালাত বর্ষিত হউক তাঁর উপর,
সাথে প্রশংসা বিজড়িত সকল প্রকার সালাম ও গুণগান)।
ما توالى الصباح مع جنح ليل
و توارى مغيب في ضريح
(যতদিন প্রভাত হবে রাতের অন্ধকারের সাথে আর কবরে অদৃশ্য হবে কোনো প্রাণী)।
আমি বলি: এই হাদিসটির সনদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আর আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা থেকে বর্ণিত এই হাদিসের আরও কয়েকটি সনদ রয়েছে, কিন্তু এসব সনদে তিনি তুষ্ট নন। আর হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণের উক্তিগুলো প্রথম সনদটি উৎকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সমর্থন ও সহযোগিতা করে—
১. ইমাম আবূ দাউদ রহ. বলেন: “সালাতুত তাসবীহ-এর ব্যাপারে সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস হল আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু’র এই হাদিসটি।” — যেমন দেখুন: ‘আল-লায়ালিল মাসনু‘আ’ ( اللآليء المصنوعة ): ২/২৯; ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ): ১/৪৬৮
২. আল-মুনযিরী বলেন: “এই হাদিসটি অনকেগুলো সনদে এবং এক দল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, যার দৃষ্টান্ত হলো ‘ইকরামা রা. কর্তৃক বর্ণিত এই হাদিসটি এবং এক দল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন: হাফেয আবূ বকর আল-আজুররী, আমাদের শাইখ আবূ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম আল-মিসরী ও হাফেয আবূল হাসান আল-মুকাদ্দেসী রহ.।” — [‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ ( الترغيب و الترهيب ): ১/৪৬৮; আরও দেখুন: ‘মুখতাসারু সুনানি আবি দাউদ’ (مختصر سنن أبي داود): ২/৮৯
আর যাবীদী রহ. বলেন: “এই হাদিসটি সহীহ, গরীব এবং সনদ ও মতন উৎকৃষ্ট।” —[ ইতহাফুস সাদাত আল-মুত্তাকীন’ ( إتحاف السادة المتقين ): ৩/৪৭৩ ]।
হাদিসটির সমর্থনে একদল সহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে; যেমন— ‘আব্বাস ইবন আবদিল মুত্তালিব রা., ফদল ইবন আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা., আলী রা., জা‘ফর ইবন আবি তালিব রা. ও উম্মু সালমা রা. প্রমুখ; যদিও হাদিসের সনদগুলো সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়, তবে কিছু সনদ সুসংগঠিত; সুতরাং যেসব সনদ প্রমাণের জন্য যথাযথ, তা আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হাদিসের সমর্থনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে; আর এ জন্যই ‘সালাতুত তাসবীহ’ বিষয়ক হাদিসটি ‘সহীহ লি-গাইরিহী’। আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন। আর হাফেযগণ এই বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে খণ্ড খণ্ড পুস্তক লিখেছেন।
আমি বলি: কোনো কোনো ব্যক্তি এই সালাতের মধ্যে ব্যাপক কিছু সৃষ্টি করেছে, তারা এর সাথে এমন কিছু নতুন বিষয়ের সংজোযন করেছে, যার কোনো শরী‘য়তসম্মত ভিত্তি নেই; যেমন—
১. এই সালাতকে পবিত্র রমযান মাসের সাথে সুনির্দিষ্ট করা, বরং তাদের কেউ কেউ দৃঢ়তার সাথে এই সালাতকে রমযানের সাতাইশতম রাতের সাথে সুনির্দিষ্ট করে দেয় (!)।
২. জামা‘য়াতবদ্ধভাবে ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা।
৩. একদিনে একাধিক বার ‘সালাতুত তাসবীহ’ আদায় করা।
সুতরাং হে মুসলিম জনগোষ্ঠী! আপনারা নিজেদের উপর দয়া করুন; সুতরাং (সুন্নাহ’র) অনুসরণ করুন, নতুন পন্থা উদ্ভাবন করবেন না; কারণ, পুরাতন নির্দেশনাই আপনাদের জন্য যথেষ্ট।
মাসজিদে আকসা ঐসব মাসজিদের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর দিকে ইবাদত করার জন্য ভ্রমণ করা যায়; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন, এর মর্যাদা সম্পর্কে আপনার জেনে রাখা দরকার যে, তাতে সালাত আদায় করলে গুনাহ্-খাতা মাফ হয় এবং পাপরাশি মোচন হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« إنَّ سُلَيْمَانَ بْنَ دَاوُد عَلَيْهِمَا الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ لَمَّا بَنَى بَيْتَ الْمَقْدِسِ سَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خِلَالًا ثَلَاثًا: سَأَلَ اللَّهَ تَعَالَى حُكْمًا يُصَادِفُ حُكْمَهُ فَأُوتِيَهُ ، وَسَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ فَأُوتِيَهُ ، وَسَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حِينَ فَرَاغِهِ مِنْ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ أَنْ لَا يَأْتِيَهُ أَحَدٌ لَا يَنْهَزُهُ إلَّا الصَّلَاةُ فِيهِ أَنْ يُخْرِجَهُ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ . ونحنُ نَرْجُو أنْ يَكُوْنَ اللهُ تعالى قَدْ أعطاهُ ذَلِكَ» . ( أخرجه النسائي و ابن ماجه و أحمد و الحاكم ) .
“দাঊদ ‘আলাইহিস সালামের পুত্র সুলাইমান ‘আলাইহিস সালাম যখন বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিনটি জিনিস চাইলেন: তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন প্রজ্ঞা চাইলেন, যা তাঁর শাসন পরিচালনার উপযুক্ত হয়; তাঁকে তা দেওয়া হল। আর তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন এক রাজ্য চাইলেন, যা তাঁর পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না; অতঃপর তাঁকে তাও দেওয়া হল। আর তিনি যখন মাসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করলেন যে, কোনো ব্যক্তি তাতে শুধু সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে আসলে তিনি যেন তাকে তার গুনাহ থেকে ঐ দিনের মত মুক্ত করে দেন, যেদিন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে। আর আমরা আশা করি যে, আল্লাহ তাঁকে এটাও দিয়েছিলেন।”[1]
আর এই বরকতময় মাসজিদটি আজ অভিশপ্ত ইয়াহূদীদের পদতলে কাঁদছে, যারা মুসলিমগণ কর্তৃক তাদের দীন থেকে গাফলতির সুযোগে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের একটি অংশসহ মাসজিদটিকে দখল করে নিয়েছে।
হায়! তারা কাঁদার অভিনয় করছে ... বরং তোমরা কাঁদ এমন এক হারানো রাজ্যে যাকে উদ্ধার বা হেফাজত করার মত পুরুষ লোক নেই।হে আল্লাহ! আপনি তার জন্য সুস্পষ্ট বিজয়ের ব্যবস্থা করুন এবং খুব নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করুন ... আর সেই দিন মুমিনগণ ঐ আল্লাহর সাহায্য নিয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হবে, যিনি কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।
>আমি বলি: হাদিসটি সহীহ।