লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৩৬-[২] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে (তার কক্ষে) উপস্থিত হওয়ার অনুমতি চাইলেন। তখন কুরায়শ গোত্রের কতক মহিলা (নবীর বিবিগণ) তার কাছে বসে কথাবার্তা বলছিলেন এবং তারা অতি উচ্চৈঃস্বরে তার কাছ থেকে অধিক (খোরপোষ) দাবি করছিলেন। যখন ’উমার ফারূক (রাঃ) অনুমতি চাইলেন, তখন মহিলাগণ উঠে জলদি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। এরপর ’উমার ফারূক (রাঃ) প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হেসেছিলেন। উমার ফারূক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে সদা খুশি রাখুন। (তবে আপনার হাসার কারণ কি?)
তখন নবী (সা.) বললেন, আমি অবাক হয়েছি ঐ সকল মহিলাদের আচরণে, যারা এতক্ষণ আমার কাছে ছিল এবং তারা যখনই তোমার ধ্বনি শুনতে পেল, দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। তখন ’উমার ফারূক (রাঃ) বললেন, ওহে স্বীয় জানের দুশমনেরা! তোমরা আমাকে ভয় কর, আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ভয় করো না? তাঁরা উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। তুমি যে অধিকতর রুক্ষ ও কঠোরভাষী। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে খত্তাব-এর পুত্র। এদের কথা ছাড়। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! শয়তান তোমাকে যে পথে চলতে দেখতে পায়, সে তোমার রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা অবলম্বন করে। (বুখারী ও মুসলিম)
হুমায়দী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: ইমাম বারকানী (রহিমাহুল্লাহ) বৃদ্ধি করেছেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.)” শব্দের পর “কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে?” বাক্যটিকে বলেছেন।
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: اسْتَأْذن عمر رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدَهُ نِسْوَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ يُكَلِّمْنَهُ وَيَسْتَكْثِرْنَهُ عَالِيَةً أَصْوَاتُهُنَّ فَلَمَّا اسْتَأْذَنَ عُمَرُ قُمْنَ فَبَادَرْنَ الْحِجَابَ فَدَخَلَ عُمَرُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضْحَكُ فَقَالَ: أَضْحَكَ اللَّهُ سِنَّكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَجِبْتُ مِنْ هَؤُلَاءِ اللَّاتِي كُنَّ عِنْدِي فَلَمَّا سَمِعْنَ صَوْتَكَ ابْتَدَرْنَ الْحِجَابَ» قَالَ عُمَرُ: يَا عَدُوَّاتِ أَنْفُسِهِنَّ أَتَهَبْنَنِي وَلَا تَهَبْنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم؟ قُلْنَ: نَعَمْ أَنْتَ أَفَظُّ وَأَغْلَظُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيهٍ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا لَقِيَكَ الشَّيْطَانُ سَالِكًا فَجًّا قَطُّ إِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَقَالَ الْحُمَيْدِيُّ: زَادَ الْبَرْقَانِيُّ بَعْدَ قَوْلِهِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: مَا أَضْحَكَكَ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3683) و مسلم (22 / 2396)، (6202) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (وَعِنْدَهُ نِسْوَةٌ) তাঁর নিকট মহিলাদের একটি দল ছিল।
(مِنْ قُرَيْشٍ) ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা হলেন ‘আয়িশাহ্, হাফসাহ, উম্মু সালামাহ্, যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) ও অন্যান্য মহিলাবৃন্দ।
তিনি আরো বলেন, তাঁরা ছিলেন নবী (সা.) -এর স্ত্রী। এটাও সম্ভাব্য যে, তাঁদের সাথে অন্যান্য মহিলারাও ছিলেন।
(يُكَلِّمْنَهُ وَيَسْتَكْثِرْنَهُ) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা নবী (সা.) -এর নিকট আবেদন করছিলেন যে, তাদের ভরণ-পোষণ বাড়িয়ে দেয়া হোক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৩, শারহুন নাবাবী হা, ২৩৯৬)
(أَصْوَاتُهُنَّ) কাযী ইযায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা হতে পারে নবী (সা.) -এর আওয়াজের উপর আওয়াজ উঁচু করা নিষেধ হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা।
এটাও হতে পারে যে, তাদের একত্রিত হওয়ার কারণে উচ্চশব্দ হচ্ছিল। এটা নয় যে, প্রত্যেকে তার আওয়াজ নবী (সা.)-এর ওপর উঁচু করছিলেন।
আমি বলব: উক্ত কথার দলীল নয়, যে তাদের কথার শব্দ নবীর কথার শব্দের চেয়ে উঁচু ছিল। কেননা আল্লাহ তা'আলার বাণী দ্বারা এ সন্দেহ দূর হয়ে যায়। তিনি বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর সামনে উঁচু গলায় কথা বলো না।” (সূরা আল হুজুরাত ৪৯: ২)।
এখানে উদ্দেশ্য হলো ঐ অবস্থায় তারা তাদের অভ্যাসের তুলনায় নিচু থেকে একটু উঁচু গলায় কথা বলছিল নবী (সা.) -এর সাথে তবে শিষ্টাচার ও ভদ্রতা বজায় রেখে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী হা, ২৩৯৬)
ইবনুত্ তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত ঘটনা ছিল নিষেধাজ্ঞার পূর্বের। কেউ কেউ বলেন, নিষেধাজ্ঞা ছিল পুরুষদের জন্য খাস। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ছিল সাবধানতা। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৩)।
(أَضْحَكَ اللَّهُ سِنَّكَ) উক্ত বাক্য দ্বারা বেশি হাসার জন্য দু'আ করা হয়নি বরং সর্বদা যেন আনন্দে থাকেন এরূপ দু'আ করা হয়েছে, এ বাক্যটির প্রমাণ নেই। তুমি কথা বলো, তাদের উত্তরের প্রতি লক্ষ করো না।
(إِيهٍ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ) ভাষাবিদগণ বলেন, যখন (إِيهٍ) শব্দটি যের ও তানভীনসহ হবে তখন অর্থ হবে কোন কথার সূচনা করো না। আর তানভীন ছাড়া অর্থ হবে কথা বলা হতে বিরত হও। যের এবং তানভীনসহ অর্থ হবে তুমি যা বলতে চাও আমাকে বল।
ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তানভীন ছাড়া অর্থ হবে তাদের তিরস্কার করা হতে বিরত হও।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মিতব্যয়ী হওয়ার বিষয়টি তাঁর সত্ত্বাগত দাবী তবে তার চেয়ে বেশি হওয়াটাকে প্রশংসা করেছেন। যেন তিনি বুঝাতে চেয়েছেন () শব্দ দ্বারা মিতব্যয়ী থেকে বেশি করা আর এদিকটাকে বড় করে তুলেছেন, যার কারণে এর পরেই বলেছেন ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৩)
(إِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ) এখানে ‘উমার (রাঃ)-এর মহা মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, কেননা উক্ত বাক্য সাক্ষ্য দেয় যে, তার ওপর শয়তানের কোন ক্ষমতা চলে না। আরো বলা হয় যে, শয়তান হতে রক্ষা করা হয়েছে। কারণ যখন তারা এক রাস্তায় চলে তখন শয়তানের পলায়ন ছাড়া উপায় থাকে না। তবে এ কথা
অস্বীকার করা হয় না যে তার সাধ্য অনুযায়ী সুযোগ পেলে তাকে কুমন্ত্রণা দিবে না। যদি এ কথা বলা হয় যে, তাকে কুমন্ত্রণা দেয়ার সাহস নেই, তাহলে বুঝে নিতে হবে যেহেতু শয়তান একই রাস্তায় চলতে বাধাগ্রস্ত হয় সেহেতু তার সাথে মিলিত হতে পারবে না ও কুমন্ত্রণা দিতে পারবে না, এটা অধিক যুক্তিসঙ্গত। (ফাতহুল বারী হা, ৩৬৮৩)।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীস তার বাহ্যিক বিষয়ের উপর ধরা হবে। শয়তান যখন তাকে প্রশস্ত রাস্তায় দেখে তখন সে ‘উমার (রাঃ)-এর ভয়ে পলায়ন করে এবং এই রাস্তা ছেড়ে যায় অধিক কষ্টের কারণে।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শয়তান ও তার ধোঁকা দ্বারা একটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে। আর ‘উমার (রাঃ) শয়তানের পথ ছেড়ে দেন এবং সঠিক পথে চলেন অথবা শয়তান যা আদেশ করে তার বিপরীত চলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)