৫৭০২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭০২-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা যখন জান্নাতে আদম (আঃ)-এর দেহ আকৃতি তৈরি করলেন এবং যতদিন ইচ্ছা তিনি এ অবস্থায় রেখে দিলেন, তখন ইবলীস উক্ত আকৃতির চতুস্পার্শ্বে ঘোরাফেরা করত এবং তার প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল তার মধ্যস্থল শূন্য, তখন সে বুঝতে পারল যে, এটা এমন একটি সৃষ্টিজীব যে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَمَّا صَوَّرَ اللَّهُ آدَمَ فِي الْجَنَّةِ تَرَكَهُ مَا شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ يَنْظُرُ مَا هُوَ فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يتمالَكُ» . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (111 / 2611)، (6649) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: “যখন আল্লাহ তা'আলা আদমকে জান্নাতে সৃষ্টি করলেন।” তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার কাছে হাদীসটি অত্যন্ত জটিল মনে হয়; কেননা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা'আলা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যখন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন তখন তিনি একজন জীবন্ত মানুষ। কুরআনের স্পষ্ট বাণী এ কথার সমর্থন করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন (وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ) “আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো”- (সূরাহ্ আল-বাকারা ২ : ৩৫)। তবে মাটি থেকে সৃষ্টি ও জান্নাতে আকৃতি প্রদানের মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা মাটি থেকে অংশ নেয়া হয়েছে, তারপর তাকে খামীরের মতো করা হয়েছে, তারপর শুকানোর জন্য আরো কিছু দিন রাখা হয়েছে, এভাবে কয়েকটি ধাপ যাওয়ার পর যখন মানবিক রূপ গ্রহণের উপযুক্ত হয়েছে তখন তাকে জান্নাতে নিয়ে আকৃতি দেয়া ও তার মাঝে আত্মা ফুকা হয়েছে। আর উপরোক্ত আয়াত অর্থাৎ “আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো।” এখানে এমন কিছু বুঝায় না যে, তার মাঝে আত্মা ফুকার পর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

(تَرَكَهُ مَا شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ) অর্থাৎ জান্নাতের যে কোন জায়গায় তাকে বিচরণ করতে ছেড়ে দিলেন। তবে নির্দিষ্ট গাছের কাছে যাওয়া নিষেধের ঘটনা আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ। তাই প্রকৃত অর্থ হবে, নিষিদ্ধ সেই গাছ ব্যতীত জান্নাতের যে কোন জায়গায় তার বিচরণের অনুমোদন ছিল।

(فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ يَنْظُرُ مَا هُوَ) অর্থাৎ ইবলীস প্রথমে আদমকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করল; যাতে তার ষড়যন্ত্র বিফলে না হয়ে যায়।
(فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يتمالَكُ) অর্থাৎ যখন দেখলো আদম পেটবিশিষ্ট, তখনই সে বুঝে নিলো তাকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তার মাঝে শক্তি ও দঢ়তা থাকবে না। বরং প্রতিজ্ঞা নড়বড়ে হবে, অবস্থা পরিবর্তনশীল হবে এবং বিপদ আপদের সম্মুখীন হবে। কেউ কেউ বলেন, ইবলীস বুঝে নিলো, এই সৃষ্টি প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কারো কারো মতে এর অর্থ: এই সৃষ্টি প্ররোচনা বারণ করতে পারবে না। কেউ কেউ বলেন, রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।