৫৭০১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭০১-[8] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর জিন্ জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়া মিশ্রিত অগ্নিশিখা হতে এবং আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্তু দ্বারা, যার বর্ণনা (কুরআনে) তোমাদেরকে বলা হয়েছে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْ عَائِشَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خُلِقَتِ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وصف لكم» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (60 / 2996)، (7495) ۔
(صَحِيح)

وعن عاىشة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «خلقت الملاىكة من نور وخلق الجان من مارج من نار وخلق ادم مما وصف لكم» . رواه مسلم رواہ مسلم (60 / 2996)، (7495) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (خُلِقَتِ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُورٍ) “মালায়িকাহ্ সৃষ্টি করা হয়েছে নূর দিয়ে”। মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহ তা'আলার এক মহান সৃষ্টি যারা না পুরুষ, না মহিলা। তারা খায় না, পান করে না, বিবাহ করে না, তাদের সন্তান হয় না। মালায়িকা’র আলোচনা নবীর আগে নিয়ে আসার অর্থ এই নয় যে, মালায়িকাহ নবীদের থেকে উত্তম। বরং সৃষ্টির ক্ষেত্রে তারা আগের এবং কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে নবীদের আগে তাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন –
( ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ) (وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ) (وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ) “...তারা সবাই আল্লাহর ওপর, তাঁর মালায়িকাহ্'র (ফেরেশতাদের) ওপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর এবং রাসূলগণের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে...”- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২: ২৮৫)। “...যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও তার মালায়িকাহ্’কে, তাঁর কিতাবসমূহকে, তাঁর রাসূলগণকে এবং শেষ দিবসকে অস্বীকার করে...”- (সূরা আন্ নিসা ৪: ১৩৬)। “...বরং কল্যাণ আছে এতে যে, কোন ব্যক্তি ঈমান আনবে আল্লাহ, শেষ দিবস, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ), কিতাবসমূহ ও নবীগণের প্রতি...”- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২:১৭৭)।
আর জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হজ্জের বিবরণের দীর্ঘ হাদীসে রাসূল (সা.) ও বলেছেন- (اِبْرَؤُوابِمَابَدَأَ اللَّهُ بِهِ) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যা দিয়ে শুরু করেছেন তোমরাও তা দিয়ে শুরু করো।”
(সহীহ মুসলিম অধ্যায়: হজ্জ, অনুচ্ছেদ: নবী (সা.) এ-এর হজ্জ, হা. ২১৩৭)
তাছাড়া তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের মাঝে খবর আদান প্রদানের মাধ্যম। তাই আল্লাহ তা'আলার পর তাদের নাম এবং পরে নবীদের নাম আসাটা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এর দ্বারা তারা নবী ও রাসূলদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এটা আবশ্যক হয় না। (ফাতহুল বারী হা. ৬/৩০৬)
কুরআনের বিবরণ মতে, মালাক ডানাবিশিষ্ট। আল্লাহ তা'আলা বলেন (اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ جَاعِلِ الۡمَلٰٓئِکَۃِ رُسُلًا اُولِیۡۤ اَجۡنِحَۃٍ مَّثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ؕ)

“সমস্ত প্রংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা এবং মালায়িকাকে করেছেন বার্তাবাহক যারা দুই, তিন ও চার পাখাবিশিষ্ট।” (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১)।
তারা পাখা দিয়ে উড়তে পারে আবার মানবরূপ ধারণ করতে পারে। তারা কোন পাপ করে না। আল্লাহ তাদেরকে যা নির্দেশ দেন তারা তাই করে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। এই মালাক নূরের সৃষ্টি আমরা কেবল এটুকু জানি। নূরের অবস্থা বা ধরণ সম্পর্কে আমাদেরকে জানানো হয়নি।
(وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ) الْجَانُّ অর্থাৎ জিন্। জিন্ দ্বারা জিন জাতি উদ্দেশ্য। কারো কারো মতে, জিনদের পিতা উদ্দেশ্য। আদমের বিপরীতে এই অর্থই উপযুক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الْجَانُّ) অর্থাৎ জিন্। আর (مَارِجٍ) কালো ধোঁয়া মিশ্রিত অগ্নি।
(নবাবীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ)।
সূরা আর রহমানে রয়েছে, (وَ خَلَقَ الۡجَآنَّ مِنۡ مَّارِجٍ مِّنۡ نَّارٍ) অর্থাৎ “তিনি জিনকে অগ্নিশিখা থেকে সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আর রহমান ৫৫ : ১৫)।
অন্য আয়াতে রয়েছে, (وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰهُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ) অর্থাৎ “আর আমি জিনকে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরাহ আল হিজর ১৫ :২৭)।

(وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وصف لكم) “আর আদম-এর সৃষ্টি যেভাবে তোমাদেরকে বিবরণ দেয়া হয়েছে।” অর্থাৎ আদম মাটির সৃষ্টি এটা তোমাদের জানা। আল্লাহ তোমাদেরকে কুরআনে এর বিবরণ যেভাবে দিয়েছেন তা দিয়েই আদমের সৃষ্টি। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন- (خَلَقَهٗ مِنۡ تُرَابٍ) “তিনি তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন”- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ৫৯)। অন্য আয়াতে রয়েছে, (خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ کَالۡفَخَّارِ) “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে”- (সূরা আর রহমান ৫৫ : ১৪)। আরেক আয়াতে রয়েছে, (وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ) “আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি”- (সূরাহ্ আল হিজর ১৫ : ২৬)। অন্য আয়াতে রয়েছে, (اِنِّیۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ طِیۡنٍ) “নিশ্চয় আমি মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করছি”- (সূরাহ্ আস্ সোয়াদ ৩৮ : ৭১)।
এভাবে কুরআনে বিষয়টি অনেক বেশি বর্ণনা হওয়া ও সবার কাছে স্পষ্ট থাকার দরুন নবী (সা.) এ বিষয়টি অস্পষ্ট রেখেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)