পরিচ্ছেদঃ ১০) মসজিদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা এবং তাতে বসে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ
৩২৬. (সহীহ্) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একথা বলতে শুনেছিঃ ’’আল্লাহ্ তাআ’লা সাত শ্রেণীর মানুষকে তাঁর ছায়ায় স্থান দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া[1] ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায় পরায়ন শাসক[2], (২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে প্রতিপালিত করেছে। (৩) যে লোকের অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে[3]। (৪) দু’জন লোক আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালবাসে। এই ভালবাসার উপর একত্রিত হয় এবং এর উপরেই একে অপর থেকে আলাদা হয়।[4] (৫) যে লোককে মর্যাদা সম্পন্ন ও সুন্দরী কোন নারী (ব্যভিচারের) জন্য আহবান করে কিন্তু সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি।[5] (৬) যে লোক এমন গোপনে সাদকা করে যে তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত জানতে পারে না। (৭) যে লোক নির্জনে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু’চোখে অশ্রু ঝরায়।’’
(বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১ প্রমূখগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)
[2] . যে শাসক বা গভর্ণর মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করে এবং তাদের মাঝে আদল-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই শাসক অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী বিচার-ফায়সালাকারী হতে হবে। অন্যথায় কখনই সে ন্যায়-নিষ্ঠাবান হতে পারবে না।
[3] . অর্থাৎ মসজিদকে ভালবাসে এবং অধিক হারে জামাতের সাথে মসজিদে নামায আদায় করে।
[4] . অর্থাৎ তারা আল্লাহর প্রতি ভালবাসার কারণেই একে অপরকে ভালবাসে এবং পরস্পরে মিলিত হয় ও তার উপরেই প্রতিষ্ঠিত থাকে। যখন একজন অপরজন থেকে আলাদা হয় তখনও তাদের মাঝে আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা অটুট ও বিরাজিত থাকে।
[5] . ‘আল্লাহকে ভয় করি’ একথা হয়তো সে মুখে উচ্চারণ করে বলে অথবা অন্তরে বলে। এখানে মর্যাদা সম্পন্ন ও সুন্দরী নারীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে তাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী থাকে এবং তাদেরকে পাওয়াও সহজ সাধ্য হয় না।
الترغيب في لزوم المساجد والجلوس فيها
(صحيح) عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللَّهُ ظِلُّهُ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ الْعَادِلٌ وَالشابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقًا باِالْمَسْجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجتمعا على ذلك وتفرقا عليه وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ إِلَى فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تنفق يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذكر الله خاليا ففاضت عيناه
. رواه البخاري ومسلم وغيرهما
পরিচ্ছেদঃ ১০) মসজিদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা এবং তাতে বসে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ
৩২৭. (সহীহ্) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ “যে ব্যাক্তি মসজিদকে সালাত এবং যিকরের জন্যে নিজের দেশ বানাবে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর খুশী হয়ে তাকে নৈকট্য দান করবেন ও সম্মানিত করবেন। যেমন কোন অনুপস্থিত ব্যাক্তি হাযির হলে তাকে দেখে তার পরিবারের লোকেরা খুশী হয়।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনু আবী শায়বা, ইবনু মাজাহ্ ৮০০, ইবনু খুযায়মা ২/৩৭৯, ইবনু হিব্বান ১৬০৫ ও হাকেম। হাকেম বলেনঃ বুখারী ও মুসলিমের ১০৩১ শর্তানুযায়ী হাদীছটি সহীহ্)
ইবনু খুযায়মার অপর রেওয়ায়াতে আছেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَا مِنْ رَجُلٍ كَانَ يُوَطِّنُ الْمَسَاجِدَ فَشَغَلَهُ أَمْرٌ ، أَوْ عِلَّةٌ ، ثُمَّ عَادَ إِلَى مَا كَانَ إِلاَّ تَبَشْبَشَ اللَّهُ إِلَيْهِ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ إِذَا قَدِمَ.
’’যে কোন ব্যাক্তি মসজিদকে নিজের দেশ বা বাসস্থান বানাবে, অতঃপর কোন বিষয় বা প্রয়োজন তাকে ব্যস্ত করে (এবং সে কারণে সে বের হয়ে যায়) তারপর আবার পূর্বাস্থানে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর খুশী হয়ে তাকে নৈকট্য দান করবেন ও সম্মানিত করবেন, যেমন কোন অনুপস্থিত ব্যাক্তি হাযির হলে তাকে দেখে তার পরিবারের লোকেরা খুশী হয়।’’
الترغيب في لزوم المساجد والجلوس فيها
(صحيح) وَ عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا تَوَطَّنَ رَجُلٌ الْمَسَاجِدَ لِلصَّلَاةِ وَالذِّكْرِ إِلَّا تَبَشْبَشَ اللَّهُ تعالى إليه كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ إِذَا قَدِمَ عَلَيْهِمْ
. رواه ابن أبي شيبة وابن ماجه وابن خزيمة وابن حبان في صحيحيهما والحاكم وقال صحيح على شرط الشيخين
পরিচ্ছেদঃ ১০) মসজিদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা এবং তাতে বসে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ
৩২৮. (হাসান লি গাইরিহী) আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ ’’ছয়টি মজলিসের কোন একটিতে যদি কোন মুমিন থাকে তবে তার দায়িত্ব আল্লাহ তা’আলার উপর। সে মজলিস সমূহ হলঃ (১) জামাআতের মসজিদে, (২) অসুস্থ ব্যাক্তির মজলিসে, (৩) জানাযায়, (৪) নিজের বাড়ীতে[1], (৫) ন্যায়নিষ্ঠ শাসকের মজলিস, যে মজলিসে বসে তাকে শক্তিশালী করবে এবং সম্মান করবে, (৬) জিহাদের ক্ষেত্রে।
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ত্বাবরানী [কাবীর] ১৪৬৫৫ গ্রন্থে এবং আরো বর্ণনা করেছেন বাযযার ৪৩৫)
الترغيب في لزوم المساجد والجلوس فيها
) (حسن لغيره) وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : سِتَّةُ مجَالِسَ المؤمن ضامن على الله تعالى ما كان في شيء منها فِي مَسْجِدِ جَمَاعَةٍ و عِنْدَ مَرِيضٍ أَوْ في جِنَازَةً أَوْ فِي بَيْتِهِ أَوْ عِنْدَ إِمَامٍ مُقْسِطٍ يُعَزِّرُهُ ، وَيُوَقِّرُهُ أو في مشهد جهاد. رواه الطبراني في الكبير والبزار
পরিচ্ছেদঃ ১০) মসজিদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা এবং তাতে বসে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ
৩২৯. (হাসান সহীহ্) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ’’নিশ্চয় মসজিদ সমূহের জন্যে কিছু পেরেক (কীলক) থাকে। সে পেরেক হল মসজিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককারী ব্যাক্তিগণ। তারা মসজিদে থাকলে তাদের সাথে একদল ফেরেশতাও বসে থাকেন। তারা যদি কখনও অনুপস্থিত থাকে তবে ফেরেশতাগণ তাদের খোঁজ-খবর নেন। তারা যদি অসুস্থ হয় তবে তাঁরা তাদেরকে দেখতে যান, তারা যদি কোন প্রয়োজনে ব্যস্ত থাকে তবে তাঁরা (ফেরেশতাগণ) তাদেরকে সাহায্য করে থাকেন।’’
তারপর বলেছেন,
’’মসজিদের সাথী তিনটি বৈশিষ্টের অধিকারী, (১) উপকারী ভাই হিসেবে গণ্য হয়, (২) হিকমত তথা প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা শিক্ষা করে বা শিক্ষা দেয়, (৩) আল্লাহর রহমতের অপেক্ষায় থাকে।’’
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ২/৪১৮, হাদীছটি হাকেম ২/৩৯৮ আবদুল্লাহ বিন সালামের বরাতে আবু হুরায়রা থেকে মওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ্।)
কিন্তু হাকেমের মাউকূফ সূত্রের বর্ণনা নিম্নরূপঃ
إِنَّ لِلْمَسَاجِدِ أَوْتَادًا أوتادها لهم جلساء من الملائكة فإن غابوا سألوا عنهم وإن كانوا مرضى عادوهم وإن كانوا في حاجة أعانوهم
’’মসজিদের কিছু পেরেক থাকে। মুসল্লিগণ হচ্ছেন তার পেরেক। ফেরেশতাগণ তাদের সাথী। তারা অনুপস্থিত থাকলে ফেরেশতারা তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, অসুস্থ হলে শুশ্রূষা করেন, কোন কাজে ব্যস্ত হলে তাদেরকে সাহায্য করেন।’’
الترغيب في لزوم المساجد والجلوس فيها
(حسن صحيح) وَعَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِنَّ لِلْمَسَاجِدِ أَوْتَادًا الْمَلَائِكَةُ جُلَسَاؤُهُمْ، إِنْ غَابُوا يَفْتَقِدُونَهُمْ، وَإِنْ مَرِضُوا عَادُوهُمْ وَإِنْ كَانُوا فِي حَاجَةٍ أَعَانُوهُمْ.
ثم قال: جَلِيسُ الْمَسْجِدِ عَلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ: أَخٍ مُسْتَفَادٍ، أَوْ كَلِمَةٍ مُحْكَمَةٍ، أَوْ رَحْمَةٍ مُنْتَظَرَةٍ. رواه أحمد
পরিচ্ছেদঃ ১০) মসজিদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা এবং তাতে বসে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ
৩৩০. (হাসান লি গাইরিহী) আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একথা বলতে শুনেছিঃ ’’মসজিদ হচ্ছে প্রত্যেক আল্লাহ ভীরু ব্যাক্তির ঘর।’’
(ত্বাবরানী [কাবীর ও আওসাত] গ্রন্থদ্বয়ে এবং বাযযার হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। বাযযার বলেনঃ হাদীছটির সনদ হাসান, মাযমাউল যাওয়ায়েদ ২০২৬)
এ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হাদীছসমূহ ছাড়া আরো অনেক হাদীছ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু ’সালাতের জন্যে অপেক্ষা করা’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ্। অনুচ্ছেদ নং ২২।
الترغيب في لزوم المساجد والجلوس فيها
(حسن لغيره) وَعَنْ أبِيْ الدَّرْداَءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ الْمَسْجِدُ بَيْتُ كُلِّ تَقِيٍّ..........رواه الطبراني في الكبير والأوسط والبزار