পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮১৮। আবূ সাঈদ আল-খুদরী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেন সালাতে সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে কুরআন থেকে সহজপাঠ্য কোন আয়াত পড়ি।[1]
সহীহ।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ الطَّيَالِسِيُّ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ:أُمِرْنَا أَنْ نَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَمَا تَيَسَّرَ
- صحيح
Abu sa’id said:
we were commanded to recite Fatihat al-kitab and whatever was convenient (from the Qur’an during the prayer).
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮১৯। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি মদীনার রাস্তায় বের হয়ে ঘোষনা করো যে, কুরআন পাঠ ছাড়া সালাত হয় না; অন্তত সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) অবশ্যই মিলাবে।[1]
মুনকার।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى الرَّازِيُّ، أَخْبَرَنَا عِيسَى، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مَيْمُونٍ الْبَصْرِيِّ، حَدَّثَنَا أَبُو عُثْمَانَ النَّهْدِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم: اخْرُجْ فَنَادِ فِي الْمَدِينَةِ أَنَّهُ لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقُرْآنٍ وَلَوْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَمَا زَادَ
- منكر
Abu Hurairah reported the Messenger of Allah (ﷺ) as saying:
Go out and announce in medina that prayer is not valid but the recitation of the Qur’an even though it might be fatihat al-kitab and something more.
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২০। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেন যে, আমি যেন ঘোষণা করি, সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য (সূরাহ বা আয়াত) না মিলালে সালাতই হবে না।[1]
সহীহ।
‘লা সালাতা’ এর মধ্যে ‘লা’ কালেমার সঠিক অর্থঃ কতিপয় লোক বলে থাকেন, ‘হাদীসে’ ‘লা সালাতা ইল্লা বি ফাতিহাতিল কিতাব’ বা ‘‘সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না’’ অর্থ পূর্ণভাবে হয় না। যেমন অন্য হাদীসে রয়েছে, লা ঈমা-না লিমান লা আমা-নাতা লাহু, ওয়ালা দীনা লিমান লা ‘আহদা লাহু’ অর্থঃ ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই যার আমানাত নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীন নেই যার ওয়াদা ঠিক নেই।’’ এর অর্থ ঐ ব্যক্তির ঈমান পূর্ণ নয় বরং ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ হাদীসে বর্ণিত ‘লা’ শব্দটি নাফিয়ে কামালের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
এর জবাব কয়েকভাবে দেয়া যায়ঃ
১। হাফিয সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলবী (রহঃ) তাঁর ‘আহসানুত তাফসীর’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘লা সালাত’ এর মধ্যে ‘লা’ কালেমা লায়েনাফি জিন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর গঠনকারী একে জিনস ও যাতের জন্যই গঠন করেছে, নাফি কামালের জন্য নয়। যেমন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর মধ্যে লা কালেমাটি লায়ে নাফি জিন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এটাই হলো এর প্রকৃত অর্থ। সুতরাং হাক্বীক্বী (প্রকৃত) অর্থ বাদ দিয়ে কামালের (মাজাযী তথা রূপক) অর্থ গ্রহণ করা কখনোই বৈধ হবে না। কারণ মাজাযী অর্থ ঐ স্থানে গ্রহণ করা হয়, যেখানে হাক্বীক্বী অর্থ নেয়া সম্ভব হয় না। আর সিফাতের নাফি ঐ স্থানে গ্রহণ করা হয় যেখানে যাতকে অস্বীকার করা অসম্ভব হয়। সুতরাং লা সালাত’ এর মধ্যে ‘লা’ যাতে সালাতে দিকে রুজু হবে। কারণ এখানে যাতে সালাতকে অস্বীকার করা সম্ভব হয়েছে। আর যদিও কিছুক্ষণের জন্য মেনে নেয়া যায় যে, যাতের অস্বীকার সম্ভব নয়, তবুও নাফিটা বিশুদ্ধতার দিকে রুজু হবে, কামালের দিক হবে না। কারণ বিশুদ্ধতার নাফি ও কামালের নাফি যদিও দু’টিই মাজাযীর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু বিশুদ্ধতার নাফিটা হাক্বীক্বীর নিকটতম। আর হাক্বীক্বী অর্থ অসম্ভব হলে দু’টি মাজাযী থেকে নিকটতম অর্থটি গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াজিব হয়ে যায়। আল্লামা আলুসী বাগদাদী হানাফী ‘রুহুল মাআনী’ (৯/৩১০) গ্রন্থে লিখেছেনঃ হাক্বীক্বী অর্থ গ্রহণ করা অসম্ভব হলে নিকটতম মাজায়ী অর্থ গ্রহণ করা ওয়াজিব।
ইমাম শাওকানী নায়লুল আওত্বার গ্রন্থে লিখেছেনঃ উক্ত হাদীস এই কথার পরিস্কার দলীল যে, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। এটাই ইমাম মালিক, শাফিঈ, সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম, তাবেঈনে এজামগণের এবং তাদের পরবর্তী ‘আলিমগণের অভিমত কারণ এই যে, লা সালাতার মধ্যে ‘লা’ নাফি যাত ও জিন্সের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর যদি নাফি যাতে অর্থ করা সম্ভব নাও হয়, তবে যে বস্তু যাতের নিকটতম হয়, সেটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। আর ওটা সিহ্হাতের (বিশুদ্ধতার) নাফি, কামালের (পরিপূর্ণতার) নাফি নয়। কারণ ‘সিহ্হাত’ শব্দটি মাজাযী থেকে অতি নিকটতম, আর কামাল দু’টো থেকেই দূরে। আর নাফির দু’ মাজাযীর নিকটতমকে গ্রহণ করা ওয়াজিব। আর উক্ত হাদীসে যাতের নাফি অবশ্যম্ভাবী এবং দৃঢ়।
হাফিয ইবনু হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ সালাত শব্দে শারঈ অর্থ বুঝানো হয়েছে, আভির্ধানিক অর্থ নয়। অতঃপর তিনি ‘লা’ নাফিয়ে কামালের বিরোধীতা করেন এবং নাফিয়ে ‘আজযা’কে দু’ মাজাযীর নিকটতম বলে সাব্যস্ত করেন এবং এর অনুকরণে কয়েকটি রিওয়ায়াত বর্ণনা করেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী, ৩/৪১৪)।
ইমাম নাববী (রহঃ) বলেনঃ হানাঢী ভাইদের উক্ত হাদীসের ভিতরে কামালের তা'বিল (ব্যাখ্যা) করা প্রকাশ্য হাদীসের বিপরীত। কারণ আবূ হুরাইরাহ সূত্রে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদীসে পরিস্কার শব্দ রয়েছে যে, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সমস্ত সালাতই অকর্মণ্য ও বরবাদ হয়ে যায়। (দেখুন, শারাহ সহীহ মুসলিম)।
২। কুতুবে সিত্তাহ সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে উপরোক্ত প্রসিদ্ধ হাদীসটি একই বর্ণনাকারী ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) সূত্রে দারাকুতনীতে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ
لا تجزىء صلاة لا يقرأ الرجل فيها بفاتحة الكتاب
‘‘ঐ সালাত যথেষ্ট নয়, যার মধ্যে মুসল্লী সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না।’’
হাদীসটিকে মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী, ‘আব্দুল হাই লাখনৌভী হানাফী ও ইমাম নাববী (রহঃ) সহ বহু বিদ্বান সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। এতে প্রমাণিত হলো উক্ত হাদীসে ‘সালাত হবে না’ অর্থ ‘সালাত সিদ্ধ হবে না।’
অনুরূপভাবে মুসনাদ আহমাদে (হাঃ ২০৬১৯) বর্ণিত হয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تقبل صلاة لا يقرأ فيها بأم الكتاب
‘‘যে সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা হয় না ঐ সালাত ক্ববূল হয় না।’’
আহমাদ শাকির বলেনঃ ‘এর সনদ সহীহ। সনদের ব্যক্তিগণ বিশ্বস্ত, প্রসিদ্ধ এবং হাদীসটিও খুবই প্রসিদ্ধ।
এক্ষণে ‘লা সালাত’ বা ‘সালাত হয় না’ এর অর্থ যখন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সালাতে যথেষ্ট হবে না’ ও ‘সালাত ক্ববূল হবে না’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তখন সেখানে কারো নিজস্ব ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ নেই। তাই কারোর পক্ষ থেকে ‘সালাত তো হয়ে যায়, তবে পূর্ণ হয় না’ এরূপ উক্তি করা হটকারীতা, চরম অন্যানয় ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রকাশ্য হাদীসকে বিকৃত করার নামান্তর।
৩। অপূর্ণাঙ্গ ও ত্রুটিপূর্ণ সালাত প্রকৃত অর্থে কোনো সালাত নয়। তাই সূরাহ ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ ইবাদাত সালাতকে পরিপূর্ণ করে নেয়ার মধ্যেই কল্যাণ নিহীত আছে। যা সবার কাছেই স্পষ্ট। সুতরাং কোনো তর্ক যুক্তি পরিহার করে সূরাহ ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত সালাত আদায়ে অসুবিধা কোথায়?
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا ابْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا جَعْفَرٌ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم أَنْ أُنَادِيَ:أَنَّهُ لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةِ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَمَا زَادَ
- صحيح
Abu hurairah said:
The Messenger of Allah (ﷺ) commanded me to announce that prayer is not valid but with the recitation of Fatihat al-kitab and something more.
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২১। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, যার মধ্যে ’কুরআনের মা’ অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহা পাঠ করল না, তার ঐ সালাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ, তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি যখন ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি আমার বাহু চাপ দিয়ে বললেন, হে ফারসী! তুমি মনে মনে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) আমার ও আমার বান্দাহ’র মধ্যে দু’ ভাগ করে নিয়েছি। যার এক ভাগ আমার জন্য, আরেক ভাগ আমার বান্দাহ’র জন্য এবং আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চায়, তাকে তাই দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। বান্দাহ যখন বলে, ’’আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল ’আলামীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করেছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ’’আর-রহমানির রহীম’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার গুণগান করেছে। বান্দাহ যখন বলে, ’’মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ’’ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন’’- তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সীমিত এবং আমার বান্দাহ যা প্রার্থনা করেছে- তাই তাকে দেয়া হবে। অতঃপর বান্দাহ যখন বলে, ’’ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকীম, সীরাতালাযীনা আন’আমতা ’আলাইহিম গাইরিল মাগদূবি ’আলাইহিম ওয়ালাযযল্লীন’’- তখন আল্লাহ বলেন, এর সবই আমার বান্দাহ’র জন্য আমার বান্দাহ আমার কাছে যা চেয়েছে, তাকে তাই দেয়া হবে।
সহীহ : মুসলিম।[1]
খিদাজ শব্দের অর্থঃ
১। ইমাম খাত্তাবী বলেনঃ খিদাজ মানে হচ্ছে নাক্বিস, ফাসিদ ও বাতিল। আরবরা এই খিদাজ শব্দ ঐ সময় ব্যবহার করেন যখন উটনী তার পেটের বাচ্চা ঐ অবস্থায় ফেলে দেয় যখন তা রক্তের পিন্ড থাকে মাত্র, পূর্ণ বাচ্চা জন্ম হয় না। এখান থেকেই খিদাজ শব্দ নেয়া হয়েছে। (দেখুন, মা‘আলিমুস সুনান, ১/৩৮৮)
২। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ খিদাজ অর্থ হচ্ছে এমন ক্ষতি, যে ক্ষতির কারণে সালাত নাজায়িয হয়ে যায়। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ২০)।
৩। শায়খ ‘আব্দুল ক্বাদির জিলানী বলেনঃ সালাতে সূরাহ ফাতিহা পড়া ফারয ও রুকন। সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যায়। (দেখুন, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃঃ ৫৩)।
৪। ইবনু ‘আব্দুল বার বলেনঃ খিদাজ হচ্ছে নুক্বসান, ফাসাদ। সেজন্যই আরবের লোকেরা ‘উটনীর খিদাজ বাচ্চা’ কথাটা তখন বলে থাকেন যখন উটনী বাচ্চা পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই গর্ভপাত করেন (অর্থাৎ অকালে ঝরে যাওয়া বাচ্চাকে যেমন বাচ্চা বলা যায় না তেমন সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সে সালাতকেও সালাত বলা যায় না)। (দেখুন, ইসতিজকার)।
৫। ইমাম ইবনু খুযাইমাহ বলেন ‘খিদাজ’ বা ত্রুটিপূর্ণ এর ব্যাখ্যায় স্বীয় সহীহ গ্রন্থে সালাত অধ্যায়ে ৯৫ নং অনুচ্ছেদ রচনা করেন এভাবেঃ ‘ঐ খিদাজ এর আলোচনা যে সম্পর্কে অত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুঁশিয়ার করেছেন যে, ঐ ত্রুটি থাকলে সালাত যথেষ্ট হবে না। কেননা ত্রুটি দু’ প্রকারের। এক- যা থাকলে সালাত যথেষ্ট হয় না। দুই- যা থাকলেও সালাত সিদ্ধ হয়। পুনরায় পড়তে হয় না। এই ত্রুটি হলে সিজদা্ সাহু দিতে হয় না। অথচ সালাত সিদ্ধ হয়ে যায়।’ অতঃপর তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস উদ্ধৃত করেনঃ ‘‘ঐ সালাত যথেষ্ট নয়, যার মধ্যে মুসল্লী সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না।’’ (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ)।
৬। ইমাম বুখারী লিখেছেনঃ আবূ ‘উবাইদ (রহঃ), যিনি লুগাত শাস্ত্রে ইমাম এবং আরবদের পরিভাষায় পারদর্শী, তিনি বলেছেনঃ যখন উটনী অসম্পূর্ণ মৃত বাচ্চা ফেলে দেয় যা মানুষের কোনো উপকারে আসে না, তখন আরাবগণ ‘খিদাজ’ শব্দ ব্যবহার করে থাকেন- (কিতাবুল ক্বিরাআত)। আল্লামা ইবনু মুরতাজা যুবাইদী হানাফীও ‘ক্বামুসের শারাহত অনুরূপ লিখেছেন। আল্লামা ইবনু মানজুর ‘লিসানুল আরব’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘প্রত্যেক খুর বিশিষ্ট প্রাণী যখন তার গর্ভশয় পূরণ হওয়ার পূর্বেই প্রসব করে দেয় তখন তাকে খিদাজ বলে।’
৭। আল্লামা জাহরুল্লাহ যামাখশারী বলেনঃ যদি কোনো অঙ্গ যেমন হাত ইত্যাদি কাটা পড়ে তাকে ও খিদাজ বলা হয়। অনুরূপভাবে যে সালাতে কোনো অঙ্গ বা অংশ অসম্পূর্ণ আছে তাকে খিদাজ বলা হয়।
৮। আল্লামা যুরকানী বলেনঃ আবূ হুরাইরাহর খিদাজ শব্দ বিশিষ্ট এই হাদীসটি সালাতে সূরাহ ফাতিহা ওয়াজিব হওয়ার জন্য মজবুত দলীল। (মুয়াত্তার শারাহ ১/১৫৯)।
৯। আল্লামা ‘আবদুর রউফ মুনাদী স্বীয় গ্রন্থে জামিউস সাগীরে লিখেছেনঃ ‘খিদাজ অর্থ নুক্বসান বিশিষ্ট।’ অনুরূপভাবে আল্লামা ‘আযীযীও জামিউস সাগীরের শারাহ গ্রন্থে লিখেছেনঃ খিদাজ বলতে যাতি নুক্বসানকে বুঝানো হয়েছে, যাতে সালাত একেবারেই খারাপ ও পন্ড হয়ে যায়।
১০। হাফিয সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলভী লিখেছেনঃ উপরোক্ত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিহা বিহীন সালাতকে খিদাজ বলেছেন। খিদাজ বলা হয় নুক্বসানকে। নুক্বসানের দু’টি প্রকার আছে। ১. নুক্বসানে যাতি, ২. নুক্বসানে সিফাতি। নুক্বসানে যাতি হচ্ছে, যা কোনো রুকুন বা অংশের অনুপস্থিতিতে বা অভাবে হয়ে থাকে। আর নুক্বসানে সিফাতি হচ্ছে, যা কোনো বস্তুর বিশ্লেষনের বা গুনোর অভাবে হয় আর এখানে নুক্বসানে যাতিই বুঝানো হয়েছে, সিফাতি নয়। সূরাহ ফাতিহা পাঠ সালাতের অন্যতম রুকন। তাই কতিপয় লোক কর্তৃক একে নুক্বসানে সিফাত ধরে নেয়া একবারেই ভুল এবং পূর্ববর্তী ‘আলিমগণের সরাসরি বিরোধী। (আহসানুত তাফসীর)।
১১। তাফসীরে ফাতহুল বায়ানে রয়েছেঃ ‘নিশ্চয় নাক্বিস সালাত এমন ক্ষদি, যে ক্ষতি সালাতে করলে প্রকৃতপক্ষে সেই সালাতকে সালাতই বলা যায় না।’ খিদাজ শব্দের অর্থ যে নাক্বিস, ফাসিদ ও বাতিল। এর আরো প্রমাণ দেখুন তাফসীরে কুরতুবী ১/১২৩, শারাহ যুরক্বানী ১/১৭৫, তানভিরুল হাওয়ালিক, ১/১০৬, নায়লুল আওত্বার, ২/২১৪, লিসানুল আরব, ২/৭২-৭৩ এবং অন্যান্য)।
কতিপয় লোক বলে থাকেনঃ ‘খিদাজ অর্থ অপূর্ণ। অর্থাৎ সালাত হবে কিন্তু কিছুটা ত্রুটি থাকবে।’ কিন্তু এটা কি আদৌ ঠিক হবে? সূরাহ ফাতিহাটা পড়ে নিয়ে ঐ ত্রুটিটা সেরে নিলে অসুবিধা কোথায়? লোকেরা ত্রুটিপূর্ণভাবে সালাত আদায় করবে, আর সেই সালাত ক্ববূল হবে কি না সেই সন্দেহও থাকবে, এরূপ সালাত আদায়ে সার্থকতা আছে কি? সুতরাং খিদাজের এরূপ অর্থ করলেও ফাতিহা বিহীন সালাতের কোনো মুল্য থাকছে না। তবে খিদাজের সঠিক অর্থ সেটাই যা মুহাদ্দিসীনে কিরাম, মুফাসসির ও অভিধানবিদগণ করেছেন। অর্থাৎ নুক্বসান, ফাসিদ ও বাতিল।
মনে মনে পাঠ করাঃ কতিপয় লোক বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে অন্তরে অন্তরে চিন্তা করা, জিহ্বা দ্বারা পাঠ করা নয়। কিন্তু এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। বরং আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বুঝিয়েছেন জিহ্বা দ্বারা আস্তে আস্তে নিঃশব্দে পড়া। আর এটাই সঠিক মনে মনে চিন্তা করার সাথে জিহ্বার কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু মনে মনে বা চুপি চুপি পাঠ করার সাথে জিহ্বার সম্পর্ক আছে। হিদায়া (১/৯৮) গ্রন্থে রয়েছেঃ ‘ক্বিরাআত হচ্ছে জিহ্বার কাজ।’ আর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কিন্তু এখানে মনে মনে ক্বিরাআত তথা পড়তে বলেছেন, চিন্তা বা ধেয়ান করতে বলেননি। সেজন্যই এর অর্থ করতে গিয়েঃ
১। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে জিহ্বা দ্বারা আস্তে আস্তে পড়া, উচ্চস্বরে না পড়া। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত পৃঃ ১৭)।
২। ইমাম নাববী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে তুমি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা নিঃশব্দে জিহ্বা দ্বারা পাঠ করো, এমনভাবে পাঠ করো যেন তুমি নিজের নিজে শুনতে পাও। (দেখুন, সহীহ মুসলিম শারাহ নাববী, ১/১৭০)।
৩। আল্লামা যুরক্বানী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে শব্দের সঙ্গে জিহ্বা হরকত করা। যদিও নিজ কান পর্যন্ত শব্দটা না আসে। (দেখুন, যুরক্বানী ১/১৭৬)
৪। আল্লামা শাওকানী বলেনঃ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ এর অর্থ হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা চুপি চুপি পাঠ করো, যেন তুমি তোমার অন্তরকে শুনাতে পারো। (দেখুন, নায়লুল আওত্বার ২/২০৭)
৫। মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে চুপি চুপি পাঠ করা, উচ্চস্বরে নয়। (দেখুন, মিরকাত ১/৫২০)।
৬। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী বলেনঃ যেসব মুদাররিস اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ ‘‘তুমি মনে মনে পাঠ করো’’ এর থেকে চিন্তা ও মনোযোগ অর্থ নিয়েছেন, তাদের ঐ অর্থ নেয়া আভির্ধানিক মতে ঠিক হয়নি। কারণ মনে মনে ক্বিরাআত করার অর্থ কোথাও চিন্তা বা মনোযোগ করা প্রমাণিত হয়নি। (দেখুন, আরফুশ শাজী, পৃঃ ১৭।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর উক্তি কি তাঁরই বর্ণিত অপর হাদীসের বিপরীতঃ কতিপয় লোক এ ধরনের অহেতুক উক্তি করে থাকেন এবং এর প্রমাণ হিসেবে বলেনঃ মুসলিম ও নাসায়ীতে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘ইমামের ক্বিরাআতকালে তোমরা চুপ থাকবে।’’
এর জবাব কয়েকভাবে দেয়া হলোঃ
প্রথমতঃ নাসায়ীর হাদীসটি সহীহ নয়। হাদীসটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ‘আজলান এবং আবূ খালিদ আহমার দু’জনেই দুর্বল বর্ণনাকারী (তাক্বরীবুত তাহযীব)। ইমাম আবূ দাঊদও হাদীসটি ঐ সূত্রে বর্ণনা করার পরে বলেছেনঃ আমাদের নিকট হাদীসটি সুরক্ষিত নয়। এটি বর্ণনাকারীর আবূ খালিদের একটি সন্দেহযুক্ত বা ভ্রান্ত কথা।
২। হাদীসটি মুসলিমে বর্ণিত হয়নি। তবে হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম মুসলিমের সঙ্গে তার লিখকের কথাবার্তা হয়েছিল। তা হচ্ছে এইঃ লিখক বললেন, ইমাম যখন ক্বিরাআত করবে তখন মুক্তাদীরা পড়বে না- কথাটি কি সহীহ? ইমাম মুসলিম বললেন, আমার নিকট সহীহ অর্থাৎ সবার নিকট নয়। এক পর্যায়ে লিখক বললেন, আপনার নিকট সহীহ হলে হাদীসটি আপনি আপনার কিতাব সহীহ মুসলিমে আনছেন না কেন? তখন ইমাম মুসলিম বললেন, হাদীসটি সহীহ ওহয়ার ব্যাপারে সকলে যেহেতু একমত নন, তখন আমি আমার কিতাবে তা উঠাতে চাই না। কারণ আমার কিতাবে ঐ সব হাদীস স্থান দিয়েছি, যেগুলো সহহি হওয়ার ব্যাপারে সকলে একমত। (দেখুন, মুসলিম ১/১৭৪)
৩। হাদীসটি ক্বিরাআতের কথা ‘আম’ ভাবে এসেছে। কিন্তু মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠের কথা ‘খাস’ ভাবে বিভিন্ন সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ হাদীস সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত অন্য সূরাহ ক্বিরাআতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৪। বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআতে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না তার সালাত হয় না।’’ বর্ণনাটির বর্ধিত অংশও সহীহ। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে বলেছেন, আর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কিভাবে পড়তে হবে তার ধরণটা শুধু উল্লেখ করেছেনঃ চুপি চুপি পড়বে, উচ্চস্বরে নয়। সুতরাং আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) মোটেই হাদীসের পরিপন্থি কাজ করেননি। না তার নিজ বর্ণিত হাদীসের, আর না অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম বর্ণিত হাদীস ও আসারসমূহের। যা অতি স্পষ্ট ব্যাপার।
ইমাম বুখারী বলেনঃ মুক্তাদী যখন ইমামের সাকতার (নীরবতার) সময় পাঠ করবে তখন ‘‘ইমামের ক্বিরাআতকালে তোমরা চুপ থাকো’’ কথাটার বিপরীত হয় না। তা এজন্যই যে, মুক্তাদী ইমামের সাকতার সময় পাঠ করছে এবং ইমাম যখন পড়তে তখন মুক্তাদী চুপ থাকছে। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, এবং বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত)।
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ (ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠের ব্যাপারে) হাদীস সম্রাটগণ এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন যে, ইমামের পড়াকালে মুক্তাদীরা পড়বে না, কিন্তু ইমাম যখন চুপ থাকবেন (সাকতা করবেন) তখন মুক্তাদীরা পড়ে নিবে। (দেখুন, জামি‘আত-তিরমিযী)
ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল’ ‘আস ক্বিরাআত পড়তেন ঐ সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাকতা করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পড়তেন তিনি তখন নীরব থাকতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আবার নীরব থাকতেন তখন তিনি আবার পড়তেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৮, ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ‘আমর ইবনু শু‘আইবের তার পিতা থেকে দাদার সূত্রের এ হাদীসের সকল সাক্ষ্যদাতাগণ বিশস্ত)।
ইমাম বায়হাক্বী আরো বলেনঃ সাহাবায়ি কিরামগণ সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে (সূরাহ ফাতিহা) ক্বিরাআত করতেন তখন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ক্বিরাআত করতেন তখন সাহাবায়ি কিরামগণ চুপ থাকতেন। এরপর আবার যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকতেন, তখন আবার সাহাবায়ি কিরামগণ পড়তেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৯)।
মাসআলাহঃ সালাতে প্রত্যেক মুসল্লীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ প্রসঙ্গ
(ক) ইমাম, মুক্তাদী, নির্বিশেষে সকলের জন্যই সূরাহ ফাতিহা পাঠ আবশ্যক হওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মারফূ হাদীস-
ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী প্রত্যেককেই সকল প্রকার সালাতে প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়তেই হবে, অন্যথায় সালাত অসম্পূর্ণ, বরবাদ, অগ্রহণযোগ্য ও মুরদা গণ্য হবে, উক্ত সালাত যথেষ্ট ও ক্ববূল হবে না ইত্যাদি- সূরাহ ফাতিহা পাঠের প্রতি এ ধরণের গুরুত্বদান এবং তা না পাঠকারীর প্রতি সতর্কবাণী সম্বলিত মারফূ হাদীসের সংখ্যা অনূন্য অর্বশতাধিক। বহু সংখ্যক সাহাবায়ি করিাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে এসব মারফূ হাদীসাবলী বর্ণনা করেছেন। যাদের মধ্যে ‘উবাদাহ ইবনু সামিত, আবূ হুরাইরাহ, আনাস, ইবনু ‘আব্বাস ‘আয়িশাহ, আবূ সাঈদ আল-খুদরী, ‘আমার ইবনু শু‘আইব, আবূ উমামাহ, ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদাহ, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রমূখ সাহাবীগণও রয়েছেন। লিখনী সংক্ষেপ করাণার্থে নিম্নে সেসব হাদীসাবলী থেকে কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হলো।
(১) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে না তার সালাত হবে না। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য)।
আলোচ্য হাদীসটি সম্পর্কে বিখ্যাত হাদীস বিশারদগণের অভিমত নিম্নে পেশ করা হলোঃ
(ক) সমস্ত মুহাদ্দিসগণের সর্দার ইমাম বুখারী (রহঃ) উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর ক্বিরাআত (সূরাহ ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব। মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দে সকল সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (দেখুন, সহীহুল বুখারী, ১ম খন্ড ১০/৯৫)।
(খ) সহীহুল বুখারীর অন্যতম ব্যাখ্যাকার আল্লামা শিহাবুদ্দীন আহমাদ কাস্তালানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটির উদ্দেশ্য হলো, একাকী সালাত আদায়কারী, ইমাম কিংবা মুক্তাদী নির্বিশেষে সকলের জন্যই সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দের সকল প্রকার সালাতেই প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (দেখুন, ইরশাদুশ শারী ২/৪৩৯)।
(গ) সহীহুল বুখারীর ব্যাক্যাকার বিখ্যাত হানাফী ‘আলিম আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) বলেন, উবাদাহ ইবনু সামিতের এ হাদীস দ্বারা আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, ইমাম আওযাঈ, ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম ইসহাক্ব, ইমাম আবূ সাওর, ইমাম দাঊদ (রহঃ) প্রমূখ ইমামগণ সকলেই ইমামে পিছনে মুক্তাদীর সকল প্রকার সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব হওয়ার দলীল গ্রহণ করেছেন। (অর্থাৎ তারা সকলেই হাদীসের ‘লিমান’ (কোনো ব্যক্তি) শব্দটি ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য বলেছেন)। (দেখুন, ‘উমদাতুল কারী ৩/৬৪)।
(ঘ) সহীহুল বুখারীর অন্যতম ব্যাখ্যাকার আল্লামা কিরমানী (রহঃ) বলেন, উবাদাহ ইবনু সামিতের এ হাদীস এ হুকুমেরই দলীল যে, ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী সকলের জন্যই সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব (অপরিহার্য)। (দেখুন ‘উমদাতুল ক্বারী ৩/৬৩)।
(ঙ) বিখ্যাত রিজালবিদ ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন, মুক্তাদীদের কেউ যেন ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ছেড়ে না দেয়। যদিও ইমাম সশব্দে ক্বিরাআত পাঠ করেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী ‘লিমান লাম ইয়াকরাউ বিফাতিহাতিল কিতাব’ এতে ‘লিমান’ কথাটি ‘আম। যাকে কোনো কিছুর সাথে খাস (নির্দিষ্ট) করা যাবে না। (দেখুন, তামহীদ ও তালখীসুল হাবীর)।
(চ) আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি প্রকাশ্যই প্রমাণ করে, প্রত্যেক রাক‘আতেই সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদী, ইমাম সশব্দে ক্বিরাআত পাঠ করুক বা নিঃশব্দে।
(ছ) অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসের ‘লিমান’ শব্দটি ‘আম অর্থে গ্রহণ করেছেন। ইমাম কাস্তালানী (রহঃ) বলেন, এটাই হচ্ছে জমহুর মুহাদ্দিসীনের মাযহাব (অভিমত)। অর্থাৎ ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী নির্বিশেষে সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। (দেখুন, ইরশাদুশ শারী ২/৪৩৫)।
(২) উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না। (দেখুন, ইমাম বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫৬)।
এ হাদীসটি সম্পর্কেঃ
(ক) স্বয়ং ইমাম বায়হাক্বী বলেন, এ হাদীসের সনদ সহীহ। আর হাদীসের বর্ণিত শব্দ خلف الإمام ‘ইমামের পিছনে’ কথাটি উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে সহীহভাবে বিভিন্নসূত্রে বর্ণিত এবং বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫৬)।
(খ) হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ‘আলিম ভারতের ইমাম বুখারী নামে খ্যাত দেওবন্দী হানাফীদের মধ্যে অতুলনীয় মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার মাহ্ কাশমিরী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস ইমামের পিছনে সূরাহ্ ফাতিহা পড়ার পক্ষে আংটির চমকদার মতির ন্যায় উজ্জ্বল। (দেখুন, ফাসলুল খিতাব, পৃঃ ১৪৭)।
(৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি ইমামের ক্বিরাআত অবস্থায় কিছু পড়ে থাকো? এটা করবে না। বরং কেবলমাত্র সূরাহ ফাতিহা চুপে চুপে পড়বে। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু হিব্বান, ত্বাবারানী আওসাত্ব, বায়হাক্বী; হাদীসটি সহীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ‘ইমামের পিছনে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ নং ২২৯, নায়লুল আওত্বার ২/৬৭, অনুচ্ছেদ- মুক্তাদীর ক্বিরাআত ও চুপ থাকা। হাদীসটি মূলতঃ ‘‘যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা চুপ থাকো এবং মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো’’ সূরাহ আল-আ‘রাফের এ আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ)।
(৪) ‘আমর ইবনু শু‘আইব তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা কি আমার পিছনে কিছু পড়ো? সাহাবীগণ বললেন, আমরা খুব জলদি পড়ে থাকি। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সূরাহ ফাতিহা ছাড়া কিছুই পড়বে না। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত এবং জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট এর সনদ সহীহ, ইমাম যায়লায়ী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট ‘আমর ইবনু শু‘আইবের তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা দলীল হিসেবে গণ্য, আর আমরাও এটা পছন্দ করি।’ হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইবনু সালাহ সহ অন্যান্য বিদ্বানগণও তার বর্ণনা সহীহ বলেছেন, সুতরাং হাদীসটি সহীহ)।
(৫) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঐ সালাত আদায় করলেন যে সালাতে স্বরবে ক্বিরাআত পড়তে হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যখন উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ করবো তখন তোমাদের কেউ উম্মুল কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না। (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, আহমাদ, বুখারী, ইমাম দারাকুতনী বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত, ইমাম বুখারী একে সহীহ বলেছেন, ইমাম বায়হাক্বীও এর সকল বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ত বলেছেন, এবং ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বায়হাক্বী ইবনু ইসহাক্ব থেকে حدثنا শব্দে, ইবনু ইসহাক্ব বলেন আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন মাকহুল, মাহমূদ ইবনু রাবী‘ থেকে ‘উবাদাহ ইবনু সামিত থেকে, এতে ইবনু ইসহাক্বের শ্রবণ স্পষ্ট হয়েছে, তার অনুসরণ (তাবে)’ করেছেন যায়িদ ইবনু ওয়অক্বিদ ও অন্যান্যরা মাকহুল সূত্রে)। এর সমর্থক (শাহিদ) বর্ণনাবলীর অন্যতম শাহিদ বর্ণনা হচ্ছে যা আহমাদ বর্ণনা করেছেন খালিদ হাজ্জা আবূ ক্বিলাবাহ থেকে মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ‘আয়িশাহ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে। হাদীসটি নিম্নরূপঃ
(৬) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ‘আয়িশাহ থেকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইমামের ক্বিরাআত করার সময় সম্ভবত তোমরা পড়ে থাকো? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই পড়ে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ করবে না, তবে তোমরা প্রত্যেকই সূরাহ ফাতিহা আস্তে পড়বে। (হাফিয বলেন, এর সনদ হাসান। আবূ ক্বিলাবাহ হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ‘আয়িশাহ থেকে সরাসরি শুনেছেন, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ‘আয়িশাহ বিশ্বস্ত তাবেঈ ও সহীহ মুসলিমের রাবী, তার এরূপ ‘আন রাজুলিন মিন আসহাবিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শব্দ দিয়ে বর্ণন হানাফী ‘উলামার নিকটেও সহীহ, দেখুন আসারুস সুনান, পৃঃ ৫৮-৭২, আল্লামা খলীল আহমাদ শাহারানপুরী হানাফী বলেন, এ ব্যাপারে উম্মাতের ইজমা হয়েছে যে, সমস্ত সাহবা ‘আদিল ছিলেন, তাই তাদের জাহালাতে কোনো সমস্যা নেই, হাদীসটি আরো বর্ণনা করেছেন বায়হাক্বী, দারাকুতনী)।
(৭) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না তার সালাত যথেষ্ট নয়। (দারাকুতনী, ইমাম দারাকুতনী বলেন, এর সনদ সহীহ, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত, ইবনু কাত্তানও একে সহীহ বলেছেন, উপরোক্ত শব্দে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেও এর শাহিদ মারফূ হাদীস বর্ণিত আছে, যা বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু হিব্বান ও অন্যরা, এর আরো শাহিদ বর্ণনা আছে আহমাদে এভাবে, ‘‘যে সালাতে সূরাহ ফাতিহা পড়া হয় না সেই সালাত ক্ববূল হয় না।’’ এবং অন্য অনুচ্ছেদে আনাস (রাঃ) থেকে মুসলিম ও তিরমিযীতে, এবং আবূ কাতাদাহ (রাঃ) থেকে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে, এবং ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে ইবনু মাজাহতে, এবং আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহতে, এবং আবূ দারদা (রাঃ) থেকে নাসায়ী ও ইবনু মাজাহতে, এবং জাবির (রাঃ) থেকে ইবনু মাজাহতে, এবং আলী (রাঃ) থেকে বায়হাক্বীতে এবং আয়িশাহ (রাঃ) থেকেও দেখুন নায়লুল আওত্বার, অনুচ্ছেদ- সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব)।
(৮) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হুকুম করেছেন আমরা (সাহাবীগণ) যেন প্রত্যেক রাক‘আতেই সূরাহ ফাতিহা পাঠ করি। (মিশকাতুল খিতাম ফাতহুল বায়ান, নায়লুল আওত্বার)।
(খ) ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে সাহাবীগণের আসার বা মতামত-
(১) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর অভিমতঃ একদা ইয়াযীদ ইবনু শারীক ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ সম্পর্কে উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলে উমার (রাঃ) বললেন, তুমি সূরাহ ফাতিহা পড়ো। আমি বললাম, আপনি যদি ইমাম হন? তিনি বললেন, আমি ইমাম হলেও আমার পিছনে পড়বে। আমি বললাম, আপনি যদি উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়েন তাহলে? তিনি বললেন, আমি উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ করলেও তুমি সূরাহ ফাতিহা পড়বে- (সহীহ সনদে বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, তারীখুল কাবীর, বায়হাক্বী, দারাকুতনী ও ইবনু আবূ শায়বাহ)। হারিস ইবনু সুওয়াইদ ও ইয়াযীদ আত-তায়মী (রাঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) আমাদের হুকুম দিয়েছেন আমরা যেন ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ি। (বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, দারাকুতনী, হাকিম, তাদের সকলের মতেই বর্ণনাটি সহীহ)।
(২) ‘আলী (রাঃ)-এর অভিমতঃ হাকাম ও হাম্মাদ বলেন, ‘আলী (রাঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার হুকুম দিতেন- (ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৩)। ‘আলী (রাঃ) বলেন, যে কোনো সালাতে সূরাহ ফাতিহা না পড়লে তা অপূর্ণ থেকে যায়- (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত)। ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি‘ থেকে বর্ণিত, ‘আলী (রাঃ) বলেন, যুহর ও আসর সালাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ও অন্য একটি সূরাহ পাঠ করো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়ো- (খুবই বিশুদ্ধ সনদে ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৩, বায়হাক্বী, হাকিম ও দারাকুতনী, সকলেই বর্ণনাটিতে সহহি বলেছেন)। সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, আমীরুল মু‘মিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব ও ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) দু’জনেই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার হুকুম দিতেন। (দেখুন, মুসতাদরাক, ১/২৩৯)।
(৩) উসমান (রাঃ)-এর অভিমতঃ ইমাম বাগাভী (রহঃ) বলেন, (ইমাম, মুক্তাদী, একাকী সালাত আদায়কারী সকলের জন্য সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ফরয) এটা উমার, ‘আলী, ‘উসমান, ইবনু ‘আব্বাস ও মু‘আয (রাঃ) সূত্রেও বর্ণিত আছে। (দেখুন, তাফসীরে খাযিন ২/৩৩১)।
(৪) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর অভিমতঃ ইমাম রাযী লিখেছেনঃ ইমাম শাফিঈ বলেন, প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। মুসল্লী কোনো রাক‘আতে সূলাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। শায়খ আবূ হামিদ আসফারয়িনী (রহঃ) বলেন, এ কথার উপর সমস্ত সাহাবীগণের ইজমা হয়েছে। আবূ বাকর, উমার, ‘আলী এবং ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রমূখ সাহাবায়ি কিরামও এ কথাই বলেছেন। (দেখুন, তাফসীরে কাবীর, ১/২১৬)।
(৫) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-এর অভিমতঃ আবূ নাসরাহ বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইমামের পিছনে কেবল সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৭০)।
(৬) ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর অভিমতঃ মাহমূদ ইবনু রাবী‘ বলেন, আমি ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনেছি। আর ‘উবাদাহ বলেছেন, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না- (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৪৬)। একদা ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো, যিনি সূরাহ ফাতিহা পড়তে ভুলে গেছেন। জবাবে তিনি বললেন, সে যেন পুনরায় সালাত আদায় করে নেয়। যদি দ্বিতীয় রাক‘আতে তার স্মরণ হয় তবুও সে যেন পুনরায় সালাত আদায় করে নেয়- (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)। মাহমূদ ইবনু রাবী‘ আরো বলেন, জামা‘আতের সাথে কোনো এক সালাত আদায়ে আমি উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর পাশে দাঁড়ালাম। সে সময় আমি উবাদাহকে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনলাম। সালাত শেষে আমি তাঁকে বললাম, আমি কি আপনাকে (ইমামের পিছনে) সূরাহ ফাতিহা পড়তে পড়তে শুনলাম। সালাত শেষে আমি তাঁকে বললাম, আমি কি আপনাকে (ইমামের পিছনে) সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনিনি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, কেননা সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। (বায়হাক্বী ২/১৬৮, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৫)।
(৭) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর আমলঃ আবূ মারইয়াম বলেন, আমি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনেছি- (দেখুন, ইমাম বুখারীর জযউল ক্বিরাআত, বর্ণনাটি সহীহ)। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আসর সালাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পড়েছেন (দেখুন, ইবনু আবূ শায়বাহ, ১/৩৭৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ আল-আসাদী বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর পাশে দাঁড়িযে সালাত আদায় করেছি। আমি তাঁকে যুহর ও আসর সালাতে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনেছি। (বায়হাক্বী ২/১৬৯)।
(৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর অভিমতঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো- (শারহু মা‘আনিল আসার ১/২০৬, বায়হাক্বী, ইমাম বায়হাক্বী এর সনদকে সহীহ বলেছেন)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিও না, চাই ইমাম উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়ুক বা আস্তে ক্বিরাআত পড়ুক (দেখুন, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৩ বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত ৬৪ পৃঃ)।
(৯) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর অভিমতঃ আবূল আলীয়াহ বলেন, আমি মক্কাহতে ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছি সালাতে ক্বিরাআত করবো কি? তিনি বলেছেন, আমি এ ঘরের (বাইতুল্লাহর) প্রভুর নিকট এ স্বভাবের জন্য লজ্জা বোধ করি যে, আমি সালাত আদায় করবো অথচ তাতে ক্বিরাআত করবো না, যদিও তা উম্মুল কুরআন সূরাহ ফাতিহা হয়- (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, ৪৮ নং এবং বায়হাক্বী ২/১৬১)। ইয়াহইয়া আল-বুকায়া বর্ণনা করেন, একদা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সাহাবায়ি কিরাম ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা মনে মনে পড়াকে দোষণীয় মনে করতেন না। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)।
(১০) আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ)-এর আমলঃ আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) ইমামের পিছনে যুহর ও আসর সালাতের প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পড়তেন। আর শেষের দু’ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পড়তেন। (দেখুন, ইমাম বুখারীর জুযঊল ক্বিরাআত)।
(১১) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর আমলঃ মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে যুহর ও আসর সালাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনেছি। দেখুন, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৩, তাতে যুহর ও আসর উল্লেখ ছাড়াও আরেকটি বর্ণনা এসেছে, ইমাম বায়হাক্বী এর সনদকে সহীহ বলেছেন)।
(১২) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর অভিমতঃ মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেছেন, কেউ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সে যেন পুনরায় সালাত আদায় করে। (দেখুন, ইমাম বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত)।
(১৩) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর অভিমতঃ তাবেঈ আবূল মুগীরাহ বলেন, সাহাবী উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন- (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত এবং বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, বর্ণনাটি সহীহ)। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ হুযাইল বলেন, আমি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আমি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়বো কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়বে। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৬৯)।
(১৪) আনাম (রাঃ)-এর অভিমতঃ সাবিত বর্ণনা করেন যে, আনাস (রাঃ) আমাদেরকে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার জন্য সব সময় হুকুম দিতেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর সুনানুল কুবরা ২/১৭০, এর সনদ হাসান এবং বর্ণনাটি সহীহ)।
(১৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর অভিমতঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) স্বরব ও নীরব উভয় ক্বিরাআতের সালাতেই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার হুকুম দিতেন (দেখুন, মা‘আলিমুস সুনান ১/৩৯২)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ইমাম যখন সূরাহ ফাতিহা পাঠকরে তখন তুমিও তার সঙ্গে সঙ্গে পাঠ করো এবং তা আগে শেষ করো। কেননা ইমাম যখন ওয়ালাদ দ্বলীন বলে তখন ফিরিশতারা আমীন বলেন। যার আমীন তাঁদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তা ক্ববূল হওয়ার জন্য সহায়ক হবে। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, বর্ণনাটি সহীহ)।
(১৬) আয়িশাহ (রাঃ)-এর অভিমতঃ ‘আয়িশাহ (রাঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার হুকুম দিতেন (দেখুন বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫)। আবূ হুরাইরাহ ও আয়িশাহ (রাঃ) উভয়েই ইমামের পিছনে যুহর ও আসর সালাতের প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা এবং কুরআন থেকে অন্য কিছু পড়ার হুকুম দিতেন। আর আয়িশাহ (রাঃ) বলতেন, শেষের দু’ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৭১, এবং কিতাবুল ক্বিরাআত)।
(১৭) মুয়াজ ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর অভিমতঃ এক লোক মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সূরাহ ফাতিহা পড়ো। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৬৯, মাআলিমুত তানযীল ২/৩৩১)।
(১৮) আবুদ দারদা (রাঃ)-এর অভিমতঃ হাসান ইবনু আত্বিয়্যাহ সূত্রে বর্ণিত। আবুদ দারদা (রাঃ) বলেন, ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিও না, চাই ইমাম উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়ুক বা আস্তে ক্বিরাআত পড়ুক- (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত পৃঃ ৬৮)। আবুদ দারদা (রাঃ) বলেন, আমার পছন্দ হচ্ছে, আমি ইমামকে রুকু‘ অবস্থায় পেলেও সূরাহ ফাতিহাটা পড়ে নিবে। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত পৃঃ ৬৮)।
(১৯) হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)-এর অভিমতঃ হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)ও বলেছেন, ইমাম স্বরবে ক্বিরাআত করলেও ইমামের ছিনে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ৮)।
(২০) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)-এর অভিমতঃ ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেন, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত জায়িয হবে না- (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৬৩)। ইমাম বুখারীর জুযউল ক্বিরাআতে রয়েছেঃ ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেন, উযু রুকু‘ সিজদা ও সূরাহ ফাতিহা ছাড়া কোনো মুসলিমের সালাত পবিত্র হয় না। চাই ইমামের পিছনে হোক বা ইমামের পিছনে না হোক।
(২১) হিশাম ইবনু আমির (রাঃ)-এর অভিমতঃ একদা হিশাম ইবনু আমির (রাঃ) ইমামের পিছনে ক্বিরাআত করলেন (সূরাহ ফাতিহা পড়লেন)। ফরে তাঁকে বলা হলো, আপনি কি ইমামের পিছনে পড়েন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা (সাহাবীগণ) অবশ্যই পড়ে থাকি। (দেখুন, বায়হাক্বীর সুনানুল কুবরা ২/১৭০) এতে প্রমাণিত হয়, সাহাবায়ি কিরাম ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন।
(২২) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর অভিমতঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ইমাম, মুক্তাদী উভয়েই প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পড়বে। আর শেষের দু’ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পড়বে- (দেখুন, ইমাম বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৭)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) বলতাম, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া কোনো সালাতই জায়িয নয়- (দেখুন, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৬১)। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা (সাহাবীগণ) ইমামের পিছনে যুহর সালাতের প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ আর শেষের দু’ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পড়তাম। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৭০, কিতাবুল ক্বিরাআত, এবং ইবনু মাজাহ, বর্ণনাটির সনদ সহীহ)।
ইমাম তিরমিযী বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরাম ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন। সাহাবী ‘উমার ইবনু খাত্তাব, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ, ইমরান ইবনু হুসাইন সহ অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম বলেছেন, সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সালাত হবে না। (দেখুন, জামি‘আত-তিরমিযী)।
(গ) ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের ফাতাওয়াহ ও আমল-
(১) ইমাম হাসান বাসরী (রহঃ)-এর ফাতাওয়াঃ হাসান বাসরী (রহঃ) বলতেন, সকল প্রকার সালাতে প্রত্যেক রাক‘আতে ইমামের পিছনে মনে মনে (নিঃশব্দে) সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। (বায়হাক্বী ২/১৭১, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৩)।
(২) ইমাম মাকহুল (রহঃ)-এর ফাতাওয়াঃ ইমাম মাকহুল (রহঃ) বলেন, স্বরব ক্বিরাআতের সালাতে ইমাম সূরাহ ফাতিহা পাঠের পর যখন চুপ থাকেন তখন তুমি আস্তে করে (নিঃশব্দে) সূরাহ ফাতিহা পড়ে নাও। যদি ইমাম না থামেন, তাহলে তুমি ইমামের সাথে সাথে, ইমামের পূর্বে বা পরে অবশ্যই পড়ে নিবে। কোনো অবস্থাতেই ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিবে না। (আবূ দাঊদ ১/১২১২, বায়হাক্বী ২/১৭১)।
(৩) (ইমাম আবূ হানিফার উস্তাদ) ইমাম ‘আত্বা (রহঃ)-এর ফাতাওয়াঃ ইমাম আত্বা (রহঃ) বলেন, যখন ইমাম উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়বে তখন মুক্তাদীর উচিত জলদী করে বা ইমামের সাক্তার সময় (চুপ হওয়ার পর) সূরাহ ফাতিহা পড়ে নেয়া এবং ইমাম যখন (অন্য সূরাহ) পড়বে তখন (শুনার উদ্দেশ্যে) চুপ থাকা, যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন- (দেখুন, ইমাম বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ)। ইমাম ‘আত্বা (রহঃ) আরো বলেন, সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম ও তাবেঈনের ফাতাওয়া হচ্ছে এই যে, সালাত জেহরী ক্বিরাআতের হোক বা সিররী সকল অবস্থায় মুক্তাদীর জন্য সূরাহফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (গাইসুল গামাম হাশিয়াহ ইমামুল কালাম, পৃঃ ১৫৬)।
(৪) (ইমাম আবূ হানিফার উস্তাদ) ইমাম হাম্মাদ (রহঃ)-এর ফাতাওয়াঃ হানযালাহ ইবনু আবুল মুগীরাহ বলেন, আমি হাম্মাদ (রহঃ)-কে যুহর ও আসর সালাতে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, সাঈদ ইবনু জুবাইর পড়তেন। আমি বললাম, আপনার নিকট কোনটা পছন্দনীয়? তিনি বললেন, তুমি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়বে, এটাই আমি পছন্দ করি। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫)।
(৫) (ইমাম আবূ হানিফার শিষ্য) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, আমি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করি এবং সমস্ত লোকই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ে থাকেন। শুধুমাত্র কুফার একটি দল পাঠ করে না। (দেখুন, জামি‘ আত-তিরমিযী ১/৪২)।
(৬) ইমাম আবূ হানিফার শিষ্য) ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ সতর্ককা মূলকভাবে উত্তম বলেছেন। (দেখুন, গাইসুল গামাম)।
(৭) সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)-এর ফাতাওয়াঃ একদা সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)-কে আবদুল্লাহ ইবনু উসমান বললেন, আমি কি ইমামের পিছনে পড়বো? তিনি বললেন, অবশ্যই পড়বে, যদিও তুমি ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পাও। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৯)।
(৮) উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ হিশাম ইবনু উরওয়াহ থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। উরওয়াহ (রহঃ) বলেন, হে আমার পুত্র! ইমামের সাকতার সময় সূরাহ ফাতিহা পড়ে নিবে। কেননা সূরাহ ফাতিহা ছাড়া কোনো সালাত পরিপূর্ণ হয় না। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬৯)।
(৯) মুজাহিদ (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমাম মুজাহিদ বলেন, কোনো মুক্তাদী ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা না পড়লে তাকে সালাত পুনরায় পড়তে হবে। আর সালাতের কোনো রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পড়তে ভুলে গেলে সে যেন ঐ রাক‘আতকে রাক‘আত হিসেবে গণ্য না করে। (দেখুন, ইমাম বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ৬ ও ৮, ইবনু শায়বাহ ১/৩৬১)।
(১০) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ বিন আবূ বাকর (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ তিনি বলেন, আয়িম্মায়ে কিরাম (বড় বড় ইমামগণ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন। (দেখুন, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত এবং বায়হাক্বী)।
(১১) ইমাম শা‘বী (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমাম শা‘বী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতেই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৭৩)।
(১২) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ যুহর ও আসর সালাতের ইমাম মুক্তাদী সকলেই সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৪)।
(১৩) ইমাম আওযাঈ (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমামের উপর দু’টি সাকতা আবশ্যক। প্রথম সাকতা সালাত আরম্ভকালে তাকবীরে তাহরীমাহ বলার পর, আর দ্বিতীয় সাকতা সূরাহ ফাতিহা পাঠের পরে। এ সময়ের মধ্যে মুক্তাদীরা যেন সূরাহ ফাতিহা পড়ে নেয়। যদি ইমামের সাকতার সময় পড়া সম্ভব না হয়, তাহলে মুক্তাদী ইমামের পড়ার সাথে সাথে জলদি করে পড়বে, অতঃপর শুনবে। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৭১)।
(১৪) আমর ইবনু মাইমূন বিন মিহরান (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ‘আবদুর রাহমান ইবনু সাওয়ার বলেন, একদা আমি আমর ইবনু মাইমূন (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় জনৈক কুফাবাসী আমর ইবনু মাইমূন (রহঃ)-কে বললেন, হে আবূ ‘আবদুল্লাহ! এক ব্যক্তি আমাকে বলেছে, আপনি না কি এ কথা বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ে করে না তার সালাত বরবাদ (খিদাজ)? ‘আমর বললেন, হ্যাঁ, সে সত্যই বলেছে। (দেখুন, বায়হাক্বী কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ৫২)।
(১৫) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ)-এর আমলঃ হুসাইন (রহঃ) বলেন, আমি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ বিন উতবাহ (রহঃ)-এর পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কালে তাঁকে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনেছি। (দেখুন, বায়হাক্বী ২/১৬৯)
(১৬) ইমাম নাফি‘ ইবনু জুবায়র (রহঃ)-এর আমলঃ ইয়াযীদ ইবনু রুমান (রহঃ) বলেন, জোরে ক্বিরাআতের সালাতে ইমাম নাফি‘ ইবনু জুবায়র (রহঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ১০০)।
(১৭) ইমাম হাকাম (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমাম হাকাম (রহঃ) বলেন, আস্তে ক্বিরাআতের সালাতে ইমামের পিছনে প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ ফড়বে। আর শেষের দু’ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (দেখুন, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৪)।
(১৮) ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ)-এর আমলঃ ইমামের আস্তে ক্বিরাআত পাঠকালে ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন। (দেখুন, বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ১০০)।
(১৯) ইমাম আবুল মালিহ ইবনু উসামাহ (রহঃ)-এর আমলঃ ইয়াহইয়া ইবনু আবূ ইসহাক্ব বলেন, একদা হাকাম ইবনু আইযূব (রহঃ)-এর ইমামতিতে মাগরিবের সালাত আদায়ের জন্য আমি আবুল মালিহ ইবনু উসামাহ (রহঃ)-এর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সময় আমি তাঁকে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে শুনেছি। (দেখুন, ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৭৫)।
(২০) ইমাম রাজা ইবনু হাইওয়াতাহ (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমাম রাজা ইবনু হাইওয়াতাহ (রহঃ) বলতেন, ইমাম ক্বিরাআত জোরে পড়ুক বা আস্তে সকল অবস্থায় ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া জরূরী। (দেখুন, আল-মুহাল্লা ৩/৩৮৮)।
(২১) ইমাম আবূ সালামাহ ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমামের জন্য দু’টি সাকতা (নীরবতা) রয়েছে। সুতরাং তোমরা এর মধ্যে সূরাহ ফাতিহা পড়াকে গানীমাত হিসেবে গ্রহণ করে নাও। (দেখুন, ইমাম বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ৩০)।
(২২) ইমাম লাইস ইবনু সা‘দ (রহঃ)-এর ফাতাওয়াহঃ ইমাম লাইস ইবনু সা‘দ (রহঃ) বলেন, সালাত আদায়কালে মুক্তাদীকে ইমামের পিছনে অবশ্যই সূরাহ ফাতিহা পড়তে হবে। (দেখুন, তামহীদ, ইবনু ‘আব্দুল বার)।
(২২-২৭) ইমাম মুযানী (রহঃ), ইমাম সুয়ুতী (রহঃ), ইমাম সাওর (রহঃ), ইমাম আবূ মুজাল্লিয (রহঃ), ইমাম মালিক ইবনু ‘আওন (রহঃ) ও সাইদ ইবনু আবূ আরুবাহ (রহঃ) প্রমূখগণ প্রত্যেকেই ইমামের পিছনে সূলাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষে অভিমত পোষণ করেছেন। (দেখুন, ইবনু আব্দুল বার রচিত তামহীদ, এবং বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত ৪৬ নং বর্ণনা)।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ অসংখ্য তাবেঈন এবং তাবে‘ তাবেঈন (আহলি ইলম) যাঁদের সংখ্যা গণনা করা সম্ভব নয়, তাঁরা সকলেই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতেন, যদিও ইমাম উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়তেন। (দেখুন, ইমাম বায়হাক্বীর কিতাবুল ক্বিরাআত, ৭১ পৃঃ)।
(ঘ) ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে মুজতাহিদ ইমামগণ, জমহুর সালাফ, জমহুর মুহাদ্দিসীন ও জমহুর ‘উলামায়ি কিরামের ফাতাওয়াহঃ
* ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবূ দাঊদ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী, ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর নিকট সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। (কুতুব সিত্তাহ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত ও অন্যান্য)।
* অনুরূপভাবে ইমাম ইবনু হিব্বান ও ইবনু খুযাইমাহ (ফাতহুল বারী) ইমাম দাঊদ যাহিরী (তিরমিযী ও আইনী) ইমাম দারাকুতনী (আহকামুল কুরআন) ইমাম বায়হাক্বী (কিতাবুল ক্বিরাআত) কাজী আইয়ায ও আল্লামা কুরতুবী (ফাতহুল বারী) সহ অসংখ্য মুজতাহিদ ইমাম, জমহুর সালাফ ও জমহুর মুসলিম (রহঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহপা পাঠের পক্ষে।
* ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ সহহি কথা এই যে, সমস্ত ‘উলামায়ে সারফ ও খালফ এর উপর একমত হয়েছেন যে, সূরাহ ফাতিহা প্রত্যেক রাক‘আতে পাঠ করা ওয়াজিব। তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ফরমানের জন্য যে হয়েছেন যে, সূরাহ ফাতিহা প্রত্যেক রাক‘আতে পাঠ করা ওয়াজিব। তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ ফরমানের জন্য যেঃ ثم افعل ذالك فى صلوتك كلها (দেখুন, সহীহ মুসলিমের শরাহ ১/১৭০)।
* ইমাম নাববী (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন قسمت الصلاة بينى وبين عبدى نصفين ‘‘আমি আমার এবং আমার বান্দাদের মধ্যে সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) দু’ ভাগ করে নিয়েছি।’’ অত্র সহীহ হাদীসে কুদসী সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেন, এখানে সালাত শব্দের অর্থ হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা। আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ ফাতিহাকে এ জন্যই সালাত বলেছেন যে, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া কারোর কোনো সালাতই সহীহ হয় না। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজ হচ্ছে ‘আরাফাত (অর্থাৎ আরাফায় অবস্থান ছাড়া কারোর হাজ্ব হয় না, সেরূপ সূরাহ ফাতিহা ছাড়াও কারোর সালাত হয় না)।
এতে প্রমাণিত হয়, সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। (দেখুন, সহীহ মুসলিমে শারাহ ১/১৭০, তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ ১/১০৬, নায়লুল আওত্বার ২/২১৪)।
* আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (রহঃ) বলেন, সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীসসমূহে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে না তার সালাত হবে না। সালাতের প্রত্যেক রাক‘আত এবং প্রতিটি মুসল্লী এ সুস্পষ্ট ‘আম’ তথা ব্যাপক হুকুমের মধ্যে গণ্য। চাই সে ইমাম হোক, মুক্তাদী কিংবা একাকী সালাত আদায়কারী। (দেখুন, তিরমিযী উপর আহমাদ শাকিরের তা‘লীক্ব গ্রন্থ ২/১২৫)।
* ইমাম তিরমিযী লিখেছেনঃ সূরাহ ফাতিহা পাঠের হাদীস আম। যাতে ইমাম, মুক্তাদী এবং একাকী সালাত আদায়কারী সকলেই অন্তর্ভুক্ত। (দেকুন, তা‘লীক্ব ২/১২৬)।
* ইমাম বাগাভী, আল্লামা নাওয়াব সিদ্দিক হাসান খান ভুঁপালী ও ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) প্রমূখ মনীষীগণ স্ব স্ব রচিত গ্রন্থাবলীতে এ মাসআলাহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব হওয়ার অকাট্য প্রমাণ পেশ করেছেন। (দেখুন, তাফসীরে মা‘আলিমুত তানযীল, তাফসীরে ফাতহুল বায়ান, মিশকুল খিতাম ও দুররে মানসুর)।
* অনুরূপভাবে আল্লামা মুহাম্মাদ বাশীর শাহ সাওয়ানী ও আল্লামা ফাহ্হামাহ ইমাম ওয়ালিদী রববানী মাজেদী আবূ মুহাম্মাদ আবদুল ওয়াহাব মুলতানী (রহঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং অকাট্য প্রমাণ দ্বারা এটা সাব্যস্ত করেছেন যে, সূরাহ ফাতিহা সালাতে পাঠ করা শুধু ওয়াজিবই নয় বরং তা সালাতের জন্য একটি শর্তও বটে। কারণ ফাতিহা পাঠ না করা সালাত না হওয়াকে আবশ্য করে। (দেখুন, আল বুরহানুল ওজার ‘আলা ফারযিয়্যাতি উম্মিল কিতাব, আদ্ দালায়িলুল ওয়াসিকাহ ফী মাসায়িলি সালাসাহ)।
আসাহহুল মাতাবিঈ মুদ্রিত ইবনু মাজাহর হাশিয়াহ (৬০ পৃঃ) ও ফাতহুল বায়ান (৩/৪২৭) গ্রন্থে রয়েছেঃ নিশ্চয় সূরাহ ফাতিহা সালাতের শর্ত। এটা ব্যতীত সালাত হবে না। (তথ্যসূত্রঃ তাফসীর সূরাহ ফাতিহাঃ সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলবী (রহঃ) ও আব্দুর সাত্তার দেহলভী (রহঃ) এবং অন্যান্য)।
* বিখ্যাত রিজালবিদ হাফিয ইবনু ‘আবদিল বার্ (রহঃ) বলেনঃ আরো বহু বিদ্বানগণ বলেছেন যে, কোনো মুক্তাদীই যেন ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ছেড়ে না দেয়। চাই ইমাম সাহেব ক্বিরাআত স্বরবে পড়ুক আর নীরবেই পড়ুক। (আল ইসতিসকার, তাহক্বীকুল কালাম ১/১৪)।
* হাফিয ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ সকল প্রকার সালাতে প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ফারয। চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদী কিংবা একাকী সালাত আদায়কারী। ফারয নাফল যে কোনো সালাতে নারী-পুরুষ সকলের জন্য একই নিয়ম। (দেখুন, সহীহুল বুখারীর শারাহ গ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী ৩/৬৪)।
* ইমাম খাত্তাবী (রহঃ) বলেনঃ সূরাহ ফাতিহা পাঠের নির্দেশ প্রত্যেক অবস্থায়ই প্রযোজ্য। সুতরাং সম্ভব হরে ইমামের দু’টি নীরব থাকার (সাকতাইনের) সময়ে পড়বে নতুবা ইমামের সাথে অবশ্যই পড়ে নিবে। (মা‘আলিমুস সুনান, ১/৩৯৮)।
* শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) বলেনঃ দলীল প্রমাণসমূহের দিকে লক্ষ্য করে জানা গেলো যে, ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা না পড়ার চেয়ে পড়াই উত্তম বা শ্রেয়। (তানভীরুল আয়নাইন ১৭ পৃঃ)।
* হাফিয ইবনু কাসীর স্বীয় ‘তাফসীরু কুরআনিল আযীমে এবং আল্লামা আলাউদ্দিন ‘আলী ইবনু মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বাগদাদী (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে খাযেন’ এ লিখেছেনঃ সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ শারী‘আত নির্ধারিত রয়েছে। সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত কোনো কাজে আসবে না। ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ)সহ জমহুর মুহাদ্দিসীন ও জমহুর ‘উলামায়ি কিরামের মতে সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। (দেখুন, তাফসীর লুবাবুত তায়াভীল যা তাফসীরে খাযেন নামে পরিচিত ২১ পৃঃ এবং তাফসীর ইবনু কাসীর ১/১২)।
* ইমাম ফাখরুদ্দীন আর-রাযী (রহঃ) তাফসীরে কাবীরে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণে দলীলসহ দশটি কারণ লিখেছেন। তার কয়েকটি হচ্ছে এই যে, তিনি লিখেছেনঃ قسمت الصلاة بينى وبين عبدى অর্থঃ ‘‘আমি আমার এবং আমার বান্দাহর মধ্যে সালাতকে (অর্থাৎ সূরাহ ফাতিহাকে) ভাগ করে নিয়েছি।’’ এ সহীহ হাদীসের কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ ফাতিহার নামই সালাত রেখেছেন। এতে জানা গেলো, যে সালাতে সূরাহ ফাতিহা নেই তা সালাতই নয়। আর এটাও প্রমাণিত হলো যে, সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা সালাতের রুকনের মধ্যে একটি বড় রুকনও বটে। ইমাম রাযী আরো বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ ফাতিহা পাঠের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই আমাদের উপর ওয়াজিব যে, আমরা প্রত্যেক সালাতে সূরাহ ফাতিহা সর্বদা পাঠ করি। আল্লাহ আমাদের উপর তাঁর নাবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করা ওয়াজিব করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, صلوا كما رأيتمونى أصلى তোমরা ঐভাবে সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত পড়তে দেখো,’’ হাদীস। দ্বিতীয়ত খুলাফায়ি রাশিদীন থেকে সূরাহ ফাতিহা সর্বদা পাঠ করার প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং আমাদেরও এটা পাঠকরা কর্তব্য হয়ে গেলো। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, عليكم بسنتى وسنت الخلفاء الراشدين المهديين ‘‘তোমরা আমার সুন্নাতকে আর খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরো’’- হাদীস। তৃতীয় সমগ্র ও পাশ্চাত্যের মুসলিমগণ এটা পাঠ করেন। আমাদেরও কর্তব্য তাদের অনুকরণ করা। কারণ ঈমানদারদের বিপরীত রাস্তা অবলম্বন জাহান্নামে যাওয়াকে ওয়াজিব করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানদার (সাহাবায়ি কিরাম) গণের পথের বিপরীত চলবে সে যে দিকে যেতে চায় আমি তাকে সে দিকেই নিবো এবং আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো’’ (আল-কুরআন)। চতুর্থত এই যে, স্বয়ং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لا صلاة الا بفاتحة الكتاب ‘‘ফাতিছা ছাড়া সালাতই হবে না’’ হাদীস। অতঃপর ইমাম রাযী একটু আগে গিয়ে বলেছেন, দশম কারণ হচ্ছে, আমরা যে হাদীস এখানে লিখেছি তা এ বিষয়টি পরিষ্কার প্রমাণ করে যে, সূরাহ ফাতিহার অনুপস্থিতি সালাতের অনুপস্থিতি। অর্থাৎ ফাতিহা ছাড়া সালাত হবে না। (দেখুন, তাফসীরে কাবীর, ১ম খন্ড, ১৪৭ পৃঃ)।
* আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফারয। নীরব ক্বিরাআত সম্পূর্ণ সালাতে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ ফারয। (দেখুন, সিফাতুল সালাতীন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
* শায়খ সাহিল আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, স্বরব, নীরব সকল সালাতেই ইমাম, মুক্তাদী একাকী সালাত আদায়কারী- সবার জন্য সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা ফারয। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)
* সাউদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেনঃ মুক্তাদীগণ ইমামের সাকতার সময় সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন। ইমাম যদি সাকতা না করেন তবুও ইমামের ক্বিরাআত চলা অবস্থায়ই মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ে নিবেন। অতঃপর (মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পাঠের পর) ইমামের জন্য চুপ থাকবেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীর জন্য ‘‘সম্ভবতঃ তোমরা ইমামের পিছনে পড়ে থাকো? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমনটি করো না, তবে সূরাহ ফাতিহা পড়বে, কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না তার সালাত হয় না।’’ হাদীসটি আহমাদ ও তিরমিযীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন। এ নিয়ম স্বরব ক্বিরাআতের সালাতের জন্য। নীরব ক্বিরাআত সম্পূর্ণ সালাতে মুক্তাদীগণ সূরাহ ফাতিহার সাথে কুরআন থেকে সহজ হয় এমন অন্য সূরাহও পাঠ করবে। যেমন যুহর ও আসর সালাতে (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায)।
* ইমামের পিছনে মুক্তাদীর ফাতিহা পড়া এমনই গুরুত্বপূর্ণ আমল যে, এ বিষয়ে হাদীস বিশারদগণ আলাদাভাবে বিশেষ কিতাব রচনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আমীরুল মু‘মিনী ফিল হাদীস ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর রচিত ‘‘জুযউল ক্বিরাআত’’
‘এতে তিনি এর পক্ষে তিনশ দলীল এনেছেন। আর একটি হচ্ছে ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)-এর ‘কিতাবুল ক্বিরাআত।’ সুতরাং বিষয়টি যে কত গুরুত্ববহ তা সহজে অনুমেয়।
(ঙ) ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে বিশিষ্ট চার ইমামের অভিমত-
(১) ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ)-এর অভিমতঃ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে আবূ হানিফা ও ইমাম মুহাম্মাদের দু’টি অভিমত রয়েছে। তাদের প্রথম অভিমত হলো, মুক্তাদীর জন্য সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিবও নয়, সুন্নাতও নয়। আর এটি হচ্ছে তাদের পুরাতন অভিমত। ইমাম মুহাম্মাদ তার লিখনীতে এ পুরাতন অভিমত তুলে ধরেছিলেন। অতঃপর এ লিখনী বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরার ফলে এ মতটি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। তাদের দ্বিতীয় অভিমত হলো, মুক্তাদীর জন্য ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা সতর্কতামূলকভাবে উত্তম। ইমাম আবূ হানিফার নিকট যখন এ সমস্ত হাদীস পৌঁছে যে, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুক্তাদীদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, তোমরা পড়বে না, একমাত্র উম্মুল কুরআন ব্যতীত।’’ এবং হাদীস ‘‘আমি যখন উচ্চস্বরে ক্বিরাআত করি, তখন তোমরা আমার পিছনে অন্য কিছুই পড়বে না, হ্যাঁ, অবশ্য সূরাহ ফাতিহা পড়বে, এ জন্যই যে, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না।’’- তখন ইমাম আবূ হানিফা ও তার শাগরীদ ইমাম মুহাম্মাদ তাদের প্রথম অভিমত থেকে সরে যান। (দেখুন, গাইসুল গামাম হাশিয়াহ ইমামুল কালাম)।
* আল্লামা শারানী বলেনঃ ইমাম আবূ হানিফা ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা এবং পাঠ না করা দু’ রকমই প্রচলিত ছিলো। পরিশেষে তারা দু’ জনই তাদের প্রথম উক্তি ‘না পাঠ করা’ থেকে শেষ উক্তি ‘পাঠ করা’ দিকে সতর্কতামূল হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেছেন। (গাইসুল গামাম ইমামুল কালামসহ ১৫৬-১৬৭)।
* হানাফি ফিক্বাহ গ্রন্থ ‘‘জামি‘রজুম’’-এ রয়েছে ইমাম আবূ হানিফা ও ইমাম মুহাম্মাদের নিকট ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করাতে কোনো অসুবিধা নেই। (দেখুন, জামি‘রজুম ১/৭৬, মিশকুল খিতাম ১/২১৯)
* শারহু মাযহাব গ্রন্থে রয়েছেঃ ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ)-এর নিকট ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা এক বর্ণনায় মুস্তাহাব এবং আর এক বর্ণনায় ওয়াজিব। (দেখুন, শারহু মাযহাব, ৩/৩২৭, মিসরের ছাপা)।
* ইমাম ফাখরুদ্দী রাযীর ‘‘তাফসীরে ক্বাবীরে’’ রয়েছেঃ ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) আমাদের সাথে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়লে সালাত বাতিল হয় না।
(২) ইমাম মালিক (রহঃ)-এর অভিমতঃ ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে মুক্তাদীর জন্য সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। (দেখুন, মা‘আলিমুত তানজীল ২৭৩ পৃঃ, মিরকাত, তাফসীরে খাযিন ২১ পৃঃ)।
(৩) ইমাম শাফিঈ (রহঃ)-এর অভিমতঃ ইমাম শাফিঈ (রহঃ)-এর মতে, ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ফার্জ। (দেখুন, মা‘আলিমুত তানজীল, তাফসীরে খাযীন ৯১ পৃঃ, ‘উমদাতুল ক্বারী)।
(৪) ইমাম আহমাদ ইবনুল হাম্বাল (রহঃ)-এর অভিমতঃ (১০ লক্ষ হাদীসের হাফিয) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠকে পছন্দ করেছেন এবং বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যেন সূরাহ ফাতিহা পাঠ ছেড়ে না দেয়, যদিও সে ইমামের পিছনে থাকে। (দেখুন, জামি‘ আত-তিরমিযী ১/৪২)।
* ইমাম তিরমিযী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরাম, অসংখ্য তাবেঈ এবং তাদের পূর্ববর্তী এবং অধিকাংশ আহলে ‘ইলম ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠের পক্ষপাতি ছিলেন (তারা সকলেই এর উপর আমল করেছেন)। সাহাবী ‘উমার ইবনুল খাত্তাব, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, ইমরান ইবনু হুসাইন ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম বলেছেন, সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সালাত হবে না। ইমাম মালিক (রহঃ), ইবনুল মুবারাক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইসহাক্ব সকলেই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠের পক্ষপাতি ছিলেন। (দেখুন, জামি‘ আত-তিরমিযী)
* তাফসীরে মাযহারীতে রয়েছেঃ ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, সূরাহ ফাতিহা ছাড়া (মুক্তাদীর) সালাত সহীহ হবে না, যেরূপ ইমাম ও মুনফারিদের সালাত সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সহীহ হয় না। (দেখুন, মাযহারি ১/১১৮)।
* কিতাবুল ফিক্বহী ‘আলা মাযাহিবিল আরবা‘আহ গ্রন্থে রয়েছেঃ ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ হুকুমের উপর একমত যে, সালাতে প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ফারয। কোনো মুসল্লী ইচ্ছাকৃতভাবে ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। ফারয, নাফল সকল প্রকার সালাতের জন্য এর একই হুকুম। আর কেউ ভুলবশতঃ ছেড়ে দিলে যে রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ছুটে গেছে তা দ্বিতীয়বার পড়ে নিবে। (দেখুন, কিতাবুল ফিক্বহি ‘আলা মাযাহিবিল আরাব‘আহ ১/২২৯)।
অতএব প্রমাণিত হলো, বিশিষ্ট চারজন ইমামের মতেও ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক।
(চ) ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে হানাফি মাযহাবের পীর-সুফী ও বিখ্যাত আলিমগণের অভিমত ও আমল-
(১) আবূ হানিফার শিষ্য ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর অভিমতঃ ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পড়া সর্তকতা অবলম্বন হিসেবে পছন্দনীয়। (তাফসীরে আহমাদী ২৮১ পৃঃ)।
(২) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহঃ)-এর অভিমতঃ মুক্তাদীর জন্য সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা বৈধ, তবে অন্য কিছু নয়। আমাদের অনেক হানাফী ফাক্বীহ নীরব সালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পড়া পছন্দ করেছেন। এটাই ছিলো ইমাম আবূ হানিফার প্রথম সিদ্ধান্ত। আর ইমাম আবূ হানিফা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে নিষেধ করেননি, যদিও ফাতিহা না পড়া তার আমল ছিলো। (দেখুন, ফাসলুল খিত্বাব ১১৮, ২৭৮, ২৯৮ পৃঃ)।
(৩) আল্লাম আইনী হানাফী (রহঃ)-এর অভিমতঃ আমাদের অনেক হানাফী ফাক্বীহ সকল প্রকার সালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা উত্তম জানতেন। (দেখুন, সহীহুল বুখারীর শারাহ গ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী ৩/২৯)।
(৪) বাদশা আলমগীরের উস্তাদ মোল্লা জিয়ন হানাফী (রহঃ)-এর অভিমতঃ হানাফী সুফী বুজুর্গদের দল ও বড় বড় হানাফী ‘আলিমগণের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে যে, তাঁরা ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পড়া পছন্দ করতেন। (তাফসীরে আহমাদী, ২৮১ পৃঃ)।
(৫) শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ)-এর অভিমতঃ যদি ইমাম স্বরবে ক্বিরাআত পাঠ করে তাহলে মুক্তাদী সাকতার সময় ফাতিহা পড়ে নিবে। আর ইমাম নীরবে ক্বিরাআত পাঠ করলে মুক্তাদীরা যখন ইচ্ছা হয় পড়ে নিবে। সূরাহ ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে এ নিয়মটা অনুসরণ করা উচিত। যাতে ইমামের ক্বিরাআতে অসুবিধা না হয়। আর এটাই (অর্থাৎ ইমামের পিছনে মুক্তাদীর চুপি চুপি ফাতিহা পাঠ করাটাই) আমার নিকট অগ্রাধিকারযোগ্য ও উত্তম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/৯)।
(৬) ফাতাওয়াহ আলমগীরীর অন্যতম লিখক শাহ ‘আবদুর রহীম দেহলভী হানাফী (রহঃ) এর অভিমত ও ‘আমলঃ তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং জানাযার সালাতেও সূরাহ ফাতিহা পড়তেন- (আলফাসুল ‘আরিফীন ৬৯ পৃঃ)। তিনি মুখে আগুন দেয়ার জাল হাদীসটির প্রতিবাদে বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন যদি আমার মুখে আগুন দেয়া হয় তা আমার নিকট ‘‘তোমার সালাতই হয়নি’’ বলার চেয়ে উত্তম। (দেখুন, ইমামুল কালাম ২০ পৃঃ)।
(৭) ‘আবদুল হাই লাখনৌবী দেওবন্দী হানাফী (রহঃ)-এর অভিমতঃ নীরব ক্বিরাআতের সালাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া উত্তম। আর স্বরব সালাতে সাকতার সময় পড়াতে কোনো দোষ নেই। ইমাম মুহাম্মাদ তো নীরব ক্বিরাআতের (সির্রী) সালাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা জায়িয ও উত্তম বলেছেন। সুতরাং স্বরব ক্বিরাআতের (জেহরী) সালাতে সাকতার সময় মুক্তাদীর ক্বিরাআত পাঠ অবশ্যই জায়িয। কারণ জেহরী সালাতে সাকতার সময়ে পড়া আর সিররী সালাতে (সাধারণভাবে) পড়ার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। (দেখুন, ইমামুল কালাম, ১৫৬ পৃঃ)।
‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী আরো বলেনঃ কোনো হাদীসে এই কথা বর্ণিত নেই যে, তোমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়বে না, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে। তাছাড়া হানাফীদের দলীলে এমন কোনো হাদীসই নেই যাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তে স্পষ্টভাবে নিষেধ প্রমাণ রয়েছে। যেমন বিরোধী পক্ষের নিকট এমন হাদীস আছে যা ইমামের পিছনে মুক্তাদীদের সূরাহ ফাতিহা পড়া প্রমাণ করে। যেমন এ হাদীসঃ ‘‘তোমরা সূরাহ ফাতিহা ছাড়া আর কিছুই পড়বে না।’’ (দেখুন, গাইসুল গামাম হাশিয়াহ ইমামুল কালাম, পৃঃ ১৫৪)।
‘আবদুল হাই লাখনৌবী দেওবন্দী হানাফী (রহঃ) আরো বলেন, কোনো সহীহ মারফূ হাদীসেই ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া নিষেধ নেই। আর এ সম্পর্কে তারা (&হানাফীগণ) যেসব হাদীস দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন তা হয় ভিত্তিহীন ও জাল, নতুবা সহীহ নয়। যেমন ইবনু হিব্বানের কিতাবুয যু‘আফা গ্রন্থে বর্ণিত মুখে আগুন ভরার হাদীস। (দেখুন, আত-তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ আল-মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, পৃঃ ১০১, টিকা নং ১)।
(৮) আল্লামা রশীদ আহমাদ গাংগুহী দেওবন্দী হানাফী (রহঃ)-এর অভিমতঃ তিনি বলেন, তোমরা (জেহরী সালাতে ইমামের পিছনে) সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত অন্য কিছু পড়বে না। কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না তার সালাত হয় না। (জেহরী সালাতে) ইমামের সাকতার সময় ফাতিহা পাঠে কোনো দোষ নেই। (সাবীলুর রশাদ, পৃঃ ২০-২১)।
(৯) আল্লামা জা‘ফার আহমাদ ‘উসমানী হানাফী (রহঃ)-এর অভিমতঃ আমরা তো বলি যে, ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরাহ ফাতিহা চুপি চুপি পড়বে। যাতে ইমামের (ক্বিরাআতে কোনো ঝগরা ও বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। (ফারান কারায়ী)।
(১০) মুজ্জাদ্দিদ আলফি সা-নী আল্লামা শায়খ সারহিন্দী (রহঃ)-এর অভিমতঃ ও আমলঃ তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং তা পছন্দনীয় মনে করতেন। (যুবদাতুল মাক্বামাত ২০৯ পৃঃ)।
(১১) শাহ ‘আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী হানাফী (রহঃ)-এর অভিমতঃ সাহাবায়ি কিরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ ফাতিহা পড়তে কখনো নিষেধ করেননি। অতএব উচিত হলো সমস্ত মুফাসসির ও মুহাদ্দিসগণের অনুকরণে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পড়া। কারণ সূরাহ ফাতিহা না পড়লে তার আমল সহীহ হাদীসের পরিপন্থি হবে। একন থাকলো ইমাম আবূ হানিফার ফাতাওয়াহ। তাতে আশ্চর্যের কি আছে? কারণ এ হাদীসটি বিশুদ্ধ সূত্রে তাঁর কাছে হয় তো পৌঁছেনি। কিন্তু শত শত নয় বরং হাজার হাজার গবেষক, ‘উলামা যেমন, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখের নিকট এ হাদীসটি সহীহ প্রমাণিত হয়েছে। তাই সূরাহ ফাতিহা ছেড়ে দেয়া তিরস্কার যোগ্য এবং অভিশাপের কারণ হবে। (দেখুন, ফাতাওয়াহ খানদানে ওয়ালিউল্লাহ ১৯২৮ সংস্করণ)।
(১২) (ইমাম মুহাম্মাদের ছাত্র ও প্রসিদ্ধ হানাফী ফাক্বীহ) আবূ হাফস কাবীর (রহঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। (দেখুন, ইমামুল কালাম, ২১ পৃঃ)।
(১৩) আল্লামা আুর হাসান সিন্দী হানাফী (রহঃ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষে।
(১৪) হিদায়ার ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হাদীস দ্বারা প্রকাশ্য সালাতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা প্রমাণিত। অতএব ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৪২৯)।
(১৫) (বড় পীর), ‘আব্দুল ক্বাদীর জিলানী (রহঃ)-এর অভিমতঃ নিশ্চয় সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা ফারয। সূরাহ ফাতিহা হচ্ছে সালাতের রুকন। তাই সালাতে সূরাহ ফাতিহা না পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। (দেখুন, গুনিয়াতুত ত্বালিবীন)।
(১৬) খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া (রহঃ)-এর অভিমতঃ খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া হানাফী হওয়া সত্ত্বেও ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং তাঁর সকল ভক্তদের পড়তে বলতেন। একবার তাঁর এক মুরীদ তাকে বললেন, হাদীসে এসেছে, কেউ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়লে তার মুখে আগুন দেয়া হবে?’ তখন তিনি এর উত্তরে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহীহ হাদীসে আছে, ‘সূরাহ ফাতিহা ছাড়া সালাতই হবে না।’ অতএব (আগুন দেয়ার) প্রথম হাদীসটি ধমক আর দ্বিতীয় হাদীসটি বাতিল হওয়া প্রমাণ করে। (ক্বিয়ামাতের দিন) আমি ধমক সহ্য করাটা পছন্দ করবো কিন্তু আমার সালাত বাতিল হওয়াটা বরদাস্ত করতে পারবো না। (দেখুন, নুজহাতুল খাওয়াতির, ১২৬ পৃঃ)।
(১৭-১৯) খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ), খাজা বাহাউদ্দীন নকশাবন্দী (রহঃ) ও কাজা শিহাবুদ্দীন সরওয়ার্দী (রহঃ) সূরাহ ফাতিহা পাঠ করার পক্ষপাতি ছিলেন। (দেখুন, তাফসীরে আহমাদী)।
(২০) দিল্লির বিখ্যাত হানাফী পীর মির্যা মাযহার জানে জা-না এর অভিমতঃ তিনি নিজে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং সকলকে তা পড়ার ফাতাওয়াহও দেন। (তিসকার ১১৩ পৃঃ, মা‘মূলাতি মাযহারিয়্যাহ)।
(২১) লাখনৌবী মির্যা হাসান ‘আলী হানাফী (রহঃ)ও অনুরূপ ফাতাওয়াহ দেন এবং তিনি হানাফী মাযহাবেরই কিতাব থেকে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার প্রমাণে একটি পুস্তিকাও লিখেন। (দেখুন, বুলুগুল মারাম এর শারাহ মিসকুল খিতাম ১/২১৯)।
(২২) সুফী সাধক ইমাম গাযযালী (রহঃ)-এর অভিমতঃ ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয় মুক্তাদী সূরাহ ফাতিহা পড়বে। (ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন ১/১৯১)।
(২৩) বাংলাদেশের হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রখ্যাত আলিম আল্লামা শামসুল হাক্ব ফরীদপুরী (সদর সাহেব হুজুর রহঃ) স্বীয় ওসিয়াতনামায় লিখেছেনঃ হানাফী মাযহাবের কোনো ব্যক্তি যদি জোরে আমিন বলে এবং ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে তাহলে তার হানাফীয়াত টুটে যাবে না বরং আরো মজবুত হবে। (দেখুন, তার ওয়াসিয়াতনামার ৭নং ওয়াসিয়াত)।
(২৪) সৈয়দ আহমাদ হুসাইন দেহলবী হানাফী (রহঃ) লিখেছেন, মন্দভাবে সালাত আদায়ের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রাক‘আত শিক্ষা দিতে গিয়ে বললেন, ‘‘তুমি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করো। অতঃপর প্রত্যেক রাক‘আতেই এরূপ করো।’’ এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক রাক‘আতেই সূরাহ ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। চাই ইমাম হোক বা মুক্তাদী, জোরে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা আস্তে ক্বিরাআতের সালাত হোক এতে কোনই পার্থক্য নেই। নির্বিশেষে সকল মুসল্লীর জন্য সর্বাবস্থায়ই ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। (দেখুন, হাশিয়াহ বুলুগুল মারাম, ১/৪৬)।
(২৫) হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষে ফাতাওয়াহ লিপিবদ্ধ আছে। সেগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ
(ক) হাদীসের দৃষ্টিতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব। (দেখুন, উসুলুশ শাশী ৮/১০১)।
(খ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ সর্তকতামূলক মুস্তাহসান বা উত্তম। (দেখুন, হিদায়া ১/১০১)।
(গ) ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরাহ ফাতিহা পাঠ না করার হাদীস দুর্বল। (দেখুন, নুরুল হিদায়া ১১১ পৃঃ)।
(ঘ) ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে ইবনু উমার থেকে বর্ণিত আসারটি দুর্বল। (দেখুন, নুরুল হিদায়া ১১১ পৃঃ)।
(ঙ) ইমামের পিছনে মুক্তাদিগণ সূরাহ ফাতিহা মনে মনে পাঠ করবে, এটাই হচ্ছে হাক্ব। (দেখুন, আয়নুল হিদায়া ১/৪৪০)।
ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠের পক্ষে হানাফী মাযহাবের প্রথম সারীর শ্রেষ্ঠ বিদ্ব্যানগণের স্পষ্ট বক্তব্য পেশের পর কারো জন্যই এরূপ বলা উচিত নয় যে, হানাফী মাযহাবে মুক্তাদীর জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া নিষেধ ও অপছন্দনীয়। তাই বলা বাহুল্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্পষ্ট সহীহ হাদীসাবলী, জমহুর সাহাবায়ি ক্বিরাম, জমহুর তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন, জমহুর মুহাদ্দিসীন, বিশিষ্ট চারজন ইমাম এবং হানাফী মাযহাবের প্রথম সারীর শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক্ব ‘আলিমগণসহ জমহুর ‘উলামায়ি কিরামের স্পষ্ট বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও যারা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করেন না তারা ক্বিয়ামাতের ময়দানে কী জবাব দিবেন যদি বলা হয়, তোমার সালাতই হয় নাই! আর যারা এ ধরণের ভুল ফাতাওয়াহ দিয়ে সাধারণ সরলমনা মুসলিম ভাই বোনদের ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছেন, সূরাহ ফাতিহা না পড়ার কারণে ক্বিয়ামাতের দিন যদি ঐসব মুসিলম ভাই বোনদের সালাত বরবাদ হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দেয়া হয় তখন এর দায়িত্ব কি তারা নিবেন? অতএব ভেবে দেখুন।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا السَّائِبِ، مَوْلَى هِشَامِ بْنِ زَهْرَةَ يَقُولُ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم:مَنْ صَلَّى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ فَهِيَ خِدَاجٌ غَيْرُ تَمَامٍ قَالَ: فَقُلْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، إِنِّي أَكُونُ أَحْيَانًا وَرَاءَ الْإِمَامِ قَالَ: فَغَمَزَ ذِرَاعِي، وَقَالَ: اقْرَأْ بِهَا يَا فَارِسِيُّ فِي نَفْسِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم يَقُولُ: " قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ: فَنِصْفُهَا لِي، وَنِصْفُهَا لِعَبْدِي، وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ " قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم: " اقْرَءُوا يَقُولُ الْعَبْدُ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: حَمِدَنِي عَبْدِي، يَقُولُ: (الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ)، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: أَثْنَىعَلَيَّ عَبْدِي، يَقُولُ الْعَبْدُ (مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ)، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَجَّدَنِي عَبْدِي، يَقُولُ الْعَبْدُ (إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ)، يَقُولُ اللَّهُ: هَذِهِ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ، يَقُولُ الْعَبْدُ (اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ، صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ، وَلَا الضَّالِّينَ)، يَقُولُ اللَّهُ: فَهَؤُلَاءِ لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ "
- صحيح : م
Abu Hurairah reported the Messenger of Allah (May peace be upon him) as saying:
If anyone observes a prayer in which he does not recite Umm al-Qur’an, it is incomplete, it is incomplete, it is incomplete, and deficient. (The narrator said) I said: Abu Hurairah, sometime I pray behind the imam(then what should I do)? Pressing my hand he replied: O Persian, recite it inwardly, for I heard the Messenger of Allah (ﷺ) as saying that Allah, Most High, has said: I have Me and the Half for my servant and My servant will receive what he asks. The Messenger of Allah(ﷺ) said: Recite. When the servant says: “praise be to Allah, the Lord of the Universe,” Allah, Most High says: “My servant has praised me.” When the servant says: “ The Compassionate, the merciful, “Allah Most High says: “My servant has lauded me.” When the servant says: “Owner of the Day of Judgment,” Allah, Most High, says: “My servant has glorified Me” When the servant says: “ Thee do we worship and of thee we ask help. “ (Allah says) “This is between Me and My servant, and My servant will receive what he asks.” When the servant says: “ Guide us to the Straight Path, the path of those whom thou hast favoured, not ( the path) of those who earn thine anger nor of those who go astray,”(Allah says: ) “This is for My servant, and My servant will receive what he asks.”
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২২। ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। এ হাদীসের সানাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা এবং তার সাথে অতিরিক্ত কিছু পড়বে না, তার সালাত পূর্ণাঙ্গ হবে না।
বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, এ নির্দেশ একাকী সালাত আদায়কারীর জন্য। সহীহ : বুখারী ও মুসলিমে তার বক্তব্যের এ অংশটুকু বাদে ’’তার সাথে অতিরিক্ত কিছু..’’ শেষ পর্যন্ত। আর মুসলিমে (فصاعدا) রয়েছে।[1]
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَابْنُ السَّرْحِ، قَالَا: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَصَاعِدًا، قَالَ سُفْيَانُ: لِمَنْ يُصَلِّي وَحْدَهُ
- صحيح : ق دون قوله (فصاعدا ..) إلخ، وعند (م) : (فصاعدا)
'Ubadah b. al-Samit reported the Messenger of Allah (ﷺ) as saying :
the prayer is not valid I one does not recite fatihat al-kitab and something more, sufyan( the narrator) said: This applies to a man who prays alone.
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২৩। ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ফজরের সালাত আদায় করছিলাম। সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরাত পড়াকালে কিরাত তাঁর জন্য ভারী হয়ে গেল। সালাত শেষে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্ভবতঃ তোমরা তোমাদের ইমামের কিরাত করেছ। আমরা বললাম, হে আল্লাহ রসূল! হ্যাঁ। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমনটি কর না, তবে তোমাদের সূরাহ ফাতিহা পড়াটা স্বতন্ত্র। কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করে না, তার সালাত হয় না।[1]
দুর্বল।
হাদীসটির সনদকে শায়খ আলবানী যদিও দুর্বল বলেছেন তথাপি হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। কারণঃ
১। মুহাদ্দিসগণের এক জামা‘আত কর্তৃক একে সহীহ আখ্যায়িত করণঃ হাদীসটিকে যাঁরা সহীহ বলেছেন তাঁরা হলেনঃ ইমাম বুখারী, ইমাম আবূ দাঊদ, ইবনু খুযাইমাহম বায়হাক্বী এবং আরো অনেকে। আর যারা হাদীসটিকে হাসান বলেছেন তারা হলেনঃ ইমাম তিরমিযী, ইমাম দারাকুতনী, হাফিয ইবনু হাজার সহ আরো অনেকে। ইমাম খাত্তাবী ‘মাআলিমুস সুনান’ গ্রন্থে বলেনঃ এই হাদীসের সনদ অত্যন্ত মজবুত, এতে কোনো রকম ত্রুটি নেই। হাফিয ইবনু হাজার ‘দিরায়া তাখরীজে হিদায়া’ গ্রন্থে বলেনঃ ইমাম আবূ দাঊদ হাদীসটি এমন সনদে বর্ণনা করেছেন যে, এর সমস্ত বর্ণনাকারীই মজবুত। ইমাম হাকিম বলেন, এর সনদ ‘মুস্তাকিম।’ আল্লামা ‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী ‘সায়্যইয়াহ’ নাম গ্রন্থে বলেনঃ এই হাদীসটি সহীহ এবং এর সনদ মজবুত। সাইয়্যিদ আহমাদ হাসান দেহলবী ‘আহসানুত তাফসীর’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘উবাদাহর এই হাদীস বিলকুল সহীহ। কারো শক্তি নেই যে, এর সনদের মধ্যে কোনো কথা বলে।
২) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনা থেকে তাদলীসের ধারণা খন্ডনঃ মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব তাদলীস করতেন বিধায় তাদলীসকারী হিসেবে তার কর্তৃক عن শব্দে বর্ণিত হাদীসকে দুর্বল বলে সন্দেহ করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তার হাদীস শ্রবণের বিষয়টি সাব্যস্ত না হয়। কিন্তু তার থেকে হাদীসটি উক্ত সনদে عن শব্দ দ্বারা বর্ণিত হলেও অন্যান্য কিতাবে ইমাম মাকহুল থেকে তার শ্রবণের বিষয়টি স্পষ্ট ও সাব্যস্ত হয়েছে। যেখানে তিনি হাদীসটি حدثنا শব্দে বর্ণনা করেছেন। সনদটি এরূপঃ وعن محمد ابن اسحاق حدثنا محمود ربيع عن عبادة। এটিকে ইমাম আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারাকুতনী, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বায়হাক্বী সহীহ বলেছেন। এর মুতাবাআত বর্ণনাও আছে। হাদীসটি বর্ণনায় তার তাবে‘ করেছেন যায়িদ ইবনু ওয়াক্বিদ ও অন্যান্যরা মাকহুল সূত্রে। আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির এটিকে সহীহ বলেছেন এর শাওয়াহিদ বর্ণনার দ্বারা, সেগুলো তিনি তিরমিযীর উপর তার তা‘লীক্ব গ্রন্থে এনেছেন। ‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী ইমামুল কালাম গ্রন্থে বলেনঃ ‘তাদলীসের আক্রমণ দূরীভূত হয় পোষকতার কারণে, আর এখানে তা অবশ্যই মওজুদ আছে।’ অতএব ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনাটি তাদলীসের ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
* মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের গ্রহণযোগ্যতাঃ ইমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, তিনি সত্যবাদী, তিনি তাসলীস করেন এবং তিনি ক্বাদরিয়া মতবাদে বিশ্বাসী বলে অভিযুক্ত (তাকরিবুত তাহযীব ২/৫৪)। তাজকিরাতহল হুফফায গ্রন্থে রয়েছেঃ হাদীসটির মাত্র একজন বর্ণনাকারী ইবনু ইসহাক্ব সম্পর্কে ইমাম মালিক ও ইবনু জাওযী কিছু ত্রুটি বের করেছেন কিন্তু সেটা ছিলো ব্যক্তিগত আক্রশে- (দেখুন, তাজকিরাতুল হুফফায)। অথচ জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী (দেখুন, তাজকিরাতুল হুফফায)।
ইমাম শাওকানী বলেনঃ ইমাম বুখারীসহ অধিকাংশ বিদ্বান ইবনু ইসহাক্বকে বিশ্বস্ত বলেছেন। (নাসবুর রায়াহ ৪/১৭)।
আল্লামা বাদরুদ্দী আইনী হানাফী বলেনঃ ইবনু জাওযী ইবনু ইসহাক্বের আপত্তি করায় কোনো কিছু আসে যায় না। কারণ ইবনু ইসহাক্ব তো জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট বড় বিশ্বস্ত লোক। (দেখুন, উমদাতুল ক্বারী, ৭/২৭)।
হানাফী ফিক্বাহ ফাতহুল ক্বাদিরে রয়েছেঃ হাক্ব কথা এটাই যে, ইবনু ইসহাক্ব বিশ্বস্ত। উক্ত গ্রন্থে আরো রয়েছেঃ ইবনু ইসহাক্ব বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য। এ ব্যাপারে আমাদের (হানাফীদের) এবং মুহাক্কিক্ব মুহাদ্দিসীনে কিরামের মধ্যে কোনই সন্দেহ নেই। (দেখুন, ফাতহুল ক্বাদীর ১/৪১১, ৪২৪)।
আল্লামা ‘আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী বলেনঃ প্রাধান্যযোগ্য ও মজবুত কথা এই যে, মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব মজবুত বর্ণনাকারী। দেখুন, ইমামুল কালাম, পৃঃ ৯২)।
এছাড়া হানাফী মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ কাশমিরী, জাফর আহমাদ উসমানী এবং জাকারিয়াসহ বহু দেওবন্দী হানাফী আলিম ইবনু ইসহাক্বকে নিজ নিজ গ্রন্থে বিশ্বস্ত বলেছেন। অতএব মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট বিশ্বস্ত।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ النُّفَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ: كُنَّا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم، فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ، فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ:لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ قُلْنَا: نَعَمْ هَذًّا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ:لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
-ضعيف
Narrated Ubadah ibn as-Samit:
We were behind the Messenger of Allah (ﷺ) at the dawn prayer, and he recited (the passage), but the recitation became difficult for him. Then when he finished, he said: Perhaps you recite behind your imam? We replied: Yes, it is so, Messenger of Allah. He said: Do not do so except when it is Fatihat al-Kitab, for he who does not recite it is not credited with having prayed.
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২৪। নাফি’ ইবনু মাহমুদ ইবনু রাবী’ আল-আনসারী সূত্রে বর্ণিত। নাফি’ বলেন, একবার ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) ফজর সালাতে বিলম্বে উপস্থিত হন। ফলে মুয়াজ্জিন আবূ নু’আইম (রহঃ) সালাতের তাকবীর বলে লোকদের নিয়ে সালাত আরম্ভ করেন। তখন আমি এবং ’উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) উপস্থিত হয়ে আবূ নু’আইমের পিছনে ইক্বাতিদা করি। আবূ নু’আইম সালাতে স্বরবে কিরাত পড়ছিলেন। ’উবাদাহ (রাঃ) (তার পিছনে) সূরাহ ফাতিহা পড়েন। সালাত শেষে আমি ’উবাদাহ (রাঃ)-কে বললামঃ আবূ নু’আইমের স্বরবে কিরাত পাঠকালে আমি আপনাকেও সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে শুনলাম?
তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ওয়াক্তের স্বরব ক্বিরাআতের সালাতে আমাদের ইমামতি করেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিরাআতের সময় আটকে গেলেন। অতঃপর সলাম শেষে তিনি আমাদের লক্ষ্য করে বলেনঃ আমার স্বরবে কিরাত পাঠকালে তোমরাও কি কিরাত করেছ? জবাবে আমাদের কেউ বলেন, হ্যাঁ আমরাও কিরাত করেছি। তখন তিনি বলেন, এমনটি করবে না। তিনি আরো বলেন, কিরাত পাঠের সময় তাইতো ভাবছিলাম, আমার কুরআন পাঠ কিসে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে? অতএব আমি যখন সালাতে স্বরবে কিরাত করি, তখন তোমরা উম্মুল কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না।[1]
দুর্বল।
নাফি‘ ইবনু মাহমূদঃ তাকে ইবনু ‘আবদুল বার মাজহুল’ এবং ইবনু হাজার ‘মাসতূর’ বলেছেন। এ দু’টি শব্দের একই অর্থ, অর্থাৎ অপরিচিত। ইলাউস সুনান (১/১৪৪) গ্রন্থে রয়েছেঃ ‘‘যে বর্ণনায় দু’ জন সিক্বাহ (বিশ্বস্ত) বর্ণনাকারী থাকেন সে বর্ণনা মাজহুল (অপরিচিত) থাকে না।’’ সুতরাং উসূলে হাদীসে পরিপন্থি হওয়ায় তার সম্পর্কে ‘মাজহুল’ উক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়। আর নুখবাতুল ফিকর (৮৭ পৃঃ) গ্রন্থে রয়েছেঃ মাসতূর সেই বর্ণনাকারীকে বলা হয় যাকে কোনো কালে কেউই বিশ্বস্ত বলেননি।’’ কিন্তু নাফি ইবনু মাহমূদকে তো সকলেই বিশ্বস্ত বলেছেন। যেমনঃ
১। ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ নাফি ইবনু মাহমূদ বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী। (দেখুন, দারাকুতনী ১/৩২০)।
২। ইমাম হাকিম বলেনঃ নাফি ইবনু মাহমূদ বিশ্বস্ত (সিক্বাহ)। (দেখুন, মুসতাদরাক হাকিম, ২/৫৫)।
৩। ইমাম ইবনু হাজম বলেনঃ নাফি ইবনু মাহমূদ বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য। (দেখুন, আল-মুহাল্লা, ৩/২৪১)।
৪। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ নাফি ইবনু মাহমূদ বিশ্বস্ত। (দেখুন, কিতাবুল ক্বিরাআত, ৬৪ পৃঃ)।
৫। ইমাম ইবনু হিব্বান বলেনঃ নাফি ইবনু মাহমূদ একজন বিশ্বস্ত লোক এবং প্রসিদ্ধ তাবেঈন। (দেখুন, কিতাবুস সিক্বাত, ৫/৪৭০)।
৬। রিজালে পন্ডিত ইমাম যাহাবী বলেনঃ নাফি ইবনু মাহমূদ বিশ্বস্ত (সিক্বাহ)। (দেখুন, কাশিফ ৩/১৯৭)।
এছাড়াও ইমাম আবূ দাঊদ, ইমাম নাসায়ী, ইমাম মুনযির, ইমাম আবূ আলী নিশাপুরী, ইবনু আদী, ইবনু মানদাহ, আবূ ইয়ালা খলীল এবং খাতিব বাগদাদী (রহঃ) সহ হাদীস সম্রাটগণের বিশাল জামা‘আত তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে নাফি ইবনু মাহমূদকে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং এমন ব্যক্তিকে মাজহুল ও মাসতুর অর্থাৎ কেউই তাকে চেনে না এ কথাটি আদৌই সঠিক না। কারণ মুহাদ্দিসগণের বিশাল জামা‘আত তাকে বিশ্বস্ত আখ্যা দিয়েছেন।
সারাহ নুখবাহ গ্রন্থে রয়েছেঃ এ সমস্ত কারণে ইমাম সূয়ুতী (রহঃ) স্বীয় কিতাব ‘তাদরীবুল রাবী’ (১১৬-১১৭ পৃঃ) ফায়দা অধ্যায়ে লিখেছেনঃ হাফিযগণের এক জামা‘আত অনেক রিওয়ায়াতকে তাদের অজানার কারণে মাজহুল ও মাসতূরুল হাল বলেছেন, অথচ ঐ সমস্ত রিওয়ায়াত অন্যের নিকট ‘আদালাত’ বলে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌবী হানাফী (রহঃ) ‘গাইসুল গামাম’ গ্রন্থে (১১৯ পৃঃ) বলেনঃ ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর হাদীসকে নাফি‘ ইবনু মাহমূদের কারণে যারা যঈফ বলেছেন তাদের প্রতি উত্তর এই যে, উক্ত হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম দারাকুতনী বলেছেন, এর সনদ হাসান এবং বর্ণনাকারী সকলেই সিক্বাহ। ইবনু হিব্বানও তাকে সিক্বাহ বলেছেন। সুতরাং দারাকুতনী, ইবনু হিব্বান, আল্লামা যাহাবীসহ আরো অনেকে তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন ও তা‘দীল করেছেন, তখন আর নাফি ইবনু মাহমূদকে মাসতূরুল হাল বলা কিছুতেই সমীচীন নয়। উল্লেখ্য আমাদের সম্মানিত উস্তাদ শায়খ আলবানী (রহঃ) হাফিয কর্তৃক নাফি ইবনু মাহমূদকে মাজহুল বলার কারণে হাদীসটিকে দুর্বল বলেছিলেন। যা তিনি মিশকাতের তাহক্বীক্বে ব্যক্ত করেছেন।
জ্ঞাতব্য কোনো হানাফী আলিমের জন্যই সমীচীন নয় যে, উল্লেখিত মাজহুল বা মাসতূর উক্তি দ্বারা হাদীসটিকে প্রত্যাখ্যান করা। কেননা ইলাউস সুনান গ্রন্থে রয়েছেঃ রুকনে সালাসাহ (সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈনগণের যুগকে বলা হয়) এর মাজহুল মাসতূর বর্ণনাকারী বর্ণিত হাদীস আমাদের (হানাফীদের) নিকট সহীহ।’ উক্ত গ্রন্থে আরো রয়েছেঃ ‘নিশ্চয়ই রুকনে সালাসাহ এর মাসতূর বর্ণনা আমাদের (হানাফীদের) নিকট গ্রহণযোগ্য।’ (দেখুন, ইলাউস সুনান, ৩/১৬১, এবং আরো বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন, তাওজিহুল কালাম, ১/৩৭৩-৩৭৭, মুসাল্লামাস সবুত, ১৯১ পৃঃ)।
আর নাফি‘ ইবনু মাহমূদ তো কুরুনে সালাসার একজন বিশ্বস্ত তাবেঈ। যিনি জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট নির্ভরযোগ্য ও পরিচিত। সুতরাং নাফি‘ ইবনু মাহমূদের হাদীস হানাফীদের নিকটেও সহীহ। তাকে মাজহুল বা মাসতূর বলাটা ভুল।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَزْدِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا الْهَيْثَمُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ وَاقِدٍ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ نَافِعِ بْنِ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ نَافِعٌ: أَبْطَأَ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ عَنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ، فَأَقَامَ أَبُو نُعَيْمٍ الْمُؤَذِّنُ الصَّلَاةَ فَصَلَّى أَبُو نُعَيْمٍ بِالنَّاسِ، وَأَقْبَلَ عُبَادَةُ وَأَنَا مَعَهُ، حَتَّى صَفَفْنَا خَلْفَ أَبِي نُعَيْمٍ، وَأَبُو نُعَيْمٍ يَجْهَرُ بِالْقِرَاءَةِ فَجَعَلَ عُبَادَةُ يَقْرَأُ أُمَّ الْقُرْآنِ فَلَمَّا انْصَرَفَ، قُلْتُ لِعُبَادَةَ: سَمِعْتُكَ تَقْرَأُ بِأُمِّ الْقُرْآنِ وَأَبُو نُعَيْمٍ يَجْهَرُ، قَالَ: أَجَلْ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم بَعْضَ الصَّلَوَاتِ الَّتِي يَجْهَرُ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ قَالَ: فَالْتَبَسَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ، وَقَالَ:هَلْ تَقْرَءُونَ إِذَا جَهَرْتُ بِالْقِرَاءَةِ؟، فَقَالَ بَعْضُنَا: إِنَّا نَصْنَعُ ذَلِكَ، قَالَ: " فَلَا، وَأَنَا أَقُولُ: مَا لِي يُنَازِعُنِي الْقُرْآنُ، فَلَا تَقْرَءُوا بِشَيْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ إِذَا جَهَرْتُ إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ "
- ضعيف
Nafi’b. Mahmudb. Al-Rabi’ Al-Ansari said:
“Ubadah b. al-samit came to late to lead the morning prayer. Abu Nu’aim, the mu’adhdhin, pronounced the takbir and he led the people in prayer. Then Ubadah came and I was with him. We Joined the row behind Abu Nu’aim, while Abu Nu’aim was reciting the Qur’an loudly. Then ‘Ubadah began to recite the Umm al-Quran (I.e Surah al Fatihah). When he finished, I said to Ubadah: I heard you reciting the Umm al-Qur’an while Abu Nu’aim was reciting Qur’an loudly. He replied: yes> The Messenger of Allah (ﷺ) led us in a certain prayer in which the Qur’an is recited loudly, but he became confused in the recitation. When he finished he turned his face to us and said: Do you recite when I recite the Qur’an loudly? Some of us said: we do so; this is why I said to myself: What is that which confused me (in the recitation of ) the Qur’an. Do not recite anything from the Qur’an when I recite it loudly except the Umm al-Qur’an.
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬. সালাতে কেউ সূরাহ্ পড়া ছেড়ে দিলে
৮২৫। ইবনু জাবির, সাঈদ ইবনু ’আবদুল ’আযীয এবং ’আব্দুল্লাহ ইবনু আ’লা সূত্রে বর্ণিত। তাঁরা মাকহুল হতে ’উবাদাহ (রাঃ) সূত্রে আর-রাবী’ ইবনু সুলাইমানের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন, ইমাম মাকহুল (রহঃ) মাগরিব, ’ইশার ও ফজর সালাতে (ইমামের পিছনে) প্রত্যেক রাক’আতেই নিঃশব্দে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন।
ইমাম মাকহুল (রহঃ) বলেন, যে সালাতে ইমাম উচ্চস্বরে কিরাত পড়েন এবং থামেন তুমি তখন সূরাহ ফাতিহা নীরবে পড়ে নিবে। আর ইমাম যদি বিরতিহীনভাবে কিরাত করেন, তাহলে তুমি হয় ইমামের আগে, পরে বা ইমামের সাথেই সূরাহ ফাতিহা পড়ে নিবে এবং কোন অবস্থাতেই তা পাঠ করা ছেড়ে দিবে না।[1]
দুর্বল।
ইমাম মাকহুলঃ ইমাম যাহাবী বলেনঃ তিনি একজন মুদাল্লিস, ক্বাদরিয়া মতবাদে বিশ্বাসী বলে অভিযুক্ত (মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/১৭৭)। ত্বাবাক্বাতে ইবনু সায়াদে (৭/৪৫৪) রয়েছেঃ ‘‘আহলি ‘ইলমের কেউ কেউ বলেছেন, মাকহুল কাবিলী বংশের ছিলেন, তার জবাবে বাঁধো বাঁধো ছিলো এবং ক্বাদরিয়া ফিরকার সাথে সম্পর্ক ছিলো। আর বর্ণনার দিক দিয়ে তিনি যঈফ ছিলেন।’’ কিন্তু ইবনু সায়াদ ইমাম মাকহুল সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমতঃ ইবারাতের মধ্যে রয়েছে, ‘আহলি ইলমের কেউ কেউ’ এটা একটা অস্পষ্ট কথা। কারা এই আহলি ইলম তা কারো জানা নেই। অর্থাৎ ইবনু সায়াদ তাদের পরিচয় দেননি। আর এ ধরণের কথা মুহাদ্দিসগণের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ ইমাম মাকহুল সম্পর্কে এরূপ ত্রুটি বর্ণনায় ইবনু সায়াদ একক হয়ে গেছেন। তার বিপক্ষে রয়েছেন জমহুর। অন্য দিকে ইবনু সায়াদ বর্ণনাকারীদের মধ্যে এতো নিম্ন স্তরের বর্ণনাকারী যে, মুহাদ্দিসগণ তার সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করেছেনঃ ইবনু সায়াদ ত্রুটি ধরার ক্ষেত্রে যদি একাকী হয়ে যান তবে তার ত্রুটি ধরা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রিজালবিদগণের নিকট ইবনু সায়াদ ওয়াক্বিদী। অর্থাৎ তিনি মিথ্যুকদের অনুসরণ করেন বলে পরিচিত। (দেখুন, হাদীউস সারী, ৪১৭-৪২৩, ৪৪৮ পৃঃ এবং ক্বাওয়ায়িদু ফী ‘উলূমিল হাদীস ৩৯০ পৃঃ)
তাহযীবুত তাহযীব’ (১/১০৮) রয়েছেঃ ‘‘ইমাম মাকহুল শাম দেশের একজন নাম করা তাবেঈ এবং সহীহ মুসলিমের একজন বুনিয়াদী বর্ণনাকারী এবং জমহুর মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।’’
ইমাম নাববী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম মাকহুল বিশ্বস্ত হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত- (দেখুন, আসমাউল লুগাত, ২/১১৪)। এছাড়া ইমাম তিরমিযী, ইমাম দারাকুতনী, ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু হিব্বান, ইমাম আবূ দাঊদসহ আরো অনেকে ইমাম মাকহুলের হাদীস সহীহ বলেছেন। আর ইমাম যাহাবী যদিও ইমাম মাকহুরকে মুদাল্লিস বলেছেন কিন্তু ইমাম মাকহুলের আন্ আন্ শব্দ দ্বারা বর্ণিত হাদীস ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, বায়হাক্বী, ইবনু হিববান, ইবনু খুযাইমাহ, দারাকুতনী, ইমাম খাত্তাবী, ইমাম হাকিম প্রমূখ ইমামগণ তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন।
উল্লেখ্য হানাফী মাযহাবে ইমাম মাকহুলের এ বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য। কারণঃ প্রথমতঃ ইমাম মাকহুল একজন প্রসিদ্ধ তাবেঈ এবং তিনি ইমাম আবূ হানিফার অন্যতম উস্তাদ। (দেখুন, কিতাবুল আসার, ৩৫০ পৃঃ)।
দ্বিতীয়তঃ ইলাউস সুনান (১/৩১৩) গ্রন্থে রয়েছেঃ ‘‘কুরুনে সালাসাহ (অর্থাৎ সাহাবা, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈন- এই তিন যুগ) এর তাদলীস ও ইরসাল আমাদের (হানাফীদের) দৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি নেই।’’ উক্ত গ্রন্থে আরো রয়েছেঃ ‘‘আমি বলতে চাই, যদি কুরুনে সালাসার ভিতরের বিশ্বস্ত লোক হয় তাহলে তার তাদলীস ঐভাবে গ্রহণযোগ্য, যেভাবে তার মুরসাল বর্ণনা গ্রহণযোগ্য- (দেখুন, ঐ ১/৩০)।
بَابُ مَنْ تَرَكَ الْقِرَاءَةَ فِي صَلَاتِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَهْلٍ الرَّمْلِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، عَنِ ابْنِ جَابِرٍ، وَسَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْعَلَاءِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ عُبَادَةَ، نَحْوَ حَدِيثِ الرَّبِيعِ بْنِ سُلَيْمَانَ، قَالُوا: فَكَانَ مَكْحُولٌ، يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ وَالصُّبْحِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ سِرًّا، قَالَ مَكْحُولٌ: اقْرَأْ بِهَا فِيمَا جَهَرَ بِهِ الْإِمَامُ إِذَا قَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَسَكَتَ سِرًّا فَإِنْ لَمْ يَسْكُتِ اقْرَأْ بِهَا قَبْلَهُ وَمَعَهُ وَبَعْدَهُ لَا تَتْرُكْهَا عَلَى كُلِّ حَالٍ
- ضعيف
The above mentioned tradition has been transmitted through a different chain of narrators by 'Ubadah b. al-samit like the version of al-Rabi’b Sulaiman. This version adds:
Makhul used to recite Surah al Fatihah al-kitab quietly in the prayer in which the imam recites the Qur’an loudly when he observes the period of silence. If he does not observe the period of silence, recite it before him(i.e before his recitation), or along with him or after him; do not give it up in any case.