পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৯৮-[৪৪] আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেছেন: তুমি লাল বর্ণ বা কালো বর্ণ বিশিষ্ট হলেই উত্তম হবে না; বরং আল্লাহভীতি দ্বারাই তাদের হতে তুমি শ্রেষ্ঠ হবে। (আহমাদ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ أَبِي ذَرٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «إِنَّكَ لَسْتَ بِخَيْرٍ مِنْ أَحْمَرَ وَلَا أَسْوَدَ إِلَّا أَنْ تفضلَه بتقوى» . رَوَاهُ أَحْمد
سندہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 158 ح 21736) * قال المنذری :’’ رجالہ ثقات الا ان بکر بن عبداللہ المزنی لم یسمع من ابی ذر فالسند منقطع ‘‘ و حدیث احمد (5 / 411 ، مجمع الزوائد 8 / 84 و سندہ صحیح) یغنی عنہ ۔
ব্যাখ্যা : শারীরিকভাবে কোন মানুষ লাল-কালো অন্য কোন বর্ণের হওয়াতে আল্লাহর নিকট তার কোন মর্যাদা বা কল্যাণ নেই। আল্লাহর নিকট কল্যাণ ও মর্যাদার একমাত্র মাপকাঠি হলো তাক্বওয়া। লাল-কালো দুটি রঙের কথা বলা হয়েছে এজন্য যে, অধিকাংশ মানুষ কালো কিংবা লাল বা সাদা হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেছেন, লাল কালো দ্বারা সাইয়্যিদ এবং দাসকে বুঝানো হয়েছে, যেমন বিভিন্ন যুগে কালোরা ফর্সাদের হাতে দাসরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপের সাদা লোকেরা আফ্রিকার কালোদের শতাব্দীর পর শতাব্দী দাসরূপে ব্যবহার করেছে। ইসলাম এই প্রভুত্ব ও দাসত্বের মহাপ্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে তাক্বওয়া তথা আল্লাহভীতিকে মর্যাদার মাপকাঠি নির্ণয় করেছে।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) অবশ্য এ ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে লালকে অনারব এবং কালোকে ‘আরবজাতি বুঝিয়েছেন অর্থাৎ ‘আরবী কিংবা আযমী হওয়ার মধ্যে কোন মর্যাদা ও কল্যাণ নেই বরং তাক্বওয়ার মাধ্যমেই মর্যাদা ও কল্যাণ নিহীত।
আল্লাহ তা'আলা বলেন, “তবে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে ব্যক্তি স্বীয় ইমারতের ভিত্তি আল্লাহভীতির ওপর স্থাপন করেছে।” এ আয়াতে কারীমার তাৎপর্য হলো- বাহ্যিক আকৃতি এবং চাকচিক্যের ভিত্তিতে কোন মর্যাদা নির্ণয় হয় না বরং তাকওয়ার ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদা নির্ণয় হয়।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, “হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদেরকে একজন নারী ও পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি .... নিশ্চয় তোমাদের মধ্য হতে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাক্বওয়াবান।” (সূরাহ্ আল হুজুরাত ৪৯ : ১৩)
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসের বাক্য (إِلَّا أَنْ تفضلَه) এর "ه" যমীরটি (أحمر) এবং (أسود) উভয়ের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়েছে, আর ইস্তিসনাটি ইস্তিসনায়ে মুফাররাগ হয়েছে। এতে প্রকৃত অর্থ দাঁড়িয়েছে, “তুমি তাক্বওয়া ব্যতীত কোন বস্তু দ্বারাই উত্তম হতে পারবে না।”
দ্বিতীয় আরেকটি অর্থ এভাবে নেয়া যায় যে, “তুমি কোন অস্থাতেই আল্লাহর কাছে উত্তম হতে পারবে যতক্ষণ না তোমাদের দুজনের মধ্য হতে কারো মধ্যে অধিক হারে তাক্বওয়া অর্জিত হবে।” এ তাক্বওয়ার কয়েকটি স্তর রয়েছে, সর্বনিম্ন স্তর হলো শিরকে জলী বা স্পষ্ট শির্ক থেকে আত্মরক্ষা করা। এর মধ্যম স্তর হলো গুনাহ, নিষিদ্ধ খেল-তামাশা এবং শিরকে খফী থেকে আত্মরক্ষা করা। আর তাক্বওয়ার সর্বোচ্চ স্তর হলো সর্বদা আল্লাহর সন্নিধানে হাযির থাকা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুল মিশকাত লিত্ব ত্বীবী ১০ম খণ্ড, ৩২৯৬ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৯৯-[৪৫] উক্ত রাবী (আবূ যার [রাঃ]) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে বান্দা দুনিয়ার সম্পদ হতে বিমুখ থাকে আল্লাহ তা’আলা তার হৃদয়ে সূক্ষ্ম জ্ঞান সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ তার জিহ্বা দ্বারা তা প্রকাশ করান। দুনিয়ার দোষ-ত্রুটি, তার রোগ ও প্রতিষেধক তাকে দেখিয়ে দেন এবং তাকে দুনিয়া হতে নিরাপদে বের করে দারুস্ সালামে (জান্নাতে) প্রবেশ করান। (বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا زَهِدَ عَبْدُ فِي الدُّنْيَا إِلَّا أَنْبَتَ اللَّهُ الْحِكْمَةَ فِي قَلْبِهِ وَأَنْطَقَ لِسَانَهُ وَبَصَّرَهُ عَيْبَ الدُّنْيَا وَدَاءَهَا وَدَوَاءَهَا وَأَخْرَجَهُ مِنْهَا سَالِمًا إِلَى دَارِ السَّلَامِ» رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10532 ، نسخۃ محققۃ : 10050) * فیہ عمر بن صبح : متروک متھم و بشیر بن زاذان : ضعیف جدًا ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুনিয়ার সহায়-সম্পদ থেকে বিমুখ অনাসক্ত হওয়াই (زهد فىِ الدُّ نْيَا) বা দুনিয়া বিরাগী। একদল রয়েছে যারা বিয়ে-শাদী, সংসার কিছুই করে না, তাদের সন্ন্যাসী বৈরাগী বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (لارهبنية فى الاسلام) ইসলামে বৈরাগ্যতা নেই।
ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অনুসরণ করে, সংসার জীবনের মধ্যে থেকে দুনিয়ার লোভ-লালসা ত্যাগ করে জীবন নির্বাহের ন্যূনতম বস্তুতে সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকে, আল্লাহ তা'আলা তার অন্তরে হিকমাত বা সূক্ষ্মজ্ঞান সৃষ্টি করে দেন। সেই জ্ঞান দ্বারা তিনি নিজের যথাযথ চলার পথ দেখে থাকেন এবং আল্লাহর মারিফাত অর্জন করে কথা বলে থাকেন, ফলে তার কথা হিকমাতপূর্ণ হয়। অতঃপর সে হয় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। ফলে দুনিয়ার দোষ-ত্রুটি আল্লাহ তা'আলা তাকে দেখিয়ে দেন, আর দুনিয়ার রোগ-ব্যাধি এবং তার প্রতিকারও তাকে অবলোকন করিয়ে দেন।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা দ্বিতীয় স্তরের তাক্বওয়ার প্রতি ইশারা, অর্থাৎ দুনিয়া বিরাগীর মাধ্যমে যখন ‘ইলমে ইয়াক্বীন হয় এবং দুনিয়ার ত্রুটিসমূহ তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তখন তাকে এক দূরদৃষ্টির ওয়ারিস বানিয়ে দেন, ফলে সে তা দ্বারা হার্কে ইয়াক্বীন অর্জন করতে সক্ষম হয়।
দুনিয়ার রোগ হলো- দুনিয়াপ্রীতি এবং তা অর্জনের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা।
আর ইলম ও ‘আমলের উপায় দ্বারা হয় তার প্রতিবিধান ও চিকিৎসা। বিপদে ধৈর্যধারণ, অল্পে তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতে তুষ্ট থাকাও দুনিয়াপ্রীতি রোগের প্রতিকার হতে পারে।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়ার ফিতনাহ্ ও বালা-মুসীবাত থেকে সম্মানের সাথে পরকালের শুভ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। হাদীসে (دَارِ السَّلَامِ) শব্দ ব্যবহার করে এদিকে ইশারা করা হয়েছে যে, যিনি দুনিয়াতে (زهد) ইখতিয়ার করবেন না তিনি দুনিয়ার ত্রুটি এবং তার রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন না। ফলে সে প্রথম পর্যায়েই নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, বরং শাস্তি বা ‘আযাব ভোগের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শাবুহু মিশকাত্ লিত্ব ত্বীবী আল কাশিফু আন হাকায়িকিস্ সুনান ১০ম খণ্ড, ৩২৯৬ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০০-[৪৬] উক্ত রাবী (আবু যার [রাঃ]) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিঃসন্দেহে সে কামিয়াব হয়েছে আল্লাহ তা’আলা যার হৃদয়কে ঈমানের জন্য খালেস করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ তা’আলা তার হৃদয়কে (হিংসা ও মুনাফিক্বী হতে) নিবৃত্ত, রসনাকে সত্যভাষী, নাফসকে স্থিতিশীল ও স্বভাবকে সঠিক করেছেন, আর তার কানকে বানিয়েছেন (সত্য কথা) শ্রবণকারী ও চক্ষুকে করেছেন (সত্য প্রমাণাদির প্রতি) দৃষ্টিদানকারী। মূলত হৃদয় যা সংরক্ষণ করে তার জন্য কান হলো চুঙ্গির ন্যায় এবং চক্ষু হলো স্থাপনকারী। আর অবশ্যই ঐ ব্যক্তি কামিয়াব হয়েছে, যে তার হৃদয়কে সংরক্ষক বানায়। (আহমাদ ও বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَخْلَصَ اللَّهُ قلبَه للإِيمان وجعلَ قلبَه سليما ولسانَه صَادِقا وَنَفْسَهُ مُطْمَئِنَّةً وَخَلِيقَتَهُ مُسْتَقِيمَةً وَجَعَلَ أُذُنَهُ مُسْتَمِعَةً وَعَيْنَهُ نَاظِرَةً فَأَمَّا الْأُذُنُ فَقَمِعٌ وَأَمَّا الْعَيْنُ فَمُقِرَّةٌ لِمَا يُوعَى الْقَلْبُ وَقَدْ أَفْلَحَ مَنْ جَعَلَ قَلْبَهُ وَاعِيًا» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 147 ح 21635) و البیھقی فی شعب الایمان (108 ، نسخۃ محققۃ : 107) * خالد بن معدان عن ابی ذر رضی اللہ عنہ : منقطع ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বাণী, “আল্লাহ যার হৃদয়কে ঈমানের জন্য খালেস করে দিয়েছেন”, এর অর্থ হলো তার অন্তরকে ঈমানের জন্য এভাবে খালেস বা নিখাদ করে দেন যে, অন্তরে অন্য কিছুই স্থান পায় না, কেবল আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালোবাসা ও আনুগত্যই স্থান পায়।
“আল্লাহ তার অন্তরকে নিরাপদ বানিয়ে দেন” এর অর্থ হলো অন্তরকে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষা এবং নিন্দনীয় চারিত্রিক গুণাবলি ও দুনিয়াপ্রীতিজনিত কারণে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া থেকে নিরাপদে রাখেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (یَوۡمَ لَا یَنۡفَعُ مَالٌ وَّ لَا بَنُوۡنَ اِلَّا مَنۡ اَتَی اللّٰهَ بِقَلۡبٍ سَلِیۡمٍ) “সেদিন সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না, তবে যে ক্বলবে সালীম নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে।”
(সূরাহ্ আশ শুআরা- ২৬: ৮৮-৮৯) আল্লাহ তাআলা তার জিহ্বাকে কথা, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ইত্যাদিতে সত্যবাদী বানিয়ে দেন এবং অন্তরকে আল্লাহর যিক্র ও তার মুহাব্বাতে স্থিতিশীল ও প্রশান্ত করে দেন। আল্লাহ তার সৃষ্টিগত স্বভাব ও প্রবৃত্তিকে সীমাহীন বাড়াবাড়ি অথবা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতার মাঝেও সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আর তার জিহ্বা, কান ও দৃষ্টিশক্তিকে হাক্ব কথা বলা, শ্রবণ করা ও তা সংরক্ষণ করার সক্ষমতা দান করেন। অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা তার অন্তরকে এগুলো সংরক্ষণের ক্ষমতা দান করে থাকেন, আর এই ব্যক্তিই প্রকৃত সফলকাম।
(মিক্বাতুল মাফাতীহ, আস্ সীরাজুম মুনীর শারূহু জামিউস্ সগীর ৩য় খণ্ড, ফায়জুল ক্বদীর ৪র্থ খণ্ড, ৫০৮ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০১-[৪৭] ’উক্বাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: যখন তুমি দেখবে কোন বান্দার গুনাহ ও অবাধ্যতা সত্ত্বেও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাকে দুনিয়ার প্রিয় বস্তু করছেন, তখন বুঝে নাও যে, মূলত এটা অবকাশমাত্র। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ কর। “তাদেরকে যে নসীহত করা হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য হাত নি’আমতের দরজা খুলে দিলাম; পরিশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল তাতে তারা যখন আনন্দে মেতে উঠল হঠাৎ করে তাদেরকে ধরে বসলাম। তখন (যাবতীয় কল্যাণ থেকে) তারা নিরাশ হয়ে গেল”- (সূরা আন্’আম ৬:৪৪)। (আহমাদ)।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا رَأَيْتَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُعْطِي الْعَبْدَ مِنَ الدُّنْيَا عَلَى مَعَاصِيهِ مَا يُحِبُّ فَإِنَّمَا هُوَ اسْتِدْرَاجٌ» ثُمَّ تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (فَلَمَّا نسوا ماذكروا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُمْ بَغْتَةً فَإِذَا هم مبلسون) رَوَاهُ أَحْمد
حسن ، رواہ احمد (4 / 145 ح 17444) * رشدین بن سعد ابو الحجاج : ضعیف و للحدیث شاھد عند البیھقی (شعب الایمان : 4540 ، نسخۃ محققۃ : 4220) و سندہ حسن ۔
(إِسْنَاده جيد)
ব্যাখ্যা : আল্লাহর নাফরমান পাপাচারীর পাপাচারিতা সত্ত্বেও তাকে দুনিয়ার প্রিয় নিআমতরাজি প্রদান। তাদের জন্য আনন্দের কিছু নয়, বরং এটা আল্লাহর ধীরস্থিরে ধরার অবকাশ মাত্র।
আল কামূস আল ওয়াজী অভিধানে রয়েছে,(اسْتِدْرَاجٌ) শব্দের অর্থ আস্তে আস্তে নেয়া, ধীরে ধীরে পাকড়াও করা, ক্রমান্বয়ে আনা। অর্থাৎ কাউকে তার অনাচারে সুযোগ দিয়ে ধীরস্থির মতো পাকড়াও করা।
রাসূলুল্লাহ তার প্রমাণে নিম্নের আয়াত তিলাওয়াত করলেন, “অতঃপর কিতাবীদের যেসব উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল, তখন আমি তাদের জন্য প্রত্যেক নি'আমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। অবশেষে যখন তারা প্রাপ্ত জিনিসে অত্যধিক আনন্দিত হয়ে পড়ল। এমতাবস্থায় আমি তাদের হঠাৎ পাকড়াও করলাম, তখন তারা হতভম্ব হয়ে পড়ল।” (সূরা আল আ'আম ৬:৪৪)
এ পাকড়াও দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর আকস্মিক কোন গযব অথবা মৃত্যু। এ সময় তারা হতভম্ব এবং নিরাশ হয়ে যায়, তাদের করার আর কিছু থাকে না। অবাধ্যচারীদের স্বভাব এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহর নি'আমতসমূহ যখন বেড়ে যায় তখন তাদের অবাধ্যাচারিতাও বেড়ে যায়, এটা তাদের নির্বুদ্ধিতার কারণেই হয়ে থাকে।
ফুজায়ল ইবনু ‘আইয়্যা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ যদি কারো ওপর কোন নি'আমত দান করেন আর সে তার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে এর উপর অটুট থাকে এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তার চেয়ে বড় নি'আমতে ভূষিত করেন। (মিক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০২-[৪৮] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন সুফফার অধিবাসীদের মধ্য থেকে জনৈক লোক এক দীনার রেখে মৃত্যুবরণ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: এটা একটি পোড়া দাগ। বর্ণনাকারী বলেন, কিছুদিন পর আরেক লোক দু’টি দীনার রেখে মৃত্যুবরণ করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বললেন: এ যেন দুটি পোড়া দাগ। (আহমাদ ও বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الصُّفَّةِ تُوُفِّيَ وَتَرَكَ دِينَارًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيَّةٌ» قَالَ: ثُمَّ تُوُفِّيَ آخَرُ فَتَرَكَ دِينَارَيْنِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيَّتَانِ» رَوَاهُ أَحْمَدُ والبيهقيُّ فِي «شعب الإِيمان»
صحیح ، رواہ احمد (5 / 253 ح 22533) و البیھقی فی شعب الایمان (6963) * و للحدیث شواھد صحیحۃ عند احمد (5 / 253 ، 258) و ابن حبان (الموارد : 2481 سندہ حسن ) وغیرھما وھوبھا صحیح ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আহলে সুফফা হলো কতিপয় গরীব মুহাজির সাহাবী যাদের কোন বাড়ী-ঘর ছিল না। তারা মসজিদে নববীর বারান্দায় থাকত।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দু’জন সুফফার অধিবাসীর ওপর এরূপ শাস্তির কারণ বা ইল্লত জানিয়ে দেয়াই এখানে উদ্দেশ্যে কারণ তারা ছিলেন দুনিয়াবিমুখ ফকীর। কেউ কিছু দিলে খেতেন অন্যথায় উপোস থাকতেন অথচ মৃত্যুর সময় দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) রেখে গেলেন তাহলে তাদের দুনিয়াবিমুখ ও দরিদ্রতার দাবীটি ছিল মিথ্যা। তাই বলে অর্থ সম্পদের অধিকারী হওয়া নিন্দনীয় নয়। সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই সম্পদশালী ছিলেন। যেমন- আবু বাকর, ‘উসমান, আবদুর রহমান ইবনু আওফ, ত্বলহাহ্ ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) প্রমুখ, এরা কেউই সম্পদশালী হয়ে ফিতনায় পড়েননি। সম্পদশালী হওয়া যুহদ ফি দুনিয়া’র পরিপন্থী নয়, বরং এটা মুবাহ বা বৈধ। কেউ এটা পরিহার করে চলতে পারলে সেটা হবে তার জন্য উত্তম। আরবীতে (كَيَّةٌ) বিভিন্নভাবে পড়ার রীতি রয়েছে, শব্দের অর্থ আগুনে কোন কিছুকে তাপ দিয়ে তা দ্বারা দাগ বা সেক দেয়া। যেমন আল্লাহ বলেন,
یَّوۡمَ یُحۡمٰی عَلَیۡهَا فِیۡ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُکۡوٰی بِهَا جِبَاهُهُمۡ
“সেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে ঐ (স্বর্ণ-চাদি)-গুলো উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর সেগুলো দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে।” (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৫)
কেউ কেউ এভাবেও ব্যাখ্যা করেছেন যে, তারা যেহেতু ফকীরের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাদের লোকেরা সদাক্বাহ্ দিত, তারা তো চরম অভাবী ও ক্ষুধার্ত ছিলেন, তারা প্রকারান্তে সওয়ালকারীর মতই ছিলেন, চাই তা কথায় হোক বা বাস্তব অবস্থার কারণে হোক। অথচ যার কাছে একদিনের খাদ্য রয়েছে তার জন্য সওয়াল করা হারাম।
অতএব তাদের নিকট দীনার থাকার কারণে অন্যের নিকট চাওয়া হারাম হওয়া সত্ত্বেও পরোক্ষভাবে চাওয়ার জন্য তাদের ঐ মুদ্রা হবে তাদের শরীরের দাগ বা সেক। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩৯৭, শাহু বুলুগুল মারাম দারস্ নং ২৩১, শামিলাহ্ : ১৪৫০)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৩-[৪৯] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি তাঁর মামা আবু হাশিম ইবনু ’উবার কাছে তার রোগ সেবার জন্য গেলেন। (তাকে দেখে) আবু হাশিম কেঁদে দিলেন। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন : হে মামা! আপনি কাঁদছেন কেন? রোগ পীড়া আপনাকে ব্যথিত করছে- নাকি দুনিয়ার প্রতি লোভ লালসায় আপনার এ ক্রন্দন? জবাবে আবু হাশিম বললেন : এর একটিও নয়; বরং (এজন্য কাঁদছি যে,) রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিকট একটি অঙ্গীকার নিয়েছিলেন; কিন্তু আমি তা সংরক্ষণ করতে পারিনি। মু’আবিয়াহ্ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন: সে অঙ্গীকারটি কী ছিল? তিনি বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমার মাল জমা করার মধ্যে শুধুমাত্র একজন খাদিম এবং আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য একটি সওয়ারীই যথেষ্ট। আমি দেখছি যে, আমি অনেক মাল-সম্পদ জমা করে ফেলেছি। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن مُعَاوِيَة أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى خَالِهِ أَبِي هَاشِمِ بْنِ عتبَة يعودهُ فَبَكَى أَبُو هَاشِمٍ فَقَالَ: مَا يُبْكِيكَ يَا خَالِ؟ أَوَجَعٌ يُشْئِزُكَ أَمْ حِرْصٌ عَلَى الدُّنْيَا؟ قَالَ: كلا ولكنَّ رَسُول الله عهد إِلينا عَهْدًا لَمْ آخُذْ بِهِ. قَالَ: وَمَا ذَلِكَ؟ قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: «إِنَّمَا يَكْفِيكَ مِنْ جَمْعِ الْمَالِ خَادِمٌ وَمَرْكَبٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . وَإِنِّي أَرَانِي قَدْ جَمَعْتُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْن مَاجَه
ضعیف ، تقدم طرفہ (5185) و رواہ احمد (3 / 444 ح 15749) و الترمذی (2327 و سندہ ضعیف) و النسائی (8 / 218 ۔ 219 ح 5374) و ابن ماجہ (4103 و سندہ ضعیف) * ابو وائل رواہ عن سمرۃ بن سھم وھو رجل مجھول (انظر ح 5185) ۔
ব্যাখ্যা : “আবু হাশি উত্তরে বললেন, কখনো নয়, বরং আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারিনি, তাই কাঁদছি।” এ প্রতিশ্রুতি হয় সাধারণ ওয়াসিয়্যাত ছিল অথবা ছিল খাস বায়'আত। আল্লাহর নবীর সাহাবীদের দুনিয়ার মাল সম্পদের ভালোবাসা আদৌ ছিল না, তাঁরা সামান্য সম্পদের মালিক হলেই মনে করতেন যে আমরা দুনিয়ায় ফেঁসে গেলাম কিনা? এটা ছিল তাঁদের তাকওয়ার সর্বোচ্চ প্রমাণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩২৭, পৃ. ২২০; ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৬৭, হা. ৪১০৩)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৪-[৫০] উম্মু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (আমার স্বামী) আবু দারদা (রাঃ) কে বললাম: আপনার কী হয়েছে, আপনি কেন (কোন পদ ও সম্পদ) অর্জন করছেন না, যেভাবে অমুক অমুক অর্জন করছে? তখন তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, “তোমাদের সম্মুখে একটি কঠিন গিরিপথ রয়েছে, ভারী বোঝা বহনকারী সহজভাবে তা পার হতে পারবে না। তাই আমি উক্ত দুর্গম পথের জন্য হালকা থাকাই পছন্দ করি।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ قَالَتْ: قُلْتُ: لِأَبِي الدَّرْدَاءِ: مَالك لَا تَطْلُبُ كَمَا يَطْلُبُ فُلَانٌ؟ فَقَالَ: أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ أَمَامَكُمْ عَقَبَةً كَؤُودًا لَا يَجُوزُهَا المثقلون» . فَأحب أَن أتخفف لتِلْك الْعقبَة
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10408 ، نسخۃ محققۃ : 9923 ۔ 9924) [و صححہ الحاکم (4 / 573 ۔ 574) و وافقہ الذھبی] * ابو معاویۃ الضریر مدلس و عنعن و صرح بالسماع فی روایۃ محمد بن سلیمان ابن بنت مطر الوراق وھو ضعیف فالسند معلل ۔
ব্যাখ্যা : আবু দারদা (রাঃ) মদীনার নামকরা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পর ব্যবসা ও ইবাদতের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন, কিন্তু সমন্বয় করতে না পারায় ব্যবসা ছেড়ে ‘ইবাদতে আত্মনিয়োগ করেন, এমনকি একেবারেই দুনিয়াবিমুখ হয়ে পড়েন। স্ত্রী তাকে বলেন, অমুকে অমুকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে অথচ ব্যবসায় তোমার প্রচুর সুনাম রয়েছে এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক বর্ণিত পরকালের সংকটময় পথ পরিক্রমার কথা স্মরণ করে দুনিয়ার সম্পদের বোঝা নিয়ে সেই দুর্গম ও সংকটময় পথ পাড়ি দেয়া নিয়ে অত্যন্ত ভীত ছিলেন। তাই ব্যবসার প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই বলে জানালেন।
(عَقَبَةً كَؤُودًا) কামূস অভিধান প্রণেতা (عَقَبَةً) শব্দের অর্থ করতে গিয়ে লিখেছেন:(مَرْتىً صَعْبًا مِنَ الْجبَالَ) পাহাড়ের দুঃসাধ্য আরোহণস্থল যেখানে উঠা খুবই কঠিন। (كَؤُودًا) শব্দের অর্থ দুর্গম এবং দীর্ঘ, অর্থাৎ তোমার গন্তব্য (জান্নাত) তোমা হতে অনেক দূর এবং সে পথ খুব কঠিন ও দুর্গম।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্য মৃত্যু, কবর এবং হাশরের নানা অবস্থা ও তার কাঠিন্যতা। আবু দারদা (রাঃ) মৃত্যুর পর ঐ ঘাঁটিগুলো অতিক্রম করতে নিজের গুনাহের এবং জওয়াবদিহিতার বোঝাকে হালকা করে রাখতে চেয়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, কাশফুল আর হা. ৩৬৯৬)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৫-[৫১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের কেউ পা না ভিজিয়ে পানিতে চলতে পারে কি? তারা বললেন: না (এটা কখনো সম্ভব নয়) হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সা.) বললেন: অনুরূপভাবে দুনিয়াদারের অবস্থাও তাই, সে গুনাহ হতে নিরাপদে থাকতে পারে না। (হাদীস দু’টি ঈমাম বায়হাক্বী “শুআবুল ঈমানে” বর্ণনা করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ مِنْ أَحَدٍ يَمْشِي عَلَى الْمَاءِ إِلَّا ابْتَلَّتْ قَدَمَاهُ؟» قَالُوا: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «كَذَلِكَ صَاحِبُ الدُّنْيَا لَا يسلمُ منَ الذُّنُوب» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10457 ، نسخۃ محققۃ : 9973) * خضر بن ابان الھاشمی و ھلال بن محمد العجلی ضعیفان و فی السند علل أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : হাদীসের অর্থ স্পষ্ট, পানিতে চললে পা যেমন ভিজবেই তেমনি দুনিয়া হাসিল করতে গেলে পাপে পতিত হবেই। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : এখানে মুত্তাকীদের দুনিয়ার মুহাব্বাতে জড়িয়ে পড়া থেকে ভীতিপ্রদর্শন এবং যুহদ ফি দুনিয়াকে জোরদার করার জন্য এ দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আখিরাতকে দুনিয়ার উপর অগ্রাধিকার দেয়া এবং দারিদ্রতার কষ্টকে ধৈর্যের সাথে বরণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কেননা গরীব ফকীরগণ ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় অনুগ্রহে দুনিয়াপ্রীতির পাপ থেকে আমাদের ক্ষমা করুন। (মিক্বাতুল মাফাতীহ, ফায়জুল ক্বদীর ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৫৪ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৬-[৫২] জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহিমাহুল্লাহ) মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার কাছে এ ওয়াহী পাঠানো হয়নি যে, আমি ধন-সম্পদ জমা করি এবং একজন ব্যবসায়ী হই, বরং আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, “তুমি তোমার রবের প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর ’ইয়াক্বীন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তোমার রবের ’ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করো”- (সূরাহ্ আল হিজর ১৫:৯৮-৯৯)। (শারহুস্ সুন্নাহ্; আর আবূ নু’আয়ম তাঁর “হিলইয়াহ্” গ্রন্থে আবু মুসলিম হতে বর্ণনা করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن جُبَير بن نفير رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أُوحِيَ إِلَيَّ أَنْ أَجْمَعَ الْمَالَ وَأَكُونَ مِنَ التَّاجِرِينَ وَلَكِنْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنْ (سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ. واعبد ربَّك حَتَّى يَأْتِيك الْيَقِين) رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ» وَأَبُو نُعَيْمٍ فِي «الْحِلْية» عَن أبي مُسلم
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 237 ح 4036) و ابو نعیم فی حلیاۃ الاولیاء (2 / 171 ح 1778) * السند مرسل ۔
ব্যাখ্যা: হাদীসটি মুরসালভাবে বর্ণিত হয়েছে। এটা মুরসালুত্ তাবিঈ। জুবায়র ইবনু নুফায়র আল খাযরামী (রহিমাহুল্লাহ) সিরিয়ার তাবিঈদের মধ্যে একজন সিকাহ রাবী ছিলেন। তিনি সাহাবীর নাম ছেড়ে দিয়ে হাদীস উল্লেখ করেছেন, অতএব হাদীসটি মুরসাল।
এখানে নবী রসূলদের প্রেরণের উদ্দেশ্য বিবৃত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করা এবং ধন-সম্পদ অর্জন ও সঞ্চয় শারঈতে হারাম বা নিষিদ্ধ নয়। বরং সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য বা কর্ম ক্ষেত্রের মাধ্যমে জীবিকার ব্যবস্থা করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) -এর জন্য এরূপ কোন নির্দেশনা নেই। অর্থাৎ তাঁকে ব্যবসায়ী হয়ে সম্পদ আহরণের জন্য কোন ওয়াহী দেয়া হয়নি বরং তাঁর কাছে ওয়াহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, তিনি যেন আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করেন এবং তাঁর প্রশংসা করেন। তার প্রতি আল্লাহর আরো নির্দেশ যে, তুমি সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এখানে সলাতের একটি রুকন সাজদার কথা বলে পুরো সলাতকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে, অর্থাৎ তুমি সলাত আদায়কারী হয়ে যাও। এই বিশেষ রুকনের উল্লেখ এজন্য যে, সলাতের মধ্যে সাজদাহ্ অনন্য রুকন। কেননা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সাজদার মধ্যে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতঃপর ‘ইবাদত’ কিংবা ‘আবদিয়াত’ যাই হোক না কেন আমৃত্যু তা করে যেতে হবে। এখানে (الۡیَقِیۡنُ) দ্বারা (মুফাসিরদের ঐকমত্যে) উদ্দেশ্য মৃত্যু। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, নূরুস্ সারী মিন ফাইযী সহীহিল বুখারী ২য় খণ্ড, ৬৯৭ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৭-[৫৩] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি ভিক্ষাবৃত্তি হতে বেঁচে থাকার জন্য, পরিবারের খরচ নির্বাহের উদ্দেশে এবং প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণের লক্ষ্যে হালাল উপায়ে দুনিয়ার বৈধ-সম্পদ অন্বেষণ করে সে আল্লাহ তাআলার সাথে কিয়ামতের দিন এমনভাবে মিলিত হবে যে, তার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বৈধ উপায়ে মাল অর্জন করল বটে; কিন্তু গর্ব অহংকার ও সম্পদের আধিক্য প্রকাশের নিয়্যাতে, সে আল্লাহ তা’আলার সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, তিনি তার ওপর ভীষণভাবে ক্রোধান্বিত হবেন। (বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান এবং আবু নুআয়ম তাঁর “হিলইয়াহ্” গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ طَلَبَ الدُّنْيَا حَلَالًا اسْتِعْفَافًا عَنِ الْمَسْأَلَةِ وَسَعْيًا عَلَى أَهْلِهِ وَتَعَطُّفًا عَلَى جَارِهِ لَقِيَ اللَّهَ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَوَجْهُهُ مِثْلُ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ. وَمَنْ طَلَبَ الدُّنْيَا حَلَالًا مُكَاثِرًا مفاخرا مرائيا لَقِي الله وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» وَأَبُو نُعَيْمٍ فِي «الْحِلْية»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10374 ۔ 10375 ، نسخۃ محققۃ : 9889 ۔ 9890) و ابو نعیم فی حلیۃ الاولیاء (8 / 215) [و عبد بن حمید فی المنتخب من السند (1433)] * مکحول لم یسمع من ابی ھریرۃ رضی اللہ عنہ و فی السند الآخر رجل (مجھول) و فی السندین علل أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : হালাল উপার্জন মানে হালাল পথে উপার্জন। আর যে মানুষের কাছে কোন কিছু চাওয়া বা যাঞ্ছা থেকে নিজকে বাঁচিয়ে রাখে। নিহায়াহ্ গ্রন্থে(الاِسْتِعَفَافُ) শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, (الاِسْتِعَفَافُ طَلَبُ الْعفَافِ) অর্থাৎ, ইস্তিফাফ হলো (طَلَبُ الْعفَافِ) বা পবিত্রতা চাওয়া, সংযমতা অবলম্বন করা।(الْعفَافُ) এর অর্থ হলো (وَهُوَالْكفُّ عِنِ الْحَرَامِ وَالسُّؤَالِ مِنَ النَّاسِ) হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং মানুষের কাছে যাচনা থেকে বিরত থাকা। নিজের পরিবারের খরচ নির্বাহের জন্য খরচের পর অতিরিক্ত অর্থ দ্বারা প্রতিবেশীদের ওপর ইহসান বা দয়া করা প্রকৃত মুমিনের অন্যতম গুণ।
এসব গুণাবলি অর্জনকারীদের জন্য অতীব সুসংবাদ এই যে, কিয়ামতের দিন তারা এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, অতি খুশি ও আনন্দে তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমা চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়ার সম্পদ হালাল পথেই অর্জন করল বটে, (অর্থাৎ হারাম পথ অবলম্বন করল না) কিন্তু সে সম্পদের আধিক্যতা নিয়ে অভাবী গরীবদের ওপর গর্ব অহংকার এবং দান-সদাক্বার দ্বারা লোক দেখানোর নিয়্যাত করল এ ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সাথে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, তিনি তার ওপর ভীষণ রাগান্বিত হবেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুল মিশকাতু লিত্ব ত্বীবী, বাহরুল ফাওয়ায়িদ হা. ২৮৪)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৮-[৫৪] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় এ মাল হলো বিরাট ধনভাণ্ডার। সে ধনভাণ্ডারের চাবিও আছে। অতএব সে বান্দার জন্য সুসংবাদ যাকে আল্লাহ তা’আলা কল্যাণের দ্বার খোলা এবং অকল্যাণের দ্বার বন্ধ করার চাবি বানিয়েছেন। আর সে বান্দার জন্য ধ্বংস যাকে আল্লাহ অকল্যাণ বা মন্দের দ্বার খোলা এবং কল্যাণের দ্বার বন্ধ করার চাবি বানিয়েছেন। (ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ هَذَا الْخَيْرَ خَزَائِنُ لِتِلْكَ الْخَزَائِنِ مَفَاتِيحُ فَطُوبَى لِعَبْدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ مِفْتَاحًا لِلْخَيْرِ مِغْلَاقًا لِلشَّرِّ وَوَيْلٌ لَعَبْدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ مِفْتَاحًا لِلشَّرِّ مِغْلَاقًا لِلْخَيْرِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ ابن ماجہ (238) * عبد الرحمن بن زید بن اسلم ضعیف جدًا ، یروی الموضوعات عن ابیہ ۔
ব্যাখ্যা : মানুষের সম্পদরাজি আল্লাহর দেয়া ধনভাণ্ডার স্বরূপ। এ ধনভণ্ডার থেকে খরচ করে কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ হাসিল করা সেটা মানুষের ইখতিয়ারভুক্ত। আর মানুষকেই এই ধনভাণ্ডারের চাবী বলা হয়েছে অর্থাৎ সে নিজে তা থেকে হয় কল্যাণ বের করবে অথবা অকল্যাণ আনয়ন করবে। যে সম্পদের সদ্ব্যবহার করে তার জন্য কল্যাণ এবং সুসংবাদ, পক্ষান্তরে যে তার যথাযথ হাক্ব আদায় করবে না তার জন্য কল্যাণের দ্বার থাকবে বন্ধ এবং তার জন্য রয়েছে অকল্যাণ অর্থাৎ ধ্বংস। আল্লাহ যাকে কল্যাণের বা নেক কাজের তাওফীক দান করেন সেটা তার পরম অনুগ্রহ।
‘সম্পদ’ শব্দটি ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হবে, টাকা-পয়সা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা, ‘ইবাদাত-বন্দেগীর যোগ্যতা ইত্যাদি সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
রাগিব ইস্পাহানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الْخَيْرَ) হলো ঐ বস্তু (الْخَيْرُ مَا يَرْ غَبُ فِيهِ الْكُلُّ كالْعَقْلِ مَشَلًا وَالْعَدْلِ وَالْفَضْلِ وَالشَّيْءِ النَّافِعِ) প্রত্যেক মানুষ যার প্রতি আগ্রহশীল থাকে, যেমন জ্ঞান, ন্যায়-বিচার, পদমর্যাদা এবং অন্যান্য উপকারী বস্তু। পক্ষান্তরে ‘আরবীতে (الشَّرّ) হলো খায়র-এর বিপরীত। কখনো কখনো কল্যাণ এবং অকল্যাণ একই বস্তুতে অবস্থান করে। সেটা একজনের জন্য কল্যাণ অপরের জন্য অকল্যাণ। যেমন “ইলম, একজনের জন্য হবে জাহান্নামের পর্দা, অন্যের জন্য জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হবে। অনুরূপ কুরআন কারো পক্ষে সুপারিশকারী হবে আবার কারো বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারী।
(মিরকাতুল মাফাতীহ, তানবীর শারহু জামিউস্ সগীর, আল কাশিফ ১০ খণ্ড, ৩৩০০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২০৯-[৫৫] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদে বারাকাত দান করা না হয়, তখন সে তাকে পানি ও মাটিতে ব্যয় করে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَمْ يُبَارَكْ لِلْعَبْدِ فِي مَالِهِ جَعَلَهُ فِي المَاء والطين»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10719 ، نسخۃ محققۃ : 10234) * فیہ عبد الاعلی بن ابی المساور (متروک) عن خالد الاحول عن علی الخ و فی السند علۃ أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : যখন কোন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সম্পদ ব্যয় করবে না, পরকাল বিনির্মাণে খরচ করবে না এবং ভালো মাল ব্যয় করবে না তখন তার সম্পদ যে পথেই সে খরচ করুক না কেন তা হবে মাটি ও পানিতে ফেলা ধ্বংসের শামিল।
দুনিয়া হলো মাটি আর পানি, অতএব আল্লাহর অভিপ্রেত পথ পরিহার করে দুনিয়া সর্বস্ব জীবনের জন্য খরচের হিসাব হলো মাটি আর পানিতে ফেলে দেয়া। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, লু'আহ্ আত্ তানকীহ ফী শারূহে মিশকাতিল মাসাবীহ ৮ম খণ্ড, ৪৪০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১০-[৫৬] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন: তোমরা ঘর-বাড়ি তৈরির মধ্যে হারাম মাল লাগানো হতে বেঁচে থাকো। কেননা তা হলো ধ্বংসের মূল। (হাদীস দুটি ইমাম বায়হাকী তাঁর “শুআবুল ঈমানে” বর্ণনা করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اتَّقُوا الْحَرَامَ فِي الْبُنْيَانِ فَإِنَّهُ أَسَاسُ الْخَرَابِ» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10722 ، نسخہ محققۃ : 10237) * فیہ معاویۃ بن یحیی الصدفی ضعیف و علل أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : বাড়ী ঘর নির্মাণে হারাম থেকে আত্মরক্ষার অর্থ হলো হারাম মাল বা অর্থ দ্বারা বাড়ীঘর নির্মাণ থেকে বেঁচে থাকা। জামি' গ্রন্থে বলা হয়েছে: (اتَّقُوا الْحَرَامَ) অর্থাৎ হারাম পাথর বা ইট দ্বারা বাড়ীঘর নির্মাণ থেকে বেঁচে থাক। কেননা এটা দুনিয়াবী ধ্বংসের মূল ভিত্তি।
হাদীসের বাণী : (فَإِنَّهُ أَسَاسُ الْخَرَابِ) “নিশ্চয় তা ধ্বংসের মূলভিত্তি”- এ কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ মূলত দীন ধ্বংসের কারণ। অতএব হালাল পথে দুনিয়ার গৃহাদি নির্মাণের মাধ্যমে তার দীনের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং হারাম থেকে বাঁচতে হবে।
(মিক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ আহ্ তানকীহ ৮ম খণ্ড, ৪৪০-৪১ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১১-[৫৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: ইহকাল ঐ ব্যক্তির ঘর, যার (আখিরাতে) ঘর নেই এবং ঐ ব্যক্তিরই সম্পদ, যার (আখিরাতে) কোন সম্পদ নেই। আর ইহকালে সে ব্যক্তিই সঞ্চয় করে যার বুদ্ধি নেই। (আহমাদ ও বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الدُّنْيَا دَارُ مَنْ لَا دَارَ لَهُ وَمَالُ مَنْ لَا مَالَ لَهُ وَلَهَا يَجْمَعُ مَنْ لَا عَقْلَ لَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (6 / 71 ح 24923) و البیھقی فی شعب الایمان (10638 ، نسخۃ محققۃ : 10154) [و ابن ابی الدنیا فی ذم الدنیا (182) و احمد (6 / 71)] * ابو اسحاق مدلس و عنعن فی السند علۃ أخری ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দার’ বা ঘর দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় সুখ ও শান্তিতে অবস্থান বা বসবাস করা তাহলে তো দুনিয়ার ঘর সুখ-শান্তি থেকে মুক্ত, তাকে শান্তির ঘর নাম দেয়া যথাযথ নয়, অতএব দুনিয়া যাদের ঘর (আখিরাতে) তার কোন ঘর নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেন : (وَ اِنَّ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ لَهِیَ الۡحَیَوَانُ ۘ لَوۡ کَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ) “নিশ্চয় পরকালের জীবনই সত্যিকারের জীবন যদি তারা জানত। (সূরাহ্ আল আনকাবূত ২৯ : ৬৪)
হাদীসের বাণী : (وَمَالُ مَنْ لَا مَالَ لَهُ) “দুনিয়ার সম্পদ তার জন্যই যার আখিরাতে কোন সম্পদ নেই।” এখানে মাল-সম্পদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কল্যাণকর কাজে ও রাস্তায় খরচ করা। আর যে তার প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের জন্য তা ক্ষয় করে তার ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য যে, তার দুনিয়ার এই সম্পদ প্রকৃত সম্পদ নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ) “দুনিয়ার জীবন ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়”। (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩:১৮৫)।
অতএব এই ধোঁকার দুনিয়া লাভের জন্য যারা উঠে পড়ে লাগে তারা নির্বোধ। আর যারা আখিরাতের ঘর সমৃদ্ধ করার জন্য পাথেয় সংগ্রহে লিপ্ত তারা প্রশংসিত। আল্লাহ বলেন :
(وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫) “তোমরা (হাজ্জের জন্য) পাথেয় সংগ্রহ কর, আর উত্তম পাথেয় হলো তাক্বওয়া।” (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২: ১৯৭)
সার কথা হলো দুনিয়ার অস্থায়ী ঘরকে প্রকৃত ঘর বলে ধরবে না। বরং তাকে একেবারেই গৌন করে দেখবে। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; সিরাজুল মুনীর ৩য় খণ্ড, ১৬২ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১২-[৫৮] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে তার খুত্ববায় বলতে শুনেছি, মদ হলো পাপের সমষ্টি। নারী সম্প্রদায় শয়তানের ফাঁদ। দুনিয়ার মুহাব্বাত সকল গুনাহের মূল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে এটাও বলতে শুনেছি; তোমরা নারীদেরকে পিছনে সরিয়ে রাখো, যেভাবে আল্লাহ তাদেরকে পিছনে রেখেছেন। (রযীন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي خُطْبَتِهِ: «الْخَمْرُ جِمَاعُ الْإِثْمِ وَالنِّسَاءُ حَبَائِلُ الشَّيْطَانِ وَحُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيئَةٍ» قَالَ: وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «أَخِّرُوا النِّسَاءَ حَيْثُ أَخَّرَهُنَّ اللَّهُ» . رَوَاهُ رزين
لم اجدہ ، رواہ رزین (لم اجدہ) * و للحدیث شاھد عند الدارقطنی (4 / 247 ح 4564) وغیرہ من حدیث زید بن خالد بہ و سندہ ضعیف ، فیہ عبداللہ بن مصعب و ابوہ مجھولان ۔ 0 قولہ :’’ أخر و النساء حیث أخرھن اللہ ‘‘ رواہ عبدالرزاق (3 / 194 ح 5115 موقوفًا) عن ابن مسعود رضی اللہ عنہ و سندہ ضعیف و للاثر شاھد ضعیف منقطع عند الطبرانی فی الکبیر (9 / 342 ح 9485) ۔
(لاأصل لَهُ مَرْفُوعا)
ব্যাখ্যা : (خَمْرُ) ‘খমর বা মদ সকল পাপের সমষ্টি, যা সকল পাপকে একত্র করে এবং সকল পাপের বাহন। ত্ববারানীর এক মারফু হাদীসে এসেছে, (لْخَمْرُأُمٌُ الْفَوَاحِشِ وَأَكْبَرُ الْكَبَائِرِ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ تَرَكَ الصَّلَاةَوَوَقَعَ عَلَى أُمِّهٖ وَعَمَّتِهٖ وَخَالَتِهٖ) মদ্যপান হলো সকল কুকর্মের জননী এবং বড় ধরনের কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যে তা পান করে, সালাত বর্জন করে এবং তার মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, ফুপীর সাথে এবং খালার সাথেও। (জামি'উস্ সগীর ২/২৫২ পৃ., হা, ৪১৪১)
বায়হাক্বীর এক বর্ণনায় রয়েছে, “যে মদ্যপান করে সে সালাত বর্জন করে এবং মা, খালা ও ফুপুর ওপর উদগত হয়।” (জামিউস্ সগীর হা, ৪১৪২)
হাদীসের বাণী, “নারী জাতি শয়তানের রশি”, শয়তান নারীদের দ্বারাই তার অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে থাকে। পৃথিবীর বড় বড় যুদ্ধ-বিগ্রহের মূলে শায়ত্বন এই নারীকে ব্যবহার করেছে। বলা হয়ে থাকে ইবলীস যখন বানী আদাম-এর পিছনে প্রাণন্তকর পরিশ্রম করেও নিরাশ হয়ে যায় তখন নারীদের মাধ্যমে অবতীর্ণ হয় এবং সফলতা লাভ করে।
হাদীসের বাণী : (حب الدُّنْيَا رَأس كل خَطِيئَ) “দুনিয়াপ্রীতি সকল পাপের শিরোমনি।” এ কথার মাফহুম হলো, তার বিপরীতটি বুঝানো অর্থাৎ (تَرْكُ الدُّنْيَا رَأَسُ كُلِّ عِبَادَةٍ) দুনিয়া বর্জন হলো সকল ‘ইবাদাতের শিরোমণি। বলা হয়ে থাকে যে, ব্যক্তি দুনিয়ার ভালোবাসায় লিপ্ত কোন প্রদর্শকই তাকে হিদায়াতের পথ দেখাতে পারেনি। আর যে দুনিয়া ত্যাগ করতে পেরেছে কোন পথভ্রষ্টকারীই তাকে বিপন্থগামী করতে পারেনি।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : তিনটি বাক্যের প্রত্যেকটি বাক্যই জাওয়ামিউল কালিম-এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা প্রত্যেকটি কথাই এককভাবে পাপ ও লোকসানের ক্ষেত্রে আসল বা মূলভিত্তি।
মহিলাদের পিছনে রাখার অর্থ হলো- আল্লাহ যেমন তাদের আলোচনা, তাদের হুকুম এবং মরতবা পরে এনেছেন অনুরূপ তোমরাও তাদের পরে রাখ। সালাতে তারা পিছনের কাতারে থাকবে, ঈদের খুত্ববায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের পরে নাসীহাত করতেন। যুদ্ধের ময়দানে তাদের ফ্রন্টে রাখা হবে না বরং পিছনে থাকবে। (মিক্বাতুল মাফাতীহ; কাশফুল খফায়ি ১ম খণ্ড, ৪৩৪ পৃ.)
পিছনের আরেকটি অর্থ হলো- তাদের পর্দার অন্তরালে রাখা।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৩-[৫৯] আর বায়হাক্বী তাঁর “শু’আবুল ঈমান” গ্রন্থে হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ) হতে শুধু ও (حب الدُّنْيَا رَأس كل خَطِيئَ) “দুনিয়ার মুহাব্বাত প্রত্যেক পাপের মূল বা উৎস”- এ বাক্যটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وروى اليهقي مِنْهُ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» عَنِ الْحَسَنِ مُرْسَلًا: «حب الدُّنْيَا رَأس كل خَطِيئَة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10501 ، نسخۃ محققۃ : 10019) [و ابن ابی الدنیا فی ذم الدنیا (90)] * راجالہ ثقات و فیہ شک الراوی بین المدلس فالسند ضعیف ، و ضعیف الی الحسن رحمہ اللہ ولو صح فمرسل و المرسل ردہ جمھور المحدثین و تحقیقھم ھو الراجح ۔
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৪-[৬০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি আমার উম্মার্তের ওপর দু’ ব্যাপারে খুব বেশি ভয় করি। প্রবৃত্তির কামনা আর দীর্ঘ হায়াতের আকাঙ্ক্ষা। অতঃপর প্রবৃত্তি সত্য থেকে বাধা দেয় আর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা পরকালকে ভুলিয়ে দেয়। এই যে দুনিয়া! এটা প্রবহমান প্রস্থানকারী এবং ঐ আখিরাত! তা প্রবহমান আগমনকারী। আর এদের প্রত্যেকটির সন্তানাদিও রয়েছে। অতএব যদি তোমার সাধ্য হয়, দুনিয়ার সন্তান না হওয়ার তোমাদের সাধ্যে কুলায় তবে তাই করো। কেননা আজ তোমরা ’আমলের গৃহে রয়েছ, (এখানে কোন হিসাব-কিতাব নেই। আর আগামীকাল তোমরা পরকালের অধিবাসী। হবে, আর তথায় কোন ’আমাল নেই। (বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وسم: «إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِي الْهَوَى وَطُولُ الْأَمَلِ فَأَمَّا الْهَوَى فَيَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ وَأما طول الأمل فيُنسي الْآخِرَةَ وَهَذِهِ الدُّنْيَا مُرْتَحِلَةٌ ذَاهِبَةٌ وَهَذِهِ الْآخِرَةُ مُرْتَحِلَةٌ قَادِمَةٌ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ فَإِنِ اسْتَطَعْتُم أَن لَا تَكُونُوا بَنِي الدُّنْيَا فَافْعَلُوا فَإِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي دَارِ الْعَمَلِ وَلَا حِسَابَ وَأَنْتُمْ غَدًا فِي دَارِ الْآخِرَةِ وَلَا عَمَلَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (10616 ، نسخۃ محققۃ : 10132) * فیہ علی بن ابی علی اللھبی : منکر الحدیث متروک ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : নফস্ বা প্রবৃত্তির খাহেশাত অনেকটাই মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। এটা যখন বিপথে পরিচালিত হয় তখন সেটা হয় নিন্দনীয় এবং আল্লাহর অনভিপ্রেত, দীর্ঘ আশাও মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এটাও যখন হয় হিদায়াত শূন্য এবং দুনিয়ার ভোগ-বিলাস সর্বস্ব তখন সেটাও হয় নিন্দনীয়।
নফস্ বা প্রবৃত্তি মানুষকে সত্যগ্রহণ ও তার আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে রাখে। আর দীর্ঘ আশা আল্লাহর স্মরণ ও তার আনুগত্য থেকে দূরে রাখে। যেমন- অনেক মুসলিমকে বাড়ী-ঘর নির্মাণে ব্যস্ত অবস্থায় সালাতে ডাকলে উত্তর দেয় মসজিদে যাওয়ার সময় নেই, ফকীর ভিক্ষা চাইলে বলে ব্যস্ত আছি দেখ না? দুনিয়া এবং আখিরাতের দৃষ্টান্ত হলো চলমান দুটি বাহনের ন্যায়। তবে এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো দুনিয়া তোমার নিকট থেকে তোমার হায়াতকে নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে আর আখিরাত তোমার নিকট দ্রুত চলে আসছে। এ দুনিয়ার পোষ্য সন্তান রয়েছে, সে সন্তান হলো মানুষ। অর্থাৎ যে দুনিয়ার পিছনে দৌড়ায়, তা কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আখিরাত ভুলে যায় সেই দুনিয়ার সন্তান। পক্ষান্তরে যারা প্রকৃত মুমিন তারা হবে আখিরাতমুখী, এদের জন্য দুনিয়া হলো ‘আমলের গৃহমাত্র।
নাবী (সা.)-এর বাণী : (فَإِنِ اسْتَطَعْتُم أَن لَا تَكُونُوا بَنِي الدُّنْيَا فَافْعَلُو) “যদি তোমার সাধ্য হয়, দুনিয়ার সন্তান না হওয়ায় তবে তাই কর।” এ বাক্যে দুনিয়া বর্জনের পরিপূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। এবং আখিরাত গ্রহণের অধিকতর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অতএব মু'মিন আখিরাতই কামনা করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন : “যে পরকালের ক্ষেত্রে পুণ্যফল কামনা করে আমি তাকে তার ক্ষেত্রে উন্নতি দান করি, আর যে দুনিয়ার ক্ষেত্র কামনা করে আমি তাকে দুনিয়ার কিছু অংশ প্রদান করি কিন্তু পরকালে তার জন্য কোনই অংশ নেই।” (সূরা আশ শূরা- ৪২ : ২০)
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী : (فَإِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي دَارِ الْعَمَلِ) “তোমরা আজ ‘আমলের ঘরে রয়েছে।” অর্থাৎ দুনিয়ায় আজ তোমরা এমন অবস্থানে রয়েছে যে, আখিরাতে তোমাদের নিকট এই দিনের ‘মাল তলব করা হবে। অতএব দুনিয়ার দায়িত্ব পালনের জায়গা মৃত্যু আসার আগেই গ্রহণ কর। তোমার অবস্থান দুনিয়ায় এক ঘণ্টা মাত্র, তাই উচিত তাকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করা ।
হাদীসের বাণী : “আগামীকাল তোমরা এমন ঘরে যাবে যেখানে কোন ‘আমাল নেই।” আগামীকালের ঘর হলো আখিরাতের ঘর। সেখানে হিসাব দিয়ে সাওয়াব অথবা শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। সেখানে কোন ‘আমল করার সুযোগ নেই। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ দৃষ্টান্ত দ্বারা দুনিয়ার তুচ্ছতা এবং দ্রুত ধ্বংস হওয়ার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আখিরাতের প্রতি তা'যীম ও প্রস্তুতির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা আখিরাতের ঘর চিরস্থায়ী এবং চির সুন্দর। (মিরকাতুল মাফাতীহ; আল কাশিফ আন্ হাকায়িকিস্ সুনান ১০ম খণ্ড, ৩৩০২ পৃ., লু'আতুত্ তানকীহ ৮ম খণ্ড, ৪৪২ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৫-[৬১] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহকাল পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে, আর পরকাল সম্মুখে আসছে। আর এদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা পরকালের সন্তান হও, ইহকালের সন্তান হয়ো না। কেননা আজ আমলের সময়, এখানে কোন হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব-নিকাশ হবে, সেখানে কোন ’আমল নেই। (বুখারী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: ارْتَحَلَتِ الدُّنْيَا مُدْبِرَةً وَارْتَحَلَتِ الْآخِرَةُ مُقْبِلَةً وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری فی الرقاق (باب : 4 قبل ح 6417) و انظر تغلیق التعلیق (5 / 158 ، 159) ۔
((صَحِيح))
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৬-[৬২] ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নাবী (সা.) ভাষণদানকালে বললেন : সাবধান! দুনিয়া একটি অস্থায়ী জিনিস। তা হতে পুণ্যবান ও পাপী উভয় ভোগ করে। সাবধান! পরকাল একটি সত্যিকার নির্দিষ্ট সময়। সেখানে বিচার করবেন এমন এক বাদশাহ যিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক। সাবধান! সার্বিকভাবে সর্বপ্রকার কল্যাণের স্থান হলো জান্নাত এবং সার্বিকভাবে সর্বপ্রকার মন্দের স্থান হলো জাহান্নাম। অতএব তোমরা আমল করো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আর এ কথাটি ভালোভাবে জেনে রাখো, তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মসহ (আল্লাহর সম্মুখে) উপস্থিত করা হবে। “অতএব যে অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তার ফল পাবে এবং যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তার ফল পাবে”- (সূরাহ্ আহ্ যিলযাল ৯৯ : ৭-৮)। (শাফিঈ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ يَوْمًا فَقَالَ فِي خُطْبَتِهِ: «أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا عَرَضٌ حَاضِرٌ يَأْكُلُ مِنْهُ الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ أَلا وَإِن الآحرة أَجَلٌ صَادِقٌ وَيَقْضِي فِيهَا مَلِكٌ قَادِرٌ أَلَا وَإِنَّ الْخَيْرَ كُلَّهُ بِحَذَافِيرِهِ فِي الْجَنَّةِ أَلَا وَإِنَّ الشَّرَّ كُلَّهُ بِحَذَافِيرِهِ فِي النَّارِ أَلَا فَاعْمَلُوا وَأَنْتُمْ مِنَ اللَّهِ عَلَى حَذَرٍ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ مَعْرُوضُونَ عَلَى أَعْمَالِكُمْ فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شرا يره» . للشَّافِعِيّ
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ الشافعی فی الام (1 / 202) * فیہ ابراھیم بن محمد بن ابی یحیی : متروک و السند مرسل ۔
ব্যাখ্যা : দুনিয়া হলো অস্থায়ী সম্পদ বিশেষ, যা থেকে নেককার, গুনাহগার, মু'মিন, কাফির সবাই উপকার ভোগ করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
(وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ رِزۡقُهَا) “জমিনে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযক আল্লাহর যিম্মায় না আছে।” (সূরাহ্ হূদ ১১ : ৬)
হাদীসে উল্লেখিত (الْعَرَضُ) শব্দের অর্থ করতে গিয়ে রাগিব ইস্পাহানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আরায (الْعَرَضُ مَا لَايَكُونُ لَهٗ ثَبَاتٌ) ঐ বস্তু যার স্থায়িত্ব নেই।
আখিরাত একটি সুনির্দিষ্ট সত্য এবং অনিবার্য অনুষ্ঠিতব্য সময়। সেদিন মহা ক্ষমতাধর বাদশাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা নেককার-গুনাহগার, মু'মিন-কাফির প্রভৃতি মানুষের মাঝে পুরস্কার ও শাস্তির ন্যায্য ফায়সালা করবেন।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (الْأَجَلُ) প্রতিশ্রুত সময়ের দৃষ্টান্ত; (الصادق) শব্দ দ্বারা বিশেষণ বর্ণনা করা হয়েছে তা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করণার্থে এবং স্থায়িত্বার্থে।
সকল প্রকার কল্যাণ ও কল্যাণের উপাত্ত যা কিছু রয়েছে সবই জান্নাতে বিদ্যমান। আর সকল প্রকার অকল্যাণ এবং অকল্যাণের উপকরণ সবই জাহান্নামে বিদ্যমান। অর্থাৎ জান্নাতে সকল প্রকার সুখ সামগ্রী বিদ্যমান এবং জাহান্নামে দুঃখ-যন্ত্রণার যাবতীয় পথ পন্থা ও উপকরণ বিদ্যমান রয়েছে। এ বাক্য দু'টির পূর্বে আরবী (حَرْفُ التَّنْبِيهَ) তথা সতর্কসূচক অব্যয় (أَلَا) ব্যবহার করা হয়েছে জাহান্নাম ও জান্নাতের সুখ-দুঃখের স্থায়িত্ব বুঝানোর জন্য। অতঃপর প্রত্যেকের সামনে তার ‘আমল পেশ করা হবে তা ক্ষুদ্র বৃহৎ যাই হোক না কেন। এমনকি যারা পরিমাণ ‘আমল হলেও তা প্রত্যক্ষ করবে এবং তার বিনিময়ে জান্নাত-জাহান্নামের কোন একটি নিশ্চিত পাবে।
‘আল্লামাহ্ সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (الزَّرَّةُ) (যাররাহ্) হলো ক্ষুদ্র লাল পিঁপড়া। কেউ কেউ বলেছেন, যারাহ্ হলো যার ওযন নেই, অর্থাৎ কোন ওযন যন্ত্রেই যার ভর ধর্তব্য হয় না। এটা ঘরের জানালা অথবা ছিদ্র দিয়ে সূর্য রশ্মির মধ্যে দৃশ্যমান ধূলিকণা বিশেষ, যা দেখা যায় কিন্তু ওযনে আনা যায় না।
(মিক্বাতুল মাফাতীহ; লুআতুত্ তানকীহ ফী শারহি মিশকাতিল মাসাবীহ ৮ম খণ্ড, ৪৪২ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫২১৭-[৬৩] শাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, [রসূল (সা.) বলেছেন] হে লোক সকল! দুনিয়া একটি অস্থায়ী সম্পদ। তা হতে পুণ্যবান ও পাপী উভয়ে ভোগ করে থাকে। আর পরকাল একটি সত্য প্রতিশ্রুতি। সেখানে বিচার করবেন ন্যায়পরায়ণ সর্বসময় শক্তির অধিকারী বাদশাহ। তিনি (নিজ ফায়সালায়) সত্যকে বহাল রাখবেন এবং বাতিলকে মুছে ফেলবেন। অতএব তোমরা পরকালের সন্তান হও, ইহকালের সন্তান হয় না। কেননা প্রত্যেক মাতার সন্তান তার অনুগামী হয়ে থাকে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ شَدَّادٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ الدُّنْيَا عَرَضٌ حَاضِرٌ يَأْكُلُ مِنْهَا الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ وَإِنَّ الْآخِرَةَ وَعْدٌ صَادِقٌ يَحْكُمُ فِيهَا مَلِكٌ عَادِلٌ قَادِرٌ يُحِقُّ فِيهَا الْحَقَّ وَيُبْطِلُ الْبَاطِلَ كُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا فَإِنَّ كل أم يتبعهَا وَلَدهَا»
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ ابو نعیم فی حلیۃ الاولیاء (1 / 264 ، 265) * فیہ ابو مھدی سعید بن سنان : متروک متھم ۔
(ضَعِيف)