পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। এটা শারী’আতের একটি শক্তিশালী বিষয়। যে ব্যক্তি যাকাতের ফারযিয়্যাতকে অমান্য করবে সে কাফির হয়ে যাবে। যাকাতের লাগবী অর্থ বৃদ্ধি, বারাকাত ও পবিত্র করা। যাকাত আদায় করলে মাল বৃদ্ধি পায় ও মাল পবিত্র হয়। আর যাকাত আদায়কারী গুনাহ থেকে পবিত্র হয়। আর যাকাতের শার’ঈ অর্থ হলো নিসাব পূর্ণ সম্পদে এক বৎসর অতিবাহিত হলে তা ফকীর, মিসকীন ও অন্যান্যদের মাঝে নির্ধারিত পন্থায় আদায় করা। অতঃপর যাকাতের রুকন, কারণ হিকমাত ও শর্ত রয়েছে। তা ফরয হওয়ার কারণ হলো মালের মালিক হওয়া। যাকাতের শর্ত হলো (মালের ক্ষেত্রে) নিসাব পরিমাণ হওয়া, বৎসর পূর্ণ হওয়া এবং (ব্যক্তির ক্ষেত্রে) বালেগ ও স্বাধীন হওয়া। হিকমাত হলো দুনিয়ার কর্তব্য পালন হওয়া এবং আখিরাতের সাওয়াব ও দরজা অর্জন হওয়া। আর গুনাহ হতে পবিত্র হওয়া এবং কৃপণতার দায় থেকে বাঁচা।
প্রকাশ থাকে যে, অধিকাংশ ’উলামাদের মতে যাকাত হিজরতের পর ফরয হয়। তারা দ্বিতীয় হিজরীতে ফরয হওয়ার মত ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ বলেন, হিজরতের পূর্বে ফরয হয়েছে।
১৭৭২-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠাবার সময় বললেন, মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ তাদেরকে এ লক্ষ্যে দীনের প্রতি আহবান করবে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে এই ঘোষণা দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে, মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ: «إِنَّك تَأتي قوما من أهل الْكتاب. فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. فَإِنْ هُمْ أطاعوا لذَلِك. فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ. فَإِنْ هم أطاعوا لذَلِك فأعلمهم أَن الله قد فرض عَلَيْهِم صَدَقَة تُؤْخَذ من أغنيائهم فَترد فِي فُقَرَائِهِمْ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ. فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَين الله حجاب»
ব্যাখ্যা : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবালকে ইয়ামানে বিদায়ী হাজ্জের (হজ্জের/হজের) পূর্বে ১০ হিঃ প্রেরণ করেন। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) তার ‘‘ইসতিয়াব’’ গ্রন্থে বলেছেন, তিনি মু‘আযকে ইয়ামানের জুনদ প্রদেশে ক্বাযীরূপে এ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেন যে, তিনি মানুষদেরকে কুরআন, ইসলামের নিদর্শনাবলী শিক্ষা দিবেন এবং যাকাত আদায়কারীদের থেকে যাকাত গ্রহণ করবেন। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ব্যক্তির মাঝে ইয়ামানের দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তারা হলেন খালিদ বিন সা‘ঈদকে ‘সান্আ’র, মুহাজির বিন আবী উমাইয়্যাহ্-কে ‘কিনদার’, যিয়াদ বিন লাবিদকে ‘হাযরা মাওত’-এর, মু‘আযকে ‘জুনদ’-এর আর আবূ মূসাকে ‘যুবায়দ’, যুম্‘আহ্ আদন ও সাহিল’-এর দায়িত্ব। ইবনু হাজার বলেন, জুনদ-এ অদ্যাবধি মু‘আয-এর একটি প্রসিদ্ধ মাসজিদ রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আযকে মানুষদের সর্বপ্রথম শাহাদাতাইনের দিকে দা‘ওয়াত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তা হলো দীনের মৌলিক বিষয় যা ব্যতীত দীনের অন্যান্য বিষয় শুদ্ধ হবে না।
অতএব যদি কারো ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, সে নাস্তিক তাহলে তাকে উভয়টির শাহাদাহ্ দিতে হবে। আর যদি আস্তিক হয় তাহলে তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের শাহাদাহ্ দিয়ে উভয়টির মাঝে সমন্বয় করতে হবে। সেখানে আহলে কিতাবরা বসবাস করত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে প্রথমে তাওহীদের দিকে আহবান করতে বলেন। এটি গ্রহণ করলে তারপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে বলেন। অতঃপর তাদেরকে যাকাত ফারযের (ফরযের/ফরজের) কথা অবহিত করতে বলেন। আর যাকাত আদায়ের সময় যুলম করতে নিষেধ করেন। কারণ মাযলূমের দু‘আ তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে কবূল হয়। যদিও সে পাপী হয়, কেননা তার পাপ তার নিজের উপর বর্তাবে।
শাহাদাতায়নের ব্যতীত শারী‘আতের অন্যান্য বিধানগুলোর ক্ষেত্রে কাফিররাও সম্বন্ধিত কিনা এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ বলেছেন, তারা অন্যান্য বিধানের ক্ষেত্রে সম্বন্ধিত নয়। কারণ এখানে প্রথমত তাদের শুধুমাত্র ঈমানের দিকে দাওয়াতের নির্দেশ এসেছে। অতপর ঈমান গ্রহণ করলে অন্যান্য বিধানের দিকে দা‘ওয়াতের নির্দেশ এসেছে। তবে অধিকাংশদের মতে, তারা বিশ্বাস স্থাপন এবং কার্যে প্রতিফলন উভয় দিক থেকে শরীয়াতের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে সম্বন্ধিত। হাদীসে বলা হয়েছে, ধনীদের থেকে যাকাতের মাল গ্রহণ করে তা তাদের দরিদ্রের মাঝে বিতরণ করবে ‘‘এ উক্তির আলোকে উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন যে, এক এলাকার যাকাতের সম্পদ অন্য এলাকায়/দেশে স্থানান্তর করা যাবে কি না? এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ বলেছেন, স্থানান্তর করা যাবে না। যেহেতু হাদীসে ইয়ামানবাসীদের উদ্দেশে এটি বলা হয়েছে যে, তাদের যারা ধনী তাদের থেকে নিয়ে সে এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করবে। আবূ হানীফা, ইমাম বুখারীসহ আরো অনেকের মতে স্থানান্তর করা যাবে। ইমাম মালেক, শাফেয়ী এবং আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর মতে তা স্থানান্তর করা যাবে না। তবে যদি সে এলাকা যাকাত গ্রহণ করার মত কেউ না থাকে। কিংবা স্থানান্তর করাতে অধিক কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে করা যাবে।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সোনা রূপার (নিসাব পরিমাণ) মালিক হবে অথচ তার হক (যাকাত) আদায় করবে না তার জন্য কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন (তা দিয়ে) আগুনের পাত বানানো হবে। এগুলোকে জাহান্নামের আগুনে এমনভাবে গরম করা হবে যেন তা আগুনেরই পাত। সে পাত দিয়ে তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। তারপর এ পাত পৃথক করা হবে। আবার আগুনে উত্তপ্ত করে তার শরীরে লাগানো হবে। আর লাগানোর সময়ের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। (এ অবস্থা চলবে) বান্দার (জান্নাত জাহান্নামের) ফায়সালা হওয়া পর্যন্ত।
তারপর তাকে নেয়া হবে জান্নাত অথবা জাহান্নামে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! উটের বিষয়টি (যাকাত না দেবার পরিণাম) কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উটের মালিক যদি এর হক (যাকাত) আদায় না করে- যেদিন উটকে পানি খাওয়ানো হবে সেদিন তাকে দুহানোও তার একটা হক- কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তিকে সমতল ভূমিতে উটের সামনে মুখের উপর উপুড় করে। তার সবগুলো উট গুণে গুণে (আনা হবে) মোটা তাজা একটি বাচ্চাও কম হবে না। এসব উট মালিককে নিজেদের পায়ের নীচে ফেলে পিষতে থাকবে, দাঁত দিয়ে কামড়াবে। এ উটগুলো চলে গেলে, আবার আর একদল উট আসবে। যেদিন এমন ঘটবে, সে দিনের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এমনকি বান্দার হিসাব-নিকাশ শেষ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে।
সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! গরু-ছাগলের যাকাত আদায় না করলে (মালিকদের) কি অবস্থা হবে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি গরু-ছাগলের মালিক হয়ে এর হক (যাকাত) আদায় করে না কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলা হবে। তার সব গরু ও ছাগলকে (ওখানে আনা হবে) একটুও কম-বেশি হবে না। গরু-ছাগলের শিং বাঁকা কিংবা ভঙ্গ হবে না। শিং ছাড়াও কোনটা হবে না। এসব গরু ছাগল শিং দিয়ে মালিককে গুতো মারতে থাকবে, খুর দিয়ে পিষবে। এভাবে একদলের পর আর একদল আসবে। এ সময়ের মেয়াদও হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এর মধ্যে বান্দার হিসাব-নিকাশ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামে তার গন্তব্য দেখতে পাবে।
সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ঘোড়ার অবস্থা কি হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঘোড়া তিন প্রকারের। প্রথমতঃ যা মানুষের জন্য গুনাহের কারণ হয়। দ্বিতীয়তঃ যা মানুষের জন্য পর্দা। আর তৃতীয়তঃ মানুষের জন্য সাওয়াবের কারণ।
গুনাহের কারণ ঘোড়া হলো ঐ মালিকের, যেগুলোকে সে মুসলিমদের ওপর তার গৌরব, অহংকার ও শৌর্যবীর্য দেখাবার জন্য পালন করে। আর যেগুলো মালিক-এর জন্য পর্দা হবে, সেগুলো ঐ ঘোড়া, যে সবের ঘোড়ার মালিক আল্লাহর পথে লালন পালন করে। সেগুলোর পিঠ ও গর্দানের ব্যাপারে আল্লাহর হক ভুলে যায় না। মানুষের জন্য সাওয়াবের কারণ ঘোড়া ব্যক্তির যে মালিক আল্লাহর পথের মুসলিমদের জন্য তা’ পালে। এদেরকে সবুজ মাঠে রাখে। এসব ঘোড়া যখন আসে ও চারণ ভূমিতে সবুজ ঘাস খায়, তখন ওই (ঘাসের সংখ্যার সমান) সাওয়াব তার মালিক-এর জন্য লিখা হয়। এমনকি এদের গোবর ও পেশাবের পরিমাণও তার জন্য সাওয়াব হিসেবে লিখা হয়। সেই ঘোড়া রশি ছিঁড়ে যদি এক বা দু’টি ময়দান দৌড়ে ফিরে, তখন আল্লাহ তা’আলা এদের কদমের চিহ্ন ও গোবরের (যা দৌড়াবার সময় করে) সমান সাওয়াব তার জন্য লিখে দেন। এসব ঘোড়াকে পানি পান করাবার জন্য নদীর কাছে নেয়া হয়, আর এরা নদী হতে পানি পান করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা ঘোড়াগুলোর পান করা পানির পরিমাণ সাওয়াব ওই ব্যক্তির জন্য লিখে দেন। যদি মালিক-এর পানি পান করাবার ইচ্ছা নাও থাকে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! গাধার ব্যাপারে কি হুকুম? তিনি বললেন গাধার ব্যাপারে আমার ওপর কোন হুকুম নাযিল হয়নি। সকল নেক কাজের ব্যাপারে এ আয়াতটিই যথেষ্ট ’’যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ নেক ’আমল করবে তা সে দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ বদ ’আমল করবে তাও সে দেখতে পাবে’’- (সূরাহ্ আয্ যিলযাল ৯৯: ৭-৮)। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وجبينه وظهره كلما بردت أُعِيدَتْ لَهُ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْإِبِلُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلْبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَت لَا يفقد مِنْهَا فصيلا وَاحِدًا تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أولاها رد عَلَيْهِ أخراها فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّار» قيل: يَا رَسُول الله فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ بَقْرٍ وَلَا غَنَمٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ وَلَا جَلْحَاءُ وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطِحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» . قِيلَ: يَا رَسُول الله فالخيل؟ قَالَ: الْخَيل ثَلَاثَةٌ: هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ. فَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الْإِسْلَامِ فَهِيَ لَهُ وِزْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي لَهُ سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللَّهِ فِي ظُهُورِهَا وَلَا رِقَابِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ الله لأهل الْإِسْلَام فِي مرج أَو رَوْضَة فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ الْمَرْجِ أَوِ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلَا تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا وأوراثها حَسَنَاتٍ وَلَا مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَا يُرِيدُ أَنْ يَسْقِيَهَا إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْحُمُرُ؟ قَالَ: مَا أُنْزِلَ عَلَيَّ فِي الْحُمُرِ شَيْءٌ إِلَّا هَذِهِ الْآيَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ (فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ)
الزلزلة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীস হতে প্রমাণ হয় যে, স্বর্ণ ও রূপা যাকাত আদায় না করে জমা করে রাখলে, উক্ত মাল জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে মালিক-এর ললাটে, পার্শ্বদেশসমূহ এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে। অন্যান্য অঙ্গ থেকে এ তিনটি অঙ্গকে উল্লেখ করার কারণ হল, চেহারায় দাগ দিলে অধিক কদর্য দেখায় আর পার্শ্বদেশ এবং পিঠে দাগ দিলে অধিক ব্যথা অনুভূত হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, কারণ একজন ভিক্ষুক কোন কৃপণের নিকট চাইলে সর্বপ্রথম তার চেহারায় বিরক্তি, অপছন্দের ভাব পরিস্ফুটিত হয়, তার কপালে ভাজ পড়ে। আবার তাই চাইলে তার থেকে পার্শ্বদেশ পরিবর্তন করে। পুনরায় চাইতে গেলে সে তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যায়। এজন্য এ তিনটি অঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্-এ ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াতে এরই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতের অর্থঃ ‘‘হে মু’মিনগণ! অধিকাংশ ‘আলিম ও ধর্মযাজকগণ মানুষের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। আর তারা আল্লাহর রাস্তা হতে (মানুষকে) বাধা দেয়।
যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে আর তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, (হে নাবী!) আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক এক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
যেদিন জাহান্নামের আগুনে ঐগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর তা দ্বারা তাদের ললাটসমূহে, পার্শ্বদেশসমূহ এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে, (আর বলা হবে) এটা হচ্ছে ওটাই যা তোমরা নিজেদের জন্যে সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ করো।’
এভাবে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত তার ‘আযাব হতে থাকবে। অতঃপর হয় তার রাস্তা জান্নাত না হয় জাহান্নাম। এভাবে অন্য মালেও একই হুকুম জারি হবে।
হাদীসে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনকে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান বলা হয়েছে যা মূলত কাফিরদের ওপর। আর পাপীদের ওপর তাদের পাপানুপাতে দীর্ঘায়িত হবে। কিন্তু পরিপূর্ণ মু’মিনদের জন্য দিনটি ফাজরের (ফজরের) দুই রাক্‘আত সালাতের মতো দীর্ঘ মনে হবে। অর্থাৎ তাদের জন্য নির্দিষ্ট দিনটি কঠিন হবে না যেমনটি কাফিরদের জন্য।
আলওয়ালী আল ‘ইরাক্বী বলেন, مَرَجٌ হল উদ্ভিদ বা ঘাস বিশিষ্ট সেই প্রশস্ত ভূখন্ড যেখানে চতুষ্পদ জন্তু চরে বেড়ায় ইচ্ছামত যাতায়াত করতে পারে। আর رَوْضَةٌ (বাগান) হল অধিক পানি বিশিষ্ট স্থান যেখানে পর্যাপ্ত পানি থাকায় গোলাপ ফুলসহ আরো নানা ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। উভয়টির মাঝে পার্থক্য হল মারাজকে চতুষ্পদ জন্তু চরার জন্য প্রস্ত্তত করা হয় আর رَوْضَةٌ কে মানুষের বিনোদনের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৪-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে ঐ ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করেনি, সে ধন-সম্পদকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন টাকমাথা সাপে পরিণত হবে। এ সাপের দু’ চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে (অর্থাৎ বিষাক্ত সাপ)। এরপর ঐ সাপ গলার মালা হয়ে ব্যক্তির দু’ চোয়াল আঁকড়ে ধরে বলবে, আমিই তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত ধন-সম্পদ। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, অর্থাৎ ’’যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে এটা তাদের জন্য উত্তম বরং তা তাদের জন্য মন্দ। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন অচিরেই যা নিয়ে তারা কৃপণতা করছে তা তাদের গলার বেড়ী করে পরিয়ে দেয়া হবে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৮০) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (বুখারী)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَأْخُذ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي بشدقيه - يَقُولُ: أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ . ثُمَّ تَلَا هَذِه الْآيَة: (وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ من فَضله)
إِلَى آخر الْآيَة. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: যাদের আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দিয়েছেন অথচ যাকাত আদায় করে না, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিবস উক্ত সম্পদ বিষধর সাপে পরিণত হবে। সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান-এর ১৮০ নং আয়াতে এরই অর্থ বহন করে। বাদর (বদর) আদ দিমামীনী বলেন, شُجَاعٌ হল পুরুষ সর্প। কেউ কেউ বলেছেন, শুজা' মরুভূমির এমন সাপ যা লেজের ওপর দন্ডায়মান হয়ে অশ্বারোহী এবং পদাতিক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। আবার কখনো কখনো তা অশ্বারোহীর মাথা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। উক্ত সাপের মাথায় টাক পড়া থাকবে বয়স দীর্ঘ হওয়ার কারণে। কেউ বলেন, তার মাথায় চুল থাকবে না। আর চরম বিষের কারণে মাথার চামড়া বিলীন হয়ে যাবে। তার মাথায় দু’টি নোকতা থাকবে যা মালিকের গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সে তাকে আঁকড়ে ধরে বলবে, ‘‘আমি তোমার মাল। এ কথা বলার উপকারিতা হল তার অনুশোচনা এবং শাস্তি বৃদ্ধি করা, যেহেতু যে বিষয়ের যে কল্যাণের আশা করত তা তার নিকট অকল্যাণ হিসেবে এসেছে। তাই তার অনুশোচনা, চিন্তা বৃদ্ধি পাবে।
মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, সে সাপ থেকে পলায়নরত অবস্থায় যেখানেই যাবে সেখানেই সাপ তার পিছু নিবে। অবশেষে যখন সে দেখবে যে সাপ তার পিছু ছাড়বে না তখন সে তার মুখে হাত প্রবেশ করাবে। ফলে সাপ তার হাতকে চাবাবে যেমনটি উট চাবায়। আর ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় রয়েছে, হাত থেকে শুরু করে শরীর চিবাবে।
সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান এর ১৮০ নং এবং সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্-এর ৩৪ নং আয়াতের মাঝে কোন প্রকার বৈপরীত্য নেই, কারণ এটি খুব করে সম্ভব যে আল্লাহ তার কিছু প্রকারের সম্পদকে বেড়ি বানিয়ে গলায় পরাবেন আর কয়েক প্রকার দিকে দাগ দিবেন। অথবা একবার এই প্রকারের শান্তিত দিবেন আর একবার সেই প্রকারের শাস্তি দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৫-[৪] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির উট, গরু ও ছাগল থাকবে, আর সে এসবের হক (যাকাত) আদায় করবে না। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এসব জন্তু খুব তরতাজা মোটাসোটা করে আনা হবে এবং তারা তাদের পা দিয়ে তাকে পিষবে। তাদের শিং দিয়ে গুতোবে। শেষ দলটি পিষে চলে যাবার পর আবার প্রথম দলটি আসবে হিসাব-নিকাশ হওয়া পর্যন্ত (এভাবে চলতে থাকবে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا مِنْ رَجُلٍ يَكُونُ لَهُ إِبِلٌ أَوْ بَقَرٌ أَوْ غَنَمٌ لَا يُؤَدِّي حَقَّهَا إِلَّا أَتَى بِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أعظم مَا يكون وَأَسْمَنَهُ تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَنْطِحُهُ بِقُرُونِهَا كُلَّمَا جَازَتْ أُخْرَاهَا رُدَّتْ عَلَيْهِ أُولَاهَا حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاس»
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তির গরু বা ছাগল আছে যার যাকাত আদায় করে না তা নিয়ে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিবসে বেশী বড় ও মোটা হয়ে তার মালিক-কে পায়ের খুর দিয়ে আঘাত করতে থাকবে। যখন অতিক্রম শেষ হবে তখন আবারো প্রথম হতে খুরের আঘাত আরম্ভ করা হবে।
এরূপ শাস্তি ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিবস বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। خُفٌّ (খুফ) বলা হয় উটের খুরকে। ظِلْفٌ (যিলফ) বলা হয় গরু, ছাগল এবং হরিণের খুরকে। حَافِرٌ (হা-ফির) বলা হয় ঘোড়া, গাধা এবং খচ্চরের খুরকে। قُرْنٌ (কুরন) বলা হয় গরু এবং ছাগলের খুরকে। আর মানুষের পায়ের পাতাকে বলা হয় قَدَمٌ (ক্বাদাম)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৬-[৫] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকাত আদায়কারী যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায় করতে আসে তখন যেন তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে (যাকাত উসূল করে) ফিরে যায়। আর তোমরাও যেন সন্তুষ্ট ও খুশী থাকো। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا أَتَاكُمُ الْمُصَدِّقُ فَلْيَصْدُرْ عَنْكُمْ وَهُوَ عَنْكُمْ رَاضٍ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস হতে প্রমাণ হয় যে, যাকাত আদায়কারীকে যাকাত আদায় করার ব্যাপারে পূর্ণ সাহায্য করতে হবে ও তার সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। যাতে সে তাদের কাছ থেকে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যায়। আর আবূ দাঊদ-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! যদিও আদায়কারীরা যুলম করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, যদিও তারা যুলম করে তবুও তাদেরকে খুশি করে বিদায় দাও।
ক্বাযী ‘আয়ায বলেন, মূলত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে নেতার আনুগত্য এবং তার বিরোধিতা না করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, হাদীসের উদ্দেশ্য হল, সৌভাগ্যের ওয়াসিয়্যাত করা, নেতার আনুগত্য করা, তার প্রতি সদ্ব্যবহার করা, মুসলিমদের ঐক্য ধরে রাখা এবং তাদের পারস্পরিক বিষয়ের সংশোধন করা।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৭-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ক্বওম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাদের যাকাত নিয়ে এলে তিনি বলতেন, ’’আল্ল-হুম্মা স-ল্লি ’আলা- আ-লি ফুলা-ন’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! অমুকের ওপর রহমত বর্ষণ করো)। আমার পিতাও যখন তার নিকট যাকাত নিয়ে এলেন তিনি বললেন, ’’আল্ল-হুম্মা সল্লি ’আলা- আ-লি আবী আওফা’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবূ আওফা ও তার বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করো)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যখন কোন ব্যক্তি তার নিজের যাকাত নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন, তিনি বলতেন, اَللّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ ’’হে আল্লাহ! এ ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষণ করো।’’
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَاهُ قَوْمٌ بِصَدَقَتِهِمْ قَالَ: «اللَّهُمَّ صلى على آل فلَان» . فَأَتَاهُ أبي بِصَدَقَتِهِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ صلى الله على آل أبي أوفى»
وَفِي رِوَايَة: إِذا أَتَى الرجل النَّبِي بِصَدَقَتِهِ قَالَ: «اللَّهُمَّ صلي عَلَيْهِ»
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ক্বওম বা ব্যক্তি যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) নিয়ে এলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য দু‘আ করতেন। যেমন- বর্ণিত হাদীসে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ আওফা-এর পরিবারের জন্য দু‘আ করেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু‘আ করতেন সূরাহ্ আত্ তাওবার ১০৩ নং আয়াতের উপর ‘আমল করার জন্য সেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তুমি তাদের মাল হতে যাকাত গ্রহণ কর এবং তাদের জন্য দু‘আ কর। কেননা তোমার দু‘আ তাদের অন্তরের প্রশান্তি।’’
হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সদাক্বার মাল গ্রহীতার জন্য মুস্তাহাব হল সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দাতার জন্য দু‘আ করা। আহলে যাহের সহ আরো অনেক সূরা আত্ তাওবার ১০৩ নং আয়াতের আলোকে বলেছেন যে দু‘আ করা ওয়াজিব। তবে এ আবশ্যকতাটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট।
হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, নাবীগণ ব্যতীত স্বতন্ত্রভাবে অন্য কোন ব্যক্তির صلاة (সালাত) শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা বৈধ এবং সদাক্বাহ্ (সাদাকা) গ্রহীতা সদাক্বাদাতার জন্য এ দু‘আ করতে পারে। এটি ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর অভিমত। তাদের ভাষ্যমতে এখানে صلاة দ্বারা উদ্দেশ্য দু‘আ, বারাকাত কামনা, সম্মান বা মর্যাদা কামনা নয়। ইমাম বুখারী (রহঃ) ও সাধারণভাবে তা বৈধ বলে মনে করেন। আর ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, নাবী-রসূলগণ ব্যতীত অন্য কারো জন্য স্বতন্ত্রভাবে সালাত আদায় করা বৈধ নয় তবে তাবি‘ঈন বা নাবী-রসূলগণের পরে সকলের উপরে কারো নাম আসলে সেক্ষেত্রে তাদের সালাত আদায় করা জায়িয।
ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) বলেন, পছন্দনীয় অভিমত হল, নাবীগণ ফেরেশতাগণ, নাবী-পত্নীগণ, নাবী-বংশধর, সন্তান-সন্ততি এবং আনুগত্যশীল ব্যক্তিদের ওপর সাধারণভাবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা যায়। আর নাবীগণ ব্যতীত অন্য কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা অপছন্দনীয়। বিষয়টির সারাংশ হল আল্লাহ এবং আল্লারহ রাসূলের ক্ষেত্রে যে কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য صلاة শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা বৈধ। যেমনটি বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। আর আল্লাহ এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে কারো জন্য صلاة শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা বৈধ নয়। তবে তাব্‘আন (অনুসৃত) জায়িয।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়ের জন্য ’উমার (রাঃ)-কে পাঠালেন। কেউ এসে খবর দিলো যে, ইবনু জামিল, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ আর ’আব্বাস (রাঃ)যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইবনু জামিল এজন্য যাকাত দিতে অস্বীকার করেছেন যে, (প্রথম দিকে) গরীব ছিল। এরপর আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাকে সম্পদশালী করেছেন। আর খালিদ ইবনু ওয়ালীদ-এর ব্যাপার হলো, তোমরা তার ওপর যুলম্ করছ। সে তো তার যুদ্ধসামগ্রী আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিয়েছে (কাজেই তোমরা তার শুধু এ বছরই নয় বরং) এ রকম (আগামী বছর)ও। এরপর থাকে ’আব্বাস-এর বিষয়। তার এ বছরের যাকাত এবং এর সমপরিমাণ আমার দায়িত্বে। অতঃপর তিনি বললেন, হে ’উমার! তুমি কি জানো না কোন ব্যক্তির চাচা তার পিতার মতই। (বুখারী, মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَن أَبِي هُرَيْرَةَ. قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُمَرَ عَلَى الصَّدَقَةِ. فَقِيلَ: مَنَعَ ابْنُ جَمِيلٍ وَخَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ وَالْعَبَّاسُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا يَنْقِمُ ابْنُ جَمِيلٍ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ فَقِيرًا فَأَغْنَاهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ. وَأَمَّا خَالِدٌ فَإِنَّكُمْ تَظْلِمُونَ خَالِدًا. قَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. وَأَمَّا الْعَبَّاسُ فَهِيَ عَلَيَّ. وَمِثْلُهَا مَعَهَا» . ثُمَّ قَالَ: «يَا عُمَرُ أَمَا شَعَرْتَ أَن عَم الرجل صنوا أَبِيه؟»
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমার (রাঃ)-কে আমেল হিসেবে ফরয যাকাত আদায় করতে পাঠান। তাঁকে বলা হলো যে, ইবনু জামিল, খালিদ ইবনু ওয়ালীদ এবং ‘আব্বাস যাকাত আদায় করতে অস্বীকার করেছেন। অথচ তারা সাহাবী।
ইবনু জামিল-এর ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে গরীব ছিল পরে আল্লাহ তাকে ধনী বানিয়েছেন ফলে এর প্রতিশোধ গ্রহণকল্পে সে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু এটি প্রতিশোধ গ্রহণ করার মত কোন বিষয় নয়। অথবা সে মূলত কোন প্রকার অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেনি। তাই তার উচিত আল্লাহ তা‘আলা তাকে যা দিয়েছেন তার যাকাত দেয়া এবং নি‘আমাতের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন না করা।
খালিদ-এর ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘সে তার বর্মসমূহ এবং যুদ্ধাস্ত্রগুলো আল্লাহর পথে জমা করে রেখেছে।’’ কয়েকভাবে এ উক্তির ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
প্রথমতঃ যাকাত আদায়কারীগণ খালিদ-এর জমাকৃত বর্ম এবং যুদ্ধাস্ত্রের অর্থের যাকাত চাইলে এই ধারণায় যে তা ব্যবসার জন্য গচ্ছিত আছে যাতে যাকাত আবশ্যক। কিন্তু খালিদ তাদের বললেন, এতে তো যাকাত আবশ্যক নয়। তাই তারা এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বললেন, তোমরাতো তার প্রতি অবিচার করেছো। কারণ সে তো তা জমা করে আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করে দিয়েছে। ফলে তাতে যাকাত আবশ্যক হয় না।
দ্বিতীয়তঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ-এর পক্ষ থেকে ওজর পেশ করেছেন এবং প্রত্যুত্তর করেছেন যে, খালিদ-এর ওপর যাকাত আবশ্যক হলে সে তা দিতে অস্বীকার করবে না। কেননা সে তো আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তার বর্ম এবং অস্ত্রগুলো আল্লাহর পথে জমা দিয়ে দিয়েছে যা তার প্রতি আবশ্যক ছিল না।
ফলে কিভাবে সে ফরয সদাক্বাহ্ (সাদাকা) প্রদানে অস্বীকৃতি জানাবে।
আর ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, ‘‘তার যাকাতের জামিন আমি এবং তার সাথে তার সমপরিমাণ এর অর্থ কয়েকটি হতে পারে।’’
প্রথমতঃ ‘আব্বাস (রাঃ)-এর প্রয়োজনের তাকিদে তিনি তার দু’ বছরের যাকাত বিলম্বিত করে নিজে তা আদায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেমনটি আবূ ‘উবায়দাহ্ বলেছেন।
দ্বিতীয়তঃ ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্তমান এবং আগামী দু’ বছরের অগ্রিম সদাক্বাহ্/যাকাত প্রদান করেছেন। ফলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আব্বাস-এর দুই বছরের সদাক্বাহ্ (সাদাকা) যা আমার কাছে রয়েছে আমি তা দিয়ে দিব।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৯-[৮] আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের ইবনুল লুত্বিয়াহ্ নামক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার জন্য কর্মকর্তা নিযুক্ত করলেন। সে (যাকাত উসূল করে) মদীনায় ফিরে এসে (মুসলিমদের নিকট) বলতে লাগল, এ পরিমাণ সম্পদ তোমাদের (যাকাত হিসেবে উসূল হয়েছে, তোমরা এর হকদার)। আর এ পরিমাণ সম্পদ তুহফা হিসেবে আমাকে দেয়া হয়েছে (এটা আমার হক)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এসব কথা শুনে) লোকদের উদ্দেশে হামদ ও সানা পড়ে খুতবাহ্ দিলেন। তিনি (খুতবায়) বললেন, তোমাদের কিছু লোককে আমি ওসব কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছি যেসব কাজের জন্য আল্লাহ আমাকে হাকিম বানিয়েছেন। এখন তোমাদের এক ব্যক্তি এসে বলছে, এটা (যাকাত) তোমাদের জন্য, আর এটা হাদিয়্যাহ্। এ হাদিয়্যাহ্ আমাকে দেয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করো, সে ব্যক্তি তার পিতা অথবা মাতার বাড়ীতে বসে রইল না কেন? তখন সে দেখতো (তুহফা দানকারীরা) তাকে তার বাড়ীতেই তুহফা পৌঁছে দিয়ে যেত কিনা?
ঐ মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন। তোমাদের যে ব্যক্তি যে কোন জিনিস তদ্রূপ করবে তা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার গর্দানের উপর বহন করে নিয়ে আসবে। যদি তা উট হয় তাহলে তার আওয়াজ উটের আওয়াজ হবে। যদি তা গরু হয় তাহলে তার আওয়াজ গরুর আওয়াজ হবে। যদি তা বকরী হয় তাহলে বকরীর আওয়াজ হবে। (অর্থাৎ দুনিয়ায় কোন জিনিস অন্যায়ভাবে গ্রহণ করলে, তা কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে কথা বলতে থাকবে)। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দু’ হাত এতো উপরে উঠালেন যে, আমরা তার বগলের নীচের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি মানুষের কাছে কি তা পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি (তোমার কথা) কি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি? (বুখারী, মুসলিম)[1]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ’’তাকে জিজ্ঞেস করো, সে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার বাড়ীতে বসে থাকল না কেন? তখন সে দেখত তুহফা তার বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে যায় কিনা?’’ এ সম্পর্কে খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, এ বাণী এ কথারই দলীল যে, কোন হারাম কাজের জন্য যে জিনিসকে উপায় বা ওয়াসিলা বানানো হয় সে উপায়ে বা ওয়াসিলাও হারাম। আরো বলা যায়, কোন একটি ব্যাপারকে অন্য কোন ব্যাপারের সাথে (যেমন- বেচাকেনা, বিয়ে-শাদী ইত্যাদি) সম্পর্কিত করলে দেখতে হবে, সে ব্যাপারগুলোর কোন পৃথক পৃথক হুকুম এদের এক সাথে সম্পর্কিত হুকুমের সদৃশ কি-না। হলে তা জায়িয। আর না হলে না জায়িয। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَن أبي حميد السَّاعِدِيّ: اسْتَعْمَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنَ الأزد يُقَال لَهُ ابْن اللتبية الأتبية عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ: هَذَا لَكُمْ وَهَذَا أُهْدِيَ لِي فَخَطَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأثْنى عَلَيْهِ وَقَالَ: أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَسْتَعْمِلُ رِجَالًا مِنْكُمْ عَلَى أُمُور مِمَّا ولاني الله فَيَأْتِي أحدكُم فَيَقُول: هَذَا لكم وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِي فَهَلَّا جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ أَوْ بَيْتِ أُمِّهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى لَهُ أَمْ لَا؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْهُ شَيْئًا إِلَّا جَاءَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَحْمِلُهُ عَلَى رَقَبَتِهِ إِنْ كَانَ بَعِيرًا لَهُ رُغَاءٌ أَوْ بَقْرًا لَهُ خُوَارٌ أَوْ شَاة تَيْعر ثمَّ رفع يَدَيْهِ حَتَّى رَأينَا عفرتي إِبِطَيْهِ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَل بلغت» . . قَالَ الْخَطَّابِيُّ: وَفِي قَوْلِهِ: «هَلَّا جَلَسَ فِي بَيْتِ أُمِّهِ أَوْ أَبِيهِ فَيَنْظُرُ أَيُهْدَى إِلَيْهِ أَمْ لَا؟» دَلِيلٌ عَلَى أَنَّ كُلَّ أَمْرٍ يُتَذَرَّعُ بِهِ إِلَى مَحْظُورٍ فَهُوَ مَحْظُورٌ وَكُلُّ دخل فِي الْعُقُودِ يُنْظَرُ هَلْ يَكُونُ حُكْمُهُ عِنْدَ الِانْفِرَادِ كَحُكْمِهِ عِنْدَ الِاقْتِرَانِ أَمْ لَا؟ هَكَذَا فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় যে, যাকাত আদায় করার সময় কোন প্রকার হাদিয়্যাহ্ গ্রহণ করা জায়িয নয়। প্রকৃতপক্ষে এ হুকুম সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা এরূপ হাদিয়্যাহ্ বা ঘুষ গ্রহণ করবে ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনে উক্ত হাদিয়্যার মাল কাঁধে করে বহন করবে। উক্ত লোকটি কে ছিলেন তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ইয়ামানের আযদ গোত্রের। আবার কেউ কেউ বলেন, আসাদ গোত্রের। কোন কোন বর্ণনায় আছে, বানী আসাদ। কেউ কেউ বলেন, উক্ত গোত্রের নাম আযদও বলা হয় এবং আসাদও বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, তার নাম ইবনু লুতবিয়্যাহ্। হাফিয ইবনু হাজার বলেন যে, আমি তার নাম সম্পর্কে অবহিত হয়নি।
এ হাদীস থেকে কতগুলো উপকারিতা পাওয়া যায়। যথাঃ ১. ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীস থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যাকাত আদায়কারীদের গ্রহণকৃত উপঢৌকন হারাম এবং তা আমানাতের খিয়ানত।
২. যাকাত আদায়কারী আমানতদার ব্যক্তিকে আত্মসমালোচনা করতে হবে। কেননা এটি তার আমানাতকে সঠিক ভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
৩. যাকাত আদায়কারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকনসমূহ বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত হবে। যাকাত আদায়কারী তার স্বত্বাধিকারী হবে না যদি না নেতা সন্তুষ্ট চিত্তে তা তাকে দেন।
৪. কোন ব্যক্তি পক্ষপাতমূলকভাবে কোন সম্পদ গ্রহণের জন্য যে সব পথ অবলম্বন করে তা বাতিল।
৫. যে ব্যক্তি কোন ব্যাখ্যা জানতে পারবে যা কেউ গ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তার ভুলটি মানুষদের মাঝে বর্ণনা করে দিবে, যাতে তারা এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে সতর্ক হতে পারে।
৬. ভুলকারীকে ধমক/শাসন করা বৈধ এবং নেতৃত্ব, আমানাত রক্ষার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যক্তির বিদ্যমানে তার চেয়ে নিচু স্তরের লোক নিয়োগ দেয়া বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৮০-[৯] ’আদী ইবনু ’উমায়রাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাউকে কোন কাজের জন্য (যাকাত ইত্যাদি উসূল করার জন্য) নিয়োগ করলে, সে যদি একটি সূঁচ সমান অথবা এর চেয়ে ছোট বড় কোন জিনিস গোপন করে তা খিয়ানাত হবে। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তা (লাঞ্ছনা সহকারে) আনা হবে। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ عَدِيِّ بْنِ عُمَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُم على عمل فَكَتَمَنَا مِخْيَطًا فَمَا فَوْقَهُ كَانَ غُلُولًا يَأْتِي بِهِ يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: যাকাত আদায়কারীদের উচিত হবে যে, আদায়কৃত সকল মাল ছোট হোক আর বড় হোক আদায় করে দিবে। যদি কিছু গোপন করে তবে তা হবে খিয়ানাত ও হারাম।
অত্র হাদীসে যাকাত আদায়কারীদের আমানাত রক্ষার উপর উৎসাহিত করা হয়েছে এবং নগণ্য বস্ত্ত হলেও তার খিয়ানাত করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। আর মুসলিমরা সকলেই একমত যে, আমানাতের খিয়ানাত করা হারাম যা কাবীরা গুনাহও বটে। আর কেউ যদি তা করে তাহলে তাকে তা ফেরত দিতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮১-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত, وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ অর্থাৎ ’’যেসব লোক সোনা-রূপা জমা করে রাখে’’- (সূরাহ্ আত্ তওবা্ ৯: ৩৪) আয়াতের শেষ পর্যন্ত নাযিল হল তখন সাহাবীগণ চিন্তিত হয়ে পড়ল। ’উমার (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদের এ দুশ্চিন্তা নিরসন করে দিচ্ছি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন। তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! এ আয়াত তো আপনার সাথীদের জন্য ভারি বোঝা হয়েছে। (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা (সকল ব্যয় নির্বাহের পর) অবশিষ্ট মাল পবিত্র করার ব্যবস্থা স্বরূপ তোমাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। আল্লাহ তা’আলা এজন্যই ওয়ারিস ঠিক করে দিয়েছেন। এরপর তিনি এ বাক্য উল্লেখ করলেন, যেন তোমাদের পরবর্তীরা যাতে এ মালের মালিক হয়ে যায়। ’আব্বাস (রাঃ)বলেন, এ কথা শুনে ’উমার (রাঃ) ’আল্ল-হু আকবার’ বলে উঠলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’উমার (রাঃ) কে বললেন, আমি কি তোমাকে মানুষের সবচেয়ে উত্তম গচ্ছিত বস্তু সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হলো চরিত্রবান স্ত্রী। স্বামী যখন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে খুশী হয়ে যাবে, তাকে কোন হুকুম করলে পালন করবে, সে ঘরে না থাকলে তার ধন-সম্পদের সুরক্ষা করবে। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ)
كَبُرَ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ. فَقَالَ عُمَرُ أَنَا أُفَرِّجُ عَنْكُمْ فَانْطَلَقَ. فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ قد كبر على أَصْحَابك هَذِه الْآيَة. فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ لم يفْرض الزَّكَاة إِلَّا ليطيب بهَا مَا بَقِيَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ وَإِنَّمَا فَرَضَ الْمَوَارِيثَ وَذكر كلمة لتَكون لمن بعدكم» قَالَ فَكَبَّرَ عُمَرُ. ثُمَّ قَالَ لَهُ: «أَلَا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حفظته» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যখন সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্-র যাকাত সম্পর্কে ৩৪ নং আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর নাবী! এ আয়াতটি মুসলিমদের ওপর খুবই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকাতের সম্পদ পবিত্র করার জন্য ফরয করেছেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ উত্তম ধনভান্ডার হলো সতীনারী যে স্বামীর আনুগত্য করে।
ক্বাযী ‘আয়ায বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, যে মালের যাকাত আদায় করলে তা জমা করা/গচ্ছিত রাখায় কোন সমস্যা নেই এবং দেখলেন যে, তারা এতে খুশি হয়েছেন তখন তার থেকে বিরত রাখার এর চেয়ে অধিক উত্তম এবং স্থায়ী বিষয়ের সংবাদ দিলেন। আর তা হল একজন সত্বী সুন্দরী রমণী। কারণ স্বর্ণ/অর্থ সম্পদ মানুষের সাথে কিছু সময়ের জন্য থাকে কিন্তু একজন রমণী তার দুনিয়ার জীবনের সাথী যার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে তোমাকে আনন্দিত করে, প্রয়োজনের সময় তুমি তার মাধ্যমে তোমার যৌনবৃত্তি পূর্ণ কর, কোন গোপন বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করলে সে তোমার গোপনীয়তা সংরক্ষণ করে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তার সাহায্য চাইলে সে তোমার আনুগত্য করে। যখন তুমি তার থেকে অনুপস্থিত থাকো তখন সে তোমার সম্পদ সংরক্ষণ করে পরিবারের যত্ন নেয়। আর এত কিছু না হলেও সে তোমার একটি সন্তান জন্ম দেয় যে জীবতাবস্থায় তোমার সহকারী এবং মৃত্যুর পরে তোমার খলীফা হবে। অতএব, তার অনেক ফযীলত রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮২-[১১] জাবির (রাঃ) ইবনু ’আতীক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে একটি ছোট কাফিলা (যাকাত আদায়কারী প্রশাসক) আসবেন। এরা লোকদের কাছে অযাচিত বিবেচিত হবে। তাই যখন তারা তোমাদের কাছে আসবে তখন স্বাগত জানাবে। তাদের কাছে যাকাতের মাল এনে জমা করবে। যদি তারা যাকাত উসূলে ইনসাফ করে তা তাদের উপকার করবে। আর যদি যুলম করে তাহলে তার পরিণাম ভোগ করবে। তোমরা যাকাত উসূলকারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখবে। তোমাদের সকল সম্পদের যাকাত আদায় করাই হবে তাদের সন্তুষ্টির কারণ। যাকাত আদায়কারীদের উচিত হবে তোমাদের জন্য দু’আ করা। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
عَن جَابِرِ بْنِ عَتِيكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَيَأْتِيكُمْ رُكَيْبٌ مُبَغَّضُونَ فَإِذا جاؤكم فَرَحِّبُوا بِهِمْ وَخَلُّوا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَبْتَغُونَ فَإِنْ عَدَلُوا فَلِأَنْفُسِهِمْ وَإِنْ ظَلَمُوا فَعَلَيْهِمْ وَأَرْضُوهُمْ فَإِنَّ تَمَامَ زَكَاتِكُمْ رِضَاهُمْ وَلْيَدْعُوا لَكُمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসের অর্থ হল, কিছু যাকাত আদায়কারীদের চরিত্র ভাল হবে না। তারা অহংকারী হবে। তাদের সাথে তোমরা ভাল ব্যবহার করবে। তাদের প্রয়োজন মিটাতে সাহায্য করবে। তারা ইনসাফ করলে তাদেরই কল্যাণ। আর যুলম করলে তাদের ওপর পাপ বর্তাবে। তোমরা যাকাত প্রদান করে তাদেরকে খুশি করে বিদায় দিবে, যাতে তারা তোমাদের জন্য দু‘আ করে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৩-[১২] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) গ্রাম্য ’আরবদের কিছু লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তারা জানান যে, যাকাত আদায়কারী কিছু লোক তাদের কাছে যায় এবং তারা তাদের ওপর যুলম করে। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদেরকে খুশী রাখো। তোমাদের সাথে যুলম করলেও তাদের খুশী করো। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
عَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: جَاءَ نَاسٌ يَعْنِي مِنَ الْأَعْرَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: إِنَّ نَاسًا مِنَ المصدقين يَأْتُونَا فيظلمونا قَالَ: فَقَالَ: «أَرْضُوا مُصَدِّقِيكُمْ وَإِنْ ظُلِمْتُمْ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকেও বুঝা যায় যে, যাকাত আদায়কারীগণ যদি মালদারদের উপর যুলম করে তবুও তাদের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। কারণ তাদের সন্তুষ্টির উপর যাকাত আদায়ের পূর্ণতা বহন করে। আর তাদের যুলমের জন্য তারাই দায়ী হবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘তোমরা তোমাদের যাকাত আদায়কারীদের সন্তুষ্ট করবে যদিও তোমরা অত্যারিত হত’’ এর অর্থ যদি তোমাদের বিশ্বাস এটি হয় যে, তোমরা সম্পদের ভালবাসার কারণে অত্যাচারিত। তাঁর উদ্দেশ্য এটি নয় যে, তোমরা বাস্তবিক অত্যাচারিত হলেও তাদেরকে সন্তুষ্ট করা আবশ্যক বরং উদ্দেশ্য হল তাদেরকে সন্তুষ্ট করা মুস্তাহাব যদি তারা বাস্তবিক অত্যাচারিত হয়। যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাদের সন্তুষ্টিই তোমাদের যাকাতে পূর্ণতা।
আল্লামা সিনদী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানেন যে, যাকাত আদায়কারী কর্মচারীগণ অত্যাচার করবে না। কিন্তু সম্পদের মালিকগণ সম্পদের প্রতি আসক্তির কারণে সম্পদ গ্রহণ করাকে যুলম মনে করে। ফলে তাদের যা বলার বলেছেন। ফলে এ হাদীসে যাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের অত্যাচারের স্বীকৃতি, মানুষের সেই অত্যাচারের উপর ধৈর্যধারণ করতে হবে এ বিষয়ের স্বীকৃতি কিংবা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ যাকাতের অতিরিক্ত যাকাত দিতে হবে এ ধরনের কোন বিষয় নেই।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৪-[১৩] বাশীর ইবনুল খাসাসিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সবিনয়ে জানালাম যে, যাকাত আদায়কারীরা যাকাতের ব্যাপারে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করে। (এ অবস্থায়) পরিমাণের চেয়ে যে মাল তারা বেশী নেয়, আমরা কি তা গোপন রাখতে পারি? তিনি বললেন, না। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
وَعَنْ بَشِيرِ بْنِ الْخَصَاصِيَّةِ قَالَ: قُلْنَا: أَنَّ أَهْلَ الصَّدَقَةِ يَعْتَدُونَ عَلَيْنَا أَفَنَكْتُمُ مِنْ أَمْوَالِنَا بِقَدْرِ مَا يَعْتَدُونَ؟ قَالَ: «لَا» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: যাকাত আদায়কারীরা যদি সীমালঙ্ঘন করে তবুও যাকাতের মাল গোপন করা ঠিক নয়। অর্থাৎ যদি আমরা জানতে পারি যে, তারা পাঁচটি উটে দু’টি ছাগল নিবে। অথচ তাদের হক হলো একটি ছাগল। সুতরাং আমাদের দশটি উট থাকলে পাঁচটি উট গোপন করব। মোটকথা এরূপ জায়িয নয়। কারণ কিচু মাল গোপন করা আমানাতের খিয়ানাত করা। আর খিয়ানাত হল একটি মিথ্যা এবং চক্রান্তমূলক কর্ম যা হারাম। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের অনুমতি দেননি।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৫-[১৪] রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে প্রশাসক যথাযথভাবে যাকাত উসূল করে সে গাযীর মতো যতক্ষণ না সে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে। (আবূ দাঊদ ও (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
وَعَن رَافع بن خديح قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَامِلُ عَلَى الصَّدَقَةِ بِالْحَقِّ كَالْغَازِي فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى بَيْتِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, হকভাবে যাকাত আদায় করা জিহাদে শরীক হওয়ার ন্যায় নেকীর কাজ। যতক্ষণ না ঐ যাকাত আদায়কারী স্বীয় বাড়ীতে ফিরে আসে ততক্ষণ সে নেকী পেতেই থাকে। যেমনিভাবে জিহাদকারীর ব্যাপারে প্রমাণ আছে।
হকভাবে যাকাত আদায় করার অর্থ হলো, নিষ্ঠা এবং সাওয়াবের আশায় সে কর্ম করা অথবা আদায়কৃত যাকাতের মালের মধ্যে খিয়ানাত না করা, সম্পদের মালিকদের উপর অত্যাচার না করা কম বেশি সম্পদ গ্রহণের মাধ্যমে।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় তিরমিযীর ভাষ্যকার ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মহান দাতা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদের বাহন প্রস্ত্তত করে দিল সে জিহাদে অংশগ্রহণকারীর সমান নেকীর অধিকারী হল, আর যে উত্তম ভাবে মুজাহিদের পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ করল সেও মুজাহিদের সমপরিমাণ নেকী পেল। আর সদাক্বাহ্/যাকাত সংগ্রাহক মুজাহিদের প্রতিনিধি। কেননা সে আল্লাহর রাস্তায় মাল একত্রিত করে। অতএব সে তার কর্মে ও নিয়্যাতে গাজী।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই মাদানীয় কিছু লোক রয়েছে যারা (মদীনায় অবস্থান করেও) জিহাদের উদ্দেশে তোমরা সেখানেই গিয়েছে তোমাদের সাথে থেকেছে। কারণ ওযর তাদেরকে বন্দী করে রেখেছে। এটি যদি এদের অবস্থা হয় তাহলে যে ব্যক্তিকে গাজীর কাজ, তার প্রতিনিধিত্ব এবং সে আল্লাহর পথে যে মাল খরচ করে তার একত্রিতকরণ জিহাদের যাওয়া থেকে বিরত রাখে তার বিষয়টি কেমন হতে পারে। জিহাদ করা যেমন আবশ্যক তেমনি যাকাতের সম্পদ সংগ্রহ করাও আবশ্যক। এক্ষেত্রে তারা দু’জন নিয়্যাত এবং কর্মে পরস্পরের অংশীদার। তাই নেকীর ক্ষেত্রেও উভয়ে সমান হবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৬-[১৫] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যাকাত উসূলকারীর কাছে চতুষ্পদ পশুকে টেনে আনবে না। কিংবা চতুষ্পদ পশুর মালিকগণও দূরে সরে থাকবে না। এসব পশুর যাকাত তাদের অবস্থানে বসেই উসূল করবে। (আবূ দাঊদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا جَلَبَ وَلَا جَنَبَ وَلَا تُؤْخَذُ صَدَقَاتُهُمْ إِلَّا فِي دُورِهِمْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: যাকাত আদায়কারী যেন যাকাত আদায় করার সময় এক স্থানে বসে না থাকে। বরং লোকদের বাড়ী বাড়ী যেয়ে যাকাত আদায় করে। আবার মালওয়ালারা তাদের জানোয়ার (ছাগল, গরু ও উট) দূরে না নিয়ে গিয়ে আপন গৃহে অবস্থান করবে। যাতে যাকাত আদায়কারীদের কষ্ট না হয়। মোটকথা যাকাত সংগ্রাহক মানুষের গৃহে গিয়ে যাকাত সংগ্রহ করবে এবং যাকাত আদায়ের কাজে একে অপরকে সাহায্য করবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৭-[১৬] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন ধন-সম্পদ লাভ করবে, এক বছর অতিবাহিত হবার আগে এ ধন-সম্পদের উপর তাকে যাকাত দিতে হবে না। (তিরমিযী; একদল লোক বলেছেন, এ হাদীসটির সানাদ ইবনু ’উমার (রাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত নয়।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكَاة فِيهِ حَتَّى يحول عيه الْحَوْلُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَذَكَرَ جَمَاعَةٌ أَنَّهُمْ وَقَفُوهُ على ابْن عمر
ব্যাখ্যা: ইবনু মালিক বলেনঃ এ হাদীস হতে বুঝা যায়, যে ব্যক্তি কোন মাল অর্জন করল আর তার নিকট ঐ মালেরই নিসাব পরিমাণ মাল আছে, যেমন- তার ৮০টি ছাগল আছে। যার উপর ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। অতঃপর তার আরো ৪১টি ছাগল জমা হলো ক্রয়ের মাধ্যমে হোক বা ওয়ারিসী সূত্রে হোক, তাহলে পরের ৪১টি ছাগলের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না যতক্ষণ না ক্রয়ের সময় বা ওয়ারিসী সূত্রে পাওয়ার সময় থেকে একটি বৎসর পূর্ণ হবে। আর এটি ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদের মত।
পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইমাম মালিক-এর নিকট পরের মাল আগের মালের হিসাবের সঙ্গে একই হিসেবে গণ্য হবে। যেমন- বাচ্চা মায়ের অনুগামী হয়। সুতরাং এক বৎসর পূর্ণ হলে ৮০টির উপর ২টি ছাগল ওয়াজিব হবে। আর এটি আহলে হাদীসদের অভিমত। কারণ এক প্রকারের মাল হলে পরের মাল আগের মালের সাথে যোগ করতে হবে।
কোন বস্ত্তর বৃদ্ধি কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। হয় লভ্যাংশের মাধ্যমে তার বৃদ্ধি ঘটবে অথবা প্রাপ্ত কোন উপঢৌকন, মীরাসের সম্পত্তি এবং যাকাত দেয়া হয় না এমন ক্রয়কৃত মালের মাধ্যমে বৃদ্ধি ঘটবে। অথবা চতুষ্পদ জন্তুর প্রসবকৃত বাচ্চার মাধ্যমে বৃদ্ধি ঘটবে। বর্ধিত এই সম্পত্তিগুলো মূল মালের সাথে মিলানো এবং তার গণনার ক্ষেত্রে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়েছে।
লভ্যাংশের মাধ্যমে বর্ধিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে হুকুম হলো যদি মূল মাল নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে লভ্যাংশের মাধ্যমে বর্ধিত মালকে মূল মালের সাথে মিলিয়ে তার বছর অনুপাতে যাকাত দিতে হবে। (অর্থাৎ কারো নিকট পাঁচলক্ষ টাকা থেকে বছর শুরু হল, অতঃপর সাত মাস পর পঞ্চাশ হাজার টাকা লভ্যাংশ তার সাথে যোগ হল। তাই বছর শেষে সব টাকা হিসাব করে একসাথে যাকাত দিতে হবে। লভ্যাংশের মাধ্যমে বর্ধিত টাকার জন্য নতুনভাবে বছর গণনা করা যাবে না) আর যদি মূল মাল নিসাব পরিমাণ না হয় তাহলে লভ্যাংশের মাধ্যমে বর্ধিত মালের কোন যাকাত দেয়া লাগবে না।
চতুষ্পদ জন্তুর প্রসবকৃত বাচ্চার মাধ্যমে বর্ধিত হুকুম লভ্যাংশেল মাধ্যমে বর্ধিত হুকুমের ন্যায়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৮-[১৭] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) এক বছর পরিপূর্ণ হবার আগে নিজের যাকাত দিতে পারা যাবে কিনা ’আব্বাস (রাঃ)তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে অনুমতি দিলেন। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ الْعَبَّاسَ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي تَعْجِيل صَدَقَة قَبْلَ أَنْ تَحِلَّ: فَرَخَّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত আদায় করা জায়িয। এটি ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ ও ইমাম আবূ হানীফার মত। আর এটিই আহলে হাদীসদের মত। তবে ইমাম মালিক-এর নিকট জায়িয নয়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৮৯-[১৮] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, সাবধান! যে ব্যক্তি কোন ইয়াতীমের অভিভাবক হবে, (আর সে ইয়াতীমের যাকাত দেবার মতো ধন-সম্পদ হবে) সে যেন এ ধন-সম্পদকে ফেলে না রেখে ব্যবসায়ে খাটায়। কারণ ব্যবসা করা ছাড়া মাল আটকে রাখলে যাকাত দিতে দিতে তা শেষ হয়ে যাবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসের সানাদের ব্যাপারে কথা আছে। কারণ এর একজন বর্ণনাকারী দুর্বল।)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ: «أَلَا مَنْ وَلِيَ يَتِيمًا لَهُ مَالٌ فَلْيَتَّجِرْ فِيهِ وَلَا يَتْرُكْهُ حَتَّى تَأْكُلَهُ الصَّدَقَةُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: فِي إِسْنَادِهِ مقَال: لِأَن الْمثنى بن الصَّباح ضَعِيف
ব্যাখ্যা: শিশুর সম্পদে যাকাত ওয়াজিব কিনা এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ)-এর মতে শিশুর সম্পদে যাকাত ওয়াজিব যা এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান। ইমাম আবু হানীফার মতে, শিশুর সম্পদে যাকাত ওয়াজিব নয়। যদিও তার মতে শিশুর ফসল ফলফলাদিতে উশর আবশ্যক এবং তার সদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। তার দলীল হল তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে একজন হল শিশু যতক্ষণ সে প্রাপ্ত বয়সে না পৌঁছে।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেন, শিশু এবং পাগলের সম্পদে যাকাত আবশ্যক। যেহেতু তাদের মাঝে স্বাধীনতা, ইসলাম এবং পূর্ণ মালিকানা এ তিনটি শর্তই বিদ্যমান। এটিই সাহাবীদের মধ্যে ‘আলী, ইবনু ‘উমার, ‘আয়িশাহ্, হাসান, ‘উমার এবং জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আর অন্যদের মধ্যে জাবির ইবনু জায়দ, ইবনু সীরিন, ‘আত্বা, মুজাহিদ, রবী‘আহ্, মালিক, শাফি‘ঈ (রহঃ) সহ আরো অনেকের অভিমত। যদিও এক্ষেত্রে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে সামান্য ভিন্নমত বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সে আসারের সানাদ বিশুদ্ধ নয়। এ বিষয়ে তিরমিযীর ভাষ্যকার ‘আবদুর রহমান মুবারকপূরী বলেন, কোন একজন সাহাবী থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে এ কথা বর্ণিত হয়নি যে, শিশুর মালে যাকাত আবশ্যক নয়।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৯০-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)খলীফাহ্ হন তখন ’আরাবের কিছু লোক যাকাত প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়। (আবূ বকর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুনে) ’উমার (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, মানুষ যে পর্যন্ত ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই- এ কথার) ঘোষণা না দিবে ততক্ষণ তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যে ব্যক্তি ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ বলল সে নিজের ধন-সম্পদ ও জীবন আমার থেকে নিরাপদ করে নিলো। তবে ইসলামের কারণে হলে ভিন্ন কথা। আর এর হিসাব আল্লাহর কাছে। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করবে, আমি অবশ্য অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। কারণ নিঃসন্দেহে যাকাত সম্পদের হক। আল্লাহর কসম! তারা (যাকাত অস্বীকারকারীরা) যদি আমাকে একটি ছাগলের বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে যা তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় দিত, তাহলেও আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। (তখন) ’উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! যুদ্ধের এ সিদ্ধান্ত আল্লাহর তরফ থেকে আবূ বকর-এর অন্তর্চক্ষু খুলে দেয়া ছাড়া আর কিছু বলে আমি মনে করি না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِى
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَمَّا تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ الْعَرَبِ قَالَ عُمَرُ: يَا أَبَا بَكْرٍ كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ على الله . قَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَاللَّهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ وَاللَّهِ لَوْ مَنَعُونِي عَنَاقًا كَانُوا يُؤَدُّونَهَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا. قَالَ عُمَرُ: فَوَاللَّهِ مَا هُوَ إِلَّا أَن رَأَيْت أَن قد شرح الله صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ لِلْقِتَالِ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর মুসায়লামাহ্-এর অনুসারী ইয়ামামাহবাসী ও অন্যকিছু সংখ্যক ‘আরবরা মুরতাদ হয়ে যায়। তখন আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রহঃ) সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ-এর নেতৃত্বে। অবশেষে মুসায়লামাহ্-কে হত্যা করা হয়। অপর একটি দল যাকাত দিতে অস্বীকার করে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আর এদের সংখ্যা ছিল অনেক। ফাতহুল বারীতে উল্লেখ হয়েছে যে, ক্বাযী ‘আয়ায (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর মুরতাদরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল মূর্তিপূজা আরম্ভ করে। আরেকদল মুসায়লামাহ্ ও আসওয়াদ আল আনাসীর অনুসরণ করে। ৩য় দলটি ইসলামের উপর থাকে কিন্তু যাকাত দিতে অস্বীকার করে। তারা যাকাতের বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের সাথে নির্দিষ্ট বলে তা‘বীল করে। আবূ বাকর (রাঃ) তাদের সাথে প্রথমেই যুদ্ধ করেননি বরং তাদেরকে তাদের ভুলপথ হতে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে যাকাত দিতে বলেছেন। এরপরও যখন তারা তা অস্বীকার করে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিয়েছে তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৭৯১-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তোমাদের ধন-সম্পদ বিষধর সাপের রূপ ধারণ করবে। মালিক এর থেকে পালিয়ে থাকবে, আর সে মালিককে খুঁজতে থাকবে। পরিশেষে সে মালিককে পেয়ে যাবে এবং তার আঙ্গুলগুলোকে লুকমা বানিয়ে মুখে পুরবে। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَكُونُ كَنْزُ أَحَدِكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ يَفِرُّ مِنْهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يَطْلُبُهُ حَتَّى يُلْقِمَهُ أَصَابِعه» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: গচ্ছিত সম্পদ যার যাকাত আদায় করা হয় না তা সাপে পরিণত হবে। আর তার মালিক-এর দু’ গালে ও হাতে দংশন করতে থাকবে, কারণ সে হাত দ্বারা মাল অর্জন করেছিল।