প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ তা'য়ালার জন্য। দরুদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবাগণের প্রতি বর্ষিত হোক। প্রতিটি পাপের মূলে হলো নফসের গোলামী। মানুষ যখন তার নফসকে কুরআন ও সুন্নাহর লাগাম পরিয়ে নিজে মালিক হয় তখনই হয় তার নাজাত। আর যখন সে নিজে নফসের গোলাম হয়ে পড়ে তখনই তার ধ্বংস অনিবার্য ।
নফসের সাথে জিহাদ করাকে সর্বোত্তম জিহাদ বলে নবী আখ্যায়িত করেছেন। নফস এমন এক শত্রু ও দুশমন যে সর্বদা নিজের মাঝেই বসবাস করে সর্বপ্রকার ধ্বংসলীলা ঘটাতে থাকে। নফসের গোলামীর ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় অনেকে তার ফাঁদে পড়ে দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করছে। তাই আমরা মানুষকে নফসের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে “নসের গোলামী ও মুক্তির পথ বিষয়ে এই ছোট্ট বইটি উপহার দিচ্ছি।
বইটির প্রথম প্রকাশ করতে পারায় আমরা আল্লাহ তা'য়ালার অশেষ শুকরিয়া আপন করছি।
পাঠক মহোদয় ইহা থেকে উপকৃত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। যাঁরা এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সকলকে আমাদের সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানাই।
পরিশেষে আমাদের নিবেদন এই যে, সংশোধনের কাজ কোন দিনও চূড়ান্ত করা যায় না। অতএব, বইটি পড়ার সময় কোন ভুল-ত্রুটি বা ভ্রম কারো দৃষ্টিতে পড়লে অথবা কোন নতুন প্রস্তাব থাকলে তা আমাদেরকে অবহিত করালে সাদরে গৃহীত হবে। আর পরবর্তী সংস্করণে যথাযথ বিবেচনা করা হবে।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের এই মহতী উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন!
আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল। আল-আহসা ইসলামিক সেন্টার, বাংলা বিভাগ, সৌদি আরব। ১০/১০/১৪৩২ হিঃ
নফসের গোলামী কাকে বলে এবং কিভাবে হয় সে ব্যাপারে মনীষীদের বিভিন্ন বাণী উল্লেখ করা হলো।
নফস বা প্রবৃত্তি হলো: মানুষ যা চায়, পছন্দ করে ও তাতে সন্তুষ্ট থাকে এবং কামনা-বাসনা করে এবং তারই প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাকে নফস বা প্রবৃত্তি বলা হয়।
নফস তিন প্রকারঃ (এক) "নফসে আম্মারা” তথা কুপ্রবৃত্তি যা সর্বদা কুমন্ত্রণা ও অন্যায় ও অসৎ কর্মের নির্দেশ করে। (দুই) "নফসে লাওয়ামা” অর্থাৎ- অসৎ ও অন্যায় কাজের জন্য অনুতপ্ত মন দোটানা মন। (তিন) "নফসে মুতমাইন্না” মানে বিশুদ্ধ ও শান্ত মন।
কুপ্রবৃত্তি বলতে নফসের প্রবণতা, খেয়াল-খুশী, কামনা-বাসনা, রিপু ও কোন জিনিসের প্রতি টানকে বুঝায়। ইহা অধিকাংশ বক্রতা ও স্রষ্টার প্রতি প্রয়োগ হয়।
ইমাম ইবনুল কায়োম (রহ:) বলেন: স্বভাব ও মেজাজের অনুকুলের প্রতি টানকে প্রবৃত্তি বলে। নফসের কামনা-বাসনার চাহিদাই হলো প্রবৃত্তি। ঝোঁক মানুষের টিকে থাকার জন্যেই তার মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে; কারণ যদি তার খাদ্য, পানি ও বিবাহের প্রতি টান না থাকত, তাহলে সে খানাপিনা ও বিবাহ-শাদি করত না। তাই প্রবৃত্তি মানুষকে উৎসাহিত করে যখন সে চায়। যেমন রাগ যা তাকে কষ্ট দেয় তা দূর করে। তাই সর্বদা প্রবৃত্তিকে দোষারোপ করা বা সর্বদা প্রশংসা করা উচিত নয়। যেরূপ রাগকে সব সময় ভৎসনা বা প্রশংসা করা ঠিক নয়। বরং দুই প্রকারের মধ্যে যে অভিরঞ্জন করত: উপকার ও ক্ষতির সীমা অতিক্রম করবে তাকেই শুধু ভর্ৎসনা করা উচিত।'[1]
প্রবৃত্তির গোলামী হলো: অন্তরে বক্রতা ও বিবেক বিপর্যয়ের কারণে সত্য ছেড়ে বাতিলের দিকে ঝোঁকা। ইহাই হলো। প্রতিটি পথভ্রষ্ট বিপথগামী ব্যক্তির পথ। যেমন সত্য ও হেদায়েতের অনুসরণ মুমিনদের পথ।[2]
মানুষের কোন জিনিসের প্রতি মহব্বত এবং অন্তরে তার প্রভাব বিস্তার হওয়াকে প্রবৃত্তি বলে।
শা'বী (রহঃ) বলেন: প্রবৃত্তিকে আরবিতে বলে: "হাওয়া" যার অর্থ পতিত হওয়া বা নিচে নামা: কারণ প্রবৃত্তি তার সাথীকে গহীন গহ্বরে পতিত করে দেয়। এর লাগামহীন ঘোড়ার আরোহী পরিণাম না ভেবে উপস্থিত মজার প্রতি আহ্বান করে। আর তাৎক্ষণিক কামনা-বাসনার প্রতি উৎসাহিত করে যদিও ইহকালে পরকালে তা কঠিন দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াই।
শরিয়তের নির্দেশ ও সুস্থ বিবেকের পরামর্শ ছাড়া নফসের কামনা-বাসনার আনুগত্য করাই হলো প্রবৃত্তির গোলামী।
[2] -মুহাব্বাতুল রসুল বাইশাল ইতিবায়ে রয়াল ইবতিদা" -১/১৯৩
আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনুল কারীমে কুপ্রবৃত্তির গোলামী থেকে নিষেধ এবং পবিত্রতা, নফসের কামনা-বাসনা ও ভ্রষ্টতা হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ করেছেন। এ ছাড়া আরো নিষেধ করেছেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে। কুরআনের যেখানেই কুপ্রবৃত্তির কথা উল্লেখ হয়েছে সেখানে ভর্ৎসনা ও নিষেধ করাই হয়েছে। কারণ যে কোন পাপ ও অন্যায় সংঘটিত হওয়ার পেছনে রয়েছে কুপ্রবৃত্তির গোলামী। আদম ও হাওয়া (আঃ)এর জান্নাত থেকে বের হওয়া, ইবলীসের বহিস্কার ও সমস্ত জাতির ধ্বংসের একমাত্র কারণই হচ্ছে কুপ্রবৃত্তির গোলামী তথা মনের পূজা।
ইমাম ইবনুল কায়োম (রহ:) বলেন: যখন অধিকাংশ সময় প্রবৃত্তি, শাহওয়াত তথা নফসের কামনা-বাসনা ও রাগের অনুসারীরা উপকারের সীমায় দাঁড়াই না, তখন প্রবৃত্তি, শাহওয়াত ও রাগকে ভর্ৎসনাই করা হয়েছে। কারণ সাধারণত ক্ষতিই প্রাধান্য পেয়ে থাকে[1]
(ক) কুরআনে নিষেধ ও ভর্ৎসনা
১. আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী দাউদকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করেন:
یٰدَاوٗدُ اِنَّا جَعَلۡنٰکَ خَلِیۡفَۃً فِی الۡاَرۡضِ فَاحۡکُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ بِالۡحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعِ الۡہَوٰی فَیُضِلَّکَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَضِلُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ لَہُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌۢ بِمَا نَسُوۡا یَوۡمَ الۡحِسَابِ
“হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।” [সূরা ছোয়াদ: ২৬]
২. আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর খালীল ও হাবীব মুহাম্মদ ﷺ কে মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করে বলেনঃ
قُلۡ اِنِّیۡ نُہِیۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ؕ قُلۡ لَّاۤ اَتَّبِعُ اَہۡوَآءَکُمۡ ۙ قَدۡ ضَلَلۡتُ اِذًا وَّ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُہۡتَدِیۡنَ
(১) “আপনি বলে দিন: আমাকে তাদের এবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের এবাদত কর। আপনি বলে দিন: আমি তোমাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করব না। কেননা, তাহলে আমি পথভ্রান্ত হয়ে যাবো এবং সুপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হবো না।” [সূরা আন'আম: ৫৬]
قُلۡ ہَلُمَّ شُہَدَآءَکُمُ الَّذِیۡنَ یَشۡہَدُوۡنَ اَنَّ اللّٰہَ حَرَّمَ ہٰذَا ۚ فَاِنۡ شَہِدُوۡا فَلَا تَشۡہَدۡ مَعَہُمۡ ۚ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ وَ ہُمۡ بِرَبِّہِمۡ یَعۡدِلُوۡنَ
(২) "আপনি বলুন তোমাদের সাক্ষীদেরকে আন, যারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা'য়ালা এগুলো হারাম করেছেন। যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তবে আপনি এ সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না এবং তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, যারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং যারা স্বীয় প্রতিপালকের সমতুল্য অংশীদার করে।"
[সূরা আন'আম: ১৫০]
ثُمَّ جَعَلۡنٰکَ عَلٰی شَرِیۡعَۃٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ فَاتَّبِعۡہَا وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
(৩) "এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।" (সূরা জাসিয়া ১৮/
وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ مُہَیۡمِنًا عَلَیۡہِ فَاحۡکُمۡ بَیۡنَہُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ عَمَّا جَآءَکَ مِنَ الۡحَقِّ ؕ لِکُلٍّ جَعَلۡنَا مِنۡکُمۡ شِرۡعَۃً
(৪) "আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।” [মায়েদা: ৪৮)
وَ اَنِ احۡکُمۡ بَیۡنَہُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ وَ احۡذَرۡہُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنُوۡکَ عَنۡۢ بَعۡضِ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ اِلَیۡکَ
(৫) “আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাজিল করেছেন।" [সূরা মায়েদা: ৪৯
فَلِذٰلِکَ فَادۡعُ ۚ وَ اسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ ۚ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَہُمۡ
(৬) "সুতরাং আপনি ওর দিকে সবাইকে আহবান করুন এবং এতেই দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।" [সূরা শূরা: ১৫]
وَ لَنۡ تَرۡضٰی عَنۡکَ الۡیَہُوۡدُ وَ لَا النَّصٰرٰی حَتّٰی تَتَّبِعَ مِلَّتَہُمۡ ؕ قُلۡ اِنَّ ہُدَی اللّٰہِ ہُوَ الۡہُدٰی ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ بَعۡدَ الَّذِیۡ جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ
(৭) "আর ইহুদি ও খ্রীষ্টানরা আপনি তাদের ধর্ম অনুসরণ না করা পর্যন্ত আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। আপনি বলুন! আল্লাহর পথ-নির্দেশিত পথই সুপথ এবং তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তৎপর যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তবে আল্লাহ হতে আপনার জন্যে কোনই অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।" [সূরা বাকারা: ১২০]
وَ لَئِنۡ اَتَیۡتَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ بِکُلِّ اٰیَۃٍ مَّا تَبِعُوۡا قِبۡلَتَکَ ۚ وَ مَاۤ اَنۡتَ بِتَابِعٍ قِبۡلَتَہُمۡ ۚ وَ مَا بَعۡضُہُمۡ بِتَابِعٍ قِبۡلَۃَ بَعۡضٍ ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ اِنَّکَ اِذًا لَّمِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
(৮) “আপনি যদি আহলে কিতাবদের কাছে সমুদয় নিদর্শন উপস্থাপন করেন, তবুও তারা আপনার কেবলা মেনে নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন না। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, সে জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয়ই আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা বাকারা: ১৪৫]
کَذٰلِکَ اَنۡزَلۡنٰہُ حُکۡمًا عَرَبِیًّا ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ بَعۡدَ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا وَاقٍ
(৯) “এনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নিদর্শনরূপে অবতারণ করেছি। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী।” [সূরা রা'দ:৩৭
৩. আল্লাহ তা'য়ালা আহলে কিতাবকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করে বলেন:
قُلۡ یٰۤاَہۡلَ الۡکِتٰبِ لَا تَغۡلُوۡا فِیۡ دِیۡنِکُمۡ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعُوۡۤا اَہۡوَآءَ قَوۡمٍ قَدۡ ضَلُّوۡا مِنۡ قَبۡلُ وَ اَضَلُّوۡا کَثِیۡرًا وَّ ضَلُّوۡا عَنۡ سَوَآءِ السَّبِیۡلِ
“বলুন: হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা স্বীয় ধর্মে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং এতে ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।” [সূরা মায়েদা: ৭৭]
৪. আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদেরকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে নিষেধ করে বলেন:
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡا قَوّٰمِیۡنَ بِالۡقِسۡطِ شُہَدَآءَ لِلّٰہِ وَ لَوۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ اَوِ الۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ ۚ اِنۡ یَّکُنۡ غَنِیًّا اَوۡ فَقِیۡرًا فَاللّٰہُ اَوۡلٰی بِہِمَا ۟ فَلَا تَتَّبِعُوا الۡہَوٰۤی اَنۡ تَعۡدِلُوۡا ۚ وَ اِنۡ تَلۡوٗۤا اَوۡ تُعۡرِضُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক: আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনদের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব তোমরা বিচার করতে গিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা-নিসা: ১৩৫]
৫. প্রবৃত্তির অনুসরণ করলে আসমান-জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে বলে মহান আল্লাহর ঘোষণা:
وَ لَوِ اتَّبَعَ الۡحَقُّ اَہۡوَآءَہُمۡ لَفَسَدَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ بَلۡ اَتَیۡنٰہُمۡ بِذِکۡرِہِمۡ فَہُمۡ عَنۡ ذِکۡرِہِمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ
"সত্য যদি তাদের কাছে প্রবৃত্তির অনুসারী হত, তবে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। বরং আমি তাদের দান করেছি। উপদেশ, কিন্তু তারা তাদের উপদেশ অনুধাবন করে না।" [সুরা মু'মিনুন : ৭১
৬. আল্লাহ তা'য়ালা প্রবৃত্তির গোলামীর ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেন:
فَلَا یَصُدَّنَّکَ عَنۡہَا مَنۡ لَّا یُؤۡمِنُ بِہَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ فَتَرۡدٰی
(১) “সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন আপনাকে তা থেকে নিবৃত না করে। নিবৃত হলে আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন।” [সূরা ত্ব-হা: ১৬]
اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِ وَکِیۡلًا
(২) “আপনি কি তাদের দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদারী হবেন?" [সূরা ফুরকান: ৪৩]
فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ
(৩) "অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।" [সূরা কাসাস: ৫০]
بَلِ اتَّبَعَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ۚ فَمَنۡ یَّہۡدِیۡ مَنۡ اَضَلَّ اللّٰہُ ؕ وَ مَا لَہُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ
(৪) "বরং যারা জালেম, তারা অজ্ঞতাবশত তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। অতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। ” [সূরা রূম: ২৯ |
اَفَمَنۡ کَانَ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّہٖ کَمَنۡ زُیِّنَ لَہٗ سُوۡٓءُ عَمَلِہٖ وَ اتَّبَعُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ
(৫) "যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি তার সমান, যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।" [সূরা মুহাম্মদ ১৪ ]
وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّسۡتَمِعُ اِلَیۡکَ ۚ حَتّٰۤی اِذَا خَرَجُوۡا مِنۡ عِنۡدِکَ قَالُوۡا لِلَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ مَاذَا قَالَ اٰنِفًا ۟ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ طَبَعَ اللّٰہُ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ وَ اتَّبَعُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ
(৬) “তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত তাদেরকে বলে। এইমাত্র তিনি কি বললেন? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।” [সূরা মুহাম্মাদ:১৬]
اَفَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ وَ اَضَلَّہُ اللّٰہُ عَلٰی عِلۡمٍ وَّ خَتَمَ عَلٰی سَمۡعِہٖ وَ قَلۡبِہٖ وَ جَعَلَ عَلٰی بَصَرِہٖ غِشٰوَۃً ؕ فَمَنۡ یَّہۡدِیۡہِ مِنۡۢ بَعۡدِ اللّٰہِ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ
(৭) "আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে স্বীয় উপাস্য স্থীর করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথপ্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা করবে না।" (সূরা জাসিয়া ২৩]
اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِ وَکِیۡلًا
اَمۡ تَحۡسَبُ اَنَّ اَکۡثَرَہُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ سَبِیۡلًا
(৮) “আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত [সূরা ফুরকান: ৪৩,৪৪ |
وَ کَذَّبُوۡا وَ اتَّبَعُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ وَ کُلُّ اَمۡرٍ مُّسۡتَقِرٌّ
(৯) "তারা মিথ্যারোপ করেছে এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরকৃত হয়।" (সুরা কামার: ৩]
৭. আদম [আঃ]-এর সস্তান কাবীলের আপন ভাই হাবীলকে হত্যার কারণ ছিল প্রবৃত্তির গোলামী |
فَطَوَّعَتۡ لَہٗ نَفۡسُہٗ قَتۡلَ اَخِیۡہِ فَقَتَلَہٗ فَاَصۡبَحَ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
“অতঃপর তার নফস তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।" [সূরা মায়েদা: ৩০]
৮. মিশরের আজীজের স্ত্রী জুলায়খার ইজ্জতহানীর কারণ ছিল প্রবৃত্তির গোলামী:
وَ مَاۤ اُبَرِّیٴُ نَفۡسِیۡ ۚ اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّیۡ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
“আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের প্রবৃত্তি মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়- আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।" [ সূরা ইউসুফ: ৫৩
৯. তওরাতের হাফেজ বাল'আম ইবনে বাউরের ধ্বংসের কারণ প্রবৃত্তির গোলামী
وَ اتۡلُ عَلَیۡہِمۡ نَبَاَ الَّذِیۡۤ اٰتَیۡنٰہُ اٰیٰتِنَا فَانۡسَلَخَ مِنۡہَا فَاَتۡبَعَہُ الشَّیۡطٰنُ فَکَانَ مِنَ الۡغٰوِیۡنَ ﴿۱۷۵﴾ وَ لَوۡ شِئۡنَا لَرَفَعۡنٰہُ بِہَا وَ لٰکِنَّہٗۤ اَخۡلَدَ اِلَی الۡاَرۡضِ وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ ۚ فَمَثَلُہٗ کَمَثَلِ الۡکَلۡبِ ۚ اِنۡ تَحۡمِلۡ عَلَیۡہِ یَلۡہَثۡ اَوۡ تَتۡرُکۡہُ یَلۡہَثۡ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُ الۡقَوۡمِ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا ۚ فَاقۡصُصِ الۡقَصَصَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ
“আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ নান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পিছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ে রইল সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত, যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।" [সূরা আ'রাফ ১৭৫ ১৭৬]
(খ) হাদীসে নিষেধ ও ভর্ৎসনা
ععَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا فَأَىُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَىُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلاَ تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَالآخَرُ أَسْوَدُ مُرْبَادًّا كَالْكُوزِ مُجَخِّيًا لاَ يَعْرِفُ مَعْرُوفًا وَلاَ يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلاَّ مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ
হুযাইফা [রাঃ] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি: “মানুরের গাঁথা পাতার সারির মত অন্তরের প্রতি একটির পর অপরটি ফেৎনা আসতে থাকবে। অতঃপর যে অন্তর সে ফেৎনার প্রীতি পান করবে তাতে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে। আর যে অন্তর সে ফেৎনাকে অস্বীকার করবে তাতে একটি সাদা দাগ পড়বে। এভাবে অন্তর দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি হলো পিচ্ছিল অন্তর যাতে আসমান জামিন থাকা অবধি ফেৎনা কনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হলো: কালো-ধূসরবর্ণ অন্তর উপর করা জগের মত। যা ভালকে ভাল ও মন্দকে মন্দ উপলব্ধি করতে পারে না বরং তার কুপ্রবৃত্তির প্রীতির অনুসরণ করে । [2]
من عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: قال رسول الله عليه وسلم: « لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواة لبعـة ملی لما جنت به . [٢٧٦] شرح الـــه وقال النووي في أربعينه هذا حديث صحيح رويناه في كتاب الحجة بإسناد صحيح
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস [আঃl থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “ততক্ষণ তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমার আনিত বিধানের অনুগত না হবে।[3]
عن أبي برزة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قـال د إنما أختي عليكم شهوات الغـي فـي بـطـونكم وفــروحكم وصلات الهوى ». رواه أحمد والطبراني والبزار وبعض الدهم رجال العات صحيح الترغيب والترهيب - (ج ٢ / م ٢٤٦)
আবু বারজা [আঃ] হতে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (ﷺ) বলেছেন: "আমি তোমাদের প্রতি তোমাদের পেট ও লজ্জাস্থানের কামনা-বাসনার ভ্রষ্টতা ও কুপ্রবৃত্তির গুমরাহী হতে ভয় করছি।”[4]
عن أبي عامر الفوزني آلة حج مع معاوية فسمعة يقول قام فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فذكر : أن أهل الكتاب قبلكم تفرقوا على النتين وسبعين فرقة في الأهواء، الا وإن هذه الأمة ستطرق على ثلاث وستعين فرقة في الأهواء، كلها في النار الا واحدة، وهي الجماعة، ألا وإله يخرج في أنني قـوم بهرود هوى بتجاري بهم ذلك الهوى كما بتجاري الكل بصاحبه لا يدع منه عرفا ولا مفصلاً إلا دخله».
আবু আমের হাওজানী হতে বর্ণিত, তিনি মুআবিয়া (রাঃ)এর সঙ্গে হজ্ব করা অবস্থায় তাঁকে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন: তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবরা কুপ্রবৃত্তির কারণে বাহত্তর দলে বিভক্ত হয়। আর জেনে রাখ। আমার এ উম্মত কুপ্রত্তির কারণে অদূর ভবিষ্যতে তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল বাদে বাকিগুলো সব জাহান্নামে যাবে। সে দলটি হলো: সকল মুসলিমদের সম্মিলিত জামাত। আরো জেনে রেখ! আমার উম্মত থেকে একটি জাতি বের হবে যারা তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করবে। সে কুপ্রবৃত্তি তাদেরকে ঐভাবে দৌড়াবে যেমন কুকুর তার সঙ্গীর সাথে দৌড়াই। প্রবৃত্তি তাদের প্রতিটি রগরেশার ও জোড়ে জোড়ে প্রবেশ করবে।"[5]
ثلاث منحبات : خشية الله تعالى في السر و العلائية و العدل في الرضا و الغصب و الفصل في الفقر و العلى و ثلاث مهلكات . هری منبع و شخ مطاع و إنجاب المرء بنفسه » - تخريج السيوطي ( أبو الشيخ في التوبيخ طلس ) في أنس تحقيق الألباني انظر حديث رقم : ٣٠٣٩ في صحيح الجامع.
নবী (ﷺ) বলেছেন: “তিনটি নাজাতকারী জিনিস: প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর ভয়, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে ইনসাফ ও স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় মিতব্যয়ীতা। আর তিনটি জিনিস ধ্বংসকারী: কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ, মান্য কৃপণতা এবং মানুষের আত্মমুগ্ধতা।[6]
أفضل الجهاد أن يجاهد الرجل نفسة و هواة .. تخريج السيوطي ( ابن النجار ) عن أبي در تحقيق الألباني ( صحيح ) انظر حديث
নবী (ﷺ) বলেন: "মানুষের সর্বোত্তম জিহাদ হলো তার নিস ও কুপ্রবৃত্তির সাথে জিহাদ।[7]
(গ) বিভিন্ন মনীষীদের বাণীতে নিষেধ ও ভর্ৎসনা
১. আলী ইবনে আবি তালেব [রাঃ] বলেন: “আমি দু'টি জিনিসকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। বড় আশা ও প্রবৃত্তির গোলামী; কারণ বড় আশা আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয়। আর প্রবৃত্তির গোলামী সত্যকে গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। জেনে রাখ! দুনিয়া পেছনে যাচ্ছে আর আখেরাত সামনে আসতেছে। আর প্রতিটির সন্তান রয়েছে। অতএব, আখেরাতের সন্তান হওয়ার চেষ্টা কর এবং দুনিয়ার সন্তান হওয়ার চেষ্টা করা না। এ জগতে আমল আছে হিসাব নেই এবং পরকালে হিসাব আছে আমল নেই।”
২. ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বলেন: দাবিতে প্রবৃত্তির অনুসারীদের চাইতে বড় মিথ্যুক আর কাউকে দেখিনি। অনুরূপ মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানে শিয়া রাফেযীদের চাইতে বড় মিথ্যাসাক্ষী প্রদানকারী কাউকে দেখিনি।[8]
৩. ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ বলেন: “দ্বীনের জন্য সবচেয়ে সাহায্যকারী চরিত্র হলো আল্লাহমুখী হওয়া এবং ধ্বংসের জন্য হলো প্রবৃত্তির গোলামী। প্রবৃত্তির গোলামীর মধ্য হতে হচ্ছে দুনিয়ামুখী হওয়া। দুনিয়ামুখী হওয়ার মধ্য হতে সম্পদ ও পদের ভালবাসা। সম্পদ ও পদের ভালবাসা হারামকে হালাল করে এবং এর দ্বারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি আসে। আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি এমন একটি রোগ যার ঔষধ তাঁর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য আর কিছুই নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি এমন ঔষধ যার পরে আর কোন রোগ ক্ষতি করতে পারে না। অতএব, যে তার প্রতিপালককে রাজি করাতে চায় তাকে তার প্রবৃত্তিকে নারাজ করাতে হবে: কারণ যে তার প্রবৃত্তিকে নারাজ করতে পারবে না সে তার প্রতিপালককে খুশী করাতে পারবে না। আর মানুষ তার প্রতি দ্বীনের কোন কাজ যখনই ভারী মনে করে ছাড়তে থাকবে একদিন এমন হবে যে, তার সাথে দ্বীনের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
৪. মুযাইল ইবনে ইয়ায বলেন: “যার প্রতি তার প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনার অনুসরণ বিজয়ী হবে, তার থেকে সকল প্রকার তওফিকের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে।”
৫. আতা বলেন: "যার প্রবৃত্তি তার বিবেকের উপর এবং অধৈর্য ধৈর্যের উপর জয়ী হবে, সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।”
৬. আলী ইবনে সাহল বলেন: "বিবেক ও প্রবৃত্তি দু'টির মাঝে ঝগড়া লাগে। এরপর তওফিক হয় বিবেকর বন্ধু এবং অপদস্ত হয় প্রবৃত্তির বন্ধু। আর নফস দুইজনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে যার জয়ী হয় তার সঙ্গে থাকে। "
৭. ইমাম গাজ্জালী বলেন: “মূলত দ্বীনের সকল বৈশিষ্ট্য ও সুন্দর চরিত্র ভালবাসার ফলাফল। আর যে ভালবাসা ফলপ্রসূ নয়, তা হচ্ছে প্রবৃত্তির গোলামী যা নিকৃষ্ট চরিত্র। এ ছাড়া যখন প্রবৃত্তির গোলামী জয়ী হয় তখন তোমাকে সে বধির ও অন্ধ বানিয়ে ফেলে। আর তখন ভয় থাকে না হেদায়েতে জটিলতা বরং ভয় হয় প্রবৃত্তির গোলামীর।"
৮. ইমাম ইবনুল কায়্যেম বলেন: “প্রতিটি বান্দার শুরু ও শেষ রয়েছে, যার শুরুটা প্রবৃত্তির গোলামী দ্বারা তার শেষ অপদস্ত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও বালা-মসিবত। যতটুকু প্রবৃত্তির গোলামী হবে ততটুকু হবে তার বিপদ। বরং তার শেষ হবে এমন আজাব দ্বারা যা সর্বদা সে অন্তরে ব্যথা অনুভব করতে থাকবে। ----- আর যার শুরুটা হবে প্রবৃত্তির বিপরীত করা এবং বিবেকের অনুসরণ দ্বারা তার পরিণাম হবে ইজ্জত সম্মান, অভাবমুক্ত এবং আল্লাহ ও মানুষের নিকট সম্মানিত।
৯. আবু আলী আন্দাক্কাক বলেন: "যে যৌবনে তার নফসের কামনা-বাসনার মালিক হতে পারবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তার পরিণতবয়সে সম্মানিত করবেন।"
১০. মুহাল্লাব ইবনে আবী সুরাকে বলা হলো: কী দ্বারা এসব অর্জন করতে পেরেছেন? তিনি বললেন: দৃঢ়তার অনুসরণ এবং প্রবৃত্তির নাফরমানি দ্বারা। ইহাই হচ্ছে দুনিয়ার শুরু ও শেষ। আর আখেরাতে আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাতকে শেষ স্থান করে দিয়েছেন, যে তার প্রবৃত্তিকে নিষেধ করে। আর যে প্রবৃত্তির গোলামী করে তার জন্য করেছেন জাহান্নামকে।"
১১. জুবাইর বলেন:"মানুষ তার নফসকে যখন যা চাবে তাই দেবে ও বারণ করবে না তখন সে প্রতিটি বাতিলের কামনা করবে এবং বয়ে আনবে তার জন্যে পাপ ও লাঞ্ছনা।"
১২. আবু ইসহাক শীরাজী বলেন " যদি তোমাকে তোমার নফস একদিন কামনা-বাসনার কথা বলে আর তার বিপরীত করার কোন রাস্তা থাকে তবে সম্ভবপর বিপরীত কর; কারণ নফসের চাওয়া হলো শত্রু এবং তার বিপরীত হলো মি।
১৩. মালেক ইবনে দীনার বলেন: “তওরাতে পড়েছি যে, যার জ্ঞান তার প্রবৃত্তির উপরে বিজয়ী সেই হলো জয়ী বিজ্ঞ আলেম।
১৪. ইবরাহীম তায়মী তাঁর দোয়াতে বলতেন: “হে আল্লাহ! সত্যের ব্যাপারে মতভেদ করা হতে আমাকে তোমার কিতাব ও নবীর সুন্নত দ্বারা হেফাজত কর আরো হেফাজত কর তোমার হেদায়েত দ্বারা প্রবৃত্তির গোলামী করা থেকে, পথভ্রষ্ট থেকে, সংশয়, বক্রতা ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে।
১৫. কেউ বলেছেন: আসমানের নিচে আল্লাহ ছাড়া সবচেয়ে যার বেশি এবাদত করা হয় তা হলো: প্রবৃত্তির এবাদত তথা মন পূজা।
১৬. কোন একজন সালাফে সালেহীন বলেছেন: যে তার প্রবৃত্তির উপরে বিজয়ী সে একটি শহর বিজয়কারীর চাইতেও বেশি শক্তিশালী।
১৭. কেউ বলেছেন: প্রবৃত্তির গোলামী সবচেয়ে বড় বিপদ এবং দ্বীন-দুনিয়ার মারত্মক ক্ষতিকারক।
১৮. কেউ বলেছেন: জমিনের উপর সবচেয়ে ঘৃণ্য উপাস্য হলো প্রবৃত্তি।
১৯. কেউ বলেছেন: যদি তোমান নিকট দু'টি জিনিসের মাঝে শংসয় ঘটে তাহলে তোমার নফসের উপর যেটি ভারী মনে হয় সেটির অনুসরণ কর: কারণ নফসের উপর সত্যটি ছাড়া ভারী হয় না।
২০. কেউ বলেছেন: প্রবৃত্তির বিপরীত করাতেই রয়েছে দ্বীনের ও আখেরাতের সম্মান এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ইজ্জত। আর প্রবৃত্তির গোলামীতে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে অপমান এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অপদস্ত ।
২১. কেউ বলেছেন: আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবীর মাধ্যমে যে সকল এবাদত, আনুগত্য, আদেশ-নিষেধ ইত্যাদি পাঠিয়েছেন তার সবকিছুর বিপরীত হয় শুধুমাত্র প্রবৃত্তির অনুসরণের দ্বারাই।
২২. কেউ বলেছেন: যখন বিবেক শরিয়তের অনুসারী না হয় তখন তার জন্যে প্রবৃত্তি ও শাহওয়াত ছাড়া আর কোন উপাস্য থাকে না। প্রবৃত্তির গোলামীতে ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নেই।
২৩. কেউ বলেছেন: তোমার সাথী তুমি যা পছন্দ কর তাতে একমত এবং তুমি যা ঘৃণা কর তাতে দ্বিমত হলে বুঝতে হবে তুমি প্রবৃত্তির গোলামী করছ। আর যে তার প্রবৃত্তির গোলামী করে সে দুনিয়ার আরাম আয়েশ তালাশকারী।
[2] মুসলিম ২৬৪
[3] সরহুস সুন্নাহ, ইমাম নববী তার আরবায়ীনে বলেনঃ এ হাদিসটি সহিহ, আমি কিতাবুল হুদাতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছি।
[4] আহমাদ,তাবারানীওবাজ্জার, হাদিসটি সহিহ, আত তারগীব ও আত তারহীব, আলবানী ২য়খন্ড,পৃঃ২৪৬ হাঃ২১৪৩
[5] হাদীসটি সহীহ লিগাইরিহী, যিলালুলজান্নাহ-আলবানী:১/২
[6] হাদীসটি হাসান, সহীহুল জামে—আলবানী হা: নং ৩০৩৯
[7] হাদীসটি সহীহ, সহীহুল জামে—-আলবানী হা: নং ১০৯৯
[8] আল-ইবাদাতুল কুবরা-ই বা 2/20
নফসের গোলামীর কারণসমূহ
১. অজ্ঞতা-মূর্খতা।
২. ইবলীস শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা।
৩. বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণ-অনুকরণ।
৪. গড ফাদার ও হুজুর-বুজুর্গদের তকলীন তথা অন্ধ ব্যক্তি পূজা।
৫. সম্পদ, গদি ও নারীর ভালবাসার ফাঁদ। ৬. বিভিন্ন ধরণের সংশয় ও সন্দেহ।
৭. গাফলতি ও অবহেলা।
৮. অন্তরের বক্রতা।
৯. আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমানের দুর্বলতা।
১০. নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে কুরআন-সুন্নার উপরে প্রাধান্য দেয়া।
 
নফসের-প্রবৃত্তির গোলামীর কিছু চিত্র
১. বিদাত আবিস্কারে।
২. দলিলহীন মাজহাবের মতামতে।
৩. দলাদলি ও ফের্কাবন্দীতে।
৪. ফতোয়া ও বিধানে। ৫. সত্যকে প্রত্যাহার ও তার অনুসারীদের সাথে ঝগড়ায়। তার অনুসারীদের সাহায্য
৬. বাতিল সহযোগিতায়।
৭. মূর্তি ও প্রতিমা পূজায় ।
৮. নেক-বুজুর্গ ব্যক্তিদের অতিরঞ্জন ভক্তিতে।
৯. অশ্লীলতা ও অপরাধের প্রচার-প্রসারে। ১০. নফল কাজে জলদি এবং ফরজ-ওয়াজিব আদায়ে অলসতা প্রদর্শন। ১১. ধর্মের নামে পুঁজি, লাইসেন্স, টেক্স, লোকসান ও চাদা ছাড়া মজার ব্যবসায়।
নফসের গোলামীর ক্ষতি
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ قَفَّیۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِہٖ بِالرُّسُلِ ۫ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰہُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ ؕ اَفَکُلَّمَا جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَہۡوٰۤی اَنۡفُسُکُمُ اسۡتَکۡبَرۡتُمۡ ۚ فَفَرِیۡقًا کَذَّبۡتُمۡ ۫ وَ فَرِیۡقًا تَقۡتُلُوۡنَ
“অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি। আর তার পরে পর্যায়ক্রমে রসূল পাঠিয়েছি। আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে সুস্পষ্ট মো'জেযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে শক্তি দান করেছি। অতঃপর যখনই কোন রসূল এমন নির্দেশ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে, যা তোমাদের মনে ভাল লাগেনি, তখনই তোমরা অহংকার করেছ। শেষ পর্যন্ত তোমরা একদল মিথ্যাবাদী বলেছ এবং একদলকে হত্যা করেছ।" [সূরা বাকারা: ৮৭]
لَقَدۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلَیۡہِمۡ رُسُلًا ؕ کُلَّمَا جَآءَہُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَہۡوٰۤی اَنۡفُسُہُمۡ ۙ فَرِیۡقًا کَذَّبُوۡا وَ فَرِیۡقًا یَّقۡتُلُوۡنَ
"আমি বনি ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে অনেক পয়গাম্বর পাঠিয়েছিলাম। যখনই তাদের কাছে কোন পয়গাম্বর এমন নির্দেশ নিয়ে আসত যা তাদের মনে চাইত না, তখন তাদের অনেকের প্রতি তারা মিথ্যারোপ করত এবং অনেককে হত্যা করে ফেলত।" মায়েদা: ৭০
قُلۡ یٰۤاَہۡلَ الۡکِتٰبِ لَا تَغۡلُوۡا فِیۡ دِیۡنِکُمۡ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ لَا تَتَّبِعُوۡۤا اَہۡوَآءَ قَوۡمٍ قَدۡ ضَلُّوۡا مِنۡ قَبۡلُ وَ اَضَلُّوۡا کَثِیۡرًا وَّ ضَلُّوۡا عَنۡ سَوَآءِ السَّبِیۡلِ
“বলুন: হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা স্বীয় ধর্মে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং এতে ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।” [সুরা মায়েদা: ৭৭
১. আল্লাহর গজব ও অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম
২. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি
৩. জুলুম, অবিচার ও দমননীতি।
৪. খুন-খারাবী।
৫. অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ ও ইজ্জতহানী।
৬. বিভিন্নভাবে সত্যকে প্রত্যাখ্যান।
৭. হিংসা-বিদ্বেষ।
৮. সিরাতে মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি।
৯. দলাদলি ও ফের্কাবন্দী।
১০. ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের বিদায়।
১১. বিদাতের প্রকাশ ও প্রচার-প্রসার এবং সাহাবা, তাবেয়ী ও সালাফে সালেহীনদের পথকে ত্যাগকরণ।
১২. ভ্রষ্টতা ও পথভ্রষ্টকরণ।
১৩. আল্লাহর আয়াতসমূকে মিথ্যারোপ।
১৪. ফেতনায় পতিত হওয়া।
১৫. কর্ণ, চক্ষু ও অন্তরে মোহর।
১৬. আল্লাহর বন্ধুত্ব, সাহায্য ও নিরাপদ থেকে মাহরুম-বঞ্চিত।
১৭. অপদস্ততা, লাঞ্ছনা ও লোকসান।
১৮. মানুষের পক্ষ থেকে ঘৃণা এমনকি আপনজন ও প্রিয়জনের পক্ষ থেকে।
নফসের গোলামী ত্যাগে উপকারিতা
১. জান্নাত লাভ:
فَاَمَّا مَنۡ طَغٰی ۳۷وَ اٰثَرَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ۳۸فَاِنَّ الۡجَحِیۡمَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۳۹وَ اَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّہٖ وَ نَہَی النَّفۡسَ عَنِ الۡہَوٰی ﴿ۙ۴۰﴾ فَاِنَّ الۡجَنَّۃَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۴۱﴾ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰہَا ﴿ؕ۴۲﴾
"অনন্তর যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে; এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং প্রবৃত্তির খেয়াল খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত রেখেছে,তার ঠিকানা হবে জান্নাত।[সূরা নাজিয়াত: ৩৭,৪২]
ونوَ نَفۡسٍ وَّ مَا سَوّٰىہَا ۪ۙ﴿۷﴾ فَاَلۡہَمَہَا فُجُوۡرَہَا وَ تَقۡوٰىہَا ۪ۙ﴿۸﴾ قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا ۪ۙ﴿۹﴾ وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا ﴿ؕ۱۰﴾
“শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন তাঁর। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজের নফসকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। আর যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়" [সূরা শামস: ৭ থেকে ১০]
৩. জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ।
৪. মনের শান্তি।
৫. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।
৬. শয়তান থেকে রেহাই।
৭. দুনিয়া-আখেরাতে ইজ্জত-সম্মান লাভ
৮. দুনিয়া-আখেরাতে অপমান ও লাঞ্ছনা থেকে হেফাজত।
নফসের গোলামীর কিছু কিসসা
১. কাবীল তার ছোট ভাই হাবীলকে হত্যার ঘটনা। [সূরা মায়েদা: ২৭-৩১]
২. ভাতিজা তার চাচার সম্পদ ও মেয়েকে বিবাহের জন্য হত্যার ঘটনা। সূরা বাকারা: ৬৭-৭৩]
৩. মুসা [আঃ]-এর যুগে বনি ইসলাঈলদের সামিরীর বানানো বাছুর পূজার ঘটনা। [সূরা ত্বহা ৮৫-৯৮]
৪. তওরাতের হাফেজ বাল'আম ইবনে বা বাউ'রের অর্থের বিনিময়ে মূসা [আঃ]-এর প্রতি বন্দোয়া করার ঘটনা। [সূরা আ'রাফ: ১৭৫-১৭৬/
৫. সন্তান হিসাবে পালিত ইউসুফ কে জুলায়খার ভালবাসার ঘটনা। [সূরা ইউসুফ]
৬. আসিয়া ও জাদুকরদের আল্লাহ ও মূসার প্রতি ঈমান আনার জন্য তাদেরকে নির্মমভাবে ফেরাউনের হত্যার ঘটনা। [সূরা শু'আরা : ৪৬-৫১)
৭. কারুনের মুসা এর বিরধিতার ঘটনা। [সূরা কোসাস: ৭৬-৮২]
৮. নূহ (আঃ) ও লুত (আঃ) এর স্ত্রীদ্বয়ের ঈমান না আনার ঘটনা। [সূরা তাহরীম : ১০/
৯. রূমের রাজা কায়সারের রসূলূল্লাহ -এর পত্র ছিড়ে ফেলার ঘটনা।
১০. আবু লাহাব, আবু জাহল ও আবু তালিবের ঈমান না আনার ঘটনা।
নফসের গোলামী ত্যাগকারীদের কিছু চিত্র
১. মুসআব ইবনে উমাইর [রাঃ] এর দুনিয়ার আরাম আয়েশ ত্যাগ।
২. আবু তালহা (রাঃ) এর মদিনার সবচেয়ে উত্তম বাগান ও দাসী আজদ করা। [সূরা আল ইমরান:৯২।
৩. সোহাইব রুমি ।-এর হিজরতের সময় তাঁর সমস্ত অর্জিত সম্পদ মক্কায় ছেড়ে আসা। (সূরা বাকারা: ২০৭।
৪. ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিন্তে মুজাহেম (রা:) এর রাণীর মূকুট ত্যাগ । [সূরা তাহরীম: ১১]
প্রবৃত্তির সৃষ্টি পরীক্ষার জন্য
ইমাম ইবনুল কারোম (রহ:) বলেন: প্রতিটি শরিয়তের আড্ডাপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য প্রবৃত্তিতে রয়েছে পরীক্ষা। প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের জীবনে ঘটতেছে বিভিন্ন ধরণের ঘটনা। তাই তার মাঝে দু'টি বিচারক নিযুক্ত করা হয়েছে। একটি বিবেকের বিচারক আর দ্বিতীয়টি দ্বীনের বিচারক। আর সর্বদা প্রবৃত্তির আবর্তন-বিবর্তনে যাকিছু ঘটবে তা এই দু'টি বিচারকের নিকট পেশ এবং তাদের নির্দেশ মানতে বলা হয়েছে।
উচিত হলো: প্রবৃত্তিকে নিরাপদ পরিণতি বিষয়াদির উপর অনুশীলন করা, যাতে করে ক্ষতিকর পরিণতি বিষয়গুলো ত্যাগের অনুশীলন করতে পারে। আর বিজ্ঞজন স্মরণ রাখে যে, প্রবৃত্তির আসক্ত ব্যক্তিরা এমন অবস্থায় পৌঁছে যে, ভোগের বস্তু দ্বারা উপভোগ করতে পারে না অথচ ত্যাগও করতে পারে না। কারণ তাদের নিকটে ভোগবস্তু জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে পড়ে, যা ছাড়া তাদের চলেই না।
তাই দেখবে। মদ ও সহবাসে অসক্তরা এক দশমাংশও মজা পাইনা যা মজা পাই মাঝে মধ্যে যারা করে থাকে। কিন্তু তার বদভ্যাস তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। আর এ দ্বারা সে বুঝতে পারে যে সুখের মোকাবেলায় তার দুঃখ কতটুকু। সে ধোঁকায় পড়া পাখীর মত শিকারীর পাতানো ফাঁদের দানা খেতে গিয়ে না দানা খেতে পারে আর না ফাঁদ হতে অব্যাহতি পায়।[1]
নফসের গোলামীর চিকিৎসা
যদি কেউ প্রশ্ন করেন, যে ব্যক্তি কৃপ্রবৃত্তির গোলাম হয়ে পড়েছে তার মুক্তির উপয় কি? এর উত্তর হলো: আল্লাহ তা'য়ালার তওফিক ও সাহায্য। এ ছাড়া নিম্নে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিলে আশা করি আল্লাহ চাহে চিকিৎসা সম্ভব।
(ক) সংক্ষিপ্তভাবে:
১. শরিয়তের জ্ঞানার্জন
اَللّٰہُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُہُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔہُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَہُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۵۷﴾٪
"যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে ভারত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোজখের অধিবাসী। চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।” [সূরা বাকারা: ২৫৭]
الٓرٰ ۟ کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ اِلَیۡکَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ۙ﴿۱﴾
“আলিফ- লাম -রা এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি যাতে আপনি মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই। পথের দিকে।" [সূরা ইবরাহিম: ১]
لَقَدۡ مَنَّ اللّٰہُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِیۡہِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡ اَنۡفُسِہِمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِہٖ وَ یُزَکِّیۡہِمۡ وَ یُعَلِّمُہُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ۚ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۱۶۴﴾
“আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও সুন্নতের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল। পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।” [সূরা আল-ইমরান: ১৬৪]
২. প্রবৃত্তির গোলামী হতে হেফাজত ও নাজতের জন্য
বেশি বেশি দোয়া করা:
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ ہَدَیۡتَنَا وَ ہَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَہَّابُ ﴿۸﴾
"হে আমাদের পালনকর্তা। সরল প্রদশর্নের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সবকিছুর দাতা।" [সূরা আল ইমরান:৮]
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ لاَ أَقُولُ لَكُمْ إِلاَّ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ كَانَ يَقُولُ  " اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا " .
জায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলতেন: “...হে আল্লাহ! আমার নফসকে তাকওয়া দান করুন ও পবিত্র করুন; কারণ তুমি তাকে পবিত্রকারী ও তার পরিচালক ও মালিক। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অনুপকারী জ্ঞান থেকে, ভয় করে না এমন অন্তর থেকে, অপরিতৃপ্ত নফস থেকে এবং অগ্রহণযোগ্য দ্বীনের দাওয়াত থেকে। [1]
" নবী (ﷺ) দোয়া করতেন:
يا مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا الي طَاعَتِكَ» .
"হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী। আমাদের অন্তরসমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে নাও।[2]
اللهم مُصَرِّفَ الْقُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ» .
অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী। আমাদের অন্তরসমূহকে তোমার আনুগত্যের প্রতি ধাবিত করুন [3]
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ " يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ " . فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ آمَنَّا بِكَ وَبِمَا جِئْتَ بِهِ فَهَلْ تَخَافُ عَلَيْنَا قَالَ " نَعَمْ إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ أَصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللَّهِ يُقَلِّبُهَا كَيْفَ يَشَاءُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ وَأُمِّ سَلَمَةَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَعَائِشَةَ . وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَهَكَذَا رَوَى غَيْرُ وَاحِدٍ عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي سُفْيَانَ عَنْ أَنَسٍ . وَرَوَى بَعْضُهُمْ عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي سُفْيَانَ عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . وَحَدِيثُ أَبِي سُفْيَانَ عَنْ أَنَسٍ أَصَحُّ .
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বেশি বেশি বলতেন: "হে অস্তরসমূহের প্ররিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের প্রতি দৃঢ় রাখ। আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি এবং যা আপনি নিয়ে এসেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি, এরপরেও কি আমাদের প্রতি ভয় করেন। তিনি বললেন: হ্যাঁ, নিশ্চয় সমস্ত অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা পরিবর্তন করেন।[4]
كان إبراهيم التيمي يدعو يقول:« اللهم اعصمني بكتابك وسنة نبيك محمد (صلى الله عليه وسلم) من اختلاف في الحق ومن اتباع الهوى بغير هدى منك ومن سبيل الضلال ومن شبهات الأمور ومن الزيغ واللبس والخصومات
ইবরাহীম তাইমী তাঁর দোয়াতে বলতেন: হে আল্লাহ! তোমার কিতাব ও তোমার নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর সুন্নত দ্বারা আমাকে হেফাজত কর সত্যের ব্যাপারে মতপার্থক্য এবং তোমার হেদায়েত ছাড়া কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করা হতে। এ ছাড়া হেফাজত কর ভ্রষ্টপথ, বিষয়াদির সংশয়, পদস্খলন, অস্পষ্টতা ও ঝগড়া বিবাদ থেকে।
৩. কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং সর্বপ্রকার বেদাত ত্যাগ করা:
قأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ ه
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: "আমি তোমাদের মাঝে দু'টি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, যদি সেদু'টি মজবুত করে আঁকড়িয়ে ধর, তবে কক্ষনো পথভ্রষ্ট হবে না। ত হলো: আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।[5]
সুন্নতের অনুসরণে রয়েছে জ্ঞান, ইনসাফ ও হেদায়েত এবং বিদাতে রয়েছে অজ্ঞতা ও জুলুম। এ ছাড়া বিদাতে আরো রয়েছে অনুমানের অনুসরণ ও নফসের গোলামী।
৪. হকপন্থীদের সাহচার্চ এবং প্রবৃত্তি পূজারীদের সঙ্গ ত্যাগ:
১. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রাঃ] বলেন: প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে বসবে না। কারণ তাদের সাথে উঠা-বসা অন্তরকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে।
২. আবু কেলাবা বলেন: প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে বসবে না এবং ঝগড়াও করবে না: কারণ আমি তোমাদেরকে তাদের ভ্রষ্টতাতে ডুবে যাওয়া এবং তোমাদের জানা বিষয়ে সন্দেহ ও সংশয় প্রবেশ করানো হতে ভয় করছি।
৩. ইবরাহীম নাখায়ী বলেন, প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে বসবে না; কারণ তাদের সাথে উঠা-বসা অন্তর থেকে ঈমানের আলো সরিয়ে দেয় ও চেহারার সৌন্দর্যতা ছিনিয়ে নেই এবং মুমিনদের অন্তরে কঠরতা সৃষ্টি করে।
৪. আইয়ূব সিখতিয়ানী প্রবৃত্তির অনুসারীকে তার থেকে একটি শব্দ বরং অর্ধেক শব্দ শুনারও সুযোগ দিতেন না।
৫. সমস্ত ভ্রষ্ট দল ও গুমরাহ ফের্কা হতে দূরে থাকা
عن حذيفة بن اليمان .... فما تأمرني إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ " تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ " . فَقُلْتُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ " فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ عَلَى أَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ " .
হুযাইফা ইবনে ইয়ামান [রাঃ]-এর হাদীসে বর্ণিত। --- হুযাইফা [রাঃ] বলেন: এমন পরিস্থিতিতে আমাকে কী নির্দেশ করেন। তিনি (ﷺ) বলেন: “মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ জামাত ও ইমামের খলিফার) সাথে থাকবে। আমি বললাম, যদি সমস্ত মুসলিদের সম্মিলিতভাবে জামাত এবং ইমাম না থাকে তাহলে কী করব? তিনি (ﷺ) বললেন: "ঐ সমস্ত দল ত্যাগ করে একাকী থাকবে যদিও কোন গাছের শিকর কামড় দিয়ে ধরে হয় না কেন। আর এ অবস্থায় মৃত্যু আসা পর্যন্ত অবস্থান করবে। "[6]
৬. দুনিয়া ও আখেরাতে প্রবৃত্তির গোলামীর ক্ষতি ও তা ত্যাগে উপকারগুলো জানা।
৭. বেশি বেশি তওবা ও এস্তেগফার এবং আল্লাহকে ভয় করা:
ইবরাহীম ইবনে জুনাইদ উল্লেখ করেছেন: একজন মানুষ এক মহিলাকে কুমতলব হাসিলের উদ্দেশ্যে ফুসলাতে ছিল। মহিলাটি তাকে বলল তুমি তো কুরআন ও হাদীস শুনেছ। অতএব, তুমি বেশি জান। লোকটি বলল: ঘরের দরজাসমূহ বন্ধ কর, মহিলাটি দরজাগুলো বন্ধ করল। এরপর যখন লোকটি মহিলাটির অতি নিকট হলো তখন বলল: একটি দরজা কিন্তু এখনো বন্ধ করিনি। লোকটি বলল। সে আবার কোন দরজা? মহিলাটি বলল: তোমার এবং আল্লাহর মাঝের দরজা। অতঃপর লোকটি সে মহিলা থেকে চলে গেল।[7]
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন। একজন গ্রাম্যলোক বলে: আমি এক অন্ধকার রাতে বের হয়, দেখতে পাই এক অপূর্ব সুন্দরীকে। সে যেন আকাশের চাঁদ। তাকে রাজি করাতে চেষ্টা করলে সে বলে তুমি ধ্বংস হও! তোমাকে দ্বীনের নিষেধকারী কেউ না থাকলে তোমাকে বিবেক-বুদ্ধি এ কাজ থেকে বাধাদান করে না। আমি বললাম: আল্লাহর কসম! তারকা রাজি ছাড়া আর কেউ আমাদেরকে দেখছে না। মহিলাটি বলল: তারকা রাজির সৃষ্টিকর্তা কোথায়? এ কথা শুনে আমি সে কাজ হতে বিরত থাকি[8]
৮. নসকে কুপ্রবৃত্তির গোলামী ত্যাগ করার জন্য অনুশীলন, নিয়ন্ত্রণ ও তার সাথে জিহাদ করা।
فَاَمَّا مَنۡ طَغٰی ۳۷وَ اٰثَرَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ۳۸فَاِنَّ الۡجَحِیۡمَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۳۹وَ اَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّہٖ وَ نَہَی النَّفۡسَ عَنِ الۡہَوٰی ﴿ۙ۴۰﴾ فَاِنَّ الۡجَنَّۃَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۴۱﴾
"অনন্তর যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।" [সূরা নাজিয়াত: ৩৭-৪১)
وَ نَفۡسٍ وَّ مَا سَوّٰىہَا ۪ۙ﴿۷﴾ فَاَلۡہَمَہَا فُجُوۡرَہَا وَ تَقۡوٰىہَا ۪ۙ﴿۸﴾ قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا ۪ۙ﴿۹﴾ وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا ﴿ؕ۱۰﴾
“শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সু-বিন্যস্ত করেছেন। তাঁর। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, যে নিজের নফসকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। আর যে নফসকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।" [সূরা শামস: ৭-১০
রোজ কিয়ামতের মাঠে যে সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর আরশে আযীমের নিচে ছায়াস্ত হবেন তারা সকলেই নিজেদের নসের নিয়ন্ত্রণকারী।
নবী (ﷺ) বলেন:"মানুষের নফস ও কুপ্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করা হলো সর্বোত্তম জিহাদ ।[9]
হাসান বাসরী (রহঃ) কে একজন বলল, হে আবু সাঈদ সর্বোত্তম জিহাদ কী? তিনি বললেন: তোমার কুপ্রবৃত্তির সাথে তোমার জিহাদ করা।[10]
ইবনুল কায়োম (রহ:) বলেন: আমি আমাদের শাইখ ইবনে তাইমিয়্যা (রহ:)কে বলতে শুনেছি: নফস ও প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করাই হচ্ছে কাফের ও মুনাফেকদের সাথে জিহাদ করার মূল কারণ তাদের সাথে ততক্ষণ জিহাদ করতে সক্ষম হবে না যতক্ষণ নিজের নফস ও প্রবৃত্তির সাথে প্রথমে জিহাদ না করবে।
ان الهوى ذاء ودوارة مخالفته قال بعض العارفين: إن شئت أخبرتك بدالك وبدوانك ، دارك هواك ودواؤك تراك هواكومخالفته.
কুপ্রবৃত্তি হলো রোগ আর ঔষধ হলো তার বিপরীত করা। কোন এক বিজ্ঞজন বলেছেন: যদি তুমি চাও তাহলে তোমার রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে আমি খবর দেব। তোমার রোগ হলো তোমার কুপ্রবৃত্তি আর তার চিকিৎসা হলো। তোমার কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ ত্যাগ করা এবং তার বিপরীত করা। বিশ্বরুল হাফী (রহঃ) বলেন: সমস্ত বালা-মসিবত হলো: তোমার কুপ্রবৃত্তির অনুসরণে আর সবকিছুর চিকিৎসা হলো তার বিপরীত করাতে।
৯. এ বিষয়ের কিতাবাদি পড়া এবং অডিও-ভিডিও সিডি শুনা ও দেখা
যেমন ইমাম ইবনুল কায়োম (রহ:)-এর কিতাব: রাওয়াতুল মুহিব্বীন ওয়া নুজহাতুল মুশতাকীন ও সালাফদের অন্যান্য কিতাব। এ ছাড়া আমাদের এই বইটি আপনার জন্য অতি উপকারি।
(খ) বিস্তারিতভাবে চিকিৎসা:
আল্লাহর সাহায্য ও তওফিকে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে কুপ্রবৃত্তির গোলামী থেকে নাজাত পাওয়া সম্ভব।[11]
১. স্বাধীন দৃঢ়তাঃ
ইহা নফসের পক্ষে ও বিপক্ষের সব ব্যাপারে ঈর্ষাবান ও আত্মসম্মানের প্রতি খেয়াল রাখতে পারে।
২. ধৈর্যের ডোজ
ইহা নফসকে তার তিক্ততার প্রতি সবর করার ব্যাপারে ঘড়ির কাজ করে।
৩. আত্মিক শক্তি:
যা ঐ ধৈর্যের ভোজগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। এ ছাড়া বাহাদুরীও একটি ধৈর্যের ঘড়ি ও উত্তম জিন্দেগি, যা মানুষ একমাত্র সবরের দ্বারাই হাসিল করতে পারে।
৪. পরিণামের প্রতি দৃষ্টি রাখা:
ঐ ভোজের মাধ্যমে পরিণাম ভাল ও আরোগ্য লাভের প্রতি নজর রাখা।
৫. মজা ও ব্যথার মাঝের পরিমাপ করা:
এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রবৃত্তির গোলামীর পরিণতির ব্যথার চাইতে তার প্রতি ধৈর্যধারণ কি বেশি
৬. নিজের মর্যাদা ও অবস্থানের প্রতি খেয়াল রাখা:
আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর বান্দাদের অন্তরে তার মর্যাদা ও অবস্থা বাকি রাখার জন্য চেষ্টা করা। কারণ ইহা প্রবৃত্তির গোলামীর চাইতে তার জন্য কল্যাণকর ও
৭. নিজের সচ্চত্রিতার সুখ্যাতিকে অগ্রাধিকার দেয়া
পাপের মজার উপরে নিজের মান-সম্মান, পবিত্রতা, সক্ষত্রিতা ও তার মজাকে অগ্রাধিকার দেয়া।
৮. শত্রু শয়তানের উপর বিজয়ের আনন্দ:
নিজের শত্রু শয়তানের প্রতি বিজয়ী হওয়ার আনন্দ করা এবং শয়তানকে তার দুশ্চিন্তা ও টেনশনসহ
অপদস্ত করে পরাজিত করা। যার ফলে সে তার থেকে উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে না। আর আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বান্দার থেকে পছন্দ করেন যে, সে যেন তার শত্রুকে নারাজ ও রাগান্বিত করে। যেমন আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
مَا کَانَ لِاَہۡلِ الۡمَدِیۡنَۃِ وَ مَنۡ حَوۡلَہُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ اَنۡ یَّتَخَلَّفُوۡا عَنۡ رَّسُوۡلِ اللّٰہِ وَ لَا یَرۡغَبُوۡا بِاَنۡفُسِہِمۡ عَنۡ نَّفۡسِہٖ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ لَا یُصِیۡبُہُمۡ ظَمَاٌ وَّ لَا نَصَبٌ وَّ لَا مَخۡمَصَۃٌ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ لَا یَطَـُٔوۡنَ مَوۡطِئًا یَّغِیۡظُ الۡکُفَّارَ وَ لَا یَنَالُوۡنَ مِنۡ عَدُوٍّ نَّیۡلًا اِلَّا کُتِبَ لَہُمۡ بِہٖ عَمَلٌ صَالِحٌ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۲۰﴾ۙ
(ক) এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের মনে ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রদের পক্ষ থেকে তারা যাকিছু প্রাপ্ত হয় তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে তাদের জন্য লিখিত হয় নেক আমল। নি:সন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীল লোকদের হক নষ্ট করবেন না । [সূরা তাওবা: ১২০]
یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ الۡکُفَّارَ ؕ
(খ) "যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন।" [সূরা ফাতহ : ২৯]
مَنۡ یُّہَاجِرۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ یَجِدۡ فِی الۡاَرۡضِ مُرٰغَمًا کَثِیۡرًا وَّ سَعَۃً ؕ
(গ) “যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে।” [সূরা নিসা: ১০০]
অর্থাৎঃ এমন জায়গা যেখানে আল্লাহর দুশমনদেরকে নারাজ করা যায়। স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহর সত্য ভালবাসার আলামত হলো তাঁর শত্রুদেরকে রাগান্বিত এবং নারাজ করা।
৯. সৃষ্টির রহস্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করা:
চিন্তা করা যে তাকে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; বরং তাকে তৈরী করা হয়েছে বড় একটি জিনিসের জন্য যা হাসিল করতে হলে অবশ্যই প্রবৃত্তির নাফরমানি ছাড়া সম্ভব না।
১০. লাভ ও লোকসানের মাঝে পার্থক্য করা:
নিজের আত্মার জন্য এমন কিছু নির্বাচন না করা যার ফলে জীবজন্তু তার চেয়ে উত্তম হয়; কারণ একটি জন্তুও তার লাভ ও লোকসানের স্থানের মাঝে স্বভাবগতভাবে পার্থক্য করতে সক্ষম। তাই সে ক্ষতির উপরে লাভকে অগ্রাধিকার দেয়। আর মানুষকে এ জন্যই তো বিবেক দান করা হয়েছে। অতএব, সে যখন তার ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না অথবা জানার পরেও যা ক্ষতিকর তাকে প্রাধান্য দেয় তখন তার চেয়ে একটি জন্তুর অবস্থা অনেক ভাল প্রমাণ করে।
১১. পরিণতির প্রতি চিন্তা-ভাবনা করা
প্রবৃত্তির গোলামীর পরিণাম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যে, পাপ ও নাফরমানি তার কতো মান-সম্মান নষ্ট করেছে। কতোবার তাকে লাঞ্ছিত করেছে। একটি লোকমা কতো লোকমা হতে মাহরুম করেছে। একটি মজা বহু মজাকে হারিয়েছে। একটি কামনা-বাসনা মান-সম্মানকে টুকরা টুকরা এবং মাথা নিচু করে দিয়েছে। এ ছাড়া সুনামের বদলে বদনামী ছড়িয়েছে এবং এমন দুর্নাম ও ভর্ৎসনার উত্তরাধিকার বানিয়েছে, যা পানি দ্বারা ধৈাত করা সম্ভব না। কিন্তু কি করা যাবে প্রবৃত্তির গোলামের চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
১২. কি পেল আর কি হারাল
প্রবৃত্তির গোলাম তার উদ্দেশ্য পুরা করার পরের কথা ভাবা প্রয়োজন যে, সে কি পেল আর কি হারাল? কারণ উত্তম মানুষ পরিণাম যাচাই-বাছাই ছাড়া কোন কর্ম সম্পাদন করে না।
১৩. নিজেকে অন্যের স্থানে রেখে ভাবা
প্রবৃত্তির গোলামীকে পূর্ণভাবে অন্যের ব্যাপারে ভাবার পর নিজেকে সে স্থানে রেখে চিন্তা করে দেখা: কারণ একটি জিনিসের হুকুম তার অনুরূপ জিনিসের মতই।
১৪. বিবেক ও দ্বীনের কাছে জিজ্ঞাসা করা:
প্রবৃত্তির চাহিদার প্রতি চিন্তা করে দেখা। অতঃপর সে ব্যাপারে তার বিবেক ও দ্বীনকে জিজ্ঞাসা করলে তাকে উত্তর দেবে যে, ইহা গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন: “যদি তোমাদের কারো কোন নারীকে ভাল লাগে, তাহলে তার পচা ও দুর্গন্ধময় স্থানসমূহ যেন স্মরণ করে। এতে করে সে তার ফেতনা হতে হেফাজতে থাকবে।
১৫. প্রবৃত্তির গোলামীর লাঞ্ছনাকে ঘৃণা করা:
কারণ মনের কামনা-বাসনার যেই আনুগত্য করেছে সেই লাঞ্ছিত হয়েছে। আর প্রবৃত্তির গোলামদের শক্তি ও বড়াই দেখে ধোঁকায় পড়বেন না: কারণ তাদের ভিতর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। কেননা অহঙ্কার ও লাঞ্ছনা তাদের মাঝে একত্রিত হয়েছে।
১৬. কল্যাণ ও অকল্যাণের তুলনা করা:
এক দিক থেকে দ্বীন, ইজ্জত-সম্মান ও ধন সম্পদের নিরাপত্তা এবং অন্যদিকে কাম্য ভোগের হাসিন দুইটির মাঝে তুলনা করা দরকার। নিশ্চয় দু'টির মাঝে কোন প্রকার আনুপাতিক হার খোঁজ করে পাবে না। অতএব, জেনে রাখুন যে, তার এটির দ্বারা অপরটির ব্যবসা সবচেয়ে আহমক লোকের কাজ।
১৭. উঁচু অভিপ্রায়
নিজেকে তার শত্রুর শক্তির অধীন হওয়াকে ঘৃণ করা; কারণ শয়তান যখন কোন ব্যক্তির মধ্যে ক্ষীণ মনবল ও দুর্বল অভিপ্রায় এবং প্রবৃত্তির প্রতি ঝোঁক দেখে তখন তার ব্যাপারে লোভ করে। এ ছাড়া তাকে ধরাশয় করে প্রবৃত্তির গোলামীর লাগাম পরিয়ে দেয় এবং যথা ইচ্ছা যেখানে-সেখানে চালাতে থাকে। আর যখন তার থেকে শক্ত মনবল ও আত্মত্ম মর্যাদা এবং উচ্চাভিলাষ অনুভব করে তখন তার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু মাঝে মধ্যে অপহরণ ও চুরি করে থাকে।
১৮. প্রবৃত্তির গোলামীর ক্ষতি-লোকসান
এ কথা জানা উচিত যে, প্রবৃত্তির আনুগত্য যে কোন জিনিসে মিশেছে তার বিপর্যয় ঘটেছে। যদি জ্ঞানের মাঝে মিশে তাহলে বিদাত ও ভ্রষ্টতার জন্ম নেই এবং তার জন্মদাতা প্রবৃত্তি পূজারি হয়ে যায়। আর যদি জুহুদে (আল্লাহমুখীতে) মিশে তাহলে তার সাথীকে রিয়া-সুম'য়া (লোক দেখানো ও শুনানো) ও সুন্নতের বিপরীতের দিকে ঠেলে দেয়। আর যদি বিচারে মিশে যায় তবে তার সঙ্গীকে জুলুম করতে ও সত্য হতে বিরত রাখে। আর যদি সম্পদ বণ্টনে মিশে তাহলে ইনসাফ থেকে জুলুমে নিয়ে যায়। আর যদি দায়িত্ব অর্পণ ও অপসারণে মিশে তাহলে আল্লাহ ও মুসলমানদের সাথে খেয়ানতে পতিত করে। তাই প্রবৃত্তির খাহেশ মোতাবেক যাকে ইচ্ছা তাকে পদ দেয়
এবং যাকে ইচ্ছা তাকে অপসারণ করে। আর যদি এবাদতে মিশ্রণ ঘটে তাহলে আনুগত্য ও সান্নিধ্য হতে বের করে দেয়। মোট কথা যে কোন জিনিসে মিশে তা বিনষ্ট করে ফেলে।
১৯. শয়তানের চুরির দরজা:
এ কথা জেনে রাখা উচিত যে, বনি আদমের নফসের পূজাই শয়তানের একমাত্র চুরির দরজা। এ পথ ধরেই সে ঢুকে তার অন্তর ও আমল বরবাদ করে ফেলে। সে এ প্রবৃত্তির গোলামী ছাড়া অন্য কোন দরজা পায় না। বিষ যেমন শরীরের প্রতিটি অংশে দ্রুত সংক্রম করে সেরূপ প্রবৃত্তির বিষক্রিয়া সবকিছুতে দ্রুত সংক্রমণ করে ।
২০. শরিয়তের পরিপন্থী:
আল্লাহ তা'য়ালা প্রবৃত্তির গোলামীকে তাঁর রসুলের প্রতি যা নাজিল করেছেন তার বিপরীত করেছেন। আর নফসের আনুগত্যকে রসূলগণের আনুগত্যের বিপরীত করেছেন। তাই আল্লাহ তা'য়ালা মানুষকে দুই ভাকে বিভক্ত করেছেন: ওহীর অনুসারী ও প্রবৃত্তির অনুসারী। ইহা কুরআনে অধিকবার উল্লেখ হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿٪۵۰﴾
(১) “অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তাহলে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতর পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।” [সূরা কাসাস : ৫০]
وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ بَعۡدَ الَّذِیۡ جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ ﴿۱۲۰﴾ؔ
(২) "যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তিরসমূহের অনুসরণ করেন,ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে আল্লাহর তরফ থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।" [সূরা বাকারা ১২০]
২১. জীবজন্তুর সাথে সাদৃশ্যঃ আল্লাহ তায়ালা প্রবৃত্তি পূজারিদেরকে জঘন্য পশুর সাথে আকৃতি ও অর্থের দিক থেকে তুলানা ও সাদৃশ্য দিয়েছেন। কখনো কুকুরের সাথে যেমন তাঁর বাণী:
وَ لَوۡ شِئۡنَا لَرَفَعۡنٰہُ بِہَا وَ لٰکِنَّہٗۤ اَخۡلَدَ اِلَی الۡاَرۡضِ وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ ۚ فَمَثَلُہٗ کَمَثَلِ الۡکَلۡبِ ۚ اِنۡ تَحۡمِلۡ عَلَیۡہِ یَلۡہَثۡ اَوۡ تَتۡرُکۡہُ یَلۡہَثۡ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُ الۡقَوۡمِ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا ۚ فَاقۡصُصِ الۡقَصَصَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۱۷۶﴾
অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।" [সূরা আ'রাফ : ১৭৬ |
আবার কখনো গাধার সাথে সদৃশ দিয়েছেন
যেমন আল্লাহর বাণী:
کَاَنَّہُمۡ حُمُرٌ مُّسۡتَنۡفِرَۃٌ ﴿ۙ۵۰﴾ فَرَّتۡ مِنۡ قَسۡوَرَۃٍ ﴿ؕ۵۱﴾
“ যেন তারা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গর্দভ। হট্টগোলের কারণে পলায়নপর।" [সূরা মুদ্দাসসির : ৫০-৫১।
আবার কখনো তাদের আকৃতিকে পরিবর্তন করে বানর ও শূকর করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহর বাণী:
قُلۡ ہَلۡ اُنَبِّئُکُمۡ بِشَرٍّ مِّنۡ ذٰلِکَ مَثُوۡبَۃً عِنۡدَ اللّٰہِ ؕ مَنۡ لَّعَنَہُ اللّٰہُ وَ غَضِبَ عَلَیۡہِ وَ جَعَلَ مِنۡہُمُ الۡقِرَدَۃَ وَ الۡخَنَازِیۡرَ وَ عَبَدَ الطَّاغُوۡتَ ؕ اُولٰٓئِکَ شَرٌّ مَّکَانًا وَّ اَضَلُّ عَنۡ سَوَآءِ السَّبِیۡلِ ﴿۶۰﴾
“বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি তাদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন, যাতের প্রতি তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের এবাদত করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে।" [মায়েদা: ৬০]
২২. অযোগ্য ও অনুপযুক্ত:
প্রবৃত্তির গোলামরা পরিচালনা, সরদারী, ইমামতি ও নেতা হওয়ার অযোগ্য। আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করেছেন এবং তাদের আনুগত্য করা হতে নিষেধ করেছেন। অপসারণ সম্পর্কে আল্লাহ তাঁর খালীল ইবরাহীমকে বলেন
وَ اِذِ ابۡتَلٰۤی اِبۡرٰہٖمَ رَبُّہٗ بِکَلِمٰتٍ فَاَتَمَّہُنَّ ؕ قَالَ اِنِّیۡ جَاعِلُکَ لِلنَّاسِ اِمَامًا ؕ قَالَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ؕ قَالَ لَا یَنَالُ عَہۡدِی الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۱۲۴﴾
"আমি তোমাকে মানবজাতির ইমাম করব। তিনি (ইবরাহীম) বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি (আল্লাহ) বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছবে না।" [সূরা বাকারা: ১২৪]
অর্থাৎঃ জালেমরা আমার অঙ্গিকারভুক্ত নেতৃ পাবে না। আর প্রতিটি প্রবৃত্তির গোলাম জালেম। যেমন আল্লাহর বাণী:
بَلِ اتَّبَعَ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَہۡوَآءَہُمۡ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ۚ
"বরং যারা জালেম, তারা অজ্ঞতাবশত: তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে।" [সূরা রূম: ২৯]
আর আল্লাহ তাদের আনুগত্য থেকে নিষেধ করে বলেন:
وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ وَ کَانَ اَمۡرُہٗ فُرُطًا ﴿۲۸﴾
“যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না ।" সূরা কাহফ ২৮।
২৩. মূর্তি পূজা:
আল্লাহ তায়ালা প্রবৃত্তির গোলামকে মূর্তি পূজারীর স্থানে রেখেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর কিতাবের দুই স্থানে বলেনঃ
اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِ وَکِیۡلًا ﴿ۙ۴۳﴾
"আপনি কি তাকে দেখন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে।" [সূরা ফুরকান: ৪৩ ও সূরা জাসিয়াহ:২৩]
হাসান বাসরী (রহ:) বলেন: সে হলো ঐ মুনাফেক, যে কোন জিনিসের কামনা-বাসনা করে তারই উপর আরোহণ করে। তিনি আরো বলেন: মুনাফেক তার প্রবৃত্তির বান্দা সে যে কোন জিনিসের ইচ্ছা করে তাই করে। এরূপ তাফসীর ইবনে আব্বাস [রাঃl থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
২৪. দোযখের খোঁয়াড়
নফসের কামনা-বাসনাই দোযখের খোঁয়াড়। এ দ্বারাই দোষখ বেষ্টিত। এতএব, যে এতে পতিত হবে সে দোযখে পতিত হবে। যেমনটি নবী -এর হাদীস:
عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: - حفت الحلة بالمكاره وحفت النار بالشهوات ..
আনাস ইবনে মালেক [রাঃ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “জান্নাতকে অপছন্দনীয় জিনিস দ্বারা বেষ্টন করা হয়েছে। আর জাহান্নামকে নফসের কামনা-বাসনা দ্বারা বেষ্টন করা হয়েছে।[12]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ أَرْسَلَ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَام إِلَى الْجَنَّةِ فَقَالَ انْظُرْ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا أَعْدَدْتُ لِأَهْلِهَا فِيهَا فَنَظَرَ إِلَيْهَا فَرَجَعَ فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا فَأَمَرَ بِهَا فَحُفَّتْ بِالْمَكَارِهِ فَقَالَ اذْهَبْ إِلَيْهَا فَانْظُرْ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا أَعْدَدْتُ لِأَهْلِهَا فِيهَا فَنَظَرَ إِلَيْهَا فَإِذَا هِيَ قَدْ حُفَّتْ بِالْمَكَارِهِ فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ قَالَ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَى النَّارِ وَإِلَى مَا أَعْدَدْتُ لِأَهْلِهَا فِيهَا فَنَظَرَ إِلَيْهَا فَإِذَا هِيَ يَرْكَبُ بَعْضُهَا بَعْضًا فَرَجَعَ فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَا يَدْخُلُهَا أَحَدٌ فَأَمَرَ بِهَا فَحُفَّتْ بِالشَّهَوَاتِ فَقَالَ ارْجِعْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَنَظَرَ إِلَيْهَا فَإِذَا هِيَ قَدْ حُفَّتْ بِالشَّهَوَاتِ فَرَجَعَ وَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَنْجُوَ مِنْهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুল (ﷺ)হতে বর্ণনা করেন,তিনি (ﷺ) বলেন, যখন আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করে জিবরীলকে জান্নাত দেখার জন্য প্রেরণ করেন। আল্লাহ বলেন: জান্নাত ও তার অধিবাসীদের জন্য সেখানে যা তৈরী করেছি তা দেখ আস। নবী (ﷺ) বলেন: জিবরীল জান্নাত ও তার অধিবাসীদের জন্য আল্লাহ সেখানে যা তৈরী করেছেন তা দেখে এসে বললেন: আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম। যে কেউ তার কথা শুনবে সে তাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাতকে অপছন্দনীয় জিনিস দ্বারা বেষ্টন করার নির্দেশ করলেন। এরপর আবার আল্লাহ জিবরীলকে জান্নাত ও তার অধিবাসীদের জন্য সেখানে যা তৈরী করেছেন তা দেখার জন্য নির্দেশ করলেন। নবী (ﷺ) বলেন: জিবরীল ফিরে গিয়ে দেখল জান্নাতকে কষ্টকর জিনিস দ্বারা বেষ্টন করা হয়েছে। ফিরে এসে জিবরীল। বললেন: আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম! আমার ভয় হচ্ছে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
এরপর আল্লাহ তা'য়ালা জিবরীলকে বললেন: জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের জন্য সেখানে যা তৈরী করেছি তা দেখে এসো। সেখানে দেখলেন: জাহান্নামের একাংশ অন্যাংশের উপর সওয়ার হয়ে আছে। এসে বললেন: আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম! কেউ জাহান্নামের কথা শুনে তাতে প্রবেশ করবে না। এরপর আল্লাহ জাহান্নামকে শাহওয়াত (কামনা-বাসনা) দ্বারা বেষ্টন করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর জিবরীলকে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য বললেন। জিবরীল দেখে এসে বললেন: আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম! আমার ভয় হয় কেউ তা হতে নাজাত পাবে না।
২৫. কুফরির ভয়
প্রবৃত্তির অনুসারীর অজান্তে ইসলাম থেকে তার খারিজ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নবী (ﷺ) এর হাদীস:
عن عبد الله بن عمرو قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم « لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواة تبعا لما جنت به » رواد في شرح السند
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর [রাঃ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুগত না হবে।”[13]
عن أبي برزة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: « إن ممـا أخشى عليكم شهوات الغي في بطونكم وفروجكم ومضلاتالهوى». أحمد والطبراني.
আবু বারজা [রাঃ] হতে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (ﷺ) বলেছেন:“যা হতে তোমার প্রতি ভয় করি তা হলো: তোমাদের পেট ও লজ্জাস্থানের বিভ্রান্তি ও প্রবৃত্তির ভ্রষ্টতা।”[14]
২৬. ধ্বংসের কারণ:
প্রবৃত্তির গোলামী ধ্বংসকারী বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। নবী (ﷺ)-এর বাণী:
عن أبي هريرة ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : « ثلاث منجيات ، وثلاث مهلكات ، فأما المنجيات : فتقوى الله في الـسر والعلانية، والقول بالحق في الرضا والسخط، والقصد في العـي والفقر، وأما المهلكات : فهوى منبع، وضح مطاع، وإعجاب بنفسه وهي أشده ». رواه البيهقي في شعب الإيمان، قال الألباني في " السلسلة الصحيحة " 1 / 113 : فهو مجموعها حس إن شاء الله تعالى
আবু হুরাইরা [রাঃ] থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: “তিনটি জিনিস নাজাতদানকারী এবং তিনটি জিনিস ধ্বংসকারী। নাজাতদানকারী হলো: প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহভীরুতা, রাজি ও নারাজ সর্বঅবস্থায় সত্য বলা এবং স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল মিতব্যয়িতা। আর ধ্বংসকারী হলো: অনুসরণীয় প্রবৃত্তি, মান্য কৃপণাতা এবং আত্মগর্ব। শেষেরটি হলো সব চাইতে মারাত্মক। [15]
২৭. বিজয়ের কারণ:
নিশ্চয় প্রবৃত্তির বিপরীত বান্দার শরীরে, অন্তরে ও জবানে শক্তি সৃষ্টি করে। কোন একজন সালাফে সালেহীন বলেছেন: নিজের প্রবৃত্তির উপর জয়ী ব্যক্তি একাই একটি শহর বিজয়কারী ব্যক্তির চাইতেও বেশি শক্তিশালী । আর বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে:
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ليس الشديد بالصرعة إنّما الشديد الذي يملك نفسه عند
আবু হুরাইরা [রাঃ] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:“ধরাশায়কারী তো শক্তিশালী নয় বরং প্রকৃত সবল হলো: যে রাগের সময় নিজেকে আয়ত্ব রাখতে পারে ।”[16]
অতএব, বান্দা যখন তার প্রবৃত্তির বিপরীত করবে তখন সে তার শক্তির সাথে আরো শক্তি অর্জন করতে পারবে।
২৮. মানবিকতা ও চক্ষুলজ্জতা:
নিজের প্রবৃত্তির বিপরীতকারী সব চাইতে বেশি মানবিক ব্যক্তি। মু'আবিয়া [রাঃ] বলেন: মানবিকতা হলো: মনের কামনা-বাসনা ত্যাগ করা এবং প্রবৃত্তির নাফরমানি করা কারণ প্রবৃত্তির অনুসরণ মানবিকতাকে অসুস্থ বানিয়ে দেয় এবং তার বিপরীত করা মানবিকতাকে সুস্থ রাখে।
২৯. বিবেক ও প্রবৃত্তির লড়াই
প্রতিদিন প্রবৃত্তি ও বিবেকের মাঝে তাদের সাথীকে নিয়ে লড়াই হয়। অতঃপর যে তার সাথীর উপর বেশি শক্তিশালী হয় সে অপরকে ভাগিয়ে দিয়ে নিজের কর্তৃত্ব চালাই। আবু দারদা [রাঃ] বলেন: যখন মানুষ প্রভাত করে তখন তার প্রবৃত্তি ও আমল একত্রিত হয়। অতঃপর যদি তার আমল প্রবৃত্তির অনুগত হয়, তাহলে তার সে দিনটি হবে জঘন্য দিন। আর যদি তার প্রবৃত্তি আমলের অনুগত হয়, তাহলে তার সে দিন হবে উত্তম দিন।
৩০. ভুল হওয়ার সম্ভবনা
আল্লাহ তা'য়ালা ভূল ও প্রবৃত্তির আনুগত্যকে সঙ্গী বানিয়েছেন অনুরূপ সঠিক ও প্রবৃত্তির বিপরীত করাকেও সঙ্গী বানিয়েছেন। যেমন কোন একজন সালাফে সালেহীন বলেছেন: যদি তোমার প্রতি দু'টি জিনসের মাঝেঝ সমস্যা হয় যে, কোনটি সুপথ ও সঠিক তাহলে তোমার প্রবৃত্তির যেটি নিকটতম সেটির বিপরীত কর। কারণ ভুলের নিকটম হল প্রবৃত্তির আনুগত্যে।
৩১. রোগ ও চিকিৎসা:
প্রবৃত্তি রোগ এবং তার চিকিৎসা হলো তার বিপরীত করা। কোন এক বিজ্ঞজন বলেছেন: তুমি যদি চাও তাহলে তোমার রোগের খবর দেব। আর যদি সে রোগের ঔষধ সম্পর্কে জানতে চাও তাহলে তারও খবর দেব। রোগ হলো তোমার প্রবৃত্তি এবং তার ঔষধ হলো প্রবৃত্তির বিপরীত করা।
৩২. জিহাদ:
প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ যদি কাফেরের বিরুদ্ধে জিহাদের চাইতে বড় না হয়, তবে তার চেয়ে কম না। একজন মানুষ হাসান বাসরী (রহঃ) কে বললেন: হে আবু সাঈদ! সবচেয়ে উত্তম জিহাদ কি? তিনি বললেন: তোমার প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেন: নফস ও প্রবৃত্তির জিহাদ কাফের ও মুনাফেকদের সাথে জিহাদের মূল; কারণ তাদের সাথে জিহাদ করতে ততক্ষণ পারবে না যতক্ষণ নিজের নফস ও প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করে তাদের পর্যন্ত না বের হবে।
৩৩. রোগ বৃদ্ধি হতেই থাকে।
প্রবৃত্তি রোগকে বৃদ্ধিকারী এবং তার বিপরীত হলো রক্ষাকারী। যে ব্যক্তি তার রোগ বৃদ্ধিকারী জিনিস ব্যবহার করে এবং রক্ষাকারী জিনিস হতে দূরে থাকে তাকে তার রোগ ধরাশায়ী করেই ছাড়ে। আব্দুল মালেক ইবনে কারীব বলেন: আমি একজন বেদুঈনের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখলাম, সে কঠিন চক্ষুপ্রদাহে আক্রান্ত এবং তার চোখ থেকে গাল বয়ে অশ্রু ঝড়ছে। আমি তাকে বললাম: তোমার চক্ষুদ্বয় কেন মুছছো না? সে বলল: ডাক্তার আমাকে মুছতে বারণ করেছেন। আর ওর মাঝে কোন কল্যাণ নেই যে অন্যকে ধারণ করে কিন্তু নিজে বিরত থাকে না। আর যখন নির্দেশ করে নিজে উপদেশ গ্রহণ করে না। বললাম: তুমি কিছু চাও? সে বলল: হাঁ, কিন্তু আমি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। নিশ্চয়ই দোযখবাসীদের রক্ষাকারী জিনিসের উপরে তাদের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা জয়ী হয়েছে। যার তাদেরকে ধ্বংস করেছে।যার ফলে তাদেরকে ধংস করেছে।
৩৪. মাহরুম ও তওফিকপ্রাপ্ত না হওয়া:
প্রবৃত্তির গোলামী বান্দার তওফিকের দরজাসমহ বন্ধ করে দেয় এবং অপদস্ত ও ভর্ৎসনার দরজাসমূহ খুলে দেয়। তাই তাকে দেখবে সে নিবেদিত মনে বলতে থাকে যদি আল্লাহ তাকে তওফিক দিত তাহলে এমন এমন হত বা করত। অথচ সে প্রবৃত্তির গোলামীর দ্বারা নিজে তার তওফিকের দরজাসমূহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফুয়াইল ইবনে ইয়াম বলেন: যার উপরে তার প্রবৃত্তি ও মনের কামনা-বাসনা জয়ী হয়েছে তার থেকে তওফিকের সব উৎস বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
কোন একজন বিজ্ঞজন বলেছেন: কুফরি চারটি জিনেসে রাগ, শাহওয়াত (প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা), আশা ও ভয়ে। অতঃপর বলেন। এর মধ্যে দু'টি দেখেছি। একজন রাগ হয়ে নিজের মাকে হত্যা করেছে এবং অপরজন প্রেমে পড়ে খ্রীষ্টান হয়ে গেছে। কোন একজন ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তওয়াফ করা অবস্থায় এক সুন্দরী নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়ে। নারীর নিকটে পৌঁছে বলে দ্বীনের ভালবাসা কামনা করছি কিন্তু প্রবৃত্তির গোলামী আমাকে আশ্চর্য করতেছে। তাই আমার প্রবৃত্তির কামনা ও দ্বীনের ভালবাসা নিয়ে কি করব? মহিলাটি বলল: দু'টির একটি ছেড়ে দাও দ্বিতীয়টি হাসিল হয়ে যাবে।
৩৫. বিবেকের বিপর্যয়।
যে ব্যক্তি তার প্রবৃত্তিকে অগ্রাধিকার দেবে তার বিবেক ও চিন্তাধারার বিপর্যয় ঘটবে। কারণ সে তার বিবেকের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে খেয়ানত করেছে তাই তিনি তার বিবেকে বিপর্যয় ঘটিয়েছেন। আর এই হলো আল্লাহর তা'য়ালার নিয়ম: যেই তাঁর কোন বিষয়ে খেয়ানত করে তার ভাগ্যে বিপর্যয় মিলে। মু'তাসিম একদিন তাঁর এক সাথীকে বলেন: হে অমুক! যখন প্রবৃত্তির সাহায্য হয় তখন চিন্তাধারা বিদায় নেয়।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) কে একজন বলে। যখন কোন ব্যক্তি দিরহাম সমীক্ষায় খেয়ানত করে তখন আল্লাহ তা'য়ালা তার সমীক্ষা শক্তি ছিনিয়ে নেন অথবা বলে, ভুলিয়ে দেন। উত্তরে শাইখ বলেন: অনুরূপ প্রযোজ্য ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের খেয়ানত করে ইলমী মাসায়েলে তথা জ্ঞানের বিধানসমূহে।
৩৬. কবর ও আখেরাতে সংকীর্ণতা:
যে ব্যক্তি স্বীয় প্রবৃত্তির আনুগত্যকে প্রশস্ত করে দেবে তার প্রতি কবরে ও রোজ কিয়ামতে সঙ্কিণ করা হবে। আর যে প্রবৃত্তির বিপরীত করে তার উপর সম্ভির্ণ করবে করবে ও কিয়ামতে প্রশস্ত করা হবে। আল্লাহ তা'য়ালা বিষটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তার এ বাণীতে
وَ جَزٰىہُمۡ بِمَا صَبَرُوۡا جَنَّۃً وَّ حَرِیۡرًا ﴿ۙ۱۲﴾
এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন। জান্নাত ও রেশমী পোশাক।” [সূরা দাহার ১২]
যখন ধৈর্যে রয়েছে প্রবৃত্তির গোলামী থেকে বন্দী রাখায় কঠোরতা ও সর্ণিতা তখন তাদেরকে এর বিনিময়ে আল্লাহ প্রতিদান দিয়েছেন রেশমী কাপড়ের কোমলতা ও জান্নাতের প্রশস্তা।আৰু সুলাইমান দারানী বলেন: এ আয়াতে আল্লাহর প্রতিদান তাদেরকে নফসের কামনা-বাসনা থেকে ধৈর্যধারণের জন্যে।
৩৭. বাধা সৃষ্টি।
প্রবৃত্তির গোলামকে রোজ কিয়ামতে নাজাতপ্রাপ্তদের সাথে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে বাধা সৃষ্টি করানো হবে, যেমন সে দুনিয়াতে তার অন্তরকে তাঁদের সঙ্গী হওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল।
মুহাম্মদ ইবনে আবুল ওয়ারদ বলেন: আল্লাহ তা'য়ালা এমন একটি দিন বানিয়েছেন, যে দিন প্রবৃত্তির গোলামরা তার মসিবত হতে নাজাত পাবে না। আর কিয়ামতের দিন সবচেয়ে দেরীতে যারা উঠবে তারা হলো প্রবৃত্তির গোলামরা। আর বিবেক যখন তালাশের ময়দানে দৌড়াই তখন সবচেয়ে অধিক হাসিলকারী হয় সবরকারী। বিবেক হলো খনি এবং তা হতে খনিজপদার্থ বের করার মেশিন হলো। চিন্তা-ভাবনা। ৩৮. দৃঢ়তার বন্ধন খুলে যায়।
প্রবৃত্তির গোলামী দৃঢ়তার বন্ধনকে খুলে ও দুর্বল করে দেয় এবং তার বিপরীত দৃঢ়তাকে মজবুত ও শক্ত করে দেয়। আর দৃঢ়তা এমন এক বাহন যাতে আরোহণ করে বান্দা আল্লাহ ও আখেরাতের দিকে সফর করতে পারে। তাই যদি বাহন বিকল হয়ে পড়ে তাহলে মুসাফিরের যাত্রা ব্যাহত হয় এবং উদ্দেশ্য মঞ্জিল অনেক দূরের হয়ে যায়।
ইয়াহুয়া ইবনে মু'আযকে দৃঢ়তার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সঠিক ব্যক্তি কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন: নিজের প্রবৃত্তির উপর জয়ী ব্যক্তি। একদিন খালাফ ইবনে খালীফা আমীর সুলাইমান ইবনে হাবীব ইবনে মাহলাবের নিকট প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর নিকট ছিল সবচেয়ে সুন্দরী বাদূর (পূর্ণিমার চাঁদ) নামের দাসী। আমীর সুলাইমান থালাফকে জিজ্ঞাসা করলেন। এ দাসীসিটিকে কেমন দেখছেন? তিনি বললেন: আল্লাহ আমীরকে ভাল রাখুন। তাঁর দু'চোখ কখনো এর চাইতে সুন্দর আর কিছু দেখেনি। উত্তরে আমীর বললেন: তাহলে তার হাত ধরে নিয়ে যান। উত্তরে খালাফ বললেন: আমি আমীর সাহেবকে এর বিষয়ে কষ্ট দিতে চাইনা: কারণ এর ব্যাপারে তাঁর পছন্দ ও বিস্ময় দেখেছি। আমীর বললেন: আপনার অমঙ্গল হোক! তার ব্যাপারে আমার পছন্দ ও আশ্চর্যের পরেও তাকে নিয়ে যান; কারণ এতে করে আমার প্রবৃত্তি জানতে পারবে যে, আমি তার উপরে বিজয়ী।
৩৯. খুবই জঘন্য সোয়ারী:
প্রবৃত্তি পূজারী ঐ অশ্বরোহীর মত যার ঘোড়া দ্রুতগামী, লাগামহীন দৌঁড়ানোর সময় তার আরোহীকে আছাড় দেয় অথবা বিপজ্জনক স্থানে নিয়ে পৌঁছে দেয়।
এক বিজ্ঞজন বলেছেন: জান্নাতের দিকে সবচেয়ে দ্রুতগামী বাহন হচ্ছে দুনিয়ায় আল্লাহমুখী হওয়া। আর জাহান্নামের দিকে দ্রুতগামী বাহন হচ্ছে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার ভালবাসা। আর যে তার প্রবৃত্তির সোয়ারীতে আরোহণ করে তাকে দ্রুত ধ্বংসের উপত্যকায় নিয়ে ছাড়ে। অন্য এক বিজ্ঞজন বলেছেন: সবচেয়ে সম্মানিত আলেম হলেন, যে তার দ্বীনের হেফাজতের জন্যে দুনিয়া হতে ভাগে এবং প্রবৃত্তির পিছনে চলা তার প্রতি বড় কঠিন হয়।
আতা (রহ:) বলেন: যার প্রবৃত্তি বিবেকের উপরে বিজয়ী এবং তার ধৈর্য তাকে অস্থির ও উৎকণ্ঠিত করে সে লাঞ্ছিত হয়।
৪০. তাওহীদের বিপরীত
তাওহীদ ও প্রবৃত্তির গোলামী একটি অপরটির বিপরীত; কারণ প্রবৃত্তি হলো একটি মূর্তি। প্রতিটি বান্দার অন্তরে তার প্রবৃত্তি অনুসারে একটি করে মূর্তি রয়েছে। আর আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রসূলগণকে সকল মূর্তি ভাঙ্গা ও কোন শরীক ছাড়া একমাত্র আল্লাহর এবাদত করার জন্য প্রেরণ করেছেন। আল্লাহর এ উদ্দেশ্য নয় যে, মূর্তিগুলো ভাঙ্গা আর অন্তরের মূর্তিগুলো রেখে দেয়া। বরং উদ্দেশ্য প্রথমে অন্তরের মূর্তিগুলো ভাঙ্গা
হাসান ইবনে আলী আল-মুতাওয়ী বলেন: প্রতিটি মানুষের মূর্তি হলো তার প্রবৃত্তি। এতএব, যে তার বিপরীত করে তা ভেঙ্গে ফেলবে তাকেই তো যুবক বলা যাবে। আর ইবরাহীম খালীল তাঁর জাতিকে যে কথা বলেন তা একবার চিন্তা করে দেখুন।
اِذۡ قَالَ لِاَبِیۡہِ وَ قَوۡمِہٖ مَا ہٰذِہِ التَّمَاثِیۡلُ الَّتِیۡۤ اَنۡتُمۡ لَہَا عٰکِفُوۡنَ ﴿۵۲﴾
"যখন তিনি (ইবরাহীম) তাঁর পিতা ও তাঁর জাতিকে বললেন: এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ?।” [সূরা আম্বিয়া: ৫২]
ইহা ঐ মূর্তিগুলোর অনুরূপ যা অন্তরে পতিত হা সেগুলোর পূজা এবং আল্লাহ ছাড়া সেগুলোর এবাদত করে। আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِ وَکِیۡلًا ﴿ۙ۴۳﴾ اَمۡ تَحۡسَبُ اَنَّ اَکۡثَرَہُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ سَبِیۡلًا ﴿٪۴۴﴾
“আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বুঝে? তারা ভো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত " [সুরা ফুরকান: ৪৩-৪৪]
৪১. সমস্ত রোগের মূল
নিশ্চয় প্রবৃত্তির বিপরীত করাই হচ্ছে অন্তর ও শরীরের রোগের নির্মূলকরণ এবং তার অনুসরণ হচ্ছে অন্তর ও শরীরের রোগসমূহের আমন্ত্রণ। আর সমস্ত অন্তরের ব্যাধির উৎপত্তি হলো প্রবৃত্তির গোলামী থেকে। যদি শরীরের রোগসমূহকে পরীক্ষা করে দেখেন তাহলে অধিকাংশ পাবেন, যা ত্যাগ করা উচিত ছিল সেগুলোর উপরে প্রবৃত্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
৪২. দুশমনি ও হিংসার বুনিয়াদ
মানুষের মাঝে সংঘটিত সকল শত্রুতা, অনিষ্ট ও হিংসার মূল ও বুনিয়াদ হচ্ছে প্রবৃত্তির গোলামী। অতএব, যে তার প্রবৃত্তির বিপরীত করবে সে তার অন্তর ও শরীর এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আরাম দিয়ে নিজেকে ও অন্যান্যকে আরাম দিল ।
আবু বকর ওয়াররাক বলেন: যখন প্রবৃত্তি জয়ী হয় তখন অন্তরের প্রতি জুলুম করে আর যখন জুলম করে তখন বুকটা সন্ধির্ণ হয়ে পড়ে। আর বুকটা যখন সন্ধ হয়ে যায় তখন চরিত্র নোংরা হয়ে যায় এবং যখন চরিত্র নোংরা হয় তখন মানুষ তাকে ঘৃণা করে এবং সেও মানুষকে ঘৃণা করে। দেখুন! প্রবৃত্তির গোলামী পরস্পর ঘৃণা, অনিষ্ট, দুশমনি ও অধিকার হতে মাহরুম ইত্যাদির কিভাবে জন্ম দেয়।
৪৩. বিজয়ী একজন
আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার মাঝে প্রবৃত্তি ও বিবেক সৃষ্টি করেছেন। দু'টির মধ্যে যেটি শক্তিশালী হয় সেটির বিজয় হয় এবং অপরটি ঢাকা পড়ে যায়। যেমন আবু আলী সাকাফী বলেন: যার প্রবৃত্তি জয়ী হয় তার বিবেক ঢাকা পড়ে যায়। অতএব, দেখুন যার বিবেক ঢাকা পড়ে এবং তার বিপরীত প্রকাশ পায় তার পরিণতি কি হয়।
আলী ইবনে সাহল (রহ:) বলেন: বিবেক ও প্রবৃত্তি সর্বদা ঝগড়া করে। অতঃপর তওফিক হয় বিবেকের সঙ্গী আর অপদস্ত হয় প্রবৃত্তির সঙ্গী। আর নফস দুইজনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে যার বিজয় হয় তার সঙ্গী হয়ে যায়।
৪৪. শয়তানের হাতিয়ার:
আল্লাহ তা'য়ালা অন্তরকে শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বাদশাহ বানিয়েছেন এবং তাঁর পরিচয় জানার এবং তাকে মহব্বত ও এবাদত করার খনি করেছেন। আর অন্তরকে দু'টি বাদশাহ, দু'টি সেনাবাহিনী, দু'টি সাহায্যকারী এবং দু'টি হাতিয়ার দ্বারা পরীক্ষায় ফেলেছেন। সত্য, আল্লাহমুখী ও হেদায়েত হলো একটি বাদশাহ যার সাহায্যকারী হলো ফেরেশতাগণ এবং সেনাবাহিনী হলো সততা ও এখলাস এবং প্রবৃত্তির বিপরীত চলা।
আর বাতিল হলো দ্বিতীয় বাদশাহ যার সাহায্যকারী হলো শয়তানরা, সেনাদল হলো তার সৈন্যরা এবং হাতিয়ার হলো প্রবৃত্তির গোলামী। আর নফস দুই সেনাদলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে। বাতিলের সেনাবাহিনী অন্তরে প্রবেশ করে নফসের ছিদ্র ও তার পাশ দিয়ে। নফস হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে তার বিপরীত শত্রুর সাথে যোগ দেয়; যার ফলে অন্তরের প্রতি বিপদ এসে পড়ে। নসেই তার পক্ষ থেকে অন্তরের দুশমনকে অস্ত্র সর্বারহ করে ও তার জন্যে শহরের দরজা খুলে দেয়। অতঃপর শত্রু কেল্লায় প্রবেশ করে। বাতিলের বিজয় ডাঙ্কা বাজিয়ে অন্তরের উপরে অপদস্ত ও লাঞ্ছনার কলঙ্ক লাগায়
৪৫. সবচেয়ে বড় দুশমন:
মানুষের বড় দুশমন হলো তার শয়তান ও প্রবৃত্তি এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু হলো তার বিবেক এবং কল্যাণকামী ফেরেশতা। অতএব, যখন সে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও তার ফাঁদে পড়ে কয়েদী হয় এবং দুশমনকে খুশী হওয়ার সুযোগ করে দেয়, তখন তার বন্ধু ও প্রিয়জন নারাজ হয়ে যায়। ইহা এমন জিনিস যা থেকে নবী। (ﷺ) সর্বদা আশ্রয় প্রার্থনা করতেন:
اللهمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ
আবু হুরাইরা [রাঃ] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন: কঠিন বিপদ, দুর্ভাগ্য, অনিষ্টকর ফয়সালা ও দুশমনদের আন্দন করা হতে।[17]
৪৬. শেষ পরিণতি লাঞ্ছনা-গঞ্জনা:
প্রতিটি বান্দার শুরু ও শেষ রয়েছে। অতএব, যার শুরু প্রবৃত্তির গোলামী তার শেষ অপদস্ত, লাঞ্ছনা, বঞ্চিত, বালা-মসিবত প্রবৃত্তির আনুগত্য অনুপাতে। বরং প্রবৃত্তির কারণে তার শেষ এমন শাস্তি হয়ে দাড়াই যার দ্বারা তার অন্তরে কঠিন ব্যথা অনুভব করতে থাকে। যদি প্রত্যেক ভীষণ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের অবস্থার প্রতি ধেয়ান করেন, তবে দেখবেন তার শুরুটা প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিবেকের উপর অগ্রাধিকার দেয়া। আর যার শুরুটা প্রবৃত্তির বিপরীত দ্বারা এবং তার বুদ্ধির আনুগত্য তার পরিণতি সম্মান, অমুখাপেক্ষী এবং আল্লাহ ও মানুষের নিকট ইজ্জত।
আবু আলী দাক্কাক বলেন: যে ব্যক্তি তার শাহওয়াত তথা প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার প্রতি যৌবনে মালিক হয় তাকে আল্লাহ তায়ালা তার পরিণতবয়সে সম্মানিত করেন।
মুহাল্লার ইবনে আবী সুফরাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। এ পর্যন্ত কি দ্বারা পৌঁছছেন? উত্তরে বলেন: দৃঢ়তার আনুগত্য এবং প্রবৃত্তির নাফরমানি দ্বারা। ইহাই হচ্ছে দুনিয়ার শুরু ও শেষ। আর আখেরাতের শেষ আল্লাহ তা'য়ালা প্রবৃত্তির বিপরীতকারীর জন্যে জান্নাত এবং প্রবৃত্তির অনুসারীর জন্যে জাহান্নাম রেখেছেন।
৪৭. পায়ের বেড়ি ও গলার ফাঁস:
নফসের কামনা-বাসনা অন্তরের গোলামী, গলার ফাঁস ও পায়ের বেড়ি এবং তার অনুসরণ প্রতিটি মন্দের কয়েদী। অতএব, যে প্রবৃত্তির বিপরীত করে সে তার গোলামী থেকে আজাদ হয় এবং গলার ফাঁস ও পায়ের বেড়ি খুলে ফেলে ঐ ব্যক্তির স্থানে হয়, যার উপর পরস্পর বিরোধী কয়জন মালিক ছিল।
অনেক আবৃত ব্যক্তিকে তার প্রবৃত্তি কয়েদী করে পর্দা ফাঁস করে উলঙ্গ করে ছাড়ে। মন পূজরী ব্যক্তি একজন দাস যখন সে প্রবৃত্তির উপর জয়ী হয় তখন সে ফেরেশতা স্বরূপ হয়ে যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক বলেন: মসিবত ও তার কিছু লক্ষণ রয়েছে। আর তা হলো: প্রবৃত্তি হতে তোমার মুক্ত হওয়া না দেখা। বান্দা নফসের কামনা বাসনার গোলাম এবং আজাদ ব্যক্তি একবার পরিতৃপ্তি হলে দ্বিতীবার ক্ষুধার্ত হয়
৪৮. সুখী জিন্দেগী হারায়
প্রবৃত্তির বিপরীত করা বান্দাকে এমন মর্যাদায় পৌছায় যে, যদি সে আল্লাহর উপর কসম করে তাহলে তিনি তা পূর্ণ করেন। আর প্রবৃত্তির কারণে যা হারিয়েছে তার বদলায় বহুগুণ প্রয়োজন পূরণ করে দেন। সে ঐ ব্যক্তির মত, যে পঞ্চমল হতে বিমুখ হওয়ার বদলায় মণি-মুক্তা পায়। আর প্রবৃত্তির অনুসারী দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সর্বমঙ্গল ও সুখী জিন্দেগী হারায় যার কখনো তুলনা হয় না প্রবৃত্তির উপর জয়ী হলে। ইউসুফ [আঃ] এর হারাম হতে নিজের নসকে বিরত রাখার ফলে জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর তাঁর হাত, জবান, পা ও নফসের প্রশস্তা কতটুকু হয়েছিল সে ব্যাপারে একবার চিন্তা-ভাবনা করে দেখুন।
আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী বলেন: আমি সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) কে স্বপ্নে দেখে তাঁকে বলি আল্লাহ তা'য়ালা আপনার সাথে কি ব্যবহার করেছেন? উত্তরে বলেন: আমাকে কবরে রাখার পর পরই আল্লাহ তা'য়ালার সামনে দাঁড়াই। তিনি আমার খুবই সহজ হিসাব নেন। অতঃপর আমাকে জান্নাতে নেয়ার জন্য নির্দেশ করেন। আমি এখন জান্নাতের বৃক্ষরাজি ও নদীসমূহের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখানে না কোন শব্দ শুনি আর না কোন নড়াচড়া। হঠাৎ করে শুনতে গেলাম একজন বলতেছে: সুফিয়ান ইবনে সা'দ। বললাম: সুফিয়ান ইবনে সা'দ। সে বলল: তোমার কি মনে পড়ে যে, একদিন আল্লাহ তা'য়ালাকে তোমার প্রবৃত্তির গোলামীর উপরে প্রাধান্য দিয়েছিলে? বললাম: জি হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! অতঃপর চতুষ্পার্শ্ব হতে আমার উপর ফুল বর্ষিতে লাগল ।
৪৯. কিয়ামতে সম্মান ও মর্যাদা:
নিশ্চয় প্রবৃত্তির বিপরীত চলাতে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সম্মান ও মর্যাদা। এ ছাড়া রয়েছে প্রকাশ্যে ও গোপনের ইজ্জত। আর প্রবৃত্তির আনুগত্যে রয়েছে বান্দার জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতে অপদস্ত এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে লাঞ্ছনা। যখন আল্লাহ তা'য়ালা কিয়ামতের ময়দানে সকলকে জমায়েত করবেন তখন একজন আহ্বানকারী ডেকে বলবে: আজ সম্মানিত ব্যক্তি কারা সবাই জানতে পারবে, মুত্তাকীগণ দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর তারা ইজ্জতের স্থানের দিকে চলে যাবেন। আর প্রবৃত্তির গোলামৱা হাশরের ময়দানে মাথা নিচু করে প্রবৃত্তির তাপে, ঘামে ও ব্যথায় দাঁড়িয়ে থাকবে যখন মুত্তাকীরা আল্লাহর আরশের নিচে অবস্থান করবে।
৫০. আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া
যদি আপনি যে সাত প্রকার মানুষকে আল্লাহ রোজ কিয়ামতে তাঁর আরশের নিচে ছায়াস্ত করবেন যেদিন আর কোন ছায়া থাকবে না তাঁদের ব্যাপারে চিন্তা করেন তাহলে পাবেন যে, তাঁরা এ ছায়া শুধুমাত্র প্রবৃত্তির বিপরীত চলার জন্যে পাবে; কারণ একজন শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি ততক্ষণ ইনসাফ করতে পারেন না যতক্ষণ তিনি তাঁর প্রবৃত্তির বিপরীত না করেন। একজন যুবক যৌবনের চাহিদার উপরে আল্লাহর এবাদতকে প্রাধান্য ততক্ষণ দিতে পারেন যতক্ষণ প্রবৃত্তির বিপরীত করতে সক্ষম না হয়। আর যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদসমূহের সাথে ঝুলন্ত তাকে একাজে উৎসাতি করতে পারে শুধুমাত্র প্রবৃত্তির বিপরীত, যে তাকে কামনা-বাসনার স্থানসমূহের দিকে ডাকে।
আর গোপনে দান-সাদকাকারী এমনকি তার বাম হাতও জানতে পারে না। যদি তার প্রবৃত্তিকে দমন না করত তাহলে একাজ করতে সক্ষম হত না। আর যাকে বংশীয় সুন্দরী নারী অপকর্মে ডেকেছিল সেও বেঁচেছিল আল্লাহকে ভয় ও প্রবৃত্তির বিপরীত করে।
আর যে একাকী নির্জনে আল্লাহর জিকির করে তাঁর ভয়ে দু'চোখের অশ্রু ঝড়াই তাকেও এ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে প্রবৃত্তির বিপরীত চলা।
এদের প্রতি হাশরের ময়দানের তাপ, ঘাম ও কষ্টের কোন কিছুই পৌঁছবে না।
আর প্রবৃত্তির গোলামদেরকে কিয়ামতের দিনের তাপ, ঘাম ও কষ্ট পূর্ণভাবে গ্রাস করবে। এ ছাড়া তারা অপেক্ষা করবে এরপরে প্রবৃত্তির জেলে তথা জাহান্নামে প্রবেশের। আল্লাহ তা'য়ালাই একমাত্র আমাদের নফসে আম্মারা তথা কুপ্রবৃত্তির গোলামী থেকে রেহাই দেয়ার মালিক।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের কুপ্রবৃত্তিকে যার মাঝে তোমর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা রয়েছে তার অনুগত করে দাও। নিশ্চয় তুমি সবকিছুর প্রতি ক্ষমতাশালী এবং কবুলকারী।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى اله وصحبه ومن تـي بإحسان إلى يوم الدين
[2] সুনানুল কুবরা নাসাই
[3] মুসলিম
[4] তিরমিজি ২১৪০
[5] মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১৬৬১ শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন
[6] মুসলিম ৪৬৭৮
[7] রাওয়াতুল মুহিব্বিন ইবনুল কায়োম, ১/৩৯৫
[8] রাওয়াতুল মুহিব্বিন ইবনুল কায়োম, ১/৩৯৫
[9] হাদীসটিকে শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন।
[10] যাওযাতুল মুহিদীন ওরা নুজরাতুল মুনতাকীম ইবদুল কাশেম,১/৪৭৮
[11] রওযাতুল মুহিদীন ও সুজাতুল মুশতারীন ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ)-এর কিতাব থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ৪৬৯ হতে ৪৮৬ দেখুন।
[12] বুখারী ও মুসলিম
[13] শারহুস সুন্নাহ-ইমান নববী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আর শাইখ আলবানী য'ঈফ বলেছেন।
[14] আহমাদ ও তবারানী
[15] বাইহাকী-শু'আবুল ঈমানে, শাইখ আলবানী হাদীসটিকে মালান বলেছেন, সিলসিলা সহীহা:৪/৪১৩
[16] ১. বুখারী ও মুসলিম
[17] বুখারী ও মুসলিম