নফসের গোলামী কাকে বলে এবং কিভাবে হয় সে ব্যাপারে মনীষীদের বিভিন্ন বাণী

নফসের গোলামী কাকে বলে এবং কিভাবে হয় সে ব্যাপারে মনীষীদের বিভিন্ন বাণী উল্লেখ করা হলো।

নফস বা প্রবৃত্তি হলো: মানুষ যা চায়, পছন্দ করে ও তাতে সন্তুষ্ট থাকে এবং কামনা-বাসনা করে এবং তারই প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাকে নফস বা প্রবৃত্তি বলা হয়।

নফস তিন প্রকারঃ (এক) "নফসে আম্মারা” তথা কুপ্রবৃত্তি যা সর্বদা কুমন্ত্রণা ও অন্যায় ও অসৎ কর্মের নির্দেশ করে। (দুই) "নফসে লাওয়ামা” অর্থাৎ- অসৎ ও অন্যায় কাজের জন্য অনুতপ্ত মন দোটানা মন। (তিন) "নফসে মুতমাইন্না” মানে বিশুদ্ধ ও শান্ত মন।

কুপ্রবৃত্তি বলতে নফসের প্রবণতা, খেয়াল-খুশী, কামনা-বাসনা, রিপু ও কোন জিনিসের প্রতি টানকে বুঝায়। ইহা অধিকাংশ বক্রতা ও স্রষ্টার প্রতি প্রয়োগ হয়।

ইমাম ইবনুল কায়োম (রহ:) বলেন: স্বভাব ও মেজাজের অনুকুলের প্রতি টানকে প্রবৃত্তি বলে। নফসের কামনা-বাসনার চাহিদাই হলো প্রবৃত্তি। ঝোঁক মানুষের টিকে থাকার জন্যেই তার মাঝে সৃষ্টি করা হয়েছে; কারণ যদি তার খাদ্য, পানি ও বিবাহের প্রতি টান না থাকত, তাহলে সে খানাপিনা ও বিবাহ-শাদি করত না। তাই প্রবৃত্তি মানুষকে উৎসাহিত করে যখন সে চায়। যেমন রাগ যা তাকে কষ্ট দেয় তা দূর করে। তাই সর্বদা প্রবৃত্তিকে দোষারোপ করা বা সর্বদা প্রশংসা করা উচিত নয়। যেরূপ রাগকে সব সময় ভৎসনা বা প্রশংসা করা ঠিক নয়। বরং দুই প্রকারের মধ্যে যে অভিরঞ্জন করত: উপকার ও ক্ষতির সীমা অতিক্রম করবে তাকেই শুধু ভর্ৎসনা করা উচিত।'[1]

প্রবৃত্তির গোলামী হলো: অন্তরে বক্রতা ও বিবেক বিপর্যয়ের কারণে সত্য ছেড়ে বাতিলের দিকে ঝোঁকা। ইহাই হলো। প্রতিটি পথভ্রষ্ট বিপথগামী ব্যক্তির পথ। যেমন সত্য ও হেদায়েতের অনুসরণ মুমিনদের পথ।[2]

মানুষের কোন জিনিসের প্রতি মহব্বত এবং অন্তরে তার প্রভাব বিস্তার হওয়াকে প্রবৃত্তি বলে।

শা'বী (রহঃ) বলেন: প্রবৃত্তিকে আরবিতে বলে: "হাওয়া" যার অর্থ পতিত হওয়া বা নিচে নামা: কারণ প্রবৃত্তি তার সাথীকে গহীন গহ্বরে পতিত করে দেয়। এর লাগামহীন ঘোড়ার আরোহী পরিণাম না ভেবে উপস্থিত মজার প্রতি আহ্বান করে। আর তাৎক্ষণিক কামনা-বাসনার প্রতি উৎসাহিত করে যদিও ইহকালে পরকালে তা কঠিন দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াই।

শরিয়তের নির্দেশ ও সুস্থ বিবেকের পরামর্শ ছাড়া নফসের কামনা-বাসনার আনুগত্য করাই হলো প্রবৃত্তির গোলামী।

[1] * রাওয়াতুল মুহিদীন ইবনুল কায়োম পুঃ ৪৬৯
[2] -মুহাব্বাতুল রসুল বাইশাল ইতিবায়ে রয়াল ইবতিদা" -১/১৯৩