নফসের গোলামী ও মুক্তির উপায় নফসের গোলামী বিষয়ে বিস্তারিত আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
নফসের গোলামীর কারণসমূহ, ক্ষতি ও গোলামী ত্যাগে উপকারিতা

নফসের গোলামীর কারণসমূহ

১. অজ্ঞতা-মূর্খতা।

২. ইবলীস শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা।

৩. বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণ-অনুকরণ।

৪. গড ফাদার ও হুজুর-বুজুর্গদের তকলীন তথা অন্ধ ব্যক্তি পূজা।

৫. সম্পদ, গদি ও নারীর ভালবাসার ফাঁদ। ৬. বিভিন্ন ধরণের সংশয় ও সন্দেহ।

৭. গাফলতি ও অবহেলা।

৮. অন্তরের বক্রতা।

৯. আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমানের দুর্বলতা।

১০. নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে কুরআন-সুন্নার উপরে প্রাধান্য দেয়া।
 

নফসের-প্রবৃত্তির গোলামীর কিছু চিত্র

১. বিদাত আবিস্কারে।

২. দলিলহীন মাজহাবের মতামতে।

৩. দলাদলি ও ফের্কাবন্দীতে।

৪. ফতোয়া ও বিধানে। ৫. সত্যকে প্রত্যাহার ও তার অনুসারীদের সাথে ঝগড়ায়। তার অনুসারীদের সাহায্য

৬. বাতিল সহযোগিতায়।

৭. মূর্তি ও প্রতিমা পূজায় ।

৮. নেক-বুজুর্গ ব্যক্তিদের অতিরঞ্জন ভক্তিতে।

৯. অশ্লীলতা ও অপরাধের প্রচার-প্রসারে। ১০. নফল কাজে জলদি এবং ফরজ-ওয়াজিব আদায়ে অলসতা প্রদর্শন। ১১. ধর্মের নামে পুঁজি, লাইসেন্স, টেক্স, লোকসান ও চাদা ছাড়া মজার ব্যবসায়।

নফসের গোলামীর ক্ষতি

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ قَفَّیۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِہٖ بِالرُّسُلِ ۫ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰہُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ ؕ اَفَکُلَّمَا جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَہۡوٰۤی اَنۡفُسُکُمُ اسۡتَکۡبَرۡتُمۡ ۚ  فَفَرِیۡقًا کَذَّبۡتُمۡ  ۫ وَ فَرِیۡقًا تَقۡتُلُوۡنَ

    “অবশ্যই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি। আর তার পরে পর্যায়ক্রমে রসূল পাঠিয়েছি। আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে সুস্পষ্ট মো'জেযা দান করেছি এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে শক্তি দান করেছি। অতঃপর যখনই কোন রসূল এমন নির্দেশ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে, যা তোমাদের মনে ভাল লাগেনি, তখনই তোমরা অহংকার করেছ। শেষ পর্যন্ত তোমরা একদল মিথ্যাবাদী বলেছ এবং একদলকে হত্যা করেছ।" [সূরা বাকারা: ৮৭]

لَقَدۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ  اِسۡرَآءِیۡلَ وَ اَرۡسَلۡنَاۤ  اِلَیۡہِمۡ رُسُلًا ؕ کُلَّمَا جَآءَہُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَہۡوٰۤی اَنۡفُسُہُمۡ ۙ فَرِیۡقًا کَذَّبُوۡا وَ فَرِیۡقًا یَّقۡتُلُوۡنَ

    "আমি বনি ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে অনেক পয়গাম্বর পাঠিয়েছিলাম। যখনই তাদের কাছে কোন পয়গাম্বর এমন নির্দেশ নিয়ে আসত যা তাদের মনে চাইত না, তখন তাদের অনেকের প্রতি তারা মিথ্যারোপ করত এবং অনেককে হত্যা করে ফেলত।" মায়েদা: ৭০

قُلۡ یٰۤاَہۡلَ الۡکِتٰبِ لَا تَغۡلُوۡا فِیۡ دِیۡنِکُمۡ غَیۡرَ  الۡحَقِّ وَ لَا  تَتَّبِعُوۡۤا اَہۡوَآءَ قَوۡمٍ قَدۡ ضَلُّوۡا مِنۡ قَبۡلُ وَ اَضَلُّوۡا کَثِیۡرًا وَّ ضَلُّوۡا عَنۡ سَوَآءِ السَّبِیۡلِ

    “বলুন: হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা স্বীয় ধর্মে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং এতে ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।” [সুরা মায়েদা: ৭৭

১. আল্লাহর গজব ও অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম

২. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি

৩. জুলুম, অবিচার ও দমননীতি।

৪. খুন-খারাবী।

৫. অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ ও ইজ্জতহানী।

৬. বিভিন্নভাবে সত্যকে প্রত্যাখ্যান।

৭. হিংসা-বিদ্বেষ।

৮. সিরাতে মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতি।

৯. দলাদলি ও ফের্কাবন্দী।

১০. ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের বিদায়।

১১. বিদাতের প্রকাশ ও প্রচার-প্রসার এবং সাহাবা, তাবেয়ী ও সালাফে সালেহীনদের পথকে ত্যাগকরণ।

১২. ভ্রষ্টতা ও পথভ্রষ্টকরণ।

১৩. আল্লাহর আয়াতসমূকে মিথ্যারোপ।

১৪. ফেতনায় পতিত হওয়া।

১৫. কর্ণ, চক্ষু ও অন্তরে মোহর।

১৬. আল্লাহর বন্ধুত্ব, সাহায্য ও নিরাপদ থেকে মাহরুম-বঞ্চিত।

১৭. অপদস্ততা, লাঞ্ছনা ও লোকসান।

১৮. মানুষের পক্ষ থেকে ঘৃণা এমনকি আপনজন ও প্রিয়জনের পক্ষ থেকে।

নফসের গোলামী ত্যাগে উপকারিতা

১. জান্নাত লাভ:

فَاَمَّا مَنۡ طَغٰی ۳۷وَ اٰثَرَ  الۡحَیٰوۃَ  الدُّنۡیَا ۳۸فَاِنَّ الۡجَحِیۡمَ ہِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۳۹وَ اَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّہٖ وَ نَہَی النَّفۡسَ عَنِ  الۡہَوٰی ﴿ۙ۴۰﴾ فَاِنَّ  الۡجَنَّۃَ  ہِیَ الۡمَاۡوٰی ﴿ؕ۴۱﴾ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ  اَیَّانَ مُرۡسٰہَا ﴿ؕ۴۲﴾

    "অনন্তর যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছে; এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং প্রবৃত্তির খেয়াল খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত রেখেছে,তার ঠিকানা হবে জান্নাত।[সূরা নাজিয়াত: ৩৭,৪২]

ونوَ نَفۡسٍ وَّ مَا سَوّٰىہَا ۪ۙ﴿۷﴾ فَاَلۡہَمَہَا فُجُوۡرَہَا وَ تَقۡوٰىہَا ۪ۙ﴿۸﴾ قَدۡ  اَفۡلَحَ  مَنۡ  زَکّٰىہَا ۪ۙ﴿۹﴾ وَ  قَدۡ خَابَ مَنۡ  دَسّٰىہَا ﴿ؕ۱۰﴾

    “শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন তাঁর। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজের নফসকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। আর যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়" [সূরা শামস: ৭ থেকে ১০]

৩. জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ।

৪. মনের শান্তি।

৫. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।

৬. শয়তান থেকে রেহাই।

৭. দুনিয়া-আখেরাতে ইজ্জত-সম্মান লাভ

৮. দুনিয়া-আখেরাতে অপমান ও লাঞ্ছনা থেকে হেফাজত।