النسخ এর সংজ্ঞা:
এর আভিধানিক অর্থ:- দূর করা, স্থানান্তর করা। পারিভাষিক অর্থ :
رفع حكم دليل شرعي او لفظه بدليل من الكتاب والسنة
النسخ হলো কুরআন ও হাদীছের দলীলের মাধ্যমে শারঈ কোন দলীলের হুকুম বা শব্দ উঠিয়ে দেওয়া।
আমাদের বক্তব্য: رفع حكم এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হুকুম পরিবর্তন করা। উদাহরণ স্বরূপ: ওয়াজিব থেকে মুবাহ অথবা মুবাহ থেকে হারামে পরিবর্তন করা।
সুতরাং এর দ্বারা ঐ হুকুম বের হয়ে গেলো, যে হুকুম কোন প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে অথবা শর্ত না পাওয়ার কারণে বিলম্বিত হয়। যেমন: নিসাব পরিমান সম্পদের ঘাটতির কারণে যাকাত প্রদানের ফরজিয়্যাত-আবশ্যকতা উঠে যাওয়া অথবা হায়েজ অবস্থায় ছ্বালাতের ফরজিয়্যাত উঠে যাওয়া। অতএব, এগুলোকে النسخ হিসেবে অভিহিত করা হবে না।
আমাদের বক্তব্য: لفظه অংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শারঈ দলীলের শব্দ। কেননা, النسخ হয়তো বা শব্দের না হয়ে হুকুমের হয় অথবা তার বিপরীত হয়, অর্থাৎ হুকুম রহিত না হয়ে শুধু শব্দ রহিত হয়, অথবা শব্দ ও হুকুম উভয়টিই রহিত হয়, যার বিবরণ অচিরেই আসছে।
আমাদের বক্তব্য: بدليل من الكتاب والسنة (কুরআন ও হাদীছের দলীলের মাধ্যমে) এ অংশ দ্বারা এ দুটি ছাড়া অন্যান্য দলীল যেমন: ইজমা ও ক্বিয়াস, বের হয়ে গেছে। সুতরাং এগুলি দ্বারা النسخ সাব্যস্ত হবে না।
জ্ঞানগত বিচারে ‘রহিতকরণ’ হওয়া সম্ভব এবং শারঈ ভাবেও এটি বাস্তব সম্মত বিষয়।
‘রহিতকরণ’ জ্ঞানগত ভাবে সম্ভব হওয়ার যৌক্তিকতা হচ্ছে যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার হাতেই রয়েছে সমস্ত জিনিসের চাবিকাঠি।
বিধান দেওয়ার অধিকার কেবল তারই। কারণ তিনিই প্রতিপালক, অধিপতি। কাজেই তার এ অধিকার রয়েছে যে, তিনি তার প্রজ্ঞা ও রহমতের দাবি অনুসারে বান্দার জন্য শারঈ বিধান দেবেন।
বাদশা তার প্রজাকে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী নির্দেশ দিবেন এটা কি বিবেক বাঁধা দেয়?
উপরন্তু বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও হিকমতের দাবি হলো, তিনি তাদের জন্য এমন শারঈ বিধান প্রনয়ণ করবেন, যে ব্যাপারে তিনি জানেন যে, এতে তাদের জন্য দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণ রয়েছে। আর কল্যাণ অবস্থা ও সময় ভেদে বিভিন্ন হয়। কাজেই কোন হুকুম একটি সময়ে বা অবস্থায় বান্দার জন্য অধিকতর কল্যাণ বিবেচিত হয়, আবার অন্য সময় বা অবস্থার প্রেক্ষিতে আরেকটি হুকুম তাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর বিবেচিত হতে পারে। তিনি সর্বজ্ঞাত, সর্বজ্ঞ।
শারঈ এর বাস্তবতার দলীল হলো (১) আল্লাহ বাণী:
مَا نَنْسَخْ مِنْ آَيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِنْهَا أَوْ مِثْلِهَا
‘‘আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি (সূরা আল-বাক্বারা ২:১০৬)।’’
(২) আল্লাহর বাণী:
الْآَنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ
‘‘এখন আল্লাহ তোমাদের উপর বোঝা হালকা করে দিয়েছেন (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’
فَالْآَنَ بَاشِرُوهُن
‘‘অতএব, এখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে (রমজানের রাতে) সহবাস করতে পারো (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৮৭)।’’
এগুলি পূর্বের হুকুম পরিবর্তিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলিল।
(৩) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا
‘‘আমি তোমদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা যিয়ারত করবে।’’ [1]
অত্র হাদীছটি ‘কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা’ রহিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলি রহিত হওয়া নিষিদ্ধ:
(১) বিবরণসমূহ। কেননা, রহিত হওয়ার ক্ষেত্র হলো হুকুম। আর দু’ বিবরণের একটি রহিত হলে, এর যেকোন একটি মিথ্যা হওয়া অবধারিত হয়। আল্লাহ ও তার রসূলের বর্ণনাসমূহে মিথ্যা থাকা অসম্ভব। তবে যদি কোন হুকুম خبر এর আকৃতিতে আসে, তাহলে সেটি রহিত হওয়া নিষিদ্ধ নয়। যেমন, আল্লাহর বাণী:
إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ
‘‘যদি তোমাদের মাঝে বিশ জন ধৈর্যশীল মুজাহিদ থাকে, তবে তারা দু’শত জনের মোকাবেলায় জয়ী হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৫)।’’
এটি বর্ণনামূলক হলেও এর অর্থ নির্দেশমূলক। এ জন্য পরের আয়াতে এটি রহিত হওয়ার বিধান বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন,
الْآَنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِئَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
‘‘এখন আল্লাহ তোমাদের উপর বোঝা হালকা করে দিয়েছেন। আর তিনি জানেন যে, নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। এতএব তোমাদের মাঝে একশত জন মুজাহিদ থাকলে, তারা দু’শত জনের মোকাবেলায় জয়ী হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’
(২) ঐ সমস্ত বিধি-বিধান যা সর্বাবস্থায় সর্বদা কল্যাণকর। যেমন: আল্লাহর একত্ব, ঈমানের মৌলিক বিষয়, ইবাদতের মৌলিক বিষয়, সততা, নিষ্কলুষতা, সচ্চরিত্র, বদান্যতা ও বীরত্ব প্রভৃতি রহিত হওয়া সম্ভব নয়।
অনুরূপভাবে যে সব জিনিস সর্বদা মন্দ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণে নিষিদ্ধ, সেগুলিও রহিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন: শিরক, কুফর, পাপাচারিতা, মিথ্যা, মন্দচরিত্র, কৃপণতা ও ভীরুতা ইত্যাদি। কারণ সম্পূর্ণভাবে বান্দার কল্যাণ সাধন এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর এমন জিনিস থেকে বিরত রাখার জন্য শরীয়াত প্রণীত হয়েছে।
যে সব ক্ষেত্রে نسخ সম্ভব, সে সব ক্ষেত্রে نسخ বা ‘রহিতকরণ’ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো:
(১) উভয় দলীলের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব না হওয়া। তাই উভয় দলীলের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হলে, উভয়টি অনুযায়ী আমল করা সম্ভব হওয়ার কারণে نسخ সাব্যস্ত হবে না।
(২) ناسخ বা রহিতকারী দলীল পরে আসার ব্যাপারে জানা থাকা। এটি জানা যেতে পারে মূল দলীলের মাধ্যমে অথবা ছাহাবীর সংবাদের মাধ্যমে অথবা ইতিহাসের মাধ্যমে।
‘দলীল পরে আসার’ বিষয়টি نص এর মাধ্যমে জানা যায়। এর উদাহরণ হলো: রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:
كنت أذنت لكم في الاستمتاع من النساء وإن الله قد حرم ذالك إلى يوم القيامة
‘‘আমি তোমাদের জন্য নারীদের সাময়িক বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছিলাম। আল্লাহ তায়ালা এটাকে ক্বিয়ামত অবধি হারাম করে দিয়েছেন।’’ [1]
ছাহাবীর সংবাদের মাধ্যমে জানার উদাহরণ হলো আয়েশা (রা.) এর বক্তব্য:
كان فيما انزل من القران عشر رضعات معلومات يحرمن . ثم نسخن بخمس معلومات
‘‘কুরআন থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার মধ্যে এটাও ছিল যে, দশ চোষণ দুধ পান করা হুরমাত সাব্যস্ত করে। এরপর নির্দিষ্ট পাঁচ চোষণের মাধ্যমে তা রহিত হয়ে যায়।’’ [2]
ইতিহাস দ্বারা জানার উদাহরণ হলো: আল্লাহর বাণী:
الْآَنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ
‘‘এখন আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করে দিয়েছেন (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’
আয়াতের الْآَنَ (এখন) শব্দটি এ হুকুম পরে আসার ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে।
অনুরূপভাবে যদি উল্লেখ করা হয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পূর্বে কোন বিষয়ে হুকুম দিয়েছেন। তারপর হিজরতের পরে তার বিপরীত ফয়সালা দিয়েছেন। তখন দ্বিতীয়টি ‘রহিতকারী’ সাব্যস্ত হবে।
(৩) ناسخ বা ‘রহিতকারী দলীল’ ছহীহ হওয়া: এক্ষেত্রে অধিকাংশ বিদ্বান শর্ত করেছেন যে, রহিতকারী দলীল ‘রহিতব্য’ দলীলের চেয়ে শক্তিশালী অথবা সমমানের হতে হবে। কাজেই তাদের মতে, মুতাওয়াতির হাদীছ খবরে ওয়াহেদ হাদীছ দ্বারা রহিত হবে না। যদিও রহিতকারী দলীলটি ছহীহ হয়।
কিন্তু অধিকতর অগ্রগণ্য মত হলো نسخ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য ناسخ কে অধিকতর শক্তিশালী কিংবা সমমানের হওয়া শর্ত নয়। কেননা, نسخ এর ক্ষেত্র হলো হুকুম আর হুকুম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য মুতাওয়াতির হওয়া শর্ত নয়।
[2]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৪৫২
النسخ তিন প্রকার। যথা:
প্রথম প্রকার: হুকুম মানসুখ-রহিত হয় কিন্তু তার শব্দ বহাল থাকে। কুরআনের এ ধরণের نسخ বেশী। এর উদাহরণ হলো: ايتا المصابرة বা ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করা সম্পর্কিত আয়াতদ্বয়। আয়াত দু’টি হলো:
إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ
‘‘যদি তোমাদের মাঝে বিশ জন ধৈর্যশীল মুজাহিদ থাকে, তবে তারা দু’শত জনের মোকাবেলায় জয়ী হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’
অত্র আয়াতের হুকুম নিচের আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে।
الْآَنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِئَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
‘‘এখন আল্লাহ তোমাদের উপর বোঝা হালকা করে দিয়েছেন। আর তিনি জানেন যে, নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। এতএব, তোমাদের মাঝে একশত জন মুজাহিদ থাকলে, তারা দু’শত জনের মোকাবেলায় জয়ী হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’
শব্দ রহিত না করে হুকুম রহিত করার হিকমত হলো: তিলাওয়াতের ছাওয়াব অবশিষ্ট রাখা এবং জাতীকে نسخ এর হিকমত-তাৎপর্য স্মরণ করিয়ে দেয়া।
দ্বিতীয় প্রকার: শব্দ রহিত হয়, তবে হুকুম বহাল থাকে।
যেমন: রজম (বিবাহিত ব্যভিচারী নর-নারীকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করা) বিষয়ক সংশ্লিষ্ট আয়াত। ছহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের সূত্রে প্রমাণিত যে, উমার (রা.) বলেন, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তন্মধ্যে রজম সংশ্লিষ্ট আয়াত ছিলো। আমরা সেই আয়াত পড়েছি, বুঝেছি ও মুখস্থ করেছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে অনুযায়ী রজম করেছেন। পরবর্তীতে আমরাও রজম করেছি।
উপরন্তু আমার আশংকা হয়, দীর্ঘ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ হয়তো বলবে, ‘আলাহর কসম আমরা তো কুরআনে রজমের আয়াত পাচ্ছি না!’ ফলে আল্লাহর নাযিলকৃত একটি ফরয বর্জন করার কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহর কিতাবে রজম যথার্থ সে সব নারী-পুরুষের জন্য, যারা বিবাহিত হওয়ার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা গর্ভবতী হয় অথবা স্বীকার করে।
হুকুম রহিত না করে শব্দ রহিত করার হিকমত-তাৎপর্য হলো যে আমলের শব্দ কুরআনে পাওয়া যায় না, তদানুযায়ী আমল করার ক্ষেত্রে উম্মাহকে পরীক্ষা করা এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, সে বিষয়ে তাদের ঈমান যাচাই করা। এক্ষেত্রে ইহুদিদের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, তারা তাওরাতে রজম সংশ্লিষ্ট نص কে গোপন করার চেষ্টা করেছিলো।
তৃতীয় প্রকার: শব্দ ও হুকুম উভয়টি রহিত হওয়া। যেমন: দশ চোষণ সম্পর্কিত আয়েশা (রা.) বর্ণিত পূর্বের হাদীছটির ‘রহিতকরণ’।
ناسخ বা রহিতকারী দলীলের দিক দিয়ে النسخ চার প্রকার। যথা:
প্রথম প্রকার: কুরআন দ্বারা কুরআন রহিত হওয়া। এর উদাহণ হলো ধৈর্যের সাথে কাফেরদের মোকাবেলা সম্পর্কিত আয়াতদ্বয়।[1]
দ্বিতীয় প্রকার: হাদীছ দ্বারা কুরআন রহিত হওয়া। আমি এর স্বপক্ষে ক্রটিমুক্ত কোন দলীল পাইনি।
তৃতীয় প্রকার: কুরআন দ্বারা হাদীছ রহিত হওয়া। উদাহরণ হলো হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে ছ্বলাত আদায় করার বিধান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর দ্বারা সাব্যস্ত কা‘বার দিকে মুখ করে ছ্বলাত আদায় করার বিষয়ের মাধ্যমে রহিতকরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُمَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
‘‘এখন আপনি মাসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৪৪)।’’
চতুর্থ প্রকার: এক হাদীছ দ্বারা অপর হাদীছ রহিত করা। এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
كنت نهيتكم عن النبيذ في الأوعية فاشربوا فيما شئتم ولا تشربوا مسكرا
‘‘আমি তোমাদেরকে পানির পাত্রে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন নাবীয তৈরী করে তা পান করতে পারো। তবে নেশা দ্রব্য কোন কিছু পান করবে না।’’[2]
[2]. ছহীহ মুসলিম/৯৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নং ২১২৯, মুসনাদে আহমাদ (৩/২৩৭/১৩৫১২), আবু ইয়ালা (৬/৩৭৩/৩৭০৭), আল্লামা হায়সামী তার ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ (৫/৬৬) গ্রন্থে বলেন, এ হাদীছের সনদে ইয়াহইয়া বিন আব্দুল্লাহ আল জাবির রয়েছে। তাকে অধিকাংশ বিদ্বান দুর্বল বলেছেন। ইমাম আহমাদ বলেন, তার কোন সমস্যা নেই। সনদের অন্যান্য রাবী নির্ভরযোগ্য।
‘রহিতকরণ’ এর অনেক হিকমত-তাৎপর্য রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো
(১) বান্দার দ্বীন-দুনিয়ার জন্য অধিকতর উপকারী শরীয়ত প্রণয়নের মাধ্যমে তাদের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখা।
(২) শরীয়ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে ক্রমবিকাশের পন্থা অবলম্বন করা, যাতে তা ক্রমান্বয়ে পূর্ণতায় পৌছতে পারে।
(৩) এক হুকুম থেকে পরিবর্তন করে অন্য হুকুম গ্রহণ করতে প্রস্ত্তত থাকা এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকার ব্যাপারে مكلف দের পরীক্ষা করা।
(৪) রহিত করণ সাধিত হয়ে তুলনামূলক সহজ বিধান আসলে শুকরিয়া আদায় করা এবং তুলনামুলক কঠিন বিধান আসলে তাতে ধৈর্য্য ধারণ করার ব্যাপারে مكلف দের পরীক্ষা করা।