الأحكام শব্দটি حكم এর বহুবচন। এর আভিধানিক অর্থ ফায়ছালা করা।
পারিভাষিক অর্থ:
ما اقتضاه خطاب الشرع المتعلق بأفعال المكلفين من طلب أو تخيير أو وضع
‘‘মুকাল্লাফ (যাদের উপর শরীয়াতের বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়) এমন ব্যক্তির কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট শরীয়াতের খেতাব (কুরআন ও হাদীছ) যে তলব (কোন কাজ করা অথবা না করার দাবী), তাখয়ীর (কোন কাজ করা বা না করার জন্য ঐচ্ছিকতা প্রদান) অথবা প্রতীকী বিধান যা কিছু দাবী করে, তাকে আহকাম বলে।’’
خطاب الشرع (শরীয়াতের খেতাব বা সম্বোধন) এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন ও সুন্নাহ।[1]
المتعلق بأفعال المكلفين (মুকাল্লাফ ব্যক্তির কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট) এ অংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যা তাদের আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট; সেটা কথা হোক অথবা কর্ম, করণীয় হোক অথবা বর্জনীয় হোক। সুতরাং উক্ত বক্তব্য দ্বারা আক্বীদা সংশ্লিষ্ট বিষয় বের হয়ে গেছে। অতএব, এ পরিভাষা অনুসারে আক্বীদা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে ‘হুকুম’ হিসাবে অভিহিত করা হবে না।
আমাদের বক্তব্য: المكلفين(শরীয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) যাদের বৈশিষ্ট্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া এ কথা দ্বারা তারাই উদ্দেশ্য। সুতরাং এটি শিশু ও পাগলকে অন্তর্ভুক্ত করবে না।
আমাদের বক্তব্য: من طلب(কোন তলব) এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আদেশ ও নিষেধ। চাই তা আবশ্যকতার ভিত্তিতে হোক অথবা উত্তমতার ভিত্তিতে হোক।[2]
আমাদের বক্তব্য: أو تخيير (ঐচ্ছিকতা) এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুবাহ বা বৈধ বিষয়।[3]
আমাদের বক্তব্য: أو وضع (প্রতীকী বিধান) এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শুদ্ধ, অশুদ্ধ প্রভৃতি বিষয় যেগুলিকে শরীয়ত প্রণেতা কোন কাজ বাস্তবায়ন করা অথবা বাতিল করে দেয়ার বিশেষণ ও প্রতীক হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইজমা ও ক্বিয়াসকে খেতাব বলা হয় না। কেননা, এগুলির মাধ্যমে শরীয়ত প্রণেতা আমাদেরকে সম্বোধন করেন না। এগুলি মূলতঃ কুরআন-সুন্নাহ উৎসারিত প্রশাখাগত দলীল।
[2]. তলব অর্থ চাওয়া, দাবী করা প্রভৃতি। উসূলে ফিক্বহ শাস্ত্রে তলব বলতে শারঈ আদেশ ও নিষেধ বুঝায়। অর্থাৎ কোন কাজ করা বা না করার দাবীকেই তলব বলে।
[3]. শরীয়ত প্রণেতা কর্তৃক কোন কাজ করা বা না করার ঐচ্ছিকতা প্রদানকে তাখয়ীর বলে। যেমন: সফরে ছিয়াম পালন করা।
শারঈ আহকাম দু’ভাগে বিভক্ত:
(ক) الأحكام التكليفية - দায়িত্বমূলক বিধি-বিধান
(খ) الأحكام الوضعية - প্রতীকী বিধি-বিধান।
(ক) الأحكام التكليفية - দায়িত্বমূলক বিধি-বিধান পাঁচ প্রকার:
১. ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয় বিধান)।
২. মানদুব (পালন বাঞ্চনীয়)।
৩. হারাম (পালন করা নিষিদ্ধ)
৪. মাকরূহ (পালন নিন্দনীয়)
৫. মোবাহ (পালন বৈধ)[1]
১. ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয় বিধান): ওয়াজিবের আভিধানিক অর্থ বিচ্যুত, পতিত, আবশ্যকীয়।
পারিভাষিক অর্থ:
ما أمر به الشارع على وجه الإلزام
‘‘শরীয়ত প্রণেতা আবশ্যকতার ভিত্তিতে যা পালনের আদেশ করেন, তাকে ওয়াজিব বলে।’’ যেমন: পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বলাত।
আমাদের বক্তব্য: ما أمر به الشارع (শরীয়ত প্রণেতা যা আদেশ করেন) এ শব্দ দ্বারা হারাম, মাকরূহ ও মোবাহ বিষয় বিলুপ্ত হয়েছে।[2]
আমাদের বক্তব্য: على وجه الإلزام (আবশ্যকতার ভিত্তিতে পালনের) এ শব্দ দ্বারা ওয়াজিব মানদুব বিলুপ্ত হয়েছে।[3] ওয়াজিব কর্ম আনুগত্যের ভিত্তিতে পালনকারী ছাওয়াব প্রাপ্ত হবে এবং বর্জনকারী হবে শাস্তির যোগ্য। এটিকে ফরজ, ফারিজা, হাতমুন, লাযেম প্রভৃতিতে অভিহিত করা হয়।[4]
২. মানদুব (পালন বাঞ্চনীয়)। আভিধানিকভাবে মানদুব অর্থ আহুত, কাঙ্খিত, বাঞ্চনীয়। পারিভাষিক অর্থ:
ما أمر به الشارع لا على وجه الإلزام
‘সাধারণভাবে শরীয়ত প্রণেতা যে সব বিষয়ে আদেশ করেন যা আবশ্যকতার ভিত্তিতে পালন বুঝায় না তাকে মানদুব বলে।’ যেমন: নিয়মিত প্রত্যেহ পালনীয় সুন্নাত সমূহ।
আমাদের বক্তব্য: ما أمر به الشارع (শরীয়ত প্রণেতা যা আদেশ করেন) এ কথা দ্বারা হারাম, মাকরূহ ও মোবাহ বিষয় মানদুব থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।
আমাদের বক্তব্য: لا على وجه الإلزام (আবশ্যকতার ভিত্তিতে পালন নয়) এ কথা দ্বারা ওয়াজিব বের হয়ে গেছে।
মানদুব কর্ম আনুগত্যের ভিত্তিতে পালনের জন্য কর্তা ছাওয়াবের অধিকারী হবে। তবে পরিত্যাগকারীকে শাস্তি দেয়া হবে না। একে সুন্নাত, মাসনূন, মুস্তাহাব, নফল প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়।
৩. হারাম (পালন করা নিষিদ্ধ)।
হারাম শব্দের আভিধানিক অর্থ বারণকৃত, নিষিদ্ধ।
পারিভাষিক অর্থ:
ما نهى عنه الشارع على وجه الإلزام بالترك
‘‘আবশ্যকতার ভিত্তিতে পালন ছেড়ে দেয়ার জন্য শরীয়ত প্রণেতা যা নিষেধ করেন, তাকে হারাম বলে।’’ যেমন: পিতা-মাতার অবাধ্য আচরণ।
আমাদের বক্তব্য: ما نهى عنه الشارع (শরীয়ত প্রণেতা যা নিষেধ করেন) এ কথা দ্বারা ওয়াজিব, মানদুব ও মোবাহ বের হয়ে গেছে।
হারাম কাজ আনুগত্যের ভিত্তিতে বর্জনকারী ছাওয়াব পাবে এবং তা পালনকারী শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হবে। এটাকে মাহযুর (পরিত্যক্ত, নিষিদ্ধ) ও মামনূ‘ (নিষিদ্ধ) বলা হয়।
৪. মাকরূহ (পালন নিন্দনীয়)।
মাকরূহ শব্দের আভিধানিক অর্থ: ঘৃণিত, নিন্দনীয়, অপছন্দনীয়। পরিভাষায়:
ما نهى عنه الشارع لا على وجه الإلزام بالترك
‘‘শরীয়ত প্রণেতা যা সাধারণভাবে কোন কিছু করতে নিষেধ করেন, আবশ্যিক ভাবে ছেড়ে দেয়ার জন্য নয়, তাকে মাকরূহ বলে।’’ যেমন: বাম হাত দ্বারা লেন-দেন করা।
আমাদের বক্তব্য: ما نهى عنه الشارع(শরীয়ত প্রণেতা যা নিষেধ করেন) এ কথা দ্বারা ওয়াজিব, মানদুব ও মোবাহ বিলুপ্ত হয়েছে।
আমাদের বক্তব্য: (আবশ্যিক ভাবে ছেড়ে দেয়ার জন্য নয়) এ কথা দ্বারা হারাম বের হয়ে গেছে। মাকরূহ কাজ আনুগত্যের ভিত্তিতে বর্জনকারী ছাওয়াব পাবে এবং তা পালনকারীকে শাস্তি দেয়া হবে না।
৫. মোবাহ (পালন করা বৈধ)। মোবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ঘোষিত, অনুমোদিত। পারিভাষিক অর্থ:
ما لا يتعلق به أمر ولا نهي لذاته
‘যে কর্মের সত্ত্বার সাথে কোন আদেশ বা নিষেধ সংশ্লিষ্ট থাকে না, তাকে মোবাহ বলে।’ যেমন: রমাদ্বনের রাতে খাবার খাওয়া।
আমাদের বক্তব্য: ما لا يتعلق به أمر(যার সাথে কোন আদেশ সংশ্লিষ্ট থাকে না) এ কথা দ্বারা ওয়াজিব ও মানদুব বের হয়ে গেছে।
ولا نهي (এবং নিষেধ ও নয়) এ শব্দ দ্বারা হারাম ও মাকরূহ বের হয়ে গেছে।
لذاته (সত্ত্বার সাথে) এ শব্দ দ্বারা বের হয়ে গেছে ঐ সব বিষয়, যেগুলির সাথে ‘আদেশ’ যুক্ত হয়েছে, কোন আদিষ্ট বিষয়ের মাধ্যম হওয়ার কারণে অথবা যেগুলির সাথে ‘নিষেধ’ যুক্ত হয়েছে, কোন নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হওয়ার কারণে। কেননা, এগুলি কোন আদিষ্ট বা নিষিদ্ধ বিষয় যারই মাধ্যম হবে, তার হুকুমই এদের হুকুম হিসাবে গণ্য হবে।[5] এটি বিষয়টিকে তার মৌলিক বৈধতা থেকে বের করে দিবে না।[6]
মোবাহ বিষয় যতক্ষণ পর্যন্ত বৈধতার বিশেষণের উপর বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার উপর কোন ছাওয়াব বা শাস্তি কোন কিছুই ধার্য হবে না। এটিকে হালাল বা জায়েয হিসাবে অভিহিত করা হয়।
(খ) الأحكام الوضعية প্রতীকী বিধি-বিধান।
প্রতীকী বিধি-বিধান এর পারিভাষিক অর্থ:
ما وضعه الشارع من أمارات لثبوت أو انتفاء أو نفوذ أو إلغاء
‘‘যাকে শরীয়ত প্রণেতা কোন কিছু সাব্যস্ত হওয়া বা না হওয়া অথবা কোন কিছু বাস্তবায়িত হওয়া বা না হওয়ার প্রতীক নির্ধারণ করেছেন, তাকে প্রতীকী বিধি-বিধান বলে।’’ এর অন্যতম হলো- ছ্বহীহ-শুদ্ধ হওয়া, ফাসেদ-নষ্ট হওয়া।[7]
১। ছহীহ (শুদ্ধ)
ছহীহ এর আভিধানিক অর্থ: রোগ থেকে মুক্ত বা নিরাপদ।
পারিভাষিক অর্থ:
‘‘যার কর্মের ফল ধার্য হয়, চাই সে কর্ম কোন ইবাদত হোক অথবা লেন-দেন বা চুক্তিমূলক হোক।’’
ইবাদতের ক্ষেত্রে ছহীহ হলো, যে কর্মের দ্বারা ব্যক্তি দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যায় এবং দাবী পূরণ হয়।[8]
লেন-দেন বা চুক্তির ক্ষেত্রে ছহীহ হলো যে কর্ম তার ফলাফলের অস্তিত্ব ধার্য করে। যেমন: ক্রয়-বিক্রয় কর্মের উপর ফলাফল হিসাবে বিক্রেতার জন্য পণ্যের মালিকানা ধার্য হওয়া। কোন কর্মই শর্ত পূরণ ও প্রতিবন্ধকতা দুর করা ছাড়া ছহীহ গণ্য হয় না।[9]
ইবাদতের ক্ষেত্রে এর উদাহরণ হলো: ছ্বালাতের সমস্ত ওয়াজিব, রুকন ও শর্ত পূরণ করে, যথা সময়ে তা আদায় করা।
লেন-দেন বা চুক্তির ক্ষেত্রে ছহীহ এর উদাহরণ হলো ক্রয়-বিক্রয়ের স্বীকৃত সমুদয় শর্ত পূরণ করে, প্রতিবন্ধকতা দুর করে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা।
যদি কোন কর্মের মধ্যে কোন শর্ত না পাওয়া যায় অথবা কোন প্রতিবন্ধকতা পাওয়া যায়, তবে কর্মটি ছহীহ হিসাবে গণ্য হবে না। ইবাদতের ক্ষেত্রে শর্ত না পাওয়ার উদাহরণ হলো ওযু ছাড়াই ছ্বলাত আদায় করা।[10] লেন-দেন বা চুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত না পাওয়ার উদাহরণ হলো এমন জিনিস বিক্রয় করা, যার সে মালিক নয়।[11]
ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকার উদাহরণ হলো নিষিদ্ধ সময়ে সাধারণ নফল ছ্বলাত আদায় করা। লেন-দেন বা চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকার উদাহরণ হলো জুম‘আর দ্বিতীয় আজানের পর জুম‘আ ফরয এমন ব্যক্তির অনুমোদিত পন্থায় ক্রয়-বিক্রয় করা (এ সময় বৈধ নয়)।[12]
২. ফাসেদ -নষ্ট হওয়া:
ফাসেদ এর আভিধানিক অর্থ: ক্ষতিগ্রস্থ ও নষ্ট হয়ে যাওয়া। পারিভাষিক অর্থ:
ما لا تترتب آثار فعله عليه عبادة كان أم عقدا
‘‘যার কর্মের ফল তার উপর বর্তায় না, চাই সেটা ইবাদত হোক অথবা লেন- দেন হোক।’’
সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রে ফাসেদ হলো যে কর্ম দ্বারা দায়িত্ব মুক্ত হয় না এবং আদেশ বা নিষেধের দাবীও পূরণ হয় না। যেমন: সময়ের পূর্বেই ছ্বলাত আদায় করা। লেন-দেনের ক্ষেত্রে ফাসেদ হলো যার কর্মের ফল তার উপর বর্তায় না। যেমন: অজ্ঞাত বস্ত্ত বিক্রয় করা।[13] ইবাদত, লেন-দেন ও শর্তের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফাসেদ জিনিসই হারাম। কেননা, এটি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনের পর্যায়ভূক্ত এবং তার আয়াতকে উপহাসের বস্ত্ত হিসাবে গ্রহণ করার শামিল। উপরন্তু আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব লোকের কর্মকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যারা এমন সব শর্ত আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই।[14]
ফাসেদ ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য:
দু’টি ক্ষেত্র ব্যতিত ফাসেদ ও বাতিল একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
প্রথম ক্ষেত্র: হাজীদের ইহরামের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে উসূলবিদগণ উভয়ের মাঝে পার্থক্য করেছেন এভাবে যে, ফাসেদ হলো ঐ হজ্জ যাতে মুহরিম ব্যক্তি প্রথম হালাল (১০ ই যিলহজ্জ কুরবানী, মাথা মুন্ডন প্রভৃতি বিষয় পালন করে হালাল হয়ে যাওয়া) এর পূর্বে স্ত্রী মিলন করে।[15] আর বাতিল বলা হয় যার কারণে ব্যক্তি দীন ইসলাম হতে বেরিয়ে (মুরতাদ) হয়ে যায়।[16]
দ্বিতীয় ক্ষেত্র: বিবাহ। এক্ষেত্রে উসূলবিদগণ উভয়ের মাঝে পার্থক্য করেছেন এভাবে যে, ঐ বিবাহকে ফাসেদ বলা হয়, যার ফাসেদ হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন। যেমন: মেয়ের অবিভাবক ছাড়া বিবাহ করা।[17]
পক্ষান্তরে ঐ বিবাহকে বাতিল বলা হয়, যার বাতিল হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণ সবাই একমত। যেমন: ইদ্দত পালনকারী মহিলার বিবাহ করা।[18]
[2]. ما أمر به الشارع (শরীয়ত প্রণেতা যা আদেশ করেন) এ কথা দ্বারা হারাম, মাকরূহ ও মোবাহ বিষয় বের হয়ে গেছে। হারাম ও মাকরূহ বিলুপ্ত হওয়ার কারণ হলো হারাম ও মাকরূহ এর ক্ষেত্রে আদেশ করা হয় না। বরং নিষেধ করা হয়। মোবাহ বের হয়ে যাওয়ার কারণ হলো, এতে কোন আদেশ থাকে না।
[3]. মানদুব বিলুপ্ত হওয়ার কারণ হলো, এখানে আদেশ থাকলেও আবশ্যিকভাবে পালনের আদেশ থাকে না।
[4]. অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, ওয়াজিব ও ফরজ একই বিষয়। কিন্তু হানাফীদের নিকট ফরজ হলো যা অকাট্ট দলীলের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়। যেমন: কুরআন বা মুতাওয়াতির হাদীছের মাধ্যমে সাব্যস্ত আবশ্যক পালনীয় কর্ম। পক্ষান্তরে দলীলে যন্নী বা প্রবল ধারণা ভিত্তিক দলীল অর্থাৎ খবরে ওয়াহেদ এর মাধ্যমে সাব্যস্ত হলে, তা ওয়াজিব গণ্য হবে। অনুরূপভাবে দলীলে ক্বাতঈ বা অকাট্ট দলীলের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হলে হারাম আর দালীলে যন্নীর মাধ্যমে সাব্যস্ত হলে নিষেধাজ্ঞা মাকরূহ গণ্য হবে।
[5]. কোন মোবাহ কর্ম ওয়াজিব কর্মের মাধ্যম হওয়ার কারণে ওয়াজিব হওয়ার উদাহরণ হলো ছ্বলাত আদায়ের জন্য ওযু করা ফরয। পানি ক্রয় মোবাহ। কিন্তু কোথায় যদি পানি ক্রয় করা ছাড়া ওযুর পানি না পাওয়া যায়, এবং কাছে টাকাও থাকে, তাহলে সেই সময় পানি ক্রয় করা ফরজ হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কোন মোবাহ কাজ হারাম কাজের মাধ্যম হলে, মোবাহ কাজটিও হারাম গণ্য হবে।
[6]. অর্থাৎ বিষয়টি মৌলিক ভাবে বৈধই থেকে যাবে। যদিও সেটি কোন কোন ক্ষেত্রে আদিষ্ট বিষয়ের মাধ্যম হওয়ার কারণে আদিষ্ট অথবা নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হওয়ার কারণে নিষিদ্ধ বিবেচিত হয়।
[7]. সাবাব বা কারণ, শর্ত, প্রতিবন্ধকতা প্রভৃতিও প্রতীকী বিধি-বিধানের অন্তর্ভূক্ত।
[8]. যখন কোন ব্যক্তির পালিত ফরজ ইবাদত ছহীহ হয়, তখন ঐ ব্যক্তি ফরজিয়্যাতের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং তার উপর থেকে কর্মটি পালনের দাবী পূরণ হয়।
[9] . الشرط এর আভিধানিক অর্থ: আলামত, প্রতীক প্রভৃতি।
পারিভাষিক অর্থ:
الشرط: ما يلزم من عدمه العدم ولا يلزم من وجوده الوجود.
‘‘অর্থাৎ শর্ত বলা হয়, যার অবিদ্যমানতা শর্তযুক্ত জিনিসের অবিদ্যমানতাকে আবশ্যক করে। তবে তার বিদ্যমানতা শর্তযুক্ত জিনিসের বিদ্যমানতাকে অবধারিত করে না।’’ যেমন; ছ্বালাতের জন্য ওযু করা শর্ত। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি ওযু ছাড়াই ছ্বলাত আদায় করে, তাহলে তার ছ্বলাত ছহীহ হবে না। কিন্তু ওযু করলেই যে ছ্বলাত পাওয়া যাবে, এমন নয়। কারণ অনেকেই ওযু করার পরও ছ্বলাত আদায় নাও করতে পারেন।
السبب অর্থ: কারণ বা উপকরণ। পারিভাষিক অর্থ:
السبب: ما يلزم من عدمه العدم ويلزم من وجوده الوجود.
‘‘অর্থাৎ যার বিদ্যমানতা উপকরণকৃত অর্থাৎ যার সে উপকরণ, সেটির বিদ্যমানতাকে আবশ্যক করে এবং তার অবিদ্যমানতা উপকরণকৃত জিনিসটির অবিদ্যমানতাকে অবধারিত করে।’’
المانع এর আভিধানিক অর্থ: বাধাদানকারী, প্রতিবন্ধক। পারিভাষিক অর্থ:
المانع: ما يلزم من وجوده العدم ولا يلزم من عدمه الوجود.
‘‘অর্থাৎ যার বিদ্যমানতা সংশ্লিষ্ট জিনিসের অবিদ্যমানতাকে আবশ্যক করে। তবে তার অবিদ্যমানতা সংশ্লিষ্ট জিনিসের বিদ্যমানতাকে অবধারিত করে না।’’ অর্থাৎ المانع ও الشرط সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী।
[10]. যেহেতু ছ্বলাত আদায় করার জন্য শর্ত হলো ওযু করা।
[11]. যেহেতু বিক্রয় ছহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো বিক্রয় যোগ্য পণ্যের মালিক হওয়া।
[12]. সুরা জুম‘আ ৯ নং আয়াতে জুম‘আর আজানের পর ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করা হয়েছে।
[13]. যে কোন জিনিস ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো বিক্রয় যোগ্য পণ্য জ্ঞাত বিষয় হতে হবে। সুতরাং অজ্ঞাত বস্ত্ত ক্রয়-বিক্রয় করলে, উক্ত ক্রয়-বিক্রয় ফাসেদ গণ্য হবে।
[14]. ছহীহ বুখারী হা/ ২১৫৫, মুসলিম হা/ ১৫০৪।
[15]. মুহরিম ব্যক্তি প্রথম হালাল অর্থাৎ ১০ ই যিলহজ্জ কুরবানী, মাথা মুন্ডন প্রভৃতি সম্পন্ন করে হালাল হয়ে যাওয়ার পূর্বে স্ত্রী মিলন করলে তার হজ্জ ফাসেদ গণ্য হবে। অতঃপর সে অন্যান্য হাজীদের মতই হজ্জের বাকী কাজ চালিয়ে যাবেন। তবে তাকে এ হজ্জের ক্বাযা আদায় করতে হবে।
[16]. মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মুরতাদ হয়ে গেলে তার হজ্জ বাতিল গণ্য হবে। কাজেই সে ব্যক্তি পরক্ষণেই তাওবা করে মুসলিম হয়ে গেলে, তার জন্য জায়েয নেই হজ্জের বাকী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। বরং তার জন্য আবশ্যক হলো পরবর্তীতে হজ্জ পুনরায় আদায় করা।
[17]. কোন মেয়ে তার অভিভাবক ছাড়া বিবাহ করলে অধিকাংশ ইমামদের মতে, উক্ত বিবাহ ফাসেদ বলে গণ্য হবে। তবে হানাফী মাযহাব মতে, মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞানবান হলে, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিবাহ করতে পারবে।
[18]. ইদ্দত বা শোক পালনকারী মহিলার ইদ্দতের সময় সীমা পূর্ণ না করা পর্যন্ত বিবাহ করা সর্ব সম্মতিক্রমে হারাম। দ্র: সুরা বাক্বারা/২৩৫।