কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত অষ্টম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ২ টি

হাজ্জের ওয়াজিবগুলি দু’ভাগে বিভক্ত:

এক প্রকারের ওয়াজিব যা ছাড়া হাজ্জ শুদ্ধ হয় না। অপর এক প্রকারের ওয়াজিব, যা ব্যতীত হাজ্জ শুদ্ধ হতে পারে। (তবে তা ছুটে গেলে কুরবানী দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে হবে)

যে সব ওয়াজিব যা ছাড়া হাজ্জ শুদ্ধ হয় না তাকে ফিকহের পরিভাষায় রুকন (ফরয) ও বলা হয়। আর তা হচ্ছে:

১। ইহরাম বাঁধা। তা হচ্ছে হাজ্জে প্রবেশ করার নিয়্যাত করা। এর প্রমাণ নাবী (সা.) এর বাণী:

إنّمَا الأَعْمَالُ بالنِّيّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امرِىءٍ مَا نَوَى

নিশ্চয়ই সমস্ত আমল (কর্ম) নির্ভরশীল নিয়্যাতের উপর। আর নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যার নিয়্যাত করবে।[1]

আর হাজ্জের ইহরাম করার সময় শুরু হয় শাওয়াল মাসের প্রথম থেকে। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ

হাজ্জ কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে, অতঃপর এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থ করবে, তার জন্য হজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।[2]

আর এ মাসগুলির প্রথম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস এবং শেষ মাস হচ্ছে যিলহজ্জ মাস। আর ইহরাম করার জন্য নির্ধারিত স্থানসমূহ হচ্ছে পাঁচটি; যা পূর্বে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।

২। আরাফায় অবস্থান করা। দ্বিতীয় রুকুন হচ্ছে, ৯ই যিলহাজ্জ আরাফায় অবস্থান করা। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

فَإِذَا أَفَضْتُم مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُواْ اللّهَ عِندَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ

আর যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরবে তখন মাশ‘আরুল হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করবে।[3]

আর নাবী (সা.) বলেছেন:

الْحَجُّ عَرَفَةُ مَنْ جَاءَ لَيْلَةَ جَمْعٍ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ

হাজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থানের নাম। সুতরাং যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছবে সে হাজ্জ পেয়ে গেল।[4]

আর আরাফায় অবস্থানের সময় হচ্ছে, ৯ যিলহাজ্জ মাথার উপর থেকে সূর্য ঢলার পর হতে ১০ যিলহাজ্জের ফজর হওয়া পর্যন্ত। কারণ, নাবী (সা.) সূর্য ঢলার পরই আরাফায় অবস্থান করেছেন এবং তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছাবে সে হাজ্জ পেয়ে যাবে। তবে কিছু আলিমগণ বলেছেন যে, আরাফায় অবস্থানের সময় শুরু হয়, ৯ই যিলহাজ্জ ফজর সময় থেকে। আর অবস্থানস্থল হচ্ছে আরাফার পুরো ময়দান। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

وَقَفْتُ هَاهُنَا وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ

আমি এখানে (আরাফায়) অবস্থান করলাম। তবে আরাফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থানের জায়গা।[5]

৩। বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ইফাযাহ করা। হাজ্জের তৃতীয় রুকন হচ্ছে কা‘বা ঘরের তাওয়াফে ইফাযাহ (যিয়ারাহ) করা। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ

আর তারা যেন প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে।[6]

আর নাবী (সা.) যখন জানতে পারলেন যে, সাফিয়াহ্ (রা.)-এর মাসিক ঋতু শুরু হয়ে গিয়েছে, তখন তিনি বললেন: তাহলে কি সে আমাদেরকে বিদায় হতে বিলম্ব করতে বাধ্য করবে? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে তো কা’বা ঘরের তাওয়াফে ইফাযাহ করে নেয়ার পর তার হায়য (মাসিক ঋতু) এসেছে। তখন নাবী (সা.) বললেন, তাহলে সে মক্কা হতে প্রস্থান করতে পারবে। নাবী (সা.)-এর এ বাণী,

أَحَابِسَتُنَا هِيَ

সে কি আমাদেরকে বিদায় হতে বিলম্ব করতে বাধ্য করবে?[7]

এটা প্রমাণ করে যে, তাওয়াফে ইফাযা ফরয, যা অবশ্যই আদায় করতে হবে। কেননা তা যদি ফরয না হত তাহলে তাঁদের বিলম্ব করতে বাধ্য করার কারণ হতে পারে না। তাই যখন নাবী (সা.)-কে বলা হল যে, সাফিয়াহ্ তাওয়াফে ইফাযাহ করে নিয়েছে, তখন তিনি মক্কা থেকে প্রস্থানের অনুমতি দিলেন।

আর তাওয়াফে ইফাযার সময় হচ্ছে, আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থানের পরে। যার প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

ثُمَّ لْيَقْضُوا تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ

অতঃপর তারা যেন তাদের দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করে, তাদের মানৎ পূর্ণ করে আর প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে।[8]

আর দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করা এবং মানৎ পূর্ণ করা, আরাফা এবং মুযদালিফায় অবস্থানের পরই হয়ে থাকে।

৪। সাফা ও মারওয়ার সাঈ করা। ইহা হচ্ছে হাজ্জের চতুর্থ রুকন।

যার দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

নিশ্চয়ই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। কাজেই যে ব্যক্তি কাবাগৃহের হাজ্জ অথবা উমরা করবে, এ দু’টোর সাঈ করাতে তাদের কোন গুনাহ নেই।[9]

আর আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, আমাদেরকে আল্লাহর রসূল (সা.) তারবিয়ার দিন বিকেল বেলা হাজ্জের তালবিয়া উচ্চারণ করতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর হাজ্জের কার্যাবলী সমাপ্ত হলে আমরা মক্কা এসে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করি। এর মাধ্যমে আমাদের হাজ্জ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। আর নাবী (সা.) আয়িশা (রা.)-কে সম্বোধন করে বলেন:

يُجْزِئُ عَنْكِ طَوَافُكِ بِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ عَنْ حَجِّكِ وَعُمْرَتِك

তোমার হাজ্জ ও উমরার জন্য সাফা ও মারওয়ার সাঈ করা যথেষ্ট।[10] আরো আয়িশা (রা.) বলেন:

مَا أَتَمَّ اللَّهُ حَجَّ امْرِئٍ وَلَا عُمْرَتَهُ لَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَة

মহান আল্লাহ এমন ব্যক্তির হাজ্জ ও উমরা কবুল করবেন না, যে সাফা ও মারওয়ার সাঈ না করবে।[11]

আর সাঈ করার সময় হচ্ছে তাওয়াফে ইফাযার পরে। তবে যদি কেউ তা তাওয়াফে ইফাযার আগেই সেরে নেয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। বিশেষ করে যদি তা ভুলে গিয়ে বা অজ্ঞতা বশতঃ হয়।

কারণ, নাবী (সা.)-কে জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি তাওয়াফ করার পূর্বে সাঈ করে ফেলেছি? উত্তরে তিনি বলেন, এতে কোন অসুবিধা নেই।

এ চারটি; ইহরাম বাঁধা, আরাফায় অবস্থান, তাওয়াফে ইফাযাহ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ হচ্ছে হাজ্জের রুকন বা ফরয, এছাড়া হাজ্জ বিশুদ্ধ হবে না।

">
[1]. সহীহ বুখারী ১ ও ইবনে মাজাহ ৪২২৭।

[2]. সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৯৭

[3]. সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৯৮

[4]. সহীহ: মুসনাদ আহমাদ ১৮৭৭৪ , নাসাঈ ৩০১৬, তিরিমিযী ৮৮৯ ও ইবনু মাজাহ ৩০১৫।

[5]. সহীহ মুসলিম ১২১৮।

[6]. সূরা আল-হজ্জ ২২ঃ ২৯

[7]. সহীহ বুখারী ১৭৫৭, ১৭৩৩, সহীহ মুসলিম ১২১১।

[8]. সূরা আল-হাজ্জ ২২ঃ ২৯

[9]. সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৫৮

[10]. সহীহ মুসলিম ১২১১।

[11]. সহী বুখারী ১৭৯০ ও সহীহ মুসলিম ১২৭৭।
দ্বিতীয় প্রকারের ওয়াজিব, যা ব্যতীত হাজ্জ শুদ্ধ হয়ে যায়

এমন কতিপয় ওয়াজিব রয়েছে যা ছুটে গেলেও হাজ্জ সিদ্ধ হয়ে যায়, যেগুলোকে ফিকহের পরিভাষায় হাজ্জের ওয়াজিব বলা হয়। তা হলো:

১। শরিয়াত নির্ধারিত মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধা। এর দলীল নাবী (সা.)-এর বাণী:

يُهِلُّ أَهْلُ الْمَدِينَةِ مِنْ ذِي الْحُلَيْفَةِ وَيُهِلُّ أَهْلُ الشَّأْمِ مِنْ الْجُحْفَةِ

মদীনাবাসী যুলহুলায়ফা থেকে ইহরাম করবে এবং শামবাসী জুহফা থেকে ইহরাম করবে।[1]এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে নির্দেশসূচক।

যার প্রমাণ ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত অপর একটি বর্ণনা, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আমি কোন স্থান থেকে উমরা করব? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সা.) নাজদবাসীদের জন্য ‘কারন মানাযিল’ নামক স্থানকে নির্ধারিত করেন।[2]

২। যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারীখে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা। কারণ, নাবী (সা.) সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করেছেন। আর তিনি একথাও বলেছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[3]

আর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আরাফা হতে প্রস্থান করায় জাহিলী যুগের বিজাতীর সাদৃশ্যতা হয়ে যায়; কেননা তারা সূর্য ডুবার পূর্বেই আরাফা হতে রওনা হয়ে যেত।

৩। ঈদের রাত্রে মুযদালিফায় রাত্রী যাপন করা। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

فَإِذَا أَفَضْتُم مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُواْ اللّهَ عِندَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ

আর যখন তোমরা আরাফাত হতে ফিরবে তখন মাশ‘আরুল হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করবে।[4]

আর তার শেষ সময় হচ্ছে ফজর সলাতের সময় পর্যন্ত। কারণ, নাবী (সা.) উরওয়া বিন মুযাররিস (রা.)-কে সম্বোধন করে বলেন:

مَنْ شَهِدَ صَلَاتَنَا هَذِهِ وَوَقَفَ مَعَنَا حَتَّى نَدْفَعَ وَقَدْ وَقَفَ بِعَرَفَةَ قَبْلَ ذَلِكَ لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَقَدْ أَتَمَّ حَجَّهُ وَقَضَى تَفَثَه

যে ব্যক্তি আমাদের এ (ফজর) সলাতে উপস্থিত হবে এবং এখান থেকে রওনা হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে অবস্থান করবে। আর এর পূর্বে সে আরাফায় রাত্রে কিংবা দিনে অবস্থানও করেছে, তাহলে সে তার হাজ্জ সম্পূর্ণ করে নিল এবং তার দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করে ফেলল।[5]

আর দুর্বলরা; যেমন, নারী ও শিশুরা, যাদের জন্য মানুষের ভীড়-ভাড় কষ্টের কারণ হতে পারে, তাদের জন্য ঈদের রাতের শেষভাগে মুযদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া জায়েয; যাতে করে তারা মিনায় মানুষের ভীড়ের পূর্বেই পাথর মেরে নিতে পারে।

কারণ, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) তাঁর পরিবারের দুর্বলদের আগেই মিনা পাঠিয়ে দিতেন। তাঁদের কেউ তো মিনায় এসে ফজর সলাত আদায় করতেন আবার কেউ তার কিছুক্ষণ পরে পৌঁছতেন। তাঁরা মিনা পৌঁছে জামরায় পাথর মেরে নিতেন। আর তিনি লোকদেরকে বলতেন, আল্লাহর রসূল (সা.) এ ধরণের দুর্বলদের জন্য ছাড় দিয়েছেন।[6]

অনুরূপ আবূ বাকর (রা.)-এর মেয়ে আসমা (রা.) চন্দ্র অস্তমিত হওয়ার অপেক্ষা করতেন। তারপর তিনি মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যেতেন এবং জামরায় পাথর মেরে নিতেন। অতঃপর নিজ তাঁবুতে ফিরে এসে ফজরের সলাত আদায় করতেন এবং তিনি বলতেন যে, আল্লাহর রসূল (সা.) মহিলাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন।[7]

আর মুযদালিফার সমস্ত জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল। তবে হাজীদের জন্য মুযদালিফার সীমানা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক; যাতে করে কোন হাজী তার বাইরে অবস্থান না করে।

৪। ঈদের দিন (১০ তারিখে) জামরায়ে আক্বাবায় (বড় জামরায়) এবং তাশরীকের দিনগুলিতে ( ১১, ১২, ১৩ তারিখে) সময় মত তিনটি জামরাতেই কংকর নিক্ষেপ করা। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

وَاذْكُرُواْ اللّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى

তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করবে; অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে দু’দিনে চলে যায় তার প্রতি কোন গুনাহ্ নেই এবং যে ব্যক্তি অধিক সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে, তার প্রতিও গুনাহ্ নেই, এটা তার জন্য যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে।[8]

আর নির্দিষ্ট দিনগুলোর তাফসীর হচ্ছে তাশরীকের দিনগুলি (১১, ১২ ও ১৩ যিলহাজ্জের দিনগুলি)। আর জামরাগুলিতে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে মহান আল্লাহর যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْيُ الْجِمَارِ لِإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّهِ

নিশ্চয়ই বায়তুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ায় সাঈ এবং জামরাগুলিতে কংকর নিক্ষেপ করা আল্লাহর যিকির (স্মরণ) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে বিধি-বদ্ধ করা হয়েছে।[9]

৫। পুরুষদের জন্য মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা। তবে মহিলারা শুধুমাত্র চুল ছোট করবে। কেননা নাবী (সা.) বলেছেন:

لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ الْحَلْقُ إِنَّمَا عَلَى النِّسَاءِ التَّقْصِيرُ

নারীদের জন্য মাথা মুণ্ডন জায়েয নয়। তাদের জন্য একমাত্র মাথার চুল ছোট করার বিধান রয়েছে।[10]

৬। আইয়ামে তাশরীক্বের রাত্রিগুলি মিনায় অতিবাহিত করা। তবে তাড়াতাড়ি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য মিনায় ১১ ও ১২ যিলহাজ্জের রাতগুলি যাপন করা। আর বিলম্ব করতে ইচ্ছুক হাজীর জন্য ১৩ যিলহাজ্জের রাত পর্যন্ত যাপন করা। কারণ, নাবী (সা.) মিনায় এ রাতগুলি যাপন করেছেন এবং তিনি বলেছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[11]

আরো আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত যে, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রা.) হাজীদেরকে যমযম পানি পান করাবার উদ্দেশ্যে নাবী (সা.)-এর নিকট মিনার রাতগুলি মক্কায় কাটানোর জন্য অনুমতি চাইলে, তাঁকে তিনি অনুমতি দেন।[12]

অপর একটি বর্ণনায় আছে, “তাঁকে তিনি এ ব্যাপারে ছাড় দেন।” আর ছাড় দেয়ার কথাটি প্রমাণ করে যে, কোন ওযর না থাকলে মিনায় রাত্রী যাপন করা ওয়াজিব।

উপরোক্ত ছয়টি কাজ হাজ্জের ওয়াজিব। (যা প্রত্যেক হাজীর প্রতি ওয়াজিব) তবে এগুলি ছাড়াও হাজ্জ শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এগুলির কোন একটি ছেড়ে দিলে অধিকাংশ আলিমগণের মতে একটি ছাগল বা উঁট কিংবা গরুর সাত ভাগের একভাগ ফিদয়া (মুক্তিপণ) ওয়াজিব হয়ে যাবে। যা মক্কায় যবহ করে সেখানকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। (মহান আল্লাই অধিক পরিজ্ঞাত)

৭। আর তাওয়াফে বিদা’ (বিদায়ী তাওয়াফ) সমস্ত হাজীর উপর ওয়াজিব হবে যারা মক্কা থেকে নিজ দেশে প্রস্থান করবে। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন:

أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلَّا أَنَّهُ خُفِّفَ عَنْ الْحَائِضِ

লোকদেরকে (নাবী (সা.)-এর পক্ষ হতে) নির্দেশ দেয়া হল যে, তাদের শেষ সাক্ষাৎ যেন বায়তুল্লাহর সাথে হয়। তবে হায়য অবস্থায় থাকা মহিলাকে ছাড় দেয়া হয়েছে।[13]

আরো নাবী (সা.) বিদায় হাজ্জে মক্কা থেকে রওনা হওয়ার পূর্বে বায়তুল্লাহ্ও তাওয়াফ করেন। ৮। [আর কুরবানী ওয়াজিব হয় একমাত্র মক্কা বা হারামের এলাকার বাইরের অধিবাসী যারা হাজ্জে তামাত্তুকারী বা কিরানকারী হবে তাদের উপর। আর যার পক্ষে সম্ভব না হয়, সে ব্যক্তি হাজ্জের দিনগুলোর মধ্যে তিনদিন এবং গৃহে ফেরার পর সাতদিন, এ মোট দশদিন সিয়াম পালন করবে।][14]

[1]. বুখারী ১৫২৪ ও মুসলিম ১১৮১।

[2]. সহীহ বুখারী ১৫২৫।

[3]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭, নাসাঈ ৩০৬২, সুনানুল কুবরা বাইহাকী ৯৪৬৫।

[4]. সূরা আল-বাক্বারাঃ ১৯৮

[5]. নাসাঈ ও তিরমিযী ৮৯১, হাদীসটি সহীহ

[6]. সহীহ বুখারী ১৬৭৬।

[7]. সহীহ বুখারী ১৬৭৯।

[8]. সূরাহ্ আল-বাক্বারাহঃ ২০৩)

[9]. সহীহ: সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ২৮৮২।

[10]. সহীহ: আবূ দাউদ ১৯৮৫।

[11]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭।

[12]. সহীহ বুখারী ১৭৪৩-১৭৪৫ ও সহীহ মুসলিম ১৩১৫।

[13]. সহীহ বুখারী ১৭৫৫ ও সহীহ মুসলিম ১৩২৮।

[14]. সূরা বাকারা ২:১৯৬
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে