জাহিল সম্প্রদায় তাদের দীনের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে। যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]
প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।
অনুরূপভাবে তারা দুনিয়ার ব্যাপারেও পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করতো, এধরণের কর্মকান্ডই সঠিক। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দীনে একতাবদ্ধ থাকার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ) [الشورى: 13]
তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন, আর যা আমি তোমার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো: তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিছিন্ন হবে না (সূরা আশ শূরা ৪২:১৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ) [الأنعام: 159]
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই (সূরা আল আন‘আম ৬:১৫৯)।
আল্লাহ তা‘আলা তাদের অনুকরণ করতে নিষেধ করে বলেন,
وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ) [آل عمران: 105]
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৫)।
দুনিয়ায় বিভক্তি সৃষ্টি করা থেকে তিনি আমাদেরকে নিষেধ করে বলেন:
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)।
................................................
ব্যাখ্যা: এ দ্বিতীয় প্রকার বিষয়ের ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলদের বিরোধিতা করেন। দীন ও দুনিয়া উভয় ব্যাপারে জাহিলরা বিভক্তি সৃষ্টি করে। তাদের স্বভাবই ছিল অনৈক্য থাকা ও বিভক্ত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 31،32]
আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩১-৩২)।
এটা ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও মূর্তিপূজক জাহিলদের বৈশিষ্ট্য। সমস্ত জাহিলী দল এভাবে তাদের দীনের বিভক্তি ঘটায়। প্রত্যেকের স্বকীয় দীন ছিল, যার দিকে তারা ডাকতো ও আর ঐ দীনে সম্পৃক্ত হতো। খ্রিষ্টানরা তাদের খ্রিষ্টীয় ধর্মের দিকে আহবান জানায় ও ইয়াহুদীরা তাদের ইহুদী ধর্মের দিকে ডাকে। তারা প্রত্যেকে অন্যের দীনকে অস্বীকার করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَى شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ كَذَلِكَ قَالَ الَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ) [البقرة: 113]
আর ইয়াহূদীরা বলে, নাসারাদের কোন ভিত্তি নেই এবং নাসারারা বলে ইয়াহূদীদের কোন ভিত্তি নেই। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবেই, যারা কিছু জানে না, তারা তাদের কথার মত কথা বলে (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।
যারা (দীন সম্পর্কে) জানে না তারা মুশরিক। কেননা তাদের কোন কিতাব নেই, আর আসমানী কোন দীনও নেই। তারা পরস্পরকে কাফির বলে আখ্যা দেয় এবং পরস্পরে বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ) [البقرة: 113]
সুতরাং আল্লাহ কিয়ামত দিবসে যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।
আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন কে হক্বের উপর এবং কে বাতিলের উপর রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার দীন একটিই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْأِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) [الذاريات:56]
আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ‘ইবাদত করবে (সূরা আয যারিয়াত ৫১:৫৬) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ) [البقرة:21]
হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (সূরা আল বাক্বারাহ ২:২১)।
ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপূজক, আরব জাতি ও অনারব জাতি সকল সৃষ্টির জন্য দীন একটিই। ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্ধারিত, যার কোন শরীক নেই। ঐ সব জাহিলরা তাদের দীনকে বিভক্ত করে। তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে একদল অপরের দীনের বিরোধিতা করে। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা নিজেদের মাঝে মতবিরোধে লিপ্ত হয় তারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন মতে বিভক্ত, এমনকি বর্তমানেও তারা মতবিরোধের উপর প্রতিষ্ঠিত।
অনুরূপভাবে আরবের মূর্তিপূজকরাও তাদের ইবাদতে মতোপার্থক্য সৃষ্টি করে। তাদের মধ্যে কেউ সূর্য ও চন্দ্রপূজা করে, আবার কেউ করে মূর্তিপূজা, কেউ ফেরেশতা, আওলীয়া ও নেক লোকদের পূজা করে এবং কেউ গাছ ও পাথর পূজা করে, এটাই কিতাবী (কিতাব প্রাপ্ত) ও উম্মি (নিরক্ষর) জাহিলদের অবস্থা। তাদের দীন তাদেরকে একীভূত করতে পারেনি। তাদের অনেক দল রয়েছে। আল্লাহর তা‘আলার বাণী,
( كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]
প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।
এটা তাদের শাস্তি ও পরীক্ষা। মানুষ যে বাতিলের উপর রয়েছে তা নিয়েই সে আনন্দবোধ করে। মানুষের উপর আবশ্যক এর বিপরীত অবস্থানে থাকা। মানুষের উচিত ভ্রষ্টতাকে এড়িয়ে চলা, সঠিক দীন থেকে বিমুখ না হওয়া ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত থাকা। কিন্তু তারা এগুলোর বিপরীত কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
( كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]
প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।
মানুষ চিন্তাই করে না সে কি হক্বের উপর আছে নাকি বাতিলের উপর। বাপদাদা, পূর্ব-পুরুষ, আত্নীয়-স্বজন ও জাতি গোত্রের রীতিনীতিই যেন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাতিল নিয়েই তারা আনন্দিত, এটাই তাদের শাস্তি। যখন মানুষ এভাবে আনন্দবোধ করে তখন সে এ থেকে মুখ ফিরাতে পারে না। এটা জাহিলদের স্বভাব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করে বলেন,
(وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً) [الروم: 31- 32]
আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না) (সূরা আর রূম ৩০: ৩১-৩২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ) [الأنعام : 159]
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন (সূরা আল আন‘আম ৬:১৬৯)।
তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আয়াত নাযিল করে বলেন,
( شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ) [الشورى: 13]
তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন, আর যা আমি তোমার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম- তা হল: তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। (সূরা আশ শূরা ৪২:১৩)
দীন প্রতিষ্ঠা করাকে আল্লাহ তা‘আলা বিধিবদ্ধ করেছেন, যা নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস সালাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ সকল নাবী রসূলগণের দায়িত্ব ছিল। এ সকল নাবী রসূলগণের নাম উল্লেখের কারণ হলো তারা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী ছিলেন। পাঁচজন নাবী হলেন: নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা রসূলগণের মধ্যে সর্বোত্তম, আল্লাহ তা‘আলা তাদের মনোনিত করেছেন। সকল নাবী রসূলগণের নিকট থেকে আল্লাহ তা‘আলা ওয়াদা গ্রহণ করেন, এ পাঁচজন তাদের মধ্যে অন্যতম। তাদের নিকট থেকে আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গিকার গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَخَذْنَا مِنْهُمْ مِيثَاقاً غَلِيظاً) [الأحزاب:7]
আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নাবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। (সূরা আল আহযাব ৩৩:৭)
সমস্ত নাবী-রসূলগণের দীন এক। তাহলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা যার কোন শরীক নেই। সাধারণভাবে তা ছিল সকল রসূলের দীন, বিশেষতঃ ঐ পাঁচজনের। এব্যাপারে কোন মতানৈক্য ও মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। এ দীন এককভাবে কোন নাবীর নয়, কোন জাতিরও নয়। বরং সকলের দীন এক। সকল সৃষ্টির উপরই আল্লাহ তা‘আলার একক দীন সাব্যস্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْأِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) [الذاريات:56]
আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে’ (সূরা আয যারিয়াত ৫১:৫৬)।
সকল সৃষ্টি বলতে জিন ও মানব জাতি উদ্দেশ্য, তাদের দীন এক হওয়ার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়। আর তা হলো তাওহীদ। যাতে ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একত্ব প্রকাশ করা হয়। রসূলগণের ভাষায় মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে ইবাদতের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের নিকট নাবী-রসূল প্রেরণ করে তাদের উপর কিতাব নাযিল করেন। আর বলা হয় এটাই দীন ও এটাই ইবাদত, এটাই সমন্বয়সাধন ও দীনের সমাপ্তি। মানুষের অধিকার নেই যে, তারা দীন তৈরি করে নিজেদের জন্য তা বিধিবদ্ধ করে নিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ
নাকি তাদের জন্য এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি? (সূরা আশ শূরা ৪২:২১)।
এটা আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করা বুঝায়। আল্লাহ তা‘আলা যা তাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা পালন করা তাদের উপর আবশ্যক। তার কিতাব সমূহে ও রসূলগণের ভাষায় আল্লাহ তা‘আলা দীনের বর্ণনা দিয়েছেন, দীনের সমাপ্তি টেনেছেন। আর রসূলগণ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দীনের প্রচারক। বান্দার জন্য আল্লাহ তা‘আলা যা বিধিবদ্ধ করেছেন তারা তা প্রচার করতেন। এটা ছিল রসূলগণের দায়িত্ব। দীনের পদ্ধতি অনুসারে তারা ইবাদত করতেন। জাতির জন্য নির্ধারিত দীনের বিধিবদ্ধ নিয়মানুসারে আল্লাহর বান্দারা তার ইবাদত করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ) [آل عمران:105]
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব (সূরা আলে-ইমরান ৩:১০৫)।
জাহিলদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাদের দীনে তারা বিভক্তি ও মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে। এটা তাদের অজ্ঞতার কারণে হয়নি বরং তাদের কুপ্রবৃত্তির কারণে তা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ)
তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৫)
তারা স্পষ্ট দলীল পরিত্যাগ করে কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। তাদের বিভক্তির মূল কারণ কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ। (নাউযুবিল্লাহ) তারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত নিজেদের কু-প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকের জন্য প্রমাণ পেশ করেছেন। তিনি রসূলগণকে প্রেরণ করে কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعاً فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدىً فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ) [البقرة: 38،39]
আমি বললাম, তোমরা সবাই তা থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না (সূরা আল বাক্বারাহ ৩:৩৮-৩৯)।
আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালাম-কে পৃথিবীতে পাঠানোর পর হতে মানুষের জন্য তিনি দীন নির্ধারণ করেছেন। তিনি মানুষকে নাবী ও দীনবিহীনভাবে পৃথিবীতে পাঠাননি বরং তিনি ধারাবাহিকভাবে রসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আর মানুষের জন্য তিনি দীনকে বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং তা স্পষ্টভাবে তাদের জন্য বর্ণনা করেছেন। আর সর্বশেষ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দীন ইসলাম দেয়া হয়েছে যা কিয়ামত অবধি চালু থাকবে, তা রহিত হবে না। আর এ দীনের মাপকাঠি হলো কুরআন ও সুন্নাহ। সবযুগেই রসূলগণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে দীন নিয়ে এসেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَإِنْ مِنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلا فِيهَا نَذِيرٌ) [فاطر: 24]
আর এমন কোন জাতি নেই যার কাছে সতর্ককারী আসেনি (সূরা ফাতির ৩৫:২৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(رُسُلاً مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ) [النساء: 165]
আর (পাঠিয়েছি) রসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রসূলগণের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে (সূরা আন নিসা ৪:১৬৫)।
সুতরাং সকলেই দলীল নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
أَنْ تَقُولُوا مَا جَاءَنَا مِنْ بَشِيرٍ وَلا نَذِيرٍ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَشِيرٌ وَنَذِيرٌ
যেন তোমরা না বল যে, আমাদের নিকট কোন সুসংবাদদাতা কিংবা সতর্ককারী আসেনি। অবশ্যই তোমাদের নিকট সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এসেছে। আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান (সূরা আল মায়িদা ৫:১৯)।
আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির উপর দলীল বহাল রাখেন। কিন্তু রসূলগণ যা নিয়ে আসেন জাহিলরা জেনে-বুঝে হঠকারিতা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে রসূলগণের বিরোধিতা করে। বিশেষত ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রিসালাত সম্পর্কে জানতো। এজন্য তাদের নামকরণ করা হয়েছে আহলুল ইলম বা আহলে কিতাব। তারা অপরাধী, কারণ তারা আহলে কিতাব এবং আহলুল ইলম অর্থাৎ রিসালাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের বিরোধিতা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহ তা‘আলা উম্মতকে জাহিলদের রীতিনীতি ধারণ করতে নিষেধ করেছেন। বরং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অর্পিত দীন আঁকড়ে ধরতে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছাহাবীগণ ও খুলাফায়ে রাশিদীন যার উপর পরিচালিত সেটাই হলো দীন, যা কিয়ামত অবধি আঁকড়ে ধরা উম্মতের উপর ওয়াজীব। যদি তাতে কোন মতভেদ দেখা দেয় তাহলে কিতাব ও সুন্নাহর দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন করা ওয়াজীব-আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ) [النساء:59]
অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (সূরা আন নিসা ৪:৫৯)।
মতানৈক্য করা মানুষের স্বভাব। কিন্তু যখন মতানৈক্য দেখা দিবে আর আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারবো না তখন আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে বলেছেন। যার কাছে কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক দলীল পাওয়া যাবে তার নিকট থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। আর কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী হলে তা পরিত্যাগ করতে হবে। কেননা আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো হকের অনুসরণ করা। রায় বা সিদ্ধান্ত সমর্থন করা অথবা বাপদাদা, পূর্বপুরুষ ও ব্যক্তি প্রধানদের রীতিকে সম্মান দেখানো মুসলিমদের উদ্দেশ্য নয়। এটা মুসলিমদের কাজ হতে পারে না। হক্ব গ্রহণ করাই মু’মিনের উদ্দেশ্য। হক্ব যেখানেই পাওয়া যাবে তা গ্রহণ করবে, কারণ হক্বই মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ) [النساء:59]
যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম (সূরা আন নিসা ৪:৫৯)। আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে যেতে হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً) [النساء:59]
এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর (সূরা আন নিসা ৪:৫৯)। অর্থাৎ এটা পরিনামে উৎকৃষ্টতর। দীন আল্লাহ তা‘আলার রহমত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের মাঝে তার বিধান দিয়েছেন যা হক্ব বলে প্রমাণিত। আর তা হলো তার কিতাব-আল কুরআন। এজন্য তিনি বলেন,
(وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ) [آل عمران: 103]
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না (সূরা আলে-ইমরান ৩:১০৩)।
এখানে (بِحَبْلِ اللَّهِ) বলতে আল-কুরআন উদ্দেশ্য। আর (جَمِيعاً) এর অর্থ হলো সকলেই, কতিপয় নয়। ব্যাপক অর্থে সব সৃষ্টি তথা মানব ও জিন জাতি উভয় উদ্দেশ্য। বিশেষতঃ এ উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَاناً وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا) [آل عمران: 103]
তোমরা বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তার অনুগ্রহে তোমরা হয়ে গেলে ভাই-ভাই। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন (সূরা আলে-ইমরান ৩:১০৩)।
(شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّار) এখানে জাহিলী দীনকে বুঝানো হয়েছে।
(فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا) এ আয়াতাংশ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ইসলামের মাধ্যমে আমাদের মুক্তির পথ উম্মুক্ত করেছেন। আর তা হচ্ছে আল-কুরআন। তাই তার নে‘আমতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং তার রজ্জু আল কুরআনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। কেননা কিতাব হলো আল্লাহর প্রসারিত রজ্জু। যে তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে সে মুক্তি পাবে। আর যে তা ছেড়ে দিবে সে ধ্বংস হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের কাছে জাহিলদের অবস্থার কাহিনী বর্ণনা করে বলেন:
فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।
জাহিলী কর্ম-কান্ড ও জাহিলদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে তার কিতাব আঁকড়ে ধরতে নির্দেশ দেন, যা মতভেদ, ধ্বংস ও বিতর্ক থেকে নিরাপদ। আল্লাহর কিতাব ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত শক্তভাবে ধারণ করা ছাড়া কোন মুক্তি নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا) [آل عمران: 103]
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না (সূরা আলে-ইমরান ৩:১০৩)।
জাহিলরা তাদের দীনে মতভেদ সৃষ্টিকারী হিসাবে গণ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]
প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।
তাদের মতভেদ বাতিল হওয়া সত্বেও তা নিয়ে তারা আনন্দিত হয়। এরূপভাবে তারা দুনিয়া নিয়েও মতপার্থক্য সৃষ্টি করে। কেননা দীন বিনষ্ট হওয়ায় দুনিয়াও নষ্ট হয়। দুনিয়া নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে তারা জামা‘আতবদ্ধ হতে পারে না। বরং প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ শাসন কর্তৃত্বের উপর বহাল থাকে। আর প্রত্যেক গোত্র অন্য গোত্রের লোকদের জীবন ও ধনসম্পদের উপর জবরদস্তি করে। এটা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে আরবদের অবস্থা। তারা তাদের দীন ধ্বংসের মাধ্যমে দুনিয়া ধ্বংস করে। ভীতি, উৎকণ্ঠা ও দারিদ্রতা তাদের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়। জাহিলদের প্রত্যেকেই যুদ্ধবাজ। তাদের প্রত্যেকেই অপরকে আক্রমণ ও অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে। জাহিলী যুগে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ হতো। যেমন মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্র বংশগত দিক থেকে ভাই ভাই সম্পর্ক। তারা কাহতান নামক একই গোত্রীয় লোক ছিল। কিন্তু তাদের মাঝে এক ধ্বংসাত্নক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যা একশত বছরের অধিক সময় ধরে চলতে থাকে। আউস ও খাযরাজ গোত্রের মাঝে সংঘটিত এ যুদ্ধের নাম দেয়া হয়েছে (حرب بعاث) হারবুন বুআ‘ছ।
ইয়াহুদীরা অগ্নিপূজা করতো। আল্লাহ তা‘আলা তার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেন। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে জামা‘আতবদ্ধ করেন। যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হলো, মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেল, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তারা একতাবদ্ধ হয়। তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার এ অনুগ্রহ তার রসূলের মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَاناً) [آل عمران: 103]
আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রুছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তার অনুগ্রহে তোমরা হয়ে গেলে ভাই-ভাই (সূরা আলে-ইমরান ৩:১০৩)।
ইসলামের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করে দেন। তাদের মাঝে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেমে যায়। তারা ও আরবের অন্যান্য গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করলে দুনিয়া শান্তিময় হয়ে যায়। তারা জীবন ও ধনসম্পদের নিরাপত্তা লাভ করে, জমিনে নিরাপদে চলাফেরা করে। আরবের একগোত্র অন্যগোত্রের সাথে মিশে যায়, কেউ অনিষ্টের আশ্রয় নিতো না। তাদের মাঝে ভালবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয় এবং তারা পরস্পর দীনি ভাই হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলে,
(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ) [الأنعام: 159]
নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই (সূরা আল আন‘আম ৬:১৬৯)।
যারা তাদের দীনে বিভক্তি সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয় তারা দীন বহির্ভূত। কেননা দীন একটিই। আর দীনের উপর মানুষের জামা‘আতও একটি। আল্লাহ তা‘আলা এ বিষয়েরই নির্দেশ দিয়েছেন। যিনি এ নির্দেশ মেনে চলবেন তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমর্থন লাভ করবেন ও তার বন্ধু হবেন। আর যে দীনের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে সে বিশৃঙ্খলা ও জাহিলী কর্মের উপরই টিকে থাকে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুক্ত।
জবাব হলো, মতভেদ দু’প্রকার:
প্রথমত: দীনি বিষয়ে মতভেদ। যেমন ইবাদত ও আক্বীদায় মতানৈক্য। এধরণের মতানৈক্য নিকৃষ্ট ও হারাম। কেননা দীনে (ইবাদত ও আক্বীদায়) ইজতিহাদ করার কোন অবকাশ নেই, রায় বা সিদ্ধান্ত দেয়ারও কোন সুযোগ নেই। বরং দীন ও আক্বীদা পরিপূর্ণ। এ বিষয়ে ইজতিহাদ (গবেষণা) করার কোন বিধান নেই।
আল্লাহ তা‘আলা দীন ও আক্বীদা হিসাবে যা কিছু আমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন, রায় ও ইজতিহাদ ছাড়াই তা আঁকড়ে ধরা আমাদের উপর ওয়াজীব-আবশ্যক। আর ইবাদতও পরিপূর্ণ। যে বিষয়ে দলীল রয়েছে তা আমাদেরকে জানতে হবে। আর যে বিষয়ে দলীল পাওয়া যায় না তা বিদ‘আত বলে গণ্য, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে,
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد
যে আমাদের দীনে এমন নতুন কিছু আবিষ্কার করলো যা দীন নয় তা প্রত্যাখ্যাত।[1] অন্য হাদীসে এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة، وكل ضلالة في النار
তোমরা নতুন কিছু আবিষ্কার করা হতে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেক নতুনত্ব বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামের কারণ।[2]
সাধারণভাবে আক্বীদা, ইবাদত ও দীনি বিষয়ে কখনো মতানৈক্যের কোন সুযোগ নেই। একমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর বিধি-বিধান ও সালাফদের পদ্ধতিই অনুসরণীয়।
দ্বিতীয়: রায় (সিদ্ধান্ত) এর ক্ষেত্রে মতানৈক্য করার সুযোগ আছে অথবা ফিক্বহী মাস‘আলায় ইজতিহাদী ব্যাখ্যার বিষয়ে ও দলীলের ভিত্তিতে বিধান উদ্ঘাটন করার ক্ষেত্রে মতানৈক্য করার সুযোগ আছে। কেননা মানুষকে বুঝানোর ক্ষেত্রে বিধান উদ্ঘাটনে ভিন্নতা আসতে পারে। আর ইজমার মাস‘আলা সমূহ সীমাবদ্ধ, তাতে মতানৈক্য বৈধ নয়। যে সব ইজতিহাদী মাস‘আলায় ইজমা হয়নি, সে বিষয়ে ইজতিহাদ করার সুযোগ আছে। প্রত্যেক বিদ্বানকে আল্লাহ তা‘আলা উপযোগী জ্ঞান ও বুঝ দান করেন, যাতে তারা দলীল উদ্ঘাটন করতে পারে। এক্ষেত্রে ইজতিহাদ শরী‘আত সম্মত।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ইজতিহাদ হতো তা ছিল কল্যাণকর। এসব ইজতিহাদী বিষয়ে মতানৈক্য হয়। তবে দীন ও আক্বীদাগত বিষয়ে কোন মতভেদ নেই। আর ফিক্বহী মাসআলায় মতানৈক্য ঘটেই থাকে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছাহাবীরা ইজতিহাদ করতেন আর তাতে মতানৈক্য হতো।
ইজতিহাদ (গবেষণা) দু’প্রকার:
প্রথম: ভিন্নমতের দু’দলের কোন একটির নিকট স্পষ্ট দলীল থাকলে দলীলসহ ঐ মতামত গ্রহণ আবশ্যক। আর এক্ষেত্রে দলীলবিহীন মতামত পরিত্যাজ্য। ফকীহগণের রায় (সিদ্ধান্ত) দলীল ভিত্তিক পেশ করা হয়। তাই যে বিষয়ে দলীল পাওয়া যাবে তা গ্রহণ করা আবশ্যক নচেৎ তা পরিত্যাগ করতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত না হলে ও দলীলের অনুপস্থিতিতে হক্বকে গ্রহণ করা ও সঠিক বিষয়ের দিকে ফিরে আসা মুজতাহিদগণের উপর আবশ্যক। ভুল ইজতিহাদে বহাল থাকা মুজতাহিদ (গবেষক) এর জন্য বৈধ নয়। আর ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও মানুষের জন্য বৈধ নয়। সম্মানিত ইমামগণ এ বিষয়ে আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেন,
(اعرضوا أقوالنا على الكتاب والسنة)
অর্থাৎ তোমরা আমাদের কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কথা পরিত্যাগ করবে।
ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ বলেন,
إذا جاء الحديث عن الرسول صلى الله عليه وسلم فعلى الرأس والعين، وإذا جاء الحديث عن صحابة رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلى الرأس والعين، وإذا جاء الحديث عن التابعين فنحن رجال وهم رجال
যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদীছ পাবে তার উপরই অটল থাকবে। আর ছাহাবীদের থেকে হাদীছ পেলে তার উপর বহাল থাকবে। আর তাবিয়ীনদের থেকে হাদীছ পাওয়া গেলে এ ক্ষেত্রে (সঠিক ও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে) কারণ তারা ও আমরা উভয়ই মানুষ। এটা ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ কথা যিনি সম্মানিত চার ইমামের একজন।
অনুরূপভাবে ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ কবর বাসী অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যাখ্যানকারী ও প্রত্যাখ্যাত। তিনি আরোও বলেন,
একজন অপরজন থেকে বেশি বিতর্ককারী আমাদের নিকট আসে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিবরীল আলাইহিস সালাম যা নিয়ে এসেছেন ঐসব বিতর্ককারীদের তর্কের কারণে আমরা কি তা পরিত্যাগ করতে পারি!? এটা ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ এর কথা। তিনি আরোও বলেন,
প্রথম শ্রেষ্টতর ব্যতীত এই উম্মাতের অন্য কোন শ্রেষ্টতর নেই। এখানে প্রথম শ্রেষ্টতর কি? উত্তর হলো কুরআন ও সুন্নাহ। এটা ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ এর কথা। ইমাম শাফিয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
মুসলিমদের ঐকমত্যে যার নিকট রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত স্পষ্ট হবে, এক্ষেত্রে অন্যের কথা সে গ্রহণ করবে না। তিনি আরোও বলেন: আমার কথা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার বিরোধী হলে আমার কথা ধিক্কারের সাথে বর্জন করবে। তিনি আরোও বলেন, যখন কোন ছ্বহীহ হাদীছ পাওয়া যাবে সেটাই হবে আমার মাযহাব। এটা ইমাম শাফিয়ী রহিমাহুল্লাহ এর কথা।[3]
ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি এমন সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আশ্চার্যবোধ করি, যারা সনদের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও সুফইয়ানের রায়কে গ্রহণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ) [النور: 63]
অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে (সূরা আন নূর ২৪:৬৩)।
তুমি কি জান ফিতনা কি? ফিতনা হলো শিরক। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথা প্রত্যাখ্যান করলে অন্তরে সংশয় সৃষ্টি হবে যা ধ্বংসকর।
আশ্চর্যজনক! এগুলো মুজতাহিদ (দীনি গবেষক) ইমামগণের কথা। তারা তাদের জ্ঞান ও যোগ্যতার মাধ্যমে ইজতিহাদ (গবেষণা) করেন। কিন্তু তারা কখনো নিজেদেরকে ত্রুটিমুক্ত দাবি করেননি। বরং তাদের দলীল ভিত্তিক কথাকে গ্রহণ করার উপদেশ দেন। শাফিয়ী মাযহাবের স্পষ্ট দলীল পাওয়া গেলে তা গ্রহণ করা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীদের উপর আবশ্যক। আর হানাফী মাযহাবের স্পষ্ট দলীল পাওয়া গেলে তা গ্রহণ করা শাফিয়ীদের উপর আবশ্যক। অনুরূপভাবে মালিকীরাও হাম্বলী মাযহাবের স্পষ্ট দলীল গ্রহণ করবে। কারণ দলীল গ্রহণ করাই মূল উদ্দেশ্য। কারও অনুসরণ করা উদ্দেশ্য নয়। ইমামদের পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। কেবলমাত্র দলীলের পক্ষপাতিত্ব করা হবে।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়ুম ও মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবসহ প্রত্যেকেই এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
انظروا في أقوال العلماء، فخذوا ما قام عليه الدليل
আলেমদের কথা যাচাই কর এবং দলীল ভিত্তিক কথা গ্রহণ কর।
তাদের কিতাবাদী থেকে এ কথাগুলোই জানা যায়। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব। যাতে কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, মাযহাবসমূহ বর্জন ও পরিত্যাগ করতে হবে। বরং মাযহাবসমূহ ও ইমামগণের ফিকহ থেকে আমরা উপকার গ্রহণ করবো। কারণ এগুলো আমাদের জন্য বৃহত্তর সম্পদ। তবে আমরা দলীল অনুসরণ করবো। যার নিকট দলীল থাকবে আমাদেরকে তার কথা গ্রহণ করতে হবে। এটাই আবশ্যক। যিনি দলীল জানেন না তিনি আহলুল ইলম (أهل العلم) বিদ্বানদের নিকট থেকে জেনে নিবেন। কারণ আল্লাহ বলেন:
(فَاسْأَلوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ) [النحل: 43]
আর আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষদেরকেই রসূল হিসাবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠিয়েছি। সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জেনে থাক (সূরা আন নাহাল ১৬:৪৩)।
কেননা তাতে দায়িত্ব মুক্ত হবে। তুমি যদি জানো তো আলহামদুলিল্লাহ। দলীল গ্রহণ করো। আর যদি না জানা যায় তবে বিদ্বানদের জিজ্ঞেস করা ওয়াজীব।
দ্বিতীয়: ফিক্বহী ইজতেহাদে দু’টি মতের উভয়টির ব্যাপারে স্পষ্ট কোন দলীল নেই, দু’টি মতই সম্ভাব্য। তাই দলীল না পাওয়ায় ইজতিহাদী মাস‘আলা প্রত্যাখ্যান করা যায় না। ফলে ভিন্ন মতের কোন একটি মত গ্রহণ করাতে কোন অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে শর্ত হলো এটা যেন নিছক পক্ষপাতিত্ব অথবা কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ না হয়। হক্ব গ্রহণ করাই যেন উদ্দেশ্য হয়। এজন্য হাম্বলীরা শাফিয়ীদেরকে এবং শাফিঈরা মালিকীদের প্রত্যাখ্যান করবে না। আর চার ইমাম ও তাদের অনুসারীরা যুগযুগ ধরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। সকল প্রশংসা আল্লাহরই, তাদের মাঝে কোন শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় না। যদিও কোন বিষয়ে এরূপ ঘটে, তবে তা কতিপয় অজ্ঞদের পক্ষপাতিত্বের কারণেই হয়। চার মাযহাবের অধিকাংশ অনুসারীদের মাঝে কোন শত্রুতা, বিদ্বেষ ও বিভেদ নেই। তারা পরস্পর বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হয়। তারা পরস্পরের পিছনে ছ্বলাত আদায় করে। তাদের মাঝে সালাম বিনিময় হয় এবং বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও তারা পরস্পর ভ্রাতৃত্ব সূলভ আচরণ করে। তাদের মাঝে ইজতিহাদী মাস‘আলাগত প্রাধান্যতা নেই। এজন্য তাদের প্রসিদ্ধ কথা হলো:
لا إنكار في مسائل الاجتهاد
‘ইজতিহাদী মাস‘আলা গ্রহণযোগ্য’। ইজতিহাদী কথার ব্যাপারে যে কোন দেশে কোন মতানৈক্য ও বৈপরীত্য নেই। তাই ফিক্বহী রায়ের (সিদ্ধান্ত) উপরও তারা ঐকমত্য পোষণ করে। এই ঐকমত্যে বিভাজন সৃষ্টি করা কারো জন্য জায়েয নয়। বরং উচিত হবে সম্মতি জ্ঞাপন করা ও মতভেদ সৃষ্টি না করা।
">[2]. ছ্বহীহ: সুনানে নাসাঈ হা/১৫৭৭, সুনানে আবূ দাউদ হা/৪৬০৭, ইবনে মাজাহ হা/৪২, তিরমিযী হা/২৬৮১।
[3]. সীয়ারু আলামিন নুবালা ১০/৩৪-৩৫