জাহিল সম্প্রদায় তাদের ইবাদত ও দীনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ নয় - ১

জাহিল সম্প্রদায় তাদের দীনের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে। যেমন-আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]

প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।

অনুরূপভাবে তারা দুনিয়ার ব্যাপারেও পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করতো, এধরণের কর্মকান্ডই সঠিক। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দীনে একতাবদ্ধ থাকার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ) [الشورى: 13]

তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন, আর যা আমি তোমার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হলো: তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিছিন্ন হবে না (সূরা আশ শূরা ৪২:১৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ) [الأنعام: 159]

নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই (সূরা আল আন‘আম ৬:১৫৯)।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের অনুকরণ করতে নিষেধ করে বলেন,

وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ) [آل عمران: 105]

আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৫)।

দুনিয়ায় বিভক্তি সৃষ্টি করা থেকে তিনি আমাদেরকে নিষেধ করে বলেন:

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا

আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)।

................................................

ব্যাখ্যা: এ দ্বিতীয় প্রকার বিষয়ের ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলদের বিরোধিতা করেন। দীন ও দুনিয়া উভয় ব্যাপারে জাহিলরা বিভক্তি সৃষ্টি করে। তাদের স্বভাবই ছিল অনৈক্য থাকা ও বিভক্ত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 31،32]

আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩১-৩২)।

এটা ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও মূর্তিপূজক জাহিলদের বৈশিষ্ট্য। সমস্ত জাহিলী দল এভাবে তাদের দীনের বিভক্তি ঘটায়। প্রত্যেকের স্বকীয় দীন ছিল, যার দিকে তারা ডাকতো ও আর ঐ দীনে সম্পৃক্ত হতো। খ্রিষ্টানরা তাদের খ্রিষ্টীয় ধর্মের দিকে আহবান জানায় ও ইয়াহুদীরা তাদের ইহুদী ধর্মের দিকে ডাকে। তারা প্রত্যেকে অন্যের দীনকে অস্বীকার করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَى شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ كَذَلِكَ قَالَ الَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ) [البقرة: 113]

আর ইয়াহূদীরা বলে, নাসারাদের কোন ভিত্তি নেই এবং নাসারারা বলে ইয়াহূদীদের কোন ভিত্তি নেই। অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবেই, যারা কিছু জানে না, তারা তাদের কথার মত কথা বলে (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।

যারা (দীন সম্পর্কে) জানে না তারা মুশরিক। কেননা তাদের কোন কিতাব নেই, আর আসমানী কোন দীনও নেই। তারা পরস্পরকে কাফির বলে আখ্যা দেয় এবং পরস্পরে বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ) [البقرة: 113]

সুতরাং আল্লাহ কিয়ামত দিবসে যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন (সূরা আল বাক্বারাহ ২:১১৩)।

আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন কে হক্বের উপর এবং কে বাতিলের উপর রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার দীন একটিই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْأِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) [الذاريات:56]

আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ‘ইবাদত করবে (সূরা আয যারিয়াত ৫১:৫৬) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ) [البقرة:21]

হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (সূরা আল বাক্বারাহ ২:২১)।

ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপূজক, আরব জাতি ও অনারব জাতি সকল সৃষ্টির জন্য দীন একটিই। ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্ধারিত, যার কোন শরীক নেই। ঐ সব জাহিলরা তাদের দীনকে বিভক্ত করে। তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে একদল অপরের দীনের বিরোধিতা করে। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা নিজেদের মাঝে মতবিরোধে লিপ্ত হয় তারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন মতে বিভক্ত, এমনকি বর্তমানেও তারা মতবিরোধের উপর প্রতিষ্ঠিত।

অনুরূপভাবে আরবের মূর্তিপূজকরাও তাদের ইবাদতে মতোপার্থক্য সৃষ্টি করে। তাদের মধ্যে কেউ সূর্য ও চন্দ্রপূজা করে, আবার কেউ করে মূর্তিপূজা, কেউ ফেরেশতা, আওলীয়া ও নেক লোকদের পূজা করে এবং কেউ গাছ ও পাথর পূজা করে, এটাই কিতাবী (কিতাব প্রাপ্ত) ও উম্মি (নিরক্ষর) জাহিলদের অবস্থা। তাদের দীন তাদেরকে একীভূত করতে পারেনি। তাদের অনেক দল রয়েছে। আল্লাহর তা‘আলার বাণী,

( كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]

প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।

এটা তাদের শাস্তি ও পরীক্ষা। মানুষ যে বাতিলের উপর রয়েছে তা নিয়েই সে আনন্দবোধ করে। মানুষের উপর আবশ্যক এর বিপরীত অবস্থানে থাকা। মানুষের উচিত ভ্রষ্টতাকে এড়িয়ে চলা, সঠিক দীন থেকে বিমুখ না হওয়া ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কিত থাকা। কিন্তু তারা এগুলোর বিপরীত কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,

( كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ) [الروم: 32]

প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত (সূরা আর রূম ৩০:৩২)।

মানুষ চিন্তাই করে না সে কি হক্বের উপর আছে নাকি বাতিলের উপর। বাপদাদা, পূর্ব-পুরুষ, আত্নীয়-স্বজন ও জাতি গোত্রের রীতিনীতিই যেন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাতিল নিয়েই তারা আনন্দিত, এটাই তাদের শাস্তি। যখন মানুষ এভাবে আনন্দবোধ করে তখন সে এ থেকে মুখ ফিরাতে পারে না। এটা জাহিলদের স্বভাব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করে বলেন,

(وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً) [الروم: 31- 32]

আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না) (সূরা আর রূম ৩০: ৩১-৩২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ) [الأنعام : 159]

নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন (সূরা আল আন‘আম ৬:১৬৯)।

তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আয়াত নাযিল করে বলেন,

( شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ) [الشورى: 13]

তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন, আর যা আমি তোমার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম- তা হল: তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। (সূরা আশ শূরা ৪২:১৩)

দীন প্রতিষ্ঠা করাকে আল্লাহ তা‘আলা বিধিবদ্ধ করেছেন, যা নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস সালাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ সকল নাবী রসূলগণের দায়িত্ব ছিল। এ সকল নাবী রসূলগণের নাম উল্লেখের কারণ হলো তারা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী ছিলেন। পাঁচজন নাবী হলেন: নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা রসূলগণের মধ্যে সর্বোত্তম, আল্লাহ তা‘আলা তাদের মনোনিত করেছেন। সকল নাবী রসূলগণের নিকট থেকে আল্লাহ তা‘আলা ওয়াদা গ্রহণ করেন, এ পাঁচজন তাদের মধ্যে অন্যতম। তাদের নিকট থেকে আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গিকার গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَأَخَذْنَا مِنْهُمْ مِيثَاقاً غَلِيظاً) [الأحزاب:7]

আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নাবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। (সূরা আল আহযাব ৩৩:৭)

সমস্ত নাবী-রসূলগণের দীন এক। তাহলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা যার কোন শরীক নেই। সাধারণভাবে তা ছিল সকল রসূলের দীন, বিশেষতঃ ঐ পাঁচজনের। এব্যাপারে কোন মতানৈক্য ও মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। এ দীন এককভাবে কোন নাবীর নয়, কোন জাতিরও নয়। বরং সকলের দীন এক। সকল সৃষ্টির উপরই আল্লাহ তা‘আলার একক দীন সাব্যস্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْأِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) [الذاريات:56]

আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে’ (সূরা আয যারিয়াত ৫১:৫৬)।

সকল সৃষ্টি বলতে জিন ও মানব জাতি উদ্দেশ্য, তাদের দীন এক হওয়ার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়। আর তা হলো তাওহীদ। যাতে ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একত্ব প্রকাশ করা হয়। রসূলগণের ভাষায় মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে ইবাদতের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের নিকট নাবী-রসূল প্রেরণ করে তাদের উপর কিতাব নাযিল করেন। আর বলা হয় এটাই দীন ও এটাই ইবাদত, এটাই সমন্বয়সাধন ও দীনের সমাপ্তি। মানুষের অধিকার নেই যে, তারা দীন তৈরি করে নিজেদের জন্য তা বিধিবদ্ধ করে নিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ

নাকি তাদের জন্য এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেন নি? (সূরা আশ শূরা ৪২:২১)।

এটা আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করা বুঝায়। আল্লাহ তা‘আলা যা তাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা পালন করা তাদের উপর আবশ্যক। তার কিতাব সমূহে ও রসূলগণের ভাষায় আল্লাহ তা‘আলা দীনের বর্ণনা দিয়েছেন, দীনের সমাপ্তি টেনেছেন। আর রসূলগণ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দীনের প্রচারক। বান্দার জন্য আল্লাহ তা‘আলা যা বিধিবদ্ধ করেছেন তারা তা প্রচার করতেন। এটা ছিল রসূলগণের দায়িত্ব। দীনের পদ্ধতি অনুসারে তারা ইবাদত করতেন। জাতির জন্য নির্ধারিত দীনের বিধিবদ্ধ নিয়মানুসারে আল্লাহর বান্দারা তার ইবাদত করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ) [آل عمران:105]

আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব (সূরা আলে-ইমরান ৩:১০৫)।

জাহিলদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাদের দীনে তারা বিভক্তি ও মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে। এটা তাদের অজ্ঞতার কারণে হয়নি বরং তাদের কুপ্রবৃত্তির কারণে তা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ)

তাদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ আসার পর (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৫)

তারা স্পষ্ট দলীল পরিত্যাগ করে কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। তাদের বিভক্তির মূল কারণ কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ। (নাউযুবিল্লাহ) তারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত নিজেদের কু-প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকের জন্য প্রমাণ পেশ করেছেন। তিনি রসূলগণকে প্রেরণ করে কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعاً فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدىً فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ) [البقرة: 38،39]

আমি বললাম, তোমরা সবাই তা থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না (সূরা আল বাক্বারাহ ৩:৩৮-৩৯)।