শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ৪৩. মিরাজ সত্য ...... ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) ৩ টি
আর মিরাজ সত্য, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের বেলা আকসায় ভ্রমণ করানো হয়েছে। অতঃপর তাকে জাগ্রত অবস্থায় স্ব-শরীরে উর্ধ্ব আকাশে উত্থিত করা হয়েছে। সেখান থেকে আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে আরো উর্ধ্বে নেয়া হয়েছে। সেখানে আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা অনুসারে তাকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তাকে যা প্রত্যাদেশ করার ছিল তা করেছেন। তিনি যা দেখেছেন তার অন্তর তা মিথ্যা বলেনি। আল্লাহ তার উপর আখেরাতে এবং দুনিয়ার জগতে সালাত (দরুদ) ও সালাম নাযিল করুন।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وَالْمِعْرَاجُ حَقٌّ وَقَدْ أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعُرِجَ بِشَخْصِهِ فِي الْيَقَظَةِ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الْعُلَا وَأَكْرَمَهُ اللَّهُ بِمَا شَاءَ وَأَوْحَى إِلَيْهِ مَا أَوْحَى مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى فَصَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الْآخِرَةِ وَالْأُولَى

আর মিরাজ সত্য, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের বেলা আকসায় ভ্রমণ করানো হয়েছে। অতঃপর তাকে জাগ্রত অবস্থায় স্ব-শরীরে উর্ধ্ব আকাশে উত্থিত করা হয়েছে। সেখান থেকে আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে আরো উর্ধ্বে নেয়া হয়েছে। সেখানে আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা অনুসারে তাকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তাকে যা প্রত্যাদেশ করার ছিল তা করেছেন। তিনি যা দেখেছেন তার অন্তর তা মিথ্যা বলেনি। আল্লাহ তার উপর আখেরাতে এবং দুনিয়ার জগতে সালাত (দরুদ) ও সালাম নাযিল করুন।

....................................................

ব্যাখ্যা: المعراج শব্দটি مفعال এর ওজনে ব্যবহৃত হয়েছে। উপরে উঠার যন্ত্রকে المعراج বলা হয়। এটি সিড়ির মতই। কিন্তু তা কেএ, তা জানা সম্ভব নয়। এর হুকুম অন্যান্য গায়েবী বিষয়ের হুকুম একই রকম। আমরা এগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করি। কিন্তু এগুলোর কাইফিয়্যাত জানার চেষ্টা করি না। ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্ব-শরীরে জাগ্রত অবস্থায় রাতের বেলায় বাইতুল মাকদিস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছে। আলেমগণ এ ইসরা বা রাতের ভ্রমণ সম্পর্কে মতভেদ করেছেন।

কেউ কেউ বলেছেন, ইসরা হয়েছিল ‘রূহ’এর মাধ্যমে। ঐ রাতে তার শরীর থেকে রূহ বিচ্ছিন্ন হয়নি। ইবনে ইসহাক আয়েশা ও মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে। তবে ইসরা ও মিরাজ হয়েছিল স্বপ্নযোগে অথবা শরীর ব্যতীত শুধু ‘রূহ’এর মাধ্যমে, -এ দু’কথার মধ্যকার পার্থক্য জানা আবশ্যক। উভয় কথার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। আয়েশা ও মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এ কথা বলেননি যে, ইসরা ও মিরাজ হয়েছিল স্বপ্নযোগে। তারা কেবল বলেছেন, ‘রূহ’ এর মাধ্যমে মিরাজ হয়েছে। ঐ রাতে তার পবিত্র দেহ থেকে রূহ বিচ্ছিন্ন হয়নি। সুতরাং যারা স্বপ্নযোগে মিরাজ হওয়ার কথা বলেছে তাদের কথার মধ্যে এবং আয়েশা ও মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার কথার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নে যা দেখে, তা কখনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জানা বিষয়ের উদাহরণ স্বরূপ পেশ হয়। যেমন কেউ দেখল যে, সে আকাশে উড়ছে, মক্কায় যাচ্ছে। অথচ তার রূহ উপরে উঠেনি এবং মক্কা যায়নি। স্বপ্ন সম্রাট কেবল তার জন্য একটি উদাহরণ পেশ করেছে। সুতরাং আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এটি উদ্দেশ্য করেননি যে, মিরাজ হয়েছিল; বরং তার এ কথা বলা উদ্দেশ্য ছিল, মিরাজ হয়েছিল ‘রূহ’ সহকারে। রূহ প্রথমে দেহ থেকে আলাদা হয়েছিল, অতঃপর দেহের মধ্যে ফিরে এসেছে। আয়েশা ও মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এটিকে একমাত্র নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ট্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি ছাড়া অন্যদের রূহ মৃত্যুর পূর্বে আসমানে পরিপূর্ণরূপে আরোহন করার মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না।

কেউ কেউ বলেছেন, মিরাজ হয়েছে দু’বার। একবার জাগ্রত অবস্থায় এবং আরেকবার স্বপ্নের মাধ্যমে। এ মতের সমর্থকগণ সম্ভবত শরীকের হাদীছ, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: ثم استيقظت ‘‘অতঃপর আমি জাগ্রত হলাম’’ এবং এ সম্পর্কে অন্যান্য হাদীছের মধ্যে সমন্বয় করতে চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ জাগ্রত অবস্থাতেই দু’বার মিরাজ হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। একবার নবুওয়াতের পূর্বে আরেকবার নবুওয়াতের পরে।

কেউ কেউ বলেছেন, মিরাজ হয়েছিল তিনবার। নবুওয়াতের পূর্বে একবার এবং নবুওয়াতের পরে দু’বার। এ শ্রেণীর লোকদের কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে, মিরাজ সম্পর্কিত হাদীছের কোনো শব্দ যখন তাদের কাছে অস্পষ্ট হয়েছে তারা উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে একটি মিরাজ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটি হলো দুর্বল মুহাদ্দিছদের কাজ। অন্যথায় মুহাদ্দিছদের ইমামগণের মতে নবুওয়াতের পরে হিজরতের পূর্বে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনে মিরাজ কেবল একবারই হয়েছিল। কেউ কেউ বলেছেন, হিজরতের একবছর দু’মাস আগে মিরাজ হয়েছিল। ইমাম ইবনে আব্দুল বার এ কথা উল্লেখ করেছেন।

ইমাম শামসুদ্দীন ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি ঐসব লোকদের জন্য আশ্চর্যবোধ করি, যারা বহুবার মিরাজ হওয়ার কথা বলে থাকেন। তারা কিভাবে ধারণা করতে পারে যে, প্রত্যেকবারই ৫০ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হয়েছে। অতঃপর প্রত্যেকবার মুসা আলাইহিস সালাম এবং তার প্রভুর মাঝে যাতায়াত করার মাধ্যমে ৫ ওয়াক্তে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকবারই তিনি বলেছেন, আমি আমার ফরয ঠিক রাখলাম; কিন্তু আমার বান্দাদের উপর কমিয়ে দিলাম। অতঃপর দ্বিতীয়বার ৫০ ওয়াক্তে ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করলেন।

হাদীছের হাফেযগণ বলেন, বর্ণনাকারী শারীক, ইসরা ও মিরাজের হাদীছের বেশ কিছু শব্দে ভুল করেছেন। ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ শারীক থেকে সনদসহ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইমাম মুসলিম বলেন, শারীক হাদীছ বর্ণনা করতে গিয়ে পরের শব্দ আগে এনেছেন এবং আগের শব্দ পরে উল্লেখ করেছেন ও শব্দ কমবেশী করেছেন। তিনি হাদীছকে পূর্ণরূপে উল্লেখ করেননি। কিন্তু তিনি খুব সুন্দর কাজ করেছেন। ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহর কথা এখানেই শেষ।

ইসরা বা রাতের ভ্রমণের ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, তাকে রাতের বেলা জাগ্রত অবস্থায় মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল। জিবরীলের সঙ্গে বোরাকের[1] উপর আরোহন করে তিনি বাইতুল মাকদিসে গিয়ে নামলেন। বাইতুল মাকদিসে নেমে তিনি নাবীদের ইমাম হয়ে ছ্বলাত পড়ালেন। এ সময় মসজিদের দরজার হাতলের সাথে বোরাক বেধেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি বেতেল হামে অবতরণ করেছেন এবং সেখানে ছ্বলাত পড়েছেন। এ বর্ণনা নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত নয়।

অতঃপর সেই রাতে বাইতুল মাকদিস থেকে তাকে প্রথমত দুনিয়ার আসমানে উঠানো হয়েছিল। প্রথম আসমানের দরজায় গিয়ে জিবরীল আলাইহিস সালাম নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য দরজা খুলতে বললেন। তাদের জন্য দরজা খোলা হলো। সেখানে তিনি মানব জাতির পিতা আদম আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলেন। তিনি আদম আলাইহিস সালামকে সালাম দিলেন। আদম আলাইহিস সালাম তাকে স্বাগত জানালেন এবং সালামের জবাব দিলেন।

অতঃপর তাকে দ্বিতীয় আসমানে উঠানো হলো। এখানে এসে দরজা খুলতে বলা হলো। দ্বিতীয় আসমানে তিনি ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া এবং ঈসা ইবনে মারইয়ামকে দেখতে পেলেন। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার সময় সালাম দিলেন। তারা তার সালামের জবাব দিলেন এবং তাকে স্বাগত জানালেন ও তার নবুওয়াতের স্বীকৃতি প্রদান করলেন।

অতঃপর তৃতীয় আসমানে উঠে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলেন। ইউসুফ আলাইহিস সালামকে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং তাকে স্বাগত জানালেন ও তার নবুওয়াতের স্বীকৃত প্রদান করলেন।

অতঃপর তিনি চতুর্থ আসমানে গেলেন। সেখানে ইদরীস আলাইহিস সালামের সাথে দেখা করলেন। তিনি ইদরীস আলাইহিস সালামকে সালাম জানালেন। ইদরীস আলাইহিস সালাম সালামের জবাব দিলেন, তাকে স্বাগত জানালেন এবং তার নবুওয়াতের স্বীকৃত প্রদান করলেন।

অতঃপর পঞ্চম আসমানে গিয়ে হারুন বিন ইমরান আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলেন। তাকে সালাম দেয়া হলে তিনি নাবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জবাব দিলেন, তাকে স্বাগত জানালেন এবং তার নবুওয়াতের স্বীকৃতি প্রদান করলেন।

অতঃপর ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে মুসা আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ করলে মুসা সালামের জবাব দিলেন, তাকে স্বাগত জানালেন এবং তার নবুওয়াতের স্বীকৃতি প্রদান করলেন। তিনি যখন মুসাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন, তখন মুসা আলাইহিস সালাম কাঁদতে লাগলেন। মুসাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমার কাঁদার কারণ হলো এ ছেলেকে আমার পরে নাবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার উম্মত থেকে আমার উম্মতের চেয়ে বেশী সংখ্যক লোক জান্নাতে পাঠানো হবে।

অতঃপর তাকে সপ্তম আসমানে উঠানো হলো। সপ্তম আসমানে তিনি ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সালাম দিলে তিনি তার সালামের জবাব দিলেন, তাকে স্বাগত জানালেন এবং তার নবুওয়াতের স্বীকৃতি প্রদান করলেন। অতঃপর তাকে সিদরাতুল মুনতাহায়[2] নেয়া হলো। সেখানে তার জন্য বাইতুল মামুরও উন্মুক্ত করা হলো।

অতঃপর তাকে মহাপরাক্রমশালী ও পবিত্র নামসমূহের অধিকারী আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি তার অতি নিকটবর্তী হলেন। তখন তার মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে দুই ধনুক অথবা তার চেয়েও কম ব্যবধান ছিল। তখন আল্লাহ্ তার বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার ছিল তা প্রত্যাদেশ করলেন। এরপর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হলো। ফিরে আসার সময় মুসা আলাইহিস সালামের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন। মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাকে কিসের আদেশ করা হয়েছে? নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হয়েছে।

মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার উম্মত এত ছ্বলাত পড়তে পারবে না। আপনার রবের কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য ছ্বলাত কমাতে বলুন। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলের দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন এ ব্যাপারে জিবরীলের কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত দিলেন এবং বললেন, আপনি চাইলে যেতে পারেন। জিবরীল তাকে নিয়ে উপরে উঠলেন এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার নিকট গেলেন। তিনি সেখানেই ছিলেন।[3] এটি ইমাম বুখারীর শব্দ। বুখারীর কিছু কিছু সনদে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা তখন দশ রাক‘আত কমিয়ে দিলেন।অতঃপর নেমে এসে পুনরায় মুসার নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং মুসাকে জানালেন। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং ছবলাতের সংখ্যা কমানোর আবেদন করুন। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে আল্লাহ তা‘আলা এবং মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে যাতায়াত করেই যাচ্ছিলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এর পরেও মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ফিরে গিয়ে আরো কমানোর আবেদন করতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, আমি আমার রবের কাছে পুনরায় যেতে লজ্জাবোধ করছি। আমি এতে সন্তুষ্ট আছি এবং মেনে নিয়েছি। অতঃপর তিনি যখন ফিরে আসছিলেন, তখন আল­াহর পক্ষ হতে ঘোষণা করা হলো, আমার ফরয ঠিক রাখলাম। কিন্তু বান্দাদের উপর থেকে সংখ্যা কমিয়ে দিলাম।[4]

[1]. বোরাকের বর্ণনা হাদীছে এভাবে এসেছে যে, এটি ছিল চকচকে উজ্জ্বল, গাধার চেয়ে একটু বড় এবং খচ্চরের চেয়ে একটু ছোট। সেটি এত দ্রম্নতগতি সম্পন্ন ছিল যে, তার চোখের দৃষ্টি যে পর্যন্ত পৌঁছতো, সেখানে সে একেকবার পা ফেলতো।

[2]. সিদরাতুল মুনতাহা হলো সীমামেত্মর কূলবৃক্ষ। এটি আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম বড় একটি নিদর্শন। এটিকে আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্বজগতে সৃষ্টি করেছেন। এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এর ফলগুলো হিজর গোত্রের কলসীর মত, পাতাগুলো হাতির কানের মত বৃহৎ, সোনালী রঙ্গের প্রজাপতি সদৃশ সুন্দর সৃষ্টিরা সেখানে বসছে ও উড়ছে। এর প্রকৃত সৌন্দর্য মনোরম পরিবেশ কোনো সৃষ্টির পক্ষেই বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সৃষ্টির জ্ঞান সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে। এর পরের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটেই। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে এ পর্যন্তই গিয়েছিলেন এবং সেখানকার সৌন্দর্যের কিছু দিক হাদীছে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি যেন আমাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস এবং সেখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করার তাওফীক দেন।

[3]. মিরাজের হাদীছ বর্ণনায় শারীকের এই শব্দটি মুহাদ্দিছগণ সমর্থন করেননি।

[4]. ইসরা ও মিরাজের এ হাদীছটি সহীহ। এর শব্দগুলো বিভিন্ন হাদীছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখানে নিকটবর্তী হওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা শারীক বিন আব্দুল্লাহর রেওয়াত। ইসরা ও মিরাজের হাদীছ বর্ণনা করতে গিয়ে শারীক যেসব শব্দ উল্লেখ করেছেন, তার কিছু কিছু শব্দে শারীক ভুল করেছেন বলে হাদীছের হাফেযগণ মন্তব্য করেছেন। যেমন উপরে ইমাম ইবনে আবীল ইয্ রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন।
মিরাজের রাতে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলাকে দেখার ব্যাপারে ছাহাবীদের মতভেদ

মিরাজের রাতে নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলাকে কপালের চোখ দিয়ে দেখেছেন কিনা, সে ব্যাপারে ছাহাবীদের মতভেদ ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, তিনি অন্তরের মাধ্যমে দেখেছেন। কপালের চোখ দিয়ে দেখেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى

‘‘তিনি যা দেখেছেন তার অন্তর তা মিথ্যা বলেনি’’। (সূরা নাজম: ১১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ

‘‘তিনি তাকে আরেকবার দেখেছেন। সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। যার সন্নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত’’। (সূরা নাজম: ১৩-১৫)

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে জিবরীলকে দেখার কথা বলা হয়েছে।[1] জিবরীলকে আল্লাহ তা‘আলা যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, সে আকৃতিতে তিনি তাকে দুইবার দেখেছেন।

সূরা নাজমের যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى ‘‘অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন। অতঃপর ঝুলে গেলো’’, সেখানে মিরাজের ঘটনায় উল্লেখিত নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং সূরা নাজমে যে নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে পড়ার কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা জিবরীলের নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের হাদীছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَى وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى

‘‘তাকে মহাশক্তির অধিকারী একজন শিক্ষা দিয়েছে, যে অত্যন্ত জ্ঞানী। সে সামনে এসে দাঁড়ালো। তখন সে উঁচু দিগমেত্ম ছিল। তারপর কাছে এগিয়ে এলো এবং উপরে শূণ্যে ঝুলে রইলো’’। (সূরা নাজম: ৫-৮)

ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উপরোক্ত আয়াতগুলোর প্রত্যেকটি সর্বনাএ মহাশক্তিশালী শিক্ষক জিবরীলের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। আর মিরাজের ঘটনায় যেই নিকটবর্তী হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী হওয়া এবং ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য। আর সূরা নাজমে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি তাকে আরেকবার দেখেছেন। সিদরাতুল মুনতাহার কাছে৷ এখানে নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে পড়া বলতে জিবরীলের নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দুইবার দেখেছেন। একবার যমীনে আরেকবার সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে।

[1]. আল্লাহ তা‘আলাকে কপালের চোখ দিয়ে দেখার কথাটি সঠিক নয়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহি.) আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে আলেমদের মতবিরোধ বর্ণনা করেছেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো, তিনি আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেননি। কারণ কোন ছাহাবী স্বচক্ষে দেখার পক্ষে কোন বর্ণনা উল্লেখ করেননি। ইবনে আববাস (রা.) থেকে যে বর্ণনা এসেছে, তার অর্থ হলো অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখা। কপালের চক্ষু দিয়ে দেখা উদ্দেশ্য নয়। তিরমিযী শরীফে আয়েশা হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, তিনটি এমন বিষয় রয়েছে, সে ব্যাপারে যে কথা বলবে, সে আল্লাহর উপর বিরাট এক অপবাদ আরোপকারী বলে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি বলল যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্কে দেখেছেন সে আল্লাহর উপর বিরাট এক মিথ্যারোপ করল। যে ব্যক্তি বলল যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন অংশ গোপন করেছেন, সে বিরাট এক মিথ্যা রচনা করল। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ

‘‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রভুর পক্ষ হতে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, আপনি তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। আপনি যদি তা না করেন, তাহলে আপনার প্রভুর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। (সূরা মায়িদা: ৬৭) তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি মনে করবে যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েবের খবর জানতেন, তাহলে সে আল্লাহর উপর সবচেয়ে বড় মিথ্যা রচনা করলো। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ

‘‘হে নাবী! তুমি বলে দাও, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবের খবর আর কেউ জানে না। (সূরা নামল: ৬৫) (সুনানে তিরমিযী, ২৯৯৪)

স্বশরীরে মিরাজ হওয়ার অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

‘‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তার বান্দাকে রজনীর কিয়দাংশে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে আমি করেছিলাম বরকতময়। তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্যে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বাণী ইসরাঈল: ১)

দেহ ও ‘রূহ’এর সমন্বয়ে গঠিত সত্তাকে عبد বা বান্দা বলা হয়। ঠিক এমনি দেহ ও রূহের সমষ্টিগত রূপকে إنسان মানুষ বলা হয়। এটিই সর্বজন বিদিত এবং এটিই সঠিক। সুতরাং দেহ ও রূহসহ মিরাজ হয়েছিল। বিবেক-বুদ্ধির দলীল এটিকে অসম্ভব মনে করে না। যমীন থেকে মানুষ আসমানে উঠা অসম্ভব হলে আসমান থেকে ফেরেশতা নামাও অসম্ভব হবে। আর তা হলে নবুওয়াতে মুহাম্মাদী অস্বীকার করা হয়। এ রকম অস্বীকার করা সুস্পষ্ট কুফুরী।

এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, মিরাজের রাতে উর্ধ্বাকাশে যাওয়ার পূর্বে বাইতুল মাকদিসে ভ্রমণ করানোর হিকমত কী? এর জবাব হলো, আল্লাহই অধিক জানেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজের সত্যতা প্রকাশ করা। কুরাইশরা যখন বাইতুল মাকদিসের কিছু লক্ষণাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করলো, তখন তিনি তাদেরকে তা বলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়; বাইতুল মাকদিস থেকে ফিরে আসার পথে কুরাইশদের বাণিজ্যিক কাফেলা যে স্থানে দেখে এসেছিলেন, তাও তিনি বলে দিয়েছিলেন। মক্কা থেকে সরাসরি যদি আসমানের দিকে উঠে যেতেন, তাহলে এ ফায়দাটি হাসিল হতো না। কেননা আসমানে যা দেখে এসেছেন, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে খবর দিলেও তারা তার সত্যতা যাচাই করতে পারতো না। আর বাইতুল মাকদিস এবং উহার মধ্যকার নিদর্শনাবলী তাদের জানা ছিল। তাই তিনি তার বর্ণনা প্রদান করেছেন। যে ব্যক্তি মিরাজের ঘটনা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে, সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে যে, আল্লাহ তা‘আলার জন্য রয়েছে সকল সৃষ্টির উপর সমুন্নত হওয়ার বিশেষণ।[1] আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তা বুঝার তাওফীক দিন।

[1]. মিরাজের রাত্রিতে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত নিদর্শন দেখেছেন: তিনি যমীনে যেসব নিদর্শন দেখেছেন, তার মধ্যে রয়েছে,

১) তিনি যখন বাইতুল মাকদিসে পৌঁছলেন, তখন তার জন্য দুধ ও মদ পরিবেশন করা হলে তিনি দুধ গ্রহণ করলেন এবং মদ পরিহার করলেন। তাকে বলা হলো আপনি যদি মদ পান করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হতো। ছহীহ মুসলিম হা/১৬২

২) তিনি দেখলেন, একদল লোক চাষাবাদ করছে। তারা বীজ বপন করছে। একদিনেই সে ফসল পেকে যাচ্ছে এবং তারা তা কাটছে। যখন কাটা শেষ হয়, সাথে সাথে ফসল পূর্বের মত হয়ে যায়। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জিবরীল! এটি কী? জিবরীল বললেন, এরা হচ্ছেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। তারা আল্লাহর রাস্তায় যে মাল খরচ করে, তা এভাবেই বৃদ্ধি পায়।

৩) রাস্তার পাশে একজন বৃদ্ধ মহিলা দেখলেন। তার শরীরে রয়েছে সকল প্রকার অলংকার। মহিলাটি বয়সের ভারে একেবারে নুইয়ে পড়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালামকে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এ মহিলাটির বয়স যে পরিমাণ বাকী রয়েছে, দুনিয়ার বয়স কেবল সেই পরিমাণ বাকী আছে। অর্থাৎ দুনিয়ার বয়স একেবারে শেষ প্রামেত্ম এসে গেছে। বৃদ্ধ মহিলার শরীরে যেসব অলঙ্কার রয়েছে, তা হলো দুনিয়ার চাকচিক্যময় সম্পদ ও অলঙ্কার।

৪) তিনি দেখলেন কিছু লোকের ঠোঁট ও জিহবা লোহার কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। একবার কাটা শেষ হলে পুনরায় আগের মত জোড়া লেগে যাচ্ছে। পুনরায় কাটা হচ্ছে। কোনো বিরতি দেয়া হচ্ছে না। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জিবরীল! এ লোকগুলো কারা? জিবরীল বললেন, এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের বক্তা। বক্তৃতার মাধ্যমে এরা মানুষের মধ্যে ফিতনা ছড়াতো এবং তারা এমন কথা বলতো যে অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করতো না।

৫) তিনি সে রাতে সুদখোরের শাস্তি দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি রক্তের নদীর কাছে আসলাম। দেখলাম নদীতে একটি লোক সাঁতার কাটছে। নদীর তীরে অন্য একটি লোক কতগুলো পাথর একত্রিত করে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁতার কাটতে কাটতে লোকটি যখন নদীর কিনারায় পাথরের কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তির নিকটে আসে তখন দাঁড়ানো ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পাথর মুখে নিয়ে লোকটি আবার সাঁতরাতে শুরু করে। যখনই লোকটি নদীর তীরে আসতে চায় তখনই তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেন, এরা হলো আপনার উম্মতের সুদখোর’’।

৬) তিনি ব্যভিচারীর শাস্তি দেখেছেন। মিরাজের রাত্রিতে তিনি একদল লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তাদের সামনে একটি পাত্রে গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। অদূরেই অন্য একটি পাত্রে রয়েছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত কাঁচা গোশত। লোকদেরকে রান্না করে রাখা গোশত থেকে বিরত রেখে পঁচা এবং দুর্গন্ধযুক্ত, কাঁচা গোশত খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা চিৎকার করছে এবং একান্ত অনিচ্ছা সত্তেও তা থেকে ভক্ষণ করছে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীল ফেরেশতাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ এরা কোন্ শ্রেণীর লোক? জিবরীল বললেন: এরা আপনার উম্মতের ঐ সমস্ত পুরুষ যারা নিজেদের ঘরে পবিত্র এবং হালাল স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অপবিত্র এবং খারাপ মহিলাদের সাথে রাত্রি যাপন করত।

৭) অতঃপর তিনি একটি ছোট পাথরের কাছে আসলেন। দেখলেন তা থেকে একটি বিরাট ষাঁড় বের হচ্ছে। বের হওয়ার পর সেই ছিদ্র দিয়ে পুনরায় প্রবেশ করতে চাচ্ছে। কিন্তু চেষ্টা করা সত্ত্বেও তাতে প্রবেশ করতে পারছেনা। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলেন: এ কি দেখছি হে জিবরীল! তিনি বললেন, এ হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে, বড় বড় কথা বলে। অতঃপর সেই কথার জন্য সে অনুতপ্ত হয়। কিন্তু তা ফেরত নিতে পারে না।

৮) তিনি দেখলেন একলোক বিরাট এক লাকড়ির বোঝা বেধে মাথায় উঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্ত পারছেনা। তারপর আরো লাকড়ি সংগ্রহ করে বোঝাটা আরো বড় করছে। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: হে জিবরীল! এ কী কান্ড দেখছি? জিবরীল বললেন: এ হলো তোমার উম্মতের ঐ ব্যক্তি যার নিকট মানুষের অনেক আমানত রয়েছে। সে তা আদায় না করেই আরো নতুন নতুন আমানত সংগ্রহ করছে।

৯) সে রাতে তিনি ছ্বলাত আদায় না করার শাস্তি দেখেছেন। তিনি বলেন, আমরা এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আসলাম। তার মাথার কাছে পাথর হাতে নিয়ে অন্য একজন লোক দাঁড়িয়ে ছিল। দাঁড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মাথায় সেই পাথর নিক্ষেপ করছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি বলের মত গড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে্। লোকটি পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে আবার মাথা ভাল হয়ে যাচ্ছে। দাড়ানো ব্যক্তি প্রথম বারের মত আবার আঘাত করছে এবং তার মাথাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, কী অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? উত্তরে তারা বললেন: এব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছিল। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি এবং সে ফরয ছবলাতের সময় ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে।

১০) যারা যাকাত আদায় করে না, সে রাতে তিনি তাদের শাস্তি দেখেছেন। অতঃপর তিনি এমন একদল লোকের কাছে আসলেন, যাদের লজ্জাস্থানের উপর এক টুকরা এবং পিছনের রাস্তার উপর এক টুকরা কাপড় ঝুলছে। চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় তারা চলাফেরা করছে। তারা কাটাযুক্ত, যাক্কুম গাছ, জাহান্নামের উত্তপ্ত পাথর খাচ্ছে। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল বললেন, এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক, যারা তাদের মালের যাকাত দেয় না। আল্লাহ কাউকে যুলুম করেন না। আর আল্লাহ যালেম নন।

১১) ফেরাউনের মেয়েদের সেবিকা মাশেতার কবর দেখেছেন।


আকাশে যেসব নিদর্শন দেখেছেন:

১) তিনি সাত আসমানের উপর বায়তুল মামূর দেখেছেন। বায়তুল মামূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জিবরীল বললেন, এটি হলো বায়তুল মা’মূর। এতে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা ছ্বলাত আদায় করে। এক বার যে এখান থেকে বের হয়ে আসে কিয়ামতের পূর্বে সে আর তাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। আসমানে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালী নেই, যাতে কোন না কোন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে, কিংবা রুকু অবস্থায় অথবা সিজদারত অবস্থায় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ

‘‘তারা অহংকার বশত তাঁর বন্দেগী থেকে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্ত হয় না। দিন রাত তার প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিশ্রাম নেয় না’’। (সূরা আম্বীয়া: ১৯-২০)

২) অতঃপর আমার জন্যে সিদরাতুল মুনতাহা তথা সিমামেত্মর কূল বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হল। এ বৃক্ষের ফলগুলো ছিল কলসীর ন্যায় বড়। গাছের পাতাগুলো ছিল হাতীর কানের মত বড়।

৩) মিরাজের রাত্রিতে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় জিবরীল ফেরেশতাকে আসল আকৃতিতে দেখলেন। অথচ ইতোপূর্বে তিনি আরেকবার দুনিয়াতে তাকে দেখেছেন।

৪) তিনি জান্নাত দেখেছেন। সাত আসমানের উপরে তিনি জান্নাত দেখেছেন। তাতে রয়েছে, এমন নেয়ামত, যা কোন চোখ কোনো দিন দেখেনি, কোনো কান যার বর্ণনা শুনেনি এবং মানুষ যার কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা মুমিন মুত্তাকীদের জন্য এটি তৈরী করে রেখেছেন। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হলো। আমি সেখানে আবু তালহার স্ত্রীকে দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি আমার সামনে বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর আওয়াজ শুনলাম। (সহীহ মুসলিম)

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে বেলাল! কোন্ আমলের মাধ্যমে তুমি আমার আগেই জান্নাতে প্রবেশ করলে? কেননা আমি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করেছি, তখনই আমার সামনে তোমার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। গতরাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার আওয়াজ শুনেছি। বেলাল তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যখনই আযান দিয়েছি, তখনই দু’রাকআত ছ্বলাত পড়েছি। আর যখনই আমার অযু ছুটে যায়, তখনই আমি অযু করি এবং আমি মনে করি আমার উপর দুই রাকআত ছ্বলাত পড়া জরুরী। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, এ কারনেই তুমি এত ফযীলতের অধিকারী হয়েছো।

রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি স্বর্ণের প্রাসাদ দেখলাম। বললাম, এটি কার প্রাসাদ? ফেরেশতাগণ বললেন, কুরাইশদের একজন যুবক লোকের। আমি মনে করলাম, আমি তো একজন যুবক ব্যক্তি। তারপরও আমি বললাম, সেই যুবকটি কে? ফেরেশতাগণ বললেন, তিনি হলেন উমার ইবনুল খাত্তাব। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে উমার ইবনুল খাত্তাব! আমি যদি তোমার গাইরাতের (ঈর্ষার) কথা না জানতাম, তাহলে আমি সেখানে প্রবেশ করতাম। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি আপনার উপর গাইরাত বা ঈর্ষা করবো? (বুখারী, হা/৭০২৪)

৫) তিনি সেই রাতে জাহান্নাম দেখেছেন। তিনি সেই রাত্রে জাহান্নামের প্রহরী মালেক ফেরেশতাকেও দেখেছেন। তাকে সালাম দিলেন। তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনি আমাকে প্রথমেই সালাম দিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিষন্ন-চিন্তিত। তার মুখে হাসি ছিল না। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যেদিন থেকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করে তাকে এর প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, সেদিন থেকে তিনি কখনো হাসেননি। তিনি যদি ইতিপূর্বে কারো সাথে হাসতেন, তাহলে আপনার জন্য অবশ্যই হাসতেন। তাহলে চিন্তা করুন! যারা এতে প্রবেশ করবে, তাদের অবস্থা কী হবে?


মিরাজের কতিপয় শিক্ষা:

১) ঈমানী পরীক্ষা: রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সংবাদ দিলেন যে, তিনি আজ রাতে বাইতুল মাকদিস দেখে এসেছেন, তখন মুশরিকদের কিছু লোক দৌড়িয়ে আবূ বকরের নিকট গিয়ে বলল, তোমর বন্ধুর খবর শুনবে কি? সে বলছে, আজকের রাত্রির ভিতরেই সে নাকি বাইতুল মাকদিস ভ্রমণ করে চলে এসেছে। তিনি বললেন, আসলেই কি মুহাম্মাদ তা বলেছেন? তারা একবাক্যে বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: যদি বলেই থাকে, তাহলে সত্য বলেছেন। তারা আবার বলল: তুমি কি বিশ্বাস কর যে, সে এক রাত্রির ভিতরে বাইতুল মাকদিস ভ্রমণ করে সকাল হওয়ার পূর্বেই আবার মক্কায় চলে এসেছে? উত্তরে তিনি বললেন: আমি এর চেয়েও দূরের সংবাদ বিশ্বাস করি। সকাল-বিকাল আকাশ থেকে সংবাদ আসে। আমি তা বিশ্বাস করি। সে দিনই আবূ বকরকে সত্যবাদী তথা সিদ্দীক উপাধীতে ভূষিত করা হয়।

২) দাঈদের জন্য শিক্ষা: এ বরকতময় সফরে দ্বীনের দাঈদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মানুষের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করার জন্য বের হতে চাইলেন তখন উম্মে হানী তাকে বাধা দিয়ে বলল: ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার ভয় হচ্ছে মানুষ আপনাকে মিথ্যুক বলবে। তিনি তখন বললেন: আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তা বলবো। তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বললেও আমি তা সকলের সামনে প্রকাশ করবো। এখান থেকে দাঈদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে তারা আল্লাহর দ্বীন মানুষের কাছে নির্ভয়ে পৌঁছে দিবে। মানুষ এতে খুশী হোক বা নাখোশ হোক। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

(ومن التمس رضا الناس بسخط الله سخط الله عليه واسخط عليه الناس)

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে নাখোশ করে মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করবে, আল্লাহ তার উপর নাখোশ হবেন এবং মানুষকেও তার উপর নাখোশ করে দিবেন’’। সুতরাং নাবী-রসূলদেরকে যেখানে যাদুকর, মিথ্যুক ও পাগল বলা হয়েছে, দাঈদেরকে তা বলা হলে সেটি কোন নতুন বিষয় নয়।

৩) পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বলাত: নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: অতঃপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হল। ফেরত আসার সময় মূসা (আ.)এর সাথে সাক্ষাৎ হল। মূসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন: কি নিয়ে আসলেন? নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত ফরয করা হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, আমি মানুষের অবস্থা আপনার চেয়ে অনেক বেশী অবগত। বানী ইসরাঈলকে আমি ভালভাবেই পরীক্ষা করে দেখেছি। আপনার উম্মাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছ্বলাত পড়তে পারবে না। আপনি ফেরত যান এবং কমাতে বলুন। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি মূসা (আ.)এর পরামর্শ মোতাবেক ফেরত গিয়ে কমাতে বললাম। চল্লিশ করা হলো। আবার গিয়ে আবদারের প্রেক্ষিতে ত্রিশ করা হলো। পুনরায় যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিশ ওয়াক্ত করে দেয়া হলো। অতঃপর দশে পরিণত হলো। মূসা (আ.)এর কাছে দশ ওয়াক্ত নিয়ে ফেরত আসলে তিনি আবার যেতে বললেন। এবার পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বলাত নিয়ে মূসা (আ.)এর কাছে আগমন করলাম। তিনি আমাকে আবার যেতে বললেন। আমি তাকে বললাম: আমি গ্রহণ করে নিয়েছি। তখন আল্লাহর পক্ষ হতে ঘোষণা করা হলো: আমার ফরজ ঠিক রাখলাম। কিন্তু বান্দাদের উপর থেকে সংখ্যা কমিয়ে দিলাম। আর আমি প্রতিটি সৎআমলের বিনিময় দশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিব। ছহীহ মুসলিম

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ‘‘আমার কথার নিকট কথার কোনো পরিবর্তন হয় না। আর আমি বান্দাদের প্রতি যালেমও নই’’। (সূরা কাফ: ২৯)


মিরাজ সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত বিশ্বাস ও তার প্রতিবাদ:

দীর্ঘ ২৭ বছর পর্যন্ত মিরাজে থাকার কাল্পনিক গল্প।

আব্দুল কাদের জিলানীর ঘাড়ে আরোহন সিদরাতুল মুন্তাহা পার হয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছার কিচ্ছা।

শবে মিরাজ উপলক্ষে আমাদের সমাজে যেসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়, তা সঠিক নয়।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে