ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَمَنْ لَمْ يَتَوَقَّ النَّفْيَ وَالتَّشْبِيهَ زَلَّ وَلَمْ يُصِبِ التَّنْزِيهَ
যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে।
..............................................................
ব্যাখ্যা: আল্লাহর সিফাত অস্বীকার করা এবং তাকে মাখলুকের সিফাতের সাথে তুলনা করা অন্তরের রোগসমূহের অন্যতম একটি রোগ। অন্তরের রোগসমূহ দু’প্রকার।
(১) শুবুহাত বা সন্দেহের রোগ। এখান থেকেই দ্বীনের মধ্যে বিদআত, নিফাকী, শির্ক এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে অন্তরের মধ্যে সন্দেহ উদিত হয়।
(২) শাহওয়াত বা নফসের খাহেশাত, প্রবৃত্তি এবং কামোত্তজনা বিষয়ক রোগ। এর কারণেই মানুষের মনে অবৈধ যৌনাচার ও বৈবাহিক সম্পর্ক বহির্ভূত নারী ভোগ করার কামনাসহ আরো অনেক পাপাচারের জন্ম নেয়। কুরআনুল কারীমে এ উভয় প্রকার রোগের কথাই আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
‘‘তোমরা নরম স্বরে কথা বলো না। এতে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, সে প্রলুব্ধ হতে পারে। আর তোমরা সদালাপ করো (স্বাভাবিকভাবে কথা বলো)’’। (সূরা আহযাব: ৩২)
এখান থেকে শেষ পর্যন্ত আয়াতগুলোর মাধ্যমে ইসলামে পর্দা সংক্রান্ত বিধানের সূচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এখানে জৈবিক চাহিদা পুরণ সংক্রান্ত রোগের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা শুবুহাত বা সন্দেহের রোগ সম্পর্কে বলেন,
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
‘‘তাদের হৃদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ সে রোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’’। (সূরা আল বাকারা: ১০) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ وَمَاتُوا وَهُمْ كَافِرُونَ
তবে যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে তাদের পূর্ব অপবিত্রতার সাথে আরো অপবিত্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তারা কাফের অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করেছে। (সূরা আত তাওবা: ১২৫)
এ আয়াত দু’টিতে অন্তরের সন্দেহের রোগের কথা বলা হয়েছে। এটি সর্বাধিক নিকৃষ্ট রোগ। অন্তরের মধ্যে শাহওয়াত বা প্রবৃত্তির যে রোগ সৃষ্টি হয়, শাহাওয়াত ও কামোত্তেজনার চাহিদা পুরণ করার মাধ্যমে সে রোগ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সন্দেহের রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। যদি না আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় অনুগ্রহে সন্দেহের রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন।
আর আল্লাহ তা‘আলার সিফাতের ক্ষেত্রে যে সন্দেহের রোগে নিপতিত হয়, তা কেবল তার সুউচ্চ গুণাবলী নাকোচ করা কিংবা সেগুলোকে সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তুলনা করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে আলেমদের মতে আল্লাহ তা‘আলার সিফাতগুলোকে অস্বীকার বা নাকোচ করার সন্দেহ তাকে সৃষ্টির সিফাতের সাথে তুলনা করার চেয়ে নিকৃষ্টতর। কেননা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলীকে নফী করার মাধ্যমে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত শরীয়াতকে মিথ্যায়ন ও প্রত্যাখ্যান করা হয়, কিন্তু আল্লাহর সিফাতগুলোকে মানুষের সিফাতের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি হয়।
আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা কুফুরী। কুরআন সুস্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে,لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ‘‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই (সূরা শূরা: ১১)। ঐদিকে আল্লাহর সিফাতসমূহকে অস্বীকার করাও কুফুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘‘তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’ (সূরা শূরা: ১১)। আসলে আল্লাহর সিফাতসমূহকে নাকোচ করা তাশবীহর দু’টি প্রকারের মধ্যে এটিই হলো মূল। কেননা তাশবীহ দুই প্রকার।
(১) স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করা।
(২) সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্য করা। প্রথম প্রকার সাদৃশ্য বা তাশবীহকে বাতিল ও প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে কালামপন্থীরা প্রচুর পরিশ্রম করে থাকে।
তবে প্রথম প্রকারের লোক মানব সমাজে দ্বিতীয় প্রকার লোকদের চেয়ে খুব কম পাওয়া যায়। যারা শায়েখণ্ডমাশায়েখ, উযাইর, ঈসা, সূর্য, চন্দ্র, ফেরেশতা, আগুন, পানি, বাছুর, কবর, জিন এবং অনুরূপ অন্যান্য সৃষ্টির ইবাদত করে, তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। এ শ্রেণীর লোকদের কাছেই আল্লাহ তা‘আলা রসূল পাঠিয়েছেন। রসূলগণ তাদেরকে এগুলোর ইবাদত বর্জন করে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।