যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে মানবীয় কোনো বিশেষণে বিশেষিত করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি অন্তরের চোখ দিয়ে এতে গভীর দৃষ্টি প্রদান করবে সে সঠিক শিক্ষা নিতে সক্ষম হবে। আর কাফেরদের মত কুরআনকে মানুষের কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং সে জানতে পারবে যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন তার গুণাবলীতে মানুষের মত নন।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وَمَنْ وَصَفَ اللَّهَ بِمَعْنًى مِنْ مَعَانِي الْبَشَرِ، فَقَدْ كَفَرَ مَنْ أَبْصَرَ هَذَا اعْتَبَرَ وَعَنْ مِثْلِ قَوْلِ الْكُفَّارِ انْزَجَرَ. وَعَلِمَ أَنَّ اللَّهَ بِصِفَاتِهِ لَيْسَ كَالْبَشَرِ

যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে মানবীয় কোনো বিশেষণে বিশেষিত করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি অন্তরের চোখ দিয়ে এতে গভীর দৃষ্টি প্রদান করবে সে সঠিক শিক্ষা নিতে সক্ষম হবে। আর কাফেরদের মত কুরআনকে মানুষের কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং সে জানতে পারবে যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন তার গুণাবলীতে মানুষের মত নন।

........................................................

ব্যাখ্যা: শাইখ ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছেন যে, কুরআন প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর কালাম। অতঃপর এখানে সতর্ক করেছেন যে, কথা বলা বা অন্যান্য সিফাতের মাধ্যমে বিশেষিত হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মানুষের মত নন। শাইখ আল্লাহ তা‘আলার জন্য সিফাত সাব্যস্ত করার পরপরই এখানে সৃষ্টির সাথে তার সাদৃশ্যতা নাকোচ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাকে যদিও কথা বলা বিশেষণের মাধ্যমে বিশেষিত করা হয়েছে, কিন্তু তাই বলে তাকে ঐসব বিশেষণসমূহের কোনো বিশেষণে বিশেষিত করা যাবে না, যার মাধ্যমে মানুষ কথা বলে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر

‘‘তার সদৃশ আর কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শূরা: ১১)

যে ব্যক্তি সৃষ্টির সাথে আল্লাহর সাদৃশ্য করা এবং আল্লাহর কোনো গুণ বা সিফাতকে নাকোচ করা ছাড়াই আল্লাহ তা‘আলার জন্য সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত করে, তার দৃষ্টান্ত কতইনা সুন্দর! তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ খাঁটি দুধের সাথে, যা পানকারীদেরকে পরিতৃপ্ত করে, তা বের হয় তা’তীল এর গোবর এবং তাশবীহ’এর রক্ত থেকে।[1]

আল্লাহর সিফাতকে যে বাতিল করে, সে কোনো কিছুরই ইবাদত করে না। আর যে আল্লাহকে সৃষ্টির সমতুল্য মনে করে, সে মূর্তিপূজা করে।[2]

শাইখের উক্তি, من لم يتوق النفي والتشبيه زل ولم يصب التنزيه ‘‘যে ব্যক্তি রবের প্রতি সম্বোন্ধিত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে এবং সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে’’, -এ অংশের ব্যাখ্যা করার সময় এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

এমনি শাইখের উক্তি, وَهُوَ بَيْنَ التَّشْبِيه وَالتَّعْطِيلِِ ‘‘আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তার অবস্থান তাশবীহ ও তা’তীলের মাঝখানে’’, এ অংশের ব্যাখ্যা করার সময় এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর সিফাত বাতিল করা তার সিফাতকে সৃষ্টির সিফাতের সাথে তাশবীহ দেয়ার চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট। কী কারণে তা’তীল তাশবীহ এর চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট, সে ব্যাপারে সামনে আলোচনা করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তাকে যে বিশেষণে বিশেষিত করেছেন এবং রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, তাতে কোনো সাদৃশ্য নেই। বরং স্রষ্টার সিফাত শুধু স্রষ্টার জন্যই শোভনীয় এবং সৃষ্টির গুণাবলী কেবল তার জন্যই শোভনীয়। শাইখের উক্তি: مَنْ أَبْصَرَ هَذَا اعْتَبَرَ -এর ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহ তা‘আলার সিফাত সাব্যস্ত করতে গিয়ে এবং সৃষ্টির সাথে তার সাদৃশ্য নাকোচ করতে গিয়ে শাইখ যা বলেছেন ও আল্লাহর কালাম ও অন্যান্য সিফাতকে যে মানুষের সিফাতের সমতুল্য মনে করবে তার শাস্তির যে ধমক রয়েছে, যে ব্যক্তি অন্তরের চক্ষু দিয়ে তার প্রতি গভীর দৃষ্টি প্রদান করবে, সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং কাফেরদের অনুরূপ কথা বলা থেকে বিরত থাকবে।

[1]. সূরা নাহালের ৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুধের এই দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشَّارِبِينَ ‘‘আর তোমাদের জন্য গবাদি পশুর মধ্যেও একটি শিক্ষা রয়েছে। তাদের পেটের গোবর ও রক্তের মাঝখানে বিদ্যমান একটি জিনিস আমি তোমাদের পান করাই, অর্থাৎ নির্ভেজাল দুধ, যা পানকারীদের জন্য বড়ই সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর’’।

সুতরাং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকদের আক্বীদাহ হলো পানকারীদের জন্য তৃপ্তিকর খাঁটি দুধের মত, যা আল্লাহর সিফাতকে বাতিল করার গোবর এবং উহাকে সৃষ্টির সিফাতের সমতুল্য মনে করার রক্ত থেকে বের হয়। সুতরাং আল্লাহর সিফাতকে বাতিল করা গোবরের মত এবং উহাকে সৃষ্টির সিফাতের সাথে সদৃশ করা রক্তের মত। সুতরাং আহলে সুন্নাতের লোকেরা স্রষ্টার সিফাতকে সৃষ্টির সিফাতের সমতুল্য মনে করে না। তারা এ কথা বলে না যে, তার হাত আমাদের হাতের মত। সে সঙ্গে তারা আল্লাহর কোনো সিফাতকে অস্বীকারও করে না। যেমন করে থাকে জাহমীয়া, মুতাযেলা এবং আশায়েরাগণ। তারা সৃষ্টির সাথে তুলনা হয়ে যাওয়ার ভয়ে আল্লাহর সকল সিফাতকেই অস্বীকার করে।

[2]. যেমন আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তার জাতির লোকেরা নিজ হাতে পাথর দিয়ে মূর্তি বানিয়ে তার ইবাদত করতো। তারা মূর্তির হাত, পা এবং চোখ বানাতো। অতঃপর সেগুলোর ইবাদত করতো এবং বলতো, এগুলো আমাদের মাবুদ। সামেরী বনী ইসরাঈলের লোকদের জন্যও তাদের অলঙ্কারাদি দিয়ে বাছুর বানিয়েছিল। বাছুর গরুর মত হাম্বা হাম্বা করার সময় সামেরী বলেছিল এটিই তোমাদের মাবুদ এবং মুসারও মাবুদ। তারা সামেরীকে বিশ্বাস করে বাছুর পূজা শুরু করে দিল। সুতরাং যারা বলে, আল্লাহর হাত সৃষ্টির হাতের মতই, তার কথা সৃষ্টির কথার মতই, তার চেহারা সৃষ্টির চেহারার মতই অথবা তিনি হলেন ঈসা অথবা আলী, তারা ঐসব লোকের মত যারা কাঠের বা পাথরের নির্মিত মূর্তির পূজা করে, যা দেখা যায় ও স্পর্শ করা যায়। আর যারা বলে আল্লাহর কোনো সিফাত নেই। তারা আসলে কোনো কিছুরই ইবাদত করে না। কারণ সিফাত, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য ছাড়া কোনো জিনিস খুজে পাওয়া যাবে না। সিফাত ও বৈশিষ্ট্য ছাড়া কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে