মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যবান ওরা, যারা মরণের পর জান্নাত লাভ করবে। আর সবচেয়ে হতভাগ্য ওরাই, যারা মরণের পর জাহান্নামে যাবে। জান্নাত এক অনাবিল শান্তির জায়গা। জান্নাতের শান্তির পূর্ণ বিবরণ দেওয়া মানুষের সাধ্যের বাহিরে। তাই জান্নাতের কিছু নমুনা সহ আনুসঙ্গিক বিষয়াদিও বর্ণনা পেশ করা হ’ল।
জান্নাতীদের বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেন,
اُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُوْمٌ فَوَاكِهُ وَهُمْ مُّكْرَمُوْنَ فِىْ جَنَّتِ النَّعِيْمِ عَلَى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِيْنَ يُطَافُ عَلَيْهِم بِكَأْسٍ مِن مَّعِينٍ بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَ لَافِيْهَا غَوْلٌ وَلَاهُمْ عَنْهَايُنْزَفُوْنَ وَعِنْدَهُمْ قَاصِرَاتِ الطَّرْفِ عِيْنٌ كَأَنَّ هُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُوْن.
‘তাদের জন্যই রয়েছে নির্ধারিত রুযী ফল-মূল এবং তারা সম্মানিত। তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতের বাগান সমূহ। তারা মুখোমুখি হয়ে আসনে আসীন থাকবে। তাদেরকে ঘুরে ফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। তা হবে উজ্জ্বল পানীয় পানকারীদের জন্য সুপেয় সুস্বাদু। তার দরুন তাদের দেহে কোন ক্ষতি হবে না এবং তাদের জ্ঞান বুদ্ধিও নষ্ট হবে না। তাদের নিকট দৃষ্টি সংরক্ষণকারী সুন্দর চক্ষু বিশিষ্ট নারীগণ থাকবে। তারা এমন স্বচ্ছ যেমন ডিমের খোসার নীচে লুকানো ঝিল্লি’ (ছাফফাত ৪১-৪৯)। জান্নাতে মানুষের জন্য রুযী রয়েছে। তাদের জন্য ফল বাগান রয়েছে। তারা হুরদের নিয়ে মুখোমুখি উঁচু আসনে বসে থাকবে। তাদের সামনে উৎকৃষ্টমানের শরাব পরিবেশন করা হবে। তাতে বিবেকের কোন ক্ষতি হবে না। তাদের উপভোগের জন্য হরিণ নয়না সুদর্শনা নারীগণ থাকবেন। তারা এত সচ্ছ ও নরম যেমন ডিমের খোসার নীচে লুকানো ঝিল্লি।
শরবের এ পানপাত্র নিয়ে ঘুরতে থাকবে সুশ্রী বালকেরা। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُونٌ ‘তাদের খেদমতের জন্য ঘুরতে থাকবে তাদের জন্য নিযুক্ত সেবক বালক। তারা যেন লুকানো মুক্তা’ (তুর ২৪)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا ‘তাদের সেবার জন্য ঘুরতে থাকবে এমন সব ছেলে যারা সব সময় বালকই থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা বলেই মনে করবে’ (দাহর ১৯)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ.
‘তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ কর তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করে দেওয়া হবে। তাদের সামনে সোনার থালা ও পানপাত্রসমূহ পরিবেশন করা হবে এবং মন ভুলানো ও দৃষ্টির পরিতৃপ্তকারী জিনিস সমূহ সেখানে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানেই থাক। তোমরা পৃথিবীতে যে নেক আমল করেছিলে সে সব আমলের দরুন তোমরা এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ। তোমাদের জন্য এখানে প্রচুর ফল-ফলাদী রয়েছে যা তোমরা খাবে’ (যুখরূফ ৭০-৭৩)। আল্লাহ তাআ‘লা অন্যত্র বলেন,
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاء غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ.
‘মুত্তাকী লোকদের জন্য যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে, তার পরিচয় তো এই যে, তাতে স্বচ্ছ ও সুমিষ্ট পানির ঝরণাধারা প্রবাহমান রয়েছে। এমন দুধের ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে যার স্বাদ ও বর্ণ কখনও বিকৃত হবে না। এমন পানির ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু ও সুপেয় হবে। আর এমন মধুর ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে, যা অতীব স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন। সেখানে তাদের সর্ব প্রকারের ফল থাকবে এবং তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে ক্ষমা’ (মুহাম্মাদ ১৫)। আল্লাহ আরো বলেন,
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ، ذَوَاتَا اَفْنَانٍ، فِيْهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ، فِيْهِمَا مِنْ كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانٌ.
‘আর যারা আপন প্রতিপালকের সামনে আসার ব্যাপারে ভয় পোষণ করে তাদের প্রত্যেকের জন্যই দু’টি করে বাগান রয়েছে’ (রহমান ৪৭)। উভয় বাগানই সবুজ-সতেজ ডাল-পালায় পরিপূর্ণ (রহমান ৪৯)। দু’টি বাগানেই ঝর্ণাধারা সদাসর্বদা প্রবাহমান রয়েছে (রহমান ৫১)। উভয় বাগানের ফলসমূহের অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হবে (রহমান ৫২)। আল্লাহ আরো বলেন,
مُتَّكِئِينَ عَلَى فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ- فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ- كَأَنَّهُنَّ الْيَقُوْتُ وَالْمَرْجَانُ- وَمِنْ دُوْنِهِمَا جَنَّتَانِ- مُدْهَامَّتاَنِ- فِيْهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ- فِيْهِمَا فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ- فِيْهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٍ.
‘জান্নাতী লোকেরা এমন শয্যার উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে যার আবরণ মোটা রেশমের তৈরী হবে আর বাগানের ডাল-পালা ঝুঁকে নুয়ে থাকবে (রহমান ৫৪)। এ অফুরন্ত নিয়ামত সমূহের মধ্যে লজ্জাবনত নয়না ললনারাও থাকবে। তাদেরকে এ জান্নাতী লোকদের পূর্বে কোন মানুষ বা জ্বিন স্পর্শ করেনি (রহমান ৫৬)। তারা এমনই সুন্দরী রূপসী যেমন হীরা ও মণি-মুক্তা (রহমান ৫৮)। জান্নাতী লোকদের পূর্ববর্তী দু’টি বাগান ছাড়াও আরও দু’টি বাগান দেওয়া হবে, যা হবে ঘন-সন্নিবেশিত সবুজ-শ্যামল ও সতেজ। দু’টি বাগানে দু’টি উৎক্ষিপ্তমান ঝর্ণাধারা থাকবে (রহমান ৬৬)। তাতে বিপুল পরিমাণ ফল, খেজুর ও আনার থাকবে। এসব নিয়ামতের মধ্যেই থাকবে স্বচরিত্রের অধিকারী সুদর্শনা স্ত্রীগণ (রহমান ৭০)।
حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ- لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ- مُتَّكِئِينَ عَلَى رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ.
তাবুসমূহের মধ্যে সুরক্ষিত থাকবে বড় চোখবিশিষ্ট শ্বেত সুন্দরী নারীগণ। তাদেরকে কোন মানুষ বা জ্বিন স্পর্শ করেনি (রহমান ৭৪)। তারা অস্বাভাবিক উৎকৃষ্টমানের উত্তম সবুজ গালিচা এবং সুন্দর সুসজ্জিত শয্যায় হেলান দিয়ে অবস্থান করবে (রহমান ৭৭)।
اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِىْ مَقَامٍ اَمِيْنٍ فِىْ جَنَّتٍ وَعُيُوْنٍ يَلْبَسُوْنَ مِنْ سُنْدُسٍ وَّاِسْتَبْرَقٍ مُّتَقَابِلِيْنَ كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ.
‘আল্লাহভীরু লোকেরা দুশ্চিন্তা ও ভয়ভীতি মুক্ত নিরাপদ ও শান্তিময় স্থানে থাকবে। তা হবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারা পরিবেষ্টিত জায়গা। চিকন রেশম ও মুখমলের পোশক পরে সামনা-সামনি আসীন হবে। এটাই হবে তাদের জাঁকজমকের অবস্থা। সুন্দরী রুপসী হরিণ নয়না নারীদেরকে তাদের স্ত্রী করে দিবে’ (দুখান ৫১-৫৪)।
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ اُولَئِكَ الْمُقَرَّبُوْنَ فِىْ جَنَّتٍ النَّعِيْمِ ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ وَقَلِيْلٌ مِنَ الْاَخِرِيْنَ عَلىَ سُرُرٍ مَوْضُوْنَةٍ مُتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ لَايُصَدَّعُوْنَ عَنْهَا وَلَا يُنْزَفُوْنَ وَفَاكِهَةٍ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ وَلَحْمِ طَيْرٍ مِّمَّا يَشْتَهُونَ وَحُوْرٍ عِيْنٍ كَأَمْثَالٍ اللُّؤْلُوٍ الْمَكْنُوْنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنُ لَايَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيْمًا اِلَّا قِيْلًا سَلَامًا سَلَامَا وَأَصْحَابُ الْيَمِيْنِ مَاأَصْحَابُ الْيَمِيْنِ فِىْسِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ وَطَلْحٍ مَنْضُوْدٍ وَظِلِّ مَمْدُوْدٍ وَمَاءٍ مَسْكُوْبٍ وَفَاكِهَةٍ كَثِيْرَةٍ لَاَمَقْطُوْعَةٍ وَّلَا مَمْنُوْعَةٍ وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ اِنَّا أَنْشَائْنَاهُنَّ اِنْشَاءَ فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا عُرُبًا أَتْرَابًا.
‘আর অগ্রবর্তী লোকেরা তো সব ব্যাপারেই অগ্রবর্তী থাকবে। তারাই তো সান্নিধ্য লাভকারী লোক। তারা নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে অবস্থান ও বসবাস করবে। পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে বেশিসংখ্যক আর পরবর্তী লোকদের মধ্যে কমসংখ্যক, তারা মণিমুক্তা খচিত আসন সমূহের উপর হেলান দিয়ে মুখোমুখি হয়ে বসে থাকবে। চির কিশোরীগণ তাদের সামনে প্রবাহমান ঝর্ণার সুরায় ভরা পানপাত্র পরিবেশন করবে। হাতলধারী বড় বড় সুরাভান্ড, হাতলবিহীন পানপাত্র নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করতে থাকবে। এসব পানীয় পান করে তাদের মাথা ঘুরবে না, তাদের বিবেক বুদ্ধিও লোপ পাবে না। আর চির কিশোরীগণ তাদের সামনে নানা রকমের সুস্বাদু ফল পরিবেশন করবে। যেন ইচ্ছামত নিতে পারে। আর তাদের জন্য সুন্দর চক্ষুধারী নারীগণও থাকবে। তারা লুকিয়ে রাখা মুক্তার মত সুশ্রী, সুন্দরী হবে। এসব কিছু তাদের সেই আমলের শুভ প্রতিফল যা তারা দুনিয়ার জীবনে করেছিল। তারা সেখানে কোন বাজে কথা বা পাপের কথা শুনতে পাবে না। যা কথা হবে তা ঠিক ঠিক ও যথাযথ হবে। আর ডান বাহুর লোকেরা, ডান বাহুর লোকদের সৌভাগ্যের কথা আর কি বলা যায়। তাদের জন্য থাকবে কাটাবিহীন কুল বৃক্ষসমূহ, থরে থরে সাজানো কলা সমূহ, বিস্তীর্ণ এলাকাব্যাপী ছায়া, সর্বদা প্রবাহমান পানি, আর প্রচুর পরিমাণে ফল থাকবে। যা কোনদিন শেষ হবে না, খেতে কোন বাধা বিপত্তি ঘটবে না। তারা উচ্চ আসনসমূহে সমাসীন থাকবে। তাদের স্ত্রীগণকে আমি বিশেষভাবে সম্পূর্ণ নতুন করে সৃষ্টি করব এবং তাদেরকে কুমারী করে দিব। তারা নিজেরদের স্বামীদের প্রতি থাকবে আসক্ত। আর তারা বয়সে সবাই সমান হবে’ (ওয়াক্বিয়া ১০-৩৭)। (أبْكَارَ) শব্দটি মহিলাদের অতীব উত্তম নারীসুলভ সৌন্দর্য-বৈশিষ্ট্য বুঝাবার জন্য ব্যবহার হয়। অর্থাৎ এমন সব মহিলাকে বুঝাই যারা নারীত্বে উত্তম, উন্নতমান, শুভ আচার-আচরণ মিষ্ট-ভদ্র কথা-বার্তা ও নারীসূলভ প্রেম-ভালবাসা ও হৃদয়াবেগে ভরপুর। যারা নিজেদের স্বামীগণকে মন-প্রাণ দিয়ে পেতে চায়, কামনা করে, ভালবাসে এবং তাদের স্বামীরাও তাদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেমিক।
وَجَزَاهُم بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا وَيُطَافُ عَلَيْهِم بِآنِيَةٍ مِّن فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا قَوَارِيرَ مِن فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا ويطوف عليهم وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا.
‘আল্লাহ তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোশাক দান করবেন। সেখানে তারা তাদের উচ্চ আসন সমূহে ঠেস দিয়ে বসবে। তারা সেখানে সূর্যের তাপ পাবে না, শীতের প্রকোপও অনুভব করবে না। জান্নাতের গাছের ছায়া তাদের উপর অবনত থাকবে। আর ফলমূল তাদের অধিনে থাকবে, তারা ইচ্ছামত তা পাড়তে পারবে। তাদের সামনে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাঁচের পিয়ালা পরিবেশন করানো হবে। সে কাঁচ পাত্র ও রৌপ্য জাতীয় হবে। আর সে পানপাত্র গুলি জান্নাতের সেবক চির বালকেরা পরিমাণমত ভর্তি করে রাখবে। তাদেরকে সেখানে এমন সুরা পাত্র পরিবেশন করানো হবে, যাতে শুকনা আদার সংমিশ্রণ থাকবে। এ হবে জান্নাতের একটি ঝর্ণা যাকে সালসাবীলও বলা হয়। তাদের সেবার জন্য এমন সব বালক ছুটা-ছুটি করতে থাকবে, যারা চিরকালই বালক থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে মনে করবে এরা যেন ছড়িয়ে দেয়া মুক্তা। তোমরা সেখানে যেদিকেই দেখবে শুধু নিয়ামত আর নিয়ামত দেখতে পাবে। দেখতে পাবে এক বিরাট সম্রাজ্যের সাজ-সরঞ্জাম, তাদের উপর চিকন রেশমের সবুজ পোশক এবং মখমলের কাপড় থাকবে। তাদেরকে রৌপ্যের কংকন পরানো হবে এবং তাদেরকে তাদের প্রতিপালক পবিত্র পরিচ্ছন্ন শরাব পান করাবেন’ (দাহর ১২-২১)।
اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا وَكَوَاعِبَ اَترَابًا وَكَأْسًا دِهَاقًا لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا.
‘নিঃসন্দেহে মুত্তাকী লোকদের জন্য রয়েছে একটি সাফল্যের স্থান এবং বাগ-বাগিচা, আংগুর, সমবয়স্কা নব্য যুবতীগণ এবং উচ্ছাসিত পানপাত্রও। সেখানে তারা কোন অসার অর্থহীন ও মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না’ (নাবা ৩১-৩৫)।
إنَّ الْاَبْرَارَ لَفِىْ نَعِيْمٍ عَلىَ الْاَرَائِكِ يَنْظُرُوْنَ تَعْرِفُ فِىْ وُجُوْهُهِمْ نَضْرَةً النَّعِيْمِ يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ خِتَامُهُ مِسْكٌ وَفِىْ ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيْمٍ عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُوْنَ.
‘নিঃসন্দেহে নেক লোকেরা অফুরন্ত নিয়ামতের মধ্যে থাকবে। উচ্চ আসনে সমাসীন হয়ে দৃশ্যাবলী অবলকন করবে। তাদের মুখে তোমরা স্বাচ্ছন্দ দেখতে পাবে। তাদেরকে মুখরোচক উৎকৃষ্ট মানের শরাব পান করতে দেওয়া হবে। তার উপর মিশক এর মোহর লাগানো থাকবে। যে সব লোক অন্যদের উপর প্রতিযোগিতায় জয়ী হ’তে চায় তারা যেন এই জিনিসটি লাভের প্রতিযোগিতায় জয়ী হ’তে চেষ্টা করে। সে শরাবে তাসনীম মিশ্রিত থাকবে, এটা একটা ঝর্ণা, নৈকট্য লাভকারী লোকেরা এ শরাব পান করবে’ (মুতাফফিফিন ২২-২৮)।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاعِمَةٌ لِسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ فِىْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ لَاتَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةٌ فِيْهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ فِيهَا سُرُرٌ مَّرْفُوعَةٌ وَأَكْوَابٌ مَّوْضُوعَةٌ وَنَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ وَزَرَابِيُّ مَبْثُوثَةٌ.
‘সেদিন কতিপয় লোকের মুখ উজ্জ্বল ঝকঝকে হবে, তারা নিজেদের চেষ্টা-সাধনার জন্য সন্তুষ্টচিত্ত হবে। সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবে না। সেখানে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে। সমুন্নত আসনসমূহ থাকবে। পানপাত্রসমূহ সুসজ্জিত থাকবে। গির্দা বালিশ সমূহ সারিবদ্ধ থাকবে এবং সুদৃশ্য মখমলের বিছানা পাতানো থাকবে’ (গাশিয়াহ ৮-১৬)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالَى اَعَدَدْتُ لِعِبَادِىْ الصَّالِحِيْنَ مَالَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا اُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তত করে রেখেছি, যা কখনও কোন চক্ষু দেখেনি কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তর কখনও কল্পনাও করেনি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭১)। অত্র হাদীছের স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া খুব কঠিন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে মানুষের ভোগ-বিলাস আরাম-আয়েশের জন্য এমন কিছু ব্যবস্থা করেছেন যা মানুষের চোখ কোন দিন দেখেনি। অথচ মানুষ পৃথিবীর অনেক কিছু দেখেছে। মানুষের কান কোনদিন শুনেনি। অথচ মানুষের কান অনেক নতুন পুরাতন রাজাধিরাজের ভোগ-বিলাসের কাহীনী শুনেছে। মানুষের অন্তর কোনদিন পরিকল্পনা করে নি। অথচ মানুষের অন্তরে অনেক কিছুই পরিকল্পনা হয়। জান্নাত এ সকল পরিকল্পনার চেয়েও ভিন্ন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْضِعُ سَوْطٍ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি চাবুকের সমপরিমাণ জায়গা গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭২)। জান্নাতের সাথে পৃথিবীর আসলেই কোন তুলনা হয় না।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُدْوَةٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَلَوْ اَنَّ اِمْرَأةً مِنَ نِّسَاءِ اَهْلِ الْجَنَّةِ اِطَّلَعَتْ اِلَى الْاَرْضِ لَاضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلَاَتْ مَابَيْنَهُمَا رِيْحًا وَلَنَصِيْفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহর পথে এক সকাল এক সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদ হ’তে উত্তম। যদি জান্নাতের কোন নারী পৃথিবীতে উঁকি দেয় তবে গোটা পৃথিবী তার রূপের ছটায় আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে পরিণত হবে। এমনকি জান্নাতের নারীদের মাথার ওড়না গোটা দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭৪)। জান্নাতের কোন কিছুর সাথে পৃথিবীর কোন বস্ত্তর তুলনা চলে না। তাই নবী করীম(সা.) ইহকাল ও পরকালের তুলনা পেশ করে বলেন,
عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِى الْاَخِرَةِ اِلَّا مِثْلَ مَايَجْعَلُ اَحَدُكُمْ اِصْبَعَهُ فِى الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ.
মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি আল্লাহর কসম! পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হ’ল যেমন তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙ্গুল ডুবানোর পর লক্ষ্য করে দেখুক আঙ্গুল কি পরিমাণ পানি নিয়ে আসল (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৬)। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে আঙ্গুলের পানি এবং সাগরের পানি কম-বেশী হওয়ার ব্যাপারে তুলনা যেমন ইহকাল ও জান্নাতের তুলনা তেমন।
عَنْ جَابِرٍ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِجَدْىٍ اَسَكَّ مَيِّتٍ فَقَالَ اَيُّكُمْ يُحِبُّ اَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ فَقَالَ مَا نُحِبُّ اَنَّهُ لَنَابِشَيْئٍ قَالَ فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا اَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ.
জাবির (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূল(সা.) একটি কানকাটা ছোট মরা ছাগলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, তোমাদের এমন কেউ আছে যে, ছাগলটি এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করে। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা তো কোন কিছুর বিনিময়েই নিতে পসন্দ করি না। তখন নবী করীম(সা.) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের কাছে এ মরা কানকাটা বাচ্চা ছাগলটি যত তুচ্ছ দুনিয়া আল্লাহর কাছে তার চাইতে অনেক গুণ বেশি তুচ্ছ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩০)।
عَنْ سَهْلٍ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْكَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحُ بَعُوْضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شُرْبَةً.
সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য হত, তা‘হলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৫০)। পৃথিবীর মূল্য একটি কানকাটা মরা বাচ্চা ছাগলের সমান নয়, আঙ্গুলের এক ফোটা পানির সমানও নয়, এমন কি একটি মাছির পাখার সমানও নয়। যা উপরের হাদীছগুলো প্রমাণ করে। অতএব, আল্লাহর কাছে পৃথিবীর কোন মূল্য নেই যাকে আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য দিয়েছি। অথচ জান্নাত একটি চিরস্থায়ী ভোগবিলাসের অতীব উত্তম স্থান।
عَنْ اَبِىْ مُوْسَى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِى الْجَنَّةِ لَخِيْمَةٌ مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مَجُوْفَةٍ عَرْضُهَا سِتُّوْنَ مَيْلًا وَفِى رِوَايَةٍ طُوْلُهَا سِتُّوْنَ مَيْلًا فِىْ كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا اَهْلٌ مَايَرَوْنَ الْاَخَرِيْنَ يَطُوْفُ عَلَيْهِمُ الْمُؤْمِنُ وَجَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ اَاَنِيَتُهُمَا وَمَا فِيْهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ اَنِيَتُهُمَا وَمَا فِيْهِمَا.
আবু মূসা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে মুমিনদের জন্য মুক্তা দ্বারা তৈরী একটি তাঁবু থাকবে, যার মধ্যস্থল হবে ফাঁকা। তার প্রশস্ততা ষাট মাইল। অন্য বর্ণনায় আছে তার দৈর্ঘ্যতা ষাট মাইল। তার প্রত্যেক কোণে জান্নাতীরা থাকবে। এক কোণের লোক অপর কোণের লোককে দেখতে পাবে না। ঈমানদারগণ তাদের নিকট যাতায়াত করবে। দু’টি জান্নাত হবে রূপার। তার ভিতরের পাত্র ও অন্যান্য সব কিছু হবে রূপার এবং অপর দু’টি জান্নাত হবে সোনার। তার পানপাত্র ও ভিতরে সব কিছু হবে সোনার (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৫)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ يَسِيْرُ الرَّاكِبُ فِىْ ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَايَقْطَعُهَا وَلَقَابُ قَوْسِ اَحَدِكُمْ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهُ الشَّمْسُ اَوْ تَغْرِبُ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি বড় গাছ আছে, যদি কোন সওয়ারী তার ছায়ায় একশত বছর ভ্রমণ করে তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। জান্নাতে তোমাদের কারো একটি ধনুকের সমপরিমাণ জায়গাটাও সূর্য যার উপর উঠে ও ডুবে তার চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৪)। হাদীছে বুঝা গেল জান্নাতের ধনুকের সমপরিমাণ জায়গা গোটা পৃথিবীর চেয়ে উত্তম।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْجَنَّةِ مِائَةُ دَرَجَةٍ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ وَالْفِرْدَوْسُ اَعْلَاهَا دَرَجَةً مِنْهَا تَفَجَّرُ اَنْهَارُ الْجَنَّةِ الْاَرْبَعَةُ وَمِنْ فَوْقِهَا يَكُوْنُ الْعَرْشُ فَاذَا سَأَلَتُمُ اللهَ فاسْئَلُوْهَا الْفِرْدَوْسَ.
ওবাদা ইবনে ছমেত (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতের স্তর হবে একশতটি। প্রত্যেক দু’স্তরের মাঝখানের ব্যবধান হবে আসমান ও জমিনের দূরত্বের সমান। জান্নাতুল ফেরদাউসের স্তর হবে সবচেয়ে উপরে। সেখান থেকে প্রবাহিত রয়েছে চারটি ঝরণাধারা এবং তার উপর আল্লাহর আরশ। সুতরাং তোমরা যখনই আল্লাহর কাছে চাইবে তখন ফেরদাউস চাইবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৬)। অত্র হাদীছে যে চারটি ঝরণার কথা রয়েছে তা পানি, মধু, দুধ ও শরবের ঝরণা হ’তে পারে।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَسُوْقًا يَأْتُوْنَهَا كُلَّ جُمْعَةٍ تَهُبُّ رِيْحُ الشِّمَالِ فَتَحَثُّوْا فِىْ وُجُوْهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ فَيَزْدَادُوْنَ حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَرْجِعُوْنَ اِلَى اَهْلِيْهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوْا حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَقُوْلُ لَهُمْ اَهْلُوْهُمْ وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدَتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে একটি বাজার আছে। প্রত্যেক জুম‘আর দিন জান্নাতীরা সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হবে এবং সে বাতাস তাদের মুখে ও পোশাকে সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে। ফলে তাদের রূপ আরও বেশি হয়ে যাবে। অতঃপর তারা যখন বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজের স্ত্রীদের কাছে যাবে তখন স্ত্রীগণ তাদেরকে বলবে, আল্লাহর কসম! আপনারা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছেন। এর উত্তরে তারা বলবে আল্লাহর কসম! আমাদের অবর্তমানে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে (মুসলিম,বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৭)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে বাজার থাকবে জান্নাতীরা জুম’আর দিন বাজারে যাবে। বাজারে কোন ক্রয়-বিক্রয় হবে না। সেখানে গেলে জান্নাতীদের রূপ বৃদ্ধি পাবে। এ সময় তাদের স্ত্রীগণ যারা বাড়ীতে আছে তাদেরও রূপ বেশি হয়ে যাবে।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلْوَنَ الْجَنَّةَ صُوْرَةَ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ثُمَّ الّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ كَاَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّىٍّ فِى السَّمَاءِ اِضَاءَةً قُلُوْبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ لَااِخْتِلَافَ بَيْنَهُمْ وَلَاتَبَاغُضَ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ يُرَى مُخُّ سُوْقِهِنَّ مِنْ وَّرَاءِ الْعَظْمِ واللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ يُسَبِّحُوْنَ اللهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا لَايَسْقُمُوْنَ وَلَايَبُوْلُوْنَ وَلَايَتَغَوَّطُوْنَ وَلَايَتْفُلُوْنَ وَلَا يَمْتَخِطُوْنَ اَنِيَتُهُمُ الذَّهَبُ وَالْفِضَّةُ وَاَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ وَوَقُوْدُ مَجَامِرِهِمُ الْاُلُوَّةُ وَرَشْحُهُمْ الْمِسْكُ عَلَى خُلُقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ عَلَى صُوْرَةِ اَبِيْهِمْ اَدَمَ سِتُّوْنَ ذِرَاعًا فِى السَّمَاءِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা ১৫ দিনে চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল ও সুন্দর রূপ ধারণ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা হবে আকাশের তারকার ন্যায় ঝকঝকে। জান্নাতীদের সকলের অন্তর এক ব্যক্তির অন্তরের ন্যায় হবে। তাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ থাকবে না এবং হিংসা বিদ্বেষও থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ হুরদের মধ্য থেকে দু’জন দু’জন করে স্ত্রী থাকবে। বেশি সুন্দরী হওয়ার দরুন তাদের হাড় ও মাংসের উপর হ’তে নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায় রত থাকবে। তারা কখনও অসুস্থ হবে না। তাদের পেশাব হবে না। তাদের পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তারা থুথু ফেলবে না। তাদের নাক দিয়ে শ্লেষ্যা বের হবে না। তাদের ব্যবহারিক পাত্র সমূহ হবে সোনা-রূপার। তাদের চিরনী হবে স্বর্ণের এবং তাদের সুগন্ধির জ্বালানী হবে আগরের। তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তরীর মত সুগন্ধি। তাদের স্বভাব হবে এক ব্যক্তির ন্যায়। শারীরিক গঠন হবে তাদের পিতা আদম (আঃ)-এর মত, উচ্চতায় ষাট গজ লম্বা হবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৮)।
অত্র হাদীছে বুঝা গেল, যারা সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হবে। মানুষের মধ্যে কোন মতবিরোধ কোন হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। অন্যের তুলনায় বিশেষ মর্যাদাসম্পূর্ণ দু’জন স্ত্রী থাকবে। তারা খুব বেশি সুন্দরী হবে। এ জন্য তাদের পায়ের নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তাদের মুখে থুথু আসবে না, তাদের নাকে শিকনি আসবে না। সেই জান্নাতের পাত্রসমূহ হবে সোনা-রূপার। সুগন্ধি জ্বালানী হবে এক ধরনের আগরবাতি। শরীরের ঘামের গন্ধ হবে কস্তরীর মত সুগন্ধি। সকলের স্বভাব ও আচার আচরণ হবে একই।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُوْنَ فِيْهَا وَيَشْرَبُوْنَ وَلَايَبُوْلُوْنَ وَلَايَتَغَوَّطُوْنَ وَلَايَتْفُلُوْنَ وَلَايَمْتَخِطُوْنَ قَالُوْا فَمَا بَالُ الطَّعَامِ قَالَ جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ يُلْهَمُوْنَ التَّسْبِيْحَ وَالتَّحْمِيْدَ كَمَا تُلْهَمُوْنَ النَّفْسَ.
জাবের (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতীরা সেখানে খাবে, পান করবে। কিন্তু তারা থুথু ফেলবে না, মল-মূত্র ত্যাগ করবে না এবং তাদের নাক হ’তে শিকনীও বের হবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন তাহ‘লে তাদের এসব খাদ্যের পরিণতি কি হবে? নবী করীম(সা.) বললেন, ঢেকুর এবং মেশকের ন্যায় সুগন্ধি ঘাম দ্বারা শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর তাসবীহ্ ও তার প্রশংসা এমনভাবে তাদের অন্তরে ঢেলে দেওয়া হবে যেমন শ্বাস-নিঃশ্বাস অবিরাম চলছে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৭৯)। অত্র হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, তারা জান্নাতে খাবে ও পান করবে কিন্তু পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না। কারণ সেগুলি ঢেকুর ও ঘামের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। আর শ্বাস-প্রশ্বাস যেমন নিজ গতিতে চলে। এ জন্য কোন চিন্তা ভাবনা বা কোন পরিকল্পনা লাগে না তেমনি জান্নাতীদের মুখে সর্বদা তাসবীহ্ চলতে থাকবে। তাসবীহ্ পাঠের জন্য কোন চেষ্টা করা লাগবে না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَّدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ وَلَايَبْأَسُ وَلَا يَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে সেখানে সুখ-স্বাচ্ছন্দে, ভোগ-বিলাসে ডুবে থাকবে। কোন প্রকার দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা তাকে পাবে না। পোশাক পরিচ্ছদ ময়লা বা পুরাতন হবে না। আর তার যৌবন কাল কখনও শেষ হবে না (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮০)। প্রথমে বলা হয়েছে জান্নাত যে কি আরাম আয়েশের জায়গা তার বিবরণ দেওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন অত্র হাদীছে বলা হ’ল জান্নাত এক চির সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আরাম-আয়েশের জায়গা। যেখানে কোনদিন দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার চিহ্ন আসবে না। পোশাক কোনদিন পুরাতন বা ময়লা হবে না, যৌবনও কোনদিন শেষ হবে না।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ وَ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُنَادِىْ مُنَادٍ اِنَّ لَكُمْ اَنْ تَصِحُّوْا فَلَا تَسْقَمُوْا اَبَدًا وَاِنَّ لَكُمْ اَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوْتُوْا اَبَدًا وَاِنَّ لَكُمْ اَنْ تَشِبُّوْا فَلَا تَهْرَمُوْا اَبَدًا وَاِنَّ لَكُمْ اَنْ تَنْعَمُوْا فَلَا تَبَأْسُوْا اَبَدًا.
আবু সা‘ঈদ খুদ্রী ও আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবেন, তোমরা চিরদিন সুস্থ থাকবে আর কখনও অসুস্থ হবে না। তোমরা সর্বদা জীবিত থাকবে আর কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। তোমরা চিরদিন যুবক থাকবে আর কোনদিন বৃদ্ধ হবেনা। তোমরা চিরদিন সুখ-স্বাচ্ছন্দে ও আরাম-আয়েশে থাকবে, কখনও হতাশা ও দুশ্চিন্তা তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮১)।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ اِنّ اَهْلَ الْجَنّةِ يَتَرَاؤنَ اَهْلَ الْغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ كَمَا تَتَرَائُوْنَ الْكَوْكَبَ الدُّرِّىَ الْغَابِرَ فِى الْاُفُقِ مِنَ الْمَشْرِقِ اَوِ الْمَغْرِبِ لِتَفَاضُلِ ماَ بَيْنَهُمْ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الْاَنْبِيَاءِ لَايَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ قَالَ بَلى والّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِه رِجَالٌ اَمَنُوْا بِاللهِ وَصَدّقُوْا الْمُرْسَلِيْنَ.
আবু সা‘ঈদ খুদ্রী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই জান্নাতবাসীগণ তাদের উর্ধের বালাখানার বাসীন্দাগণকে এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমনভাবে তোমরা আকাশের পূর্ব দিকে কিংবা পশ্চিম দিকে একটি তারা দেখতে পাও। তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে এরূপ হবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! সে স্থান তো হবে নবীগণের, অন্যেরা তো সেখানে পৌঁছতে পারবে না। রাসূল(সা.) বললেন, না; বরং সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যে সমস্ত লোকেরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং রাসূলগণের সত্যতা স্বীকার করবে তারাও সেখানে পৌঁছতে সক্ষম হবে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮২)। জান্নাতে মানুষের মর্যাদার খুব তারতম্য হবে। যমীন ও তারকার যেমন একটা অপরটা থেকে নীচে ও উপরে রয়েছে, তেমন জান্নাতীদের মান-মর্যাদার পার্থক্য হবে। তবে অসম্মানিত হবে না।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِنّ اللهَ تَعَالى يَقُوْلُ لِاَهْلِ الْجَنّةِ يَااَهْلَ الْجَنّةِ فَيَقُوْلُوْنَ لَبّيْكَ رَبّنَا وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيرُ كُلُّهُ فِى يَدَيْكَ فَيَقُوْلُ هَلْ رَضِيْتُمْ فَيَقُوْلُوْنَ وَمَالنَا لِانَرْضَ يَارَبّ وَقَدْ اَعْطَيْتَنَا مَالَمْ تُعْطِ اَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ فَيَقُوْلُ الَااُعْطِيْكُمْ اَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ فَيَقُوْلُوْنَ يَارَبّ وَاَىُّ شَيْئٍ اَفْضَلُ مِنْ ذلِكَ فَيَقُوْلُ اُحِلّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِىْ فَلَا اَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ اَبَدًا.
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহ জান্নাতবাসীগণকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! তখন তারা বলবেন, ‘‘আমরা উপস্থিত। সৌভাগ্য তোমার নিকট থেকেই অর্জিত এবং যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে।’’ তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি সন্তষ্ট? তারা বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না আপনিই তো আমাদের এমন জিনিস দান করেছেন যা আপনার সৃষ্টি জগতের আর কাউকেও দান করেন নি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি এর চেয়ে উত্তম জিনিস তোমাদেরকে দান করব না? তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এর চেয়ে উত্তম কি হ’তে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি দান করছি, এরপর থেকে আমি আর কখনও অসন্তুষ্ট হব না (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৪)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে আল্লাহর সন্তষ্টি সবচেয়ে উত্তম জিনিস। আর তা হচ্ছে আল্লাহ নিজেই বলবেন, আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হ’লাম, আর কোনদিন অসন্তুষ্ট হব না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنّ اَدْنى مَقْعَدِ اَحَدِكُمْ مِنَ الْجَنّةِ اَنْ يَقُوْلَ لَهُ تَمَنّ فَيَتَمَنّى وَيَتَمَنّى فَيَقُوْلُ لَهُ هَلْ تَمَنّيْتَ فَيَقُوْلُ نَعَمْ فَيَقُوْلُ لَهُ فَاِنّ لَكَ مَا تَمَنّيْتَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ.
আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূল(সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতে সর্বাপেক্ষা নিম্নমানের হবে, তাকে বলা হবে তুমি তোমার আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর। তখন সে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করবে আরও আশা-আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে অর্থাৎ বারবার অনেক অনেক আশা প্রকাশ করবে। তখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কি তোমার আশা-আকাঙ্খা শেষ হয়েছে? সে বলবে হ্যাঁ। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তুমি যা আশা করেছ তা দেওয়া হ‘ল এবং তার সমপরিমাণ দ্বিগুণ দেওয়া হ’ল (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৫)। মানুষ চাইবে তার বিবেক অনুযায়ী, আর আল্লাহ দিবেন তাঁর মর্যাদা অনুযায়ী আল্লাহ মানুষকে এত কিছু দিবেন যা মানুষের অন্তর পরিকল্পনা করতে পারে না। মানুষ যা চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না ভাবতেও পারে না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمّ خُلِقَ الْخَلْقُ قَالَ مِنَ الْمَاءِ قُلْنَا الْجَنّةُ مَا ِبنَائُهَا قَالَ لَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَمَلَاطُهَا الْمِسْكُ الاَذْفَرُ وَحَصْبَاءُهَا اللُؤْلُؤُ وَالْيَاُقْوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلُهَا يَنْعَمُ وَ لَايَبَأْسُ وَيَخْلُدُ وَلَا يَمُوْتُ وَلَا يَبْلى ثِيَابُهُمْ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُمْ.
আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত। আমি রাসূল(সা.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আল্লাহ তার সমস্ত মাখলূক্বকে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন? নবী করীম(সা.) বললেন, পানি দ্বারা। আবার জিজ্ঞেস করলাম জান্নাত কি দ্বারা নির্মাণ করেছেন? নবী করীম(সা.) বললেন, এক ইট স্বর্ণের আর এক ইট রূপার এভাবে জান্নাত নির্মাণ করেছেন। আর তার মসল্লা হল সুগন্ধময় কস্ত্তরী এবং তার কংকর হ‘ল মনি-মুক্তা আর মাটি হ‘ল জাফরানের তৈরী। যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে সে সুখে স্বাচ্ছন্দে থাকবে, সে কখনও হতাশা বা দুশ্চিন্তায় পতিত হবে না। সেখানে চিরস্থায়ী থাকবে কখনও মরবে না। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ময়লা বা পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবন শেষ হবে না (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৬৩০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৮)।
عَنْ اَنَسٍ عَنِ الّنِبّى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُعْطَى الْمُؤمِنُ فِى الْجَنّةِ قُوّةً كَذا وَكذَا مِنَ الْجِمَاعِ قِيْلَ ياَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلمَ اَو يُطِيْقُ ذلِكَ قَالَ يُعْطَى قُوّةً مِئَةٍ.
আনাস (রা.) হ’তে বর্ণিত। নবী করীম(সা.) বলেছেন, জান্নাতী মুমিনদেরকে এত এত সহবাসের শক্তি প্রদান করা হবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি এত শক্তি রাখবে কি? নবী করীম(সা.) বললেন, একশত পুরুষের শক্তি প্রদান করা হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৩৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৯৪, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে পুরুষদের স্ত্রী মিলন ক্ষমতা অনেক অনেক গুণ বেশি করে দেওয়া হবে। জান্নাত অনাবিল শান্তির জায়গা, এটা তার একটা বড় মাধ্যম।
عَنْ سَعَدِ بْنِ اَبِىْ وَقّاصِ عنْ الّنِبّى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنّهُ قَالَ لَوْ اَنّ مَا يُقِلُّ ظُفْرٌ مِمّا فِى الْجَنّةِ بَدَأ لَتَزَخْرَفَتْ لَهُ مَا بَيْنَ خَوَافَقِ السّمَوَاتِ والْاَرْضِ ولَوْ اَنّ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْجَنّةِ اِطَّلَعَ فَبَدَأ اَسَاوِرُهُ لَطَمِسَ ضؤْهُ ضُوْءَ الشّمْسِ كَمَا تَطْمَسُ الشّمْسُ ضُوْءَ النُّجُوْمِ.
সা‘দ ইবনে আবু ওয়াককাছ (রা.) হ’তে বর্ণিত, নবী(সা.) বলেছেন, যদি জান্নাতের বস্ত সমূহ হ’তে নখ এর চেয়ে কম একটি ক্ষুদ্র বস্তুও পৃথিবীতে প্রকাশ হয়ে যায়, তবে আসমান ও যমীনের সমগ্র পার্শ্ব শেষ প্রান্তসহ উজ্জ্বল আলোকে সুসজ্জিত হয়ে যাবে। আর যদি জান্নাতের কোন ব্যক্তি দুনিয়ার দিকে উঁকি মারে এবং তার হাতের কংকন প্রকাশ পায়, তাহ’লে এ ব্যক্তি এবং কংকনের আলো সূর্য্যের আলোকে এমনভাবে বিলিন করে দিবে, যেমন সূর্যের আলো তারকার আলোকে বিলিন করে দেয় (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত আলবানী হা/৫৬৩০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৯৫)। অত্র হাদীছে জান্নাতের সমস্ত বস্তর এমন উজ্জ্বলতা প্রমাণ করা হয়েছে যা মানুষের বিবেচনার বাইরে। কারণ একজন জান্নাত হ’তে উঁকি মারলে তার জ্যোতিতে সূর্যের জ্যোতি বিলীন হবে, এ বাক্যের ভাবধারা মানুষের বুঝা বড় কঠিন। এমন জান্নাতের আশা করা মানুষের জন্য যরুরী কর্তব্য।
عَنْ بُرَيْدَةَ قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَهْلُ الْجَنّةِ عِشْرُوْنَ وَمِائَةُ صَفّ ثَمَانُوْنَ مِنْهَا مِنْ هذِهِ الْاُمّةِ وَاَرْبَعُوْنَ مِنْ سَائِرِ الْاُمَمِ.
বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসীদের একশত বিশ কাতার হবে। তার আশি কাতার হবে আমার উম্মতের, আর বাকী চল্লিশ কাতার হবে সমস্ত উম্মতের মধ্য হ’তে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪০২)। অন্য এক হাদীছে বলা হয়েছে জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে এ উম্মত থেকে ।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمُؤمِنُ اِذَا اشْتَهى الْوَلَدَ فِى الْجَنّةِ كانَ حَمْلُهُ وَوَضْعُهُ وَسِنّهُ فِى سَاعَةٍ كَمَا يَشْتَهِىْ.
আবু সাঈ‘দ খু্দরী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসী মুমিন যখন সন্তান কামনা করবে, তখন গর্ভ, প্রসাব এবং তার বয়স চাহিদা অনুযায়ী মূহুর্তের মধ্যে সংঘটিত হবে (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ আলবানী হা/৫৬৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪০৬)। অত্র হাদীছে বুঝা গেল জান্নাতীরা সন্তান কামনা করতে পারে। আর সন্তান কামনা করা মাত্রই পাওয়া যাবে। তবে যে বয়সের সন্তান কামানা করবে তা মুহুর্তের মধ্যেই পাবে। তবে ইসহাক বিন ইবরাহীম বলেন, জান্নাতীরা সন্তান কামনাই করবে না
عَنْ حَكِيْمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ عَنْ اَبِيْهِ عَنِ النّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنّ فِى الْجَنَّةِ بَحْرَ الْعَسَلِ وَبَحْرَ اللَّبَنِ وَبَحرَ الْخَمْرِ ثُمَّ تُشَقَّقُ الْانْهَارُ بَعْدُ.
হাকীম ইবনে মু‘আবিয়া (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে রয়েছে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর এবং শরাবের সাগর। অতঃপর এগুলি হ’তে আরও বহু নদী প্রবাহিত হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৮০)। জান্নাতে মূলত চারটি সমুদ্র রয়েছে ১. পানির ২. মধুর ৩. দুধের ও ৪.শরাবের। আবার এ চারটি সমুদ্র হ’তে বহু নদী প্রবাহিত হবে (তিরমিযী হা/২৫৭১)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَحَدَّثُ وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ اَهْلِ الْبَادِيَةِ اَنّ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْجَنّةِ اِسْتَاْذَنَ رَبّهُ فِى الزَّرْعِ فَقَال لَهُ اَلَسْتَ فِيْمَا شِئْتَ قَالَ بَلى وَلكِنّى احبُّ اَنْ اَزْرَعَ فَبَذَرَ فَبَادَرَ الطَّرْفُ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَائُهُ وَاسْتَِحْصَادُهُ فَكَانَ اَمْثَالَ الْجِبَالِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالى دُوْنَكَ يَا اِبْنَ اَدَمَ فَانّهُ لَايُشْبِعُكَ شَيٌْئ فَقَالَ الْاَعْرَابِىُّ وَاللهِ لَاتَجِدُهُ الَّاقَرْشِيَا اَوْاَنْصَارِيًا فَاِنّهُمْ اَصْحَابُ زَرْعِ وَاَمّا نَحْنُ فَلَسْنَا بِاَصْحَابِ َزرْعِ فَضَحِكَ النّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ-
আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, একদা নবী করীম(সা.) কথা বলছিলেন, এসময় একজন গ্রাম্য বেদুইন উপস্থিত ছিল। নবী করীম(সা.) বললেন, জান্নাতবাসীর একজন জান্নাতে কৃষি কাজ করার জন্য তার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি চাইবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার যা কিছুর প্রয়োজন তা কি তোমার কাছে নেই? সে বলবে হ্যাঁ আছে। তবে আমি কৃষি কাজ ভালবাসি। অতঃপর সে বিজ বপন করবে এবং মূহুর্তের মধ্যে তা অংকুরিত হবে, ফসল পাকবে এবং ফসল কাটা হবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, হে আদম সন্তান! এসব ফসল নিয়ে যাও কোন কিছুতেই তোমার তৃপ্তি হয় না। তখন গ্রাম্য লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! দেখবেন সে হয়তো কোন কোরাইশী অথবা আনছার গোত্রীয় লোক হবে। কেননা তারাই কৃষি কাজ করে থাকে। আর আমরা তো কৃষি কাজ করি না। তার কথা শুনে রাসূল(সা.) হেসে উঠলেন (বুখারী, মিশকাত হা/৫৪১০)। হাদীছের ভাষায় বুঝা যায় জান্নাতে মানুষ নিজ নিজ আশা আকাঙ্ক্ষা তার প্রতিপালকের কাছে পেশ করবে এবং তা তাৎক্ষণিক পূরণ করা হবে।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا فِى الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ اِلّا وَسَاقُهَا مِنْ ذَهَبٍ.
আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম(সা.) বলেছেন, জান্নাতের সমস্ত গাছেরই কান্ড ও শাখা হবে স্বর্ণের (তিরমিযী হা/২৫২৫)।
عَنْ عَلِى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّ فِى الْجَنّةِ لَغُرَفًا تُرَى ظُهُوْرُهَا مِنْ بُطُوْنِهَا وَبُطُوْنُهَا مِنْ ظُهُوْرِهَا فَقَامَ اِلَيْهِ اَعْرَابِىُ فَقَالَ لِمَنْ هِىَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَّ قَالَ هِىَ لِمَنْ اَطَابَ الْكَلَامَ وَاَطْعَمَ الطَّعَامَ وَادَامَ الصِيَامَ وَصَلَّى لِلّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ.
আলী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে এমন কতগুলি বালাখানা রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির দেখা যায় এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যায়। একজন গ্রাম্য বেদুইন রাসূল(সা.) -এর নিকটে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! এমন জান্নাত কোন ব্যক্তির জন্য? নবী করীম(সা.) বললেন, যারা মানুষের সাথে নরমভাবে কথা বলে, ক্ষুধার্থ মানুষকে খাদ্য খাওয়ায়, নিয়মিত ছিয়াম পালন করে এবং রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন তাহাজ্জুদ পড়ে (তিরমিযী হা/২৫২৭, হাদীছ হাসান)। জান্নাতে সবচেয়ে উচুমানের বালাখানাগুলি এত স্বচ্ছ পদার্থ দ্বারা তৈরী যে, তার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যাবে। আর এর জন্য চারটি কাজ করা যরুরী। ১. মানুষের সাথে নরমভাবে কথা বলতে হবে ২. ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে খাওয়াতে হবে ৩. নিয়মিত নফল ছিয়াম পালনে অভ্যাসী হ’তে হবে এবং ৪. রাতে তাহাজ্জাদ পড়তে হবে।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْجَنّةِ مِاَئُةُ دَرَجَةٍ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرجَتَيْنِ مِئَةُ عَامٍ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে একশতটি স্তর রয়েছে আর প্রত্যেক দু’স্তরের মাঝে একশত বছরের ব্যবধান রয়েছে (তিরমিযী হা/২৫২৯, হাদীছ ছহীহ)।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِنَّ اَوَّلَ زَمْرَةٍ يَدْخُلُوْنَ الْجَنّةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضُؤْءُ وُجُوْهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضُؤْءِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالزَّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلى مِثْلِ احْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّىَّ فِى السّمَاءِ لِِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُوْنَ حَلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا.
আবু সা‘ঈদ খুদ্রী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারার জ্যোতি হবে পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায়। আর দ্বিতীয় দলটির চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত ঝকঝকে। সেখানে প্রত্যেকের জন্য দু’জন করে বিশেষ মর্যাদা সম্পূর্ণ অতীব সুন্দরী স্ত্রী থাকবে। তাদের প্রত্যেক স্ত্রীর পরিধানে সত্তর জোড়া কাপড় থাকবে, তাদের শরীর এত স্বচ্ছ, এবং কাপড় এত চিকন হবে যে, এত কাপড়ের উপর দিয়ে পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে (তিরমিযী, হা/২৫৩৫; আলবানী মিশকাত হা/৫৬৩৫, হাদীছ ছহীহ)। এরা জান্নাতের বিশেষ নারী। এদের চেহারা হবে ঝকঝকে মুক্তার মত চোখ হবে বড় বড় ডাগর ডাগর হরিণ নয়োনা। দেখে মনে হবে চোখে সুরমা দেওয়া আছে। মাথার চুল হবে লম্বা পরিমাণে বেশি কুচকুচে কাল।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَهْلُ الْجَنّةِ جُرْدٌ مُرْدٌ كَحْلى لَايَفْنَى شَبَابُهُمْ وَلَايَبْلى ثِيَابُهُمْ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসী গোফ ও দাড়ী বিহীন হবে, তাদের চক্ষু সুরমায়িত হবে। তাদের যৌবন কোনদিন শেষ হবে না। তাদের কাপড় কোন দিন পুরাতন বা ময়লা হবে না (তিরমিযী, হা/২৫৩৯; আলবানী মিশকাত হা/৫৬৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৯৬)।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ اَهْلُ الْجَنّةِ الْجَنّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِيْنَ اَبْنَاءُ ثَلَاثِيْنَ اَوْ ثَلَاثُ وَثَلَاثِيْنَ سَنَةً.
মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন তাদের বয়স হবে ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর। তারা কেশবিহীন ও দাড়ীবিহীন হবেন, তাদের চক্ষু সুরমায়িত হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৩৯৭, হাদীছ হাসান)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَطْفَالُ الْمُسْلِمِيْنَ فِى جَبَلٍ فِى الْجَنّةِ يُكَفِّلُهُمْ اِبْرَاهِيْمُ وَسَارَةُ حَتّى يُدْفَعُوْنَهُمْ اِلى اَبَائِهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী সারা (আঃ) মুসলমানদের শিশুদেরকে জান্নাতের কোন পাহাড়ের পাশে লালন পালন করছেন, ক্বিয়ামতের দিন শিশুদেরকে তাদের পিতার নিকট সমার্পন করার পূর্ব পর্যন্ত তাঁরা তাদের লালন পালন করবেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩৯)। সকল শিশু এখন জান্নাতে প্রতিপালিত হচ্ছে। তাদের প্রতিপালনের দায়িত্বে রয়েছেন ইবরাহীম (আঃ) ও তার স্ত্রী সারা (আঃ)। জান্নাতে আনন্দভোগ করার জন্য মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পাহাড় রয়েছে।
عَنْ ابِىْ مَالِكٍ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ عَنْ اَطْفَالِ الْمُشْرِكِيْنَ قَالَ هُمْ خَدَمُ اَهْلِ الْجَنّةِ.
আবু মালিক (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) -কে মুশরেকদের শিশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, তারা জান্নাতীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৪০)।
عَنْ ابِىْ اَيُّوْبَ قَالَ اتَى النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَعْرَابِىٌّ فَقَالَ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّى اُحِبُّ الْخَيْلَ َاَفِى الْجَنّةِ خَيْلٌ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ اِنْ اُدْخِلْتَ الْجَنّةَ اُتِيْتَ بِفَرَسٍ مِنْ يَاقُوْتَةٍ لَهُ جَنَاحَانِ فَحَمِلَت عَلَيْهِ ثُمَّ طَارَبِكَ حَيْثُ شِئْتَ.
আবু আইয়ূব আনছারী (রা.) বলেন, একজন গ্রাম্য বেদুইন রাসুল(সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আমি ঘোড়া ভালবাসী। জান্নাতে ঘোড়া পাওয়া যাবে কি? নবী করীম(সা.) বললেন, তোমাকে যদি জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়, তাহ’লে তোমাকে মুক্তা দ্বারা তৈরী একটি ঘোড়া দেওয়া হবে। যার দু’টি পাখা থাকবে, তোমাকে তার উপর সওয়ার করানো হবে। তোমার ইচ্ছামত তোমাকে উড়ে নিয়ে যাবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৪৬)।
عَنْ انسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ اِنَّ الْحُوْرَ فِى الْجَنّةِ يَتَغَنّيَنَ يَقُلْنَ نَحْنُ الْحُوْرُ الْحِسَانُ-هَدِيْنَا لِاَزْوَاجٍ كِرَام.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে হুরগণ গান গইবে এবং তারা বলবে, আমরা অতীব সুন্দরী নারী। আমরা আমাদের সম্মানিত স্বামীদের জন্য উপহার (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৫৬)।
عَنْ علىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ اِنّ فِى الْجَنّةِ لَمُجْتَمَعًا لِلْحُوْرِ الْعِيْنِ يَرْفَعْنَ بِاَصْوَاتٍ لَمْ تَسْمَعِ الْخَلَائِقُ مِثْلَهَا يَقُلْنَ نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيْدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبَأْسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ طُوْبى لِمَنْ كَانَ لَنَا وُكُنّا لَهُ.
আলী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতের হুরগণ এক জায়গায় সমবেত হয়ে উঁচু কণ্ঠে এমন সুন্দর লহরীতে গান বলবে। সৃষ্টি জীব সে ধরনের লহরী কখনও শুনেনি। তারা বলবে আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না। আমরা সর্বদা সুখ স্বচ্ছন্দে বসবাস করব। কখনও দুঃখ দুশ্চিন্তায় পতিত হব না। অতএব চিরধন্য সে, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি (তিরমিযী, আলবানী মিশকাত হা/৫৬৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪০৭)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّ فِى الْجَنّةِ شَجَرَة يَسِيْرُ الرّاكِبُ الْجَوَادُ الْمُضْمِرُ السَّرِيْعُ مِئَةَ عَامٍ مَا يَقْطَعُهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন বড় গাছ রয়েছে। কোন ব্যক্তি দ্রুতগামী ঘোড়ায় আরোহণ হয়ে একশত বছর চললেও তার ছায়া শেষ হবে না’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৬৩)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَةٌ لَاتَرَى اَعْيُنُهُمْ النّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ حَرَسَتْ فِى سَبِيْلِ اللهِ وَعَيْن غَضَت عَنْ مَحَارِمِ اللهِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের চক্ষু কিয়ামতের দিন জাহান্নাম দেখবে না। ১. এমন চক্ষু যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে ২. এমন চক্ষু যে আল্লাহর রাস্তায় জেগে থাকে এবং ৩. এমন চক্ষু যে বেগানা মহিলাকে দেখে নীচু হয়ে যায় (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৭৭)।
عَنْ عُتْبَةَ بْنِ عَبْد السُّلَمِىِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَنّةُ لَهَا ثَمَانِيَةُ اَبْوَابٍ وَالنَّارُ لَهَا سَبْعَةُ اَبْوَابٍ.
উতবা ইবনে আবদে সুলামী (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে এবং জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৭৪)। প্রকাশ থাকে যে, জান্নাত আটটি নয় বরং জান্নাত একটি তার দরজা আটটি। অনুরূপ জাহান্নামও ।
عَنْ اَبِى اُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ وَعَدَنِىْ رَبِّىْ اَنْ يُّدْخِلَ الْجَنَّةَ مِنْ اُمَّتِىْ سَبْعِيْنَ اَلْفًا لَاحِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلَاعَذَابَ مَعَ كُلِّ اَلْفٍ سَبْعُوْنَ اَلْفًا وَثَلَاثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِ رَبِّىْ.
আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি, আমার প্রতিপালক আমার সাথে এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্য হ’তে সত্তর হাজার ব্যক্তিকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাদের কোন হিসাব হবে না, তাদের কোন শাস্তিও দেওয়া হবে না। আবার উক্ত প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজার ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তারপর আমার প্রতিপালকের তিন অঞ্জলী সমপরিমাণ মানুষকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৫৫৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ বহু মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লার অঞ্জলীতে কত মানুষ জান্নাতে যাবে একথা মানুষ জানে না।
عَنْ ابِىْ اُمَامَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ رَجُلُ الْجَنّةَ فَرَاى عَلى بِابِهَا مَكْتُوْبًا الصَّدَقَةُ بِعَشَرِ اَمْثَالِهَا وَالْقَرَضُ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ.
আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে দেখল জান্নাতের দরজায় লেখা আছে দানের নেকী দশগুণ বাড়ে আর কর্য প্রদানের নেকী ১৮ গুণ বাড়ে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৮১)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় দান ও কর্য উভয়ের প্রতিদান জান্নাত। তবে দান করার চেয়ে কর্য দিলে নেকী বেশি হয়।
عَنْ انسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلْتُ الْجَنّةَ فَاِذَا اَنَا بِقَصْرٍ مِنْ ذَهَبٍ فَقُلْتُ لِمَنْ هَذا الْقَصْرُ قَالُوْا لِشَابٍّ مِنْ قُرَيْشٍ فَظَنَنْتُ اَنّى اَنَا هُوَ فَقُلْتُ وَمَن هُوْ فَقَالُوْا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ قَالَ فَلَوْ لَا مَا عَلِمْتُ مِنْ غَيْرَتِكَ لَدَخَلْتُهُ فَقَالَ عُمَرُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ اَغَارُ.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে পরিদর্শন করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম উচ্চমানের স্বর্ণের একটি প্রাসাদ। আমি বললাম, এটা কার? তারা বলল, এক কুরাইশী যুবকের। আমি মনে করলাম, নিশ্চিত আমিই সেই যুবক হব। আমি পুনরায় বললাম, সে কে? তারা বলল, তিনি হচ্ছেন ওমর বিন খত্তাব (রা.) । নবী করীম(সা.) ওমর (রা.) -কে লক্ষ্য করে বললেন, ওমর! তোমার আত্মমর্যাদা আমার জানা না থাকলে অবশ্যই আমি তোমার ঘরে প্রবেশ করতাম। তখন ওমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আপনার জন্য কি কারো ব্যাপারে আত্মমর্যাদার বিবেচনা করা মানায়? (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৮২)। ওমর (রা.) -এর জন্য খুব উন্নত স্বর্ণের বালাখানা প্রস্ত্তত হয়ে আছে। আর রাসূল(সা.) ওমর (রা.) -এর আত্মমর্যাদা এত বেশি মনে করেন যে, তাঁর ঘরে ঢুকতে তিনি ইতস্তবোধ করেন।
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِى كَرِبَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلشَّهِيْدِ عَنِ اللهِ خِصَالٌ يُغْفَرُ لَهُ فِى اَوَّلِ دَفْعَةٍ مِنْ دَمِهِ وَيُرَى مَقْعَدُهُ مِنَ الْجَنّةِ وَيُحَلّى حُلْيَةُ الْاِيْمَانِ وَيُزَوّجُ اِثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةً مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيأمنُ مِن الْفَزْعِ الاكْبَرِ ويُوْضَعُ عَلى رَاْسِه تَاجٌ الوَقَارِ اليَاقُوْتَةِ مِنْهُ خيْرُ مِنَ الدّنْيَا وَمَافِيها ويُشفَّعُ فِى سَبْعِيْنَ اِنْسَانًا مِنْ اَهْلِ بَيْتِهِ.
মিক্বদাম ইবনে মা‘দীকারাব (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, শহীদদের জন্য আল্লাহর নিকট কয়েকটি বিশেষ অধিকার রয়েছে। ১. তার শরীর থেকে প্রথম রক্তের ফোঁটা ঝরতেই তাকে ক্ষমা করা হয়। ২. তাকে ঐ সময় তার জান্নাতের স্থান দেখানো হয় ৩. তাকে ঈমানের গয়না পরানো হয় ৪. আখিরাতে হুরদের মধ্য হ’তে ৭২ জন নারীর সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে ৫. কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করা হবে। ৬. জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিরাপদে রাখা হবে। ৭. কিয়ামতের মাঠে তাকে মর্যাদার টুপি পরানো হবে যা দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম এবং ৮. তার পরিবারের ৭০ জনের ব্যাপারে সুপারিশ গ্রহণ করা হবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৯৪)। জান্নাতী সাধারণ মুমিন বান্দাগণের তুলনায় শহীদ জান্নাতীগণের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। জান্নাতে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী স্ত্রী হবে ২জন আর সাধারণ স্ত্রী হবে ৭০জন।
عَنْ اَبِى اُمَامَةَ الْبَاهِلِى قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ أَتَانِى رَجُلاَنِ فَأَخَذَا بِضَبْعَىَّ فَأَتَيَا بِى جَبَلاً وَعْرًا فَقَالاَ: اِصْعَدْ فَقُلْتُ: إِنِّى لاَ أُطِيقُهُ فَقَالاَ : إِنَّا سَنُسَهِّلُهُ لَكَ فَصَعِدْتُ حَتَّى إِذَا كُنْتُ فِى سَوَاءِ الْجَبَلِ إِذَا أَنَا بَأَصْوَاتٍ شَدِيدَةٍ فَقُلْتُ : مَا هَذِهِ الأَصْوَاتُ قَالُوا : هَذَا عُوَاءُ أَهْلِ النَّارِ ، ثُمَّ انْطُلِقَا بِى فَإِذَا أَنَا بِقَوْمٍ مُعَلَّقِينَ بِعَرَاقِيبِهِمْ مُشَقَّقَةٌ أَشْدَاقُهُمْ تَسِيلُ أَشْدَاقُهُمْ دَمًا قَالَ قُلْتُ : مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ : هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يُفْطِرُونَ قَبْلَ تَحِلَّةِ صَوْمِهِمْ فَقَالَ : خَابَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ سُلَيْمَانُ : مَا أَدْرِي أَسَمِعَهُ أَبُو أُمَامَةَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْ شَيْءٌ مِنْ رَأْيِهِ؟ ثُمَّ انْطَلَقَ ، فَإِذَا بِقَوْمٍ أَشَدَّ شَيْءٍ انْتِفَاخًا وَأَنْتَنِهِ رِيحًا، وَأَسْوَئِهِ مَنْظَرًا ، فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلاَءِ ؟ فَقَالَ: هَؤُلاَءِ قَتْلَى الْكُفَّارِ، ثُمَّ انْطَلَقَ بِي، فَإِذَا بِقَوْمٍ أَشَدَّ شَيْءٍ انْتِفَاخًا، وَأَنْتَنِهِ رِيحًا، كَأَنَّ رِيحَهُمُ الْمَرَاحِيضُ، قُلْتُ : مَنْ هَؤُلاَءِ ؟ قَالَ : هَؤُلاَءِ الزَّانُونَ وَالزَّوَانِي، ثُمَّ انْطَلَقَ بِي، فَإِذَا أَنَا بِنِسَاءٍ تَنْهَشُ ثُدِيَّهُنَّ الْحَيَّاتُ، قُلْتُ: مَا بَالُ هَؤُلاَءِ ؟ قَالَ : هَؤُلاَءِ يَمْنَعْنَ أَوْلاَدَهُنَّ أَلْبَانَهُنَّ ، ثُمَّ انْطَلَقَ بِي، فَإِذَا أَنَا بِالْغِلْمَانِ يَلْعَبُونَ بَيْنَ نَهْرَيْنِ، قُلْتُ: مَنْ هَؤُلاَءِ ؟ قَالَ: هَؤُلاَءِ ذَرَارِي الْمُؤْمِنِينَ، ثُمَّ شَرَفَ شَرَفًا ، فَإِذَا أَنَا بِنَفَرٍ ثَلاَثَةٍ يَشْرَبُونَ مِنْ خَمْرٍ لَهُمْ ، قُلْتُ: مَنْ هَؤُلاَءِ؟ قَالَ: هَؤُلاَءِ جَعْفَرٌ، وَزِيدٌ، وَابْنُ رَوَاحَةَ، ثُمَّ شَرَفَنِي شَرَفًا آخَرَ، فَإِذَا أَنَا بِنَفَرٍ ثَلاَثَةٍ، قُلْتُ : مَنْ هَؤُلاَءِ ؟ قَالَ : هَذَا إِبْرَاهِيمُ ، وَمُوسَى، وَعِيسَى، وَهُمْ يَنْظُرُوْنَكَ -
আবু উমামা বাহেলী (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছিলেন, আমার নিকট দু’জন ব্যক্তি আসল তারা দু’জন আমার দু’বাহুর মাঝামাঝি ধরে আমাকে এক ভয়াবহ কঠিন পাহাড়ের নিকট নিয়ে আসল। তারা দু’জন বলল, আপনি এ পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমি এ পাহাড়ে উঠতে সক্ষম নই। তারা দু’জন বলল, আমরা আপনাকে পাহাড়ে উঠার কাজটি সহজ করে দিব। আমি উঠলাম, এমনকি পাহাড়ের উপরে চলে আসলাম। হঠাৎ আমি খুব কঠিন আওয়াজ শুনলাম। আমি বললাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের বিলাপ-আর্তনাদ ও কান্না। তারপর তারা আমাকে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ আমি দেখি একদল লোককে পায়ের সাথে বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ফেটে দীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে আছে এবং চোয়াল হ’তে রক্ত ঝরছে। নবী করীম(সা.) বলেন, আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা ঐ সব লোক যারা তাদের ছিয়াম শেষ হওয়ার পূর্বেই ছিয়াম ছেড়ে দিত। ছিয়াম অবস্থায় মিথ্যা কথা বলত। তখন তিনি বললেন, ইহুদী নাছারারা ধ্বংস হোক। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখি কিছু লোক খুব ফুলে ওঠে মোটা হয়ে আছে। আর খুব দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে। তাদের দৃশ্য খুব কাল বিদঘুটে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা ঐ সব লোক যারা কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখি কিছু লোক ফুলে মোটা হয়ে আছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে। এত দুর্গন্ধ যেন তারা শৌচাগার। আমি বললাম, এরা কারা? তারা দু‘জন বলল, এরা হচ্ছে ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল দেখি কিছু মহিলা, প্রচুর সাপ তাদের স্তনগুলিতে বার বার ছোবল মারছে। আমি বললাম এদের কি হয়েছে? এদের এ অবস্থা কেন? তারা বলল, এরা ঐ সব মহিলা, যারা বাচ্চাদের দুধ পান করাতো না। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখি বেশকিছু ছেলে তারা দু নদীর মাঝে খেলা করছে। আমি বললাম, এ সমস্ত ছেলে কে? তারা বলল এগুলি মুমিনদের শিশু। তারপর তারা আমাকে আর একটি উঁচু পাহাড়ে নিয়ে গেল। হঠাৎ দেখি তিনজন মানুষ তারা অতীব মিষ্টি পরিস্কার শরাব পান করছে। আমি বললাম, এ লোকগুলি কে? তারা বলল, এ লোকগুলি হচ্ছে জাফর, যায়েদ ও ইবনে রাওহা (এ তিনজন লোক মুতার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন)। তারপর তারা আমাকে অন্য একটি উঁচু পাহাড়ে নিয়ে গেল, দেখি তিনজন লোক। আমি বললাম, এ লোকগুলি কে? তারা বলল, এ লোকগুলি হচ্ছেন ইবরাহীম, মূসা ও ঈসা (আঃ) তারা আপনার অপেক্ষায় রয়েছেন (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৩০)।
মরনের পর তিনটি ভয়াবহ জায়গা রয়েছে। তার তৃতীয় জায়গা হচ্ছে জাহান্নাম। মানুষের উচিত জাহান্নাম হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাওয়া।
عَنَ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا اسْتَجَارَ عَبْدٌ مِنَ النَّارِ سَبْعَ مَرَّاتٍ فِىْ يَوْمِ اِلَّا قَالَتِ النَّارُ يَارَبِّ اِنَّ عَبْدَكَ فُلَانًا قَدْ اسْتَجَارَكَ مِنِّى فَأَجِرْهُ وَلَايَسْأَلُ اللهَ عَبْدٌ الْجَنَّةَ فِىْ يَوْمٍ سَبْعَ مَرَّاتٍ اِلَّا قَالَتِ الْجَنَّةُ يَارَبِّ اِنَّ عَبْدَكَ فُلَانًا سَأَلَنِىْ فَاَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, কোন মানুষ সাতবার জাহান্নাম হ’তে পরিত্রাণ চাইলে জাহান্নাম বলে, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আপনার ওমক দাস আমার থেকে আপনার নিকট পরিত্রাণ চেয়েছে। আপনি তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আর কোন বান্দা আল্লাহর নিকট সাতবার জান্নাত চাইলে, জান্নাত বলে, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আপনার ওমুক বান্দা আমাকে চেয়েছে। আপনি দয়া করে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৫০৬)।
عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَأَلَ اللهَ الْجَنَّةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ الْجَنَّةُ اللهُمَّ اَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ. وَمَنِ اسْتَجَارَ مِنَ النَّارِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتِ النَّارُ اللهُمَّ اجِرْهُ مِنَ النَّارِ.
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তিনবার জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চায়, তখন জাহান্নাম বলে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দাও (ইবনে মাজাহ হা/৪৩৪০, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেকের উচিত দিনে তিনবার অথবা সাতবার করে জান্নাত চাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। জান্নাত চাওয়ার শব্দগুলি এরূপ হ’তে পারে اللهُمَّ اِنِّى أسْئَلُكَ جَنَّةَ الْفِرْدَوْسِ ‘হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান কর’। আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার শব্দগুলি এরূপ হ’তে পারে اللهُمَّ أجِرْنِىْ مِنَ النَّارِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও’
এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ‘এই সেই জাহান্নাম, যার ব্যাপারে তোমাদেরকে সাবধান ও সতর্ক করা হচ্ছিল। তোমরা দুনিয়াতে যে কুফরী করতেছিলে, তার প্রতিফল হিসাবে এখন এ জাহান্নমে প্রবেশ কর’ (ইয়াসীন ৬৪)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে দেয়ার সময় পৃথিবীর কথা স্মরণ করিয়ে অপমান করে জাহান্নামে দেয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
اَذَلِكَ خَيْرٌ نُزُلًا اَمْ شَجَرَةٌ الزَّقُّوْمِ اِنَّا جَعَلْنَاهَا فِتْنَةَ للِّظَّالِمِيْنَ اِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِىْ اَصْلِ الْجَحِيْمِ طَلْعُهَا كَاَنَّهُ رُؤُسٌ الشَّيَاطِيْنِ فَاِنَّهُمْ لَاكِلُوْنَ مِنْهَا فَمَا لِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ ثُمَّ اِنَّ لَهُمْ عَلَيْهَا لَشَوْبًا مِنْ حَمِيْمٍ ثُمَّ اِنَّ مَرْجِعَهُمْ لَااِلَى الْجَحِيْمِ.
‘বল, জান্নাতের এ বড় সফলতা উত্তম, না এ যাক্কুম গাছ? আমি এ যাক্কুম গাছটি অত্যাচারীদের জন্য বিপদজনক করেছি। এটা এমন একটা গাছ যা জাহান্নামের তলদেশ হ’তে বের হয়। এর ছড়াগুলি যেন শয়তানের মাথা। জাহান্নামীরা তা খাবে এবং তা দ্বারা পেট পূর্ণ করবে। তারপর পান করার জন্য তাদেরকে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। তারপর তারা সে জাহান্নামের আগুনের দিকেই ফিরে যাবে’ (ছাফফাত ৬৩-৬৯)। যাক্কুম এক প্রকার গাছ। এ গাছ আরব দেশের তেহামা অঞ্চলে হয়। তার স্বাদ তিক্ত ও কটু আর গন্ধ অসহ্যকর। ভাঙ্গলে দুধের মত রস বের হয়। শরীরে লাগলে ফোস্কা পড়ে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
اِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّوْمِ طَعَامُ الْاَثِيْمِ كَالْمُهْلِىْ يَغْلِىْ فِى الْبُطُوْنِ كَغَلْىِ الْحَمِيْمِ خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ اِلَى سَوَاءِ الْجَحِيْمِ ثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ ذُقْ.
‘যাক্কুম গাছ হবে পাপীদের খাদ্য। তেলের তলানীর মত। এ খাদ্য পেটের মধ্যে এমনভাবে উথলে উঠবে, যেমন টগবগ করে ফুটন্ত পানি। (ফেরেশতাদের বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে হেচড়ে নিয়ে যাও জাহান্নামের মাঝখানে। তারপর ঢেলে দাও তার মাথার উপর টগবগ করা ফুটন্ত পানি আর বলা হবে এখন গ্রহণ কর এর স্বাদ’ (দুখান ৪৫-৪৭)। وَسُقُوْا مَاءً حَمِيْمًا فَقَطّعَ اَمْعَائَهُمْ- ‘তাদেরকে এমন উত্তপ্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ী-ভূঁড়ি পর্যন্ত ছিন্ন ভিন্ন করে দিবে’ (মুহাম্মাদ ১৫)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, اِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِى ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِى النَّارِ عَلى وُجُوْهِهِمْ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ. ‘অপরাধী লোকেরা ভুল ধারণায় নিমজ্জিত এবং তাদের বিবেক বুদ্ধি তিরোহিত যেদিন তাদেরকে উল্টাভাবে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেদিন তাদেরকে বলা হবে এখন সাকার নামক জাহান্নামের স্বাদ আস্বাদন কর’ (কামার ৪৭-৪৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
ثُمَّ اِنَّكُمْ اَيُّهَا الضَّالُّوْنَ الْمُكَذِّبُوْنَ لَأَكِلُوْنَ مِّنْ شَجَرٍ مِنْ زَقُّوْمِ فَمَالِئُوْنَ مِنْهَا الْبُطُوْنَ فَشَارِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيْمِ فَشَارِبُوْنَ شُرْبَ الْهِيْمِ هذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّيْنِ.
‘তাহলে হে পথভ্রষ্ট ও অবিশ্বাসকারী লোকেরা! তোমরা যাক্কুম গাছের খাদ্য অবশ্যই খাবে। তা দ্বারা তোমরা পেট ভর্তি করবে। আর ফুটন্ত টগবগে পানি পিপাসায় কাতর উটের ন্যায় পান করবে। এটাই হচ্ছে অপরাধীদের জন্য শেষ বিচারের দিনে মেহমানের খাদ্য (ওয়াকিয়া ৫৩-৫৬)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
يَالَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ مَا اَغْنَى عَنّى مَالِيَة هلَكَ عَنّى سُلْطَانِيَة خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ ثُمَّ الْجَحِيْمَ صَلُّوْهُ ثُمّ فِىْ سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ اِنّهُ كَانَ لَايُؤْمِنُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَلَايَحُضّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ ههُنَا حَمِيْمٌ وَلَا طَعَامٌ اِلّا مِنْ غِسْلِيْنَ لَا يَأْكُلُهُ اِلّا الْخَاطِئُوْنَ.
‘অপরাধী ক্বিয়ামতের মাঠে বলবে, হায়! আফসোস দুনিয়ার মরণই যদি চূড়ান্ত হত! আজ আমার অর্থ-সম্পদ কোন কাজে আসল না। আমার সব ক্ষমতা-আধিপত্য প্রভূত্ব শেষ হয়ে গেল। বলা হবে তাকে ধর তার গলায় লোহার শিকল দিয়ে ফাঁস লাগাও। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। আর তাকে ৭০ হাত দীর্ঘ শিকলে বেঁধে দাও। এ তো আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে নি এবং মিস্কীনকে খাদ্য দেওয়ার প্রতি মানুষকে উৎসাহ দান করেনি। এ কারণেই আজ এখানে তার কোন সহযোগী বন্ধু নেই। আর ক্ষত নিঃসৃত রক্ত পুজ ছাড়া তার আর কোন খাদ্য নেই। নিতান্ত অপরাধী ছাড়া এ খাদ্য আর কেউ খায় না’ (হাককাহ ২৭-৩৭)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
كَلّا اِنّهَا لَظى نَزَّاعَةً لّلِشَّوَى تَدْعُوْ مَنْ اَدْبَرَ وَتَوَلّى وَجَمَعَ فَاَوْعَى.
‘কক্ষণই নয়। তাতো হবে তীব্র উৎক্ষিপ্ত আগুনের লেলিহান শিখা। যা শরীরকে ঝলসিয়ে দিবে। আর ঐ সব ব্যক্তিকে নিজের দিকে ডাক দিবে যারা সত্য হ’তে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পিঠ প্রদর্শন করেছে, এবং অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করেছে ও গুণে গুণে সংরক্ষণ করে রেখেছে’ (মা‘আরিজ ১৬)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, اِنّ لَدَيْنَا اَنْكَالًا وَجحِيْمًا وَطَعَامًا ذَا غُصّةٍ وَعَذَابًا اَلِيْمًا নিশ্চয়ই আমার নিকট তাদের জন্য রয়েছে দূর্বহ বেড়ী, আর দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন, গলায় আটকে যাওয়া খাদ্য এবং কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি (মুযাম্মেল ১২-১৩)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, খুব ভারী ও দুর্বহ বেড়ী পাপাচারী অপরাধী লোকের পায়ে বেঁধে দেওয়া হবে। এটা হচ্ছে শাস্তির বেড়ি শাস্তির উপর শাস্তি। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, سَاُصْلِيْهِ سَقَرَ وَمَا َادْركَ مَا سَقَرَ لَا تُبْقِىْ وَلَا تَذَرْ لَوَّاحَةٌ لِلْبَشَرِ عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ. খুব শীঘ্রই আমি তাকে সাকার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর আপনি কি জানেন সে সাকার নামক জাহান্নাম কি? তা এমন একটি জাহান্নাম যা কাউকেও জীবিত রাখে না আবার মরা অবস্থায় ছেড়েও দেয় না। জাহান্নামীদের চামড়া ঝলসিয়ে দেয়। সে জাহান্নামে কর্মচারী হিসাবে ১৯জন ফেরেশতা নিয়োজিত আছে (মুদ্দাসসির ২৬-৩০)। এ কথাটি আল্লাহ অন্য আয়াতে এভাবে বলেছেন. لاَيَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْي সে সেখানে মরবেও না বাঁচবেও না (আলা ১৩)। জাহান্নাম এমন একটি কঠিন ও জটিল জায়গা যেখানে মানুষের মরণও হবে না বাঁচতেও পারবে না। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
إِنَّ جَهَنّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا لِلطّاغِيْنَ مَآبًا لّابِثِيْنَ فِيْهَا اَحْقَابًا لَايَذُوْقُوْنَ فِيْهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا اِلّا حَمِيْمًا وَغَسّاقًا جَزَاءً وِّفَاقًا اِنَّهُمْ كَانُوْا لَاَيْرجُوْنَ حِسَابًا وَكَذّبُوْا بِايَتِنَا كِذّاَبًا وَكُلَّ شَيْئٍ اَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا فَذُوْقُوْا فَلَنْ نَزِيْدَكُمْ اِلّاعَذَابًا.
‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম একটি ফাঁদ। আল্লাহদ্রোহীদের জন্য আশ্রয়স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোন শীতল ও সুপেয় জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করবে না। তাদের পান করার জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি এবং ক্ষত হ’তে নির্গত রক্তপুঁজ। এ হবে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল। তারা তো হিসাব-নিকাশের কোন প্রকার আশা পোষণ করত না। বরং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে প্রত্যাখ্যান করত। অথচ আমি তাদের প্রত্যেকটি বিষয় গুণে গুণে লিখে রেখেছিলাম। অতএব, এখন স্বাদ গ্রহণ কর। আমি একমাত্র তোমাদের শাস্তিই বেশি করব’ (নাবা ২১-৩০)। অত্র আয়াতে একটি শব্দ রয়েছে غَسَّاقٌ গাসসাক্ব হচ্ছে কঠিন নির্যাতনের ফলে চক্ষু এবং চামড়া হ’তে যে সব রস নিঃসৃত হয় তাকে গাসসাক্ব বলে, আর এ খানে পুঁজ মিশ্রিত রক্তকে বুঝানো হয়েছে।
وُجُوْهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ تَصْلى نَارًا حَامِيَةٌ تُسْقَى مِنْ عَيْنٍ اَنِيَةٍ لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ اِلّا مِنْ َضرِيْعٍ لَا يُسْمِنُ وَلَا ُيْغْنِيىْ مِنْ جُوْعٍ.
‘সেদিন কতক মুখমণ্ডল ভীত সন্ত্রস্ত হবে। কঠোর শ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্তহবে, তীব্র অগ্নি শিখায় জ্বলে ছাই হয়ে যাবে। ফুটন্ত ঝর্ণার পানি তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে। কাঁটাযুক্ত শুস্ক ঘাস ছাড়া আর অন্য কোন খাদ্য তাদের জন্য থাকবে না। তা তাদের পরিপুষ্টও করবে না এবং তাদের ক্ষুধাও নিবারণ করবে না’ (গাশিয়াহ ২-৭)।
কুরআনের এক স্থানে বলা হয়েছে, ক্ষত স্থান হ’তে নির্গত রক্ত পুঁজ ছাড়া কোন খাদ্য দেওয়া হবে না। আর এখানে বলা হয়েছে কাঁটাযুক্ত শুস্ক ঘাস ছাড়া তারা খাবার জন্য আর কিছু পাবে না। এসব কথার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ এগুলি সব কঠিন শাস্তির মাধ্যম। তবে এটাও হ’তে পারে জাহান্নামে অপরাধীদের অপরাধ অনুপাতে রাখা হবে এবং তাদের বিভিন্নভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
وَاَمّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ فَاُمُّهُ هَاوِيَةٌ وَمَا اَدْرَكَ مَا هِيَةُ نَارٌ حَامِيَةُ.
‘আর যার নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তার আশ্রয়স্থল হবে গভীর গহবর হাবীয়া নামক জাহান্নাম। আর আপনি কি জানেন, হাবীয়া নামক জাহান্নাম কি জিনিস? তা হচ্ছে জ্বলন্ত উত্তপ্ত আগুন’ (ক্বারিয়াহ ১০-১১)। هاوية শব্দের অর্থ হচ্ছে উচু স্থান হ’তে নীচে পতিত হওয়া। আর জাহান্নামকে هاوية বলার কারণ হচ্ছে হাবীয়া জাহান্নাম খুবই গভীর হবে এবং জাহান্নামীদেরকে উপর থেকে ফেলে দেওয়া হবে।
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ الذَِّىْ جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ يَحْسَبُ أَنّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ كَلّا لَيُنْبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ وَمَا أدْرَكَ مَا لْحُطَمَةِ نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ الَّتِىْ تَطَّلِعُ عَلى الْأَفْئِدَةِ اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ فِىْ عَمَدٍ مُمَدَّةٌ.
‘নিশ্চিত ধ্বংস, এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সামনা সামনি লোকদের গালি দেয় এবং পিছনে গিবত করাতে অভ্যস্ত। যে ব্যক্তি অর্থ সম্পদ সঞ্চয় করে এবং তা গুণে গুণে রাখে তার জন্যও ধ্বংস নিশ্চিত। সে মনে করে তার অর্থ-সম্পদ তার কাছে চিরকাল থাকবে, কক্ষনই নয়। সে ব্যক্তি তো চূর্ণ-বিচূর্ণকারী ‘হুতামা’ নামক জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর আপনি কি জানেন সে চূর্ণ-বিচূর্ণকারী ‘হুতামা’ কি? তা হচ্ছে প্রচন্ডভাবে জ্বলন্ত উত্তপ্ত উৎক্ষিপ্ত আগুন, যা অন্তর পর্যন্ত স্পর্শ করবে। আর সে আগুনকে তাদের উপর ঢেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর এটা এমন অবস্থায় হবে যে, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভে পরিবেষ্টিত হবে’ (হুমাযাহ)। অত্র সূরায় যে ‘হুতামা’ শব্দটি রয়েছে তার অর্থ ভেঙ্গে ফেলা, নিস্পেষিত করা ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করা। ‘হুতামা’ জাহান্নামের একটি নাম। যে এ জাহান্নামে যাবে তাকে চূর্ণ-বিচুর্ণ ও ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলবে। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَّاءٍ صَدِيْدٍ يَتَجَرَّعُهُ وَلاَ يَكَادُ يُسِيْغُهُ وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيْظٌ.
‘অতঃপর তার পিছনে জাহান্নাম তার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে। সেখানে তাকে পুঁজ মিশানো পানি পান করতে দেওয়া হবে। সে খুব কষ্ট করে ঢোক গিলে তা পান করার চেষ্টা করবে, আর খুব কমই ঢোক গিলতে পারবে। মরণের ছায়া তাকে চারিদিক থেকে আচ্ছন্ন করে ধরবে, কিন্তু সে মরবে না। আর পিছন হ’তে এক কঠিন শাস্তি তার উপর চেপে বসবে’ (ইবরাহীম ১৬-১৭)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ فَأُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْا أَنْفُسَهُمْ فِىْ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ-
অতঃপর ক্বিয়ামতের মাঠে যাদের নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তারাই হবে সে সমস্ত লোক যারা নিজেদেরকে মহা ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, তারা চিরদিন জাহান্নামে থাকবে। আগুন তাদের মুখের চামড়া দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে’ (মুমিনূন ১০৩-১০৪)। অত্র আয়াতে ‘কালিহুন’ ‘কালিহুন’ এমন চেহারাকে বলা হয়, যার চামড়া আলাদা করা হয়েছে এবং দাঁত বের হয়ে পড়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
اِنَّا اَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِيْنَ نَارًا اَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَاِنْ يَسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوُجُوْهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَائَتْ مُرْتَفَقًا.
‘আমি অমান্যকারী অত্যাচারীদের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করে রেখেছি, যার লেলিহান শিখা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছে। সেখানে তারা যদি পানি পান করতে চায়, তাহ’লে এমন পানি তাদেরকে পরিবেশন করা হবে, যা তেলপাত্রের তলানীর মত হবে এবং তাদের মুখমণ্ডল ভাজাভাজা করে দিবে। এ কতইনা নিকৃষ্ট পানীয়, আর কতই না খারাপ আশ্রয়স্থল’ (কাহাফ ২৯)। আয়াতে ‘মুহল’ শব্দের অর্থ এরূপ হ’তে পারে তেলপাত্রের তলানী, ভূগর্ভস্ত গলিত ধাতু, যা গরমের তীব্রতার কারণে গলে প্রবাহিত হয় পুঁজ ও রক্ত। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ. ‘সেদিনের কথা স্মরণ কর যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব তুমি কি পূর্ণ ভর্তি হয়েছ? তখন সে বলবে, আর কিছু আছে কি’ (ক্বাফ ৩০)। এ বাক্যের তাৎপর্য এমন হ’তে পারে জাহান্নাম পাপীদের উপর ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে ফোঁস-ফোঁস করে ফুঁসছে আর বলছে আরও আছে নাকি, থাকলে নিয়ে আস যত থাকে, সমস্ত অপরাধীকে গ্রাস করে নিব কাউকে রেহাই দিব না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحَاجَّتْ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ النَّارُ اُوْثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِيْنَ وَالْمُتَجَبِّرِيْنَ وَقَالَتِ الْجَنَّةُ فَمَالِى لاَ يَدْخُلُنِىْ اِلاَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ وَغِرَّتُهُمْ قَالَ اللهُ لِلْجَنَّةِ اِنَّمَا اَنْتِ رَحْمَتِىْ اَرْحَمُ بِكِ مَنْ اَشَاءُ مِنْ عِبَادِىْ وَقَالَ لِلنَّارِ اِنَّمَا اَنْتَ عَذَابِىْ اُعَذِّبُ بِكِ مَنْ اَشَاءُ مِنْ عِبَادِىْ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْؤُهَا فَاَمَّا النَّارُ فَلاَ تَمْتَلِئُ حَتىَّ يَضَعَ اللهُ رِجْلَهُ تَقُوْل قَطْ قَطْ قَطْ فَهُنَالِكَ تَمْتَلِئُ وَيُزْوَى بَعْضُهَا اِلَى بَعْضٍ فَلاَ يَظْلِمُ اللهُ مِنْ خَلْقِهِ اَحَدًا وَاَمَّا الْجَنَّةُ فَاِنَّ اللهَ يُنْشِئُ لَهَا خَلْقًا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে তাদের প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করল, ব্যাপার কি আমাকে শুধু অহংকারী ও স্বৈরাচারীদের জন্য নির্ধরণ করা হ’ল কেন? আর জান্নাত বলল, আমার মধ্যে কেবল মাত্র দুর্বল নিম্ন স্তরের ও নির্বোধ লোকেরাই প্রবেশ করবে কেন? তখন আল্লাহ জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার দয়ার বিকাশ। এজন্য আমার যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা তার প্রতি অনুগ্রহ করব। অতএব, আমার বান্দা হ’তে যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা তাকে শান্তি দিব। আর জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার শাস্তির বিকাশ। অতএব, আমার বান্দা হ’তে যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা তাকে শাস্তি দিব এবং তোমাদের প্রত্যেককে পরিপূর্ণ করা হবে। অবশ্য জাহান্নাম ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাঁর পা তার মধ্যে না রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট, যথেষ্ট, যথেষ্ট হয়েছে। এ সময় জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং তার এক অংশকে আরেক অংশের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হবে। বস্তত আল্লাহ্ তার সৃষ্টির কারও প্রতি সামান্য পরিমাণও অত্যাচার করবেন না। আর জান্নাতের বিষয়টি হ’ল তার খালি অংশ পূরণের জন্য আল্লাহ নতুন নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫০)। জাহান্নাম ও জান্নাত নিজ নিজ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করলে আল্লাহ তার কারণ উল্লেখ করবেন। জাহান্নাম মানুষ দ্বারা পূর্ণ হবে না। তখন আল্লাহ স্বীয় পা জাহান্নামের উপর রাখবেন তখন জাহান্নাম পরিপূর্ণ হবে এবং জাহান্নাম আল্লাহকে বলবে, আমি এখন পূর্ণ। ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ অত্যাচার করবেন না। সেদিন জান্নাত পূরণের জন্য আল্লাহ নতুন নতুন প্রাণী সৃষ্টি করবেন।
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تَزَالُ جَهَنَّمُ يُلْقَى فِيْهَا وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيْهَا قَدَمَهُ فَيَنْزَوِى بَعْضُهَا اِلَى بَعْضٍ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ وَلاَ يَزَالُ فِى الْجَنَّةِ فَضْلٌ حَتَّى يُنْشِئَ اللهُ لَهَا خَلْقًا فَيُسْكِنُهُمْ فَضْلَ الْجَنَّةِ-
আনাস (রা.) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম(সা.) বলেছেন, জাহান্নামে অনবরত মানুষ ও জিনকে নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম অনবরত বলতে থাকবে, আর কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর পবিত্র পা তার উপর না রাখছেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ঠ হয়েছে, যথেষ্ঠ হয়েছে। আর জান্নাতে মানুষ প্রবেশের পর অতিরিক্ত স্থান খালি থেকে যাবে। তখন আল্লাহ ঐ খালি জায়গার জন্য নতুন নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন। তাদেরকে জান্নাতের এ খালি জায়গায় রাখবেন (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫১)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَمَّا خَلَقَ اللهُ الْجَنَّةَ قَالَ لِجِبْرَئِيْلَ اِذْهَبْ فَانْظُرْ اِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ اِلَيْهَا وَاِلَى مَا اَعَدَّ اللهُ لِاَهْلِهَا فِيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ اَىْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَايَسْمَعُ بِهَا اَحَدٌ اِلَّا دَخَلَهَا ثُمَّ حَفَهَا بِالْمَكَارِهِ ثُمَّ قَالَ يَاجِبْرَئِيْلُ اِذْهَبْ فَانْظُرْ اِلَيْهَا قَالَ فَذَهَبَ فَنَظَرَ اِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ اَىْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيْتُ اَنْ لَايَدْخُلَهَا اَحَدٌ قَالَ فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ النَّارَ قَالَ يَاجِبْرَئِيْلُ اِذْهَبْ فَانْظُرْ اِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ اِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ اَىْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَايَسْمَعُ بِهَا اَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا فَحَّفَهَا بِالشَّهْوَاتِ ثُمَّ قَالَ يَا جِبْرَئِيْلُ اِذْهَبْ فَانْظُرْ اِلَيْهَا قَالَ فَذَهَبَ فَنَظَرَ اِلَيْهَا فَقَالَ اَىْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيْتُ اَنْ لَا يَبْقَى اَحَدٌ اِلَّا دَخَلَهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন জান্নাত তৈরী করলেন, তখন জিবরীলকে বললেন, যাও জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে জান্নাত এবং জান্নাতের অধিবাসীদের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রস্তত করছেন, সবকিছু দেখে এসে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! যে কোন ব্যক্তি জান্নাতের এ সুব্যবস্থার কথা শুনবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশের আশা আকাঙ্ক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহ জান্নাতের চারিদিকে কষ্ট দ্বারা ঘেরে দিলেন, তারপর পুনরায় জিবরাঈল (আঃ)কে বললেন, হে জিবরাঈল আবার যাও এবং জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে জান্নাত দেখে এসে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! এখন যা কিছু দেখলাম! তাতে জান্নাতে প্রবেশের পথ যে কি কষ্টকর! তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে আমার আশংকা হচ্ছে যে, জান্নাতে কোন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে না। তারপর রাসূল(সা.) বললেন, অতঃপর আল্লাহ জাহান্নামকে তৈরী করলেন এবং বললেন, হে জিবরাঈল যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি গিয়ে জাহান্নাম দেখে এসে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম! যে কেউ এ জাহান্নামের ভয়াবহ অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও তাতে প্রবেশ করতে চাইবে না। অতঃপর আল্লহ জাহান্নামের চারদিক প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্ত্ত দ্বারা ঘেরে দিলেন এবং জিবরাঈল (আঃ)-কে বললেন, আবার যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি গেলেন এবং দেখে বললেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইয্যতের কসম করে বলছি! আমার আশংকা হচ্ছে সকলেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৯৬, হাদীছ হাসান; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫২)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাত খুব আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাসের জায়গা যা দেখলে সকলের যাওয়ার আশা আকাঙ্খা জাগবে। তবে জান্নাতে যাওয়া কষ্টকর। কঠোর নীতি পালনের নাম জান্নাত। অনুরূপ ভয়ংকর বিভীষিকাময় কঠিন জায়গার নাম জাহান্নাম। সেখানে কেউ যেতে চাইবে না। তবে তা মনের প্রবৃত্তি দ্বারা সাজানো আছে। এজন্য জিবরাঈল (আঃ) আশংকা করেছেন মানুষ কি তার প্রবৃত্তির বিরোধিতা করতে পারবে। মানুষ চায় অবৈধ পয়সা উপার্জন করতে, মানুষ চায় অবৈধভাবে নারী ভোগ করতে। নারীরা চায় নগ্ন হয়ে চলতে, মানুষের প্রবৃত্তি চায় সবধরনের নিষিদ্ধ কাজগুলি করতে। মানুষ কি তার প্রবৃত্তির কঠোর বিরোধিতা করতে সক্ষম। এজন্য তো নবী করীম(সা.) বলেছেন, সবচেয়ে বড় মুজাহিদ হচ্ছে সেই, যে তার প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করতে পারে।
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا آدَمُ. يَقُولُ لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، فَيُنَادِى بِصَوْتٍ إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ بَعْثًا إِلَى النَّارِ. قَالَ يَا رَبِّ وَمَا بَعْثُ النَّارِ قَالَ مِنْ كُلِّ أَلْفٍ- أُرَاهُ قَالَ- تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ فَحِينَئِذٍ تَضَعُ الْحَامِلُ حَمْلَهَا وَيَشِيبُ الْوَلِيدُ (وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيدٌ). فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَى النَّاسِ حَتَّى تَغَيَّرَتْ وُجُوهُهُمْ ، فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ، وَمِنْكُمْ وَاحِدٌ، ثُمَّ أَنْتُمْ فِى النَّاسِ كَالشَّعْرَةِ السَّوْدَاءِ فِى جَنْبِ الثَّوْرِ الأَبْيَضِ، أَوْ كَالشَّعْرَةِ الْبَيْضَاءِ فِى جَنْبِ الثَّوْرِ الأَسْوَدِ، وَإِنِّى لأَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ. فَكَبَّرْنَا ثُمَّ قَالَ ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ. فَكَبَّرْنَا ثُمَّ قَالَ : شَطْرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ. فَكَبَّرْنَا .
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন, হে আদম! তখন আদম (আঃ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক আমি আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। তখন উঁচু কণ্ঠে চিৎকার করে বলা হবে ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হ’তে জাহান্নামীদের বের করে দিন। আদম (আঃ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন। ঐ সময় গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভ খসে পড়বে, বাচ্চারা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং আপনি মানুষকে নেশাগ্রস্ত মনে করবেন অথচ তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। কিন্তু আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি দেখে এরূপ অবস্থা হবে। এ বক্তব্য মানুষের নিকট খুব কঠিন ও জটিল হল, এমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন নবী করীম(সা.) বললেন, দেখ ইয়াজুজ মাজুজ সম্প্রদায় থেকে হবে জন। আর তোমাদের মধ্য থেকে হবে একজন। তারপর বললেন, তোমরা মানুষের মধ্যে সংখ্যায় এত কম হবে সাদা বলদের গায়ে একটি কাল লোম যেমন, অথবা বলেছেন, কাল বলদের গায়ে একটি সাদা লোম যেমন। আর অবশ্যই আমি আশা রাখি তোমরা জান্নাতীদের চার ভাগের এক ভাগ হবে। তখন আমরা আল্লাহু আকবার বললাম। তিনি আবার বললেন, জান্নাতবাসীদের তিনভাগের এক ভাগ তোমরা, আমরা বললাম, আল্লাহু আকবার। তিনি আবার বললেন, জান্নাতবাসীদের অধিক তোমরাই হবে। তখন আমরা বললাম, আল্লাহু আকবার (বুখারী হা/৪৭৪১)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُجِبَتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُجِبَتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জাহান্নামকে মনের প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনা দ্বারা ঢেকে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে নিয়ম-নীতি ও বিপদ-মুছীবত দ্বারা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩৩)। হাদীছের মর্ম হ’ল প্রবৃত্তি বা কামনা-বাসনার পরিণাম জাহান্নাম। আর প্রবৃত্তির চাহিদাকে দমন করে খুব কষ্ট করে নিয়ম-নীতি পালন করার পরিণাম জান্নাত।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَارُكًُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءً مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيْلَ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةٌ قَالَ فُضِّلَتْ كُلُّهُنَّ بِتِسْعَةٍ وَّسِتِّيْنَ جُزْءً كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, তোমাদের ব্যবহৃত আগুনের উত্তাপ জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! জাহান্নামীদের শাস্তি প্রদানের জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ঠ ছিল। নবী করীম(সা.) বললেন, দুনিয়ার আগুনের উপর তার সমপরিমাণ তাপসম্পন্ন জাহান্নামের আগুন আরো ঊনসত্তরগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪২১)।
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤْتَى جَهَنَّمُ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُوْنَ اَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُوْنَ اَلْفَ مَلَكٍ تَجُرُّوْنَهَا.
ইবনে মাস্উদ (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় টেনে নিয়ে যাওয়া হবে যে, তার সত্তর হাজার লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবেন। তাঁরা জাহান্নামকে টেনে হেঁচড়ে বিচারের মাঠে উপস্থিত করবেন (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪২২)। এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَجِيْئَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْاِنْسَانُ وَاَنَّى لَهُ الذَّكْرَى. ‘তোমরা সেদিনকে স্বরণ কর যেদিন জাহান্নামকে টেনে হেঁচড়ে মানুষের সামনে নিয়ে আসা হবে, সেদিন মানুষের চেতনা ফিরবে, কিন্তু চেতনা ফিরে কোন লাভ হবে না’ (ফজর ২৪)। জাহান্নাম এমন কিছু যাকে স্থানান্তর করা যায়। জাহান্নামকে টেনে মানুষের সামনে আনা হবে যেখানে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে। আর এ জাহান্নামের উপর পুলসিরাত নির্মাণ করা হবে।
عَنْ نُعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَهْوَنَ اَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلاَنِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ يَغْلِى مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِى الْمِرْجَلُ مَا يُرَى اَنَّ اَحَدًا اَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَاِنَّهُ لَاَهْوَنُهُمْ عَذَابًا.
নো’মান ইবনে বাশীর (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ শাস্তি ঐ ব্যক্তির হবে যাকে আগুনের ফিতাসহ দু’টি জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ এমনভাবে ফুটতে থাকবে যেমন জ্বলন্ত চুলার উপর তামার পাত্র ফুটতে থাকে। সে মনে করবে তার চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কেউ ভোগ করছে না। অথচ সেই হবে সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪২৩)। দু’টি আগুনের জুতার কারণে যদি মানুষের এ অবস্থা হয় তাহ’লে যে ব্যক্তি সর্বদা আগুনের মধ্যে থাকবে তার অবস্থা কি হ’তে পারে।