লগইন করুন
وُجُوْهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ تَصْلى نَارًا حَامِيَةٌ تُسْقَى مِنْ عَيْنٍ اَنِيَةٍ لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ اِلّا مِنْ َضرِيْعٍ لَا يُسْمِنُ وَلَا ُيْغْنِيىْ مِنْ جُوْعٍ.
‘সেদিন কতক মুখমণ্ডল ভীত সন্ত্রস্ত হবে। কঠোর শ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্তহবে, তীব্র অগ্নি শিখায় জ্বলে ছাই হয়ে যাবে। ফুটন্ত ঝর্ণার পানি তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে। কাঁটাযুক্ত শুস্ক ঘাস ছাড়া আর অন্য কোন খাদ্য তাদের জন্য থাকবে না। তা তাদের পরিপুষ্টও করবে না এবং তাদের ক্ষুধাও নিবারণ করবে না’ (গাশিয়াহ ২-৭)।
কুরআনের এক স্থানে বলা হয়েছে, ক্ষত স্থান হ’তে নির্গত রক্ত পুঁজ ছাড়া কোন খাদ্য দেওয়া হবে না। আর এখানে বলা হয়েছে কাঁটাযুক্ত শুস্ক ঘাস ছাড়া তারা খাবার জন্য আর কিছু পাবে না। এসব কথার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ এগুলি সব কঠিন শাস্তির মাধ্যম। তবে এটাও হ’তে পারে জাহান্নামে অপরাধীদের অপরাধ অনুপাতে রাখা হবে এবং তাদের বিভিন্নভাবে শাস্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
وَاَمّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ فَاُمُّهُ هَاوِيَةٌ وَمَا اَدْرَكَ مَا هِيَةُ نَارٌ حَامِيَةُ.
‘আর যার নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তার আশ্রয়স্থল হবে গভীর গহবর হাবীয়া নামক জাহান্নাম। আর আপনি কি জানেন, হাবীয়া নামক জাহান্নাম কি জিনিস? তা হচ্ছে জ্বলন্ত উত্তপ্ত আগুন’ (ক্বারিয়াহ ১০-১১)। هاوية শব্দের অর্থ হচ্ছে উচু স্থান হ’তে নীচে পতিত হওয়া। আর জাহান্নামকে هاوية বলার কারণ হচ্ছে হাবীয়া জাহান্নাম খুবই গভীর হবে এবং জাহান্নামীদেরকে উপর থেকে ফেলে দেওয়া হবে।
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ الذَِّىْ جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ يَحْسَبُ أَنّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ كَلّا لَيُنْبَذَنَّ فِى الْحُطَمَةِ وَمَا أدْرَكَ مَا لْحُطَمَةِ نَارُ اللهِ الْمُوْقَدَةُ الَّتِىْ تَطَّلِعُ عَلى الْأَفْئِدَةِ اِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ فِىْ عَمَدٍ مُمَدَّةٌ.
‘নিশ্চিত ধ্বংস, এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সামনা সামনি লোকদের গালি দেয় এবং পিছনে গিবত করাতে অভ্যস্ত। যে ব্যক্তি অর্থ সম্পদ সঞ্চয় করে এবং তা গুণে গুণে রাখে তার জন্যও ধ্বংস নিশ্চিত। সে মনে করে তার অর্থ-সম্পদ তার কাছে চিরকাল থাকবে, কক্ষনই নয়। সে ব্যক্তি তো চূর্ণ-বিচূর্ণকারী ‘হুতামা’ নামক জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর আপনি কি জানেন সে চূর্ণ-বিচূর্ণকারী ‘হুতামা’ কি? তা হচ্ছে প্রচন্ডভাবে জ্বলন্ত উত্তপ্ত উৎক্ষিপ্ত আগুন, যা অন্তর পর্যন্ত স্পর্শ করবে। আর সে আগুনকে তাদের উপর ঢেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর এটা এমন অবস্থায় হবে যে, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভে পরিবেষ্টিত হবে’ (হুমাযাহ)। অত্র সূরায় যে ‘হুতামা’ শব্দটি রয়েছে তার অর্থ ভেঙ্গে ফেলা, নিস্পেষিত করা ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করা। ‘হুতামা’ জাহান্নামের একটি নাম। যে এ জাহান্নামে যাবে তাকে চূর্ণ-বিচুর্ণ ও ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলবে। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَّاءٍ صَدِيْدٍ يَتَجَرَّعُهُ وَلاَ يَكَادُ يُسِيْغُهُ وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِنْ وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيْظٌ.
‘অতঃপর তার পিছনে জাহান্নাম তার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে। সেখানে তাকে পুঁজ মিশানো পানি পান করতে দেওয়া হবে। সে খুব কষ্ট করে ঢোক গিলে তা পান করার চেষ্টা করবে, আর খুব কমই ঢোক গিলতে পারবে। মরণের ছায়া তাকে চারিদিক থেকে আচ্ছন্ন করে ধরবে, কিন্তু সে মরবে না। আর পিছন হ’তে এক কঠিন শাস্তি তার উপর চেপে বসবে’ (ইবরাহীম ১৬-১৭)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهُ فَأُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْا أَنْفُسَهُمْ فِىْ جَهَنَّمَ خَالِدِيْنَ تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ-
অতঃপর ক্বিয়ামতের মাঠে যাদের নেকীর পাল্লা হালকা হবে, তারাই হবে সে সমস্ত লোক যারা নিজেদেরকে মহা ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, তারা চিরদিন জাহান্নামে থাকবে। আগুন তাদের মুখের চামড়া দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারণ করবে’ (মুমিনূন ১০৩-১০৪)। অত্র আয়াতে ‘কালিহুন’ ‘কালিহুন’ এমন চেহারাকে বলা হয়, যার চামড়া আলাদা করা হয়েছে এবং দাঁত বের হয়ে পড়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
اِنَّا اَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِيْنَ نَارًا اَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَاِنْ يَسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِى الْوُجُوْهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَائَتْ مُرْتَفَقًا.
‘আমি অমান্যকারী অত্যাচারীদের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করে রেখেছি, যার লেলিহান শিখা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছে। সেখানে তারা যদি পানি পান করতে চায়, তাহ’লে এমন পানি তাদেরকে পরিবেশন করা হবে, যা তেলপাত্রের তলানীর মত হবে এবং তাদের মুখমণ্ডল ভাজাভাজা করে দিবে। এ কতইনা নিকৃষ্ট পানীয়, আর কতই না খারাপ আশ্রয়স্থল’ (কাহাফ ২৯)। আয়াতে ‘মুহল’ শব্দের অর্থ এরূপ হ’তে পারে তেলপাত্রের তলানী, ভূগর্ভস্ত গলিত ধাতু, যা গরমের তীব্রতার কারণে গলে প্রবাহিত হয় পুঁজ ও রক্ত। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ. ‘সেদিনের কথা স্মরণ কর যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব তুমি কি পূর্ণ ভর্তি হয়েছ? তখন সে বলবে, আর কিছু আছে কি’ (ক্বাফ ৩০)। এ বাক্যের তাৎপর্য এমন হ’তে পারে জাহান্নাম পাপীদের উপর ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে ফোঁস-ফোঁস করে ফুঁসছে আর বলছে আরও আছে নাকি, থাকলে নিয়ে আস যত থাকে, সমস্ত অপরাধীকে গ্রাস করে নিব কাউকে রেহাই দিব না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحَاجَّتْ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ النَّارُ اُوْثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِيْنَ وَالْمُتَجَبِّرِيْنَ وَقَالَتِ الْجَنَّةُ فَمَالِى لاَ يَدْخُلُنِىْ اِلاَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ وَغِرَّتُهُمْ قَالَ اللهُ لِلْجَنَّةِ اِنَّمَا اَنْتِ رَحْمَتِىْ اَرْحَمُ بِكِ مَنْ اَشَاءُ مِنْ عِبَادِىْ وَقَالَ لِلنَّارِ اِنَّمَا اَنْتَ عَذَابِىْ اُعَذِّبُ بِكِ مَنْ اَشَاءُ مِنْ عِبَادِىْ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْؤُهَا فَاَمَّا النَّارُ فَلاَ تَمْتَلِئُ حَتىَّ يَضَعَ اللهُ رِجْلَهُ تَقُوْل قَطْ قَطْ قَطْ فَهُنَالِكَ تَمْتَلِئُ وَيُزْوَى بَعْضُهَا اِلَى بَعْضٍ فَلاَ يَظْلِمُ اللهُ مِنْ خَلْقِهِ اَحَدًا وَاَمَّا الْجَنَّةُ فَاِنَّ اللهَ يُنْشِئُ لَهَا خَلْقًا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে তাদের প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করল, ব্যাপার কি আমাকে শুধু অহংকারী ও স্বৈরাচারীদের জন্য নির্ধরণ করা হ’ল কেন? আর জান্নাত বলল, আমার মধ্যে কেবল মাত্র দুর্বল নিম্ন স্তরের ও নির্বোধ লোকেরাই প্রবেশ করবে কেন? তখন আল্লাহ জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার দয়ার বিকাশ। এজন্য আমার যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা তার প্রতি অনুগ্রহ করব। অতএব, আমার বান্দা হ’তে যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা তাকে শান্তি দিব। আর জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার শাস্তির বিকাশ। অতএব, আমার বান্দা হ’তে যাকে ইচ্ছা তোমার দ্বারা তাকে শাস্তি দিব এবং তোমাদের প্রত্যেককে পরিপূর্ণ করা হবে। অবশ্য জাহান্নাম ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাঁর পা তার মধ্যে না রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট, যথেষ্ট, যথেষ্ট হয়েছে। এ সময় জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং তার এক অংশকে আরেক অংশের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হবে। বস্তত আল্লাহ্ তার সৃষ্টির কারও প্রতি সামান্য পরিমাণও অত্যাচার করবেন না। আর জান্নাতের বিষয়টি হ’ল তার খালি অংশ পূরণের জন্য আল্লাহ নতুন নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫০)। জাহান্নাম ও জান্নাত নিজ নিজ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করলে আল্লাহ তার কারণ উল্লেখ করবেন। জাহান্নাম মানুষ দ্বারা পূর্ণ হবে না। তখন আল্লাহ স্বীয় পা জাহান্নামের উপর রাখবেন তখন জাহান্নাম পরিপূর্ণ হবে এবং জাহান্নাম আল্লাহকে বলবে, আমি এখন পূর্ণ। ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ অত্যাচার করবেন না। সেদিন জান্নাত পূরণের জন্য আল্লাহ নতুন নতুন প্রাণী সৃষ্টি করবেন।
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تَزَالُ جَهَنَّمُ يُلْقَى فِيْهَا وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيْهَا قَدَمَهُ فَيَنْزَوِى بَعْضُهَا اِلَى بَعْضٍ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ وَلاَ يَزَالُ فِى الْجَنَّةِ فَضْلٌ حَتَّى يُنْشِئَ اللهُ لَهَا خَلْقًا فَيُسْكِنُهُمْ فَضْلَ الْجَنَّةِ-
আনাস (রা.) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম(সা.) বলেছেন, জাহান্নামে অনবরত মানুষ ও জিনকে নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম অনবরত বলতে থাকবে, আর কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর পবিত্র পা তার উপর না রাখছেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ঠ হয়েছে, যথেষ্ঠ হয়েছে। আর জান্নাতে মানুষ প্রবেশের পর অতিরিক্ত স্থান খালি থেকে যাবে। তখন আল্লাহ ঐ খালি জায়গার জন্য নতুন নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন। তাদেরকে জান্নাতের এ খালি জায়গায় রাখবেন (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫১)।