وَجَزَاهُم بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا وَيُطَافُ عَلَيْهِم بِآنِيَةٍ مِّن فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا قَوَارِيرَ مِن فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا ويطوف عليهم وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا.
‘আল্লাহ তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোশাক দান করবেন। সেখানে তারা তাদের উচ্চ আসন সমূহে ঠেস দিয়ে বসবে। তারা সেখানে সূর্যের তাপ পাবে না, শীতের প্রকোপও অনুভব করবে না। জান্নাতের গাছের ছায়া তাদের উপর অবনত থাকবে। আর ফলমূল তাদের অধিনে থাকবে, তারা ইচ্ছামত তা পাড়তে পারবে। তাদের সামনে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাঁচের পিয়ালা পরিবেশন করানো হবে। সে কাঁচ পাত্র ও রৌপ্য জাতীয় হবে। আর সে পানপাত্র গুলি জান্নাতের সেবক চির বালকেরা পরিমাণমত ভর্তি করে রাখবে। তাদেরকে সেখানে এমন সুরা পাত্র পরিবেশন করানো হবে, যাতে শুকনা আদার সংমিশ্রণ থাকবে। এ হবে জান্নাতের একটি ঝর্ণা যাকে সালসাবীলও বলা হয়। তাদের সেবার জন্য এমন সব বালক ছুটা-ছুটি করতে থাকবে, যারা চিরকালই বালক থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে মনে করবে এরা যেন ছড়িয়ে দেয়া মুক্তা। তোমরা সেখানে যেদিকেই দেখবে শুধু নিয়ামত আর নিয়ামত দেখতে পাবে। দেখতে পাবে এক বিরাট সম্রাজ্যের সাজ-সরঞ্জাম, তাদের উপর চিকন রেশমের সবুজ পোশক এবং মখমলের কাপড় থাকবে। তাদেরকে রৌপ্যের কংকন পরানো হবে এবং তাদেরকে তাদের প্রতিপালক পবিত্র পরিচ্ছন্ন শরাব পান করাবেন’ (দাহর ১২-২১)।
اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا وَكَوَاعِبَ اَترَابًا وَكَأْسًا دِهَاقًا لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا.
‘নিঃসন্দেহে মুত্তাকী লোকদের জন্য রয়েছে একটি সাফল্যের স্থান এবং বাগ-বাগিচা, আংগুর, সমবয়স্কা নব্য যুবতীগণ এবং উচ্ছাসিত পানপাত্রও। সেখানে তারা কোন অসার অর্থহীন ও মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না’ (নাবা ৩১-৩৫)।
إنَّ الْاَبْرَارَ لَفِىْ نَعِيْمٍ عَلىَ الْاَرَائِكِ يَنْظُرُوْنَ تَعْرِفُ فِىْ وُجُوْهُهِمْ نَضْرَةً النَّعِيْمِ يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ خِتَامُهُ مِسْكٌ وَفِىْ ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُوْنَ وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيْمٍ عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُوْنَ.
‘নিঃসন্দেহে নেক লোকেরা অফুরন্ত নিয়ামতের মধ্যে থাকবে। উচ্চ আসনে সমাসীন হয়ে দৃশ্যাবলী অবলকন করবে। তাদের মুখে তোমরা স্বাচ্ছন্দ দেখতে পাবে। তাদেরকে মুখরোচক উৎকৃষ্ট মানের শরাব পান করতে দেওয়া হবে। তার উপর মিশক এর মোহর লাগানো থাকবে। যে সব লোক অন্যদের উপর প্রতিযোগিতায় জয়ী হ’তে চায় তারা যেন এই জিনিসটি লাভের প্রতিযোগিতায় জয়ী হ’তে চেষ্টা করে। সে শরাবে তাসনীম মিশ্রিত থাকবে, এটা একটা ঝর্ণা, নৈকট্য লাভকারী লোকেরা এ শরাব পান করবে’ (মুতাফফিফিন ২২-২৮)।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاعِمَةٌ لِسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ فِىْ جَنَّةٍ عَالِيَةٍ لَاتَسْمَعُ فِيْهَا لَاغِيَةٌ فِيْهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ فِيهَا سُرُرٌ مَّرْفُوعَةٌ وَأَكْوَابٌ مَّوْضُوعَةٌ وَنَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ وَزَرَابِيُّ مَبْثُوثَةٌ.
‘সেদিন কতিপয় লোকের মুখ উজ্জ্বল ঝকঝকে হবে, তারা নিজেদের চেষ্টা-সাধনার জন্য সন্তুষ্টচিত্ত হবে। সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবে না। সেখানে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে। সমুন্নত আসনসমূহ থাকবে। পানপাত্রসমূহ সুসজ্জিত থাকবে। গির্দা বালিশ সমূহ সারিবদ্ধ থাকবে এবং সুদৃশ্য মখমলের বিছানা পাতানো থাকবে’ (গাশিয়াহ ৮-১৬)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالَى اَعَدَدْتُ لِعِبَادِىْ الصَّالِحِيْنَ مَالَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا اُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তত করে রেখেছি, যা কখনও কোন চক্ষু দেখেনি কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তর কখনও কল্পনাও করেনি (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭১)। অত্র হাদীছের স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া খুব কঠিন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে মানুষের ভোগ-বিলাস আরাম-আয়েশের জন্য এমন কিছু ব্যবস্থা করেছেন যা মানুষের চোখ কোন দিন দেখেনি। অথচ মানুষ পৃথিবীর অনেক কিছু দেখেছে। মানুষের কান কোনদিন শুনেনি। অথচ মানুষের কান অনেক নতুন পুরাতন রাজাধিরাজের ভোগ-বিলাসের কাহীনী শুনেছে। মানুষের অন্তর কোনদিন পরিকল্পনা করে নি। অথচ মানুষের অন্তরে অনেক কিছুই পরিকল্পনা হয়। জান্নাত এ সকল পরিকল্পনার চেয়েও ভিন্ন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَوْضِعُ سَوْطٍ فِى الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি চাবুকের সমপরিমাণ জায়গা গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭২)। জান্নাতের সাথে পৃথিবীর আসলেই কোন তুলনা হয় না।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُدْوَةٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ اَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَلَوْ اَنَّ اِمْرَأةً مِنَ نِّسَاءِ اَهْلِ الْجَنَّةِ اِطَّلَعَتْ اِلَى الْاَرْضِ لَاضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلَاَتْ مَابَيْنَهُمَا رِيْحًا وَلَنَصِيْفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহর পথে এক সকাল এক সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদ হ’তে উত্তম। যদি জান্নাতের কোন নারী পৃথিবীতে উঁকি দেয় তবে গোটা পৃথিবী তার রূপের ছটায় আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে পরিণত হবে। এমনকি জান্নাতের নারীদের মাথার ওড়না গোটা দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৭৪)। জান্নাতের কোন কিছুর সাথে পৃথিবীর কোন বস্ত্তর তুলনা চলে না। তাই নবী করীম(সা.) ইহকাল ও পরকালের তুলনা পেশ করে বলেন,
عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ بْنِ شَدَّادٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِى الْاَخِرَةِ اِلَّا مِثْلَ مَايَجْعَلُ اَحَدُكُمْ اِصْبَعَهُ فِى الْيَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ.
মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি আল্লাহর কসম! পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হ’ল যেমন তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙ্গুল ডুবানোর পর লক্ষ্য করে দেখুক আঙ্গুল কি পরিমাণ পানি নিয়ে আসল (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৬)। অত্র হাদীছে বুঝানো হয়েছে আঙ্গুলের পানি এবং সাগরের পানি কম-বেশী হওয়ার ব্যাপারে তুলনা যেমন ইহকাল ও জান্নাতের তুলনা তেমন।
عَنْ جَابِرٍ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِجَدْىٍ اَسَكَّ مَيِّتٍ فَقَالَ اَيُّكُمْ يُحِبُّ اَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ فَقَالَ مَا نُحِبُّ اَنَّهُ لَنَابِشَيْئٍ قَالَ فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا اَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ.
জাবির (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূল(সা.) একটি কানকাটা ছোট মরা ছাগলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, তোমাদের এমন কেউ আছে যে, ছাগলটি এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পসন্দ করে। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা তো কোন কিছুর বিনিময়েই নিতে পসন্দ করি না। তখন নবী করীম(সা.) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের কাছে এ মরা কানকাটা বাচ্চা ছাগলটি যত তুচ্ছ দুনিয়া আল্লাহর কাছে তার চাইতে অনেক গুণ বেশি তুচ্ছ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩০)।
عَنْ سَهْلٍ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْكَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحُ بَعُوْضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شُرْبَةً.
সাহ্ল ইবনে সা‘দ (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য হত, তা‘হলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৫০)। পৃথিবীর মূল্য একটি কানকাটা মরা বাচ্চা ছাগলের সমান নয়, আঙ্গুলের এক ফোটা পানির সমানও নয়, এমন কি একটি মাছির পাখার সমানও নয়। যা উপরের হাদীছগুলো প্রমাণ করে। অতএব, আল্লাহর কাছে পৃথিবীর কোন মূল্য নেই যাকে আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য দিয়েছি। অথচ জান্নাত একটি চিরস্থায়ী ভোগবিলাসের অতীব উত্তম স্থান।