عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَهْلُ الْجَنّةِ جُرْدٌ مُرْدٌ كَحْلى لَايَفْنَى شَبَابُهُمْ وَلَايَبْلى ثِيَابُهُمْ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসী গোফ ও দাড়ী বিহীন হবে, তাদের চক্ষু সুরমায়িত হবে। তাদের যৌবন কোনদিন শেষ হবে না। তাদের কাপড় কোন দিন পুরাতন বা ময়লা হবে না (তিরমিযী, হা/২৫৩৯; আলবানী মিশকাত হা/৫৬৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৯৬)।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ اَهْلُ الْجَنّةِ الْجَنّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِيْنَ اَبْنَاءُ ثَلَاثِيْنَ اَوْ ثَلَاثُ وَثَلَاثِيْنَ سَنَةً.
মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন তাদের বয়স হবে ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর। তারা কেশবিহীন ও দাড়ীবিহীন হবেন, তাদের চক্ষু সুরমায়িত হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৩৯৭, হাদীছ হাসান)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَطْفَالُ الْمُسْلِمِيْنَ فِى جَبَلٍ فِى الْجَنّةِ يُكَفِّلُهُمْ اِبْرَاهِيْمُ وَسَارَةُ حَتّى يُدْفَعُوْنَهُمْ اِلى اَبَائِهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী সারা (আঃ) মুসলমানদের শিশুদেরকে জান্নাতের কোন পাহাড়ের পাশে লালন পালন করছেন, ক্বিয়ামতের দিন শিশুদেরকে তাদের পিতার নিকট সমার্পন করার পূর্ব পর্যন্ত তাঁরা তাদের লালন পালন করবেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩৯)। সকল শিশু এখন জান্নাতে প্রতিপালিত হচ্ছে। তাদের প্রতিপালনের দায়িত্বে রয়েছেন ইবরাহীম (আঃ) ও তার স্ত্রী সারা (আঃ)। জান্নাতে আনন্দভোগ করার জন্য মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পাহাড় রয়েছে।
عَنْ ابِىْ مَالِكٍ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ عَنْ اَطْفَالِ الْمُشْرِكِيْنَ قَالَ هُمْ خَدَمُ اَهْلِ الْجَنّةِ.
আবু মালিক (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) -কে মুশরেকদের শিশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, তারা জান্নাতীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৪০)।
عَنْ ابِىْ اَيُّوْبَ قَالَ اتَى النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَعْرَابِىٌّ فَقَالَ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّى اُحِبُّ الْخَيْلَ َاَفِى الْجَنّةِ خَيْلٌ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ اِنْ اُدْخِلْتَ الْجَنّةَ اُتِيْتَ بِفَرَسٍ مِنْ يَاقُوْتَةٍ لَهُ جَنَاحَانِ فَحَمِلَت عَلَيْهِ ثُمَّ طَارَبِكَ حَيْثُ شِئْتَ.
আবু আইয়ূব আনছারী (রা.) বলেন, একজন গ্রাম্য বেদুইন রাসুল(সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আমি ঘোড়া ভালবাসী। জান্নাতে ঘোড়া পাওয়া যাবে কি? নবী করীম(সা.) বললেন, তোমাকে যদি জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়, তাহ’লে তোমাকে মুক্তা দ্বারা তৈরী একটি ঘোড়া দেওয়া হবে। যার দু’টি পাখা থাকবে, তোমাকে তার উপর সওয়ার করানো হবে। তোমার ইচ্ছামত তোমাকে উড়ে নিয়ে যাবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৪৬)।
عَنْ انسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ اِنَّ الْحُوْرَ فِى الْجَنّةِ يَتَغَنّيَنَ يَقُلْنَ نَحْنُ الْحُوْرُ الْحِسَانُ-هَدِيْنَا لِاَزْوَاجٍ كِرَام.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে হুরগণ গান গইবে এবং তারা বলবে, আমরা অতীব সুন্দরী নারী। আমরা আমাদের সম্মানিত স্বামীদের জন্য উপহার (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৫৬)।
عَنْ علىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهَ وَسَلّمَ اِنّ فِى الْجَنّةِ لَمُجْتَمَعًا لِلْحُوْرِ الْعِيْنِ يَرْفَعْنَ بِاَصْوَاتٍ لَمْ تَسْمَعِ الْخَلَائِقُ مِثْلَهَا يَقُلْنَ نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيْدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبَأْسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ طُوْبى لِمَنْ كَانَ لَنَا وُكُنّا لَهُ.
আলী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতের হুরগণ এক জায়গায় সমবেত হয়ে উঁচু কণ্ঠে এমন সুন্দর লহরীতে গান বলবে। সৃষ্টি জীব সে ধরনের লহরী কখনও শুনেনি। তারা বলবে আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না। আমরা সর্বদা সুখ স্বচ্ছন্দে বসবাস করব। কখনও দুঃখ দুশ্চিন্তায় পতিত হব না। অতএব চিরধন্য সে, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি (তিরমিযী, আলবানী মিশকাত হা/৫৬৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪০৭)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّ فِى الْجَنّةِ شَجَرَة يَسِيْرُ الرّاكِبُ الْجَوَادُ الْمُضْمِرُ السَّرِيْعُ مِئَةَ عَامٍ مَا يَقْطَعُهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন বড় গাছ রয়েছে। কোন ব্যক্তি দ্রুতগামী ঘোড়ায় আরোহণ হয়ে একশত বছর চললেও তার ছায়া শেষ হবে না’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৬৩)।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَةٌ لَاتَرَى اَعْيُنُهُمْ النّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ حَرَسَتْ فِى سَبِيْلِ اللهِ وَعَيْن غَضَت عَنْ مَحَارِمِ اللهِ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের চক্ষু কিয়ামতের দিন জাহান্নাম দেখবে না। ১. এমন চক্ষু যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে ২. এমন চক্ষু যে আল্লাহর রাস্তায় জেগে থাকে এবং ৩. এমন চক্ষু যে বেগানা মহিলাকে দেখে নীচু হয়ে যায় (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৭৭)।
عَنْ عُتْبَةَ بْنِ عَبْد السُّلَمِىِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَنّةُ لَهَا ثَمَانِيَةُ اَبْوَابٍ وَالنَّارُ لَهَا سَبْعَةُ اَبْوَابٍ.
উতবা ইবনে আবদে সুলামী (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে এবং জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৭৪)। প্রকাশ থাকে যে, জান্নাত আটটি নয় বরং জান্নাত একটি তার দরজা আটটি। অনুরূপ জাহান্নামও ।
عَنْ اَبِى اُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ وَعَدَنِىْ رَبِّىْ اَنْ يُّدْخِلَ الْجَنَّةَ مِنْ اُمَّتِىْ سَبْعِيْنَ اَلْفًا لَاحِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلَاعَذَابَ مَعَ كُلِّ اَلْفٍ سَبْعُوْنَ اَلْفًا وَثَلَاثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِ رَبِّىْ.
আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি, আমার প্রতিপালক আমার সাথে এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্য হ’তে সত্তর হাজার ব্যক্তিকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাদের কোন হিসাব হবে না, তাদের কোন শাস্তিও দেওয়া হবে না। আবার উক্ত প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজার ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তারপর আমার প্রতিপালকের তিন অঞ্জলী সমপরিমাণ মানুষকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৫৫৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ বহু মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লার অঞ্জলীতে কত মানুষ জান্নাতে যাবে একথা মানুষ জানে না।
عَنْ ابِىْ اُمَامَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ رَجُلُ الْجَنّةَ فَرَاى عَلى بِابِهَا مَكْتُوْبًا الصَّدَقَةُ بِعَشَرِ اَمْثَالِهَا وَالْقَرَضُ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ.
আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে দেখল জান্নাতের দরজায় লেখা আছে দানের নেকী দশগুণ বাড়ে আর কর্য প্রদানের নেকী ১৮ গুণ বাড়ে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৮১)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় দান ও কর্য উভয়ের প্রতিদান জান্নাত। তবে দান করার চেয়ে কর্য দিলে নেকী বেশি হয়।
عَنْ انسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلْتُ الْجَنّةَ فَاِذَا اَنَا بِقَصْرٍ مِنْ ذَهَبٍ فَقُلْتُ لِمَنْ هَذا الْقَصْرُ قَالُوْا لِشَابٍّ مِنْ قُرَيْشٍ فَظَنَنْتُ اَنّى اَنَا هُوَ فَقُلْتُ وَمَن هُوْ فَقَالُوْا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطّابِ قَالَ فَلَوْ لَا مَا عَلِمْتُ مِنْ غَيْرَتِكَ لَدَخَلْتُهُ فَقَالَ عُمَرُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ اَغَارُ.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করে পরিদর্শন করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম উচ্চমানের স্বর্ণের একটি প্রাসাদ। আমি বললাম, এটা কার? তারা বলল, এক কুরাইশী যুবকের। আমি মনে করলাম, নিশ্চিত আমিই সেই যুবক হব। আমি পুনরায় বললাম, সে কে? তারা বলল, তিনি হচ্ছেন ওমর বিন খত্তাব (রা.) । নবী করীম(সা.) ওমর (রা.) -কে লক্ষ্য করে বললেন, ওমর! তোমার আত্মমর্যাদা আমার জানা না থাকলে অবশ্যই আমি তোমার ঘরে প্রবেশ করতাম। তখন ওমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আপনার জন্য কি কারো ব্যাপারে আত্মমর্যাদার বিবেচনা করা মানায়? (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৮২)। ওমর (রা.) -এর জন্য খুব উন্নত স্বর্ণের বালাখানা প্রস্ত্তত হয়ে আছে। আর রাসূল(সা.) ওমর (রা.) -এর আত্মমর্যাদা এত বেশি মনে করেন যে, তাঁর ঘরে ঢুকতে তিনি ইতস্তবোধ করেন।