উপদেশ ২৭. জান্নাত ও জাহান্নাম আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ بُرَيْدَةَ قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَهْلُ الْجَنّةِ عِشْرُوْنَ وَمِائَةُ صَفّ ثَمَانُوْنَ مِنْهَا مِنْ هذِهِ الْاُمّةِ وَاَرْبَعُوْنَ مِنْ سَائِرِ الْاُمَمِ.

বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসীদের একশত বিশ কাতার হবে। তার আশি কাতার হবে আমার উম্মতের, আর বাকী চল্লিশ কাতার হবে সমস্ত উম্মতের মধ্য হ’তে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪০২)। অন্য এক হাদীছে বলা হয়েছে জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে এ উম্মত থেকে ।

عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمُؤمِنُ اِذَا اشْتَهى الْوَلَدَ فِى الْجَنّةِ كانَ حَمْلُهُ وَوَضْعُهُ وَسِنّهُ فِى سَاعَةٍ كَمَا يَشْتَهِىْ.

আবু সাঈ‘দ খু্দরী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতবাসী মুমিন যখন সন্তান কামনা করবে, তখন গর্ভ, প্রসাব এবং তার বয়স চাহিদা অনুযায়ী মূহুর্তের মধ্যে সংঘটিত হবে (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ আলবানী হা/৫৬৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪০৬)। অত্র হাদীছে বুঝা গেল জান্নাতীরা সন্তান কামনা করতে পারে। আর সন্তান কামনা করা মাত্রই পাওয়া যাবে। তবে যে বয়সের সন্তান কামানা করবে তা মুহুর্তের মধ্যেই পাবে। তবে ইসহাক বিন ইবরাহীম বলেন, জান্নাতীরা সন্তান কামনাই করবে না

عَنْ حَكِيْمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ عَنْ اَبِيْهِ عَنِ النّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنّ فِى الْجَنَّةِ بَحْرَ الْعَسَلِ وَبَحْرَ اللَّبَنِ وَبَحرَ الْخَمْرِ ثُمَّ تُشَقَّقُ الْانْهَارُ بَعْدُ.

হাকীম ইবনে মু‘আবিয়া (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে রয়েছে পানির সাগর, মধুর সাগর, দুধের সাগর এবং শরাবের সাগর। অতঃপর এগুলি হ’তে আরও বহু নদী প্রবাহিত হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৮০)। জান্নাতে মূলত চারটি সমুদ্র রয়েছে ১. পানির ২. মধুর ৩. দুধের ও ৪.শরাবের। আবার এ চারটি সমুদ্র হ’তে বহু নদী প্রবাহিত হবে (তিরমিযী হা/২৫৭১)

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَحَدَّثُ وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ اَهْلِ الْبَادِيَةِ اَنّ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْجَنّةِ اِسْتَاْذَنَ رَبّهُ فِى الزَّرْعِ فَقَال لَهُ اَلَسْتَ فِيْمَا شِئْتَ قَالَ بَلى وَلكِنّى احبُّ اَنْ اَزْرَعَ فَبَذَرَ فَبَادَرَ الطَّرْفُ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَائُهُ وَاسْتَِحْصَادُهُ فَكَانَ اَمْثَالَ الْجِبَالِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالى دُوْنَكَ يَا اِبْنَ اَدَمَ فَانّهُ لَايُشْبِعُكَ شَيٌْئ فَقَالَ الْاَعْرَابِىُّ وَاللهِ لَاتَجِدُهُ الَّاقَرْشِيَا اَوْاَنْصَارِيًا فَاِنّهُمْ اَصْحَابُ زَرْعِ وَاَمّا نَحْنُ فَلَسْنَا بِاَصْحَابِ َزرْعِ فَضَحِكَ النّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ-

আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, একদা নবী করীম(সা.) কথা বলছিলেন, এসময় একজন গ্রাম্য বেদুইন উপস্থিত ছিল। নবী করীম(সা.) বললেন, জান্নাতবাসীর একজন জান্নাতে কৃষি কাজ করার জন্য তার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি চাইবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার যা কিছুর প্রয়োজন তা কি তোমার কাছে নেই? সে বলবে হ্যাঁ আছে। তবে আমি কৃষি কাজ ভালবাসি। অতঃপর সে বিজ বপন করবে এবং মূহুর্তের মধ্যে তা অংকুরিত হবে, ফসল পাকবে এবং ফসল কাটা হবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, হে আদম সন্তান! এসব ফসল নিয়ে যাও কোন কিছুতেই তোমার তৃপ্তি হয় না। তখন গ্রাম্য লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! দেখবেন সে হয়তো কোন কোরাইশী অথবা আনছার গোত্রীয় লোক হবে। কেননা তারাই কৃষি কাজ করে থাকে। আর আমরা তো কৃষি কাজ করি না। তার কথা শুনে রাসূল(সা.) হেসে উঠলেন (বুখারী, মিশকাত হা/৫৪১০)। হাদীছের ভাষায় বুঝা যায় জান্নাতে মানুষ নিজ নিজ আশা আকাঙ্ক্ষা তার প্রতিপালকের কাছে পেশ করবে এবং তা তাৎক্ষণিক পূরণ করা হবে।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا فِى الْجَنَّةِ شَجَرَةٌ اِلّا وَسَاقُهَا مِنْ ذَهَبٍ.

আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম(সা.) বলেছেন, জান্নাতের সমস্ত গাছেরই কান্ড ও শাখা হবে স্বর্ণের (তিরমিযী হা/২৫২৫)

عَنْ عَلِى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّ فِى الْجَنّةِ لَغُرَفًا تُرَى ظُهُوْرُهَا مِنْ بُطُوْنِهَا وَبُطُوْنُهَا مِنْ ظُهُوْرِهَا فَقَامَ اِلَيْهِ اَعْرَابِىُ فَقَالَ لِمَنْ هِىَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَّ قَالَ هِىَ لِمَنْ اَطَابَ الْكَلَامَ وَاَطْعَمَ الطَّعَامَ وَادَامَ الصِيَامَ وَصَلَّى لِلّهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ.

আলী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে এমন কতগুলি বালাখানা রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির দেখা যায় এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যায়। একজন গ্রাম্য বেদুইন রাসূল(সা.) -এর নিকটে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! এমন জান্নাত কোন ব্যক্তির জন্য? নবী করীম(সা.) বললেন, যারা মানুষের সাথে নরমভাবে কথা বলে, ক্ষুধার্থ মানুষকে খাদ্য খাওয়ায়, নিয়মিত ছিয়াম পালন করে এবং রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন তাহাজ্জুদ পড়ে (তিরমিযী হা/২৫২৭, হাদীছ হাসান)। জান্নাতে সবচেয়ে উচুমানের বালাখানাগুলি এত স্বচ্ছ পদার্থ দ্বারা তৈরী যে, তার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর দেখা যাবে। আর এর জন্য চারটি কাজ করা যরুরী। ১. মানুষের সাথে নরমভাবে কথা বলতে হবে ২. ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে খাওয়াতে হবে ৩. নিয়মিত নফল ছিয়াম পালনে অভ্যাসী হ’তে হবে এবং ৪. রাতে তাহাজ্জাদ পড়তে হবে।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْجَنّةِ مِاَئُةُ دَرَجَةٍ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرجَتَيْنِ مِئَةُ عَامٍ.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতে একশতটি স্তর রয়েছে আর প্রত্যেক দু’স্তরের মাঝে একশত বছরের ব্যবধান রয়েছে (তিরমিযী হা/২৫২৯, হাদীছ ছহীহ)

عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِنَّ اَوَّلَ زَمْرَةٍ يَدْخُلُوْنَ الْجَنّةَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضُؤْءُ وُجُوْهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضُؤْءِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالزَّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلى مِثْلِ احْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّىَّ فِى السّمَاءِ لِِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُوْنَ حَلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا.

আবু সা‘ঈদ খুদ্রী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারার জ্যোতি হবে পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায়। আর দ্বিতীয় দলটির চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত ঝকঝকে। সেখানে প্রত্যেকের জন্য দু’জন করে বিশেষ মর্যাদা সম্পূর্ণ অতীব সুন্দরী স্ত্রী থাকবে। তাদের প্রত্যেক স্ত্রীর পরিধানে সত্তর জোড়া কাপড় থাকবে, তাদের শরীর এত স্বচ্ছ, এবং কাপড় এত চিকন হবে যে, এত কাপড়ের উপর দিয়ে পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে (তিরমিযী, হা/২৫৩৫; আলবানী মিশকাত হা/৫৬৩৫, হাদীছ ছহীহ)। এরা জান্নাতের বিশেষ নারী। এদের চেহারা হবে ঝকঝকে মুক্তার মত চোখ হবে বড় বড় ডাগর ডাগর হরিণ নয়োনা। দেখে মনে হবে চোখে সুরমা দেওয়া আছে। মাথার চুল হবে লম্বা পরিমাণে বেশি কুচকুচে কাল।