নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি কিতাবটির সংকলন পদ্ধতি মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১০ টি

কিতাবটির বিষয় যেহেতু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলাত সংক্রান্ত নির্দেশনার বর্ণনা দান, তাই স্বভাবতই আমি পূর্বোল্লিখিত কারণে কোন নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুকরণ করবো না। বরং এতে কেবল ঐ হাদীছগুলিই উদ্ধৃত করব যা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সাব্যস্ত। যেমনটি অতীত ও বর্তমানের।[1] মুহাদ্দিছীনের[2] অনুসৃত পথ।

নিঃসন্দেহে সুন্দর বলেছেন যে ব্যক্তি (নিম্নোক্ত) কথাটি বলেছেন

أهل الحديث هم أهل النبي وإن لم يصحبوا نفسه أنفاسه صحبوا

অর্থঃ আহলুল হাদীছগণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আপনজন, তারা যদিও তাঁর সংস্রব পায়নি। তবে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের সংস্রব পেয়েছে।[3] অর্থাৎ তারা তাঁর বাণীর সাথী হয়েছে, যে দিকে তাঁর বানী নির্দেশ করে তারা সে দিকে যায়।

আর এজন্যই মাযহাবগত তারতম্য থাকা সত্ত্বেও কিতাবটি হাদীছ ও ফিকহ-এর কিতাবাদিতে বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিক্ষিপ্ত মাসআলাগুলোর সম্মিলন সাধন করবে ইনশাআল্লাহ। বলতে কি এই কিতাবে যে পরিমাণ হক্‌ কথার সমাহার ঘটেছে অন্য কোন কিতাব বা মাযহাবে ঘটেনি।

আর এই কিতাব অনুযায়ী আমলকারী ইনশাআল্লাহ ঐ সব লোকের অন্তর্ভুক্ত হবেন যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত করেছেনঃ

لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

স্বীয় ইচ্ছায় সেই সত্যের জন্যে যাতে তারা মতভেদ করেছে, আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্ৰদৰ্শন করেন।[4]

আমি যখন নিজের জন্য এই নীতি নির্ধারণ করি যে, শুধু বিশুদ্ধ হাদীছ অবলম্বন করব এবং বাস্তবেও এই কিতাবসহ অন্য কিতাবাদিতে এই নীতি অবলম্বন করেছি। যেগুলো অচিরেই মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করবে: ইনশাআল্লাহ তা'আলা। তখন থেকেই আমি একথা জানতাম যে, আমার এই কাজ সব দল ও মাযহাব (এর লোক)-কে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। বরং অচিরেই তাদের কেউ কেউ বা অনেকেই আমার প্রতি আঘাতমূলক কণ্ঠ ও দোষারোপের কলম ছুড়ে মারবে। তবে এতে আমার অসুবিধা নেই। কেননা আমি এটাও জানি যে, সকল মানুষের সন্তুষ্টি লাভ দুর্লভ ব্যাপার। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

من آرضی الناس بسخط الله و کله الله الی الناس

অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার মাধ্যমে মানুষকে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ তাকে মানুষের দায়িত্বে অৰ্পণ করেন।[5]

আল্লাহ! কবি কত সুন্দর না বলেছেন

ولست بناج من مقالة طاعن

ولوکنت فی غارعلی جبل وعر

ومن ذا الذی ینجؤمن الناس سالما

ولوغاب عنهم بين خافيتي نسر

তুমি দোষারোপকারীর কথার গ্লানি থেকে নিস্কৃতি পাবেই না, যদিও বা দুৰ্গম পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেও

আর কে আছে মানবের দোষারোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার মত যদিও বা শকুনের ডানার তলে আড়াল হয় না কেন।

আমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, এই (অনুসৃত) পথটাই হচ্ছে সর্বাধিক সঠিক পথ যার ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাহগণকে আদেশ প্রদান করেছেন এবং রাসূলগণের প্রধান আমাদের নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখিয়ে দিয়েছেন। আর এটাই সেই পথ যার অনুসরণ করেছেন ছাহাবা, তাবিঈন ও তৎপরবর্তী সৎ পূর্বসূরীগণ, যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম চতুষ্টয় যাদের নামে সৃষ্ট মাযহাবসমূহের সাথে আজকের জগতের বেশীরভাগ মুসলিম সম্পর্কযুক্ত। তাদের প্রত্যেকেই সুন্নাহ (হাদীছ) আঁকড়ে ধরা ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করার অপরিহার্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং তার বিপরীত যে কোন কথাকে পরিত্যাগ করতেও একমত ছিলেন- সে কথার প্রবক্তা যত বড়ই হোন না কেন, যেহেতু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মর্যাদা হচ্ছে তাদের তুলনায় অনেক বেশী এবং তাঁর পথ সর্বাধিক সঠিক। তাই আমি তাঁদের পথ ধরে চলেছি, আর তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছি এবং হাদীছ আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে তাদেরই নির্দেশসমূহ মেনে চলি। যদিও হাদীছটি তাদের কথার বিপরীতও হয়। তাদের এহেন নির্দেশনাবলীই সোজা পথে চলা ও অন্ধ অনুসরণ থেকে বিমুখ হওয়ার ব্যাপারে আমার উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

[1] ইমাম সুবকী “ফাতাওয়া” ১ম খণ্ড ১৪৮ পৃষ্ঠায় বলেনঃ অতঃপর মুসলিমদের প্রধান বিষয় হচ্ছে ছলাত, প্রতিটি মুসলিমের পক্ষে এর উপর বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া উচিত এবং নিয়মিত তা পালন করা প্রয়োজন। তার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো (ফরয রুকনগুলো) প্রতিষ্ঠিত করা। তাতে কিছু কাজ এমন রয়েছে যা সর্বসম্মতিক্রমে পালনীয় তা থেকে বিরত থাকার কোন উপায় নেই। আর কিছু কাজ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, এক্ষেত্রে সঠিক পথ হচ্ছে দুটি যথাঃ (১) যদি সম্ভব হয় তবে মতভেদ এড়াতে চেষ্টা করবে, অথবা (২) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ হাদীছে যা এসেছে তা আঁকড়ে ধরবে। যখন এ কাজ করবে। তখন তার ছলাত বিশুদ্ধ ও উপযুক্ত হয়ে উঠবে এবং আল্লাহর এ বাণীর আওতাভুক্ত হবেঃ

فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا

অর্থঃ “যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন নেক আমল করে আর স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে অংশিদার না করে।”(সূরা কাহাফ ১১০)

আমি বলছিঃ দ্বিতীয় পন্থাটাই ভাল বরং অপরিহার্য, কেননা প্রথম পন্থটি অনেক বিষয়ে তার বাস্তবতা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও তাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এই নির্দেশটি প্রতিফলিত হয় না। صلوا كما رأيتموني اصلي অর্থঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে ছলাত পড়তে দেখা ঠিক ঐভাবে ছলাত পড়”, কেননা এমতাবস্থায় তার ছলাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলতের বিপরীত হওয়া অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। অতএব বিষয়টি অনুধাবন করুন।

[2] আবুল হাসনাত লাক্ষনোভী إمام الكلام فيما يتعلق بالقرءة خلف الإمام কিতাবের ১৫৬ পৃষ্ঠায় বলেনঃ যে ব্যক্তি ইনছাফের দৃষ্টিতে চিন্তা করবে এবং কোন রূপ গোড়ামি ব্যতিরেকে ফিকহ ও মূলনীতির সাগরে ডুব দিবে সে সুনিশ্চিতভাবে একথা জানতে পারবে যে, আলিমগণের মতভেদকৃত বেশীরভাগ মৌলিক ও অমৌলিক মাসআলায় অন্যদের তুলনায় মুহাদ্দিছগণের মাযহাবই শক্তিশালী। আমি যখন বিতর্কিত বিষয়ের শাখা প্রশাখায় ঘুরে বেড়াই তখন মুহাদ্দিছদের মাযহাবকে অন্যদের মাযহাব অপেক্ষা অধিকতর ইনছাফভিত্তিক পাই । আল্লাহ তা'আলা কতইনা ভাল করেছেন এবং এর উপরে তাদের কতনা শুকরিয়া-(প্রধান বক্তব্যে একথা এভাবেই এসেছে) আর কেনইবা এমন হবে না? তারা যে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রকৃত উত্তরাধিকারী এবং তাঁর শরীয়তের সত্যিকার প্রতিনিধি। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করে হাশর করুন এবং তাদের ভালবাসা ও চরিত্রের উপর রেখে মৃত্যু দান করুন।

[3] হাফিয যিয়াউদ্দীন আল-মাকদিসী তার “ফাযলুল হাদীছ ওয়া আহলিহী” কিতাবে উল্লেখ করেন যে, এর রচয়িতা হচ্ছেন কবি হাসান বিন মুহাম্মদ আল নাসাবী।

[4] সূরা আল-বাকারা ২১৩ আয়াত।

[5] তিরমিযী, কুযাঈ, ইবনু বিশারান ও অপরাপরগণ (বর্ণনা করেছেন)। উক্ত হাদীছ ও তার সূত্রগুলোর উপর “শারহুল আকীদা আত-ত্বহাবিয়্যাহ” কিতাবের হাদীছ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আলোকপাত করেছি। অতঃপর “সিলসিতুল আহাদীস আস-সহীহাহ” ২৩১১ নম্বরেও আলোচনা করেছি এবং বলেছি যে, একে যারা ছাহাবী পর্যন্ত ঠেকিয়েছেন (মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন) এর ফলে তার কোন ক্ষতি সাধিত হবে না। আর একে ইবনু হিব্বান ছহীহ বলেছেন।
সুন্নাহর অনুসরণ ও তার বিপক্ষে ইমামগণের কথা বর্জন করার ব্যাপারে ইমামগণের উক্তি

এখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইমামগণের পক্ষ থেকে যে সব উক্তি আমি সংগ্ৰহ করেছি। তার কিছুটা উল্লেখ করা উপকারী বলে মনে করছি। হয়তোবা যারা তাদের বরং তাঁদের চেয়ে অনেক নিম্নপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের অন্ধ অনুকরণ করে; তাদের জন্য এতে উপদেশ থাকতে পারে।[1] তারা তাদের মাযহাব এবং কথাগুলোকে আসমান থেকে অবতীর্ণ ঐশী বাণীর ন্যায় শক্ত হাতে ধরে রাখে। অথচ, আল্লাহ তা’আলা বলেন:

اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ

অর্থঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিষয়ের অনুসরণ করা, এতদ্ব্যতীত অন্য কোন ওলীর অনুসরণ কর না। তোমরা অল্পই উপদেশ গ্ৰহণ করে থাক।[2]

[1] এই অন্ধ অনুসরণকে উদ্দেশ্য করেই ইমাম ত্বাহাবী বলেছেনঃ لا يقلد الا عصى أو غبى গোড়া অথবা নির্বোধ ছাড়া অন্য কেউ অন্ধ অনুসরণ (তাকলীদ) করে না। ইবনু আবিদীন একথা তাঁর পুস্তকাগুচ্ছের “রসমীল মুফতী” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ১ম খণ্ড ৩২ পৃষ্ঠা।

[2] সূরা আ'রাফ ৩ আয়াত।

ইমামগণের মধ্যে প্রথমেই হলেন ইমাম আবু হানীফা নুমান বিন ছাবিত (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর সাথীগণ তাঁর অনেক কথা বিভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন, সব কয়টি কথা একটাই বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে, আর তা হচ্ছেঃ হাদীছকে আকড়ে ধরা ও তার বিপক্ষে ইমামগণের কথা পরিহার করা ওয়াজিব। (কথাগুলো হচ্ছে)

(১) إذا صح الحديث فهو مذهبى অর্থঃ হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে ওটাই আমার মাযহাব বলে পরিগণিত হবে।[1]

لايحل لأحد أن يأخذ بقولنا ما لم يعلم من أين أخذناه (২)

আমরা কোথা থেকে কথাটি নিলাম এটা না জানা পর্যন্ত কারো জন্য আমাদের কথা গ্ৰহণ করা বৈধ নয়।[2]

অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ

حرام على من لم يعرف دليلي أن يفتي بكلامي

অর্থঃ যে আমার কথার প্রমাণ জানে না তার পক্ষে আমার কথার দ্বারা ফতওয়া প্ৰদান করা হারাম। (টীকায় উল্লেখকৃত দ্বিতীয় বর্ণনাটি)

অন্য বর্ণনায় আরো বাড়িয়ে বলেছেনঃ

فإننا بشر، نقول القول اليوم ونرجع عنه غدا

অর্থঃ কেননা আমরা মানুষ, আজ এক কথা বলি, আবার আগামীকাল তা থেকে ফিরে যাই। (টীকায় উল্লেখকৃত তৃতীয় বর্ণনাটি।

অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ

ويحك يا يعقوب (هو أبو يوسف) لا تكتب كل ما تسمع منى فإني قد أرى الرأى اليوم واتركه غدا، وأرى الرأى غدا واتركه بعد غد

অর্থঃ এই হতভাগা ইয়াকুব (আবু ইউসুফ) তুমি আমার থেকে যাই শুন তা লিখনা, কেননা আমি আজ এক মত পোষণ করি এবং আগামীকাল তা পরিহার করি, আবার আগামীকাল এক মত পোষণ করি আর পরশুদিন তা পরিত্যাগ করি।[3] (আল। ঈকায গ্রন্থের ৬৫ পৃষ্ঠার টীকা দ্রষ্টব্য)

اذا قلت قولا یخالف کتاب الله تعالی و خبر الرسول صلی الله عليه وسلم فاترکوا قولي (৩)

অর্থঃ যখন আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহ তা'আলার কিতাব ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীছ বিরোধী তা হলে তোমরা আমার কথা পরিত্যাগ করবে।[4]


[1] ইবনু আবিদীন এর হাশিয়া ১ম খন্ড ৬৩ পৃষ্ঠা, “রসমিল মুফতী” ১ম খণ্ড ৪র্থ পৃষ্ঠা, ছালিহ আল ফাল্লানীর “ইকাযুল হিমাম” পৃষ্ঠা ৬২, ইবনু আবিদীন ইবনুল হুমামের উস্তায ইবনুশ শাহনা আল কাবীরের “শারহুল হিদায়া” থেকে উদ্ধৃতি করেনঃ

إذا صح الحديث وكان على خلاف المذهب عمل بالحديث ويكون ذلك مذهبه ولا يخرج مقلد عن كونه حنيفا بالعمل به فقد صح ان ابى حنيفة انه قال: إذا صح الحديث فهو مذهبي وقد حكى ذلك الامام ابن عبد البر عن ابى حنيفة وغيره من الأئمة

অর্থঃ যখন হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়ে যাবে আর তা মাযহাবের বিপক্ষে থাকবে তখন হাদীছের উপরেই আমল করা উচিত হবে এবং এটাই তাঁর (ইমামের) মাযহাব বলে বিবেচিত হবে। উক্ত হাদীছের উপর আমল করাটা তাকে হানাফী মাযহাব থেকে বহিষ্কার করবে না। কেননা বিশুদ্ধ সূত্রে ইমাম আবু হানীফা থেকে এসেছে যে, হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে এটাই আমার অনুসৃত পথ বলে জানতে হবে। একথা ইমাম ইবনু আব্দিল বার ইমাম আবু হানীফাসহ অন্যান্য ইমামদের থেকেও বর্ণনা করেন।

আমি বলছিঃ এটা হচ্ছে ইমামগণের ইলম ও তাকওয়ার পরিপূর্ণতার বহিঃপ্রকাশ। যাতে তারা একথারই ইঙ্গিত প্ৰদান করছেন যে, তারা সমস্ত হাদীছ আয়ত্ব করতে পারেননি। যে কথা ইমাম শাফিয়ী স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, পরবর্তীতে যার উল্লেখ রয়েছে। তাই কদাচ তাদের নিকট অনাগত অজানা সুন্নাতের বিপরীত কিছু (বচন-আচরণ) পাওয়া যেতে পারে। এজন্যই তাঁরা আমাদেরকে সুন্নাহ্ আকড়ে ধরার এবং এটাকেই তাদের অবলম্বিত পথ (মাযহাব) হিসাবে গণ্য করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের সবাইকে রহম করুন।

[2] ইবনু আব্দিল বার “আল ইনতিকা ফী ফাযায়েলুস সালাসাতিল আইম্মাতিল ফুকাহা” পৃষ্ঠা ১৪৫, ইবনুল কাইয়্যিম এর “ই’লামুল মুয়াক্কিঈন” (২/৩০৯), ইবনুল আবিদীন “আল বাহরুর রা’ইক” এর টীকায় (৬/২৯৩), “রসমীল মুফতী” পৃষ্ঠা ২৯, ৩২, শা’রানীর “আল মিযান” এ দ্বিতীয় বর্ণনাটি রয়েছে (১/৫৫) আর তৃতীয় বর্ণনা পাওয়া যাবে আব্বাছ আদদূরীর বর্ণনায় ইবনু মাঈন এর “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৬/৭৭/১) যুফার থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে। এ ধরনের বর্ণনা ইমাম সাহেবের সাথী যুফার, আবু ইউসুফ এবং আফিয়া ইবনু ইয়াযীদ থেকেও এসেছে “আল-ইকায” পৃষ্ঠা ৫২, ইবনুল কাইয়িম আবু ইউসুফ থেকে একথার বিশুদ্ধতার কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন। অতিরিক্ত কথাটি যা আবু ইউসুফকে সম্বোধন করে বলেছেন। “আল ইকায” এর ৬৫ পৃষ্ঠার টীকায় ইবনু আব্দিল বার ও ইবনুল কাইয়িম ও অন্যান্যদের থেকে উদ্ধৃত হয়েছে।

আমি বলছিঃ যদি তাদের কথা এমন হয়। এ সব লোকদের ব্যাপারে যারা তাদের কথার দলীল কি সেটা জানে নাই তবে ঐসব লোকদের ব্যাপারে তাদের কি বক্তব্য হতে পারে যারা তাদের (ইমামদের) কথার বিপক্ষে দলীল রয়েছে তা জানার পরেও দলীলের বিপরীত ফাতাওয়া দেয়। অতএব হে পাঠক! বাক্যটি নিয়ে আপনি ভেবে দেখুন, কেননা এ একটি বাক্যই তাকলীদের (অন্ধ অনুসরণের) প্রাচীর ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাইতো কোন এক মুকল্লিদ আলিমকে দলীল না জেনে ইমাম আবু হানীফার কথায় ফতওয়া দানে আমি বাধা প্ৰদান করলে তিনি এটাকে ইমাম সাহেবের কথা বলে অস্বীকার করেন।

[3] আমি বলছিঃ এর কারণ এই যে, ইমাম সাহেব প্রায়ই কিয়াস করে কথা বলতেন, তাই পরবর্তীতে যখন অপর একটি আরো শক্তিশালী কিয়াস প্রকাশ পেয়ে যেত অথবা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীছ তার কাছে পৌছে যেত তখন তিনি এটাই গ্ৰহণ করতেন। আর তার কথা পরিহার করতেন। শা’রানী “আল মিযান” গ্রন্থের ১ম খণ্ড ৬২ পৃষ্ঠায় বলেন যার সংক্ষেপ হচ্ছে এইঃ

আমরা এবং প্রত্যেক ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে এই বিশ্বাস রাখি যে, যদি তিনি শরীয়ত (হাদীছ) লিপিবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন আর হাফিযগণ তা একত্রিত করার জন্য বিভিন্ন দেশ ও সীমান্তে ভ্ৰমণ করে তা অর্জন করে ফেলতেন এবং তিনি তা হস্তগত করতে পারতেন তাহলে ইমাম সাহেব এগুলোই গ্ৰহণ করতেন। আর যতসব কিয়াস করেছিলেন তা পরিহার করতেন। ফলে তাঁর মাযহাবেও অন্যান্য মাযহাবের ন্যায় কিয়াস কমে আসত। কিন্তু শরীয়তের দলীল যেহেতু তার যুগে তাবেঈন ও তাবে’ তাবেঈনদের কাছে বিভিন্ন শহর, গ্রাম ও সীমান্তে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে ছিল তাই তার মাযহাবে আবশ্যিকভাবে অন্যান্য ইমামদের চেয়ে বেশী কিয়াসের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তা এই জন্য যে, তিনি তার কিয়াসকৃত মাসআলাগুলোতে স্পষ্ট দলীল পাননি। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামগণ তার চেয়ে ব্যতিক্রম। কেননা হাদীছ শাস্ত্রের পণ্ডিতগণ তাঁদের যুগে হাদীছ অন্বেষণ ও সংকলনের কাজ আঞ্জাম দিয়ে ফেলেছিলেন, তাতে শরীয়তের এক হাদীছ অপর হাদীছের ব্যাখ্যা প্ৰদান করেছে। এটাই ছিল তার মাযহাবে কিয়াস বেশী ও অন্যান্যদের মাযহাবে তা কম হওয়ার (মূল) কারণ।

আবুল হাসানাত লক্ষীেভী “আন-নাফিউল কাবীর” গ্রন্থের ১৩৫ পৃষ্ঠায় এতদ সংক্রান্ত বিষয়ের এক বৃহৎ অংশ উদ্ধৃত করেন এবং তার উপর সমর্থনমূলক এবং ব্যাখ্যাদানমূলক টীকা সংযুক্ত করেন। উৎসুক মহল তা পড়ে দেখতে পারেন।

আমি বলছিঃ আবু হানীফা (রহঃ) কর্তৃক অনিচ্ছাকৃতভাবে বিশুদ্ধ হাদীছ বিরোধী কথার পক্ষে যখন এহেন উযর বিদ্যমান, যা নিঃসন্দেহে গ্ৰহণযোগ্য। কেননা আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তাঁর সাধ্যাতীত দায়িত্ব চাপান না। অতএব তাকে কিছু সংখ্যক অজ্ঞ লোক যেভাবে কটাক্ষ করে কথা বলে তা মোটেও বৈধ নয়। বরং তার ব্যাপারে আদব রক্ষা করা ওয়াজিব। কেননা তিনি মুসলিম সমাজের ইমামগণের একজন যাদের দ্বারা এই দীনকে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অমৌলিক মাসআলার ক্ষেত্রে অনেক কিছু পৌছেছে। তিনি ভুল শুদ্ধ যা কিছু বলেছেন সর্বাবস্থায়ই প্রতিদান প্রাপ্ত হবেন। অপরপক্ষে তাঁর ভক্তদেরও উচিত হবে না যে, তারা তার হাদীছ বিরোধী কথাগুলো ধরে থাকবে। কেননা এটা তার মাযহাব নয়। যেমন আপনি এ ব্যাপারে তার কথাগুলো কিছুক্ষণ পূর্বে দেখলেন, তাই বলি (উপরোক্ত লোকদের) একদল হচ্ছে এক প্রান্তে আর অপর দল হচ্ছে অন্য প্রান্তে । অথচ হক বিরাজ করছে উভয় দলের মাঝামাঝিতে। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে এবং ঈমান আনয়নে আমাদের অগ্রণী ভাইদেরকে ক্ষমা কর। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখা না। হে আমাদের রব! নিশ্চয় তুমি অতি মমতাময় দয়ালু। (সূরা আল-হাশর ১০ আয়াত)

[4] ফাল্লানীর “আল ইকায” গ্রন্থের ৫০ পৃষ্ঠায় তিনি এটাকে ইমাম মুহাম্মদের কথা বলেও উল্লেখ করেন। অতঃপর বলেনঃ এ কথা এবং এ মর্মের অন্য সব বক্তব্য মুজতাহিদের জন্যে নয় কেননা তিনি ইমামদের কথার প্রয়োজন বোধ করেন না। বরং এটি (ইমামের কথাকে দলীলের সঙ্গে মিলিয়ে মানা) মুকাল্লিদ-এর জন্যই প্রযোজ্য।

আমি বলছিঃ এর উপরেই ভিত্তি করে ইমাম শা'রানী “আল মিযান” গ্রন্থের ১ম খণ্ড ২৬ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ তুমি যদি বল, তবে সেই হাদীছকে কী করব যা আমার ইমামের মারা যাওয়ার পর বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়েছে এবং তিনি তা গ্রহণ করেননি। উত্তর হবে এই যে, তোমার পক্ষে ওয়াজিব হবে হাদীছের উপর আমল করা। কারণ তোমার ইমাম যদি এটি পেতেন এবং তা তার কাছে বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়ে যেত। তবে হয়তোবা তিনি এটাই মেনে নেয়ার জন্য তোমাকে নির্দেশ দিতেন। কারণ ইমামগণের প্রত্যেকেই শরীয়তের হাতে বন্দী। যে ব্যক্তি তা মেনে নিল সে দুই হাতে সমস্ত মঙ্গল অর্জন করে ফেলল। আর যে ব্যক্তি বললঃ আমার ইমাম যে হাদীছ গ্ৰহণ করেছেন কেবল সেই হাদীছের উপরেই আমি আমল করব সে ব্যক্তি থেকে অনেক মঙ্গল ছাড়া পড়বে যেমনটি হচ্ছে অনেক মাযহাবের ইমামদের অন্ধ অনুসারীদের বেলায়। তাদের পক্ষে উত্তম ছিল ইমামগণের অছিয়াত অনুযায়ী তাদের পরে যে সব হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়েছে তার উপর আমল করা। কেননা আমাদের বিশ্বাস যে, তারা যদি বেঁচে থাকতেন এবং তাদের ইন্তিকালের পরে যেসব হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়েছে তা পেয়ে যেতেন। তবে অবশ্যই তা গ্রহণ করতেন এবং তার উপরে আমল করতেন। আর যতসব কিয়াস ও কথা তাদের পক্ষ থেকে এসেছে তা পরিহার করতেন।

ইমাম মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

إنما أنا بشر آخطیء و أصیب، فانظروا فی رأیي، فکل ما وافق الكتاب والسنة فخذوه، وکل مالم يوافق الکتاب والسنة فاترکوه

অর্থঃ আমি নিছক একজন মানুষ। ভুলও করি শুদ্ধও বলি। তাই তোমরা লক্ষ্য করো আমার অভিমতের প্রতি। এগুলোর যতটুকু কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মুলো গ্রহণ কর আর যতটুকু এতদুভয়ের সাথে গর্মিল হয় তা পরিত্যাগ কর।[1]

ليس أحد بعد النبى صلى الله عليه وسلم إلا ويؤخذ من قوله ويترك، إلا النبي صلى الله عليه وسلم (২)

অর্থঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতীত অন্য যে কোন লোকের কথা গ্ৰহণীয় এবং বর্জনীয় (কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল কথা গ্ৰহণীয়)।[2]

(৩) ইবনু অহাব বলেনঃ আমি মালিক (রাহঃ)-কে ‘ওযু তে পদ যুগলের অঙ্গুলিসমূহ খিলাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি তিনি (উত্তরে) বলেনঃ লোকদেরকে তা করতে হবে না। (ইবনু অহাব) বলেনঃ আমি তাকে লোকসংখ্যা কমে আসা পর্যন্ত ছেড়ে রাখলাম। অতঃপর বললাম, আমাদের কাছে এ বিষয়ে হাদীছ রয়েছে, তিনি বললেন, সেটা কী? আমি বললামঃ আমাদেরকে লাইছ ইবনু ছা’য়াদ, ইবনু লহীয়াহ ও আমর ইবনুল হারিছ ইয়াযীদ ইবনু আমর আল মু’য়াফিরী থেকে তিনি আবু আব্দির রহমান আল হুবালী থেকে তিনি আল মুসতাউরিদ বিন শাদ্দাদ আল কুরাশী থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ

رایت رسول الله صلى الله عليه وسلم یدلك بخنصره ما بین اصابع رجلیه

অর্থঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছি তিনি তাঁর কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা পদযুগলের অঙ্গুলিগুলোর মধ্যভাগ মর্দন করেছেন। এতদশ্রবণে ইমাম মালিক বললেন, এ-তো সুন্দর হাদীছ। আমি এ যাবৎ এটি শুনিনি। পরবর্তীতে তাঁকে জিজ্ঞাসিত হতে শুনেছি তাতে তিনি অঙ্গুলি মর্দনের আদেশ দিতেন।[3]

[1] ইবনু আব্দিল বর “আল-জামি’উস সাগীর” গ্রন্থে (২/৩২) তাঁর থেকে ইবনু হাযম “উসুলুল আহকাম” গ্রন্থে (৬/১৪৯) ফাল্লানী ৭২ পৃঃ।

[2] এটি ইমাম মালিকের কথা হিসেবে পরবর্তীদের কাছে প্ৰসিদ্ধি লাভ করে। তার থেকে বর্ণিত হওয়ার বিশুদ্ধতা ইবনু আব্দিল হাদী সাব্যস্ত করেছেন, “ইরশাদুস সালেক” (১/২২৭)। ইবনু আব্দিল বার ঘটনাটি “আল-জামে’” এর (২/৯১) পৃষ্ঠায় এবং ইবনু হাযম “উসুলুল আহকাম” এর (৬/১৪৫, ১৭৯) পৃষ্ঠায় হাকীম ইবনু উতাইবাহ ও মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন। তাকীউদ্দীন আস সুবকী “আল ফাতওয়া” এর (১/১৪৮) পৃষ্ঠায় ইবনু আব্বাসের কথা হিসাবে উদ্ধৃত করেন যার সৌন্দর্যে তিনি বিমোহিত হন। অতঃপর বলেন, কথাটি (মূলতঃ) ইবনু আব্বাসের কাছ থেকে মুজাহিদ গ্রহণ করেন, আর তাদের দু'জনের কাছ থেকে ইমাম মালিক তা গ্ৰহণ করেন এবং তার কথা বলে তা প্রসিদ্ধি লাভ করে।

আমি বলছিঃ অতঃপর তাদের কাছ থেকে ইমাম আহমাদ এটি গ্রহণ করেন, তাই আবু দাউদ “মাসায়েল ইমাম আহমাদ” গ্রন্থের ২৭৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন, আমি আহমদকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ এমন কোন লোক নাই যার সব কথাই গ্রহণযোগ্য কেবল নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতীত।

[3] ইবনু আবী হাতিম “আলজারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থের ভূমিকা (৩১-৩২ পৃঃ)। বাইহাকী এটিকে পূর্ণরূপে “আস-সুনান” গ্রন্থের (১/৮১)-তে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে এ মর্মে অনেক চমৎকার চমৎকার কথা উদ্ধৃত হয়েছে।[1] তাঁর অনুসারীগণ তাঁর এ সব কথায় অধিক সাড়া দিয়েছেন এবং উপকৃতও হয়েছেন। কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে।

مامن أحد إلا وتذهب عليه سنة لرسول الله صلى الله عليه وسلم وتعزب عنه، فمهما قلت من قول، أو أصلت من أصل فيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم خلاف ما قلت، فالقول ماقال رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهو قولي

প্রত্যেক ব্যক্তি থেকেই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কিছু সুন্নাহ গোপন থাকবেই ও ছাড়া পড়বেই। তাই আমি যত কথাই বলেছি অথবা মৌলনীতি উদ্ভাবন করেছি। সেক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমার বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য পাওয়া গেলে আল্লাহর রাসূলের কথাই হচ্ছে চূড়ান্ত আর এটিই হবে আমার (বরণীয়) কথা।[2]

أجمع المسلمون على أن من استبان له سنة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يحل له أن يدعها لقول أحد

(২) মুসলমানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যার কাছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহ (হাদীছ) পরিষ্কাররূপে প্রকাশ হয়ে যায় তার পক্ষে বৈধ নয় অন্য কারো কথায় তা বর্জন করা।[3]

إذا وجدتم في كتابي خلاف سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم فقولوا بسنة رسول الله صلى الله عليه وسلم ودعوا ماقلت. وفي رواية : فاتبعوها، ولا تلتفتوا إلى قول أحد

(৩) তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহ্ বিরোধী কিছু পাবে তখন আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতানুসারে কথা বলবে, আর আমি যা বলেছি তা ছেড়ে দিবে। অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ তোমরা তারই (সুন্নতেরই) অনুসরণ কর, আর অন্য কারো কথার প্রতি ভ্ৰক্ষেপ করা না।[4]

إذا صح الحديث فهو مذهبي (8)

অর্থঃ হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়ে গেলে এটাই আমার গৃহীত পন্থা (মাযহাব)।[5]

أنتم أعلم بالحديث والرجال مني، فإذا كان الحديث الصحيح، فأعلموني به أي شيء يكون : كوفيا أو بصريا أو شاميا، حتى أذهب إليه إذا کان صحیحا

(৫)আপনারাই[6] হাদীছ বিষয়ে ও তার রিজালের (বর্ণনাকারীদের) ব্যাপারে আমার অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত, তাই ছহীহ হাদীছ পেলেই আমাকে জানাবেন চাই তা কুফীদের বর্ণনাকৃত হোক চাই বাছারীর হোক অথবা শামীর (সিরিয়ার) হোক, বিশুদ্ধ হলে আমি তাই গ্ৰহণ করব।

كل مسألة صح فيها الخبر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عند أهل النقل بخلاف ما قلت فأنا راجع عنها فى حياتي وبعد موتي

(৬) যে বিষয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমার কথার বিরুদ্ধে হাদীছু বর্ণনাকারীদের নিকট বিশুদ্ধরূপে কোন হাদীছ পাওয়া যাবে আমি আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর তা থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম।[7]

اذا رأيتمنى أقول قولا وقد صح عن النبي صلى الله عليه وسلم خلافه فاعلموا أن عقلي قد ذهب

(৭) যখন তোমরা দেখবে যে, আমি এমন কথা বলছি। যার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ হাদীছ রয়েছে। তবে জেনে রেখ যে, আমার বিবেক হারিয়ে গেছে।[8]

كل ماقلت فكان عن النبي صلى الله عليه وسلم خلاف قولي مما يصح فحديث النبى أولى فلا تقلدوني

() আমি যা কিছুই বলেছি তার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে ছহীহ সূত্রে হাদীছ এসে গেলে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীছই হবে অগ্ৰাধিকারযোগ্য, অতএব আমার অন্ধ অনুসরণ করো না।[9]

كل حديث عن النبي صلى الله عليه وسلم فهو قولي، وإن لم تسمعوه مني

(৯) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সব হাদীছই আমার বক্তব্য যদিও আমার মুখ থেকে তা না শুনে থাক।[10]

[1] ইবনু হাযম বলেনঃ (৬/১১৮) যে সব ফকীহদের অন্ধ অনুসরণ করা হয় তারা নিজেরাই তাকলীদ খণ্ডন করেছেন, তারা স্বীয় সাথীদেরকে নিজেদের তাকলীদ থেকে নিষেধাজ্ঞা শুনিয়েছেন। এ ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ ছিলেন কঠিনতম । ছহীহ হাদীছ অনুসরণ ও দলীল যা অপরিহার্য করে তা গ্রহণের গুরুত্ব তাঁর কাছে যত বেশী ছিল তা অন্যদের কাছে ছিল না। তাঁকে অন্ধ অনুসরণ করার প্রতিও তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং তিনি তা ঘোষণাও করেছেন। আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে উপকার করুন এবং তাকে বড় ধরনের প্রতিদান দান করুন। তিনি বহু মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসার সোপান ছিলেন।

[2] হাকিম স্বীয় অবিচ্ছিন্ন সূত্রে শাফি'ঈ থেকে বর্ণনা করেন যেমন রয়েছে ইবনু আসাকির এর “তারীখে দেমাস্ক” গ্রন্থের (১৫/১/৩ পৃঃ), ইলামুল মুয়াক্কিঈন গ্রন্থে (২/৩৬৩, ৩৬৪ পৃঃ) ও আল ইকায গ্রন্থে (১০০ পৃষ্ঠা)।

[3] ইবনুল কাইয়িম (২/৩৬১), আল ফাল্লানী (৬৮ পূঃ)।

[4] আল হারাবীর “যাম্মুল কালাম” গ্রন্থে (৩/৪৭,১), খতীবের “আল ইহতিজাজু বিশ-শাফেঈ” ইবনু আসাকির (১৫/৯/১), নববীর “আল-মাজমূ” গ্রন্থে (১/৬৩), ইবনুল কাইয়িম (২/৩৬৮), আল ফাললানী (১০০ পৃঃ) অপর বর্ণনাটি আবু নুআইমের “আল-হিলইয়া” গ্রন্থে (৯/১০৭), ইবনু হিব্বানের “আস-সহীহ” গ্রন্থে (৩/২৮৪-ইহসান)। স্বীয় বিশুদ্ধ সনদে ইমাম থেকে তার (আবু নুআইমের) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

[5] নববীর পূর্বোক্ত কিতাবে, শা’রানী তার গ্রন্থে (১/৫৭ পৃঃ) এটাকে হাকিম বাইহাকীর কথা বলে উল্লেখ করেন। আল ফাল্লানী (১০৭ পৃঃ)।

ইমাম শা’রানীর বলেনঃ হযম বলেন, (বাক্যটির অর্থ) তাঁর নিকট অথবা অন্য কোন ইমামের নিকট (হাদিছটি) বিশুদ্ধ হয়ে গেলে (সেটাই আমার মাযহাব)। আমি বলছিঃ ইমাম সাহেবের সমাগত বাণী সংশ্লিষ্ট কথার পরে স্পষ্টতঃ এই (ইবনু হযমের ব্যাখ্যারই) অর্থই বহন করে।

ইমাম নববীর বক্তব্যের সংক্ষেপ হচ্ছেঃ এই কথার উপর আমাদের সাথীগণ আমল করেছেন ফজরের আযানে “আস সলাতু খাইরুম মিনান নাওম” বলে ছলাতের জন্য মানুষকে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান করার বিষয়ে (যার তিনি বিরোধী ছিলেন) এবং ইহরামের অবস্থা থেকে রোগের উযর সাপেক্ষে হালাল হওয়ার শর্তের ব্যাপারে (যে শর্ত তিনি করেছিলেন, অথচ রোগ ছাড়া অন্য কারণেও ইহরাম মুক্ত হওয়ার সপক্ষে হাদীছ এসেছে)। এতদুভয় বিষয় ছাড়াও আরো যা। (তার) মাযহাবের কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আমাদের সাথীদের মধ্যে যারা (ইমামের ফাতাওয়ার বিপক্ষে) হাদীছ দ্বারা ফাতাওয়া দিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে তারা হচ্ছেনঃ আবু ইয়াকুব আল বুওয়াইত্বী, আবুল কাসিম আদদারিকী, আর যারা (ইমাম সাহেবের এই বাণীকে) আমল দিয়েছেন আমাদের মুহাদ্দিছ সাথীদের মধ্য হতে তারা হচ্ছেনঃ ইমাম আবূ বকর আল বাইহাকী ও অন্যান্যগন। আমাদের পূর্ববর্তীদের একদল এমন ছিলেন যারা কোন বিষয়ে ইমাম শাফিঈর মাযহাবের বিপরীতে হাদীছ পেলে তারা হাদীছের উপরেই আমল করতেন এবং এ দিয়েই ফাতাওয়া প্ৰদান করতেন। আর বলতেনঃ হাদীছের সাথে যা মিলে তাই ইমাম শাফিঈর মাযহাব।

শাইখ আবু আমর বলেন, শাফিঈদের মধ্যে যিনি এমন হাদীছ পান যা স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতা করে তখন তিনি ভেবে দেখেন, যদি তাঁর মধ্যে ব্যাপক ইজতিহাদের উপকরণগুলো পরিপূর্ণ থাকে অথবা শুধু এই অধ্যায় বা বিষয়ে তা পাওয়া যায়। তবে হাদীছের উপর আমল করার ক্ষেত্রে তার স্বাধীনতা রয়েছে। আর যদি তার মধ্যে ইজতিহাদের উপায়-উপকরণগুলো না পাওয়া যায়, আর হাদীছ বিরোধী কাজ তাঁর পক্ষে কঠিন মনে হয়। অথচ খুঁজাখুঁজি করে হাদীছের বিপরীত বক্তব্য পোষণকারীর পক্ষে কোন সমুচিত জওয়াব না পাওয়া যায় তবে ইমাম শাফিঈ ছাড়া অন্য কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ ইমাম যদি এর উপর আমল করে থাকেন তবে তার এটির উপর আমল করার অধিকার রয়েছে। আর এক্ষেত্রে এ নীতি অবলম্বন ইমামের মাযহাব পরিত্যাগের ব্যাপারে ‘উযর’ বলে বিবেচিত হবে। তাঁর এ কথা সুন্দর ও পালনীয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞাত।

আমি বলছিঃ এখানে অপর একটি পরিস্থিতি থেকে গেছে যা ইবনুছ ছালাহ (আবু আমর) উল্লেখ করেননি তা হচ্ছে যখন হাদীছের উপর আমলকারী কাউকে না পাওয়া যায় তখন কী করবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তাকীউদ্দীন সুবকী। তাঁর “মা’না কওলীশ শাফিঈ ... ইযা সাহহাল হাদীছ ...” নামক গ্রন্থে (৩/১০২ পৃঃ) তিনি বলেনঃ আমার নিকট হাদীছ অনুসরণ করাই উত্তম। কেউ ধরে নিক যে, সে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্মুখে রয়েছে এবং তার কাছ থেকেই হাদীছ শুনল, তবে কি হাদীছ মান্য করতে দেরী করার কোন অবকাশ থাকবে? আল্লাহর শপথ, থাকবে না। আর প্রত্যেকেই তার বুঝ অনুযায়ী (হাদীছের প্রতি) আমল করতে বাধ্য। উক্ত আলোচনা ও তথ্যের পূর্ণ বিবরণ পাবেন “ই’লামুল মুয়াক্কিঈন” (২/৩০২ ও ৩৭০) এবং ফুল্লানীর কিতাব যার নাম

إيقاظ همم أولي الأبصار للإقتداء بسيد المهاجرين والأنصار وتحذيرهم عن الإبتداع الشائع في القرى والأمصار من تقليد المذاهب مع الحمية والعصبية بين فقهاء الأعصار

) কিতাবটি স্বীয় অধ্যায়ে অতুলনীয়। প্রত্যেক সত্য প্রিয় ব্যক্তির কর্তব্য অনুধাবন ও গবেষণামূলক মানসিকতা নিয়ে এটি পাঠ করা।

[6] সম্বোধনটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে করেছেন, কথাটি ইবনু আবি হাতিম “আদাবুশ শাফিঈ” গ্রন্থের ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠাতে বর্ণনা করেন, আবু নুআইম “আল হিলইয়া” গ্রন্থের (৯/১/০৬)। খতীব “আল ইহতিজাজ বিশ-শাফিঈ” গ্রন্থের (৮/১) খাতীব থেকে ইবনু আসাকির তার গ্রন্থে (১৫/৯/১) পৃষ্ঠা ইবনু আব্দিল বার “আল ইনতিকা” গ্রন্থে পৃষ্ঠা ৭৫। ইবনুল জাউযী “মানাকিব ইমাম আহমাদ” পৃষ্ঠা ৪৯৯ ও আল-হারাবী তার গ্রন্থের (২/৪৭/২) পৃষ্ঠাতে তিনটি সূত্র পথ দিয়ে আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, শাফিয়ী তাকে (কথাটি) বলেছেন। সুতরাং কথাটি তাঁর থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত। এজন্যেই ইমাম সাহেবের দিকে এর সম্বন্ধকে সুদৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করেন ইবনুল কাইয়িম “আল-ই’লাম” গ্রন্থের (২/৩২৫) পৃষ্ঠা এবং আল ফুল্লানী “আল-ইকায” এর ১৫২ পৃষ্ঠায়। কথাটি উল্লেখ করতঃ বলেনঃ বাইহাকী বলেন, এজন্যই তাঁর (ইমাম শাফি'ঈর) দ্বারা বেশী হাদীছ গ্ৰহণ সম্ভব হয়, তিনি হিজায, সিরিয়া, ইয়ামন ও ইরাকবাসীকে জমায়েত করেন, তার কাছে যে হাদীছই বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়েছে তাই গ্ৰহণ করেছেন। এতে কোনরূপ পক্ষপাতিত্ব করেননি এবং তাঁর স্বদেশী মাযহাবের মিষ্টি কথার দিকে ধাবিত হননি। যখনই তিনি অন্য কারো নিকট হক প্রকাশিত পেয়েছেন তখনই তা গ্ৰহণ করেছেন। তাঁর পূর্বে যারা ছিলেন তাদের কেউ কেউ স্বজাতীয় ও স্বদেশীয় মাযহাবের জানা কথার উপরেই আমল সীমাবদ্ধ রাখেন, এর বিপরীত বিষয়ের বিশুদ্ধতা জানার চেষ্টা করেননি, আল্লাহ আমাদেরকে ও তাদেরকে ক্ষমা করুন।

[7] আবু নুআইম তাঁর “আল-হিলইয়া” গ্রন্থে (৯/১০৭ পৃঃ), আল হারাবী তার গ্রন্থের (১/৪৭ পৃঃ), ইবনুল কাইয়িম “ইলামুল মুয়াক্কিঈন” গ্রন্থের (২/৩৬৩ পৃঃ), আল ফুল্লানী (১০৪ পৃঃ)।

[8] ইবনু আবী হাতিম “আদাবুশ শাফেঈ” গ্রন্থে (৯৩ পৃঃ), আবুল কাসিম আস সামার কান্দি “আল-আমালী” তে, আরো রয়েছে আবু হাফছ আল মুআদ্দাব এর “আল মুনতাকী মিনহা” (১/২৩৪)-তে আবু নুআইম “আল-হিলইয়া” (৯/১০৬ পৃঃ), ইবনু আসাকির (১৫/৯/২) বিশুদ্ধ সনদে।

[9] ইবনু আবী হাতিম (৯৩, পৃঃ), আবু নুআইম ও ইবনু আসাকির (১৫/৯/২) বিশুদ্ধ

সনদে।

[10] ইবনু আবী হাতিম। এর (৯৩-৯৪ পৃঃ)।
৪। আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ)

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ইমামগণের মধ্যে সর্বাধিক হাদীছ সংগ্ৰহকারী এবং তা বাস্তবে রূপায়ণকারী ছিলেন। তাই তিনি শাখা প্রশাখামূলক কথা ও মতামত সম্বলিত কিতাব লিখা অপছন্দ করতেন।[1]

তিনি বলেন,

لاتقلدنی، ولا تقلد مالکا ولا الشافعی ولا الاوزاعی ولا الثوري، وخذ من حيث أخذوا

(১) তুমি আমার অন্ধ অনুসরণ করো না; মালিক, শাফিয়ী, আওযায়ী, ছাউরী এদেরও কারো অন্ধ অনুসরণ করো না বরং তারা যেখান থেকে (সমাধান) গ্ৰহণ করেন তুমি সেখান থেকেই তা গ্রহণ করা।[2]

وفى رواية : لاتقلد دينك أحدا من هؤلاء، ماجاء عن النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه فخذ به ثم التابعين بعد الرجل فيه مخير

অপর বর্ণনা রয়েছেঃ তোমরা দীনের ব্যাপারে এদের কারো অন্ধ অনুসরণ করবে না। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর ছাহাবাদের থেকে যা কিছু আসে তা গ্ৰহণ কর, অতঃপর তাবিয়ীদের। তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে কোন ব্যক্তির জন্য যে কারো থেকে গ্ৰহণ করার স্বাধীনতা রয়েছে। আবার কোন সময় বলেছেন, অনুসরণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর ছাহাবাদের থেকে যা আসে তার অনুসরণ করবে। অতঃপর তাবিয়ীদের পর থেকে সে (যে কারো অনুসরণে) স্বাধীন থাকবে।[3]

رأي الأوزاعي، ورأي مالك، ورأي أبي حنيفة كله رأي، وهو عندي سواء وانما الحجة فى الاثار

(২) আওযায়ী, মালিক ও আবু হানীফা প্রত্যেকের মতামত হচ্ছে মতামতই এবং আমার কাছে তা সমান (মূল্য রাখে), প্রমাণ রয়েছে কেবল হাদীছের ভিতর।[4]

من رد حدیث رسول الله صلى الله عليه وسلم فهو علی شفا هلکة

(৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীছ প্রত্যাখ্যান করলো সে ধ্বংসের তীরে উপনীত।[5]

এসবই হল ইমামগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-এর বক্তব্যসমূহ যাতে হাদীছের উপর আমল করার ব্যাপারে নির্দেশ রয়েছে এবং অন্ধভাবে তাদের অনুসরণ করা থেকে নিষেধ রয়েছে। কথাগুলো এতই স্পষ্ট যে, এগুলো কোন তর্ক বা ব্যাখ্যার অপেক্ষাই রাখে না।

অতএব যে ব্যক্তি ইমামদের কিছু কথার বিরুদ্ধে গেলেও সকল সুসাব্যস্ত হাদীছ আঁকড়ে ধরবেন তিনি ইমামদের মাযহাব বিরোধী হবেন না এবং তাদের তরীকা থেকে বহিষ্কৃতও হবেন না। বরং তিনি হবেন তাদের প্রত্যেকের অনুসারী। আরো হবেন, শক্ত হাতল মজবুতভাবে ধারণকারী, যে হাতল ছিন্ন হবার নয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শুধু ইমামদের বিরোধিতা করার কারণে সুসাব্যস্ত হাদীছ প্রত্যাখ্যান করে তার অবস্থা এমনটি নয়, বরং সে এর মাধ্যমে তাদের অবাধ্য হল এবং তাদের পূর্বোক্ত কথাগুলোর বিরোধিতা করল। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অর্থঃ তোমার প্রতিপালকের শপথ-তারা ঈমানদার হতে পারবে না। যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদ নিরসনে তোমাকে বিচারক মানবে, অতঃপর তোমার মীমাংসায় নিজেদের মনে কোন সংকীর্ণতা অনুভব করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে মেনে নিবে।[6]

তিনি আরো বলেনঃ

فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

অর্থঃ তাই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন ভীতিগ্ৰস্ত থাকে (কুফর, শিরক বা বিদআত দ্বারা) ফিৎনায় আক্রান্ত হওয়ার অথবা যন্ত্রণাদায়ক শান্তি প্ৰাপ্ত হওয়ার ব্যাপারে।[7]

হাফিয ইবনু রাজাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যার কাছেই নাবী (ছাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ পৌছে যায় এবং তিনি তা বুঝতে পারেন। তাহলে তার উপর এটাকে উম্মতের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া ও তাদের মঙ্গল কামনা করা এবং তার নির্দেশ পালন করার আদেশ প্ৰদান করা ওয়াজিব যদিও তা উম্মতের বিরাট কোন ব্যক্তিত্বের বিরোধী হয়। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ যে কোন বড় ব্যক্তির মতামত অপেক্ষা অধিক শ্রদ্ধা ও অনুসরণযোগ্য, যিনি (বড় ব্যক্তিত্ব) ভুলবশত কোন কোন ক্ষেত্রে নাবীর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করেন। এজন্যেই ছাহাবাগণ ও তৎপরবর্তী লোকেরা ছহীহ হাদীছের বিরুদ্ধাচরণকারীর প্রতিবাদ করেছেন।

বরং কখনও প্রতিবাদে কঠোরতাও পোষণ করেছেন।[8] বিদ্বেষ নিয়ে নয় বরং তিনি তাদের অন্তরের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন তাঁদের নিকট আরও প্রিয়তম এবং তাঁর আদেশ সব সৃষ্টিকুলের উর্ধে। তাই যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও অন্য কারো আদেশের মধ্যে বৈপরিত্য দেখা দিবে তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ প্রাধান্য পাওয়ার ও অনুসরণের অধিক যোগ্য হবে।

তবে এ নীতি নবীর বিপরীত প্রমাণিত কথার প্রবক্তার (মুজতাহিদের) বেলায় নয়, যেহেতু তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত[9] কারণ তিনি তাঁর নির্দেশের বিরোধীতাকে অপছন্দ করেন না। যখন তার বিপরীতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ প্রকাশ পেয়ে যায়।[10]

আমি বলছিঃ কিভাবেইবা তারা এটাকে অপছন্দ করবেন। অথচ তারা স্বীয় অনুসারীদেরকে এ বিষয়ে আদেশ প্রদান করেন, যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে এবং তারা অনুসারীদের উপর ওয়াজিব করেন নিজেদের কথাকে সুন্নাতের মোকাবিলায় পরিহার করতে। বরং ইমাম শাফি'ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সাথীদেরকে আদেশ দেন যে, তারা যেন বিশুদ্ধ হাদীছকে তাঁর দিকে সম্বন্ধ করে, যদিওবা তিনি এটি গ্রহণ করেননি। অথবা এর বিপরীত মত পোষণ করেন।

এ জন্যই তত্ত্ববিদ ইবনু দাকীকিল ঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) সেসব বিষয়গুলো একত্রিত করেন যাতে চার ইমামের মাযহাবই বিশুদ্ধ হাদীছের বিরোধিতা করেছে- এককভাবে বা যৌথভাবে, এবং তা এক বৃহৎ খণ্ডে লিপিবদ্ধ করেছেন। তার শুরুতে তিনি বলেনঃ মুজতাহিদ ইমামগণের দিকে এ সমস্ত বিষয়ের সম্বন্ধ করা হারাম, তাদের অন্ধ অনুসারী ফকীহদের কর্তব্য হবে এগুলো জানা, যাতে ইমামগণের দিকে এসবের সম্বন্ধ জড়িয়ে তাদের প্রতি মিথ্যারোপ না করতে হয়।[11]

[1] ইবনুল জাউযী “আল-মানাকিব” (১১২ পৃঃ)।

[2] আল ফাল্লানী (১১৩ পৃঃ), ইবনুল কাইয়িম “আল-ই’লাম” এর (২/৩০২ পৃঃ)।

[3] আবু দাউদ এর “মাসায়েল ইমাম আহমাদ” (২৭৬-২৭৭ পৃঃ)

[4] ইবনু আব্দিল বার “আল-জামে” এর (২/১৪৯)

[5] ইবনুল জাওযী (১৮২ পৃঃ)

[6] সূরা আন-নিসা ৬৫ আয়াত।

[7] সূরা আন-নূর ৬৩ আয়াত।

[8] আমি বলছিঃ যদিও সেই কঠোরতা স্বীয় পিতা ও উলামাদের বিরুদ্ধেও হয়। যেমন ইমাম ত্বাহাবী “শারহু মা’আনীল আসার” কিতাবে (১/৩৭২ পৃঃ) বর্ণনা করেন, আবু ইয়া'লা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৩/১৩১৭ পৃঃ আল-মাকতাবুল ইসলামী প্রকাশনীর) উত্তম সনদে সালিম বিন আদিল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যার রাবীগণ বিশ্বস্ত । তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে মসজিদে বসেছিলাম, হঠাৎ তার কাছে সিরিয়ার এক লোক আগমন করে এবং তাঁকে তামাত্তু হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। ইবনু উমর বললেনঃ এই প্রকার হজ্জ ভাল ও সুন্দর; লোকটি বললঃ আপনার পিতাও এই হজ্জ থেকে নিষেধ করতেন। ইবনু উমর বললেনঃ তোমার ধ্বংস হোক! আমার পিতা যদিও এ হজ্জ থেকে নিষেধ করেছেন কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটা করেছেন এবং এর আদেশ দিয়েছেন, তুমি কি আমার পিতার কথা গ্রহণ করবে নাকি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ? লোকটি বলল- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশই শিরোধার্য হবে। তখন তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছ থেকে উঠে চলে যাও। (আহমাদ হাঃ ৫৭০০)। এই অর্থে হাদীছ বর্ণনা করেন, (তিরমিযী ২/৮২ ভাষ্য, তুহফাতুল আহওয়াজীসহ) এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন, ইবনু আসাকির (৭/৫১/১) ইবনু আবি যি’ব থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেনঃ সা’দ বিন ইবরাহীম (অর্থাৎ আব্দুর রহমান বিন আওফের ছেলে) এক ব্যক্তির উপর রাবী'আহ বিন আবি আব্দির রহমান এর মত দ্বারা ফায়ছালা প্ৰদান করেন, আমি তাঁকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে তার ফায়ছালার বিপক্ষে হাদীছ শুনলাম, তাতে সা'দ রাবী’আহিকে বললেনঃ এ হচ্ছে ইবনু আবি যি'ব সে আমার কাছে বিশ্বস্ত। সে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আপনার ফায়ছালার বিরুদ্ধে হাদীছ পেশ করছে, রাবী'আহ তাকে বললেনঃ আপনি ইজতিহাদ করেছেন এবং আপনার ফায়ছালা প্ৰদানও সম্পন্ন হয়েছে, তখন সা’দ বললেনঃ কি আশ্চর্য আমি সা’দের ফায়ছালা বাস্তবায়ন করব। আর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ফায়ছালা বাস্তবায়ন করব না? বরং সা'দের মায়ের ছেলে সা’দ এর ফায়ছালাকে প্রত্যাখ্যান করব। আর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ফায়ছালা বাস্তবায়ন করব। এই বলে সা’দ বিচারাপত্ৰ হাজির করতে বলেন এবং তা ছিড়ে ফেলেন। আর যার বিরুদ্ধে ফায়ছালা দিয়েছিলেন তার পক্ষে রায় প্রদান করেন।

[9] আমি বলছিঃ বরং তিনি প্রতিদান প্রাপ্ত হবেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীঃ হাকিম (শাসক) যদি ইজতিহাদ করে ফায়ছালা প্ৰদান করেন আর তা সঠিক হয় তবে তার জন্য দু'টি প্রতিদান। আর যদি ইজতিহাদ করে ফায়াছালা প্ৰদান করেন এবং তাতে ভুল করে ফেলেন তবে তার জন্য একটি প্রতিদান। (বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য)

[10] “ই’কাযুল হিমাম” এর টীকায় তা উদ্ধৃত করেন (৯৩ পৃষ্ঠা)।

[11] আল ফাল্লানী (৯৯ পৃঃ)
সুন্নাহ্ অনুসরণ করতে যেয়ে ইমামগণের অনুসারীদের কর্তৃক তাঁদের কিছু কথা পরিহারের নমুনা

পূর্বোল্লিখিত কারণ সাপেক্ষে ইমামগণের অনুসারীদের-

وَقَلِيلٌ مِنَ الْآخِرِينَ ٭ عَلَىٰ سُرُرٍ مَوْضُونَةٍ

পূর্ববর্তদের অধিক সংখ্যক এবং পরবর্তদের অল্প সংখ্যক[1] লোক স্বীয় ইমামদের সব কথা গ্ৰহণ করতেন না। বরং তাদের অনেক কথাই তারা বাদ দিয়েছেন যখন সুন্নাহ বিরোধী বলে সাব্যস্ত হয়েছে। এমনকি ইমামদ্বয় মুহাম্মদ ইবনুল হাসান ও আবু ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁদের শাইখ আবু হানীফার (রহঃ) প্রায় এক তৃতীয়াংশ মাযহাব-এ বিরোধিতা করেছেন।[2] ফিকহের কিতাবগুলোই একথার বর্ণনার জন্য যথেষ্ট ।

এ ধরনের কথা ইমাম মুযানী[3] ও ইমাম শাফিঈর অন্যান্য অনুসারীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। আমরা যদি এর উপর দৃষ্টান্ত পেশ করতে যাই তবে কথা দীর্ঘ হয়ে যাবে এবং এই বইয়ে আমি সংক্ষেপস্থানের যে উদেশ্য পোষণ করেছি তা থেকেও বেরিয়ে পড়ব ।

তাই দুটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হবঃ

১। ইমাম মুহাম্মদ তাঁর “মুওয়াত্তা”[4] গ্রন্থে বলেন (১৫৮ পৃঃ) আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) ইসতিস্কার কোন ছলাত আছে বল মনে করতেন না। তবে আমার কথা হচ্ছে যে, ইমাম লোকজনকে নিয়ে দুরাকাআত ছলাত পড়বেন, অতঃপর দুআ করবেন এবং স্বীয় চাদর পাল্টাবেন শেষ পর্যন্ত।

২। ইছাম বিন ইউসুফ আল বালখী যিনি ইমাম মুহাম্মদ এর সাথী ছিলেন[5] এবং ইমাম আবু ইউসুফ এর সংশ্রবে থাকতেন[6] তিনি ইমাম আবু হানীফার কথার বিপরীত অনেক ফাতাওয়া প্ৰদান করতেন, কেননা (আবু হানীফা) যেগুলোর দলীল জানতেন না অথচ তার কাছে অন্যদের দলীল প্ৰকাশ পেয়ে যেত, তাই সেমতেই ফাতাওয়া দিয়ে দিতেন।[7] তাই তিনি রুকুতে গমনকালে ও রুকু থেকে উঠার সময় হস্তযুগল উত্তোলন (রফউল ইয়াদাইন) করতেন।[8] যেমনটি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির বর্ণনায় এসেছে। তাঁর তিন ইমাম কর্তৃক এর বিপরীত বক্তব্য তাকে এ সুন্নাত মানতে বাধা দেয়নি। এই নীতির উপরেই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে অটল থাকা ওয়াজিব, তার ইমাম ও অন্যান্যদের সাক্ষ্য দ্বারা এটাই ইতিপূর্বে প্রতীয়মান হয়েছে।

সারকথাঃ আমি আশা করব কোন মুকাল্লিদ (ভাই) তাড়াহুড়া করে এই কিতাবে অনুসৃত পন্থার উপর আঘাত হানবেন না এবং স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতার অজুহাত পেশ করে এতে সন্নিবেশিত সুনান (হাদীছ) সমূহের উপর আমল পরিত্যাগ করবেন না।

বরং আমি আশা করি তিনি আবশ্যকীয়ভাবে সুন্নাত প্রতিপালনে ও ইমামদের সুন্নাত বিরোধী কথা পরিত্যাগের ব্যাপারে পূর্বোল্লিখিত ইমামদের উক্তিগুলো স্মরণ করবেন। জানা উচিত যে, এই পদ্ধতির (দৃষ্টিভঙ্গির) উপর অপবাদ হানা অন্ধভাবে অনুসৃত ইমামের উপরেই অপবাদ হানার নামান্তর, তিনি যে ইমামই হোন, কেননা আমি এই পদ্ধতি তাদের (ইমামদের) থেকেই গ্ৰহণ করেছি, যেমন ইতিপূর্বে তার বর্ণনা অতিবাহিত হল। তাই যে ব্যক্তি এই পথে তাদের থেকে দিক নির্দেশনা গ্ৰহণ না করল সে মহাবিপদের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হল। কেননা তা সুন্নাত থেকে বিমুখ হওয়াকে নিশ্চিত করে, অথচ মতানৈক্যের ক্ষেত্রে হাদীছ অনুসরণ করতে এবং তার উপর ভরসা রাখতে আমরা আদিষ্ট হয়েছি। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অর্থঃ তোমার রবের শপথ তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে তোমাকে বিচারক মেনে নিবে, অতঃপর তোমার মীমাংসায় নিজেদের অন্তরে কোনরূপ সংকীর্ণতা পোষণ করবে না, এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিবে।[9]

আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করছি তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যাদের ব্যাপারে তিনি বলেছেনঃ

إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ٭ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ

অর্থঃ মুমিনদেরকে যখন তাদের মধ্যে বিচার মীমাংসার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তাদের বক্তব্য এই হওয়া উচিত যে, তারা বলবেঃ আমরা শুনলাম এবং মানলাম আর তারাই হচ্ছে সফলকাম। আর যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আর আল্লাহকে ভয় করে ও তার শাস্তির বিষয়ে আতঙ্কিত থাকে তারাই কৃতকার্য[10]

[1] সূরা ওয়াক্কিআহ ১৪-১৫ আয়াত।

[2] ইবনু আবিদীন “আল-হাশিয়া” এর (১/১৬২ পৃঃ), লক্ষনোভী “আন-নাফিউল কাবীর” (৯৩ পৃঃ), উক্ত কথার সম্বন্ধ গাযালীর দিকে করেছেন।

[3] তিনি তার শাফেঈ ফিকহ সংক্ষেপায়ন “মুখতাসার ফী ফিকহিশ শাফেঈ” গ্রন্থের শুরুতে বলেন, যা ইমাম শাফিঈর গ্ৰন্থ “আল-উম্ম” এর টীকায় ছাপানো হয়েছে। কথাটি হচ্ছে, আমি এই কিতাবটি সংক্ষেপ করেছি। মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস আশশাফি'ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ইলম থেকে এবং তার কথার মর্ম নিয়ে যাতে করে আগ্রহী ব্যক্তির নিকটবর্তী করে দিতে পারি। সাথে সাথে জানিয়ে দিয়েছি ইমাম সাহেব কর্তৃক তাঁর বা অন্য কারো অন্ধ অনুসরণের নিষেধাজ্ঞার কথা যাতে করে সে তার দ্বীনের ব্যাপারে বিবেচনা করতে পারে এবং তার ব্যাপারে নিজের সার্থেই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে।

[4] তিনি এই গ্রন্থে প্রায় বিশটা বিষয়ে স্বীয় ইমামের বিরোধিতা করেন, এর স্থানগুলোর প্রতি (পৃষ্ঠা উল্লেখ করতঃ) ইঙ্গিত করে দিচ্ছি- ৪২, ৪৪, ১০৩, ১২০, ১৫৮, ১৬৯, ১৭২, ১৭৩, ২২৮, ২৩০, ২৪০, ২৪৪, ২৭৪, ২৭৫, ২৮৪, ৩১৪, ৩৩১, ৩৩৮, ৩৫৫, ৩৫৬, মুওয়াত্বা মুহাম্মদ এর টীকা “আত-তা’লীকুল মুমাজ্জাদ আলা মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ” থেকে সংগৃহীত।

[5] তার কথা ইবনু আবিদীন তার “আল-হাশিয়া” তে উল্লেখ করেন (১/৭৪) ও “রসমুল মুফতী” গ্রন্থে (১/১৭) কুরাশী এটিকে “আল জাওয়াহিরুল মুযীয়াহ কী তবাকাতিল হানাফিয়াহ” (৩৪৭ পৃঃ)-তে উল্লেখ করেন এবং বলেনঃ তিনি হাদীছের অনুসারী বিশ্বস্ত লোক ছিলেন, তিনি ও তাঁর ভাই ইবরাহীম স্বীয় যুগে বলখের দুই শাইখ ছিলেন।

[6] আল-ফাওয়াইদুল বাহীইয়াহ কী তারাজিমিল হানাফিয়াহ

[7] “আল-বাহরুর রা’ইক” (৬/৯৩), রসমুল মুফতী (১/২৮ পৃঃ)

[8] “আল ফাওয়াইদ” (১১৬ পৃঃ) অতঃপর সুন্দর টীকা সংযোজন করে বলেনঃ আমি বলছি, এ থেকে জানা গেল আবু হানীফা (রহঃ) থেকে মাকহুলের এ বর্ণনাটির বাতিল হওয়ার কথা যাতে রয়েছেঃ যে ব্যক্তি ছলাতে রাফউল ইয়াদাইন করবে তার ছলাত বিনষ্ট হবে। এ সেই বর্ণনা যেটি নিয়ে আমীর কাতিব আল ইতকানী বিভ্রান্ত হয়েছেন। যেমনটি তার জীবনীতে বর্ণিত হয়েছে। কেননা ইছাম বিন ইউসুফ আবু ইউসুফ এর সহচরবৃন্দের অন্তর্ভুক্ত হয়েও তিনি রাফউল ইদাইন করতেন। অতএব যদি এই বর্ণনার কোন ভিত্তি থাকত তবে আবু ইউসুফ ও ইছাম তা জানতেন। তিনি বলেনঃ এ থেকে আরো জানা যায় যে, যদি কোন হানাফী কোন এক বিষয়ে স্বীয় ইমামের মাযহাব পরিত্যাগ করে প্রতিপক্ষের দলীল শক্তিশালী হওয়ার ভিত্তিতে- তবে এর কারণে তিনি তাঁর তাকলীদ থেকে বেরিয়ে পড়েন না। বরং তা হবে তাকলীদ পরিহারের রূপধারী প্রকৃত তাকলীদ। তুমি কি দেখনা ইছাম বিন ইউসুফ তিনি রাফউল ইয়াদাইন না করার ব্যাপারে আবু হানীফার মাযহাব পরিত্যাগ করেন। তার পরেও তাকে হানাফী গণনা করা হয়? তিনি বলেন, অভিযোগ আল্লাহর কাছেই পেশ করছি আমাদের যুগের অজ্ঞ লোকদের ব্যাপারে। কারণ কেউ শক্তিশালী দলীলের ভিত্তিতে ইমামের একটি মাসআলা পরিহার করলে তারা তাকে দোষারোপ করে। এমনকি মাযহাব থেকে বহিষ্কার করে দেয়। তবে তারা যেহেতু সাধারণ পাবলিক তাই তাদের ব্যাপারে আশ্চর্যের কিছু নেই, আশ্চর্য হতে হয় তাদের বেলায় যারা উলামাদের বেশ ধরেও তাদের (অজ্ঞদের) চালচলনের মত চালচলন প্রদর্শন করে যেন চতুস্পদ জন্তু।

[9] সূরা আন-নিসা ৬৫ আয়াত।

[10] সূরা আন-নূর ৫১-৫২ আয়াত।

এসব সংশয়ের জবাব দেয়া হচ্ছে এজন্য যে, দশ বৎসর পূর্বে অত্র কিতাবের ভূমিকায় যা লিখেছিলাম। এই অল্প সময়েই আমি মুসলিম যুব সমাজে দীন ও ইবাদতের ক্ষেত্রে ইসলামের স্বচ্ছ প্রস্রবণ কুরআন ও হাদীছের দিকে প্রত্যাবর্তন করা অপরিহার্য হওয়ার দিশা দানে তার চমৎকার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। আলহামদুলিল্লাহ তাদের মধ্যে সুন্নাহ মান্যকারী এবং এর মাধ্যমে ইবাদতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি তারা এই আদর্শে পরিচিতিও লাভ করে ফেলেছে। তবে অন্যদিকে তাদের কিছু সংখ্যককে আবার সুন্নাহ অনুসরণ করা থেকে থেমে থাকতে দেখেছি। আর এমনটি হয়েছে সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশমূলক আয়াত ও ইমামগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করার পর উক্ত নীতির অপরিহার্যতার ব্যাপারে সন্দেহ বশতঃ নয় বরং কিছু মুকাল্লিদের মাশাইখদের কাছ থেকে শ্ৰুত সংশয়ের ভিত্তিতে। তাই আমি সেগুলো উল্লেখ করে তার সমুচিত জবাব দানের প্রয়োজনীয়তা বোধ করি এই আশায় যে, তারাও সুন্নাহ অনুসরণকারীদের সাথে যোগ দিয়ে তার উপর আমল শুরু করে দিবেন। এবং এতে করে তাঁরা আল্লাহর ইচ্ছায় মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।

প্ৰথম সংশয়ঃ তাদের কেউ কেউ বলেন, আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারে আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ মেনে নেওয়া নিঃসন্দেহে ওয়াজিব। বিশেষ করে নিছক ইবাদতের ক্ষেত্রে গবেষণা ও মতামতের কোন সুযোগ নেই। কেননা এগুলো শুধু দলীল নির্ভর বিষয় যেমন ছলাত, কিন্তু আমি মুকাল্লিদ শাইখদের কারো নিকট থেকে এই বিষয়ে আদেশ দিতে শুনিনি। বরং তাদেরকে দেখেছি তারা মতভেদকে স্বীকার করেন এবং এটাকে জাতির পক্ষে সুবিধাজনক ব্যাপার বলে ধারণা করেন। তারা এর স্বপক্ষে দলীল হিসাবে একটি হাদীছ পেশ করেন যেটিকে প্রায়ই তারা এরকম পরিস্থিতি সামনে আসলে সুন্নতের ঝাণ্ডা বাহীদের প্রতিবাদে আওড়িয়ে থাকে। যা হচ্ছে- اختلاف أمتى رحمة অর্থাৎ- আমার উম্মতের মতানৈক্য রাহমাতস্বরূপ। আমরা দেখছি যে, এ হাদীছ আপনি যে পথের দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন তার এবং আপনার অত্র গ্রন্থসহ অন্যান্য গ্রন্থাদির বিরোধিতা করছে। অতএব এ হাদীছ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?

উত্তর, দু’ভাবে হবেঃ

প্ৰথম উত্তরঃ হাদীছটি বিশুদ্ধ নয়, বরং তা বাত্বিল, তার কোন ভিত্তি নেই। আল্লামা সুবকী বলেন, আমি এ হাদীছের সূত্র পাইনি- না ছহীহ, না যাঈফ, না জাল হাদীছ।

আমি বলছিঃ বরং এ শব্দে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

....اختلاف أصحابي لكم رحمة

অর্থঃ ... আমার ছাহাবাদের মতভেদ তোমাদের জন্যে রাহমাত।

اصحابي کالنجوم فبأيهم اقتدیتم اهتدیتم

অর্থঃ “আমার ছাহাবাগণ তারকারাজির ন্যায়, তাদের যাকেই তোমরা অনুসরণ করবে। হিদায়াত পেয়ে যাবে।” এই উভয় বাক্যই বিশুদ্ধ নয়, প্রথমটি মারাত্মক দুর্বল, আর দ্বিতীয়টি জাল। আমি সব ক'টিকে “সিলসিলাতুল আহাদীস আয-যঈফা ওয়াল মাওযূ’আহ” গ্রন্থের ৫৮-৫৯, ৬১ নম্বরে যাচাই করে দেখেছি।

দ্বিতীয় উত্তরঃ হাদীছটি যঈফ হওয়ার সাথে সাথে তা কুরআন বিরোধীও বটে। কেননা মতবিরোধ থেকে বিরত ও ঐকমত্য থাকার ব্যাপারে আদেশ সংক্রান্ত আয়াত এত বেশী প্রসিদ্ধ যে, তা উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। তবে দৃষ্টান্ত স্বরূপ কিছু উল্লেখ করা যায়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ

অর্থঃ আর তোমরা পরস্পরে বিবাদ কর না, তাহলে অকৰ্মান্য হয়ে পড়বে। এবং তোমাদের শক্তি হারিয়ে যাবে।[1] তিনি আরো বলেনঃ

وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

অর্থঃ আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে না। যারা তাদের দীনে বিভেদ সৃষ্টি করেছে আর নিজেরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত।[2]

তিনি আরো বলেনঃ

وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ إِلَّا مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ

অর্থঃ তোমার পালনকর্তা যাদেরকে আঁনুগ্রহ করেন তারা ব্যতীত অন্যান্যরা সর্বদা মতভেদ করতেই থাকবে।[3]

তোমার প্রতিপালক তাদেরকে অনুগ্রহ করেন যারা মতভেদ করে না, সুতরাং বুঝা গেল। যারা বাত্বিলপন্থী তারাই মতভেদ করে। তবে কোন বিবেক বলবে যে, মতভেদ রাহমাত?

অতএব সাব্যস্ত হল যে, এ হাদীছ বিশুদ্ধ নয়, না সনদের (সূত্রের) দিক দিয়ে আর না মাতনের (শব্দের) দিক দিয়ে।[4] এখনি পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এ হাদীছকে সংশয়ের উৎস বানানো বৈধ নয়- কুরআন হাদীছের উপর আমল বন্ধ রাখার জন্য যে ব্যাপারে ইমামগণও আদেশ দিয়েছেন।

[1] সূরা আনফাল ৪৬ আয়াত।

[2] সূরা আর রুম ৩১-৩২ আয়াত।

[3] সূরা হুদ ১১৮-১১৯ আয়াত।

[4] যে ব্যক্তি বিস্তারিত জানতে চান এব্যাপারে তার পক্ষে উপরোক্ত গ্রন্থাদি পড়া উচিত।
কিছু সংশয় ও তার উত্তর - দ্বিতীয় সংশয়

দ্বিতীয় সংশয়ঃ যখন দীনের ব্যাপারে মতভেদ নিষিদ্ধ হল। তবে ছাহাবা ও তাদের পরবর্তী ইমামগণের মতভেদ সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী? আর তাদের মতবিরোধ ও পরবর্তীদের মতপার্থক্যের মধ্যে কি কোন তফাৎ রয়েছে?

উত্তরঃ হ্যা, উভয় মতানৈক্যের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে যা দুটি বিষয়ের ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায় ।

এক- মত পার্থক্যের কারণ।

দুই- তার প্রতিক্রিয়া।

ছাহাবাদের মধ্যকার মতভেদ ছিল অনিবাৰ্য কারণ সাপেক্ষে, যা তাদের বুঝের বেলায় স্বভাবগতভাবেই সংঘটিত হয়েছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে নয়। এর সাথে আরো কিছু বিষয় যোগ হবে যা তাদের যুগে মতবিরোধকে অপরিহার্য করেছিল যা তৎপরর্তীকালে দূর হয়ে যায়।[1] আর এটি এমন মতানৈক্য যা থেকে সম্পূর্ণ উদ্ধার পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। উপরোক্ত আয়াত বা তার সমার্থবোধক আয়াতসমূহের নিন্দাও তাদেরকে স্পর্শ করবে না! কেননা এক্ষেত্রে জবাবদিহিতার শর্ত বিদ্যমান নেই। আর তা হচ্ছে ইচ্ছা বা পীড়াপীড়ি করে অটল থাকা।

কিন্তু বর্তমান যুগের অন্ধ অনুসরণকারীদের (মুক্কাল্লিদদের) মধ্যকার মতভেদ এমন পর্যায়ের যাতে সাধারণত কোন উযর নেই। কেননা তাদের কারো নিকট কখনো কুরআন হাদীছের এমন দলীল প্রকাশিত হয় যা সাধারণত তিনি যে মাযহাবের অনুসরণ করেন না তার সমর্থন করে তখন তিনি শুধু এজন্যই তা পরিত্যাগ করেন যে এটি তার মাযহাবের বিপরীত- আর অন্য কোন কারণে নয়। যার পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, মাযহাবটাই তার কাছে যেন আসল অথবা এটাই সেই দ্বীন যা নিয়ে মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগমন করেছেন, আর অন্য মাযহাব হচ্ছে ভিন্ন আরেক ধর্ম যা রহিত হয়ে গেছে।

অপর আরেক দল এদের বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। তারা এই বিস্তর মতানৈক্যপূর্ণ মাযহাবগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন শরীয়ত মনে করেন যেমন স্পষ্ট ভাষায় তাঁদের পরবর্তদের কেউ কেউ একথা বলেছেনঃ[2]

لاحرج على المسلم أن يأخذ من أيها ما شاء ويدع ماشاء، إذ الكل شرع

অর্থঃ মুসলিম ব্যক্তির বেলায় কোন আপত্তি নেই। এ সব মাযহাব থেকে যেটা ইচ্ছে গ্রহণের ও যেটা ইচ্ছে বর্জনের যেহেতু এগুলোর প্রত্যেকটি (স্বতন্ত্র) শরীয়ত।

আর উভয় প্রকারের লোকজনই কখনও কখনও সেই বাত্বিল হাদীছ দ্বারা প্রমাণ পেশ করে থাকে (اختلاف أمتي رحمة) আমার উম্মতের মতভেদ রাহমাত । তাদেরকেও উক্ত হাদীছ দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে দলীল গ্ৰহণ করতে শুনেছি। তাদের কেউ আবার এই হাদীছের কারণও দর্শায় এই বলে যে, মতভেদটা এজন্যই রাহমাত যে, এতে জাতির উপর উদারতা প্ৰদৰ্শন করা হয়।

এই ব্যাখ্যাটি পূর্বোক্ত আয়াতসমূহের স্পষ্ট বিরোধী ও ইমামগণের পূর্বোল্লিখিত বক্তব্য সমূহের মর্মবিরোধী হওয়া ছাড়াও তাদের কারো কারো স্পষ্ট প্রতিবাদও এর বিরুদ্ধে এসেছে।

ইবনুল কাসিম বলেনঃ আমি মালিক এবং লাইছকে বলতে শুনেছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছাহাবাদের মতবিরোধ সম্পর্কে লোকজন যে রকম বলে যে, এতে উদারতা রয়েছে তা সঠিক নয়। বরং তা হচ্ছে ভুল শুদ্ধের ব্যাপার মাত্র।[3]

আশাহাব বলেনঃ ইমাম মালিককে জিজ্ঞাসা করা হল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিশ্বস্ত কোন ছাহাবীর বর্ণনাকৃত হাদীছের কোন একটি হাদীছ অবলম্বন করল- আপনি কি তাকে এ ব্যাপারে স্বাধীন মনে করেন?

তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ, না, যতক্ষণ হাক পর্যন্ত না পৌঁছে, হকতো একটাই, বিপরীতমুখী দু’টি কথাকি একই সাথে সঠিক হয়? সত্য ও সঠিকতো একটাই হয়।[4]

ইমাম শাফি'ঈর সাথী মুযানী বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছাহাবাগণ মতবিরোধ করেছেন, তাদের একজন অপরজনের ভুল ধরেছেন এবং তাদের একজন অপরজনের মতামত বিবেচনা করে দেখেছেন এবং তার উপর মন্তব্য করেছেন। যদি তাদের সব কয়টি কথা সঠিকই হত তাদের কাছে, তবে তাঁরা এমনটি করতেন না। আর উমর ইবনুল খাত্তাব, উবাই ইবনু কা'ব এবং ইবনু মাসউদ এর মতানৈক্যের উপর রাগান্বিত হন তারা যখন একটিমাত্র কাপড় পরিধান করে ছলাত (বিশুদ্ধ হওয়া না হওয়ার) ব্যাপারে উভয়ে মতবিরোধ করছিলেন যখন উবাই বললেনঃ একটি কাপড়ে ছলাত আদায় করা সুন্দর ও চমৎকার কাজ। আর ইবনু মাসউদ বললেন, এটা তো কেবল ঐ সময়কার কথা যখন কাপড় কম ছিল। তখন উমর রাগান্বিত হয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এমন দু'জন ছাহাবী মতভেদ করছেন যাদের অনুকরণ করা হয় এবং যাদের কথা গ্রহণীয়। তবে উবাই সঠিক বলেছেন। আর ইবনু মাসউদ চেষ্টায় ক্ৰটি করেননি। কিন্তু আমার আজকের এই বক্তব্য শুনার পর যে কাউকে এ বিষয়ে মতভেদ করতে শুনব তাকেই এই এই (শাস্তি প্ৰদান) করব।[5]

ইমাম মুযানি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি মতভেদকে জায়েয রাখে এবং এই ধারণা পোষণ করে যে, কোন বিষয়ে যদি দু'জন আলিম মতবিরোধ করেন এবং একজন বলেনঃ এটা হালাল আর অপরজন বলেনঃ এটা হারাম, তবে তাদের উভয়জনই তাদের গবেষণায় হকের উপর আছেন, তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি এ কথা দলীল ভিত্তিক বলেছে, নাকি কিয়াস (অনুমান) ভিত্তিক? যদি বলেঃ দলীল ভিত্তিক, তবে তাকে বলা হবে কিভাবে দলীল ভিত্তিক হয়। অথচ কুরআন (এর বিপক্ষে) মতানৈক্যকে নিষেধ করছে তুমি কিভাবে সেখানে তার বৈধতার উপর কিয়াস করছ। এটা কোন আলিমতো দূরের কথা কোন বিবেকবান ব্যক্তি বৈধ বলতে পারে না।[6]

যদি কেউ বলেঃ আপনি ইমাম মালিক থেকে যা উল্লেখ করলেন যে হক একটাই হয় একাধিক হয় না, তাতো উস্তায যারাক্বা তার “আলমাদখালুল ফিকহী” গ্রন্থের (১/৮৯) তে যা লিখেছেন তার বিপরীত হয়ে যাচ্ছেঃ আবু জা’ফর আল মানছুর এবং তাঁর পরে রাশীদ মনস্থ করেন যে, ইমাম মালিক এর মাযহাব ও তাঁর কিতাব “আল-মুয়াত্তা” কে আব্বাসীয় রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সংবিধান হিসাবে পরিগণিত করবেন তাতে মালিক উভয়কে বাধা দেন এবং বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছাহাবাগণ (ফিকহের) অমৌলিক বিষয়ে মতভেদ করেছেন এবং দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েন। আর তাদের প্রত্যেকেই সঠিক।

আমি বলছিঃ এ ঘটনাটি ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে পরিচিত ও প্ৰসিদ্ধ, কিন্তু শেষের কথাটি “প্রত্যেকেই সঠিক” তার কোন ভিত্তি আমি জানতে পারিনি- ঐ সকল বর্ণনা ও গ্রন্থাদির মাধ্যমে আমি যেগুলো ওয়াকেফহাল হয়েছি।[7] তবে আবু নুআইম “আল হিলইয়াহ্” গ্রন্থের (৬/৩৩২ পৃঃ) তে একটি মাত্র বর্ণনা নিয়ে এসেছেন যাতে মিক্‌দাম ইবনু দাউদ রয়েছে, একে যাহাবী দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাছাড়া এর শব্দ হচ্ছেঃ (وكل عند نفسه مصيب) অর্থঃ প্রত্যেকেই নিজের বিচারে সঠিক।

তার কথা (عند نفسه) প্রমাণ বহন করে যে, “আলমাদখাল” এর বর্ণনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনটি কেনই বা হবে না যেখানে এটা ইমাম মালিক থেকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের বর্ণনার বিরোধিতা করছে যা হচ্ছে এই যে, হক এক, তা একাধিক হয় না। যেমন এর আলোচনা অতিবাহিত হয়ে গেল। এর উপরে ছাহাবা তাবিঈন এবং মুজতাহিদ ইমাম চতুষ্টয় ও অন্যান্য ইমামগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ইমাম ইবনু আব্দিল বর বলেনঃ (২/৮৮ পৃঃ) সংঘাতপূর্ণ দুই পক্ষের উভয় বক্তব্যই যদি সঠিক হত তবে সালাফদের একজন অপরজনের গবেষণা, বিচার এবং ফতওয়াতে ভুল ধরতেন না। বিবেকও একথা অস্বীকার করে যে, কোন বস্তু আর তার বিপরীতমুখী বস্তু উভয়টাই সঠিক হবে। কি সুন্দরইনা বলেছেন যিনি এ কবিতা আবৃত্তি করেছেন-

إثبات ضدين معا في حال - أقبح ما يأتي من المحال

অর্থঃ দু'টি বিপরীতমুখী বস্তুকে একই অবস্থায় এক সাথে সাব্যস্ত করা ঘূণ্যতম অসম্ভব।

যদি বলা হয়ঃ এই বর্ণনা যদি ইমাম থেকে ভুল সাব্যস্তই হয়, তবে মানছুর যখন মানুষকে তাঁর কিতাব “আল মুয়াত্তা” এর উপর ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন তখন তিনি কেন তা গ্ৰহণ না করে অস্বীকৃতি জানান?

আমি বলছিঃ সর্বাধিক সুন্দরতম যে বর্ণনা সম্পর্কে আমি অবহিত হয়েছি তা হচ্ছে ঐটি যেটি হাফিয ইবনু কাছীর তার “শারহ ইখতিছারি উলুমিল হাদীছ” গ্রন্থের ৩১ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম মালিক বলেনঃ লোকজন এমন সব বিষয় একত্রিত করেছে ও জেনেছে যা আমি (হয়ত) জানতে পারিনি। একথা তাঁর (ইমাম মালিকের) জ্ঞান ও ইনছাফের পূর্ণতার প্রমাণ— যেমন ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন।

সুতরাং সাব্যস্ত হল যে, সব মতভেদই মন্দ এবং তা রাহমাত নয়। তবে কোন কোন মতভেদ এমন রয়েছে যার উপর মানুষকে পাকড়াও করা হবে যেমন গোড়া মাযহাব পন্থীদের মতভেদ। আর কোনটি এমন যে, তার উপর পাকড়াও করা হবে না। যেমন ছাহাবাহ এবং তাঁদের অনুসারী ইমামগণের মতভেদ। আল্লাহ তাদের দলে আমাদের হাশর করুন এবং আমাদেরকে তাদের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। এখন প্ৰকাশ পেল যে, ছাহাবাগণের মতভেদ ছিল মুকুল্লিদদের মতভেদ থেকে আলাদা।

সারকথাঃ ছাহাবাগণ নিরুপায় অবস্থায় মতভেদ করেছেন। কিন্তু তারা মতভেদের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন এবং যতদূর সম্ভব এ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতেন। পক্ষান্তরে মুকুল্লিদগণ মতভেদপূর্ণ বিষয়ের বিরাট এক অংশে এই মতবিরোধ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও তারা একমত হয় না এবং এর জন্য চেষ্টাও করে না, বরং তারা একে সাব্যস্ত করে। তাই উভয় মতবিরোধের মধ্যে বিরাট দূরত্ব রয়েছে। এই পার্থক্য ছিল কারণের দিক থেকে।

আর প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে উভয় মতভেদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে আরো স্পষ্ট, আর তা এই যে, ছাহাবা (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) অমৌলিক বা খুঁটিনাটি বিষয়ে মতবিরোধ করা সত্ত্বেও— তাঁরা ঐক্যের ভাব মূর্তিকে কঠিনভাবে সংরক্ষণ করতেন। যে সব বিষয় ঐক্য বাণীর মধ্যে বিক্ষিপ্ততা সৃষ্টি করে তা থেকে তারা সম্পূর্ণ বিরত থাকতেন। যেমন তাদের মধ্যে কেউ সশব্দে বিসমিল্লাহ বলার পক্ষে মত ব্যক্ত করতেন আবার কেউ এটি ঠিক মনে করতেন না। তাদের কেউ রাফউল ইয়াদাইন করা মুস্তাহাব মনে করতেন। আবার কেউ তা মনে করতেন না। এমনিভাবে কেউবা মহিলা স্পর্শ করলে উযু ভঙ্গ হওয়ার পক্ষে ছিলেন আবার অন্যরা ছিলেন এর বিপক্ষে। তা সত্ত্বেও তারা সবাই এক ইমামের পিছনে ছলাত পড়তেন এবং মাযহাবী মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে তাদের কেউ ইমামের সাথে ছলাত পড়া থেকে বিরত থাকেননি। পক্ষান্তরে মুকাল্লিদগণের অন্ধ অনুসারীগণের মতবিরোধ হচ্ছে সম্পূর্ণ এর বিপরীত। যার পরিণতি এই দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিমগণ দুই সাক্ষ্যবাণী তথা আল্লাহ ও রসূলের সাক্ষ্য প্রদানের পর পরই সর্বপ্রধান ভিত্তি ছলাতের ব্যাপারে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা সবাই একত্রে এক ইমামের পিছনে ছলাত পড়তে অস্বীকৃতি জানায় এই বলে যে, ভিন্ন মাযহাবের ইমামের ছলাত বাত্ত্বিল আর না হয় অন্ততপক্ষে মাকরুহ। আমরা একথা শুনেছি এবং দেখেছি। যেমন অন্যরাও দেখেছে।[8]

কেনইবা তা হবে না যেখানে আজকের দিনে প্রসিদ্ধ কিছু মাযহাবের কিতাবে স্পষ্টাক্ষরে ছলাত মাকরুহ বা বাতিল হওয়ার কথা বিদ্যমান রয়েছে! যার পরিণতি হিসাবে আপনি কোন কোন দেশে একই জামে মসজিদে চারটা মেহরাব দেখতে পাবেন যাতে পার পর চারজন ইমাম সালাত পড়ান। লোকজনকে দেখতে পাবেন তাদের ইমামের জন্য অপেক্ষা করছে অথচ অপর আরেকজন ইমাম দাড়িয়ে ছলাত পড়ছেন। বরং কিছু মুকাল্লিদদের নিকট মতানৈক্য এই পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে যে, তারা হানাফী বর এবং শাফিঈ কন্যার মধ্যে বিয়ে নিষেধ করেছে। পরবর্তীতে হানাফীদের নিকট প্রসিদ্ধ এক লোক যাকে “মুফতী আস-সাকলাইন” জ্বিন ইনসান উভয় জাতির মুফতী উপাধিতে ভূষিত করা হয়, তিনি পুরুষের সাথে শাফিঈ কন্যার বিবাহ বৈধ বলে ঘোষণা দেন এই কারণ দর্শিয়ে যে, সেই মহিলাকে আহলুল কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টানদের) পর্যায়ভুক্ত ধরে নেয়া হবে।[9] যার অর্থ এই যে, (আর তাদের নিকট কিতাবাদির অর্থই গ্রহণযোগ্য)-এর বিপরীত বৈধ নয় অর্থাৎ শাফিঈ বরের সাথে হানাফী কন্যার বিয়ে বৈধ নয়। যেমন কিতাবী (ইহুদী-খৃষ্টান) বরের সাথে মুসলিম কন্যার বিবাহ বৈধ নয়। অনেক দৃষ্টান্ত থেকে এ দু’টি দৃষ্টান্ত পেশ করা গেল যা জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ঐ অশুভ পরিণতির কথা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরছে যা পরবর্তীদের মতবিরোধ এবং এর উপর জড়বদ্ধ থাকার ফলশ্রুতিতে ঘটেছে। এটা পূর্বসুরীদের মতভেদের চেয়ে ভিন্ন। কেননা তাদের মতপার্থক্যের কোন অশুভ পরিণতি জাতির উপর পতিত হয়নি। এজন্যই তারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সষ্টির উপর নিষেধাজ্ঞা বহনকারী আয়াতগুলোর আওতার বাহিরে। কিন্তু পরবর্তীদের কথা এর চেয়ে ভিন্ন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সঠিক পথের সন্ধান দিন। হায় যদি তাদের উল্লেখিত মতভেদের ক্ষতি তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত এবং তা অমুসলিম জাতিদের পর্যন্ত না গড়াতো! তবে বিপদ কিছুটা হলেও হালকা হত, কিন্তু আক্ষেপের বিষয় যে তা তাদেরকে ছাড়িয়ে অন্যদের পর্যন্ত তথা বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রের কাফিরদের পর্যন্ত অতিক্রম করেছে এবং তাদের অনৈক্য দ্বারা এদেরকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখছে। উস্তায মুহাম্মদ আল গাযালী “যলামুন মিনাল গারব” কিতাবের ২০০ পৃষ্ঠায় বলেন, আমেরিকার ব্রেন্সটন ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে এক আলোচক একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যেটি প্রায়ই প্ৰাচ্যবিদ এবং ইসলামী বিষয়াদি সম্পর্কে গুরুত্বদানকারী ব্যক্তিদের মাঝে আওড়ানো হচ্ছে, তিনি বলেন মুসলিমগণ কোন শিক্ষা নিয়ে বিশ্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের উচিত হবে- যে ইসলামের দিকে তারা আহবান করছে তা নির্ণয় করা। তারা কি সুন্নীদের বুঝ সাপেক্ষ ইসলামী শিক্ষা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে নাকি শিয়াহ তথা ইমামবাদী বা যায়দীয়াহদের বুঝ সাপেক্ষ ইসলামী শিক্ষা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে? এরপরে এরা ও তারা (শিয়াহ সুন্নীর) প্রত্যেকেই আপোসে মতানৈক্যে ভুগছে। কোন সময় তাদের এক দল প্রশ্ন বিষয়ে সীমাবদ্ধ প্রগতির চিন্তা করলে অপরদল পুরনো সংকীর্ণতামূলক চিন্তা

করে।

সার কথা এই যে, ইসলামের প্রতি দাওয়াতদানকারীগণ দাওয়াতকৃত ব্যক্তিদেরকে অস্থিরতার ভিতরে ফেলে দেয়। কারণ তারা নিজেরাই অস্থিরতায় ভূগছে।[10]

আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান আল মাছুমীর “হা-দীয়াতুস সুলতান ইলা মুসলিমী বিলাদি জাবান” পুস্তিকার ভূমিকায়

রয়েছেঃ আমার কাছে জাপান দেশের মুসলিমদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন এসেছে তারা হচ্ছে প্রাচ্যের শেষ প্রান্তে অবস্থিত “টোকিও” ও “ওসাকা” নগরীর লোক, যার সার কথা হচ্ছেঃ ইসলাম ধর্মের হাকীকত (বাস্তবরূপ) কী? অতঃপর মাযহাব অর্থ কী? যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবে তার উপর কি চার মাযহাবের যে কোন একটি গ্রহণ করা অপরিহার্য? অর্থাৎ তাকে কি মালিকী, হানাফী, শাফি’ঈ অথবা অন্য কোন মাজহাব অবলম্বী হতে হবে, নাকি না হলেও চলবে?

কারণ এখানে বিরাট মতানৈক্য ঘটেছে এবং ভয়ানক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। যখন জাপানের স্বচ্ছ চিন্তা ধারার কিছু লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে এবং ঈমানের মর্যাদায় মর্যাদাবান হতে ইচ্ছা পোষণ করে। যখন তারা “টোকিও”তে বিদ্যমান মুসলমানদের সংগঠনগুলোর কাছে তাদের মুসলিম হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে তখন ভারতবর্ষের একদল বললঃ তাদের উচিত ইমাম আবু হানীফার মাযহাব অবলম্বন করা কেননা তিনি জাতির চেরাগ বা আলোকবর্তিকা। আবার ইন্দোনেশিয়ার “জাওয়া” এর একদল বললঃ (না তাদের) শাফি’ঈ হওয়া আবশ্যক। জাপানী লোকেরা তাদের কথা শুনে অতিশয় আশ্চর্যবোধ করলেন এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে কিংকৰ্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লেন। এভাবে মাযহাবের বিষয়টাই তাদের ইসলাম গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল।

[1] দেখুন ইবনু হাযম এর "আল-ইহকাম কী উছলিল আহকাম" এবং দেহলভীর “হুজ্জাতুল বালেগা” অথবা এবিষয়ের উপর লিখা তাঁর পুস্তিকা “ইকদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদি অত্তাকলীদ”।

[2] দেখুন মানাবীর “ফয়যুল কাদীর” (১/২০৯) অথবা “সিলসিলাতুল আহাদীস আয-যাঈফাহ অল-মাওযূ’আহ” (১/৭৬,৭৭)

[3] ইবনু আব্দিল বার এর “জা-মিউ বায়ানিল ইলম” (২/৮২, ৮৮, ৮৯)।

[4] প্রাগুক্ত, (২/৮৩, ৮৪)।

[5] প্রাগুক্ত, (২/৮৯)

[6] প্রাগুক্ত।

[7] ইবনু আব্দিল বার ‘আল-ইনতিকা’ (৪১) ও হাফিয ইবনু আসাকির এর “কাশফুল মুগত্বা-ফী-ফাযলিল মুওয়াত্তা” (৬-৭ পৃঃ) ও যাহাবীর “তাযকিরাতু হুফফায” (১/১৯৫ পৃঃ)।

[8] দেখুন মা-লা-ইয়াজুয ফীহিল খিলাফ কিতাবের অষ্টম পরিচ্ছেদ (৬৫-৭২, পৃঃ) তাতে অনেক দৃষ্টান্ত পাবেন যে বিষয়ের প্রতি আমি ইঙ্গিত করেছি। যার কিছু আযহার (বিশ্ববিদ্যালয়)-এর আলিমদের দ্বারাও ঘটেছে।

[9] আল-বাহরুর রা’ইক।

[10] আমি বলবঃ গাযালীর শেষ দিনগুলোর অনেক লিখনী যেমন তার শেষের দিনগুলোতে প্রকাশিত কিতাব যার নাম “আস-সুন্নাতুন নববিয়্যাহ বাইনা আহলিল ফিকহি ওয়া আহলুল হাদীস” কথা প্রমাণ করেছে যে, তিনি নিজেই হচ্ছেন এমন দায়ীদের অন্তর্ভুক্ত যারা নিজেরাই অস্থিরতায় ভুগছেন। আমরা তাঁর এই অবস্থা পূর্ব থেকেই অনুভব করতাম- তার কিছু কথা ও তাঁর সাথে আমাদের কিছু ফিকহী বিষয়ে বিতর্ক এবং তার কোন কোন গ্ৰন্থরাজির কথা ও লিখনী থেকে যার মাধ্যমে তার এই অস্থিরতা ও সুন্নাহ থেকে পথভ্রষ্টতা এবং হাদীছের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ে স্বীয় বিবেককে মাপকাঠি বানানোর প্রবণতা প্ৰকাশ পায়। তিনি এ ক্ষেত্রে হাদীছ শাস্ত্রের এবং তার উছুল (ব্যাকরণ) এর ধার ধারেন না। আর না তিনি এ বিষয়ে বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন। বরং যা তার কাছে ভাল লাগে তাই বিশুদ্ধ যদিও তা যাঈফ হয়। আর যা তার কাছে ভাল লাগে। না সবার কাছে বিশুদ্ধ হলেও তার নিকট সেটা যঈফ হয়ে যায়। যেমন আপনি তা প্রকাশ্যেই দেখতে পাবেন আমার ভূমিকার উপর তাঁর মন্তব্যের মধ্যে, যে ভূমিকাটি আমি তার কিতাব “ফিকহুস সিরাহ” এর উপর আমার হাদীছের হাওয়ালা লিখার শুরুতে সংযুক্ত করেছিলাম যা চতুর্থ সংস্করণে ছাপানো হয়। এই কাজটি মূলত কোন আযহারী ভাই মারফত তার পক্ষ থেকে প্রস্তাব ভিত্তিক ছিল। আমি সেদিন দ্রুত এই কাজে হাত দিয়েছিলাম। এই মনে করে যে, এটা তাঁর পক্ষ থেকে সুন্নাহ ও নবী চরিত বিষয়ে গুরুত্ব প্রদর্শন হবে এবং একে বহিরাগত বস্তুর অনুপ্রবেশ থেকে সংরক্ষিত রাখার আগ্রহই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এমনকি তিনি আমার হাওয়ালাকে প্রচার করেন এবং ইঙ্গিতকৃত মন্তব্যে তাঁর আনন্দের কথা পরিষ্কার ভাষায় ব্যক্ত করেন। তার মন্তব্যের হেডিং হচ্ছে (حول أحاديث هذا الكتاب) এতদসত্ত্বেও তাতে তাঁর যঈফ হাদীছ গ্রহণের পদ্ধতি এবং কেবল বাক্যের প্রতি লক্ষ্য করে বিশুদ্ধ হাদীছ পরিত্যাগ করার কথা আলোচনা করেন। তিনি এদ্বারা একথাই বুঝাতে চান যে, আমার জ্ঞান নির্ভর হাওয়ালা সংকলনের মত কাজের কোনই মূল্য তার কাছে নেই। যেহেতু তা এখন দৃষ্টিভঙ্গি খাটানোর স্থানে যা একজন থেকে অপরজনের কাছে যথেষ্ট ভিন্ন রকম হয়ে। তাই যেটা এই ব্যক্তির কাছে গ্ৰহণীয় হবে সেটিই অপরজনের কাছে হবে বর্জনীয় এমনিভাবে এর বিপরীতের সাথে বিপরীত। এতে করে দীন অনুকরণীয় প্রবৃত্তিতে পরিণত হবে যেখানে ব্যক্তি বিশেষের চিন্তা ছাড়া- কোন নিয়ম-নীতি থাকবে না। যা সব মুসলিম মনীষীদের পরিপন্থী। তারা জানেন যে, সূত্র (সনদ) দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত যদি সূত্র না থাকত তবে যে যা ইচ্ছা করত তাই বলত। কিন্তু গাযালী উপরোক্ত কাজ করেছে (আল্লাহ একে হিদায়াত করুন) তার “সীরাহ” গ্রন্থের অনেক হাদীছের ব্যাপারে। তাঁর কিতাবের বড় এক অংশ মুরসাল এবং মু’যাল হাদীছ দ্বারা ভরপুর। সেই সাথে এর যেগুলোতে সম্বন্ধ রয়েছে তাঁর মধ্যেও কিছু দুর্বল সূত্র রয়েছে যা শুদ্ধ নয়। যে কথা আমার হাওয়ালা সংকলনে দৃষ্টি নিক্ষেপকারী প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে সুষ্ঠুরূপে প্রতিভাত। এতদসত্ত্বেও উপরোক্ত শিরোনামে সানন্দে বলেছেনঃ আমি সঠিক পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করেছি, আর সম্মানিত গ্ৰন্থরাজির উপর নির্ভর রেখেছি। আমি আমাকে এই ক্ষেত্রে সুন্দর এক অবস্থানে পৌছাতে পেরেছি বলে মনে করি, এতো হাদীছ জমা করেছি যাতে একজন সচেতন আলিমের অন্তর শান্ত হয়ে যাবে।

তিনি এমনটিই বলেছেন। তবে তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনার গবেষণায় আপনি কোন নীতির অনুসরণ করেছেন- তা কি হাদীছ শাস্ত্রের মৌলনীতি যা নাবী চরিত্রের বিশুদ্ধ হাদীছের পরিচয় পাওয়ার একক উপায়? তবে তার কাছে আপনি ব্যক্তিগত চিন্তার উপর ভরসা করার কথা ছাড়া আর কোন উত্তর থাকবে না। যার মধ্যেকার ক্ষতি উল্লেখিত ইঙ্গিতে রয়েছে। একথার প্রমাণ হচ্ছে অশুদ্ধ সূত্রের হাদীছকে শুদ্ধ ও অশুদ্ধ সূত্রের হাদীছকে দুর্বল বলে দেয়া যদিও তা বুখারী-মুসলিমের হাদীছও হয়। যেমন একটু পূর্বে ইঙ্গিতকৃত আমার ভূমিকায় তা বর্ণনা করেছি যা তিনি স্বীয় কিতাব “ফিকহুস সীরাহ” এর শুরুতে ছাপিয়েছিলেন (চতুর্থ সংস্করণ)। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় যে, পরবর্তী মুদ্রণগুলোতে তা বাদ দিয়ে দেন। যেমন “দারুল আরাক্কাম” দামেস্ক ও অন্যান্য মুদ্রণ! তাঁর এই আচরণ কিছু লোককে এই ধারণা পোষণে বাধ্য করেছে যে, তাঁর পূর্বের আবেদন কেবল সাধারণ পাঠকদের মধ্যে তার কিতাবকে প্রসিদ্ধি দান করার উদ্দেশে ছিল যেসব পাঠক সুন্নাহর সেবক ও তাঁর প্রতিরক্ষক এবং হাদীছের মধ্যে শুদ্ধ অশুদ্ধ পার্থক্যকারীদের শ্রমকে মূল্যায়ন করে- যারা এ কাজ করে জ্ঞানপূর্ণ নিয়মনীতি অনুযায়ী, ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিভিন্ন প্রবৃত্তির তাড়নায় নয় যেমন করেছেন গাযালী (আল্লাহ তাকে হিদায়াত দিন) তাঁর এই এবং শেষ কিতাবে যা হচ্ছে- “আস-সুন্নাতুন নববিয়্যাহ বাইনা আহলিল ফিকহি ওয়া আহলুল হাদীস” তার এই আচরণ থেকে লোকজন পরিষ্কারভাবে জেনে গেছে যে, সে মুতাযিলী লোক। তার কাছে যুগ যুগ ধরে মুহাদ্দিছগণের হাদীছের সেবায় শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্ণয়ে কঠোর সাধনার কোনই মূল্য নেই, ঠিক তদ্রুপ ফকীহ ইমামগণের সাধনারও কোন মূল্য নেই- যারা মূলনীতি নির্ধারণ করেন এবং এর উপর ভিত্তি করে শাখাগত বিষয়ে সমাধান বের করেন। কেননা তিনি এ থেকে যা ইচ্ছা গ্ৰহণ করেন এবং যা ইচ্ছা বর্জন করেন তাদের কোন মৌলনীতি বা নিয়ম-নীতির সাথে মিল ছাড়াই।

অনেক গুণী জ্ঞানী আলিম (আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) তাঁর প্রতিবাদ করেছেন এবং তাঁর অস্থিরতা ও ভ্ৰান্তির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সর্বাধিক সুন্দর যে প্রতিবাদটি আমার চোখে পড়েছে তা আমার বন্ধু ডঃ রাবী' বিন হাদী আল-মাদখালীর আফগানী আল-মুজাহিদ পত্রিকা ছাপিয়েছে (৯-১১ সংখ্যা) এবং শ্রদ্ধেয় ভাই ছালিহ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ আ-লুশ শাইখ এর পুস্তিকা, যার নাম “আল-মি’ইয়ার লি-ইলমিল গাজালী”।

তৃতীয় সংশয়ঃ আপনারা যে সুন্নাহ অনুসরণ এবং এর বিপরীতে ইমামদের কথা পরিত্যাগের দাওয়াত দেন তার অর্থ তাঁদের কথাকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা এবং তাদের গবেষণা ও মতামত থেকে মোটেই উপকৃত না হওয়ার আহবান বলে মনে হয়। আমি বলবঃ এই ধারণাটি সঠিকতার অনেক দূরে, বরং তা প্রকাশ্যভাবে বাতিল যেমনটি পূর্বোক্ত কথাগুলো থেকে প্রতিভাত হয়, কেননা সব কয়টি কথাই উক্ত ধারণার বিপরীত অর্থ বহন করছে। আমরা যে বিষয়টির দিকে দাওয়াত দান করি তার সবই হচ্ছে এই যে, মাযহাবকে দীন রূপে গণ্য করা যাবে না এবং তাকে কুরআন ও হাদীছের স্থলে এমনভাবে আসন দেওয়া চলবে না যে, বিবাদ মিটানোর ক্ষেত্রে অথবা নবোদ্ভাবিত সমস্যার নতুন বিধান বের করার উদ্দেশ্যে তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যেমন করে থাকে বর্তমান যুগের ফকীহরা। তারা শুদ্ধ অশুদ্ধ হক বাত্ত্বিল জানার জন্যে কুরআন হাদীছের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়াই বিবাহ, তালাক ইত্যাদির নতুন বিধিবিধান প্রণয়ন করেছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের তরীকাহ (নীতি বা পথ) হচ্ছে- (اختلافهم رحمة) অর্থঃ তাদের মতভেদ হচ্ছে রহমাত এবং সুযোগ ও সুবিধা- স্বার্থের অন্বেষণ। সুলাইমান তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ) কতইনা সুন্দর বলেছেনঃ

إن أخذت برخصة كل عالم اجتمع فیك الشرکله

অর্থঃ তুমি যদি প্রত্যেক আলিমের প্রদত্ত সুযোগ গ্রহণ কর তবে সব অনিষ্ট তোমার মধ্যে একত্রিত হবে। ইবনু আব্দিল বার এটি বর্ণনা করে (২/৯১-৯২) বলেন, এটি সর্বসম্মত কথা। এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে আমার জানা নেই। আমরা (উপরোক্ত নীতিরই) প্রতিবাদ করি যা সর্বসম্মত ব্যাপার যেমন আপনি দেখেছেন। আর তাদের কথার দিকে প্রত্যাবর্তন করা, তা থেকে উপকৃত হওয়া, বিতর্কিত যে সব বিষয়ে কুরআন হাদীছের স্পষ্ট প্রমাণ নেই সেগুলোর সঠিক অবস্থা বুঝতে সহযোগিতা নেওয়া অথবা যে সব বিষয় ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে তা বুঝতে যাওয়া এটাতো আমরা অস্বীকার করি না বরং এ ব্যাপারে নির্দেশ দান করি এবং উৎসাহ যোগাই, কারণ এ থেকে ঐ ব্যক্তির উপকৃত হওয়ার আশা করা যায়- যে কুরআন হাদীছের হিদায়াত গ্রহণের পথ অবলম্বন করে।

আল্লামা ইবনু আব্দিল বর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন (২/১৭২)- হে ভাই তোমার উপর মৌলনীতি মুখস্থ করা এবং তা সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। আর জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি সুন্নাহ্ এবং কুরআনের স্পষ্ট বিধানগুলো সংরক্ষণ করেছে এবং ফকীহদের কথার ভিতর দৃষ্টি দিয়েছে এবং এটাকে তার গবেষণা কার্যের সহযোগী বিবেচনা করেছে এবং তাকে চিন্তা গবেষণার চাবিকাঠিরূপে গণ্য করেছে ও একাধিক অর্থ সম্ভাবনাময় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যা হিসাবে গ্রহণ করেছে। আর তাদের কোন একজনের এমনভাবে অন্ধ অনুসরণ করেনি যেরূপ করতে হয় হাদীছের ক্ষেত্রে, যার আনুগত্য সর্বাবস্থায় ও কোনরূপ চিন্তাভাবনা ছাড়াই ওয়াজিব, আর সে নিজেকে মুক্ত রাখেনি ঐ কাজ থেকে যে কাজে উলামাগণ নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতেন তথা হাদীছ মুখস্থ করা ও তাতে চিন্তা নিবন্ধ রাখা থেকে। বরং গবেষণা, বুঝা এবং চিন্তাভাবনায় তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে এবং সর্বোপরি সে তাদের অবগতি দান ও অবহিত করানোর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয়িত শ্রমের শুকরিয়া করেছে। তাদের প্রদত্ত সঠিক সিদ্ধান্ত-যার পরিমাণই বেশী রয়েছে এর উপর তাদের প্রশংসা করেছে, তারা নিজেদেরকে যেমন ক্ৰটি মুক্ত দাবী করেননি ঠিক তদ্রুপ তাদেরকে ত্রুটিমুক্ত জ্ঞান করেনি, তবে সেই হবে ঐ বিদ্যান্বেষী যে পূর্বসুরী সৎ ব্যক্তিগণের আদর্শে অটল, তার অধিকার আদায়ে সার্থক, সঠিক পথ প্ৰদৰ্শিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতের এবং তাঁর ছাহাবা (রাযিয়াল্লাহ। আনহুম)-দের আদর্শের অনুসারী।

পক্ষান্তরে যে নিজেকে চিন্তা-গবেষণা থেকে দূরে রেখেছে এবং আমরা যা উল্লেখ করেছি তা থেকে বিমুখ রয়েছে এবং স্বীয় মতামত দ্বারা হাদীছের বিরোধিতা করেছে এবং নিজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অন্যকে ঠেলে দিতে চায় সেনিজে পথভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্ৰষ্টকারী, আর যে ব্যক্তি এসবের কিছুই না জেনে বিদ্যাহীনভাবে ফতওয়াদানে প্রবৃত্ত হয় সে আরো কঠিন অন্ধ এবং আরো অধিক পথভ্ৰষ্ট ।

কবি বলেনঃ

فهذا هو الحق ما به خفاء فدعنی عن بنیات الطریق

অর্থঃ এটাই চির সত্য যাতে কোন অস্পষ্টতা নেই, অতএব তুমি আমাকে নানারূপ পথ থেকে বাঁচতে দাও, স্পষ্ট পথসমূহ অবলম্বন করতে ছেড়ে দাও।

চতুর্থ সংশয়ঃ কিছু অন্ধ অনুসারীর নিকট একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যা তাদেরকে ঐসব হাদীছ অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখে মাযহাব যার বিপরীত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাদের ধারণা যে, সুন্নাহর অনুসরণ করলে মাযহাবের ইমামগণকে ভুল প্রতিপন্ন করা অনিবাৰ্য হয়। ভুল ধরার অর্থ তাদের নিকট ইমামদেরকে দোষারোপ করা আর যেখানে সাধারণ একজন মুসলিমকে দোষারোপ করা বৈধ নয়। সেখানে তাদের মতো একজন ইমামকে কিভাবে দোষারোপ করা যাবে?

উত্তর এই যে, এ ব্যাখ্যা বাতিল। এর কারণই হচ্ছে হাদীছ অনুধাবন করা থেকে বিমুখতা, নচেৎ কিভাবে একজন বিবেকবান মুসলিম এরূপ ব্যাখ্যা দিতে পারে? যেখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হাকিম যদি গবেষণা করে কোন ফায়াছালা দেন এবং তাতে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হন তবে তাঁর জন্য দু'টি প্রতিদান রয়েছে আর তিনি যদি গবেষণা করে ফয়ছালা দিয়ে তাতে ভুল করে ফেলেন তাহলে তার জন্যে একটি প্রতিদান রয়েছে।[1]

এ হাদীছই উপরোক্ত ব্যাখ্যাকে প্ৰত্যাখ্যান করছে এবং পরিষ্কারভাবে একথা বলে দিচ্ছে যে, অমুক ব্যক্তি ভুল করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এর অর্থ “অমুক ব্যক্তি একটি প্রতিদান পাবে”। এবার যে ব্যক্তি ভুল ধরল। তার ষ্ঠতে যখন সেই (ভুলকারী) ব্যক্তি প্রতিদান প্রাপ্ত বলে বিবেচিত হল, তবে তার ভুল ধরার উপর কী করে এ ধারণা করা চলতে পারে যে, সে ঐ ব্যক্তিকে দোষারোপ করেছে? নিঃসন্দেহে এ ধারণা ভুল। যারাই এ ধারণা পোষণ করে তাদের জন্য এ ধারণা থেকে ফিরে আসা ওয়াজিব, নচেৎ সেই হবে মুসলিমদেরকে দোষারোপকারী। আর তা কোন এক সাধারণ ব্যক্তিকে নয় বরং মুসলিমদের বড় বড় ইমাম তথা ছাহাবা, তাবিঈন, আইম্মায়ে মুজাতাহিদীন সহ অন্যান্যদেরকেও দোষারোপকারী হবে। কেননা আমাদের অবশ্যই জানা আছে যে, যখন এই মনীষীগণ একজন অপরজনের ভুল ধরতেন এবং তাদের একজন অপরজনের প্রতিবাদ জানাতেন[2] তবে কি কোন বিবেকবান একথা বলবে যে, তাদের একজন অপরজনকে দোষারোপ করতেন এবং বিশুদ্ধরূপে সাব্যস্ত হয়েছে যে, আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জনৈক ব্যক্তির স্বপ্নের তা'বীর করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ভুল ধরে বলেছিলেন “তুমি কিছু সঠিক বলেছ। আর কিছু ভুল বলেছ”।[3] তাহলে কি তিনি এর মাধ্যমে আবু বকরকে দোষারোপ করেছেন।

এ ভ্রান্ত ধারণা পোষণকারীদের উপর এর আশ্চর্যজনক প্রভাব পড়েছে। আর তা হচ্ছে এই যে, এ ধারণা তাদেরকে স্বীয় মাযহাব বিরোধী হাদীছ মানতে বাধা প্রদান করছে, কেননা তাদের নিকট এ ক্ষেত্রে হাদীছ মান্য করার অর্থ ইমামকে দোষারোপ করা, পক্ষান্তরে, হাদীছের বিরুদ্ধে হলেও ইমামকে অনুসরণ করায় রয়েছে তার সম্মান ও শ্রদ্ধা। তাই, তারা ধারণাকৃত দোষারোপ করা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে তার অন্ধ অনুসরণে অটল থাকে।

তারা অবশ্যই ভুলে গেছে (ভুলে যাওয়ার ভান করেছে বলব না) যে, তারা এই ধারণার মাধ্যমে এমন বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হয়েছে যা ঐ বিষয়ের তুলনায় আরো মারাত্মক যেটি থেকে তারা রেহাই পেতে চেয়েছিল। কারণ তাদেরকে যদি কেউ বলেঃ অনুসরণ যখন অনুসরণীয় ব্যক্তির সম্মান বুঝায় এবং তার বিরুদ্ধাচরণ তাকে দোষারোপ করার নামান্তর হয় তবে আপনারা কিরূপে নিজের জন্যে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণকে বৈধ অনুসরণ করতে প্রবৃত্ত হলেন, যে ইমাম ভুলের উর্ধে (নিষ্পাপ) নন, যাকে দোষারোপ করা কুফরীও নয়? আপনাদের নিকটে যখন ইমামের বিরুদ্ধাচরণ তাকে দোষারোপ করা বুঝায়। তবে তো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধাচরণ করা তাঁকে দোষারোপ করার ব্যাপারে আরো স্পষ্ট বরং এটাই হচ্ছে প্রকৃত কুফৱী (আল্লাহ হিফাজত করুন)। একথা যে কেউ বললেই তাদের কোন উত্তর থাকবে না। শুধু একটি মাত্র বাক্য ছাড়া যা বহুকাল ধরে তাদের প্রায় লোকের কাছ থেকে শুনে আসছি। তা এই যে, আমরা কেবল এজন্যই হাদীছ পরিত্যাগ করেছি যে, (আমাদের) মাযহাবের ইমাম বিশ্বস্ত এবং তিনি হাদীছ সম্পর্কে আমাদের তুলনায় অধিক জ্ঞাত।

এ কথার আমাদের নিকট অনেকভাবে উত্তর রয়েছে যা উল্লেখ করতে গেলে ভূমিকাটি লম্বা হয়ে যাবে বিধায় একটি মাত্র উত্তর লিখখেই ক্ষান্ত হব, আল্লাহর ইচ্ছায় এটি হবে চূড়ান্ত মীমাংসা।

আমি বলিঃ শুধু আপনাদের মাযহাবের ইমামই হাদীছ সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশী ওয়াকিফহাল নন; বরং কয়েক দশক এমনকি শত শত ইমাম এমন রয়ে গেছেন যারা আপনাদের তুলনায় হাদীছ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তাই যখন বিশুদ্ধ হাদীছ আপনাদের মাযহাবের বিপরীতে চলে আসবে- যাকে এসব ইমামদের কেউ না কেউ গ্রহণ করেছেন, এই অবস্থায় এই হাদীছ গ্রহণ করা আপনাদের জন্য অপরিহার্য; কেননা আপনাদের উপরোক্ত কথা অর্থাৎ হাদীছের বিপরীতে ইমামের কথা গ্রহণ করার যুক্তি এখানে খাটবে না। কারণ আপনাদের প্রতিপক্ষ (তখন) অবশ্যই প্রতিবাদ করে বলবেঃ আমরাওতো এই হাদীছ কেবল ঐ ইমামের প্রতি আস্থা থাকার ফলেই গ্রহণ করেছি যে ইমাম এটি গ্রহণ করেছেন। অতএব এই ইমামের অনুসরণ ঐ ইমামের অনুসরণ অপেক্ষা উত্তম যিনি হাদীছের বিপরীত করেছেন। ইনশাআল্লাহ তা'আলা যুক্তি স্পষ্ট, কারো পক্ষে বুঝতে অসুবিধা হবে না।

আর এজন্যই আমি বলতে পারি যে, আমার এই কিতাব যেহেতু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলাত পদ্ধতির উপর সুসাব্যস্ত হাদীছ জমা করেছে, তাই এসবের উপর আমল পরিত্যাগ করার ব্যাপারে কারো কোন ‘উযর খাটবে না কারণ এতে এমন কোন হাদীছ নাই যা পরিত্যাগ করতে সব আলিমগণ এক মত হয়েছেন (আর এমন কাজ তারা করতেও পারেন না)। বস্তুত যে কোন বিষয়েই হাদীছ পাওয়া গেছে তাকে যে কোন একদল আলিম অবশ্যই গ্রহণ করেছেন, আর যিনি গ্ৰহণ করেননি তিনি হয় মাফ পেয়ে যাবেন আর না হয় একটি প্রতিদান পাবেন । কেননা হয়তোবা তিনি এ বিষয়ে কোন দলীল পাননি অথবা পেয়েছেন কিন্তু এমন পদ্ধতিতে পৌছেছে যার মাধ্যমে তার মতে প্রমাণ সাব্যস্ত হয় না অথবা অন্য যে কোন উযারের ভিত্তিতে যা আলিমগণের কাছে পরিচিত। তবে যার কাছে ইমামের (মৃত্যুর) পরবর্তীতে দলীল সাব্যস্ত হয়ে যায়; তার ব্যাপারে ঐ ইমামের অন্ধ অনুসরণের কোন উযর খাটবে না। বরং নির্ভুল দলীল মান্য করাই হবে ওয়াজিব। আর অত্র ভূমিকার মূল উদ্দেশ্য এটাই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

অর্থঃ হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও এবং রাসূলের ডাকে, কেননা তা (সাড়া দান) তোমাদেরকে জীবন দান করবে। আর জেনে রাখ আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হন। বস্তুত তোমরা তারই নিকট সমবেত হবে।[4]

আল্লাহ তা'আলা সত্য বলেন, তিনিই পথের দিশা দেন, আর তিনি উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।

হে আল্লাহ! মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার ও ছাহাবাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। প্ৰশংসা সবই বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।

মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আল-আলবানী
দামেস্ক ২০/০৫/১৩৮১ হিজরী

[1] বুখারী ও মুসলিম।

[2] দেখুন ইমাম মুযানীর ইতিপূর্বে অতিবাহিত বক্তব্য (৪৪ পৃঃ) ও হাফিয ইবনু রাজাব এর পূর্বোক্ত বক্তব্য (৩৫ পৃঃ)

[3] বুখারী ও মুসলিম, হাদীছটির কারণ এবং তার অবস্থান জানার জন্য দেখুন “সিলসিলা সহীহাহ” (১২১ পৃঃ)।

[4] সূরা আল-আনফাল ২৪ আয়াত।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে