আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে আমরা কতটা কর্তব্যপরায়ণ, অতপর তার বান্দাদের সাথে আমরা কীভাবে আচরণ করি তার উপর নির্ভর করে আমাদের সফলতা। শ্রোতামণ্ডলীকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা সহজেই বাক্য রচনা করতে পারি এবং আমাদের কথাকে অলংকারে ভূষিত করতে পারি; কিন্তু, কঠিন বিষয় হলো আমাদের কথা অনুযায়ী নেক আমল করা ও মহান চরিত্র গঠন করা।

“তোমরা কি মানুষকে নেক আমল করার আদেশ দিচ্ছ অথচ নিজেদের কথা ভুলে আছ? অথচ তোমরা কিতাব (তাওরাত) তিলাওয়াত করছ! তবে কি তোমরা বুঝ না?” (২-সূরা আল বাকারাঃ আয়াত-৪৪)

যে ব্যক্তি নিজে সৎকাজ না করে অন্যদেরকে সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অন্যদেরকে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করে বা মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে অথচ সে নিজে মন্দ কাজ করে, তার জন্য সাংঘাতিক শাস্তি রয়েছে। যেসব দোযখবাসীরা তাকে দুনিয়াতে চিনতো তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে- কেন তাকে এত বেদনাদায়কভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সে (নিজেই) উত্তর দিবে, “আমি নিজে নেক আমল না করে তোমাদেরকে তা করতে আদেশ করেছিলাম এবং তোমাদেরকে মন্দ কাজ করতে নিষেধ করেছিলাম অথচ আমি নিজেই তা করেছিলাম।”

একজন আরব কবি (সম্ভবত মুয়াজ রাযি) বলেছেন-

أيها الرجل الْمُعَلِّمُ غَيْرَهُ ٭ هَلَّا لِنَفْسِك كَانَ ذَا التَّعْلِيمُ

হে অন্যের শিক্ষক। তুমি যদি প্রথমে তোমার নিজের জন্য শিক্ষা অন্বেষণ করতে (তবে কতই না ভালো হতো!

(এ কথা বলার পর) বিখ্যাত বক্তা মুয়াজ (রাযি) একটু থেমে নিজে কাঁদলেন ও অন্যাদেরকে কাঁদালেন এবং তারপর বললেন-

وغير تقي يأمر الناس بالتقى ٭ طبيب يداوي الناس وهو عليل

ভাবাৰ্থঃ “কতইন অধাৰ্মিক লোক মানুষকে মুক্তাকী (ধাৰ্মিক, আল্লাহভীরু) হওয়ার আদেশ করে! এ যেন সেই চিকৎসকের মতো যে মানুষের চিকিৎসা করে অথচ সে নিজেই রোগী!”

আমাদের পূর্বসূরী কিছু ধাৰ্মিক লোক যখন মানুষকে দান-সদকা করার পরামর্শ দেয়ার ইচ্ছা করতেন তখন তারা নিজেরা প্রথমে দান করতেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন যে, তখন লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের আহবানে সাড়া দিত। ইসলামে প্রাথমিক যুগের একজন বক্তা সম্বন্ধে আমি পড়েছি যে, তিনি অন্যদেরকে তাদের দাস-দাসী মুক্ত করে দেয়ার জন্য বুঝিয়ে রাজি করতে চাইতেন। কিছুকাল তিনি টাকা জমা করেন এবং যথেষ্ট টাকা জমা করার পর তিনি একজন দাস কিনে সাথে সাথে তাকে মুক্ত করে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানালেন। ফলে বহু দাস-দাসী মুক্ত হয়ে গেল।